#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ৩০
#তানিশা সুলতানা
“ভীতুর ডিম একটা।
তানহা ভেংচি কেটে অভির পাশে শুয়ে বলে।
” আমি খুব সাহসী। একদম ভীতু বলবা না।
বুক ফুলিয়ে বলে অভি।
“ভীতুর বাপের আবার বড় কথা
বিরবির করে বলে তানহা।
” শুনো আমি যে কতো বড় সাহসী তার প্রমাণ কাল দেবো।
“কি করে? তানহা উৎসাহ নিয়ে হাতের ওপর মাথা ভর দিয়ে অভির দিকে ঝুঁকে বলে.
” কাল আর পালিয়ে যাবো না৷ বেলা করে ঘুম থেকে উঠে সকলের সামনে দিয়ে যাবো৷ বুঝলে?
“ওরে আমার বীর পুরুষ রে।
” বীর পুরুষ না হলে এটা করার কথা ভাবতাম?
“শুনুন সব ছেলেরা বিয়ের পর বউয়ের সাথেই থাকে। আর এটা সবাই জানে।
আজাইরা
” কথায় কথায় রেগে যাচ্ছো কেনো?
“কারণ আপনি একটা যাতা
তানহা মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পরে। কেনো রাগ হচ্ছে এটা নিজেও জানে না।
অভি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তানহাকে।
” অভি চৌধুরীও রোমান্টিক। শুধুমাত্র সঠিক সময়ের জন্য প্রমাণ করতে পারে নি।
ফিসফিস করে তানহার কানের কাছের মুখ নিয়ে বলে অভি।
তানহা মুচকি হাসে।
“ভীষণ আসক্ত হয়ে গেছি তানহা নামক মাদক তায়।
” তুমি কি চাইছো আমি তোমাকে ছুঁয়ে দেই?
অভি প্রশ্নটা ছুঁড়ে দেয় তানহার দিকে। আবার রেগে যায় তানহা। অভির হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে।
“যাহহহহ বাবা রেগে গেলে কেনো?
আরও শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে বলে অভি।
” কারণ আপনি বাজে একটা মানুষ।
“এই বাজে মানুষটাকেই সারাজীবন সয্য করতে হবে।
অভি মুচকি হেসে বলে।
” করবো না সয্য। চাপকে ভালো করে নেবো।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে তানহা।
“আচ্ছা
দুষ্টু হেসে বলে অভি।
” একটা কথা কি জানো?
তুমি আমার পাশে শুধু তুমি থাকলেই হবে তানহা। আমার আর কিচ্ছু চায় না। বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়।
তুমি জানো আমি তোমাকে ভালো একটা জামা কিনে দেবো বলে রেস্টুরেন্টে বাসন মেজেছি আমি। সারাদিন রাত বাসন মেজেছি ঝাঁড়ু দিয়েছি। শুধু তোমায় ভালো রাখবো বলে। এতোটা ভালোবাসতে কবে শিখলাম আমি?
নিজের মনে মনে কথা গুলো বলে নিজেই অনমনে হাসে অভি।
“কোন গার্লফ্রেন্ডের কথা মনে করে হাসছেন?
তানহা কপালে ভাজ ফেলে তাকায় অভির দিকে।
” তোমাকে ছোঁয়ার কথা ভাবছি। আচ্ছা তোমাকে কিস করলে তুমি লজ্জা পাবে?
তানহা মুখ বাঁকায়।
অভি তানহার দিকে ঝুঁকে। তানহা চোখ বড়বড় করে তাকায়।
“ভয় দেখাচ্ছেন?
মুখ বাঁকায় তানহা।
অভি এবার তানহার দুই গালে হাত দেয়। তানহা মিষ্টি হাসে।
” রেডি ওয়ান টু থ্রি
তানহার মুখের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে থেমে যায়।
“হাওয়া ফুসসসস
তানহা চোখ রাঙিয়ে বলে।
“নার্বাস হয়ে গেছি।
বাদ দাও ঘুমিয়ে পরো।
বলেই অভি টানটান হয়ে শুয়ে পরে। তানহা মুখ টিপে হাসে।
” পাগল একটা
মনে মনে বলে। বুকে হাত দিয়ে বার কয়েক শ্বাস নেয়। কারণ একটা অদ্ভুত কাহিনি করতে চাইছে তানহা। তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমান সাহস দরকার।
তারপর টুপ করে অভির ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।
❤️❤️❤️
স্মৃতির ফোনটা অনেকখন যাবত বাজছে৷ কিন্তু স্মৃতি ফোন তুলছে না। এখনো শাড়ি টাও খুলে নি। উদাসীন ভাবে বেলকনিতে বসে আছে। পাশেই ফোনটা রাখা। ফোন বাজার আওয়াজটা কানে ঢুকছে কিন্তু তুলতে ইচ্ছে করছে না। ভীষণ রাগ হচ্ছে ওই লোকটার ওপর। কতোবড় অসব্ভ্য নিজের গায়ে হলুদের নিজেই বোরকা পরে এসেছে। সবাই বুঝে গেলো কি একটা বাজে পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো?
ভাগ্যিস বুঝে যায় নি ওটা আবিরই ছিলো।
হঠাৎ পেটে শীতল অনুভব হতেই চট করে ভাবনার জগৎ থেকে বের হয় স্মৃতি। বেশ খানিকটা চমকে যায়।
সেই শীতল হাতের ওপর নিজের হাত দুটো দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করে।
মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে যায় এক জোড়া তৃহ্ম চোখের সাথে। যেই চোখে ছিলো এক রাশ মাদকতা।
সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয় স্মৃতি।
“আআপনি এখানে?
এতস্থত বোধ করে রিনরিনিয়ে বলে স্মৃতি।
” বাহহ রে সবাই আমার বউকে হলুদ মাখালো আমি একটু মাখাবো না?
কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে আবির। চোখে মুখে তৃপ্তির হাসি।
স্মৃতি ঠোঁট কামড়ে চোখ বন্ধ করে।
“ছাড়ুন হয়েছে
হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে স্মৃতি।
” যদি না ছাড়ি?
স্মৃতির হাত দুটোকে আকড়ে ধরে শরীরের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে আবির।
“নাছাড়লে কিছু করার নেই। জোর তো সব সময় আপনিই খাটাতে পারেন। আমার তো সেই অধিকার নেই মিস্টার আবির।
খুব আবেগী হয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বলে স্মৃতি।
আবির হাসে।
” তাহলে মেনে নিলে তোমার অধিকার চলবে না? আমি কিন্তু অতোটাও খারাপ না। তবে হ্যাঁ ভালোবাসার হ্মেএে কোনো অধিকার খাটবে না। আমার পাওনা আমি আদায় করে নিতে জানি।
স্মৃতির মাথায় হালকা মাথা ঠেকিয়ে বলে আবির।
স্মৃতিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় আবির। স্মৃতি চোখ বন্ধ করে আছে।
স্মৃতির কানের দুল খুলে দেয়। একে একে সব গহনা খুলে দেয়। গলায় মুখে হলুদ মাখিয়ে দেয়।
শাড়ির পিন খুলতে গেলে স্মৃতি আবিরের হাত দুটো ধরে ফেলে।
“প্লিজ না
রিনরিনিয়ে বলে স্মৃতি।
” আমি পারবো।
“ওকে
তাহলে আমি আসি।
আবির যেতে নিলে স্মৃতি আবার আবিরের বা হাতটা ধরে। আবির ভ্রু কুচকে তাকায় স্মৃতির দিকে।
” এখান দিয়ে লাফিয়ে যাবেন না। মই বেয়ে নামুন
আদেশের সুরে বলে স্মৃতি।
আবির হাসে। স্মৃতির মুখে লেপ্টে থাকা ছোট চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে স্মৃতির কপালে চুমু এঁকে দেয় আবির।
“ভালোবাসি তাই
এতোটা রিক্স নিয়ে তোমার পানে ছুটে আছি।
❤️❤️❤️
ফজরের আজানের সময় ঘুম ভেঙে যায় তানহার। অভির বুকের সাথে লেপ্টে ঘুমিয়ে ছিলো। অভির নিশ্বাস তানহার চুলের ভাজে পরছে। তানহা মিষ্টি হাসে। আরমোরা ভেঙে উঠে বসে। তানহা উঠতেই নরেচরে পাশ ফিরে শয়।
তানহা উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। গোলাপি রংয়ের পর্দাটা সরিয়ে দিতেই একরাশ বাতাস ছুঁয়ে দিয়ে যায় তানহার শরীর। কেঁপে ওঠপ তানহা। মনে পরে যায় রাতে কথা। লজ্জায় নেতিয়ে ওঠে। মুখে ফুটে ওঠে লজ্জামাখা হাসি।
” জীবনটা পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে। এক জীবনে এতো সুখ লেখা ছিলো আমার কপালে? কখনো কোনো কষ্টই পেলাম না। জীবনের স্বাদটা উপলব্ধি করতেই পারলাম না। তবে হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ আমাকে এতো সুন্দর একটা জীবন দেওয়ার জন্য। এতো ভালো বাবা মা পরিবার আর স্বামী দেওয়ার জন্য।
অনেকখন যাবত অভি বিছানায়,বসে হাসফাস করছে। ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। বারবার নিজেকে সাহসী করে তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু হচ্ছে না। কিভাবে যাবে সকালে সবার সামনে দিয়ে?
তানহা গোছল সেরে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। অভিকে হাসফাস করতে দেখে ভীষণ হাসি পাচ্ছে তানহার।
“এই তুমি গোছল কেনো করছো?
অভি কপালে ভাজ ফেলে বলে।
” মানে কি?
তানহা রাগী সুরে বলে।
“তারাতাড়ি চুল শুকাতে হবে।
অভি তারাহুরো করে তানহাকে খাটে বসায়। ফ্যান ছেড়ে দেয়। সাথে নিজেও ফু দিচ্ছে।
এভাবে তানহা বাইরে গেলে মানসম্মান থাকবে না। একে তে তানহার রুমে তারওপর আবার
নাহ নাহ এটা হতে দেওয়া যাবে না।
ফুল স্পিডে ফ্যান ঘুরছে তবুও অভিকে ঘামছে।
তানহা হাসবে না কি কাঁদবে বুঝতে পারছে না। এটা বর? এতো লাজুক কারো বর হয়?
চলবে