#তুমি_শুধু_আমার
#written_by_ayrin
#last part
নিহান দৌড়ে রুমে গিয়ে কালকে বেবির জন্য নিয়ে আসা গিফ্ট গুলো নিয়ে মেহেরের পেটে রেখে বললো ওয়েলকাম আমার মেয়ের জামাই,
নিহানের কথায় সবাই হেসে দিলো। রিহান বললো তোর মেয়ের জামাই কিভাবে হবে? তুই তো এখনো বিয়েই করিসনি? আর আমার ইচ্ছা আমার একটা প্রিন্সেস আসবে।
নিহান বললো না তোর ছেলে মানে আমার মেয়ের জামাই আসবে। ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে এই নিয়ে দুজনের ঝগড়া লেগে গেলো।
মেহের ওদের ঝগড়া দেখে হাসতে হাসতে শেষ। শেষে দু’জনকেই ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো। আর বললো আল্লাহ যা চায় তাই দিবে। এবার দুজনেই চুপ করে গেলো।
_______________________
মেহেরের প্রেগ্ন্যাসির নয় মাস চলছে। যেদিন থেকে সবাই জানতে পেরেছে মেহের প্রেগন্যান্ট সেদিন থেকেই সবার কেয়ার নামক অত্যাচারে মেহের অতিষ্ঠ। সকাল থেকেই মেহের কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু রিহান বলেছে বেবি আসার আগে পর্যন্ত কোথাও যেতে হবেনা। বেবি আসার পর সবাই একসাথে ঘুরতে যাবে। এই নিয়ে মেহের সকাল থেকে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।
রিহান মেহেরের অভিমান দেখে বাধ্য হয়ে মেহরকে নিয়ে ঘুরতে বের হলো।
এদিকে মেহের আর রিহান বাড়ি থেকে বের হওয়া মাত্রই একজন লোক ফোন করে বললো ম্যাম তারা বাড়ি থেকে বের হয়েছে। কাজটা কি এখন করবো?
ঐপাশ থেকে একজন মেয়ে উত্তর দিলো হুম কাজটা শেষ করে ফেলো। আর সাবধানে করবে কেউ যেনো বুঝতে না পারে। সবাই যেনো এটাকে স্বাভাবিক এক্সিডেন্ট ভাবে।
লোকটা বললো ওকে ম্যাম।আমার লোকেরা ট্রাক নিয়ে ওদের গাড়ির পিছনেই যাচ্ছে। কাজ হয়ে যাবে কেউ সন্দেহ করবেনা।
ফোন রেখেই সিমি একটা অট্টহাসি দিলো। হ্যা সিমিই মেহেরদের উপর নজর রেখেছিলো। তারপর জোরে জোরে বলে রিহান তুই শুধু আমার।আমার নাহলে তুই কারো হবিনা। আমাকে কষ্টে রেখে তুই সুখি হবি সেটা কি করে হতে দেই বলতো, বলে আবার জোরে জোরে হাসতে শুরু করলো৷
সিমি এখনো লন্ডনেই আছে৷ সিমির বাবা মা ভেবেছে রিহানের বেবি হওয়ার পরই সিমিকে বিডিতে আসতে বলবে। আর তার জন্য সিমির হবু বরকে লন্ডনে পাঠিয়েছে, ওদের সম্পর্ক টা যেন স্বাভাবিক হয়। সিমির হবু বরের নাম হলো রাজিব।
রাজিব আজকে সিমির সাথে দেখা করতে তার বাসায় এসেছিলো। রুম লক করা না থাকায় ও ভিতরে চলপ এসেছে৷ সিমিকে খুজতে বেড রুমের দিকে যাচ্ছিলো। কিন্তু বাহিরে দাড়িয়ে থেকেই সিমির সব কথা শুনে বুঝতে পারলো যে সিমি রিহানদের এক্সিডেন্ট করাবে।
রাজিব এখন কি করবে বুঝতে পারছে না। তার কাছে রিহানদের ফেমেলির সবার ফোন নাম্বার ছিলো। সে তাড়াতাড়ি করে রিহানকে কল দিলো। কিন্তু রিহান কল রিসিভ করছেনা৷
রাজিব নিহানকে ফোন করে সবটা জানায়৷ নিহান সবটা শুনে বলে ভাইয়া এখনি বাড়ি থেকে বের হয়েছে আমি জানি ওরা কোথায় গেছে আমি যাচ্ছি।
আপনি একটু মেহেরকে কল দেন।ভাইয়া হয়তো ড্রাইভ করছে তাই রিসিভ করছে না। আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছি । আপনি মেহেরকে ফোনে ট্রাই করেন।
মেহেরের ফোন আসতেই সে রিসিভ করে। মেহেরের হাতেই ফোন ছিলো।
মেহের রিসিভ করে হ্যালো বলতেই। রাজিব বললো তোমরা এখন কোথায় আছো,আমি রাজিব সিমির হবু বর। সিমি তোমাদের এক্সিডেন্ট বলতেই রাজিবের মাথায় কেউ ভাড়ী কিছু দিয়ে আঘাত করলো। রাজিব চিৎকার করে ফ্লোরে পরে গেলো৷
এদিকে মেহের হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে। রিহান মেহেরকে উত্তেজিত হতে দেখে বললো কি হয়েছে?
মেহের বললো রাজিব ভাইয়া কল দিয়েছে। শুধু এতটুকুই বললো সিমি তোমাদের এক্সিডেন্ট আর কিছুই বলেনি।
রিহান বুঝতে পারলো সিমি ওদেরকেই এক্সিডেন্ট করাতে চলছে৷ কারণ ওরা বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকেই দেখছে একটা ট্রাক ওদেরকে ফলো করছে। রিহান মেহেরকে কিছু বললো না। মেহের ভয় পাবে তাই।
রিহান গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিলো। রিহানকে স্পিড বাড়াতে দেখে সিমির লোকেরাও ওদের গাড়ি স্পিড বাড়িয়ে দিয়েছে। রিহান পাশেই একটা পার্ক দেখে সেখানে গাড়ি থামালো৷ মেহেরকে তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে সাইডে দাড়াতে বললো। মেহের রিহানকে গম্ভীর দেখে কিছু না বলেই নেমে গেলো।
মেহের সাইডে যেতেই বিকট শব্দে পেছনে তাকালো৷পিছনে তাকিয়ে দেখলো ওদের গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে আর উল্টে গিয়েছে । মেহের সেটা দেখেই জোরে রিহান বলে চিৎকার করে সেন্সলেস হয়ে মাটিতে পরে গেলো।
______________________
পাচ বছর পর,,
মেহের আর তার পাচ বছর বয়সী ছেলেকে রেডি করছে আর বলছে বিয়েতে কিন্তু কারো সাথে দুষ্টুমি করবেনা। মিহান বললো মাম্মাম কার বিয়েতে যাবো আমরা৷
তখন পিছন থেকে রিহান বললো এটা তোমার রাজিব আঙ্কেলের বিয়ে। মিহান বললো ঐ যে রাইসা আন্টির সাথে যার বিয়ে হবে ঐ আঙ্কেলটার বিয়ে।
রিহান বললো হুম। মিহান বললো ইয়ে রাজিব আঙ্কেলের সাথে রাইসা আন্টির বিয়ে হচ্ছে কি মজা।
পাচ বছর আগে,
রাজিব যখন মেহের কে তাদেরকে সিমির প্লেন সম্পর্কে বলতে চেয়েছিলো তখন সিমি এসে রাজিবের মাথায় আঘাত করে। আর বলে আমার প্লেন সম্পর্কে সবাইকে জানিয়ে দিতে চাচ্ছিস। এবার তুই নিজেই মর। কয়টা দিন ধরে আমার পিছনে পরে আছিস।রাজিব কোন কথা না বলায় সিমি ভেবেছিলো রাজিব মারা গেছে। তাই সে ভয় পেয়ে ঐ বাসা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলো৷
রাজিবের তখবও সেন্সছিলো তাই সে তার এক বন্ধুকে ফোন করে। কোন রকমে সেদিন বেচে গিয়েছিলো রাজিব।সিমিকেই তার দুদিন পর পুলিস এরেস্ট করে ফেলে৷ রাজিবের বন্ধু কেস করেছিলো।
আর রিহান সেদিন গাড়ি থেকে বের হওয়ার পরই ট্রাক এসে ওদের গাড়ি ধাক্কা দিয়েছিলো। মেহের আগেই ভয়ে সেন্স হারিয়ে মাটিতে পরে যায়। আর পরে যাওয়ার কারণে পেটে আঘাত পায়। আর তখনই নিহান সেখানে আসে। তারপর তারা দুজনেই মেহেরকে হসপিটাল নিয়ে যায়। ডক্টর বলেছিলো আজকেই ডেলিভারি করতে হবে।তা নাহলে মেহের আর বাচ্চা দুজনেরই প্রানের ঝুঁকি আছে। রিহান সেদিন চিৎকার করে কান্না করেছিলো। সেদিনই সিজারের মাধ্যমে মিহান পৃথিবীতে আসে৷ আর মেহেরও আউট অফ ডেঞ্জার।
__________________
রাজিব সিমিকে ভালোবেসে ফেলেছিলো। তাই আর অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাইনি। কিন্তু বিডিতে আসার পর মেহেরের ফ্রেন্ড রাইসা রাজিবকে ভালোবেসে ফেলে। অবশেষে দীর্ঘ চার বছরের রাইসার চেষ্টায় কিছুদিন আগে রাজিব রাইসাকে তার ভালোবাসার কথা জানায়। তাই আর তাদের বাবা মা দেরী না করে বিয়ের আয়োজন করে ফেলে।
এই চার বছরে অনেক কিছুই পাল্টে গিয়েছে। নিহান বিয়ে করেছে৷ তাদের ঘর আলো করে মেহেরের ছেলের বউ এসেছে৷ যেদিন নিহানের মেয়ে হয় সেদিন নিহান সবাইকে ডেকে বলেছিলো” আমার ভাইয়ার ছেলের বউ চলে এসেছে ” এবার ওদের বিয়ে দিয়ে আমার এত বছরের মনের আশা পূরণ করবো।
মিহান সেদিন আদো আদো গলায় বলেছিল শুশু বাবা আমি তোমাল মেয়েকে বিয়ে কলবোনা।
( নিহান মিহানকে শশুর বাবা ডাকতে বলতো, মিহান শশুর বাবা বলতে পারতোনা তাই সে শুশু বাবা বলতো)
নিহান সেদিন প্রথম মিহানকে ধমক দিয়ে বলেছিলো আমার মেয়েকেই তোর বিয়ে করতে হবে নাহয় তোকে নিশি ভুতের কাছে দিয়ে আসবো। মিহান সেদিন থেকে ভুতের ভয়ে নিহানের মেয়ে নেহাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলো। এখন নেহা কে সে বউবোন ডাকে৷ নিহান হাজার চেষ্টা করেও মিহানকে বোন ডাকা থেকে থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
নিহানের এসব কাজ দেখে বাড়ির সবাই হাসে। আর নেহা মাত্র কথা বলা শিখছে, এখন থেকেই নিহান নেহাকে মিহানকে জামাই বলে ডাকতে শিখচ্ছে।
এসব ভাবছিলো মেহের তখন রিহান মেহেরকে ধাক্কা দিয়ে বলে কি ভাবছো তখন থেকে। সবাই রেডি বিয়েতে যাওয়ার জন্য যাবেনা। তাড়াতাড়ি চলো,
মেহের পিছন থেকে রিহান কে বলে ভালোবাসি তোমাকে মিহানের বাবা। রিহান অবাক হয়ে মেহেরের দিকে তাকিয়ে থাকলো। কারণ এত বছরে মেহের কোনদিন তাকে ভালোবাসি বলেনি। পরমুহুর্তেই সে খুশি মেহেরকে জরিয়ে ধরে বললো তুমি সত্যি আমাকে ভালোবাসি বলেছো। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।
মেহের বললো বিশ্বাস নাহলে বিশ্বাস করতে হবেনা। চলুন দেরী হয়ে যাচ্ছে।
রিহান বললো আরেক বার বলোনা প্লিজ। মেহের রিহানের কথায় বললো ভালোবাসি তোমাকে এবার শুনেছো।
রিহান বললো হুম আমিও তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি জান। আর তুমি শুধু আমার বুঝেছো মিহানের মাম্মা।
সমাপ্ত
(