অন্তঃকরণে তোরই পদচারণ পর্ব -৩৫+৩৬

#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-৩৫
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★ভারি চোখ দুটো অনেক কষ্টের পর মেলে তাকাতে সক্ষম হলো খুশি। মাথাটাও প্রচন্ড ভারি হয়ে আছে। এক হাত মাথায় চেপে ধরে চোখ খুলে তাকালো খুশি। তবে মনে হচ্ছে এখনো ও চোখ পুরোপুরি খুলতে পারেনি। কারণ চোখের সামনে কালো আধার ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। খুশি এবার চোখের পাতা ভালো করে ডলে নিয়ে আবারও মেলে তাকালো। তবুও সেই একই কালো আধার দেখতে পাচ্ছে সে। খুশি এবার ধড়ফড়িয়ে নড়েচড়ে বসলো। আশেপাশে মাথা ঘুড়িয়ে শুধু গাঢ় অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। ভয়ে জমে গেল খুশি। এ এ আমি কোথায় এসেছি? এটা কোন জায়গা?আমিতো তখন মেলায় ছিলাম। এখানে কি করে এলাম? প্রহর কোথায়? প্রহর…. প্রহর…খুশি ভয়ার্ত কন্ঠে চিৎকার করে প্রহরকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু কোথাও সারাশব্দ পাচ্ছে না সে। খুশির হঠাৎ মনে পড়লো তখন মেলায় হঠাৎ কে যেন ওর নাকের সামনে কিছু স্প্রে করলো। ব্যাস তারপর থেকে আর কিছু মনে নেই। তা তারমানে কি কেউ ওকে কিডন্যাপ করে এনেছে? তবে কি ওই ভয়ংকর লোকটা আমাকে কিডন্যাপ করে এনেছে? কথাটা ভাবতেই ভয়ে কলিজা কেঁপে উঠল খুশির। এ এখন কি হবে? আমি কি করবো? আর এটা কোন জায়গা?

খুশি অন্ধকারের মাঝে হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করলো ও কোথায় আছে। হাতের সাথে কিছুক্ষণ পরপরই শুধু গাছ বাঁধছে। আর পায়ের নিচে মাটি আর পাতার ঢের। চাঁদের হালকা আলোয় খুশি বুঝতে পারলো ও জঙ্গলের ভেতর রয়েছে। হয়তো বিচের ধারে ঝাউবনের মাঝে। এই ঘন অরণ্যের মাঝে এখন কোনদিকে যাবে খুশি? কিছুই বুঝতে পারছে না ও। একা এই নির্জন জঙ্গলে ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে সে। দুচোখে নেমে আসছে করুন কান্নার ঝর্ণাধারা। ও কিভাবে এখান থেকে বের হবে? প্রহর… তুমি কোথাই? প্লিজ নিয়ে যাও আমাকে এখান থেকে। আমার অনেক ভয় করছে। প্রহর… শুনতে পাচ্ছ তুমি? তোমার খুশি এখানে হারিয়ে গেছে। প্লিজ জলদি এসো…

হাঁটু মুড়ে বসে কাঁদতে লাগলো খুশি । চারিদিকে গভীর ঘেরা অরণ্যে কোনদিকে সঠিক পথ সেটা কি করে বুঝবে ও? কিভাবে বের হবে এখান থেকে? প্রহর? ওর প্রহরের নাজানি কি অবস্থা হচ্ছে ওকে না পেয়ে। কিভাবে ফিরবো আমার প্রহরের কাছে? সেকি আর কখনো ওর প্রহরের কাছে ফিরতে পারবেনা? ভয় আর চিন্তায় মুষড়ে যাচ্ছে খুশি। হৃদপিণ্ড আর শরীর দুইই সমানতালে কাঁপছে। আর ওর ভয়ের মাত্রা আরও বেড়ে গেল হঠাৎ জঙ্গলের জীব জন্তুর ভয়ংকর সব আওয়াজে। আচমকা চারিদিক থেকে নানানরকম জীবের হুংকার শোনা যেতে লাগলো। এবার বুঝি আতঙ্কেই জান বেড়িয়ে যাবে খুশির। খুশি কোনরকমে মনে সামান্য জোর বল এনে উঠে দাঁড়িয়ে দিশাহীন ভাবে দৌড়াতে লাগলো। দৌড়াতে দৌড়াতে অন্ধকারে হঠাৎ ওর পায়ের নিচে কোন কাটা জাতীয় কিছু বিঁধল। খুশি ব্যাথায় আর্তনাদ করতে নিয়েও আবার নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরলো। জঙ্গলের প্রাণীরা যাতে ওর আওয়াজ না শুনতে পায় সেকারণে। খুশি অন্ধকারে হাতড়িয়ে পায়ের কাটাটা টান দিয়ে ছাড়ালো। সাথে সাথে পা দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হতে লাগলো। যন্ত্রণায় খুশির চোখ মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। তবুও অনেক কষ্টে ওই ক্ষত পা নিয়েই খুশি আবারও দৌড়াতে লাগলো।
__

রাতের ১১টা বাজতে চললো। গত চার ঘন্টা যাবৎ খুশিকে পাগলের মতো হন্যে হয়ে খুঁজে যাচ্ছে প্রহর। ফাহিম আর তিশাও খোঁজার চেষ্টা করছে খুশিকে।প্রহর এখানকার পুলিশকেও জানিয়েছে। তারাও নিজেদের মতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে খুশির কোন খোঁজ পায়নি ওরা। প্রহরের মাথা শূন্য হয়ে গেছে। এতটা সময় ধরে খুশি নিখোঁজ। ও কোথায়, কি অবস্থায় আছে, ওর সাথে কোন অঘটন হলো নাকি এসব ভয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছে প্রহর। হৃৎপিণ্ডের কম্পন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। খুশি বিহীন সবকিছু যেন বিষাক্ততায় ভরে উঠছে। মাথায় চুল টেনে ধরে নিচে হাঁটু গেড়ে ধপ করে বসে পড়লো প্রহর। নিজেকে চরম ভয়ংকর শাস্তি দিতে ইচ্ছে করছে ওর। সব আমার কারণে হয়েছে। আমি কেন আমার খুশিকে একা ছাড়লাম? যখনি আমি ওকে একা ছাড়ি তখনই ওর সাথে কিছু না কিছু হয়। আসার পর থেকেই ওর সাথে কিছু না কিছু হচ্ছে। তারপরও কেন আমি ওকে একা ছাড়লাম? কেন? কেন?কেন? সব আমার কারণে হয়েছে। আমি পারিনি আমার খুশির খেয়াল রাখতে। আই জাস্ট হেট মাইসেল্ফ।

ফাহিম এসে প্রহরের কাঁধে হাত রেখে বললো।
–নিজেকে সামলা প্রহর। এভাবে ভেঙে পড়লে কিভাবে চলবে? ভাবিজীকে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।

প্রহর করুন বেদনার্ত কন্ঠে বললো।
–কিভাবে সামলামো ফাহিম আমি? বল কিভাবে? গত চার চারটা ঘন্টা ধরে আমার খুশি আমার কাছে নেই। চার চারটা ঘন্টা, ভাবতে পারছিস তুই। আর এই অপদার্থ আমি কিচ্ছু করতে পারছিনা। নিজেকে এতো অসহায় আমার কখনোই মনে হয়নি।একবার আগেও ওকে হারিয়ে কতো সাধনার পর ওকে আবার ফিরে পেয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমার অসাবধানতার কারণে আমার খুশিকে আবার হারিয়ে ফেললাম। সব আমার দোষ। আমার দোষ।
নিজের ওপর রাগ করে মাটিতে সজোরে ঘুষি মারতে লাগলো প্রহর।

ফাহিম ওকে কোনরকমে থামিয়ে দিয়ে বললো।
–বাচ কর ইয়ার।এখন নিজেকে দোষারোপ করার সময় না। আমাদের ভাবিজীকে খুজে বের করতে হবে। নিজেকে শক্ত কর।

প্রহর উঠে দাঁড়িয়ে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ খুঁজে বের করতে হবে। আমার খুশিকে আমি যে করেই হোক আমি খুঁজে বের করবোই। অবশ্যই খুজে বের করবো।

কথাটা বলেই প্রহর আবারও পাগলের ছুটলো খুশিকে খুঁজতে। ঝাউবনের দিকে এগিয়ে গেল খুঁজতে খুঁজতে। ফাহিমও গেল প্রহরের সাথে। রাত অনেক হওয়ায় ফাহিম তিশাকে রিসোর্টে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন শুধু ওরা দুজনেই খুঁজছে খুশিকে। হাতে টর্চ নিয়ে দুজন হন্যে হয়ে খুঁজে যাচ্ছে। হঠাৎ ঝাউবনের দিকে খোজাখুজি করতে করতে চকচকে কোন কিছু দেখতে পেল মাটিতে। প্রহর হাত বাড়িয়ে সেটা তুলে ভালো করে খেয়াল করে দেখলো এটা খুশির কানের দুল। যেটা সে আজ বিচে আসার আগে পড়েছিল। প্রহর ফাহিমের উদ্দেশ্যে বললো।
–ফাহিম এটা খুশির কানের দুল।

–আর ইউ শিওর??

–অফকোর্স ইয়ার। ওর কোন জিনিস চিনতে আমি ভুল করতে পারি নাকি? আজ সকালেই খুশি এগুলো পড়ে এসেছিল।

–তাহলে আমার মনে হয় ভাবিজী হয়তো এই ঝাউবনের মাঝেই কোথাও আছে। আমরা ভালো করে খুঁজলেই পেয়ে যাবো।

প্রহর আর এক মুহূর্তও আর বিলম্ব না করে ছুটে গেল ঝাউবনের দিকে। টর্চের আলো এদিক ওদিক ছড়িয়ে খুশিকে খুঁজতে লাগলো। ফাহিমও ওর সাথে সাথে খুঁজে চলেছে। অনেকক্ষণ খোঁজার পর হঠাৎ মাটিতে রক্তের দাগ দেখতে পেল প্রহর। অন্তর কেঁপে উঠল প্রহরের। ভয়ার্ত কন্ঠে বললো।
–র রক্ত.. ফাহিম রক্ত কেন এখানে? এ এটা নিশ্চয় খুশির হবে না। তাইনা বল?

রক্ত দেখে ফাহিমেরও চিন্তা হচ্ছে। খুশির সাথে কোন অঘটন হয়নিতো? ফাহিম মাটিতে ভালো করে খেয়াল করে কিছু একটা দেখে বললো।
–রিলাক্স প্রহর এই দেখ এখানে রক্ত লাগা কাটা দেখা যাচ্ছে। মনে ভাবিজীর পায়ে কাটা বিঁধেছিল। সেটারই রক্ত। তারমানে ভাবিজী আশেপাশেই কোথাও আছে। এটা একটা ভালো খবর আমাদের জন্য। এখন অতিশীঘ্রই ভাবিকে পেয়ে যাবো দেখিস।

–হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস। আমার খুশিকে পেয়ে যাবো আমি। খুশিইই..খুশিইই…
খুশির নাম ধরে উচ্চস্বরে ডাকতে ডাকতে খুশিকে খুঁজতে লাগলো ওরা। রক্তের দাগ যেদিকে যাচ্ছে। ওরাও সেদিকে ছুটতে লাগলো।
__

খুশি ক্ষত পায়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়েই যাচ্ছে। কোন দিশায় যাচ্ছে তা জানা নেই। শুধু মনে হচ্ছে দৌড়ালেই বুঝি প্রাণে বাঁচবে ও। তবে আর বেশিক্ষণ দৌড়াতে পারলোনা ও। হঠাৎই থেমে গেল ওর কদম। খুশির সামনে প্রকট হলো আবারও সেই ভয়ংকর মানব। মুখে তার লাল আলো ওয়ালা মনস্টার মাস্ক লাগানো। ভয়ংকর পৈশাচিক হাসি হাসতে লাগলো সে। সাথে বের করলো তার সেই ধারালো ছুরি। যেটা সে খুশির দিকে তাক করে আছে। খুশির এতক্ষণ যাও বা মনোবল ছিল তাও এবার নিঃশেষ হয়ে গেল। বিষম ভয়ে অন্তর,আত্মা, হৃৎপিণ্ড তাড়াস তাড়াস করে একসঙ্গে মুচড়ে যেতে লাগলো। এখন কি করবে ও? আর কোথায় পালাবে? তবে কি শেষ এখানেই?

সব আশার আলো যখন নিভে যেতে লাগলো তখনই যেন নতুন প্রাণের আলো ফিরে পেল খুশি। হঠাৎ প্রহরের আওয়াজ শোনা গেল। ওইতো পাগলের মতো ডেকে প্রহর ওর খুশিকে। প্রহরের কন্ঠ ভেসে আসতেই সামনের ভয়ংকর মানব টি হঠাৎ করে ওখান থেকে সরে গেল। খুশি প্রহরের কন্ঠ অনুসরণ করে সেদিকে এগিয়ে গেল।

প্রহর উন্মত্ত হয়ে খুশিকে খুঁজে যাচ্ছে। চিল্লিয়ে ডাকছে,
–খুশিইইই…..খুশিইইই…কোথায় তুমি??দেখ আমি এসে গেছি। তোমার প্রহর চলে এসেছে। খুশিইইই….

তখনই সামনে থেকে কারো আসার পদধ্বনি পেল ওরা। টর্চের আলো সামনে ধরে দেখলো প্রহরের অন্তঃপ্রাণ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ওর দিকে ছুটে আসছে। প্রহর যেন প্রাণের আলো ফিরে পেল।খুশি ক্লান্ত করুন সুরে ডাকলো প্রহরকে। অতি ভারাক্রান্ত আবেগপ্রবণ হয়ে দ্রুত ছুটে গেল প্রহর ওর প্রাণভোমরার দিকে।খুশির কাছে এসে সর্বশক্তি দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে মিশিয়ে নিলো নিজের সাথে। যেন হৃৎপিণ্ডের ভেতর ঢুকিয়ে নিতে পারলে শান্তি পেতো। এতক্ষণে বুঝি দেহে প্রাণের সঞ্চালন হলো। প্রহর দুই হাতে খুশির মুখটা ধরে সারামুখে পাগলের মতো চুমুতে ভরিয়ে দিলো। তারপর আবারও বুকের মাঝে ভরে নিয়ে অস্থির কন্ঠে বললো।
–কোথায় গিয়েছিলে সোনাটা আমার? জানো তোমাকে না পেয়ে আমার কি অবস্থা হয়েছিল? জান বেড়িয়ে যাচ্ছিল আমার। আর কখনো এভাবে আমাকে ছেড়ে যেওনা কলিজাটা। কখনো না।

হঠাৎ প্রহর অনুভব করলো খুশির শরীর কেমন ছেড়ে দিয়েছে। ঘাবড়ে গিয়ে প্রহর দুই হাতে খুশির মুখটা ধরে সামনে এনে দেখলো খুশি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। ভার ছেড়ে দিয়ে নিচে পড়ে যেতে নিলে দ্রুত ধরে ফেললো প্রহর। ভয়ে কলিজা শুকিয়ে এলো প্রহরের। খুশির গালে হাত রেখে হালকা ঝাঁকিয়ে ভয়ার্ত কম্পিত গলায় বললো।
–খু খুশি? এ এই খুশি? খুশিরাণী? চোখ খোল সোনা। প্লিজ সোনা এভাবে শাস্তি দিওনা আমাকে। চোখ খোল প্লিজ।

ফাহিম প্রহরকে আস্বস্ত করে বললো।
–প্রহর শান্ত হ। শুধু জ্ঞান হারিয়েছে। হয়তো অতিরিক্ত ভয় আর স্ট্রেসের কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। ঠিক হয়ে যাবে তুই চিন্তা করিস না।

–কিভাবে চিন্তা না করবো? ফাহিম ওর কিছুদিন আগেই এতবড় একটা মেজর অপারেশন হয়েছে। এইমুহূর্তে এভাবে জ্ঞান হারিয়ে ফেলায় যদি ওর কোন বড় সমস্যা হয় তখন কি করবো আমি? সব আমার দোষ। আমিই ওর খেয়াল রাখতে পারিনি।

–কিছু হবে না ভাবিজীর। এখন সময় নষ্ট না করে ওকে জলদি নিয়ে চল। সি নিডস ডক্টর ইমিডিয়েটলি।

প্রহর কোলে তুলে নিল খুশিকে। তারপর দ্রুত বেড়িয়ে এলো ওখান থেকে। ওরা চলে যেতেই গাছের আড়াল থেকে বেড়িয়ে এলো সেই অজানা মানব। কিছু একটা চলছে তার মস্তিষ্কে।
__

সময় এখন রজনীর মধ্যভগ। ঘড়ির কাঁটা একটা পেরিয়ে গেছে। বিছানায় শুয়ে আছে খুশি। জ্ঞান ফেরেনি এখনো। ডক্টর এসে দেখে গেছে খুশিকে। রিসোর্টে আসার সাথে সাথে রিসোর্টের কর্মীদের বলে ডক্টর কে আনিয়েছে প্রহর। খুশিকে দেখে জরুরি কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গেছে। আর বলে গেছে ঘন্টাখানিক পর জ্ঞান ফিরে আসবে। খুশির পায়ের কাছে ফ্লোরে বসে আছে প্রহর। আলতো হাতে ব্যান্ডেজ করা পা টা ধরলো। অশ্রুসিক্ত চোখে চেয়ে অধর ছোঁয়ালো পায়ের আঙুলে। বিড়বিড় করে বললো।
–অ্যাম সরি সোনা। আমি খেয়াল রাখতে পারিনি তোমার। তোমাকে দেওয়া প্রমিজ রাখতে পারিনি। আজ আমার অসাবধানতার জন্য তুমি কতো কষ্ট পেয়েছ। নিজেকে এরজন্য কখনো মাফ করতে পারবোনা আমি। অ্যাম সো সরি । তবে আজই শেষবার। এরপর আর কোন কষ্টের ছায়াও পড়তে দেবনা আমি তোমার ওপর। আর একটাবার সুযোগ দাও আমাকে। আজ আমি এই রহস্যের উদঘাটন করেই ছাড়বো। যে তোমাকে এতো কষ্ট দিয়েছে। তাকে এর থেকে শতগুণ ভয়ংকর শাস্তি দিবো আমি। আই প্রমিজ দ্যাট। শুধু তুমি একবার ঠিক হয়ে যাও।

রাত দুটোর পরে খুশির জ্ঞান ফিরে আসে। জ্ঞান ফেরার পর খুশি প্রহরকে সবটা খুলে বলে। প্রহর মনে মনে কিছু পরিকল্পনা করতে থাকে।
__

এরই মধ্যে দুদিন পার হয়ে যায়। খুশির পা এখন মোটামুটি অনেক টা ভালো। এই দুদিন আর ওরা রিসোর্টের বাইরে কোথাও যায়নি। প্রহর সারাক্ষণ খুশির সাথে সাথে থেকেছে। খুশিকে কোলে নিয়ে নিয়ে সবজায়গায় গিয়েছে। রিসোর্টের ভেতরই একটু ঘোরাঘুরি করেছে। এর মাঝে আর অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটেনি।

বেলা দুপুর এখন। লাঞ্চ করে খুশি একটু ঘুমিয়ে আছে। প্রহর মনে মনে কিছু ভেবে খুশির মাথার কাছে এসে কপালে চুমু দিয়ে বললো।
–ইউ টেক রেস্ট মাই কুইন। আমি কিছু কাজ সেরে আসছি।
কথাটা বলেই প্রহর চোখমুখ কঠিন করে বাইরে বেড়িয়ে এলো।

ঘন্টাখানিক পর, খুশি ঘুম ভেঙে চোখ মেলে তাকালো।তবে চোখ খুলে তাকিয়ে চোখের সামনে আবারও সেই ভয়ংকর মাস্ক ওয়ালা মানবকে দেখতে পেল। আতঙ্কে অস্থির হয়ে গেল খুশি। খুশি উঠে বসে ভয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো।
–দে দেখ চলে যাও এখান থেকে। আমার প্রহর আসলে কিন্তু তোমাকে ছাড়বেনা। প্রহর?? প্রহর… কোথায় তুমি?

সেই মানব টা এগিয়ে আসতে লাগলো খুশির কাছে। তবে আজ আর তার হাতে ছুরি নেই। কিছু একটা বলতে চাচ্ছে সে। তবে খুশি শুধু চিল্লিয়েই যাচ্ছে। মানব টা খুশির কাছে আসতে নিলেই ঠিক তখনই পেছন থেকে মানব টির গলা চেপে ধরলো প্রহর। এক হাতে গলা চেপে ধরে আরেক হাতে মানব টির দুই হাত একসাথে পিঠের কাছে চেপে ধরে চোয়াল শক্ত করে বললো।
–ইউর গেম ইজ ওভার মিস্ট্রি ম্যান। ইউ ক্যান নট হার্ম আস এনি মোর।

প্রহরকে দেখে একটু স্বস্তি পেল খুশি। প্রহর মানটিকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে বললো।
–তুই কি ভেবেছিস? তুই এভাবে চুপিচুপি আমার খুশিকে কষ্ট দিয়ে যাবি আর আমি তোকে ধরতে পারবোনা? আমি তোর হিস্ট্রি বের করার জন্যই গিয়েছিলাম। রিসোর্টের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে দেখতে পেলাম তোর কৃতকার্য। আমি ইচ্ছে করেই লুকিয়ে ছিলাম। যাতে তুই খুশি একা আছে ভেবে ওর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করিস। আজ আমি তোকে ছাড়বোনা। আমার খুশিকে কষ্ট দিতে চেয়েছিলি না তুই? আজ তোকে বোঝাবো কষ্ট কাকে বলে। তার আগে একটু তোর মুখখানা তো আগে দেখি। দেখিতো আমার এই অজানা শত্রুটা কে?

কথাটা বলে প্রহর ওই ব্যাক্তির মুখ থেকে মাস্ক টা একটানে খুলে ফেললো। মাস্কের পেছনের ব্যাক্তির মুখ দর্শন হতেই প্রহর খুশি দুজনেই অবাক হয়ে গেল। ওরা দুজন দুজনার মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। তারপর অবিশ্বাস্য কন্ঠে বললো।
–তুমি?????#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-৩৬
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★যাকে কোন ভয়ংকর দানব দৈত্য ভেবে ভয়ে খুশি সিটিয়ে যেত। সেই ভয়ংকর মুখোশের আড়ালে যে কোন অতী সুন্দরী মেয়ে আছে তা জানাই ছিলোনা ওদের। মাস্ক খুলে মেয়েটিকে দেখে ওরা একটু থতমত খেয়ে গেল। খুশির মেয়েটিকে কেমন চেনা চেনা লাগছে। কোথায় দেখেছে মনে করতে পারছেনা। তবে প্রহর মেয়েটিকে মোটেও চিনতে পারছেনা। প্রহর ভ্রু কুঁচকে বললো।
–এই মেয়ে কে তুমি? কি উদ্দেশ্য তোমার? আর এসব কেন করছ তুমি?

মেয়েটি হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে তেজী কন্ঠে বললো।
–আরে বাহ্, আমার জীবন নষ্ট করে দিয়ে এখন বলছ আমি কে?

মেয়েটির কথায় প্রহর ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। যাকে সে চিনেই না তার আবার জীবন কিভাবে নষ্ট করলো? মনে মস্তবড় একটা প্রশ্ন জাগ্রত হলেও তার বহিঃপ্রকাশ করতে পারলোনা প্রহর। তার আগেই খুশি তার অতি মহামূল্যবান প্রশ্ন ছুড়ে মারলো প্রহরের দিকে। হঠাৎ ভয়ভীতির চ্যাপ্টার বন্ধ রেখে ট্রিপিক্যাল বউয়ের রুপে চলে এলো খুশি। সে প্রহরের দিকে সন্দেহের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
–এই এই কি বলছে এই মেয়ে? তুমি ওর জীবন নষ্ট করেছ মানে? সত্যি করে বলো তুমি কি করেছ ওর সাথে? ওর সাথে তোমার কোন লাফরা ছিলো নাকি? বলো? বলো?

প্রহর যেন আকাশ থেকে পড়লো। কোথাকার কথা কোথায় চলে যাচ্ছে। হচ্ছে টা কি এসব কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না ওর। বহুত কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে খুশির কথার প্রতিত্তোর দেওয়ার জন্য মুখের সাটার খুলতেই তা আবারও ঠাস করে বন্ধ করে দিয়ে খুশি তার বোমা ছুড়লো।
–বলো কি করেছ তুমি? বাই এনি চাঞ্চ তুমি এই বেচারিকে প্রেগন্যান্ট টেগন্যান্ট করে দাও নিতো?

বাকরুদ্ধ, হতভম্ব, হতবিহ্বল হয়ে গেল প্রহর। নিজেকে আপাতত এলিয়েন জাতীয় কিছু মনে হচ্ছে ওর। দুনিয়াতে আছে নাকি মহাশূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছে সেটাই বর্তমানে আবিস্কার করছে সে। না মানে নিজের কথা নাহয় বাদই দিলো সে। কিন্তু যার কারণে এইকয়দিন জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল। নাওয়া খাওয়া হারাম হয়ে গিয়েছিল। আজ সেই কুখ্যাত অপরাধী ব্যাক্তি কিনা খুশির কাছে বেচারি হয়ে গেল? আর নিজের স্বামীর মাথায় দুনিয়ার যত আজগুবি দায়ভার ঢেলে দিচ্ছে ? বাহ্ এ কার সাথে সংসার করছি আমি? এই দুঃখে আপাতত কচু গাছের সাথে গলায় দড়ি দিতে ইচ্ছে করলেও আপাতত সেটা স্কিপ করলো প্রহর। নিজের বেদনা গিলে নিয়ে আবারও কিছু বলার প্রচেষ্টায় আরও একবার ব্যার্থ হলো সে। তবে এবার খুশির বদলে মুখ খুললো সামনের মেয়েটি। সে খুশির উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
–আরে আরে কি বলছেন এসব? এমন কিছুই হয়নি আমাদের ভেতর।

খুশি হঠাৎ হাসিমুখে বলে উঠলো।
–আরে আমি জানি সেটা। আমিতো শুধু মজা নিচ্ছিলাম। আসলে আমার না টিভি সিরিয়ালের নায়িকাদের মতো হাসব্যান্ড এর সাথে এমন ঝগড়া করার খুবি ইচ্ছে ছিল। তাই একটু মজা নিলাম আরকি।

প্রহর এবার বিরক্ত হয়ে বললো।
–উইল ইউ শাট আপ খুশি? মজা চলছে এখানে কোন?
তারপর সামনের মেয়েটির উদ্দেশ্যে বললো।
–আর তুমি? কে তুমি হ্যাঁ? আর কি আবোল তাবোল বলছ এসব? আমিতো তোমাকে চিনিই না। তাহলে জীবন নষ্ট এন অল এসব কোথাথেকে এলো?

মেয়েটি আবারও তেজী কন্ঠে বললো।
–আরে বাহ্ যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলেন তাকে এখন চিনেনই না? আমার লাইফ হেল করে দিয়ে এখন না চেনার ভান করছেন?

প্রহর ভ্রু কুঁচকে বললো।
–বিয়ে করতে যাচ্ছিলাম মানে?

হঠাৎ খুশি মাঝখান থেকে লাফিয়ে বলে উঠলো। –আরে হ্যাঁ মনে পড়েছে মনে পড়েছে। আরে এটাই তো সেই মেয়েটা যার সাথে তোমার বিয়ে হতে যাচ্ছিলো। সেদিন ছবিতে এই মেয়েটাকেই দেখেছিলাম।

প্রহর এবার বুঝতে পারলো ব্যাপার টা। সে বলে উঠলো।
–ও আচ্ছা তুমিই তাহলে সেই মেয়ে?তাহলে এখন ব্যাপার টা বুঝতে পারলাম। তারমানে তোমাকে সেদিন বিয়ে না করে তোমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম দেখে তুমি আমার ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এসব করছ তাইতো? আমাকে বিয়ে করতে পারোনি বলে এসব করবে তুমি?

মেয়েটি তখন তাচ্ছিল্যের সুরে এটিটিউট নিয়ে বললো।
–ও হ্যালো! গিভ মি আ ব্রেক।নিজেকে কি মনে করেন আপনি? কে আপনাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে?

এবার প্রহর খুশি দুজনেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। মেয়েটার নিশ্চয় তার ছিঁড়া আছে। এ ব্যাপারে আর কোন সন্দেহ নেই। প্রহর ভ্রু কুঁচকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই খুশি প্রহরের এক হাত জড়িয়ে ধরে ওর জন্য স্টান্ড নিয়ে বললো।
–আরে আরে কে বলেছে কেউ বিয়ে করতে চায়না? আমি বিয়ে করতে চাই। একবার হয়েছে আরও হাজার বার চাই। শুধু আমি না আরে আমার প্রহরের জন্য হাজার টা মেয়ে লাইন ধরে বসে আছে। লেখিকার পাঠিকারা তো আমার প্রহরকে নিয়ে রিতীমত টানাটানি শুরু করে দেয়। যার জন্য সবার মনে হাহাকার আর তাকে তুমি দামই দিচ্ছ না। এই ঘোর অন্যায় দাবি আমি কিছুতেই মানবো না।

প্রহর আবারও দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
–খুশি প্লিজ ফর গড সেক উইল ইউ কিপ কোয়াইট ফর আ মিনিট? লেট মি টক।

খুশি বাধ্য মেয়ের মতো ঠোঁটের ওপর আঙুল চেপে মাথা নাড়ালো। মানে সে চুপ থাকবে। প্রহর এবার মেয়েটির উদ্দেশ্যে বললো।
–এই মেয়ে তোমার কি মাথায় সমস্যা আছে? আমাকে যখন বিয়েই করার ইচ্ছে নেই তাহলে এতো রাগ কিসের আমাদের ওপর? আর এসব কেন করছ তুমি?

মেয়েটি হালকা রাগী কন্ঠে বললো।
–কারণ আপনার কারণে আমি আমার ভালোবাসাকে হারিয়েছি।

–মানে?? কি বলতে চাচ্ছ তুমি? আমার কারণে তোমার ভালোবাসা কভাবে হারালে?

–হ্যাঁ হ্যাঁ আপনার কারণে। আমি ওই বিয়েতে মোটেও রাজি ছিলাম না। কারণ আমার বয়ফ্রেন্ড ছিল। কিন্তু আমার মা বাবা ওকে পছন্দ করেনি। তাই তারা মরে যাওয়ার ভয় দেখিয়ে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে আমাকে জোর করে বিয়েতে রাজি হতে বাধ্য করে। তাই আমার কাছে একটাই উপায় ছিল। সেটা হলো আপনি। ভেবেছিলাম আপনাকে সব বুঝিয়ে বলে এই বিয়েতে মানা করতে বলবো। বরপক্ষ মানা করলে তখন আর বাবা মা কিছু করতে পারবে না।সেইজন্য বিয়ের আগে আপনার সাথে দেখা করে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনাকে শতশত বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। অনেক বার ম্যাসেজও করেছি। তারও রিপ্লাই দেননি আপনি। যার কারণে আপনার সাথে আর কথাই বলতে পারিনি আমি।

–হ্যাঁ তো সমস্যা কোথায়? বিয়েটা তো আর হয়নি আমাদের। এখন তুমি তোমার বয়ফ্রেন্ডের কাছে ফিরে গেলেই তো পারো।

মেয়েটি ব্যাঙ্গ করে বললো।
–আ হা হা ফিরে গেলেই তো পারো। এতো সহজ নাকি। আরে আমার বয়ফ্রেন্ড ভাবছে আমি ইচ্ছে করে এই বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। আর যখন দেখলাম বর বিয়ে না করে চলে গেছে। তাই নাকি আমি আবার তার কাছে ফিরে এসেছি। এতোবার করে বলছি সে কোনমতেই আমাকে বিশ্বাস করছে না। সে ভাবছে আমি তাকে ধোঁকা দিয়েছি। আর এসব কিছু আপনার জন্য হয়েছে। আপনি যদি একবার আমার ফোনটা ধরতেন তাহলে সব ঠিক থাকতো। আজ আমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে ভুল বুঝতো না। আর একারণেই আপনার ওপর আমার ক্ষোভ জমে ছিল। আর সেদিন যখন আপনাকে আপনার বউয়ের হাসি-আনন্দ করতে দেখলাম তখন আমার ক্ষোভ আরও বেড়ে গেল। আমি এখানে বিরহে থাকবো আর আপনারা হাসি উল্লাস করে বেড়াবেন এটা আমার কিছুতেই সহ্য হচ্ছিল। ভীষণ জ্বলন হচ্ছিল আমার। তাই আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আপনাদেরও আমি হাসিখুশি থাকতে দিবোনা। আমি যেমন অশান্তিতে জ্বলছি আপনাকেউ তেমন অশান্তিতে রাখবো। আর ভালোবাসার মানুষেকে কষ্টে দেখলে তার থেকে বেশি অশান্তি আর কিছুতেই নেই। তাই আমি প্ল্যান করে আপনার স্ত্রীকে সুযোগ বুঝে ভয় দেখাতাম। তবে আমি শুধু ভয়ই দেখাতাম আর কিছুই করতাম না। সেদিন মেলা থেকে উনাকে নিয়ে ঝাউবনের ভেতর বসিয়ে রেখেছিলাম। যাতে উনি ভয় পান। তবে উনি এতটা আহত হবেন সেটা চাইনি। আর সেদিনই আমি শেষবার ভয় দেখিয়ে তারপর সব বলে দিতে চেয়েছিলাম উনাকে। কিন্তু তার আগেই আপনারার চলে আসেন। তাই আমিও লুকিয়ে যাই। তবে যখন উনি বেহুশ হয়ে যান।আর আপনার কথা শুনতে পাই যে আপনার স্ত্রীর কোন অপারেশন হয়েছিল। সেসব শুনে আমার প্রচুর অপরাধ বোধ হয়। নিজের বোকামি গুলোর ওপর খুব আপসোস হয়। আমি আপনার বন্ধু ফাহিমের স্ত্রীর সাথে একটু ভাব জমিয়ে তার কাছ থেকে জানতে পারি সবকিছু। জানতে পারি আপনারা অনেক কষ্টের পর এক হয়েছেন। তখন আমার অপরাধ বোধ আরও বেড়ে যায়। আপনারা এতকিছু ফেস করেছেন। এর সামনে তো আমার কষ্ট কিছুই না। আর তাই আমি আজ সরি বলতে এসেছিলাম। অ্যাম রিয়েলি সরি। প্লিজ পারলে আমাকে করে দিবেন।

সবকিছু শুনে প্রহর রাগী কন্ঠে বললো।
–সরি মাই ফুট। এই সামান্য কারণে তুমি আমার খুশিকে কতো মেন্টাল টর্চার করেছ তুমি জানো? আর আমার ওপর রাগ ছিল তুমি আমাকে শাস্তি দিতে। আমাকে যা খুশি তাই করতে আমি কিছু বলতাম না। কিন্তু তুমি আমার খুশিকে হার্ট করেছ। তারজন্য আমি চাইলেও তোমাকে মাফ করতে পারবোনা। তোমার এই সিলি রিভেঞ্জ এর জন্য যদি ওর কিছু হয়ে যেত তাহলে কি করতাম আমি? আই সোয়্যার তুমি যদি মেয়ে না হয়ে কোন ছেলে হতে তাহলে তোমাকে আজ আমি জীবন্ত ছাড়তাম না।

মেয়েটি অপরাধী সুরে বললো।
–দেখুন আমি জানি আমি অনেক বড়ো ভুল করে ফেলেছি। আর ভুলতো মানুষেরই হয়। ভালোবাসা হারিয়ে আমি সত্যি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। তাই আমি কি করছিলাম আমি নিজেও জানি না।

প্রহরের মন এবার একটু নরম হলো। ভালোবাসা তো সেও হারিয়েছিল একবার। আর এটার কষ্ট তার চেয়ে ভালো আর কেউ বুঝবেনা। প্রহর যতটা না নরম হয়েছে খুশি এদিকে মেয়েটির শোকে শোকাহত হয়ে একেবারে মূর্ছা যাওয়ার উপক্রম। মুখের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে এখুনি কেঁদে কেটে কুল কিনারা ভরে দিবে। কিছু সময় পূর্বেও যার প্রতি ভয় কাজ করছিল। এখন তার জন্য যেন দরদ উথলায় পড়ে যাচ্ছে। খুশি প্রহরের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
–শোন না, মাফ করে দাও বেচারিকে। বেচারি বয়ফ্রেন্ড বিরহে এমন করেছে। আর দেখতে গেলে ওর এই দূর্দশার জন্য কোথাও না কোথাও আমরাও দায়ী। তাই যা হয়েছে ভুলে যাও প্লিজ।

প্রহরও এবার একটু নরম হয়ে বললো।
–আচ্ছা ঠিক আছে যাও এবারের মতো মাফ করে দিলাম তোমাকে। এন্ড অ্যাম অলসো সরি। আমার কারণে তোমার সাথে এসব হলো তারজন্য।

খুশিও হাসিমুখে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ যা হয়েছে সব ভুলে যাও। আর হ্যাঁ চিন্তা করোনা। আমাদের কারণে তোমার লাভ লাইফে প্রবলেম হয়েছে তাহলে আমরাই ঠিক করে দিবো। আমরা গিয়ে কথা বলবো তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে। আচ্ছা তোমার নামটা কি সেটাই তো জানা হলোনা।

মেয়েটি মলিন হেঁসে বললো।
–আমার নাম জেরিন। ধন্যবাদ আমার কথা ভাবার জন্য। তবে এতে করে কোন উপকার হবে না। আপনারা গিয়ে বললে,ভাববে আমি হয়তো আপনাদের শিখিয়ে নিয়ে গিয়েছি।

খুশি হতাশার নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো।
–ওফফ তাহলে কি করা যায় এখন? আচ্ছা তোমার মা বাবা পছন্দ করে না কেন তোমার বয়ফ্রেন্ড কে? সমস্যা টা কি?

–আসলে আমার বয়ফ্রেন্ড একজন চলচ্চিত্র অভিনেতা। আর আমার ফ্যামিলি এসব পছন্দ করে না। তাই তারা ওকে মেনে নেয় না।

–চলচ্চিত্র অভিনেতা?? কে সে?

–সাহির খান।

খুশি আশ্চর্য চকিত হয়ে উৎসাহী কন্ঠে বললো।
–ও মাই গড সাহির খান? দ্যা সুপারস্টার ড্যাশিং হিরো সাহির খান তোমার বয়ফ্রেন্ড? আর ইউ সিরিয়াস?

–হ্যাঁ সাহির খানই আমার বয়ফ্রেন্ড। যদিও এব্যাপারে বাইরের কেউ জানে না। গত দু বছর যাবৎ আমাদের রিলেশন। তবে ওই ঘটনার পর থেকে আমাকে ভুল বুঝে আছে। আমি ওকে মানানোর কতো চেষ্টা করছি। কিন্তু সে বুঝতেই চাইছে না। এখানেও আমি ওর কারণেই এসেছি। এখানে সাহির ওর ফিল্মের শুটিং এর জন্য এসেছে। আর আমি ওর পিছে পিছে এখানে এসেছি ওকে মানানোর জন্য।

খুশি আমোদিত কন্ঠে বললো।
–ওয়াও ইয়ার দ্যা সাহির খান তোমার বয়ফ্রেন্ড। ইউ আর সো লাকি।

খুশির শেষের কথাটিতে প্রহর তীক্ষ্ণ দৃষ্টির তীর নিক্ষেপ করলো খুশির দিকে। এক ভ্রু উঁচিয়ে মৃদু সুরে শুধু একটা শব্দই বের করলো।
–লাকি????

খুশি আপাতত প্রহরের শান্ত চেহারার পেছনে ওর রাগের গভীরতা বুঝতে পারলো না। তার মাথায় বর্তমানে জেরিন আর সাহিরের প্যাচআপ কিভাবে করানো যায় তারই পরিকল্পনা চলছে। কারোর বিনা অনুমতি বিহীন এই মহৎ কার্যের গুরুদায়িত্ব সে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। যে করেই হোক এই মিশন সে কমপ্লিট করেই ছাড়বে। ভাবনার অতল গহ্বরে ডুবে সে ঘটা করে একটা বোর্ড মিটিং ডেকে প্ল্যান প্রক্রিয়া শুরু করে দিলো। অতঃপর তার ভাবনা জগতের সব বোর্ড মেম্বার রা মিলে তার সামনে একটা চমৎকার আইডিয়া পেশ করলো । আইডিয়া পেতেই খুশি উৎসাহে টগবগ করে লাফিয়ে উঠে বললো।
–ইয়েস পেয়ে গেছি। আইডিয়া পেয়ে গেছি। সলিড ফুল প্রুভ আইডিয়া পেয়ে গেছি। এই আইডিয়া হান্ড্রেড পার্সেন্ট কাজ করবে।

জেরিন কৌতুহল নিয়ে বললো।
–কি আইডিয়া?

–জ্বেলাস।

–মানে??

–মানে হলো জ্বলন,হিংসা, জ্বলে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া। জ্বেলাস ট্রিকস ইস অলওয়েস ওয়ার্ক। দেখ তুমি যতো ওর পেছনে ঘুরঘুর করবে তত সে ভাও খাবে। তাই তুমি এবার উল্টো টা করবে।

–মানে? কি বলছ? একটু ক্লিয়ার করে বলো।

–দেখ প্ল্যান সিম্পল। তুমি এখন একটা হ্যান্ডসাম ছেলেকে নিয়ে সাহিরকে দেখিয়ে দেখিয়ে ওর সামনে ঘুরঘুর করবে। ছেলোটার সাথে হাসাহাসি করবে আরও অনেক কিছু করবে। ব্যাস তাহলেই দেখবে তোমার সাহির জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।সে যদি তোমাকে এখনো ভালোবেসে থাকে তাহলে সে তোমাকে অন্য ছেলের সাথে দেখে কিছুতেই সহ্য করতে পারবে না। তোমাকে হারানোর আতঙ্ক তাড়া করবে ওকে। তারপর দেখবপ ওর যেসব স্ক্রু ঢিলা হয়ে গেছে সেগুলো আপনাআপনি টাইট হয়ে যাবে।

খুশির প্ল্যান টা পছন্দ হলো জেরিনের। সে বললো।
–হুমম প্ল্যান টা তো ভালোই। কিন্তু এই নকল বয়ফ্রেন্ড পাবো কোথায়? এমনি একজন হলে হবে না। সাহির অনেক চালাক। সে সব বুঝে যাবে। তাই ওর সামনে কোন হ্যান্ডসাম, ইনটেলিজেন্ট,সাহসী ছেলে লাগবে।

খুশি গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো এমন ছেলে কোথায় পাওয়া যাবে। তখনই জেরিন গলা খাঁকারি দিয়ে বললো।
–বলছিলাম একজন আছে।

খুশি কৌতুহলী হয়ে বললো।
–কে?

জেরিন ভ্রু উঁচিয়ে প্রহরের দিকে ইশারা করলো। খুশিও জেরিনের ইশারা অনুযায়ী প্রহরের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। এদের চাহুনি সুবিধাজনক মন হচ্ছে না প্রহরের। সে বিভ্রান্ত চোখে তাকিয়ে বললো।
–এক মিনিট! আমার দিকে তাকাচ্ছো কেন? দেখ আমি তোমাদের এসব সিলি নটাঙ্কিতে মোটেও সামিল হবো না।

খুশিও বলে উঠলো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ প্রহর না। ওকে বাদ দিয়ে যে কাওকে নাও। দেখা যাবে সাহির জেলাস হোক না হোক তোমাদের একসাথে দেখে আমি ঠিকই জেলাস হয়ে তোমাদের দুজনকেই মেরে দিবো।

জেরিন বলে উঠলো।
–দেখুন আমি আগেই বলেছি সাহির অনেক চালাক। আর সে নিজেই একজন অভিনেতা। তাই সামনে যেন তেন লোক চলবেনা। আই থিংক উনিই সবচেয়ে বেস্ট হবে এই কাজের জন্য। এখন বাকিটা আপনাদের ইচ্ছে। আমি আপনাদের জোর করবোনা।

জনদরদী খুশিদেবী ইমোশনাল হয়ে গেল। অতঃপর বুকের ওপর বিশাল ভারী ওজনের পাথর চেপে রেখে সে প্রহরের বলিদান দিতে রাজি হয়ে গেল। তবে প্রহর এসবে রাজি না। খুশি তখন বললো।
–দেখ প্রহর বেচারির এই অবস্থার জন্য আমরাও দায়ী। তাই ওকে হেল্প করাটা আমাদের দায়িত্ব। প্লিজ রাজি হয়ে যাও। আরে যেখানে আমি রাজি আছু সেখানে তোমার কি সমস্যা? প্লিজ রাজি হয়ে যাও।

খুশির জোরাজুরির সাথে আর পেরে উঠলোনা প্রহর। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রাজি হয়ে গেল সে। কি একটা ঝামেলা হতে চলেছে তা উপর ওয়ালাই জানে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here