#কৃষ্ণবতীর_মায়ায়
#বোনাস_পর্ব
#লেখিকা_সাদিয়া_জান্নাত_সর্মি
আমিন চৌধুরী খানিকটা চমকে গেলেন, আবার জিজ্ঞেস করলেন,
কি বললে তুমি?
আয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে কান্না ভেজা গলায় বললো,আমি ঠিকই বলছি আঙ্কেল, আমাকে দিয়ে এইসব করানো হয়েছে।
আমিন চৌধুরী কিছু টা অবিশ্বাসের চোখে বললেন,
কে করিয়েছে তোমাকে দিয়ে?
আপনার বোনের হাজব্যান্ড তসলিম আঙ্কেলের কথায় আমি এইসব করেছি।
আমিন চৌধুরী চমকে গিয়ে বললেন,
কীহ?
হ্যা আঙ্কেল। বিশ্বাস করুন আমি নিজে থেকে নীরের সাথে এইসব কিছুই করতে চাই নি। তসলিম আঙ্কেলের কাছে আমার বাবা লাখ লাখ টাকা ঋণ করেছিলো, কিন্তু সময়ের আগে বাবা সেই টাকা ফেরত দিতে পারে নি। তখন তসলিম আঙ্কেল আমার বাবাকে বলেন যে, আমি যদি ওনার কথা মতো কাজ করি তাহলে উনি আমার বাবার সমস্ত ঋণ মাফ করে দেবেন। বাবা যখন জানতে চাইলো কাজ টা কি, তখন তিনি বললেন আমি যেন নীর কে বিয়ে করি আর কিছুদিন পরেই ডির্ভোস দিয়ে দেই। উনি যখন যা বলবেন আমি যেন নীরের সাথে তখন তাই করি। ওনার এই প্রস্তাবে আমি, বাবা দুজনের কেউই রাজি হই নি কারণ আমার হবু বউ আছে যার সাথে আমার কিছুদিন পরেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। আমরা রাজি না হওয়ায় তসলিম আঙ্কেল আমার বাবা মা আর আমার হবু বউ মাইশা কে কিডন্যাপ করে, এবং আমাকে হুমকি দেয় এই যে আমি যদি ওনার কথা মতো কাজ না করি, আর উনি যে আমাকে দিয়ে এইসব করাবেন তা যদি কেউ জানতে পারে তাহলে উনি আমার বাবা মা আর মাইশা কে মেরে ফেলবেন। তখন বাধ্য হয়েই আমাকে নীর কে বিয়ে করতে হয়।প্লীজ আঙ্কেল আমার বাবা মা কে ওনার হাত থেকে বাঁচান। উনি যদি জানতে পারেন যে আমি আপনাকে সবকিছু বলে দিয়েছি তাহলে উনি ওদের কে আর এক মুহূর্তও বাঁচিয়ে রাখবেন না।
আয়ানের কথা শুনে আমিন চৌধুরী বুকে হাত চেপে ধরলেন, বুকের বাম পাশটায় খুব ব্যাথা করছে ওনার। এসব কি শুনছেন তিনি আয়ানের কাছ থেকে, তসলিম এইসব করেছে। আমিন চৌধুরী চেয়ার থেকে পড়ে যেতে নিলে আয়ান তাড়াতাড়ি গিয়ে ওনাকে ধরে। চেয়ারে ঠিক করে বসিয়ে দিয়ে টেবিলে রাখা গ্লাস ওনার হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করে, আঙ্কেল আপনি ঠিক আছেন?
আমিন চৌধুরী পানি টা খেয়ে বুকে হাত দিয়ে চুপ করে বসে রইলেন। আয়ান আমিন চৌধুরীর দিকে উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে। অনেক্ষণ পর আমিন চৌধুরী আয়ান কে বললেন, তুমি এখন যাও।
কিন্তু আঙ্কেল,,
তোমাকে যেতে বলেছি আয়ান,পরে আমার সাথে দেখা করো।
আয়ান অফিস থেকে বের হয়ে এলো। কিচ্ছু ভালো লাগছেনা তার,বাবা মা আর মাইশা কতদিন ধরে তসলিম আহমেদের হাতে বন্দী। কেমন আছে, কি করছে কে জানে।নীরের জন্যও খুব খারাপ লাগছে আয়ানের, মেয়েটার সাথে কেন যে এমন হলো। কালো হলেও একটা আলাদা রকম মায়া আছে নীরের চেহারায়, মনে হয় সারাজীবন সেই মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দেওয়া যাবে। কষ্ট দিতে ইচ্ছে করতো না তার কিন্তু আর কিছু করারও ছিল না, সে হচ্ছে অন্যের হাতের পুতুল তাকে যখন যা বলা হবে তখন তাই করতে হবে।সে চেয়েছিল নীর কে যে কারণেই হোক বিয়ে যখন করেছে তার সাথেই সারাজীবন কাটাবে কিন্তু তসলিম আহমেদ তা চায় নি,নীর কে আয়ানের ডির্ভোস দিতে হবে। রোডে উদ্দেশ্য হীন ভাবে হাঁটছে আর এইসব ভাবছে আয়ান। হঠাৎ করে পেছন থেকে গাড়ির হর্নের আওয়াজে ঘুরে তাকালো আয়ান। তাকিয়ে দেখে তার দিকে ধেয়ে আসছে একটা বড় ট্রাক,আর মাত্র কয়েক ফুট দুরত্বে আছে ট্রাক টি। সেই মুহূর্তে আয়ানের মাথা কাজ করলো না, সে দৌড়ে গাড়ির সামনে থেকে সরে যাবে না কি করবে কিছুই বুঝতে পারলো না,ঠায় দাঁড়িয়ে রইল সে। তার পর যা হওয়ার তাই হলো, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ট্রাক টি আয়ান কে ধাক্কা দিয়ে চলে গেল। ট্রাকের ধাক্কায় আয়ান রোডের মাঝখানে মুখ থুবড়ে পড়ল, ঠিক তখনই উল্টো দিক থেকে একটা বাস আসছিল রাস্তায় একটা মানুষ কে পড়ে থাকতে দেখে তাড়াতাড়ি করে ব্রেক করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আয়ানের পায়ের উপর দিয়ে বাস চালিয়ে দিয়ে সামনের আরেক টা গাড়িকে ধাক্কা দিলো।
_______________________
আমিন চৌধুরী ফোন হাতে নিয়ে একটা নাম্বারে ডায়াল করছেন আবার কেটে দিচ্ছেন। অনেক্ষণ ধরে এরকম করার পর তিনি শেষ পর্যন্ত ডায়াল করলেন নাম্বার টাতে। কিছুক্ষণ পর রিসিভ হলো, ফোনের ওপাশের ব্যক্তি বললো,
এতো দিন পরে মনে পরলো তোর বন্ধু কে?
আমিন চৌধুরী কথা না বাড়িয়ে সোজা পয়েন্টে এলেন,,
কেন করেছিস এরকম তসলিম? আমার মেয়ে কি ক্ষতি করেছে তোর?
তসলিম আহমেদ আমিন চৌধুরীর প্রশ্ন শুনে অট্টোহাসি হাসতে লাগল, তার পর বললো,,
কি করেছি আমি? ওহ তাহলে আয়ান তোকে সবকিছু বলে দিয়েছে?
(চলবে……… ইনশাআল্লাহ)