#বাল্যবিবাহ
[৩য় পর্ব ]
লেখক – আবির চৌধুরী
নীলা অসুস্থ শরীর নিয়ে শুয়ে আছে। তখন নীলার শ্বাশুড়ি নীলার রুমে এসে দেখে নীলা শুয়ে আছে।
— তুমি এখনও শুয়ে আছো? বাসার সব কাজ কে করবে? বাসায় যে সব নোংরা হয়ে আছে এসব কি তোমার বাড়ির লোক এসে পরিষ্কার করে দিবে নাকি?
— তারা করে দিবে কেন মা? আসলে মাথাটা এখনও ঘুরছে তাই শুয়ে আছি।
— আর নাটক করতে হবেনা তাড়াতাড়ি উঠে সব পরিষ্কার করে নাও।
— ঠিক আছে মা আপনি যান আমি আসছি।
তারপর নীলার শ্বাশুড়ি চলে গেলো। নীলা এবার উঠে সব কিছু পরিষ্কার করে আবার নিজের রুমে চলে আসে৷ এমন সময় সব মেয়ে চায় সবার বাপের বাড়ি থেকে ঘুরে আসতে। নীলার মনেও সেটাই চাচ্ছে কিন্তু কাওকে বলার সাহস পাচ্ছেনা। রাতের খাবার খেয়ে নীলা শুয়ে আছে এমন সময় নিলয় রুমে এসে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যে নিলয় ঘুমিয়ে যায়। নীলা এবার নিলয়ের ফোন হাতে মিয়ে উঠে বেলকনিতে চলে যায়। রাত তখন প্রায় ১২ টা ছুঁই ছুঁই। নীলা এবার তার বাবাকে ফোন দিল। অনেক্ষন পরে জামসেদ আলী ফোন রিসিভ করল।
— মা কেমন আছিস তুই?
— বড়লোক পরিবারে বিয়ে দিয়েছেন ভালো তো থাকবই। আম্মা কই?
— শুয়ে আছে কথা বলবি নাকি?
— হুম, আম্মাকে ডেকে দিন।
তারপর জামসেদ আলী তার স্ত্রীকে ডেকে দিল। তারপর নীলা তার মায়ের সাথে কথা বলতে থাকে। নীলা খুশির খবর টা তার মাকে বলে। তিনি শুনে অনেক খুশি হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে ফোন রেখে দেয় নীলা। এবার নীলার মা নীলার বাকে গিয়ে খুশির খবর শোনালেন সবাই তো অনেক খুশি।
— কাল আপনি মিষ্টি নিয়ে যাবেন আর নীলাকে কিছুদিনের জন্য আমাদের বাসায় নিয়ে আসবেন।
— হুম কাল গিয়ে নীলাকে নিয়ে আসব আমি।
তারপর তারা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ল। অন্যদিকে নীলা কিছুক্ষণ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। হালকা হাওয়াতে তার শরীর শীতল হয়ে আসছে। পরিবেশ টা খুব ভালোই উপভোগ করেছে নীলা। একটু পরে নীলা রুমে গিয়ে দেখে নিলয় খাটের উপরে বসে আছে। নিলয় নীলার হাতে ফোন দেখে খুব রেগে যায় আর নীলার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে নেয়।
এবার নিলয় নীলাকে বলতে থাকে — এতো রাতে ফোন দিয়ে কার সাথে কথা বললি তুই? সত্যি করে বলবি।
নীলা কাপাকাপা গলায় বলল — মায়ের সাথে কথা বলছিলাম একটু।
নিলয় এবার ধমক দিয়ে বলল — মায়ের সাথে এতোক্ষণ কথা বলতে সময় লাগে? আমাকে এসব বোঝাস তুই তাইনা? সত্যি করে বল কার সাথে কথা বললি?
— সত্যি মায়ের সাথে কথা বলছি। কিছুক্ষণ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
— তুই আবার মিথ্যে কথা বলিস আমার সাথে? তোর আসলেই চরিত্রে সমস্যা আছে।
— কি বলছেন এসব আপনি?
— কি বলছি বুঝতে পারছিস না এখন! তুই আজকের পর আর আমার ফোনে হাত দিবি না বলে দিলাম।
এই কথা বলে নিলয় গিয়ে শুয়ে পড়ল। নীলার চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে। নীলা গিয়ে নিলয়ের পাসে শুয়ে গেল৷ আর শব্দহীন কান্না করতে থাকে। নিলয়ের বলা কথা গুলা নীলার গায়ে কাঁটার মতো বেধে গেল। নীলা কান্না করতে করতেই ঘুমিয়ে গেল।
নীলা সব সময় সবার আগে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে সব কাজ সেরে নেয়। আজকেও তার ব্যাতিক্রম হলো না। নীলা সব কাজ শেষ করে নিলয় কে ডাকতে আসল। তারপর নিলয় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পরে নীলা রান্না করতে চলে যায়। একটু পরে দরজার কলিং বেলের শব্দ শুনে নীলা দরজা খুলে দেখে নীলার বাবা এসেছে। এবার নীলা তার বাবার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে ওনাকে বাসার ভিতরে নিয়ে আসল।
— আব্বা কেমন আছেন আপনি? আর বাড়ির সবাই কেমন আছে?
— আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে।
— আম্মাকে নিয়ে আসলেন না কেন? কতোদিন হয়ে গেলো আম্মাকে দেখিনা।
এমন সময় নীলার শ্বাশুড়ি বলতে বলতে আসল — কে এসেছে আবার এই সময়?
নীলার শ্বাশুড়ির চোখ জামসেদ আলীর উপরে পড়তেই তিনি ভালো মানুষের মতো একটা ঘোমটা দিয়ে দিল। আর বলতে থাকল– কেমন আছেন বেয়াই সাহেব?
— আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপনি কেমন আছেন?
— জ্বী আমিও ভালো আছি।
— জামাই কি আজকেও অফিসে চলে গেছে নাকি?
— একটু আগেই বের হইছে।
— বেয়াইন আমি নীলাকে কিছুদিনের জন্য আমাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে চাই।
— ঠিক আছে নিলয় আসলে দুজনকেই পাঠিয়ে দেব। নীলা মা তোমার বাবার জন্য চা নাস্তার ব্যবস্থা করো।
তারপর নীলা কিছু না বলে নাস্তা তৈরি করতে চলে গেলো।
জামসেদ আলী বলল — আচ্ছা আমার মেয়েটাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? মনে হয় খাওয়া দাওয়া করে না ঠিক ভাবে!
— আরেনা মেয়েরা এই সময় এমনি একটু শুখিয়ে যায় আবার ঠিক হয়ে যাবে।
— আমার মেয়ে টাকে দেখে রাখবেন প্লিজ। ওরে কখনও কষ্ট পেতে দিয়েন না।
কথা গুলো বলছে আর জামসেদ আলীর চোখে দিয়ে পানি পড়ছে। যতই হোক বাবার মন বলে কথা। বাবা কখনও সন্তানের সামনে কান্না করতে পারেনা। আড়ালে গিয়ে কান্না করেন।
নীলার শ্বাশুড়ি বলল — বেয়াই সাহেব আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আর আপনার মেয়ে আমাদের বাড়িতে সুখেই আছে।
এমন সময় জামসেদ আলী নীলার আসার শব্দ শুনে নিজের চোখে পানি মুছে ফেলল।
তারপর সবাই নাস্তা করে নিল। একটু পরে জামসেদ আলী চলে গেলো। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে আসল। নিলয় এখনও বাসায় আসে নাই। নীলা নিলয়ের অপেক্ষা করে বসে আছে। অনেক্ষন পরে নিলয় বাসায় আসল।
নীলা নিলয় কে বলল — এতো দেরি হলো কেন আজ? এতো দেরি তো আপনার হয়না৷
নিলয় রাগি কন্ঠে বলল – তোকে কি এখন আমার সব কিছুর কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি? আমার সামনে থেকে সর।
এই কথা বলে নীলাকে একটা ধাক্কা দিল জোরে। নীলা ধাক্কা সামলাতে না পেরে খাটের কোণের সাথে বাড়ি খেয়ে মাথা থেকে রক্ত বের হতে থাকে। নীলা কোনরকম ভাবে মাথায় হাত দিয়ে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু রক্ত বের হতেই থাকে। নীলার কপালের রক্ত গড়িয়ে পড়তে শুরু করে। নিলয় সেটা এখনও খেয়াল করে নি। হঠাৎ করে নীলা ধপাস করে ফ্লোরের উপরে বেহুশ হয়ে পড়ে যায়৷ নীলার পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে তাকাতেই দেখে নীলা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে আর কপাল থেকে রক্ত পড়ছে। নিলয় এবার তাড়াতাড়ি করে নীলাকে কোলে তুলে খাটের উপরে শুইয়ে দিয়ে একটা গামচা দিয়ে মাথা বেধে দেয়। এবার নিলয় তাড়াতাড়ি করে পকেট থেকে ফোন বের করে ডাক্তার কে কল দিয়। তারপর সে তার আম্মুকে ডাক দেয়।
নীলার শ্বাশুড়ি এসে দেখে এই অবস্থা এবার তিনি নিলয়কে বলল — কিরে এটা কি করে হলো?
নিলয়ের শরীর দিয়ে ঘাম বের হতে থাকে। ঘাম মুছতে মুছতে বলে — আমি নীলাকে রাগের মাথায় একটা ধাক্কা দিয়েছি তারপর এই অবস্থা আমি বুঝতে পারিনি এমন কিছু হয়ে যাবে।
এবার নীলার শ্বাশুড়ি নীলার মাথার পাশে এসে বসে আর নীলাকে ডাকতে থাকে — নীলা মা কথা বলো!
নীলার মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না। একটু পরে ডাক্তার চলে আসে। তারপর ডাক্তার ভালো করে মাথা বেন্ডেজ করে দেয়। একটু পরে নীলার জ্ঞান ফিরে আসে। ডাক্তার নীলাকে প্রশ্ন করল — এসব কি করে হলো?
নীলা পাশে তাকিয়ে দেখে নিলয় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে৷ এবার নীলা বলল — আসলে পা স্লিপ করে পড়ে মাথায় আঘাত লাগছে।
নীলার কথা শুনে এবার নিলয় নীলার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
ডাক্তার বলল — আপনাকে না বলছি সাবধানে থাকতে এসময়! দেখুন এতে বাচ্চার সমস্যা হতে পারে৷
— কিছু হবে না সমস্যা নেই৷
— এবার থেকে দেখে চলাফেরা করবেন। আর ওষুধ গুলো টাইম মতো খাবেন।
তারপর ডাক্তার চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর,,,,
চলবে,,,