হৃদয় নিবাসে তুই পর্ব -৩২+৩৩

#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_৩২
লেখনীতেঃভূমি

রাত প্রায় এগারোটা।ভদ্রমহিলা এখনও এই বাসা থেকে যায় নি।সুইটহার্ট বিরক্তি নিয়েই বসতে বলল তাকে।অদ্রিজাকে রাতের খাবারটা খাইয়ে দিয়েই নরম গলায় ঘুমিয়ে পড়তে বললেন।অদ্রিজাও মিনমিনে চোখে তাকিয়ে মাথা দুলাল।আড়চোখে গভীর ভাবে পরখ করল রক্তিমের মা নামক মহিলাটিকে।উৎসুক দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছেন সেই ভদ্রমহিলা।হয়তো তার মতোই পরখ করে দেখছেন।অদ্রিজা তপ্তশ্বাস ফেলল।ভারী, ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে রুমের ভেতর এসেই বিছানায় এলিয়ে দিল শরীরটা।ইদানিং শরীরটা বড্ড বেশি ক্লান্ত লাগে।চোখজোড়ায় সর্বক্ষণ যেন ঘুম লেগেই থাকে।আজও ব্যাতিক্রম হলো না।বালিশে মাথাটা রাখতেই রাজ্যের ঘুম এসে ধরা খেল চোখজোড়ায়।কিন্তু ঘুমটা বেশিক্ষন স্থায়ী হলো না।কিছুটা সময় পরই তীক্ষ্ণ এক আওয়াজে তড়িঘড়ি করে ঘুমটার ইতি ঘটল।বুক ধড়পড়িয়ে উঠে বসল মুহুর্তেই।অজানা আতংকে হৃদস্পন্দন দ্রুত ঘটল।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকেই পরিস্থিতিটা বুঝার চেষ্টা চালাতেই বুঝতে পারল কেউ একজন এই বাসায় ভাঙ্গচুর করছে।তার সর্বশক্তি দিয়ে সবকিছু ভেঙ্গে ঘুড়িয়ে দিতে চাইছে।অদ্রিজা আৎকে উঠল।বুক ডিপডিপ করা সেই হৃদস্পন্দন নিয়ে উঠে দাঁড়াল।ছোট ছোট পা ফেলে দরজার কাছটায় এসে দাঁড়াতেই রক্তিমের রাগে লাভা সদৃশ ক্ষ্রিপ্ত তীক্ষ্ণ চাহনি দেখেই কেঁপে উঠল সে।চোখমুখ লাল টকটকে, থমথমে গম্ভীর!এক হাত রক্তাক্ত।হাতের মুঠোটা থেকে এখনো রক্ত ঝরছে।চোখে মুখে তীব্র রোশ আর ক্ষোভ নিয়েই একের পর এক জিনিস ফ্লোরে ছুড়ে মারছে সে।সেই জিনিসগুলোর ভাঙ্গনের তীব্র আওয়াজেই মাথা টনটন করে উঠল অদ্রিজার।রক্তিমের এমন উম্মাদের মতো আচরণ প্রখর চাহনিতে পর্যবেক্ষন করেই তপ্তশ্বাস ফেলল।ধীর পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসবে ঠিক তখনই রক্তিম ড্রয়িং রুমের শেষ ফুলদানিটাও আঁছাড় মারল ফ্লোরে।তীব্র ক্ষোভ নিয়ে কঠিন গলায় বলে উঠল,

‘ কি সমস্যা আপনার মিসেস রুহানা? কেন যেচে অপমানিত হতে আসেন?লজ্জ্বা করে না?বারবার আমার সামনে কেন পড়েন আপনি?কেন এই নাটক করতে আসেন?আমি আপনার সন্তান নই।আর নাহ তো আপনি আমার মা।কথাটা মাথায় রাখবেন।এবার বেরিয়ে যান।ফার্স্ট!’

ভদ্রমহিলা ছোটছোট চোখে তাকিয়ে রইল রক্তিমের।চোখ ছলছল করছে তার।রক্তিমের দিকে দু পা এগিয়েই দুইহাত দিয়ে রক্তিমের মুখ ছুঁতে যেতেই রক্তিম তেজ নিয়ে সরে গেল।ক্ষ্রিপ্ত গলায় বলে উঠল,

‘ একদমই নয়!একদমই নয় মিসেস রুহানা।আপনার ঐ নোংরা হাত দিয়ে আমাকে ছোঁয়ার একদমই চেষ্টা করবেন না।যদি বাড়াবাড়ি করেন তো তাহলে আমি ভুলে যাব আমি আপনাকে চিনি।আপনি আমার পরিচিত কেউ।ভুলে যাব!’

ভদ্রমহিলার গম্ভীর চোখজোড়া বেয়ে এবার পানি গড়াল।নরম গাল পানিতে ভিজে গেল মুহুর্তেই।ভেজা গলায় বলে উঠল,

‘ রক্তিম!কেন এমন করো আমার সাথে?তোমার প্রতি কি আমার এটুকুও অধিকার থাকার কথা নয়?তোমাকে একনজর দেখার অনুমতিও আমার নেই?কেন?হ্যাঁ ভুল করেছি আমি।তাই বলে এত বড় শাস্তি কেন?যে নিজের সন্তানের প্রতিও আমার কোন অধিকার থাকবে না!’

রক্তিম তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল।সোফায় গা এলিয়ে দিয়েই সুপ্ত গলায় বলে উঠল,

‘ যে অন্যায় করে সে কখনোই স্বীকার করে না যে সেই অন্যায় করেছে।আপনি তো বুঝেই উঠলেন না আপনি অপরাধী কিনা।আসলেই কি পরিমাণ মূর্খ হলে নিজের সন্তানকে রেখে অন্য এক পুরুষের সাথে পালিয়ে গিয়ে স্যাটেল করার পরও আবার নিজের সন্তান বলে দাবি করতে আসে!আমি আসলেই ভেবে পাই না, এতবছর পর আমার প্রতি আপনার এই ভালোবাসা কোথায় থেকে উতলে আসল?নাকি অন্য স্বার্থ?যদি স্বার্থের জন্য এমন করছেন তো তাড়াতাড়ি ঝেড়ে বলুন। এসব নাটক টলারেট করা যাচ্ছে না!’

‘ রক্তিম!তুমিই আমার একমাত্র সন্তান।একমাত্র সন্তানের প্রতি ভালোবাসা জম্মানো কি অপরাধ?অস্বাভাবিক?’

রক্তিমের চোয়াল শক্ত হলো।দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুঠো করে নিজের ভেতর জ্বলে উঠা রাগ, ক্ষোভকে নিয়ন্ত্রন করতে চেয়েই বলে উঠল শক্ত গলায়,

‘ হ্যাঁ!অস্বাভাবিক!আপনার মতো চরিত্রহীন, স্বার্থপর মহিলার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকই।আপনার থেকে তো মিস্টার মাহমুদের দ্বিতীয় স্ত্রীও অনেক গুণ ভালো।সে আমায় জম্ম দেয় নি, আমার মা নয় তবুও যে কয়দিন উনাকে পেয়েছি উনি আপনার থেকে বেস্ট ছিল বলেই মনে হয়েছে আমার।আপনি তো একটা খারাপ জঘন্য মহিলা!গেট লস্ট! প্লিজ!আমি সহ্য করতে পারছি নাহ আপনাকে।’

ভদ্রমহিলা নিশ্চুপে চেয়ে রইলেন।ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠেই উল্টো দিকে হেঁটে বেরিয়ে গেলেন। রক্তিম লম্বা শ্বাস ফেলল।চোখজোড়া বন্ধ রেখেই সোফায় এলিয়ে দিল শরীরটা।মাথা চেপে ধরেই জড়ানো কন্ঠে বলে উঠল,

‘ সুইটহার্ট?উনি কিভাবে জানলেন?কে বলেছে উনাকে?তুমি?’

সুইটহার্ট চাহনি সরু করল।সোফার এককোণে বসে রক্তিমের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতেই বললেন,

‘ আমার সাথে ওর কোন যোগাযোগ থাকে না জান। আর আমি যে বলব না তা নিশ্চয় তুমিও জানো।তাই না?’

রক্তিম চোখজোড়া খুলল।সুইটহার্টকে দেখে নিয়েই মৃদু হাসল।গালে হাত ছুঁয়ে দিয়েই বলে উঠল,

‘অনেক রাত হয়েছে।ঘুমাও গিয়ে।’

সুইটহার্ট মিনমিনে চোখে তাকিয়েই বলল,

‘ হাত থেকে রক্ত পড়ছে।শুধু শুধু দেওয়ালে ঘুষি দিলে।কি দরকার ছিল?ব্যান্ডেজ করে দি।বসো।’

রক্তিম উঠে দাঁড়িয়েই হেসে বলল,

‘রুমে গিয়ে ব্যান্ডেজ করে নেব। তুমি ঘুমাও গিয়ে।রাত হয়েছে। অদ্রি কি ঘুমিয়ে গিয়েছে?খেয়েছে?’

সুইটহার্ট মিষ্টি হেসেই মাথা দুলাল যার অর্থ হ্যাঁ।তারপর ঠোঁট টেনে হেসেই বলে উঠল,

‘সামনে সামনে আপনি, অদ্রিজা।পেঁছনে অদ্রি।সোজাসুজি তুমি আর অদ্রি বলে ডাকলেই বা ক্ষতি কি জান?’

রক্তিম হাসল।বলল,

‘ একটু টাইম দাও।সব ডাকব।অদ্রি টু ডার্লিং সব!এনিওয়েজ রুমে যাও সুইটহার্ট। ঘুমাও।বেশি রাত জাগা কিন্তু ভালো না সুইটহার্ট।গুড নাইট।’

কথাটা বলেই পা বাড়াল রক্তিম।চোখেমুখে তিক্ততা স্পষ্ট।অন্যদিনের মতো মুখে অদ্ভুত রকম হাসিটা আজ অনুপস্থিত।শার্টের বোতাম গুলো খুলতে খুলতেই রুমে ডুকল সে।দরজার সামনে অদ্রিজাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই থমকে দাঁড়াল সে।তার মানে ঘুমোয়নি অদ্রিজা?রক্তিম বুঝল না।অস্পষ্ট চাহনি নিয়ে অদ্রিজার মুখের দিকে তাকিয়েই ভ্রু নাচাল।জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে বলে উঠল,

‘ কি সমস্যা?ঘুমোননি কেন এখনো?আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন?এত ভালোবাসা! ওয়াও!’

অদ্রিজা কপাল কুঁচকাল।সদ্য ধরা ঘুম রক্তিমের জন্যই ভেঙ্গে গিয়েছে।আর সেই ভাঙ্গা ঘুমের জন্যই মাথাটা টনটন করে ব্যাথা করছে।মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিরক্তিকর ব্যাথা।সেই বিরক্তিকর ব্যাথার জন্যই বিরক্তিতে রি রি করল শরীর।কোমড়ে হাতজোড়া রেখেই রক্তিমের দিকে তাকাল সে।বিধ্বস্ত বেশ।আহত চাহনি।ক্লান্ত শরীরে জড়িয়ে থাকা কালো রংয়ের শার্টটার বোতাম গুলো খোলা থাকায় দৃশ্যমান হলো রক্তিমের উম্মুক্ত চওড়া বুক।ফর্সা ধবধবে বুকের বা পাশেই কালো কুঁচকুঁচে তিল চমৎকার ঠেকল। চোখজোড়া ফিটফিট করে তিলটার দিকে তাকিয়ে থাকতেই রক্তিম পিচেল গলায় বলে উঠল তৎক্ষনাৎ,

‘ উফফস!মনে মনে ভাবছেন নিশ্চয়, এত সুদর্শন ছেলে আপনার হাজব্যান্ড হলো কি করে। তাই না?দেখে নিন।ইচ্ছে মতো দেখে নিন। আপনি চাইলে পুরো শার্টই খুলে রাখতে পারি।ওহ শিট!শুধু শার্ট নয়, সব। সব! ‘

অদ্রিজা দৃষ্টি সরাল দ্রুত।তবুও যেন দৃষ্টি সরল না।ফর্সা ধবধবে চওড়া বুকে কালে তিলটা অদ্ভুত সুন্দর!বারংবার তাকালেও মোহ কাঁটে না।রক্তিম মুচকি হাসল।ফিসফিসিয়েই আবারও বলল,

‘ উহ!এত লুকোচুরি করে দেখার কি আছে বলুন তো।সোজাসুজি তাকিয়েই দেখুন না।কেউ নিষেধ করেছে?’

অদ্রিজা ছোট্ট শ্বাস ফেলল।চোখ তুলে রক্তিমের মুখের দিকে তাকাতেই রক্তিমের মুখে বাঁকা হাসিটা চোখে পড়ল সর্বপ্রথম।সেই বাঁকা হাসিকে প্রশ্রয় না দিয়েই কপাল কুঁচকানোর চেষ্টা করল সে।গম্ভীর শান্ত গলায় বলে উঠল,

‘ একটা মেয়ের সামনে শার্ট খুলে বসে নায়ক সাঁজতে এসেছেন?আপনার নোংরামো পর্যবেক্ষন করছিলাম জাস্ট।আর কিছু না।অন্য কিছু ভাববেন না।’

রক্তিম দুষ্টুমিমাখা হাসি ফুটাল মুখে।অদ্রিজার কাছাকাছি মুখ এনেই কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ উহ!বউয়ের কাছে সব রকমের নোংরামো খাটে।জানেন না?এনিওয়েজ আপনার ঐ চাহনিতে কিছু ভাবলাম না।ভাবলাম না কিন্তু!’

কথাটা বলেই ঠোঁট কাঁমড়াল রক্তিম।মুখে মুচকি হাসি।অদ্রিজা বিরক্ত হলো।কি এমন করেছে?তিলটার দিকে তাকিয়েছেই না হয়।ক্ষতি কি?খেয়ে তো নেয় নি!চোখেমুখে বিরক্তি ফুটিয়েই রক্তিমের দিকে তাকিয়ে রইল আরো কিছু সময়। প্রসঙ্গটা বাদ দিতেই বলে উঠল,

‘ এবার বলুন, সামনে অদ্রিজা।পেঁছনে অদ্রি। ঘটনা কি?অদ্রি, অদ্রিজা এত নাটক কেন?আপনি আমায় অদ্রি নামে চিনেছেন সর্বপ্রথম তাহলে অদ্রিজা ডাকেন কেন?অদ্রিজাই যদি ডাকবেন তাহলে পেঁছনে অদ্রি বললেন কেন?’

রক্তিম ভ্রু কুঁচকাল।পরমুহুর্তেই হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠল,

‘ বাহ!গুড!লুকিয়ে লুকিয়ে আমার আর সুইটহার্টের কথা শুনছিলেন আপনি?’

অদ্রিজা কপাল কুঁচকাল।ঠোঁট উল্টে বলল,

‘ মোটেই না।’

‘ তাহলে?’

অদ্রিজা স্পষ্টভাবে বলল,

‘ আপনি আগে বলুন অদ্রিজা ডাকেন কেন? আবার অদ্রি হিসেবেই বা কিভাবে চেনেন?অদ্রি হিসেবেই যদি চেনেন তাহলে প্রথম থেকে অপরিচিতের মতো অদ্রিজা ডেকে আসলেন কেন?’

রক্তিম হাসল।অদ্রিজার দিকে ঝুকেই গম্ভীর গলায় শুধাল,

‘ আপনিই তো বলেছিলেন অদ্রি না ডাকতে। তাই ডাকি না। সিম্পল!নিজের উত্তর নিজের কাছে থাকা স্বত্ত্বেও প্রশ্ন করছেন?বাই দ্যা ওয়ে, যে দিন অনুমতি দিবেন সেইদিন থেকে নাহয় অদ্রি ডাকব।অদ্রি হিসেবে চেনার গল্পটা অন্য একদিন শোনাব।এবার বলুন, আপনি কেন লুকিয়ে লুকিয়ে কথা শুনছিলেন?’

অদ্রিজা দৃষ্টি সরু করল। কন্ঠে ঝংকার তুলে বলে উঠল,

‘একদমই না।আপনার কথা লুকিয়ে শুনতে চাওয়ার ইচ্ছে আমার জীবনেও হবে না।আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম।আপনার অত্যাচারে ঘুমটাও হলো না।আসলেই আপনার অত্যাচারে আমার জীবনটা বিষিয়ে উঠছে রক্তিম।কেন এত অত্যাচার?’

রক্তিম ভ্রু নাচিয়েই বলল,

‘ যেমন?’

‘ সারাদিন রুমে আটকে রেখেছেন।এটা অত্যাচার নয়?সময় অসময়ে বিরক্ত করছেন।ঘুমটাও ভালোভাবে যেতে দিচ্ছেন না।এসব অত্যাচার নয়?বলুন।’

রক্তিম হাসল।পরনের শার্টটা খুলে রেখেই পা বাড়িয়ে নিজের টিশার্ট নিয়ে পরতে পরতেই বলে উঠল সে,

‘ জাস্ট এইটুকু?অপেক্ষা করুন।আরো কত রকম অত্যাচার যে আপনার কপালে আছে ভাবতেও পারছেন না আপনি।’

অদ্রিজা বুঝে উঠল না।দ্বিধান্বিক চাহনিতে রক্তিমের দিকে তাকাতেই রক্তিম ঠোঁট কাঁমড়ে হাসল।অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই চোখ টিপে বলে বসল,

‘ ভয় পেয়ে গেলেন?’

অদ্রিজার কঠিন টানটান দৃষ্টি।শক্ত গলায় বলল,

‘ নাহ!’

রক্তিম সেভাবেই তাকিয়ে রইল।হাতের ক্ষতটায় ব্যান্ডেজ করতে করতেই অদ্রিজার বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে থাকাটা উপলব্ধি করল।ঠোঁট টিপে হেসেই বলে ফেলল,

‘ প্রথমদিনের মতো আজ আমার হাতের ক্ষতের কথা জিজ্ঞেস করলেন না যে?কষ্ট পেলাম!’

অদ্রিজা হালকা শ্বাস ফেলল।তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেই বলে উঠল,

‘ জিজ্ঞেস করলে বেহায়া হয়ে যেতাম না?শুধু শুধু আপনার সামনে বেহায়া সাঁজার কারণ আছে বলুন তো?তার চেয়ে আপনি আপনার ক্ষত নিয়ে পড়ে থাকুন।কাঁটুক, রক্ত ঝরুক, আমার কি?’

‘ কিচ্ছু না?’

অদ্রিজা দৃঢ় গলায় বলে উঠল,

‘ নাহ!কিচ্ছু নাহ।’

রক্তিম বাঁকা হাসল।বলল,

‘ তাহলে আমার অপারেশন হয়েছে শুনেই প্রশ্ন করেছিলেন কেন সুইটহার্টকে?জানতে চেয়েছিলেন কেন?কিছুই তো যায় আসে না আমাকে নিয়ে।তাই না?’

অদ্রিজা দাঁতে দাঁত চাপল।রক্তিমের সাথে আর একটাও কথা না বলে ধপাস করে খাটে শরীর এলিয়ে দিল।একপাশ হয়ে শুঁয়েই চোখ বন্ধ করল।মনের ভেতর একরাশ বিরক্তি উপস্থিত হলো মুহুর্তেই।সুইটহার্টকে জিজ্ঞেস করেছে ভালো, তা বলে সুইটহার্ট সেটা বলে দেবে এই ফালতু লোকটাকে?তার মান সম্মানের এভাবে ফালুদা বানিয়ে দেবে?মোটেই উচিত কাজ করে নি এটা সুইটহার্ট!এই নিষ্ঠুর মানবটার সমানে তার আত্নসম্মানের দফারফা না করলেই কি হতো না?
#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_৩৩
লেখনীতেঃ ভূমি

নেহা সহই রক্তিমের মায়ের বাসায় আসল অদ্রিজা।নেহার জোরাজুরিতেই এখানে আসতে রাজি হয়েছিল সে।রক্তিমকে ভার্সিটিতে আসবে বলেই বেরিয়ে আসল।ভেবেছিল নিজের মনের কৌতুহলটাও মিটিয়ে নেওয়া যাবে।রক্তিমের অপারেশনের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়ে যাবে।জেনে যাবে রক্তিমের কি হয়েছিল।কিন্তু তা আর হলো না।রক্তিমের মা নামক ভদ্রমহিলার বাসায় প্রবেশ করে আরাম করে বসতে না বসতেই নিজের মোবাইলে রক্তিমের কল দেখেই চমকাল সে।বার কয়েক ঢোক গিলে কল রিসিভড করতেই ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠেই রক্তিম বলে উঠল,

‘ জাস্ট দুই মিনিট সময় দিচ্ছি।দুই মিনিট সময়ের মধ্যে দ্রুত ঐ বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়াবেন।নয়তো আর কোনদিন বাসা থেকে বেরুনোর পারমিশন পাবেন না আপনি।বন্দি জীবন কাঁটাতে হবে।মাইন্ড ইট!’

অদ্রিজা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে ছিল কিছুটা সময়।পরপরই নেহাকে বসা থেকে টেনে উঠিয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসল সেই বাসা থেকে।রাস্তার মোড়ে আসতেই থম মেরে দাঁড়িয়ে গেল।মাথাটা ঝিমিয়ে উঠল মুহুর্তেই।রক্তিম নামক লোকটা এমন কেন?কিভাবে সব জেনে যায়?ক্যামেরা ট্যামেরা সেট করে দিয়েছে নাকি?অদ্রিজা নিজের ভাবনা ভেবেই অবাক হলো।এদিক ওদিক তাকিয়ে সামনে তাকাতেই আরেক ধপা বিস্ময় খেলে গেল চোখমুখে । নিজের থেকে কিছুটা দূরেই রক্তিম বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।মুখে ঠোঁট বাঁকানো সেই বাঁকা হাসি।অদ্রিজা ভ্রু কুঁচকাল।রক্তিমের দিকে তাকিয়ে থাকতেই কানে এল নেহার বিরক্তিমিশ্রিত কন্ঠ,

‘ কি হলো এটা দ্রিজা?মাত্র গেলাম।মামনির সাথে তো কথাও হয়নি।তার আগেই তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে এলি কেন?এটা কোন ধরণের কাজ হলো দ্রিজা!’

অদ্রিজা আনমনেই বলে বসল,

‘ ধুররর!তুই জানিস কি সাংঘাতিক কাজ ঘটে গেছে?অনেক কষ্টে রক্তিমের ঐ বাসা থেকে বেরুনোর পারমিশন পেয়েছি।এবার মনে হচ্ছে তাও হারাব।’

নেহা বুঝে উঠল না।ভ্রু জোড়া কুঁচকে অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই তার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই সেও চমকাল।ড্যাবড্যাব করে রক্তিমের দিকে তাকাতেই রক্তিম হাসল।হাত নাড়িয়ে হাই বুঝাল নেহাকে।নেহা হাসার চেষ্টা করল।অদ্রিজার কানের কাছে মুখ নিয়েই ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ কি হলো এটা?রক্তিম ভাইয়া এখানে? কিভাবে জানল আমরা এখানে এসেছি।তুই তো ভার্সিটির কথা বলে বেরিয়েছিলি তাই না?’

অদ্রিজা বোকার মতো তাকাল। নিরাশ চাহনি নিয়েই বলল,

‘ উনি নিশ্চয় আমাকে ফলো করে!নয়তো সিসি ক্যাম ট্যাম লাগিয়ে রেখেছে বুঝলি?নয়তো কিভাবে সবকিছু জেনে যায়?কিভাবে পসিবল?’

নেহা দাঁত কেলিয়ে হাসল। ঠোঁট বাঁকিয়েই বলল,

‘ পসিবল, পসিবল!সব পসিবল রে।’

অদ্রিজা কপাল কুঁচকাল।নেহার দিকে একনজর তাকিয়েই সামনের দিকে তাকাল। রক্তিমকে একইভাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখতেই নড়েচড়ে দাঁড়াল।উঁশখুঁশ করে ওড়নাটা দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে অন্যপাশ ফিরল।নেহার হাতটা চেপে ধরেই বলে উঠল,

‘ খবরদার ওদিকে তাকাবি না নেহা।জাস্ট ইগনোর কর উনাকে। রিক্সা ডাক।আমরা রিক্সায় করে ভার্সিটি চলে যাব।ভালো বুদ্ধি না?’

নেহা ভ্রুজোড়া কুঁচকাল।বলল,

‘ কি বলছিস তুই?রক্তিম ভাইয়া তো জেনেই গেছে মামনির বাসায় আমরা এসেছিলাম তার উপর উনাকে ইগনোর করে চলে যাওয়া কতখানি অন্যায় হবে বুঝতে পারছিস তুই?তোকে তো আর বেরই হতে দেবে না বাসা থেকে ঐ অপরাধের অপরাধী হওয়ার জন্য!’

অদ্রিজা দাঁতে দাঁত চেপেই বলে উঠল,

‘ একদম ভদ্র সাঁজবি না নেহা।এটা কোন অপরাধই না।আমরা উনাকে দেখতেই পাইনি।আর দেখতে যেহেতু পাইনি এড়িয়ে যাওয়ার প্রশ্নও আসছে না।বুঝলি?’

নেহা খিলখিলিয়ে হাসল।ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ তোর এই লজ্যিক জীবনেও রক্তিম ভাইয়া মানবে না।আমি তুই দুইজনই উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।উনি তা দেখেছেন।’

অদ্রিজা কপাল কুঁচকাল।মুখ কালো করেই ঠোঁট উল্টে বলল,

‘ দেখলে দেখুক!আমি আজ এতদিন উনার ঐ বদ্ধ বাসায় থেকে বোর হয়ে গেছি।এখন বাসা থেকে বের হয়েও শান্তি নেই, উনার সামনে গেলে উনি বাসায় নিয়ে চলে যাবে আবার।দেখিস!’

নেহা আওয়াজ করে হাসল।দু পা এগিয়েই রক্তিমের সামনে এসে দাঁড়িয়েই বলে উঠল,

‘কেমন আছো ভাইয়া?’

রক্তিম হাসল।ভ্রু চুলকে বলল,

‘ প্রথম প্রশ্নটা হওয়া উচিত ছিল,” ভাইয়া,এখানে কেন তুমি?”তাই না?’

নেহা থমকাল।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকেই কাঁপা কন্ঠে বলল,

‘ স্য্ স্যরি।আমি দ্রিজাকে আসতে নিষেধ করেছিলাম।সত্যিই।কসম!আমি তো বলেছিলাম কেবল আমিই আসব।মামনির সাথে দেখা করেই চলে যাব। কিন্তু ওর জোরাজুরিতেই ওকে নিয়ে আসতে বাধ্য হলাম আরকি।’

অদ্রিজা অবাক হলো।ড্যাবড্যাব করে নেহার দিকে তাকিয়েই ভাবল, একটা মানুষ এতটা নিঁখুত ভাবে মিথ্যে কিভাবে বলে?কিভাবে!মোটেই সে জোরাজুরি করে এখানে আসে নি।বরং নেহার জোরাজুরির জন্যই তাকে এখানে আসতে হয়েছে।মুহুর্তেই চোখমুখ গরম হয়ে উঠল নেহার প্রতি অদৃশ্য এক রাগে।এগিয়ে গিয়েই নেহার পেটে কনুই দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলে উঠল,

‘ এক থাপ্পড়ে তোর সব দাঁত ফেলে দেওয়া উচিত নেহা!তোর জন্যই তো আমি এখানে আসলাম।আর তুই?’

নেহা মুখ চেপে হাসল।পরমুহুর্তেই মুখ তুলে নিরীহ প্রাণীর মতো ভাব ধরেই রক্তিমের দিকে তাকাল।রক্তিম মুচকি হাসল।বুকের মাঝে হাতজোড়া সেভাবেই গুঁজে রেখে গাড়ির দরজাটা খুলেই ইশারা করে বলল অদ্রিজাকে,

‘ উঠে পড়ুন। ভার্সিটিতে নাহয় কাল থেকেই যাবেন।এমনিতেও টাইম ওভার। উঠে পড়ুন।কিছু কথা বলার আছে।’

অদ্রিজা চাহনি সরু করে তাকিয়ে রইল।ঠিক যেটা ভেবেছিল সেটাই হয়েছে।আবার সেই বদ্ধ বাসা।নিরাশ চাহনি নিয়ে এদিক ওদিক তাকানোর মাঝেই নেহা ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ দোস্ত?তোরে প্রোপোজ করবে মে বি ভাইয়া। নো টেনশন।কিভাবে প্রোপোজ করেছে তা বলিস কল করে।আমি যাচ্ছি তাহলে?’

অদ্রিজা জোরে জোরে শ্বাস ফেলে নেহার দিকে তাকাল।রাগে জ্বলে উঠল ভেতরটা।শুধু শুধুই তার উপর দোষ চাপিয়ে দিল।কি এমন ক্ষতি করেছিল সে নেহার!এমন ক্ষতি না করলেই কি নয়?

.

গাড়িতে উঠার পর রক্তিম একটা কথাও বলেনি। অদ্রিজা অবাক হলো।আড়চোখে রক্তিমের থমথমে গম্ভীর মুখচাহনির দিকে তাকিয়ে থাকল পুরোটা পথ।হঠাৎ এতটা গম্ভীর? এত থমকানো চাহনি?রক্তিম কি রেগে আছে?অদ্রিজা বুঝে উঠল না।বার কয়েক জোরে জোরে শ্বাস ফেলেই একইভাবে আড়চোখে তাকিয়ে পরখ করতে লাগল রক্তিমকে।গাড়িটা বাসার সামনে এসে থামতেই অদ্রিজা হতবিহ্বল চাহনি নিয়ে তাকাল রক্তিমের দিকে।কি এমন কথা বলবে যে এতটা শান্ত হয়ে আছে?ঠোঁটে ঠোঁট চেপেই বলে উঠল সে,

‘ আপনি এত চুপচাপ হয়ে আছেন যে? কি জানি বলবেন বলছিলেন।’

রক্তিম শান্ত শীতল চাহনিতে তাকাল অদ্রিজার মুখের দিকে।চোখজোড়া বন্ধ করে রাগ দমনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেই মৃদু গলায় দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,

‘ বলেছিলাম তো ঐ মহিলার সাথে দেখা না করতে।তবুও কেন শুনেন না আমার কথা?কেন গিয়েছিলেন?’

রক্তিমের সেই শীতল কন্ঠেই অদ্রিজা কেঁপে উঠল।কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে বসে থাকতেই রক্তিম চোখ মেলে চাইল।আগের থেকেও শান্ত গম্ভীর গলায় বলে উঠল,

‘ আপনিও কি ঐ মহিলার মতোই ছেড়ে যাবেন আমায়?ঐ মহিলার মতো আমার সন্তানকে ভুলে যাবেন? ভুলে যাবেন সবটা?ঐ মহিলার মতোই?’

অদ্রিজা অস্ফুট স্বরেই বলে উঠল,

‘ রক্তিম!’

রক্তিম হাসল।বলে উঠল,

‘ কি হলো? ভুলে যাবেন? আমাকে, আমাদের সন্তানকে রেখে চলে যাবেন ঐ খারাপ মহিলাটার মতোই?’

অদ্রিজার চোখ লাল হয়ে উঠল।ঘনঘন নিঃশ্বাস নিয়েই অস্পষ্ট গলায় বলে উঠল,

‘ আমি আমার সন্তানকে ছেড়ে কোনদিনও যাবো না রক্তিম।তাকে আমার সবটা দিয়ে সব সময় আগলে রাখব।যতদিন বেঁচে থাকব আমি তার চারপাশে সবসময় থাকব।তাকে ছেড়ে থাকার কথা আমি এখনও ভাবতে পারি না। পারি না ভাবতে। ‘

‘ আর আমাকে?আমাকে যাবেন না তো ছেড়ে?’

অদ্রিজা শক্ত চাহনি নিক্ষেপ করল।রক্তিমের শীতল চাহনির দিকে তাকিয়েই কঠিন কন্ঠে বলল,

‘ আপনাকে ছাড়ার প্রশ্ন নতুন করে আসার তো কথা নয় রক্তিম।আপনার আর আমার ছেড়ে যাওয়ার কথা আশা রাখি অনেক আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছে। তাই না?আপনিই তো বলেছিলেন আমার সাথে থাকতে চান না।ভালোবাসেন না আমায়।তাহলে?ডিভোর্সের জন্য তো আপনিই এপ্লাই করে রেখেছিলেন।আম্মুকে বলেছিলেন তো। তাই না?নিজের স্ত্রীকে অন্য একজনের কাছে তুলে দিতেও চেয়েছিলেন।দিহানকে বলেছিলেন আমার পাশে থাকতে।আমাকে আগলে নিতে।বলেননি?ছিঃ!একজনের বিবাহিত স্ত্রী হয়ে আমাকে আগলে রাখবে অন্য একজন পরপুরুষ!এই কথাটা আমার জন্য কতটা অপমানজনক হতে পারে ভেবেছিলেন আপনি?আমাকে আপনার ফেলনা মনে হয় তাই না রক্তিম?ফেলনা আমি?বিয়ে করলেন, ইউজ করলেন, তারপর মন উঠে গেল আর ছুড়ে ফেলে দিলেন?ওহ। স্যরি!ছুড়ে ফেলে দেওয়া বললে ভুল।আপনি আমায় অন্য একজন পরপুরুষের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন!ছিঃ!কতটা জঘন্য চিন্তাধারা আপনার!’

রক্তিম মুখে এবার হাসির রেখা দেখা গেল।সেই রেখাটা দেখেই অদ্রিজা আরো জ্বলে উঠল।পুরো শরীর জুড়ে রক্তিমের হাসি নামক বিষাক্ত বিষটা ছুঁয়ে যেতেই ক্ষ্রিপ্ত হলো তার চাহনি।রক্তিমের কলারটা হাতজোড়া দিয়ে চেপে ধরেই দাঁতে দাঁতে চেপে শক্ত গলায় বলে উঠল,

‘ হাসছেন?এসব শুনেও হাসছেন?আসলেই আপনার মন নেই।নিকৃষ্ট!পৃথিবীর সবথেকে নিকৃষ্ট মানুষ আপনি।আপনার সাথে থাকার প্রশ্নই আসে না।ডিভোর্স হলেই আপনাকে ছেড়ে চলে যাব। আপনার আশেপাশে ও থাকব না।আপনি তো খুশি।আবার জিজ্ঞেস করছেন আপনাকে ছেড়ে যাব কিনা?লজ্জ্বা করে না আপনার?’

রক্তিম আবার ও হাসল।পাশ ফিরে অদ্রিজার দিকে গভীর নেশালো চাহনিতে তাকাল। সাদা ধবধবে মুখ লালচে হয়ে উঠছে ক্রমশ।রাগে পাতলা ঠোঁটজোড়া কাঁপছে।কাঁপতে থাকা সেই ঠোঁটজোড়াকে দেখেই নিজেকে আর নিয়ন্ত্রন করা গেল না।হাতজোড়া অদ্রিজার কোমড়ে রেখেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।ঠোঁটজোড়া দিয়ে অদ্রিজার কাঁপতে থাকা চিকন, পাতলা ঠোঁটজোড়া দখল করে নিয়েই কাঁমড় বসাল অদ্রিজার নিচের ঠোঁটে।সঙ্গে সঙ্গে ব্যাথায় কুঁকড়ে গেল অদ্রিজা। অস্ফুট স্বরে “আহ” বলতেই রক্তিম মুচকি হাসল।ঠোঁট বাঁকিয়ে পিচেল গলায় বলে উঠল,

‘ এভাবেই রেগে যাবেন।সময়ে অসময়ে রেগে কথা শুনাবেন আপনার ঠোঁটজোড়া নেড়ে।আর রাগে কাঁপতে থাকা সেই ঠোঁটজোড়া দেখে কন্ট্রোলল্যাস হয়ে ছুঁয়ে দিব আমি।ঠোঁটজোড়া দিয়ে ভিজিয়ে দিব।দারুণ না?’

অদ্রিজা ক্ষেপল।দাঁতে দাঁত চেপেই শক্ত গলায় বলল,

‘ অসহ্যকর!আপনি একটা অসহ্যকর লোক!’

রক্তিম বাঁকা হেসেই অদ্রিজার কোমড়টা আরো শক্ত করে চেপে ধরল। ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ আর এই অসহ্যকর লোকটার সাথেই পুরো জীবনটা কাঁটাতে হবে আপনার।এবার কিভাবে কাঁটাবেন তা আপনিই বুঝে নিন।’

রাগে অদ্রিজার চোখমুখ আরো লাল হলো।ঘন হলো নিঃশ্বাস!কাঁপতে থাকা ঠোঁটজোড়া চেপে রেখেই রাগে হাঁসফাঁস করতে লাগল।রক্তিম তা দেখেই হেসে উঠল।অদ্রিজার কোমড় থেকে হাত সরিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ আপনি রাগলে কি যে লাগে! নিজেকে কন্ট্রোল করা কঠিন হয়ে যায় অদ্রিজা।পরে কন্ট্রোলল্যাস হয়ে গেলে সামলাতে পারবেন না । বলে দিলাম।’

‘ বিরক্তিকর!’

কথাটা দাঁতে দাঁত চেপে বলেই অদ্রিজা গাড়ি থেকে নামতে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই রক্তিম তার হাত চেপে ধরল।মৃদু হেসে গম্ভীর গলায় বলে উঠল,

‘ ঐ মহিলার সাথে আর দেখা করতে যাবেন না।একদমই না।কথাটা যেন মাথায় থাকে।যদি দেখা করেন তাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না অদ্রিজা।আমি চাই না ঐ চরিত্রহীন, খারাপ মহিলাটার ছায়া আমার সন্তানের উপর পড়ুক। আমি চাই না ঐ মহিলার ছায়া পড়ে আপনার প্রতি তার কোন প্রতিফলন ঘটুক।আমি চাই না ঐ মহিলার মতোই আপনি আমার চোখে দোষী হোন।প্লিজ!দেখা করতে যাবেন না ঐ খারাপ মহিলাটার সাথে।অনুরোধ করছি।’

অদ্রিজা চোখ তুলে রক্তিমের মুখের দিকে হতবিহ্বল চাহনিতে তাকিয়ে রইল।রক্তিম মুচকি হাসল।অদ্রিজার হাত ছেড়ে দিয়েই ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলল,

‘ বাই।টেইক কেয়ার।’

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here