হৃদয় নিবাসে তুই পর্ব -৩৪+৩৫

#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_৩৪
লেখনীতেঃভূমি

সুইটহার্ট দরজা খুলতেই অদ্রিজা তার লাল হওয়া মুখচোখ নিয়ে সরু চোখে চেয়ে থাকল।নিচের ঠোঁটটা দাঁত দিয়ে চেপে রেখেই ওড়নাটা মাথা থেকে সরাতে সরাতেই ভেতরে আসল।সোফায় বসেই সুইটহার্টের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

‘ সুইটহার্ট?তুমি বলেছিলে আমায় কথাগুলো বলবে।বলবে এখন?আমি জানতে চাই।’

সুইটহার্ট গম্ভীর চাহনিতে তাকাল।পরনের শাড়িটা ঠিক করে নিয়ে পা এগিয়ে অদ্রিজার সামনে দাঁড়াল।বার কয়েক নিঃশ্বাস ফেলেই পানির জগটা ইশারা করে বলে উঠল,

‘ বাইরে থেকে এসেছো অদ্রি।এক গ্লাস পানি খেয়ে নাও।’

অদ্রিজা জেদ নিয়ে তাকাল।নিচের ঠোঁটে রক্তিমের কাঁমড়ের জন্য হালকা ব্যাথা অনুভব করেই ঠোঁটে ঠোঁট চেপে মুখ ফুলিয়ে বসে রইল।গম্ভীর গলায় মুখ কালো করে বলল,

‘ বলবে না তা সোজাসুজি বললেই তো পারো সুইটহার্ট!তোমরা সবাই আসলেই রক্তিমমুখী!কি আছে ঐ খারাপ লোকটার মাঝে?ঐ লোকটা বলতে নিষেধ করলে তোমাদের মুখ থেকে একটা শব্দ তো দূর,একটা অক্ষরও বের হয় না সুইটহার্ট।অথচ আমার সব কথাই উনাকে বলে দাও।কেন?এই যে এখন উনার অপারেশনের কথা জিজ্ঞেস করছি এটাও নিশ্চয় বলে দিবে তাই না?সবাই খারাপ!আমায় কেউই ভালোবাসে না।’

সুইটহার্ট আনমনেই হাসল।কুচকানো চামড়ায় সেই হাসি ভারী মানাল।কাঁচা পাঁকা চুলগুলোর কিছু চুল কপালে ভীড় করতেই তা কানের পেঁছনে গুঁজে নিল।অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই মুচকি হেসে বলল,

‘ ধুররর!কেন তোমায় কেউ ভালোবাসবে না?এই মিষ্টি মেয়েটাকে ভালো না বেসে থাকা যায়? ‘

অদ্রিজা ঠোঁট উল্টেই বলল,

‘ দিব্যি যায়।তুমি, নেহা সবাই তো ভালো না বেসেই আছে।কেউ আমায় সত্যিটা বলোনি।এখনও বলছো না সুইটহার্ট!’

সুইটহার্ট মিনমিনে চোখে তাকিয়ে রইল।অদ্রিজার মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বলল,

‘ সত্যিটা জানার কি এতটাই প্রয়োজন অদ্রি?না জানলেই নয়?ঐসব তিক্ত দিনগুলোর কথা মনে করতেই খারাপ লাগে।বলতে গেলে তো আরো খারাপ লাগবে।তোমারও খারাপ লাগবে। ‘

অদ্রিজা ভ্রু কুঁচকাল।ঠোঁট বাঁকিয়েই বলল,

‘ কি এমন কথা যে খারাপ লাগবে?বলে ফেলো সুইটহার্ট।আমার নয়তো শান্তি হবে না।’

সুইটহার্ট হাসল ঠোঁট টেনে।লম্বা একটা শ্বাস ফেলেই বলল,

‘ আচ্ছা বলছি।’

অদ্রিজা মৃদু হাসল।চোখেমুখে উৎসুক দৃষ্টি।কি এমন ঘটেছিল?সত্যিটা আসলে কি ছিল?সুইটহার্ট কি বলবে? এসব ভেবেই মনোযোগী হয়ে তাকিয়ে রইলো সুইটহার্টের দিকে।সুইটহার্ট সেই উৎসুক দৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করেই কয়েক সেকেন্ড পর বলতে লাগলেন,

‘ রক্তিমের ব্রেইন টিউমার ছিল অদ্রি।তোমার সাথে যখন রক্তিমের বিয়ে হয় তারও প্রায় বছর এক আগে বিষয়টা আমরা জানতে পেরেছিলাম।প্রচন্ড মাথ ব্যাথায় যখন ছটফট করত প্রথমে বিষয়টা অতোটা গুরুত্ব না দিলেও পরবর্তীতে যখন ডক্টর দেখানো হলো, বিভিন্ন টেস্ট করা হলো তখনই জানতে পারলাম ওর ব্রেইন টিউমার।আমি তখন ভীষণ ভেঙ্গে পরেছিলাম।দিন রাত কেবল কান্না করতাম।কেন ওর জীবনে এমন কিছু হলো তা ভেবেই।ছোটবেলা থেকে কষ্ট পেতে পেতে জমে যাওয়া ছেলেটার জীবনেই আবার কেন এমন শাস্তি!সৃষ্টিকর্তার কাছে বারবার প্রার্থনা করেছি যাতে জানের সাথে খারাপ কিছু না হয়।দিনরাত কেঁদে ভাসিয়েছিলাম।কিন্তু ও কোনদিন এই বিষয়টা নিয়ে এটুকুও মন খারাপ করেনি।বাবা মায়ের থেকে কষ্ট পেয়ে ম্যাচিউর হওয়ার পর থেকে ওর মুখে সর্বক্ষন যে মুচকি হাসিটা জড়িয়ে থাকত সেই হাসিটা তখনও ছিল।নিজের জীবনের এমন একটা কথা জানতে পেরে কোনদিন ওর মনেই হয়নি দুঃখ করা উচিত।কারণ ও জানত, আমিও কিছু বছর পর ওর সাথে আর থাকব না।কোন একদিন আমিও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করব।তখন তো ও একা হয়ে যাবে।কি করে বাঁচবে সেই নিঃসঙ্গ জীবন?সেই কষ্টকর নিঃসঙ্গ বিশ্রী জীবনটা কাঁটানোর থেকে এভাবে ব্রেইন টিউমারের উপলক্ষ্যে অকালে মরে যাওয়াই ভালো।এটাই ওর মাথায় ডুকেছিল তখন।ওর মনে হতো সৃষ্টিকর্তা এটা ওর ভালোর জন্যই করেছে।ঐ যে বলে না, বিধাতা যা করে ভালোর জন্যই করে।জানও ঐ কথাটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করল। কিন্তু আমি মানতে পারলাম না।ডক্টরের সাথে আলাপ করে জানতে পারলাম, অপারেশনের মাধ্যমে টিউমার নামক অভিশাপটা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।তবে নিশ্চয়তা নেই।অপরেশনটার সফলতার অংশ ছিল পঞ্চাশ শতাংশ আর অসফলতার অংশ পঞ্চাশ শতাংশ।আমি সেইদিন ভীষণ কান্না করেছিলাম। আজও মনে পড়ে।সেইদিন জানও আমায় জড়িয়ে কেঁদেছিল।চোখের পানি মুঁছিয়ে দিয়ে বলেছিল,” সুইটহার্ট?আর কতদিন বাঁচব তা তো আমি জানি না হয়তো খুব শীঘ্রই মরে যাব, নয়তো বেশি হলে আর অল্প কয়েক বছর।সেই তো একদিন আমি মারাই যাব সুইটহার্ট। কিন্তু অপারেশনটা অসফল হলে আমাকে এক্ষুনিই সব ছেড়ে চলে যেতে হবে। এই দুনিয়া থেকে, তোমার থেকে চিরতরে চলে যেতে হবে সুইটহার্ট। তার থেকে আর কয়টা দিন বাঁচি সুইটহার্ট? তোমায় নিয়ে।সুন্দর করে আর কয়েকটা বছর কাঁটাই?প্লিজ!’আমি সেইদিন জানের কথার উপর আর কোন কথা বলতে পারিনি অদ্রি।কান্নায় বারবার চোখ ভিজে গেছিল আমার।তারপর আর সেই প্রসঙ্গ জানের সামনে তুলিইনি কোনদিন আমি।যদি ওর মন খারাপ হয় সেই ভয়েই আর কোনদিন এই বিষয়টা ওর মনেই পড়তে দিই নি।সবসময় ওকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করতাম আমি।সবসময় আগলে রাখার চেষ্টা করতাম।যাতে কোনদিন ও ঐ কথাটা মনে করে কষ্ট না পায়।’

সুইটহার্ট ছোট নিঃশ্বাস ফেললেন সবগুলো কথা বলেই।অদ্রিজা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল।রক্তিমের জীবনের এতকিছু সম্পর্কে কোনদিনও এইটুকুও আন্দাজ করতে পারেনি সে।সত্যিই রক্তিমের মুখের হাসিটা কোনদিন ও বুঝতেই দেয় নি তার ভেতরের এতকিছু।সত্যিই কি কষ্ট হতো না তার এই কথাটা ভেবে?সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালোর জন্য করেন এটা মানলেও দিনশেষে কি আক্ষেপ হতো না?কান্না পেত না?অদ্রিজা ভেবে পেল না।চোখজোড়া অল্প টলমল করে উঠতেই অন্য পাশ ফিরে চাইল।জোরে জোরে শ্বাস ফেলেই কান্না দমিয়ে বলে উঠল,

‘ তারপর?তারপর কি হয়েছিল সুইটহার্ট?অপারেশণ টা কবে হয়েছিল?’

সুইটহার্ট তপ্তশ্বাস ফেললেন।গম্ভীর মুখখানি অদ্রিজার দিকে তাক করেই গম্ভীর চাহনি ফেললেন। ভিজে উঠা কন্ঠটা নিয়েই আবার বলতে লাগলেন,

‘ তোমার সাথে যে ওর বিয়ে হয়েছিল, বিষয়টা আমি প্রথমে জানতাম না।হয়তো ওর বাবার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করেছে ভেবে কষ্ট পাব, এই ভেবেই বলেনি।জানি না ঠিক।তবে হয়তোবা তোমার সাথে বিয়ের পর থেকেই রক্তিম তার নিজের সাথে ভেতরে ভেতরে লড়তে থাকল।নিজের সাথে নিজেই প্রতিনিয়ত লড়তে লড়তে যখন ক্লান্ত হয়ে যেত, পরাজিত হয়ে যেত তখনই টলমলে চোখে চেয়ে থাকত ও।কোনকোনদিন কান্না ও করত।আমি অবাক হয়ে চাইতাম।যে সব দুঃখকে লুকিয়ে হাসতে জানে, সে যে কাঁদতেও জানে তা ঐ দিনগুলোতেই আমি টের পেয়েছিলাম।আমার ছোট্ট দাদুভাই যে সেই ছোট্টটিই রয়ে গেছে তা ঐ দিনগুলোতেই আমি বুঝেছিলাম।বারবার বলত, “সৃষ্টিকর্তা এমন কেন করল আমার সাথে।” আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলতাম।প্রায় একমাস, একমাস থেকে কম হবে অবশ্য, ও আমার থেকে দূরে ছিল।জিজ্ঞেস করলেই বলত অফিসের কাজে।সেই প্রথম ও আমার থেকে কিছু লুকিয়ে গিয়েছিল।তোমার সাথে ওর বিয়ের কথাটা লুকিয়ে গিয়েছিল।যেইদিন জানতে পারলাম তোমাদের বিয়ের বিষয়টা আমি বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছিল না আমার। পরমুহুর্তেই অবশ্য আমি হেসেছিলাম।আমি সত্যিই চেয়েছিলাম ওর জীবনে কেউ আসুক, কেউ ভালোবাসুক ওকে।আমি যখন থাকব না দুনিয়ায় তখন যাতে কেউ তাকে ভালোবেসে আগলে রাখে।সত্যিই চেয়েছিলাম।সৃষ্টিকর্তা সেই ইচ্ছেটাই পূরণ করলেন তোমায় এনে।তখনই বুঝেছিলাম দিনের পর দিন ওর মন খারাপের কারণ।কান্নার কারণ।বুঝতে পেরেছিলাম ও তোমায় ভালোবাসে।সেইদিন সত্যিই কতোটা খুশি হয়েছিলাম আমি জানা নেই।মনে মনে বারংবার সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম।কিন্তু ঐ যে!দিনশেষে ঐ একটাই ভয়!ঐ ভয়টার কারণেই ও তোমাকে দূরে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল। ঐ ভয়টার কারণেই তোমার সুন্দর জীবনটাকে ওর অনিশ্চিত জীবনের সাথে জড়াতে চায়নি। নিজের ভালোবাসাকেও বিধাতার ঐ অভিশাপের ভেতর মুড়িয়ে নিয়েছিল।ভালোবাসার মানুষটা নিজের জেনেও পর করে দিতে চেয়েছিল।শুধু ঐ একটাই কারণে!’

অদ্রিজা থমকে গেল!রক্তিম যে তাকে ভালোবাসে কথাটা মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছাতেই কেঁপে উঠল শরীর।কিছুতেই বোধগম্য হলো না কথাটা।মনটা বাচ্চাদের মতো বারংবার জিজ্ঞেস করল,” সত্যি?সত্যিই রক্তিম তোমাকে ভালোবাসে অদ্রিজা?” অদ্রিজা চোখ বন্ধ করল। রক্তিম তাকে ভালোবাসে কথাটা বারংবার মনের ভেতর ঘুরতে লাগল।চোখ মেলেই সুপ্তশ্বাস ফেলে সুইটহার্টের দিকে তাকাল।প্রশ্ন করল,

‘ উনি আমাকে ভালোবাসে?কিভাবে?কি বলছো তুমি সুইটহার্ট?’

সুইটহার্ট মুচকি হাসল। বলল,

‘ সেটা না হয় ওর কাছ থেকে জেনে নিও অদ্রি।ভালোবাসে কিনা জিজ্ঞেস করে নিও। ‘

‘ উনি বলবেন, উনি আমায় ভালোবাসেন?স্বীকার করবেন? ‘

‘ সেটা তো জানা নেই।’

অদ্রিজা হতবিহ্বল চাহনি নিয়ে তাকাল।ঠোঁট চেপে বলল,

‘ তারপর?তারপর কি হয়েছে?’

‘ তারপর?তারপর ও তোমায় দূরে সরিয়ে দিল।সিদ্ধান্ত নিয়েই নিল, ওর অনিশ্চিত জীবনের সাথে তেমার জীবন কিছুতেই জড়াবে না।সেই হিসেবে তোমার মায়ের কাছে ভুলভাল সব প্রমাণ করে তোমায় রেখে আসল।ভেবে নিয়েছিল এবার তোমার আর ওর পথ আলাদা।সেই আলাদা পথ হাঁটতে গিয়ে নিজেই বারংবার রক্ত ঝরিয়েছে।নিজেই কষ্ট পেয়েছে।চিৎকার করে কেঁদেছে।শুধুমাত্র তোমার থেকে আলাদা হওয়ার কষ্টে।দিনশেষে সেই কষ্টগুলোকে আপন করেও নিজেকে আলাদা রাখল তোমার থেকে।কিন্তু বিধাতা বোধ হয় তা চায় নি।তাই তো মাসখানেক পর অত্রিয়া কল করে বলল তুমি মা হতে চলেছো।সেইদিন ওর অনুভূতিটা কেমন হয়েছিল তা হয়তো বলে বুঝাতে পারব না।ওর মুখের সেই হাসিটাতে পৃথিবীর সব সুখ ছিল সেইদিন।আর সেইদিন ও সিদ্ধান্ত নিল অপারেশনটা হবে।নিজের সন্তানের জন্যই সেদিন ওর বাঁচার আকুতি মিনতি দেখে আমার চোখ টলমল করছিল।ঝাপসা চোখে ওর দিকে সেদিন অনেকক্ষন তাকিয়ে ছিলাম আমি।তারপর সেই সময়টা এল।দেশ ছেড়ে অপরিচিত দেশে ওর চিকিৎসার জন্যই গিয়েছিলাম।এতটা রিস্ক নিয়ে জীবন ম/রন নিয়ে প্রশ্ন রাখা সেই অপারেশনটা যখন ঠিকভাবে সম্পন্ন হলো, সফল হলো জানাল ডক্টর তখন কান্নায় চোখজোড়া লাল হয়ে গিয়েছিল আমার।দুইদিন পর যখন ওর জ্ঞান ফিরল তখন হাউমাউ করে কেঁদেছিলাম।ও শুধু হেসেছিল সেদিন।অস্ফুট স্বরে বলেছিল,” সুইটহার্ট!আমার সন্তান আমার সাথেই বাঁচবে।সৃষ্টিকর্তা আমার সন্তানের সাথে অন্যায় করেনি।”সে কথাটা শুনে কান্না করতে করতেও হেসেছিলাম আমি।তারপর আরও একমাস পর আবার দেশে ফেরা,তোমায় জ্বালানো, তোমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা,তোমায় আপন করার প্রচেষ্টা।সেখান থেকেই শুরু। ‘

কথাগুলো বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলল সুইটহার্ট। অদ্রিজা কেবল টলমলে চোখে চেয়ে থাকল।রক্তিমের এত বড় একটা অপারেশন হলো অথচ সে কিছুই জানল না?কিছুই জানাল না কেউ তাকে?যদি রক্তিম আজ না থাকত?যদি রক্তিমের কিছু হয়ে যেত?ভাবতেই মুঁছড়ে উঠল ভেতরটা।শত হোক, ভালোবাসে তো!ঐ মানুষটাকেই তো ভালোবাসে!
#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_৩৫
লেখনীতেঃভূমি

সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গতেই বিছানায় নিজের পাশে রক্তিমকে আবিষ্কার করল অদ্রিজা।গতকাল রাতে তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে গিয়েছিল সে।তখন রক্তিম ফিরেই নি।হয়তো ঘুমানোর পরই এসেছিল রক্তিম।ঝাপসা চোখে রক্তিমের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়েই হাসল। চোখজোড়া স্থির রেখে রক্তিমের মুখ চোখ গভীর ভাবে পরীক্ষণ করল।কাঁপা হাতে রক্তিমের কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিতেই ঘুমন্ত রক্তিম সজাগ হলে বোধ হয়।চোখজোড়া সেভাবে বন্ধ রেখেই কপালে চেপে ধরল অদ্রিজার হাতটা।ঘুম জড়ানে গলায় বলে উঠল,

‘ ঘুমিয়ে আছি বলে সুযোগের সৎ ব্যবহার করে ফেলছেন?’

অদ্রিজা ভ্রু জোড়া কুঁচকাল।হাতটা একটানে রক্তিমের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়েই উঠে বসল দ্রুত।গম্ভীর গলায় বলল,

‘ না, দেখছিলাম ছেলেদের চুল সরানোর অনুভূতি কেমন হয়।ভবিষ্যৎ হাজব্যান্ডের ঘুমন্ত অবস্থায় এভাবে চুলে হাত বুলাব।দারুণ না আইডিয়াটা?’

কথাটা বলেই ঠোঁট টিপে হাসল অদ্রিজা।রক্তিম চোখ মেলে চাইল এবার।ভ্রু নাচিয়েই বলে উঠল,

‘ ভবিষ্যৎ হাজব্যান্ড? সে আর আপনার জীবনে আসবে না।সে আশা ঝেড়ে ফেলুন খুব দ্রুত।নয়তো আপসোস করবেন।’

অদ্রিজা কড়া চাহনিতে চাইল।অপূর্ব চোখজোড়ায় গাম্ভীর্য ফুটিয়েই গুরুগম্ভীর চাহনি ফেলল রক্তিমের দিকে।হাতজোড়া বুকে ভাজ করেই কঠিন গলায় বলল,

‘ কেন? আপসোস করব কেন? আপনার থেকেও শতগুণ ভালো হাজব্যান্ড পাব আমি।দেখবেন। আপনার মতো অসহ্যকর একটা লোকের সাথে দিন কাঁটাতে হবে না এটা ভেবেই দারুণ লাগছে।মনটা ফুরফুরে লাগছে।আহ!আমি, আমার বেবি আর আমার ভবিষ্যৎ হাজব্যান্ড!দারুণ একটা সংসার হবে।’

রক্তিম প্রথমবার মজা হিসেবে উড়িয়ে দিলেও এবার মুখচোখ গম্ভীর হলো।ঘুমে ফোলা চোখজোড়া জোর করেই মেলে রেখে অদ্রিজার দিকে শান্ত নিশ্চলভাবে চেয়ে থাকল।ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘ পেয়ে গেছেন নাকি ভবিষ্যৎ হাজব্যান্ড?আপনার খুশি দেখে তো মনে হচ্ছে ভবিষ্যৎ হাজব্যান্ডকে আজই বিয়ে করে বর্তমান হাজব্যান্ড বানিয়ে নিবেন।’

অদ্রিজা হাসল।অগোছাল চুলগুলো হাত দিয়ে খোঁপা করতে করতেই ঠোঁট টিপে হেসে বলল,

‘ উহ!পাই নি এখনো।খোঁজ চলছে।পেয়ে গেলেই টুপ করে বিয়ে করে প্রেজেন্ট হাজব্যান্ড বানিয়ে নিব।দিহান বেচারা নেহার সাথে চিপকে না গেলে আপনার কথা অনুযায়ী দিহানকেই বিয়ে করে নিতাম।এক মুহুর্তও দেরি করতাম না।ও আমায় আগলে রাখত বলুন?অনেক ভালোবাসত।অন্তত আপনি নামক অসহ্যকর লোকটার মতো তো না।’

রক্তিম আরেক দফা ভ্রু কুঁচকাল।আশ্চর্যজনক ভাবে অদ্রিজার কথাবার্তায়, আচরণে অদ্ভুত পরিবর্তন দেখে বিস্ময় খেলে গেল চোখমুখে। কথা বলার সময় আগে যে রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা থাকত আজ সেটা নেই।দৃষ্টিতে অদ্ভুত রহস্য।ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্য নেই।কথার উত্তরেই মিষ্টি হাসছে।হঠাৎ এই পরিবর্তন?এক রাতে কি হয়ে গেল হঠাৎ?সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই অদ্রিজার এমন অদ্ভুত আচরণ?রক্তিম ভাবল।ভীষণ গুরুতর ভাবে ভাবল। কিন্তু কোন উত্তর পেল না।কপাল কুঁচকে অদ্রিজার দিকে বার কয়েক চেয়ে থাকতেই অদ্রিজা ভ্রু নাচাল।ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,

‘ কি হলো?কষ্ট হচ্ছে?চিন্তা নেই।আপনিও কাউকে বিয়ে করে ফেলবেন আরকি!আমাকে তো ভালোবাসেননি। তাকে ভালোবাসবেন।খু্ব করে। বাসবেন না?’

রক্তিমের দৃষ্টি আরো সরু হলো।গম্ভীর গলায় বলে উঠল তৎক্ষনাৎ,

‘ সমস্যা কি আপনার?সকাল সকাল বিয়ে, হাজব্যান্ড নিয়ে পড়লেন কেন?অদ্ভুত!’

অদ্রিজা ঠোঁট কাঁমড়ে হাসল।মুখচোখে হাসির রেশ ফুটিয়েই বলে উঠল,

‘ কেন? অদ্ভুত কেন?চুক্তি হোক বা স্বাভাবিক আপনার সাথে আমার বিয়েটাতো হয়েছে। আপাদত আমি তো আপনার স্ত্রী। আপনার চাওয়াগুলো পূরণ করা আমার উচিত নয় রক্তিম?আপনিই তো এত কষ্ট করে দিহানকে আকুতি মিনতি করে বলেছিলেন। তো আমার উচিত না আপনার ইচ্ছের মূল্য দেওয়া?আপনার ইচ্ছেটা পূরণ করা?তাই ভাবলাম, দিহান না হোক অন্য কোন ছেলেকে এক্সেপ্ট করাই যায়। আমার ভবিষ্যৎ হাজব্যান্ড হিসেবে!’

রক্তিমের চোয়াল শক্ত হলো।ফর্সা মুখটা লাল রক্তিম হয়ে উঠল মুহুর্তেই।অদ্রিজার দিকে টানটান নজরে তাকিয়েই বুঝার চেষ্টা চালাল কিছু।কিন্তু কিছুই বুঝা গেল না। হতবিহ্বল চাহনি নিয়ে তাকিয়ে থেকেই গমগমে কন্ঠে শুধাল,

‘ আপনি শুধু শুধুই এত সব স্বপ্ন দেখে ফেলছেন!কেউ আসবেও না আপনার জীবনে, আর কেউ আপনার হাজব্যান্ডও হবে না।সো এক্সেপ্ট আর কাকেই করবেন? আপনি মিথ্যে স্বপ্ন দেখতেই পারেন।আমি আপাদত কিছু মনে করছি না।’

অদ্রিজা হাসল।ভ্রু নাচিয়ে বলল,

‘ মনে করেননি?তাহলে চোখমুখের হঠাৎ এই পরিবর্তন? রাগে থমথমে হয়ে গেলেন যে মিঃ রক্তিম মাহমুদ?নিজের স্ত্রী অন্য কাউকে নিয়ে ভাববে বলে?সমস্যা কি ভাবলে?এমনিতেও তো ডিভোর্সটা হয়েই যাবে আপনার সাথে তাই না?’

রক্তিম রাগল।চোখমুখে দেখা গেল প্রখর দৃষ্টির চমৎকার রেশ। অদ্রিজার দিকে ফিরে কানের কাছে দাঁত দাঁত চেপে বলে উঠল,

‘ বারবার ডিভোর্সের কথা বলেন কেন?আশ্চর্য!ডিভোর্সটা হবে না।আপনি শুধু শুধুই এসব নিয়ে পড়ে আছেন।আর এসব বলে আমাকে বিরক্ত করছেন শুধুশুধু!’

অদ্রিজা তীক্ষ্ণ চাহনিতে তাকাল।মুখচোখে ভীষণ প্রখর দৃষ্টি ফুটিয়েই রক্তিমের কলার টেনে ধরল।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ মোটেই না!আগামী একমাসের মধ্যে দেখবেন হুট করেই কোন একদিন বিয়ে করে নিয়েছি।আপনার শখ আমি অন্য কোন পুরুষের অধীনে থাকি।শখটা পূরণ করা দরকার নয়?’

রক্তিম দাঁতে দাঁত চাপল।অদ্রিজার চোখে চোখ রেখেই বলল,

‘ স্টুপিড!আপনাকে এখন স্যরি বলা উচিত এসবের জন্য?স্যরি বলা দরকার?তাই এমন স্টুপিডের মতো ঐসব কথা আমার সামনে তুলর ধরছেন? আমায় ইচ্ছে করেই জ্বালাচ্ছেন? ‘

রক্তিমের কথাগুলো শুনেই ঠোঁট টেনে হাসল অদ্রিজা।রক্তিমের কলার ছেড়ে দিয়ে কপালে আসা অগোছাল চুল গুলো কানের পেঁছনে গুঁজে নিয়েই বিছানা ছাড়ল।ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতেই বলে উঠল,

‘ উফফস!স্যরি নয়, স্যরি নয়। অন্যকিছু বলতে হবে।বলে ফেললেই কাহিনী ক্ষতম।আমি আর আপনাকে জ্বালাব না।প্রমিজ!’

রক্তিম ভ্রু কুঁচকাল।অদ্রিজার কথাবার্তায় তার মতোই উৎফুল্ল, ছাড়াছাড়া ভাব।তার রকমই হেসে হেসে কথা বলা।তাকে কপি করছে?বুঝে উঠল না।বিছানায় থমথমে মুখে বসেই ভাবতে লাগল কাহিনী আসলে কি। অদ্রিজা রাগছে না কেন আজ?বারংবার মুখে সেই চমৎকার হাসিই বা কেন?কথাগুলো ভেবে ভেবেই কয়েকমিনিট পার করে দিল।অদ্রিজা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসতেই শান্ত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

‘ আমায় কপি করছেন আপনি?আমার কথার ভঙ্গি কপি করছেন?এত ইজিলি, উৎফুল্লভাবে কথা বলছেন?অন্যদিন তো কথায় কথায় রেগে, ক্ষেপে যেতেন।’

অদ্রিজা ফর্সা মুখে হাসি ফুটাল সঙ্গে সঙ্গেই।ঠোঁট টেনে বলল,

‘ধরুন আপনি এতদিন যে সত্যটা আই মিন আমার যে দুর্বলতাটা জেনে আমাকে এত উৎফুল্ল ভাবে ইজিলি জ্বালিয়ে যেতেন, ঠিক তেমনই কোন দুর্বলতা আমিও পেয়ে গেছি।তাই আরকি।’

রক্তিম কপাল কুঁচকাল।দুর্বলতা?কথাটা ভাবতেই মাথায় এল অদ্রিজার প্র্যাগনেন্সির কথাটাই।নিজের সন্তানের প্রতি সবাই দুর্বল।অদ্রিজা কি সেই দুর্বলতার কথাই বলছে?সেই দুর্বলতার কথা জেনেই হঠাৎ এই পরিবর্তন?বুঝল না রক্তিম। দ্বিধান্বিত চাহনিতে তাকিয়েই বলল,

‘ কি দুর্বলতা?আপনার প্র্যাগন্যান্সির কথা বুঝাতে চাইছেন? আমি আমার সন্তানের প্রতি দুর্বল এটা জেনে গেছেন?এটা জানার কি আছে?প্রত্যেক বাবাই তো তার সন্তানের প্রতি দুর্বল হবে। তাই না?হেয়ালি না করে বলে ফেলুন কোন দুর্বলতার কথা বলেছেন।’

অদ্রিজা ঠোঁট টিপে হাসল।রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতেই বলল,

‘ উহ নাহ!অন্য কোন দুর্বলতা।ভাবুন।’

.

টেবিলের উপর দুই দুটো ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপ।একপাশে অদ্রিজা অন্যপাশে সুইটহার্ট বসা।অদ্রিজা একটা চায়ের কাপ সুইটহার্টের দিকে এগিয়ে দিয়েই মুখ ফুলিয়ে বলে উঠল,

‘ তুমি কিন্তু কিছু বলবে না সুইটহার্ট!ঐ বেয়াদপ লোকটা আমার দুর্বলতা জেনে ও বারংবার আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে।কাঁদিয়েছে।অপমান করেছে।আমি তার শোধ নিতে চাই।বলবে না কিন্তু। বললে কিন্তু তোমার সাথে কথা অফ সুইটহার্ট।’

সুইটহার্ট হাসল।বলল,

‘ আহারে!বেচারার প্রতি এখনো তোমার রাগ কমল না।’

‘ রাগ কমবে কেন?কমার প্রশ্নই আসছেেনা সুইটহার্ট!আমি উনাকে বারংবার বলেছি আমি উনাকে ভালোবাসি।তাও উনি আমার সেই কথাটার মূল্য দেয়নি।তাচ্ছিল্য করে ফিরিয়ে দিয়েছিল।বরং যখন জানল আমি উনাকে ভালোবাসি উনি গা ছাড়া ভাবে আমার সাথে দিনের পর দিন গা জ্বালানো কথা বলে গিয়েছে।উনি তো কখনো আমায় ভালোবাসে বলেনি সুইটহার্ট। আমি বলেছি।এখন যদি আবার উনার কাছে নিজ থেকে বলতে যাই ভালোবাসি তাহলে উনি আবারও ভাব নিবেন সুইটহার্ট।এবার কিন্তু আমি আর ভালোবাসি বলব না যতদিন না উনি স্বীকার করবেন।’

সুইটহার্ট মিষ্টি হেসেই বলে উঠল,

‘ শুধু মুখে ভালোবাসি বললেই কি ভালোবাসা হয়ে যায় অদ্রি?অনেক সময় মুখে না বলেও, কখনো প্রকাশ না করেও ভালোবাসা বুঝানো যায়।’

অদ্রিজা সূক্ষ চাহনিতে তাকিয়ে রইল।হয়তো!না বলেও বুঝানো যায়। কিন্তু ঐ যে!অপমানটা সেখানেই সাংঘাতিক, দিহানকে কেন আগলে নেওয়ার জন্য আকুতি জানিয়েছে রক্তিম?কেন!কথাটা ভাবতেই রাগে কান গরম হয়ে উঠল।মুখচোখ লাল হলো।ভেতরে থাকা নরম মনটা বলল, নাহ! কিছুতেই না।রক্তিমকে কিছুতেই এমনি এমনিই ক্ষমা করে দেওয়া যায় না।আগে সে স্বীকার করবে। নয়তো কিছুতেই মানা হবে না রক্তিম নির্দোষ।

.

রক্তিমদের বাসার সিঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছোতেই নিজের ঠিক দুইধাপ উপরের সিঁড়িতে রায়মানকে চোখে পড়ল অত্রিয়ার।দীর্ঘকার লম্বা, চওড়া শরীরের মানুষটিকে দেখে নিয়েই অত্রিয়া দাঁত কেলিয়ে হাসল। ধপাধপ করেই দুই ধাপ সিঁড়ি একলাপে পার করেই রায়মানের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মুচকি হেসেই চঞ্চল কন্ঠে বলে উঠল,

‘ হ্যালো রায়মান ভাইয়া।কেমন আছেন?’

রায়মান মুখ নামিয়ে নিজের সামনে পিচ্চি দেখতে মেয়েটার দিকে চাইল।নজর সরু করেই পা থেকে মাথা পর্যন্ত নিরীক্ষন করেই মৃদু হাসল।ঠোঁট চওড়া করে বলল,

‘ ভালোই আছি।তুমি?’

অত্রিয়া খিলখিলিয়ে হাসল।ভ্রু উঁচিয়ে বলল

‘ আপনি?আপনি এখানে কেন?তা আগে বলুন।’

‘ প্রশ্নটা তো আগে আমিই করলাম।উত্তরটা তুমি আগে দিবে।তারপর আমি।’

অত্রিয়া ঠোঁট উল্টাল।

‘ উফফস!কথাটাতো প্রথমে আমিই বলেছি আপনার সাথে।সুতারাং উত্তরটা আগে আমারই প্রাপ্য।চটফট বলে ফেলুন, এখানে কেন?বিয়ের কার্ড দিতেেএসেছেন?ইনভাইট করতে এসেছেন আপুদের?দেখি, আপনার বিয়ের কার্ডটা।কোথায়, দিন না, দেখি।’

রায়মান হতাশ হলো।চোখ ছোট ছোট করে অত্রিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুটা সময়।তাকে কিছু বলতে না দিয়েই অনবরত বলতে থাকা মেয়েটাকে একটুও বিরক্ত মনে হলো না।বরং মুখ চেপে হাসি আসল।মেয়েটা সত্যিই পিচ্চি। নয়তো কি এভাবে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বকে যেত?ঠোঁট চেপে হেসেই অত্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

‘ অপরপাশে কোন ব্যাক্তি যে আছে ভুলেই যাও নাকি।কিছু বলার সুযোগ দেওয়া তো উচিত অপরপাশের মানুষটাকে অত্রি।’

‘ দিলাম তো সুযোগ।বিয়ের কার্ডটা দেখালেন না ভাইয়া।দেখালে কি আপনার বিয়েতে নজর পড়ে যাবে?’

রায়মান ভ্রু নাচিয়ে বলল,

‘ কে জানে!নজর লাগলেও লাগতে পারে।আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে থেকে তো নজর লাগিয়ে দিলে।যদি বিয়েতেও নজর লাগিয়ে দাও। সাংঘাতিক ব্যাপার স্যাপার হয়ে যাবে।বিয়েটা যদি ভেঙ্গে যায়।’

অত্রিয়া মুখ ফুলাল।ঠোঁট উল্টে নিয়েই বলল,

‘ তার মানে আপনার বিয়েটা হয়ে যাচ্ছে?বিয়েটা করে নিচ্ছেন আপনি?পাত্রী কে?’

রায়মান চাপা হাসল।দাঁত কেলিয়ে বলল,

‘ আর কতকাল একা থাকব বলো।বিয়ে করা কি অনুচিত হয়ে যাবে? ‘

অত্রিয়া মুখটা আরোও ফুলাল।গম্ভীর গলায় বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে রেখে বলল,

‘ পাত্রী কে জিজ্ঞেস করলাম তো।’

রায়মান হু হা করে হাসল এবার। মৃদু গলায় বলল,

‘ তুমিই বোধ হয়।’

কথাটা বলেই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল রায়মান।অত্রিয়া ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে রইল।রায়মান যে এতক্ষন মজা নিচ্ছিল বুঝতে পেরেই মুখ কালো করল।এত্ত অভদ্র!ছোট্ট মনটায় একমুহুর্তের জন্য এভাবে ঝড় তুলে দেওয়া কি উচিত হয়েছে ঐ শ্যামপুরুষের!অভদ্র!চরম মাপের অভদ্র!

#চলবে…..

গল্প ভালো না লাগলে এড়িয়ে যাবেন।অনুরোধ রইল।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here