বাল্যবিবাহ পর্ব -০৫

#বাল্যবিবাহ
[৫ম পর্ব]
লেখক – আবির চৌধুরী

নীলার শ্বাশুড়ি নীলাকে বলল — তোমার জন্য আজ আমার ছেলে বাড়ি থেকে চলে গেছে রাগ করে। যদি আমার ছেলের কিছু হয়ে যায় দেখবে আমি তোমার কি হাল করি।

নীলা নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে শুধু চোখের পানি ফেলছে। বিনা দোষে মেয়েটাকে অনেক কথা শুনতে হয়।

নীলার শ্বাশুড়ি আবার বলল — নাকি কান্না করতে হবেনা আমার সামনে থেকে যাও তুমি।

নীলা কিছু না বলে নিজের রুমে চলে যায়। আর কান্না করতে থাকে।

একটু পরে দরজার শব্দ শুনে সবার রুম থেকে বের হয়ে দেখে নিলয় বাসায় ফিরে আসছে। নিলয়ের মা নিলয়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল — বাবা তুই এতক্ষণ কই চিলি? তোকে ফোন দিচ্ছি ফোন ও দরিস নাই।

নিলয় কিছু না বলে নিজের রুমে চলে যায়।

নীলা নিলয়কে জিগ্যেস করল — আপনি কোথায় চলে গিয়ে ছিলেন?

— যেখানে ইচ্ছে গেছি। আমার ভালো লাগছে না আমাকে একা থাকতে দাও।

— খাবার খাবেন না আপনি?

— না, খাবো না খিদে নেই আমার।

— না খেলে আপনার শরীর খারাপ করবে। আপনি বসেন আমি খাবার নিয়ে আসছি।

এই কথা বলে নীলা নিলয়ের জন্য খাবার নিয়ে আনতে চলে যায়। একটু পরে নিলয়ের জন্য খাবার নিয়ে নিলয়ের সামনে দিতেই নিলয় খাবার ছুড়ে ফেলে দেয়। রাগী কন্ঠে নীলাকে বলতে থাকে — তুই কি আমার বাংলা কথা বুঝিস না নাকি? বলছিনা খাবোনা আবার খাবার নিয়ে আসতে গেলি কেন?

নীলা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

নিলয় আবার বলল — আমাকে বিরক্ত করবিনা বলে দিলাম। আমি আমার মতো চলব। কোনো কিছুতে আমার উপরে কথা বলতে আসলে ভালো হবে না। আমি এখন ঘুমব।

এই কথা বলে নিলয় অন্যদিকে ফিরে ঘুমিয়ে যায়। এবার পড়ে যাওয়া খাবার গুলো তুলে যায়গা টা পরিষ্কার করে নীলাও শুয়ে যায়।

দেখতে দেখতে আর ৫ মাস কেটে যায়। এই ৫ মাসে অনেক অত্যাচার সহ্য করছে নীলা নীলার পেটের সন্তান ধিরে ধিরে বেড়ে উঠছে।

৫ মাস পর,
_________________

নীলার এখন কাজ করতেও কষ্ট হয়। তারপর ও নীলাকে দিয়ে সব কাজ করায়।

নিলয় অফিস থেকে এসে দেখে নীলা রুমে নেই। নিলয় কয়েকবার নীলার নাম ধরে ডাকল কিন্তু নীলার কোনো শব্দ না পেয়ে নিলয় রুম থেকে বের হয়ে পুরো বাড়ি খুঁজতে থাকে। একটা সময় নিলয় ছাদের উপরে গিয়ে দেখে নীলা ছাদের উপরে দাঁড়িয়ে আছে।

— তুই ছাদের উপরে দাঁড়িয়ে কি করিস? তোকে আমি পুরো বাড়ি খুঁজে পাচ্ছিনা।

— বাতাসটা খুব ভালো লাগছে তাই এসে দাঁড়িয়ে রইলাম। আপনি কখন আসলেন?

— দেখ তুই এই ভাবে সিড়ি দিয়ে উঠানামা করলে আমার সন্তানের সমস্যা হয়ে যাবে। আমার সন্তানের যদি কিছু হয় তখন দেখিস। তুই মরে যা দরকার হলে আমার সন্তানের যেনো কোনো সমস্যা না হয়।

এই কথা বলে নিলয় আবার চলে গেলো। একটু পরে নীলা নিজের রুমে চলে গেলো। খাবার খেয়ে নিজের রুমে শুইয়ে গেল।

এই ভাবে কেটে গেলো আরো কয়েক মাস। নীলা এখন ৯ মাসের গর্ভবতী। ৯ মাসের বাচ্চা পেটে রেখে এখনও দিনের পর দিন নীলাকে একটা কাজের মেয়ের মতো থাকতে হচ্ছে। যে মেয়েকে রেস্টে থাকার দরকার সে মেয়েকে দিয়ে বাসার সব কাজ করাচ্ছে। ঘর ঝাড়ু দেওয়া থেকে শুরু করে সব কাজ করতে হচ্ছে৷ আজকে নীলার শরীর আগের থেকে বেশিই খারাপ হয়ে গেছে। অন্য ঘর থেকে নীলার শ্বাশুড়ি নীলাকে ডাক দিয়ে বলল। জামা কাপড় বিজিয়ে রাখা আছে ওই সব যেনো ধুইয়ে দেয়। তারপর নীলা জামা কাপড় ধুতে গিয়ে বসতেও অনেক কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কিবা করার আছে? তাকে কষ্ট পেলেও সব কাজ করতে হবে। এবার নীলা সব জামা কাপড় ধুইয়ে সে ছাদের উপরে গিয়ে জামা কাপড় রোদে দিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। দেখতে দেখতে বিকাল হয়ে আসে। আকাশে আবার মেঘ জমেছে। আকাশ টা কালো মেঘে ঢেকে গেছে। এবার নীলার শ্বাশুড়ি নীলার রুমে আসল।

— বউমা তুমি এখনও শুয়ে আছো? আকাশের অবস্থা দেখছো? একটু পরে তো বৃষ্টি নামবে মনে হচ্ছে। জামা কাপড় এসব তো নিয়ে আসতে হবে নাকি?

— মা আমার শরীর আগের থেকে অনেক বেশি খারাপ হয়ে গেছে। মাথা টাও কেমন যেনো ঘুরছে।

— এমন ভাব করছো মনে হয় আমি সন্তান জন্ম দি নাই কখনও! এসব বাদ দিয়ে জামা কাপড় নিয়ে আসো না হলে সব ভিজবে।

এবার নীলা উঠে ছাদের উপরে গিয়ে সব জামা কাপড় নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে মাথা ঘুরে পা স্লিপ করে একটা চিতকার দিয়ে সিড়ি থেকে গড়িয়ে পড়ে যায়।

নীলার চিতকার শুনে নীলার শ্বাশুড়ি এসে দেখে নীলা ফ্লোরের উপরে গোড়াগুড়ি খাচ্চে আর মাগো বলে চিতকার দিচ্ছে।

— বউমা কি হইছে তোমার??

নীলা কিছু না বলে কান্না করেই যাচ্ছে পেটে হাত দিয়ে। এবার নীলার শ্বাশুড়ি দৌড়ে গিয়ে নিলয়কে কল দিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বলল। নীলার এমন অবস্থা দেখে নীলার শ্বাশুড়ি অনেক ভয় পেয়ে যায়৷ কিছুক্ষণের মধ্যে নিলয় বাসায় চলে আসে। এসে দেখে নীলা পেটে হাত দিয়ে কান্না করছে। নীলা শাশুড়ী নীলার পাশে বসে আছে আর নীলার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে।

নিলয় — নীলা কি হইছে তোমার? বেশি কষ্ট হচ্ছে নাকি তোমার?

নীলা নিজের ঠোঁটে ঠোঁট চাপ দিয়ে পেটের উপরে হাত দিয়ে ব্যাথা সহ্য করার চেষ্টা করছে। এবার নিলয়ের মা বলল — বাবা তুই একটা হাসপাতালে ফোন দিয়ে একটা এম্বুল্যান্স পাঠাতে।

নিলয় সাথে সাথে ফোন দিল। কিছুক্ষণের মধ্যে একটা গাড়ি তাদের বাসার সামনে চলে আসে। বাহিরে অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। নিলয় নীলাকে কোলে তুলে এম্বুল্যান্সের মধ্যে নীলাকে শুইয়ে দিল। নিলয় আর নিলয়ের মা এম্বুল্যান্সের মধ্যে উঠে বসে৷

নীলার ব্যথা ধিরে ধিরে বেড়ে যাচ্ছে। নীলা ব্যাথার যন্ত্রণায় মা মা বলে চিৎকার দিচ্ছে। নিলয় এবার নীলার মাথায় হাত রাখল। আর এক হাত দিয়ে নীলার হাত শক্ত করে ধরে রাখে।

— নীলা আর একটু অপেক্ষা করো আমরা পৌছে গেছি। সব ঠিক হয়ে যাবে।

— আমি আর পারছিনা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।

কিছুক্ষণের মধ্যে তারা হাসপাতালে পৌছে যায়। তারপর নীলাকে একটা কেবিনে শিপ্ট করা হলো। তারপর ডাক্তার ভিতরে ঢুকে সবাইকে বাহিরে পাঠিয়ে দিল।

ডাক্তার নীলাকে দেখে বাহিরে আসে। তারপর নিলয় আর তার মা ডাক্তারের সামনে এসে জিগ্যেস করে — ডাক্তার রোগীর কি অবস্থা বুঝলেন?

ডাক্তার নিলয় কে উদ্দেশ্য করে বলল — আপনি রোগীর কি হোন?

— আমি রোগীর হাসবেন্ড।

— ওহ আই সি! রোগীর এই অবস্থা কি করে হলো?

নীলার শ্বাশুড়ি বলল — ছাদের উপর থেকে জামা আনতে গিয়ে পা স্লিপ করে সিড়ি থেকে পড়ে গেছে।

ডাক্তার কথাটা শুনে রেগে গেয়ে বলল — আপনারা কেমন মানুষ হ্যাঁ! আপনারা কি মেয়েটার দিকে খেয়াল রাখতে পারেন নাই? আর মেয়েটার যে অবস্থা দেখতে পারছি মনে হচ্ছে মেয়েটাকে দিয়ে আপনারা অনেক খাটান। মেয়েটার শরীর পুরো দুরবল।

এবার নিলয়কে ডাক্তার বলল — আপনি কেমন হাসবেন্ড যে নিজের স্ত্রীর খেয়াল রাখতে পারেন না!

ডাক্তারের কথা শুনে নিলয় আর নিলয়ের মায়ের মাথা নিচু হয়ে গেলো।

ডাক্তার আবার বলল — রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। বাচ্চার অবস্থাও তেমন একটা ভালো না। যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।

এই কথা বলে ডাক্তার চলে গেলো। এর মধ্যে নিলয় নীলার বাসায় ফোন দিয়ে বলে দিয়েছে নীলাকে হাসপাতালে নিয়ে আসছে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here