শুধু তুই ২ ❤️ পর্ব -০১+২

#শুধু_তুই
– (সিজন ২)
#Rifat Amin
#পর্বঃ০১

ঘুম থেকে উঠেই পুরো বাড়িতে একপ্রকার হইচই উঠে গেলো। এ আর নতুন কি? আজ নিউইয়র্ক থেকে প্রহর ভিলায় দীর্ঘ চারবছর পর পা রাখতে চলেছে সবার চোখের মণি দ্যি গ্রেট প্রহরভাই। তিনি আসার কথা সকাল আটটায়। অথচ এত তারাতারি এসে গেলেন! আমি বালিশের তলা হাতরে ফোনটা বের করে সময় দেখলাম সকাল ৮ টা ১৬৷ বাপ্রে বাপ! এত তারাতারি সময় চলে গেলো কিভাবে? আমার পরিচয়টা আগে দিয়ে নেই। আমি রশ্নি আহমেদ। বাবা মায়ের দুইমাত্র সন্তান। হিহি! যদিও বাবা-মা আর নেই। তবে আমার সুইট একটা বড়ভাই আছে। ওর নাম হচ্ছে প্রেম আহমেদ। যাই হোক, আমাকে এখন ফ্রেস হয়ে নিচে নামতে হবে৷ কারণ, আম্মি গতকাল পইপই করে বলে দিছে, ‘যখন তোর প্রহরভাই আসবে, তখন কিন্তু সবাই ওর সামনে থাকবে। তুইও থাকিস। নাহলে বাবু রাগ করতে পারে। ‘
আম্মি হলো আমার ফুফি। মা-বাবা রোড এক্সি’ডে’ন্টে মারা যাওয়ার পর থেকে আমি আর প্রেমভাইয়া এই বিশাল বাড়িটায় বড় হয়েছি। আমার যে মামা বাবা নেই, সেটা এই বাড়ির কেউ কখনো বুঝতে দেয়নি৷ বরং অকৃত্রিম ভালোবাসায় দিন দিন বড় হচ্ছি৷ এই ভালোবাসায় স্কুল লাইফ শেষ করে এবার কলেজে উঠলাম। দীর্ঘ আঠারো বছরের জীবনে বাবা মা’কে কাছ থেকে কখনো পাইনি। সে যাই হোক, ফ্রেস হয়ে নিচে নেমে দেখলাম বাসার সব মানুষজন, এমনকি কাজের বুয়া পর্যন্ত সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে প্রহরভাইকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রস্তুত। ঠিক তখনই বাড়ির মুল দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো সেই শ্যামমানব। উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রং হলেও উনাকে দেখলে মেয়েরা কখনো চোখ ফিরায় না। উনার পিছনে প্রেমকেও আসতে দেখলাম। এই একটা দিক দিয়ে প্রেমকে আমার ভালোলাগে না। কারণ ও সবসময় প্রহরভাই বলতে পাগল। যেমনটা পাগল পুরো বাড়ির লোকজন। আমি ভেবে পাইনা, এই মানুষটাকে এত প্রায়োরিটি দেয়ার কি আছে। বাসায় ঢুকেই সোজা আম্মিকে জড়িয়ে ধরলেন উনি। আম্মি তো কেঁদে কেটে অস্থির। এতদিন পর নিজের ছেলেকে সচক্ষে দেখলেন। উনি শান্তনা দিয়ে চলেছেন। আঙ্কেলকেও জড়িয়ে ধরলেন। একএক করে দাদা, দাদিকেও। ঠিক তখনি প্রেম আমাকে দেখলো উপর তলায় দাঁড়িয়ে রইছি। ও সামান্য চিৎকার করে বললো,

‘ রশ্নি এখানে চলে আয় । ওখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস? ‘ (প্রেম)

সাথে সাথেই প্রহরভাই আমার দিকে তাকালো। চোখ থেকে ব্লাক সানগ্লাসটা খুলে আমার দিকে একবার তাকিয়েই প্রেমকে বললো,

‘ না আসলে আসবে না। ওকে ডাকার কি আছে? ‘ (প্রহর)

কথাটা শোনামাত্র আমি ভ্রু কুটি করে তাকালাম উনার দিকে৷ প্রহরভাইয়ের কথায় প্রেম আর কথা বাড়ালো না। আমি ভদ্র মেয়ের মতো পা চালিয়ে নিচে নামলাম৷ নিচে প্রেয়সী আর ঐশীও রয়েছে। ওরা হচ্ছে প্রহরভাইয়ের ছোট দুইবোন। ঐশী আমার সাথে একই কলেজে ভর্তি হয়েছে। আর প্রেয়সী এবার সদ্য ক্লাস ২ তে উঠলো। আমি নিচে নামার সাথে সাথেই দেখলাম প্রেয়সী অলরেডি প্রহরভাইয়ের কোলে উঠেছি। এদিকে আমি আমার কাছে এসে কানে কানে কপট রাগিস্বরে বললো,

‘তোকে বললাম না আজকের দিনটার জন্যে হলেও তারাতারি উঠতে। এখন বাবু যদি রাগ করে তাহলে দেখিস ‘ (আম্মি)

আমি হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

‘ সরি আম্মি ‘ (আমি)

একটুপর একএক সবার সাথে কথা বললেন প্রহরভাই। কিন্তু আমার সামনে এসেই আর কোনো কথা বললেন না। পিছনে ঘুরে আম্মির দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ আমার রুমটা কি গোছানো আছে? প্রেম বাইরে ড্রাইভারকে বল তো লাগেজ দুটো যেনো উপরে নিয়ে আসে। ‘ (প্রহর)

প্রেম হেসে হেসে বললো,

‘আমি’ই নিয়ে আসছি প্রহরভাই। তুমি নিশ্চিতে থাকো। ‘ (প্রেম)

‘যেটা বলছি সেটা কর ‘ (প্রহর)

আমি ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে সবার কান্ড কারখানা দেখছি। উনার কোলে থাকা পিচ্চু প্রেয়সী হঠাৎ করে মিষ্টিস্বরে বললো,

‘ মিষ্টি আপুর সাথে কথা বলবা না দাভাই? তুমি জানো? সবসময় আপু তোমার নামে বাজেকথা বলে ‘ (প্রেয়সী)

প্রেয়সী আমাকে রশ্নি বলে ডাকতে পারে না। তাই মিষ্টি বলেই ডাকে। কিন্তু এটা কি করলো ও? একেবারে হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিলো। আমি আঁড়চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম কঠোর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও রশ্নি আহমেদ। উনাকে পাত্তা দেয়ার কে? উনি প্রেয়সীর গালটা হালকা টেনে দিয়ে বললেন,

‘ একজন পাবনা ফেরত পাগলকে আমাদের বাসায় আশ্রয় দিয়েছিলাম পিচ্চু। সে থাকুক, সমস্যা নাই। তাই বলে কি সেই পাগলের সব কথা তুমি বিশ্বাস করবে?

একদম আস্তে করে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে কথাটা বললেন উনি৷ প্রেয়সী বুঝলো কি বুঝলো না! ঐশী আমার কাছে এসে বললো,

‘ভাইয়াকে রুমে পৌঁছে দে তো। ‘ (ঐশী)

আমি সাথে সাথেই কঠোর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম। প্রহরভাইয়ের সাথে যে আমার সম্পর্ক খুব একটা ভালো না, সেটা ভালো করেই জানে ঐশী। তবুও এটা কি বললো? উনি গম্ভীর স্বরে সবার উদ্দেশ্যে বললেন,

‘ এখানে দাঁড়িয়ে থাকার মানে কি? আমি যে এতদিন পর আম্মুর হাতের রান্না খেতে এসেছি। সেটা কি ভুলে গেলো নাকি সবাই? ‘ (প্রহর)

সাথে সাথেই অশ্রুসিক্ত নয়নে হাসি ফিটে উঠলো আম্মির। আজ এত খুশি লাগছে আম্মিকে! যা আগে কখনো দেখা যায়নি। উনি হাসিমুখে বললেন,

‘রুমে গিয়ে তারাতারি ফ্রেস হয়ে আয় বাবু। কাল থেকে তোর জন্য কত কি রান্না করেছি। রশ্নি একটু বাবুকে রুমে নিয়ে যা তো ‘ (আম্মি)

শেষ পর্যন্ত যা হওয়ার তা হয়েই গেলো। আমাকেই উনার সাথে রুমে যেতে হলো। সব থেকে আশ্চর্যের বিষয়, আমার রুমের পাশেই উনার রুম।

প্রহর ভিলার মুল ফটকের সামনে প্রেম তাঁর সুজুকি জিক্সারে বসে আনমোনে সিগারেট টেনে চলছে৷ রাত এখন দশটা আঠারো৷ মাথার উপরে ল্যাম্পপোস্ট স্থিরচিত্তে আলো দিয়ে যাচ্ছে। দূরে কোথায় অস্পষ্ট নিয়নবাতি প্রজ্বলিত। প্রেম তার হাতে রাখা সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়ে আকাশে ধোঁয়া উড়িয়ে দিলো৷ প্রেমের হঠাৎ সারাকে ভীষণ মনে পড়ছে। মেয়েটা দুদিন ধরে ফোন করছে না। বিষয়টা অদ্ভুত ঠেকলো প্রেমের কাছে। যে মেয়ে প্রতিদিন পাঁচ বারের উপর খোঁজ নিতো। সে দুদিন ধরে লাপাত্তা। ওর সাথে কি খুব খারাপ ব্যাবহার করলাম? ঠিক তখনই প্রেম লক্ষ্য করলো দূর থেকে কোনো মেয়ে দৌঁড়ে আসছে তাঁর দিকে৷ শরীরে বিয়ের সাজ। আরেকটু কাছে আসতেই সবটা পরিষ্কার হয়ে গেলো প্রেমের কাছে। এটাতো সারা! হঠাৎ লক্ষ্য করলো ওর পিছনে কিছু ছেলে ধাওয়া করছে। সারা নিজের শেষ শক্তিটুকু দিয়ে দৌড়ে প্রেমের কাছে চলে আসলো। শেষ পর্যন্ত নিজেকে স্থির করতে না পেরে প্রেমের বুকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো সে।

‘প্রেমমম’ খুব উচ্চস্বরে ডাকটা দিয়েই নেতিয়ে পরলো সারা।

এদিকে দ্রুত দৌড়ে আসায় তাল না সামলাতে পেরে বাইক থেকে সোজা মাটিতে পরে গেলো দুজন। প্রেমের উপর সারা পরে গেছে। সাথে সাথেই জ্ঞান হারালো সারা। প্রেম বুঝে উঠতে পারলো কি করবে এই পরিস্থিতিতে! বাইরে কিছু একটা শব্দ হওয়ায় দারোয়ান ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসলো।
প্রেমকে এই অবস্থায় দেখে দৌড়ে আসলো তার কাছে। ইতোমধ্যে ছেলেগুলোও সেখানে উপস্থিত৷ ছয় সাতটা ছেলে পিছু নিয়েছিলো৷ ভাগ্যিস ঠিক সময়ে এখানে এসেছে সারা৷ নাহলে যে কি হতো! ছেলেগুলো প্রেমকে দেখার সাথে সাথেই খানিকটা ভরকে গেলো। সবকটা ছেলেই প্রেমকে ভালো করে চিনে৷ এখন সামনে তাঁদের কপালে কি আসতে চলেছে সেটাও বুঝে গেছে তারা। প্রেম সারাকে পাঁচ কোল করে উঠিয়ে ছেলেগুলোর দিকে বিষ্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকালো। এমন ভয়ংকর চোখ দেখেই সব ছেলে গায়েব। ইতোমধ্যে রহিম চাচা বাসায় খবর দিয়ে দিয়েছে বাইরে ঝামেলা হইছে৷ খবরটা যখন আমার কানে আসলো। আমি তাৎক্ষণিক দৌড়ে সেখানে চলে আসলাম৷ সারাকে প্রেমের কোলে দেখে খানিকটা অবাক হয়েই বললাম,

‘কি হয়েছে ওর? তোর কোলে সারা আপু কিভাবে? ‘ (আমি)

আমার থেকে প্রেমভাইয়া চার বছরের বড় হলেও তুই বলেই সম্মোধন করি৷ এতে ও কিছু মনে করে না। ছোট থেকে অভ্যাস হয়ে গেছে তাই। প্রেম কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘পরে সব বলবো। আগে ওকে রুমে নিয়ে যাই ‘ (প্রেম)

অতঃপর প্রেম, সারা আপুকে কোলে নিয়েই আমার রুমে নিয়ে আসলো। এক এক করে সবাই উপস্থিত হলো সেখানে। সবার মনেই এক প্রশ্ন চলছে? সারা কিভাবে এলো এখানে? তাও আবার বিয়ের সাজ। কিন্তু প্রহরভাইকে কোথাও দেখলাম না। উনাকে সেই সকালে দেখেছি, আর দেখিনি। যদিও আমার সামনে না আসায় বেশ ভালোই আছি বাবা! এই চারটা বছর বেশ শান্তিতে ছিলাম। এখন আবার অত্যাচার শুরু হবে কি না কে জানে? প্রেম ফোন করে বাসার পার্সোনাল ডক্টর ডাকলো। একটু পর আমাদের প্রাথমিক চিকিৎসায় জ্ঞান ফিরলো সারার৷ সাথে সাথেই প্রেম উৎকন্ঠিত হয়ে বললো,

‘ বিয়ে থেকে পালিয়ে এসেছো কিভাবে সারা? কমন সেন্স নেই তোমার? যদি আজ আমি গেটের ওখানে না থাকতাম তাহলে তোমার কি অবস্থা হতো? ‘

কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিলো প্রেম। সারা আপু ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে শুধু প্রেমের দিকেই তাকিয়ে আছে। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। আম্মি বললেন,

‘আস্তে প্রেম। মেয়েটার সবে জ্ঞান ফিরলো। একটু শান্ত হতে দাও। সব পরে দেখা যাবে ‘ (আম্মি)

‘তোমরা সবাই আপাতত রুম থেকে বেড়িয়ে যাও তো। আমি আর ঐশী আছি এখানে ‘ (আমি)

সবাই কোনো কথা বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। যখন প্রেম উঠতে ধরলো, তখনই ওর হাতটা ধরে ফেললো সারা আপু। আমি আর ঐশী থমমত খেয়ে গেলাম। সারা আপু বললো,

‘তুমি একটু থাকো প্রেম’ (সারা)

আপুর কথা শুনেই বুঝলাম খুব দূর্বল উনার শরীর। আমি আর ঐশী উঠে দাঁড়ালাম। ঐশী বললো,

‘রেগে যেওনা ভাইয়া। এমনি পাশে থাকো একটু৷ আমরা বাইরে আছি ‘ (ঐশী)

আমরা চলে আসলাম বাইরে। সারা এখনো প্রেমের হাত ছাঁড়েনি৷ প্রেম না চাইতেও সেখানে বসে পড়লো। সারা কিছুক্ষণ নীরব থেকে বললো,

‘আমি বিয়ে থেকে পালিয়ে এসেছি প্রেম। তুমি ভালো করেই জানো, আমার এই বিয়েটা করা সম্ভব নয়৷ হয় তুমি আমাকে এখন বিয়ে করবে। নাহলে আমাকে নিজের হাতে খু-ন করবে৷ ‘ (সারা)

প্রেম তার কন্ঠ স্বাভাবিক রেখেই বললো,

‘ আমার লাইফে কখনো কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড জায়গা পায়নি৷ জায়গাটা শুধু তোমার জন্যই শুধু বরাদ্দ ছিলো। পাগলামো অফ করো এবার সারা। বিয়ে থেকে পালিয়ে খুব খারাপ করলে কিন্তু। ‘ (প্রেম)

আর কোনো কথা বললো না প্রেম। সারা’র হাতটা ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো। ড্রইংরুমে প্রহরভাই আর বাড়ির সবাই বসে আছে। প্রেমকে দেখেই প্রহরভাই বললেন,

‘ তুই কালকে সারাকে বিয়ে করবি। ‘ (প্রহর)

কথাটা শুনেই প্রেম অবাক হয়ে গেলো। সাথে সাথে অবাক হলো বাড়ির প্রতিটা সদস্য। প্রেমের চার বছরের বড় প্রহরভাই৷ কিন্তু দুজন সবসময় সমবয়সীদের মতো চলাচল করতো। প্রেমতো প্রহরভাইয়ের সব হুকুম অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। প্রেম বিষ্ময় কন্ঠে বললো,

‘ কিন্তু ভা…’ অসস্থি নিয়ে কথাটা বললো প্রেম। কিন্তু শেষ করতে পারলো না৷

প্রহরভাই বললেন,

‘ আমার সবকথা তুই শুনে চলিস। আশা করি এই কথাটাও রাখবি৷ শুনলাম তোর সাথে নাকি সারার ভাইয়ের খারাপ সম্পর্ক। সে আমি দেখে নেবো ‘ (প্রহর)

প্রেম আর কথা বললো না। বিয়েটাও বোধহয় সে করতে পারবে না৷ আর এই ছন্নছাড়া জীবনে অন্যকাউকে যুক্ত করা সম্ভব নয়৷ এখনো তো তাঁর প্রহরভাই বিয়ে করেনি সেখানে তাঁর ছোট হয়ে প্রেম কিভাবে করবে? সদ্য অনার্স ২য় বর্ষে সে। প্রেম এতোকিছু না ভেবে কালকের রেডিওর প্রোগ্রামের ভাবনায় মন দিলো।

—–

রাত এগারোটার দিকে সারা আপুকে ঔষধ খাইয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ালাম একটু। যে গরম পরেছে! বাইরের হাওয়া খেয়ে আসা যাবে৷ কিন্তু ছাদে উঠার পর ভাগ্যটা আমার সহায় হলো না৷ ছাদের অন্ধকারে কারো ছায়া দেখে বুকটা ধক করে উঠলো৷ এটা তো নিশ্চিই প্রহরভাই। ছায়া দেখলেও যে কউ চিনে ফেলবে। আমি ওনার সাথে কথা বলতে চাই না তাই ছাদ থেকে থেকে নেমে আসবো, এমন সময় প্রহরভাই তার গম্ভীর কন্ঠে আদেশবাণী ছুঁড়ে দিলেন,

‘ এদিকে আয় রশ্নি। তোর সাথে কথা আছে। এক পা’ও আর এগোবি না ‘ (প্রহর)

আমি পারলে পাতালে লুকিয়ে পরি। কিন্তু এখন তো লুকানোর কোনো পথ নেই। আমি শান্ত মেয়ের মতো ওনার সামনে গেলাম। উনি কন্ঠে দৃঢ়তা এনে বললেন,

‘ সকালে এসেছি! একবারো বলেছিস কেমন আছি? খুব বড় হয়ে গেছিস দেখলাম। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম সব থেকে ব্লক করে কি বুঝাতে চাস? আমি তোর সম্পর্কে কোনো খোঁজ রাখিনা? বোঁকার স্বর্গ থেকে বেড়িয়ে আয়।’ (প্রহর)

প্রহর ভাইয়ের কথায় কলিজার পানিটুকু শেষ হবার জোগাড়। আমি যে উনাকে সব থেকে ব্লক করে এতোদিন নিশ্চিন্তে ছিলাম! উনি কি সব খোঁজ রেখেছেন নাকি মাবুদ! আমি তাহলে শেষ। আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জবাব দিলাম,

‘ কই না’তো ভাইয়া ‘ (আমি)

‘মাহিম তোরে ডিস্টার্ব করে তা জানাসনি কেন? ‘ (প্রহর)

উনার কথায় আবারো অকুল পাথারে পরে গেলাম। কথা এড়িয়ে যেতে বললাম,

‘প্রেম বললো ও যে রেডিওতে জব করে ওখানে নাকি আপনাকে ইনভাইট জানিয়েছে। কাল সকালে কি গান গাইবেন? ‘ (আমি)

উনি বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। উনার দুইহাত দিয়ে আমার হাতের বাহুদুটি একপ্রকার রাগ নিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে বললেন,

‘আমার কথার উত্তর দে ননসেন্স। নাহলে কিন্তু ছাদ থেকে সোজা নিচে ফেলে দিবো ‘ (প্রহর)
#শুধু_তুই
—(সিজন ২)
#পর্বঃ০২
#Rifat_Amin

‘হ্যাল্লো ঢাকাবাসী। সব্বাইকে জানাই ফাল্গুনের শুভেচ্ছা। ওয়েলকাম টু রেডিও আড্ডা ৯৯.২ এফ এম এন্ড দ্য প্রেম শো “গুড মর্নিং”। আপনাদের সাথে আছি আমি আর জে প্রেম এন্ড……… । সেটাতো এখন বলা যাবে না। আমার সাথে এমন একজন মানুষ আছে। যাকে চেনে না এমন কোনো গানপ্রেমিক মানুষ খু্ঁজে পাওয়া যাবে না। তাঁর কথা গতকালকে বলেই দিয়েছি। এবং আপনারা হয়তো সেই মানুষটার ভয়েসের জন্য এ-ব-ং একটা কিউএনএ আড্ডার জন্য এ-ব-ং একটা মিষ্টি স্বরের গান শোনার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন৷ আর এখন সময় সকাল ৭ টা। সুর্যমামা উঠতে অলসতা করলেও ঢাকাবাসী তাদের মিষ্টি ঘুম ছিন্ন করে উঠতে কিন্তু একটুও কার্পণ্য করেনি। আর এখন যারা আমাকে শুনছেন, এবং শুনছেন রেডিও আড্ডা ৯৯.২ এফ এম। তাঁদেরকে প্রেম প্রহরের পক্ষ্য থেকে প্রাণঢালা ভালোবাসা। সো এবার পরিচয় করিয়ে দেই সেই মানুষটার সাথে। আমার সাথে আছে ওয়ান এন্ড ওনলি দ্য রকস্টার প্রহর খান। নাউ ইউ ক্যান ক্যারি অন মি. রকস্টার। ‘

এতক্ষণ রেডিওতে ইনট্রো দিচ্ছিলো প্রেম। আর আজ প্রহর তার সাথে এসেছে রেডিওয়ে। যদিও এর আগে রকস্টার প্রহর খান কখনো কোনো রেডিওতে সাক্ষাৎ করেনি। এখানেও করতো না, যদি’না প্রেম আর রেডিও অথরিটি এত জোড়াজুড়ি না করতো। গতকাল দেশে এসেই আজ রেডিওতে। এত ধকল একমাত্র প্রহর ছাড়া কারো পক্ষে নেয়া সম্ভব না। প্রহর কানে হেডফোন গুজে কফির কাপে একটা চুমুক দিয়ে বললো,

‘ আসসালামু আলাইকুম ঢাকাবাসী। আমি প্রহর খান। আপনাদের রেডিও হোস্ট প্রেম কিন্তু একটু বেশী বেশী’ই বলেছে। আমি মোটেও তেমন সেলিব্রিটি না। হা-হা-হা। যাই হোক, সবাইকে আমার পক্ষ্য থেকে শুভ সকাল। যে যেখানে আছেন, যেখান থেকে আমাদের শুনছেন। সবাইকে আবারো ফাল্গুনীর শুভেচ্ছা। ‘

কথাটা বলেই প্রহর প্রেমের দিকে চাইলো। প্রেম এবার বললো,

‘ তো পেয়ে গেলেন সেই রকস্টারের পরিচয়। এতদিন আমায় জ্বালিয়ে মারছিলেন যে কবে আপনাদের হিরো এন্ড ক্রাশ প্রহর আসবে। এত এত মেসেজ আর কমেন্টে আমার মতো সুন্দর একটা ছেলেকে সবাই ভুলেই গিয়েছিলেন একেবারে। আজ থেকে আমি মুক্ত। যাই হোক, আপনারা যারা রকস্টারকে কোনো প্রশ্ন করতে চান। তারা খুব তারাতারি আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে যুক্ত হয়ে যান এবং ইমিডিয়েটলি কমেন্টে আপনাদের মনের না জানা প্রশ্নগুলো ব্যক্ত করুন। সো ইতো মধ্যে মাহিরা আনম মাইশা বলেছেন,
‘ কেমন আছেন ভাইয়া? আমি আপনার একজন বিগ ফ্যান। আপনার গান আমি প্রতিদিন শুনি, ইভেন আমার ফেসবুক কভার, আমার রুমেও আপনার ছবি। আমার একটা প্রশ্ন ছিলো ভাইয়া, সেটা হলো আরজে প্রেমের সাথে আপনার সম্পর্কে কি? ‘
প্রহর মুচকি হেসে মাইক্রোফোনটা ঠিক করে বললো,

‘শুরুতেই জানাই শুভ সকাল। আপনি, আমার করা গানগুলো পছন্দ করেন এটা সত্যি আমার জন্য বড় পাওয়া। আমার অনেক ভালো লাগছে এখানে এসে এবং আপনাদের মতো সুন্দর মনের মানুষের সাথে আড্ডা দিতে। প্রেম আবার ফুফাতো ভাই। এর থেকেও বড় সম্পর্ক আমরা দুজন বন্ধু। বয়সে ছোট হলে হবে কি? হি ইজ টু মাচ জিনিয়াস এন্ড গুড কম্পানি ফরএভার’

প্রেম হেসে বললো,

‘ পাম দিও না ভাইয়া। এর পরের প্রশ্ন করেছে আরশী জাহান সারা। ‘

নামটা দেখেই থমকে গেলো প্রেম। ইতস্তত করে প্রশ্নটা উচ্চারণ করলো,
‘ আমি শুধু আপনাকে ভালোবাসি আরজে। আপনি আমায় বিয়ে করবেন?’

সারার এই পাগলামো’তে বিরক্ত হলো প্রেম। কিন্তু প্রকাশ করলো না৷ প্রহর হাসতে হাসতে বললো,

‘বিয়ে করে নে প্রেম। এই সুযোগ সীমিত সময়ের জন্য। ‘ (প্রহর)

প্রেম এড়িয়ে গেলো প্রশ্নটা। অতঃপর বললো,

‘ সো গাইষ। ইটস টাইম টু ব্রেক নাউ। যদিও ইতোমধ্যে অনেক প্রশ্ন জমা পরে গেছে। ফিরে এসে আবারো থাকছে আরজে প্রেম এন্ড দ্য রকস্টার প্রহর খান। ‘ (প্রেম)

—-

এত সকাল সকাল উঠে প্রেমের শো শোনার একদম ইচ্ছে নেই আমার। একমাত্র ঐ প্রহর নামক মানুষটার জন্য আজ শো’তে কোনো ইন্টারেস্ট নাই। নাহলে প্রেমের শো আমি একদিনও মিস করি না। কিন্তু আমার পাশে শুয়ে আছে সারা আপু। সে নিশ্চিন্ত মনে কানে হেডফোন গুঁজে শো শুনছে। যখন ব্রেকটাইম হলো তখন সারা আপু হালকা বিরক্তি প্রকাশ করে বললো,

‘ এই রেডিওটা’তে এত বিজ্ঞাপন কেনো রশ্নি? অসহ্য লাগে আমার। ‘ (সারা)

আমি চোখ বন্ধ করে ছিলাম। সারা আপুর কন্ঠে ধ্যান ভাঙ্গলো। আমি মুচকি হেসে বললাম,

‘প্রেমের জন্যই এখন রেডিওটা ভীষণ ফেবারিট সবার। আর যখনি রেডিওটা সবার পছন্দের তালিকায় পরে গেলো। তখনি শুরু হলো বিজ্ঞাপনের মেলা। আমারো ভালো লাগে না বিষয়টা ‘ (আমি)

সারা আপু ভীষণ সহজসরল। উচ্চবিত্তদের সহজসরল হতে নেই। কিন্তু সারা আপু ভীষণ আলাদা। আমার কথায় উনি যথেষ্ট আহ-ত হলেন। মন খারাপ করে বললেন,

‘ আচ্ছা রশ্নি। তোমার ভাইয়া আমাকে বিয়ে করে না কেনো?, আমার মাঝে কিসের কমতি বলো তো? আমি কি দেখতে খারাপ? নাকি আমাদের টাকা পয়সা নেই’ (সারা)

আপুর কথা শুনতে শুনতে আমি অগোছালো চুলগুলো হাত দিয়ে গুটিয়ে বালিশের পিছনে ছড়িয়ে দিয়ে ঝটপট বললাম,

‘ না না আপু। এভাবে বলছো কেনো তুমি? দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার ভাইটা অনেক ভালো। কিন্তু ও কেমন জানি অগোছালো। একদিন ও তোমার শুন্যতা উপলব্ধি করতে পারবে। সেদিন নিজে থেকে ভাইয়া তোমায় বিয়ে করতে চাইবে। আর জানোই তো প্রেমের তেমন ভালো কোনো জব নাই। আমাদের তো বাবা-মা’ও নেই যে সবকিছুর সিদ্ধান্ত নিবে৷ ‘ (আমি)

আমার কথায় সারা আপু খানিকটা মনক্ষুণ হলেন। কেঁদে দিবেন এমন অবস্থা। বুঝলাম আপুর সামনে এই কথাটা বলা উচিৎ হয়নি। আপু আবারো বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে বললেন,

‘ আজ হয়তো বাবা, ভাইয়া আমায় নিতে আসবে। ওরা এতক্ষণে নিশ্চই খোঁজ পেয়ে গেছে আমার। এবার এই বাড়ি থেকে একবার চলে গেলে আর ফিরবো কি না জানি না। আচ্ছা তোমার কি অবস্থা বলো? প্রহর ভাইয়া তো দেশে ফিরলো। এবার কি তোমায় বিয়ে করবেন? ‘ (সারা)

সারা আপুর কথায় আশ্চর্য হয়ে গেলাম আমি। বিষ্ময়ে চোখদুটো বেড়িয়ে যাওয়ার জোগার। আমি নিজেকে খানিকটা ধাতস্থ করে বললাম,

‘ তুমি যা ভাবছো তা একদম সত্যি না আপু। উনার সাথে আমার সম্পর্ক তো দুরের কথা। একদম খারাপ থেকে খারাপ’তর সম্পর্কও আমাদের। ‘ (আমি)

সারা আপু ভীষণ হতাশ হলেন। হাল ছেড়ে না দিয়ে বললেন,

‘ আমি তো তোমার নিজের বোনের মতো’ই রশ্নি। আমায় সব বলতে পারো। ‘ (সারা)

এবার আপুর থেকে আমি নিজেই বেশী হতাশ হলাম। চোখ বন্ধ করে বললাম,

‘ শো আবার শুরু হয়ে গেছে আপু। হেডফোন’টা কানে গুঁজে নাও। ‘ (আমি)

সাথে সাথেই যেনো ধ্যান কাটলো সারা আপুর। ঝটপট কানে হেডফোনটা গুঁজে একটা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আমি মনে মনে ভাবলাম, অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। সেটা হোক কঠোর হওয়া কিংবা সহজসরল হওয়া। তাহলে সারা আপুর মতোই কষ্ট পেতে হবে সারাজীবন।
যখন সকাল ৮ টা পার হলো তখন বিছানা ছেড়ে প্রাইভেটে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। আজ যেতে একদম ইচ্ছে করছো না। কিন্তু যেতে হবেই৷ নাহলে সামনের প্রি-টেস্ট এক্সামে ডাহা ফেল। ফ্রেস হয়ে নিচে নেমে দেখলাম ঐশীও রেডি হয়ে গেছে। নাস্তার টেবিলে বসে আম্মির দিকে একবার তাকিয়ে বললাম,

‘ শুভ সকাল আম্মি। ‘ (আমি)

আম্মি মুড অফ করে বললেন,

‘ আর গুড মর্নিং। প্রেমের এই গুড মর্নিং শো’র কারণে বাবু সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে চলে গেলো ওর সাথে। কালকেই আসলো ছেলেটা। আর আজকেই নাকি যেতে হবে। আজকে দুই শয়’তান বাড়ি আসুক! তারপর দেখাবো মজা। ‘ (আম্মি)

আম্মির কথায় প্রচন্ড হাসি পেলেও বাইরে হাসিটা প্রকাশ করতে পারলাম না। কিন্তু ঐশী নিজেকে আর আটকাতে পারলো না। দাঁত কেলিয়ে হাসা শুরু করলো। আম্মি রেগে ফায়ার হয়ে গেলেন।

‘ আরো দাঁত কেলা। এই দাঁত কেলিয়েই সামনের প্রি-টেস্ট এক্সামে পাশ করিস। ‘ (আম্মি)

সাথে সাথেই দুজন করুণ চোখে আম্মির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। পড়াশোনা যে এতদিন হয়নি। হেলায়-ধুলায় সময় নষ্ট করছি৷ এবার কি হবে? আম্মি গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বললো,

‘পড়াশোনার কথা শুনার সাথেই দুজন ভদ্র শয়’তান হয়ে গেলি। তোদের পড়াশোনার অবস্থা তো ভালো করে জানা আছে আমার। এখন বাবু এসেছে। বাবুর কাছে নিয়মিত পড়বি। ‘ (আম্মি)

আমরা আবারো করুণ দৃষ্টিতে দুজন দুজনার দিকে চাওয়াচাওয়ি করলাম। নাহহহ! প্রহরভাইয়ের কাছে একবার যদি পড়ি! তাহলে জীবন তেজপাতা হয়ে যাবে। এক্ষুনি সাবধান হয়ে যা রশ্নি।

—–

প্রেম-প্রহর তাঁদের শো শেষ করে বাইরে তাঁদের গাড়িতে উঠে পড়লো। প্রহর গাড়িতে উঠেই নিজের গাওয়া একটা গান ছেড়ে দিলো। অতঃপর সিটে হেলান দিয়ে গাড়ির স্টিয়ারিংটায় হাত দিয়ে বললো,

‘তোদের রেডিওর এমডিটা সুবিধার নয়। আশা করি তুই মানুষ চিনতে ভুল করিস না। ‘(প্রহর)

প্রেম মুচকি হাসলো। মিনারেল ওয়াটারের বোতলে একটু চুমুক দিয়ে বললো,

‘তোমার শিষ্য বলে কথা। হি-হি-হি। ‘ (প্রেম)

‘ তুই তো ভালো গান করিস প্রেম। তোর প্রতিভা থাকতেও তুই গান করছিস না। অথচ তুই জানিস আমার প্রতিভা-ট্রতিভা কিছুই ছিলো না। কত স্ট্রাগল করে এই যায়গায় আসছি জানিস? আমি বলবো তুই গান শুরু কর। তারপর বাকিটা দেখা যাবে। ‘ (প্রহর)

প্রেম আবারো হাসলো৷ সাথে সাথেই ফর্সা ত্বকে সামান্য গর্তের সৃষ্টি হলো৷ প্রতিটা মেয়ে’ই এই সুদর্শন যুবকের প্রেমে পরতে বাধ্য। প্রেম হাত-পা ছাড়িয়ে দিয়ে সিটে হেলান দিয়ে বললো,

‘ যা সহজে আসবে তা প্রেম করবে কেনো? আমি এখন গান শুরু করলে মহুর্তেই সবার প্রিয় গায়ক হয়ে যাবো। আমার আত্মবিশ্বাস আছে। কিন্তু যদি গান করি তাহলে দেখবা সবাই সমালোচনা করবে।’ বাব্বাহ! বিখ্যাত রকস্টারের ছোটভাই বলে কথা। নিশ্চই ভাইয়ের কারণেই মহুর্তেই ভাইরাল হলো প্রেম। হাহাহা। ‘ সামনের গলিটায় নামিয়ে দাও তো ভাইয়া। ‘ (প্রেম)

প্রহর কিছু বললো না। কিন্তু মনে মনে ঠিক বুঝে গেলো আগের প্রেম আর নেই। মানুষ পরিবর্তনশীল। প্রেম এখন অনেককিছুই বুঝে! বুঝতে হয়। প্রহর একটু সামনে গিয়ে গাড়ি থামিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,

‘ বাসায় তারাতারি ফিরিস। সারার ব্যাপার’টা সমাধান করতে হবে। ‘ (প্রহর)

প্রেম কিছু বললো না৷ সোজা গাড়ি থেকে নেমে গেলো। প্রহর ক্ষনকাল সেই দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালানোয় মন দিলো। প্রেম যদি এসবে যুক্ত না হতে চায় তাহলে বাবার বিজনেসে জয়েন করতে হবে ওকে৷ একটা ফিউচার ভীষন দরকার। এসব ভাবতে ভাবতে গাড়ি চালানোয় মন দিলো প্রহর। বাসা পৌঁছানোর একটু আগে প্রহর হঠাৎ লক্ষ্য করলো রশ্নি একা একা বাসার দিকে হাঁটছে। প্রহর হাতঘড়ির দিকে দৃষ্টি রেখে দেখলো সকাল ১১ টা। এসময় রশ্নি এখানে কেনো? প্রহর একটু গতি বাড়িয়ে দিয়ে ওর সামনে গাড়ি দাঁড় করালো। গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দিয়ে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো প্রহরভাই। মহুর্তেই হকচকিয়ে গেলাম আমি। উনি এসময় এখানে কেনো? আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে উনি বললেন,

‘গাড়িতে উঠে পর। ‘ (প্রহর)

উনার গম্ভীর কন্ঠস্বরে খানিকটা কেঁপে উঠলাম আমি। কোনোমতে মুখে শক্তি জোগাড় করে বললাম,

‘ আপনি চলে যান। আমি যেতে পারবো। ‘ (আমি)

উনি আগের মতোই তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। ধুর! চোখ নামাবেন কখন? উনার চোখের দিকে চোখ পরলেই তো অন্তর-আত্মা কেঁপে উঠে আমার। উনি গাড়ি থেকে নেমে বললেন,

‘আম্মি তোকে টাকা দেয়না? এভাবে রিকশা না নিয়ে যাচ্ছিস কেনো? ‘(প্রহর)

আমি মহাবিপদে পরে গেলাম৷ কি উত্তর দেয়া যায়!

‘জ্বী দেয় তো। হাঁটতে ভালো লাগছে তাই হাঁটতেছিলাম একটু। ‘ (আমি)

উনি চোখে সানগ্লাস পরে বললেন,

‘ কাল সকালে জগিংয়ে বের হবি আমার সাথে। দেখবো কেমন হাঁটিস। এখন গাড়িতে উঠে পর। ‘ (প্রহর)

আমি আর কথা বাড়ালাম না। ভদ্র মেয়ের মতো গাড়িতে উঠে পরলাম। সাথে সাথেই উনার কন্ঠে সেই চিরচেনা গান ভেসে উঠলো,
” সে কি জানে অভিমানে তোকে হাসাতে?
সে’কি পারে বুকে ধরে তোকে ভোলাতে…..”

এ্যাঁ। নিজের গাওয়া গান শুনতেই কি হবে? আর এটা তো নিজের লেখা না উনার। গাড়িতে উঠে উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ নিজের গান শুনছি যাতে ভুল বের করতে পারি৷ নাথিং ইলস। ‘

সারারাস্তায় আমি আর কথা বাড়ালাম না। পাঁচমিনিট পর বাসায় পৌঁছে দেখলাম যা হওয়ার তা হয়েই গেছে। সারা আপুর ভাই এসেছে। তিনি ভালো করেই জানেন, বাসা থেকে সারা পালিয়ে গেছে মানে একমাত্র যাওয়ার যায়গা প্রেমের বাসা। আজ সবার কপলাে শনি আছে মনে হয়।

চলবে?
চলবে?

(

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here