ভালোবাসি তাই ২ পর্ব -৩১

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ৩১
#তানিশা সুলতানা

অভির ভাগ্যটা আজকে খুব ভালো। দুজনকে এক সাথে রুম থেকে বের হতে কেউ দেখে নি। মনে মনে মহা খুশি অভি। একেই বলে কপাল।
তানহা রাগে ফুসফুস করছে। ধুরর আজকেও কেউ দেখলো না। তবে তানহাও কম যায় না। আজকে সবাই বলেই ছাড়বে যে ওরা বিবাহিত। এভাবে লুকোচুরি আর কতো দিন। আস্ত একটা বিয়ে করা স্বামী থাকতেও সিঙ্গেল পদবি নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে।

“তানহা এদিকে আয়। দেখ বিরিয়ানিটা কতো মজা হইছে।
তমা বেগম বিরিয়ানি থেকে মাংসের টুকরো বেঁছে বেছে মুখে পুরে বলে।
বিরিয়ানি আর লিপস্টিক হলে ওনার আর কিছুই লাগে না। কালকের বাসি বিরিয়ানি এখনো খেয়ে যাচ্ছে।
” মা বাসি বিরিয়ানি কেনো খাচ্ছো? পেটখারাপ করবে তো।
তানহা কোমরে হাত দিয়ে বলে।
তমা বেগম কাচুমাচু হয়ে বসেন৷ ওকে ডাকাই ভুল হয়েছে। মনে মনে বলে।
“তানহা অভিকে খাবারটা দিয়ে আয় তো মা
অভির মা এক প্লেটেই দুজনের খাবার বেরে দেয়।
তমা বেগম মুখ বাঁ কায়।
” আনিকা দুজনের খাবার দিয়ে দাও। নতুন নতুন বিয়ে করেছে এক সাথে বসে তো খেতে ইচ্ছে হবে ওদের।
আহাম্মদ চৌধুরী তমা বেগমের পাশে বসতে বসতে বলে।
শশুড় মশাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে লজ্জায় পরে যায় তানহা। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
“তমা বেগম রাগে ফুসছে। এই লোকটা সব সময় খোঁটা দেওয়ার ধান্দায় থাকে।
” মা গেলাম
তানহা মায়ের রাগটা বুঝতে পেরে বলে।
বিশ্ব জয়ের হাসি দেয় তমা বেগম।
“এই না হলো আমার মেয়ে। কোনো কাজ আমার পারমিশন ছাড়া করে না। আমি বললে হ্যাঁ না বললে না।
আরেক টুকরো মাংস মুখে পুরে বলেন তমা বেগম।
তানহা বড় বড় পা ফেলে চলে যায়। এদের এখানে থাকা মানেই ঠেস দিয়ে কথা গুলো শোনা।

অভি আকাশ রাব্বি আর রাফিদ বসে বসে বউ বসানোর স্টেজ ঠিক করছিলো। তানহা রুমে অভির খাবারটা রেখে ওদের কাছে আসে।
” ও গো শুনছেন
আপনার মা আপনাকে ডাকছেন
তানহার ডাক দেওয়ার ধরণ দেখে ওদের হাত থেমে যায়। অভি ভ্রু কুচকে তাকায়।
“মা কেনো ডাকছে আমায়?
কপালে ভাজ ফেলে বলে অভি।
তানহা দাঁত কটমট করে তাকায়।
” দুধের শিশু তো আপনি
তাই ফিটার খাওয়াতে ডাকছে
দাঁতে দাঁত চেপে বলে তানহা। তারপর হনহনিয়ে চলে যায়। সবাই হো হো করে হেসে ওঠে।
“কচি খোঁকা
আকাশ পিঞ্চ মেরে বলে।
অভির ওদের দিকে কটমট চাহনিতে তাকিয়ে চলে যায়।

তানহা বিছানায় গালে হাত দিয়ে গোল হয়ে বসে ছিলো।
” ডাকলা কেনো?
অভি গা থেকে ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বলে।
“আপনার বউ না খেয়ে বসে আছে আপনার সাথে খাবে বলে।
তানহা জগতে থেকে গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলে।
অভি মুচকি হাসে।
” জাস্ট ফ্রেশ হয়ে আসছি
বলে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।

অভি রুটি ছিড়ে তাতে করলা দিয়ে তানহার মুখে দেয়।কোনো কথা না বলেই তানহা গিলে নেয়।
“বাহহহ আপনি দেখি করলা খাওয়া শিখে নিয়েছেন?
মুখে খাবার পুরে বলে অভি।
” যেহেতু করলার সাথেই সারাজীবন থাকতে হবে। তো করলা খাওয়া তো শিখতেই হবে
অভি হাসে।
“ভালোবাসি আপনাকে
অভির গলা জড়িয়ে আদুরি গলায় বলে তানহা।
” ব
আমিও ভালোবাসি
তানহার নাক টেনে দিয়ে বলে অভি।
“কাকে?
” আমার বেবির আম্মুকে
তানহা হেসে ফেলে।

“আমরাও ভালোবাসি
চমকে অভির থেকে দুরে সরে যায় তানহা।
দরজার দিকে তাকাতেই লজ্জায় অভির বুকে মুখ লুকায়। হালিজা মায়া রাফিদ রাব্বি আকাশ খিলখিল করে হেসে ওঠে।
“আজ একটা বউ নাই বলে
আকাশ হাত পা ছড়িয়ে বলে কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে।
” আহারে বেচারি

🥀🥀🥀
আবির আর স্মৃতির বিয়েটা খুব ভালো ভাবেই সম্পূর্ণ হয়।
এখন স্মৃতি বসে আছে আবিরের রুমে। রুমটাকে খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজিয়েছে। গোলাপ গাঁধা আর রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে। বিয়ে জীবনে একবারই হয় আর এই বাসর ঘরটাও একবারই সাজানো হবে। তো এটাকে নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না। ফোনটা নিয়ে বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নেয় স্মৃতি। তারপর মুখ টিপে হাসে। আজকে মিস্টার আবিরকে জটিল ভাবে নাকানি চুবানি খাওয়াবে স্মৃতি।
“আমাকে কাঁদানো না
এবার দেখো আমি কি জিনিস।
বিছানার ওপর থেকে গোলাপের পাপড়ি গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়। তারপর লাগেজ থেকে পাতলা সিল্কের একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকে।
হাতা কাটা ব্লাউজ আর পাতলা ফিলফিলে শাড়ি। সদ্য গোছল করায় চুল গুলো ভিজে আছে। টিপ টিপ করে পানি পরছে চুল থেকে।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঝাড়ছে স্মৃতি।
আবির রুমে ঢুকে বড়সড় একটা ঝটকা খায়। এটা কাকে দেখছে?
চোখ কচলে আবার তাকায়। নাহহহ ঠিকই তো দেখছে্ এটাই তো আবিরের সদ্য বিয়ে করা বউ।
দরজা বন্ধ করে দিয়ে এসে স্মৃতির পেছনে দাঁড়ায় আবির।
” ফিতাটা বেঁধে দাও
স্মৃতি আবিরের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলে।
চমকে ওঠে আবির। মনে হচ্ছে বুকের ভেতর কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে।
“আআআমি
নার্ভাস হয়ে বলে আবির।
” তো এখানে কি আর কেউ আছে? থাকলে অবশ্য তাদেরই বলতাম।
সোজাসাপটা বলে স্মৃতি।
ভেবাচেকা খেয়ে যায় আবির।
কাঁপা কাঁপা হাসে ফিটা দুটো ধরে।
“একদম শরীরে টাচ করবা না।
ধমকের সুরে বলে স্মৃতি।
আবির তাই করে শরীরে ছোঁয়া না লাগিয়েই ফিতাটা বেঁধে দেয়।
” রুমটা পরিষ্কার করো। অপরিষ্কার রুমে আমি থাকতে পারি না।
হাতের তোয়া লেটা আবিরের হাতে দিয়ে বলে স্মৃতি।
“আমি?
অবাক হয়ে বলে আবির।
” ইয়েস আপনি
তারাতাড়ি
বলেই বেলকনিতে পা বাড়ায়।
“বাসর রাত কই রোমান্স করবো তা না এখন আমাকে রুম পরিষ্কার করতে হবে?
এক রাশ বিরক্তি নিয়ে আবির রুমের ফুল গুলো খুলছে। আগে জানলে সাজাতেই না করে দিতো।

স্মৃতির শাড়ির আচল টা ছেড়ে দিয়েছে। নায়িকাদের মতো করে দাঁড়িয়ে আছে। আবিরের চোখ দুটো বারবার ওই দিকেই যাচ্ছে।
” এদিকে কেনো তাকাচ্ছো? তারাতাড়ি কাজ শেষ করো। ঘুমবো আমি।
আবির মেকি হাসে। কাজে মন দেয়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here