#জলপদ্ম
#কুরআতুল_আয়েন
|২৩|
সেলিনা আহমেদ বাহারী রকমের খাবার সাজাচ্ছেন মাঝারী সাইজের কাঁচের ডাইনিং টেবিল টায়।ফল,ফ্রুটস এর সমাহার।পাশের দুটো চেয়ারে সাদিক আহমেদ আর মাজহারুল বসে আছে।কাল রাতে সাদিক আহমেদ মাজহারুল কে একপ্রকার জোর-জবরদস্তি করে রেখে দিয়েছেন।মাজহারুল প্রথমে না করলেও পরে ঠিকই রাজি হয়ে গিয়েছে।অত্যন্ত রিমঝিমকে তো দেখতে পারবে।রিমঝিমের প্রতি দূর্বলতা যেনো দিনদিন বেড়েই চলেছে।শুধুমাত্র সাহস করে কিছু বলতে পারে না।ভয় হয়,যদি রিমঝিম তাকে ভুল বুঝে নিজেকে লুকিয়ে নেয় তাহলে তো রিমঝিমকে চোখের দেখাটাও দেখতে পাবে না।তার থেকে এভাবেই ভালো।রিমঝিমকে দেখে চোখের স্বাদ তো মিটাতে পারছে।সেলিনা আহমেদ গ্লাসে জুস ঢেলে মাজহারুল আর সাদিক আহমেদের সামনে দিয়ে দৌড়ে চলে গেলেন রান্নাঘরে।ওভেনে ইলিশ পোলাও গরম করতে দিয়ে এসেছেন।রিমঝিমের খুব প্রিয়।কাল রাতে খায় নি।তাই,সেলিনা আহমেদ সকালের জন্য গরম করে রেখেছেন।রিমঝিম আসলেই খেতে দিয়ে দিবে।ইলিশ পোলাও টা একটা প্লেটে সাজিয়ে রেখে শসা কাটতে লাগলেন।এখানে শসা গুলো অনেক বড় বড়।খেতে তেমন একটা স্বাদ নেই।কোনোমতে চালিয়ে দেওয়া যায়।শসা টা কেটেই মাংসের জন্য মশলা ব্লেন্ডার করবেন।মাজহারুল কে দুপুরে না খাইয়ে ছাড়বেন না।রিমঝিম ঘুম ঘুম চোখে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলো।রাতের নাইট ড্রেসের উপর শুধু বড় একটা কোট পড়ে চলে এসেছে।রিমঝিমকে নামতে দেখে মাজহারুল ঠিক করে বসলো।আলতো হাতে চুল গুলো কে পিছনে ঠেলে দিলো।তবে,রিমঝিম এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো।কাল রাতে অতিরিক্ত কান্নার ফলে মাথাটা ধরে আছে।আগের ফর্মে আনার জন্য হলেও এখন তার কড়া লিকার দিয়ে একটা কফি খেতে হবে।সেলিনা আহমেদ রান্নাঘরে রিমঝিম কে দেখে বললেন,কিছু লাগবে কিনা!রিমঝিম আলতো কণ্ঠে বলে উঠলো,
‘কফি খেতে এসেছি।মাথা ধরেছে।’
সেলিনা আহমেদ ইলিশ পোলাওয়ের প্লেট টা রিমঝিমের সামনে দিয়ে বললেন,
‘আগে এই ইলিশ পোলাও টা খেয়ে নে।তারপর না হয় কফি খেয়ে নিবি।’
রিমঝিম না করতে গিয়েও পারলো না।সেলিনা আহমেদের হাত থেকে প্লেট টা নিয়ে কয়েক চামচ খেলো।কফি বানিয়ে নিয়ে রান্নাঘর থেকে চলে আসলো।ডাইনিং টেবিল ক্রস করে আসতেই সাদিক আহমেদ রিমঝিমকে ডেকে বললেন,
‘এদিকে এসো রিমঝিম।আমাদের সাথে ব্রেকফাস্ট করো।’
‘বাবা!আমি ইলিশ পোলাও খেয়েছি।পেট ভরে আছে।’
‘একটা ব্রেড খাওয়ার তো জায়গা আছে পেটে তাই নাকি।চলে এসো।আমি ব্রেডে মাখন লাগিয়ে দিচ্ছি।’
অগ্যাতা রিমঝিম ডাইনিং টেবিলে চেয়ার টেনে বসে পড়লো।মাজহারুল একটা ব্রেডে মাখন লাগিয়ে হাতে তোলে নিলো।রিমঝিমকে আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখছে।রিমঝিম নিজের মতো বসে আছে।মাজহারুল ব্রেডে কাঁমড় বসিয়েই বিপদে পড়ে গেলো।ব্রেডে কাঁমড় দিতে গিয়ে ভুলবশত জিহবায় পড়ে গিয়েছে।সাথেসাথেই মাজহারুল আহহ্ বলে চিল্লিয়ে উঠলো।মাজহারুলের হঠাৎ চিল্লানোতে সাদিক আহমেদ আর রিমঝিম দু’জনেই চমকে উঠলো।সাদিক আহমেদ হাতে থাকা মাখনযুক্ত ব্রেড টা রিমঝিমের হাতে দিয়ে বললেন,
‘মাজহারুল!দেখেশুনে খাবে তো।তাড়াতাড়ি করার কিছুই নেই।আজকে,অফিসে যেতে হবে না।আজকে তোমাকে ছুটি দিয়ে দিয়েছি।’
মাজহারুল জোরপূর্বক হাসলো।গালে হাতে দিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো,রিমঝিমকে দেখে দেখে খাওয়ার ফল এবার বুঝ।এখন তো কয়েকদিন ভালো করে খেতেও পারবি না।
রিমঝিম মাজহারুলের দিকে একবার তাকালো।মাজহারুলের বিরবির তার চোখ এঁড়ায় নি।রিমঝিমকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাজহারুল কিছুটা লজ্জা পেলো।রিমঝিম সেদিকে পাত্তা দিলো না।পানি খেয়ে উঠে পড়লো।এতো কিছুর মাঝে তার কফিটাই ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।এই ঠান্ডা কফি নিয়েই রুমের দিকে পা বাড়ালো।মাজহারুল উপলব্ধি করলো লজ্জায় তার নাক ঘামছে।চোখ গুলোকে টেরা করে দেখে নিলো নাকের উপরে আসলেই বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে।তাড়াহুড়ো করে একটা টিসু নিয়ে নাকে চেপে ধরলো।খুব অস্বস্তি হচ্ছে তার।
—
তীব্র মাথা ব্যথার ফলে রক্তিম চোখ মুখ খিঁচিয়ে নিয়েছে।দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিচ্ছে কোনোরকম।সাইড বক্স থেকে একটা পেইন কিলার খেয়ে নিয়ে বিছানায় মাথাটা এলিয়ে দিলো।কিছুক্ষণ পর কমে আসতেই রক্তিম কপালে হাত ঘঁষে নিজেই নিজের সাথে বলতে লাগলো,আবারও পুরোনো সেই মাথা ব্যথা।মাঝখানে তো ছিলো না আবার নতুনভাবে আমদানি হয়েছে।এইভাবে মিনিট পাঁচেক শুয়ে থাকার পর মাথা ব্যথা কিছুটা কমে আসলো।দু’আঙুলের ফাঁকে একটা সিগারেট নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।বারান্দায় বিদ্যমান চেয়ার টায় শরীর টা এলিয়ে দিয়ে সিগারেট টা জ্বালিয়ে দিলো।বাহিরে মৃদু বাতাস বইছে।যার ফলে,বারান্দায় বেঁধে রাখা রিমঝিমের নীল ওড়না টা অবাধ্য ভাবে উড়ছে।রক্তিম সেদিকেই তাকিয়ে আছে।ওড়না টা রিমঝিমের গলা থেকে নিয়ে এসেছিলো।সিগারেট টা শেষ হতেই আরেকটা ঠোঁটে চেপে ধরলো।পরপর পাঁচ টা সিগারেট শেষ করে ফেলেছে রক্তিম।তবে,দৃষ্টি এখনো ওড়নাতেই আঁটকে আছে।রক্তিমের চোখজোড়া লাল হয়ে আছে।পরক্ষণেই,চোখ জোড়া বন্ধ করে বিরবির করে বললো,আসলেই কি!তুই অন্য কাউকে আপন করে নিয়ে সুখে আছিস রিমঝিম!!রক্তিম শব্দ করে হেসে উঠলো।পুনরায় বললো,উঁহুহু!তুই শুধু আমার।তুই আমার বিয়ে করা বউ।তোর এখন একটাই পরিচয় সেটা হলো মিসেস রক্তিম!!
আবির রক্তিমের রুমে ঢুকে সিগারেটের গন্ধ পেয়ে কিছুটা হতাশ হলো।বারান্দায় গিয়ে রক্তিমকে নিশ্চুপ ভাবে বসে থাকতে দেখে ইনোসেন্ট মুখ করে বললো,
‘কিরে দেবদাস।আমার বোনের বিরহে বুঝি পাগল হয়ে গিয়েছো।’
রক্তিম কিড়মিড় করে তাকালো আবিরের দিকে।রক্তিমের তাকানো দেখে আবির শুকনো কয়েক ঢোক গিললো।রক্তিম আবিরের উরুতে বেশ কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে বললো,
‘মনে রাখিস তোর বোনটা কিন্তু আমার বউ।তাহলে,দেবদাস হবো কীভাবে?’
‘আমার বোনের সুখেই তো দেবদাস হচ্ছিস।আফসোস!তা রিমঝিম দেখতে পারলো না।’
রক্তিম ঠোঁট বাঁকালো।তাচ্ছিল্যের সুর টেনে বিরবির করে বললো,তোর বোনকে আমি ছাড়বো না আবির।আমার থেকে দ্বিগুণ কষ্ট ওকে পেতে হবে।যাকে বলে টিট ফর ট্যাট।
কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত করার পর দু’জনেই রুমে চলে আসলো।আবির বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়লো।ফোন টা হাতে নিয়ে এপাশ ওপাশ করে ঘুরিয়ে দেখছে।সামনের দেয়ালে রিমঝিমের ছবিটা দেখে মুচকি হাসলো।এমতাবস্থায় বললো,
‘রিমঝিমকে মিস করিস।’
রক্তিম তখন আয়নার সামনের দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম লাগাচ্ছিলো।উপরের বোতাম টা লাগিয়ে আবিরের কথার পিঠে বলে উঠলো,
‘মোটেও না।আমি রিমঝিমকে মিস করি না।’
‘সত্যি তো!’
‘মিথ্যে হতে যাবে কেনো?’
আবির বরাবরের মতো মুচকি হাসলো।একদৌড়ে রিমঝিমের ছবিটা নিয়ে উপর থেকে ঠাস করে নিচে ফেলে দিলো।মুহুর্তেই রিমঝিমের ছবিটা দুমড়ে মুচড়ে সাদা টাইলসে পড়ে গেলো।রক্তিম এতোক্ষণ বুঝে উঠতে পারছিলো না আবিরের কান্ডকারখানা।তবে,এখন তার মাথায় রক্ত চড়ে গিয়েছে।একপ্রকার তেড়ে এসে আবিরের গলাটা চেপে ধরে বললো,
‘কি করলি তুই এইটা।কোন সাহসে করলি।’
‘কিরে!গায়ে লাগছে তো।রিমঝিমকে যদি মনেই না করিস তাহলে ওর ছবি দিয়ে তোর রুম ভর্তি কেনো?ও বুঝেছি!বউকে মনে মনে মিস করিস।’
রক্তিম দাঁত চেপে তাকালো আবিরের দিকে।এমতাবস্থায় বললো,
‘আমি কখনোই তোকে শিলার সাথে সেটিং করিয়ে দিবো না।কয়েক বছর তো ঘুরলি!আরো না হয় কয়েকটা বছর ঘুরবি।’
‘ভাই!তুই এইটা করতে পারবি।’
‘না পারার কি আছে বল।’
‘মাফ চাই ভাই!আমি আজকেই গিয়ে রিমঝিমের ছবিটা সুন্দর করে ফ্রেমে বাঁধিয়ে নিয়ে আসবো।তোকে পরীক্ষা করতে গিয়ে আমি একূল অকূল হারাতে পারবো না।’
রক্তিম সরে আসলো আবিরের থেকে।আয়নায় দাঁড়িয়ে চুলগুলো পরিপাটি করে ব্লেজার টা হাতে নিয়ে বাঁকা হেসে বেরিয়ে পড়লো।কাকে,কীভাবে সায়েস্তা করতে হয় তা তার অজানা নয়।
—-
লাইব্রেরীর কোণার দিকটায় রিমঝিম নিশ্চুপে বসে আছে।বাকিরাও মনোযোগ দিয়ে বই পড়ায় ব্যস্ত।এহসান দূর থেকে রিমঝিমকে দেখছে।এহসানের পাশে ডোমিনিকা এসে দাঁড়ালো।এহসানের হাতে একটা চাপড় দিয়ে টেনে টেনে বললো,
‘দূর থেকে রিমঝিমকে না দেখে কাছে গিয়ে বসলেই তো পারিস।’
এহসান একপলক তাকালো ডোমিনিকার দিকে।মেয়েটা তার মনের কথা সব বুঝে যায়।কিভাবে বুঝে তা এহসানের কাছে অজানা।এহসান ভাবলেশহীন ভাবে জবাবে বললো,
‘রিমঝিম এখন বই পড়ায় ব্যস্ত।ওকে গিয়ে শুধু শুধু ডিস্টার্ব করে লাভ নেই।তার থেকে এটাই ভালো হবে,আমি আর তুই একপাশে গিয়ে বসি।কিছু পড়া নিয়ে ডিসকাশ করা দরকার ছিলো।’
ডোমিনিকা খুশি হলো।এহসানের হাত ধরে গটগট করে নিরব একটা জায়গায় বসে পড়লো।রিমঝিম আঁড়চোখে তাকালো তাদের দিকে।তাদেরকে একসাথে দেখে মুচকি হাসলো।রিমঝিম জানে,ডোমিনিকা এহসান কে খুব পছন্দ করে আর এটাও বুঝে,এহসান যে তার প্রতি অনেকটা দূর্বল।তবে,রিমঝিম চায় তারা যেনো একে অপরের সাথে মিলেমিশে থাকে।ডোমিনিকা যেনো তার ভালোবাসা পায়।কারণ,ভালোবাসা হারানোর বেদনা রিমঝিমের থেকে কেউ ভালো ভাবে উপলব্ধি করতে পারে নি।রিমঝিমের প্রায়ই মনে হয়,এতোটুকু জীবন টায় সে তো কম ক্ষত-বিক্ষত হয় নি!সবই তো ভালোবাসার ফল।হয়তো এর নাম ক্ষত-বিক্ষত ভালোবাসা।রিমঝিম আর ভাবলো না।পুনরায় বই পড়ায় মন দিলো।
—
রেহেনা বেগম জরুরি তলবে সবাইকে ডেকে পাঠিয়েছেন।সিদ্দিক আহমেদ খুব চিন্তায় আছেন।রক্তিম ফোন টিপতে টিপতে এসে সোফার একটা জায়গা দখল করে নিলো।তা দেখে,রেহানা বেগম ধমকের সুরে বললেন,
‘ফোন টা রেখে আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনো।’
রক্তিম তড়িঘড়ি করে ফোন টা ট্রাউজারের পকেটে ঢুকিয়ে নিলো।বুকে হাত গুঁজে ফিটফাট হয়ে বসলো।সবাই নিরব দর্শকের মতো তাকিয়ে দেখছে রেহানা বেগমের দিকে।রেহেনা বেগম কোনো ভনিতা না করে বলে উঠলেন,
‘আমি আর,এই বাসায় থাকবো না।কালই চলে যাবো গ্রামের বাড়ি।’
সিদ্দিক আহমেদের ভ্রুঁকুটি কুঁচকে এলো।ভ্রুঁ কুটি কুঁচকে নিয়েই বললেন,
‘গ্রামে গিয়ে কি করবে আম্মা!আমরা সবাই তো এখানে।তাহলে,তুমি গ্রামে গিয়ে একা কি করবে?’
‘আমার এখানে একটুও ভালো লাগছে না।আমি গ্রামেই যেতে চাই।’
‘উফফ!আম্মা তোমার বয়স হয়েছে।এখন তুমি তোমার ছেলেদের কাছে আয়েসি ভাবে থাকবে তা না করে গ্রামে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছো।গ্রামে তোমাকে দেখার কে আছে।আগে,তোমার সেজো ছেলে ছিলো কিন্তু,এখন তো সে অন্য জায়গায় শিফট হয়েছে।তাহলে,একা গিয়ে তুমি করবে টা কি?’
‘আমি কিছুই শুনতে চাই না।আমার এখানে ভালো লাগছে না!’
‘কি করলে তোমার ভালো লাগবে আম্মা তাই বলো?’
রেহানা বেগমের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।হাসিমুখ করে সিদ্দিক আহমেদের উদ্দেশ্যে বললেন,
‘আমি আমার সাদিককে এই বাসায় দেখতে চাই।শুধু তাই নয় তোদের দু’ভাইয়েরও মিল দেখতে চাই।’
সিদ্দিক আহমেদের শরীর রাগে শিরশির করে উঠলো।বিনাবাক্যেই বলে উঠলেন,
‘অসম্ভব আম্মা!তোমার এই আশাটা আমি কোনোমতেই পূরণ করতে পারবো না।’
রেহেনা বেগমও কম কিসে!আবিরকে হাঁক মেরে বললেন,
‘কাল ভোরেই আমাকে আমার ভিঁটেয় দিয়ে আসবি।এই বাসায় আমি আর একদন্ডও থাকতে চাই না।আমার একটাই ভিঁটে তা হলো আমার স্বামীর বাড়ি।সেখানে গিয়ে না খেয়ে-দেয়ে মরে গেলেও আমার কিছুই যায় আসে না।এইখানে আমার কথার কোনো মূল্য নেই।’
আবির মনে মনে বললো,বুড়ি চালাক আছে।মনে মনে এটা বললেও,মুখ দিয়ে ঠিকই বলেছে,
‘তুমি যা বলবে তাই হবে দাদি।একদম ভোরেই তোমাকে নিয়ে যাবো।’
সিদ্দিক আহমেদ কিছু বলতে নিলেই,রেহেনা বেগম হাত দিয়ে থামিয়ে দিলেন।কড়া গলায় বললেন,
‘তোমার থেকে আর কিছুই শুনতে চাই না সিদ্দিক।আমি যা বলেছি তাই হবে।কালই আমি চলে যাবো।চলে গেলেই সব ভেঁজাল শেষ।’
সিদ্দিক আহমেদ রাগে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।চোয়াল শক্ত করে বললেন,
‘যা মন চায় করো তোমরা।আসতে বলো তোমার ছোট ছেলেকে।তবুও এই বাসা ছেড়ে যাবে না।এখানেই থাকবে তুমি আম্মা!’কথাটা বলেই দম নিলেন সিদ্দিক আহমেদ।কিছুক্ষণ সবার দিকে চেয়ে গটগট করে চলে গেলেন নিজের রুমের দিকে।মনকে বার বার বুঝাচ্ছেন যা আমার তা আমার এই থাকবে।কেউই তা হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।রক্তিম এতোক্ষণ চুপচাপ বসে সবকিছু দেখছিলো।তার দাদি কি নাটক টাই না করলেন।তবে,ছোটবাবার আসার কথা শুনতেই তার অস্থিরতা দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।বুকের ভিতর হৃদপিন্ড টা মনে হয় ঢিপঢিপ করছে।রক্তিম বার কয়েক ঢোক গিললো।আবির রক্তিমের হাবভাব দেখে ফিসফিসিয়ে বললো,
‘আগুন লেগেছে নাকি বুকে?’
রক্তিম নাক ফুলিয়ে বললো,
‘শিলাকে পেতে চাইলে অফ চা।না হলে কিন্তু,হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।’
আবির চুপ হয়ে গেলো।রেহেনা বেগমের পাশে বসে পপকর্ণ খেতে লাগলো।রেহানা বেগম বেশ খুশি।খুশিতে যেনো বাক-বাকুম করছেন।জাহানারা আহমেদেরও এক অবস্থা।
—-
রিমঝিম বিছানায় উঁপুড় হয়ে শুয়ে আছে।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।বাবা মা’র রুম ক্রস করে আসতেই শুনেছে বাংলাদেশ যাওয়ার কথা।কথাটা শুনেই রিমঝিমের পা যেনো সেখানেই আঁটকে গিয়েছে।আরো যখন শুনলো,দাদি খুব জোরাজোরি করছে তখনি রিমঝিম দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসলো।এসেই বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়েছে।রিমঝিম এবার নিশ্চিত বাংলাদেশে যেতেই হবে।দাদির কথা অমান্য করার সাধ্য তার নেই।এমনকি,বাংলাদেশে যাবেন বলে,সাদিক আহমেদ এবং সেলিনা আহমেদ খুব খুশি।কিন্তু,রিমঝিম তো অতীতের মুখোমুখি আর হতে চায় না।পেতে চায় না আর কষ্ট।অতীতের স্মৃতি গুলো চোখে ভাসতেই রিমঝিমের বুকটা হাহাকার করে উঠলো।নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে মুখ চেপে ডুকরে কেঁদে উঠলো।গলা ফাটিয়ে কাঁদতে গিয়েও যেনো পারছে না।এহসান কখন থেকেই রিমঝিমকে ফোন করে যাচ্ছে।রিমঝিমকে ফোনে না পেয়ে তার খুব চিন্তা হচ্ছে।লাইব্রেরীতে হঠাৎ চোখ তোলে দেখে রিমঝিম নেই।লাইব্রেরীতে না পেয়ে সাথেসাথেই ভার্সিটির প্রাঙন খুঁজে দেখেছে তাও রিমঝিমকে খুঁজে পায় নি।তাই তো কখন থেকে রিমঝিমকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে।যতবার ফোন দিচ্ছে ততবারই যেনো চিন্তায় চিন্তায় তার সবকিছু তালগোল পাঁকিয়ে যাচ্ছে।ফোনের আলো দেখে রিমঝিম খুব বিরক্ত হলো।দূর থেকে এহসানের নাম টা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।ফোন টা পুনরায় থেমে থেমে বেজে উঠতেই রিমঝিম হামাগুড়ি দিয়ে ফোনটার দিকে এগিয়ে গেলো।ফোন টা রিসিভ করে কানে চেপে ধরে বললো,
‘একদম আমাকে ফোন দিবি না।ডোমিনিকার সাথে গিয়ে সময় কাটা।’
বলেই দ্রুত গতিতে ফোনটা কেটে দিলো।ফোনের অপাশে এহসান কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো।পরক্ষণেই হেসে ফেললো।এহসান ভেবে নিয়েছে,আজকে লাইব্রেরীতে ডোমিনিকার সাথে ছিলো বলে,রিমঝিম রাগ করেছে।শুধু তাই নয়,এটাও ভেবে নিয়েছে রিমঝিম ওদের দু’জনকে দেখে হিংসে করেছে।এহসান চুল গুলো নেড়ে নেড়ে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে,বাথটবে শুয়ে পড়লো।চোখ দুটো বন্ধ করে বিরবির করে বলতে লাগলো,
‘তার মানে আমার প্রতিও তোর সফট কর্ণার রয়েছে রিমঝিম।উফফ রিমঝিম!!আজকে আমার ভীষণ খুশি লাগছে।মনে হচ্ছে,তোকে ফোন দিয়ে আমি সার্থক হয়েছি।কি তেজ টাই না দেখালি!!এক কথায় রণচণ্ডী।’
চলবে..
[নেক্সট পর্বে আশা করি সব ক্লিয়ার হবে।]