#লাভ_ফাইট
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট৪
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
কলেজে যাই না বেশ কয়েকদিন হলো।বন্ধুবান্ধবরাও ফোনের পর ফোন দিচ্ছে।ওরা হয়তো জেনে গিয়েছে আমার আর ফালাকের বিয়ের কথা।কিছু খবর তো বাতাসে ভেসে যায় সেই হিসাবে আমাদের এক্সিডেন্টলি বিয়েটার ব্যাপারে মানুষের জেনে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না।
কলেজে ঢুকতে কাওকে খুব একটা চোখে পরে নি।ওরা হয়তো ল্যাবের পাশে রুমটায় আড্ডায় ব্যস্ত।আমি চুপচাপ ক্লাসে গিয়ে বসে থাকি।আমায় দেখে
আযান এগিয়ে আসে।আযান আমার ক্লাসমেট।বেশ ভালো বন্ধুও বলা যেতে পারে।কিন্তু আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের কেউ ওকে সহ্য করতে পায় না।ক্লাসে কয়েকটা গ্রুপ আছে।আযান আমাদের বিপরীত গ্রুপের সদস্য। যার কারণে দা কুমড়ো সম্পর্ক আমাদের।তবে সার্কেলের অন্যদের সাথে আযান খারাপ ব্যবহার করলেও আমার সাথে বেশ ভালো করেই কথা বলে।শুনেছিলাম আমায় সে পছন্দ করে।জোহা বলেছিলো।কলেজে আমি ইন্ট্রোভার্ট টাইপের।চুপচাপ থাকি। সবার সাথে কথা বলি না খুব একটা।নবীনবরণে আমায় দেখেছিলো আযান।তারপর জোহাকে বলেছিলো মেরুন রঙের শাড়ি পরা মেয়েটা কে?জোহাও সোজাসাপটা উত্তর দিয়ে দিয়েছিলো মেয়েটা দোয়েল।তারপর সে জোহার কাছে আমার নাম্বার চায়।জোহা হেসে বলে,,,,
” লাভ নাই ব্রো।ওর বয়ফ্রেন্ড আছে।”
” মিথ্যা বলছিস তুই।”
” ভাই তোর কসম।ওর বয়ফ্রেন্ড আছে।”
আযান কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলে,,,
” ব্রেকাপ হলে বলিস।দুলাভাই হয়ে যাবো তোর।”
” ওই আশায়ই থাক তুই।ওদের কখনো ব্রেকাপ হবেনা।”
আযানের আশা পুরণ হলো ঠিকই কিন্তু ব্রেকাপের রাতেই বিয়ে হয়ে গেলো।আযান আমার পাশের সিটটায় বসে।আমি একটু সরে বসি।
” শুনলাম তোমার নাকি তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে বিয়ে হয়ে গিয়েছে?”
” ভুল কিছু শুনোনি।”
” ম্যারিড লাইফ কেমন যাচ্ছে?”
” আলহামদুলিল্লাহ। ”
আযান হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে কেমন যেন দাঁতে দাঁত কামড়ে বসে থাকে।আমি জিজ্ঞাসাসূচক ভঙ্গিতে বলি,,,,
” কিছু বলবে?”
চমকে যায় আযান।চমকিত কন্ঠে বলে,,,
” না না কিছু না।শুভ কামনা রইলো নতুন জীবনের জন্য।”
আমি চাপা হাসি দিই।আযান উঠে চলে যায়।আমি ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে মেসেঞ্জারে যাই।সন্ধ্যার দিকে ফালাককে একটা মেসেজ দিয়েছিলাম।সীন পর্যন্ত করেনি এখনও।অথচ ওর প্রোফাইলে সবুজ রঙের বিন্দুটা জ্বল জ্বল করছে।
” ওই ব্যাটা।”
আমি মেসেজ দিই।বেশ খানিক্ষন পর ফালাক সীন করে।
” কিছু বলবা?”
” নাহ,এমনি।সীন করো নাই ভাবছি মই*রা গেছো। তাই মেসেজ দিয়ে দেখলাম বেঁচে আছো কিনা!”
” ফালতু কথা না বললে ভাত হজম হয় না?”
” না হয় না।আমি এখন তোমার বিয়ে করা বউ।তারপরও তুমি আমায় ইগ্নোর করো!সাহস তো কম না!”
” সাহসের দেখলা কি?”
” আবার মুখে মুখে তর্ক করিস!জানিস আমি কে?”
” কে?”
” ফালাক মাহমুদের বউ।”
আমার মেসেজে লজ্জা পেয়ে বানরের মুখ ঢাকার রিয়াক্ট দেয় ফালাক।তারপর ঠাস করে ভিডিও কল দিয়ে দেয় ফালাক।আমি কল কেটে দিই।
” কল কাটলি কেন?”
” আমার ইচ্ছা।”
” কতদিন হলো দেখি না।একটু দেখবো তোকে।”
” বেশি দেখলে পুরাতন লাগবে পরে।”
” বলছে!”
” বলছে দেখেই তো!পুরাতন হয়ে গেছি বলেই তো পাত্তা পাই না।”
” সোনা যতই পুরাতন হোক। সোনা সোনাই থাকে।”
” হয়েছে,হয়েছে।আর ঢং করা লাগবে না।”
” ঢংই তো করি।”
” হু,করোই ত।ক্লাস আছে।আল্লাহ হাফেজ। ”
ডাটা অফ করি আমি।কিছুক্ষণের মধ্যেই জোহারা ক্লাসে আসে।জোহা এসেই আমার কাঁধে ওর কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দেয় ।
” কিরে?বিয়াইত্তা আফা, ম্যারিড লাইফ কেমন যাচ্ছে?”
” ভালোই।আগের মতোই আছে।”
” বলেছিলাম না?তোরা টম আর জেরির মতো।সারাদিন ঝগড়া করবি অথচ দিন শেষে একেঅপরকে না পেলে আপসেট হয়ে যাবি।”
কথা বলে।ইমন ইয়ার্কির হেসে ছলে বলে,,,
” জয় বাংলা।এবার বিয়ে করে একে অপরকে সামলা।”
ইমনের কথা শুনে আমরা সবাই অট্টোহাসিতে হেসে দিই। তুর্জ সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলে,,,
” ওরা তো বিয়ে করে ফেললো।কিন্তু আমরা তো আমাদের পাওনা জিনিস পেলাম না।”
” তোরা আবার কি পাস?”
গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলি আমি।আরুশি অবাক হয়ে বলে,,
” ওমা! বিয়ে করলি। আমরা ফালাক ভাইয়ার শালা শালি হিসাবে কিছু পাই না?”
” কি পাস তোরা?”
” আরেহ বোকা মেয়ে!বিয়েতে শালা শালিরা কি পায়?তুই কোয়েল আপুর বিয়েতে কি করেছিলি?”
” জুতা লুকিয়েছিলাম,দরজা ধরেছিলাম,গেট ধরেছিলাম।পরে ভাইয়ার কাছ থেকে নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা।”
” আমরাও ওরকম করবো।”
” যা পাবি ফিফটি পার্সেন্ট আমার।”
” এহ, দিবো তোমায়!”
ভেঙচি কেটে বলে আরুশি।এরই মধ্যে স্যার ক্লাসে প্রবেশ করেন।মুহুর্তেই সবাই যে যার আসনে বসে পড়ে।
________
” আপ্পি!”
কলেজ থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ড্রেস চ্যাঞ্জ করছিলাম।পায়েলের ডাকে পেছন ঘুরে তাকাই।
” কি হয়েছে?”
” একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম।”
” কি কথা?”
” ফালাক ভাইয়া তো ঢাকা থাকে তাই না?”
” হু,তো কি হয়েছে?”
” তাহলে রাত্রি বেলা কিভাবে তোর সাথে দেখা করতে আসলো?”
ফালাকের কলেজ জীবন কেটেছে এখানে।কলেজে থাকতেই পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশন করতো ফালাক।সেখান থেকেই আমাদের পরিচয়। কলেজের গন্ডি পেরোনোর পর পড়াশোনার সুত্রে ফালাক ঢাকা পারি জমায়।শুরু হয় আমাদের লং ডিস্টেন্স রিলেশনশীপ।যার কারণে অন্যদের বয়ফ্রেন্ডের মতো ফালাক বাসার নিচে এসে রাগ ভাঙাতে পারেনি। রাগ ভাঙানোর জন্য ফোন কলই ছিলো ওর এক মাত্র ভরসা।আর আমিও রাগ করলে অপেক্ষায় থাকতাম ওর ফোন কলের।এভাবেই চলছিলো আমাদের লং ডিস্টেন্স রিলেশনশীপ।আব্বুর সাথে আমার বেশি ভালো সম্পর্ক।অনেকটা বন্ধুত্বের মতো।আব্বু কখনোই প্রেমের বিরোধী ছিলেন না।আপুর বিয়েটাও রিলেশনের। আমি আব্বুকে জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু ফালাকই না করে।বলে ওর মাস্টার্স কমপ্লিট না হওয়া পর্যন্ত না জানাতে।তাছাড়া আমাদের ফ্যামিলিতেও মেয়েদের একটু দেরি করেই বিয়ে দেওয়া হয়।
পায়েলের প্রশ্নটাও মোটেও ফেলে দেওয়ার নয়।জিজ্ঞেস করতে হবে ফালাককে।আমি মুচকী হেসে বলি,,,
” আমি জিজ্ঞাসা করে তোকে বলবো নি।”
পায়েল বেরিয়ে যায়।আমি বিছানায় গা এলিয়ে ফালাককে ফোন দিই।তিনবার কেটে দিয়ে তারপর ফালাক ফোন ধরে।প্রথম দিকে খুব রাগ উঠতো।কিন্তু এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।চতুর্থবারে ফালাক ফোন রিসিভ করে,,,
” কিছু বলবে?”
” নাহ!এমনিই ফোন দিছি।”
খানিকটা মেজাজ দেখিয়েই বলি আমি।ফালাক ফোনে ওপাশ থেকে হাসে।ওর হাসির শব্দ শুনে আমি জিজ্ঞাসা সূচক কন্ঠে বলি,,
” হাসলা কেন?”
” নাহ! এমনিই।”
” আমায় না ভেঙালে তোমার ভাত হজম হয় না নাহ?”
” এই জন্যই তো তুমি আমার পুচু বউ।”
” বউ বউ করবা না।”
” বিয়ে হইছে।এখনও বলো বউ বউ করবা না?আচ্ছা তোমার সাথে আর বউ বউ করবো না।অন্য কারও সাথে করবো।”
” ঠ্যাং ভেঙে হাতে ধরিয়ে দেবো।”
হেসে দিই আমি।ফোনের ওপাশ থেকে ও হাসে।আমি হাসি খানিকটা মলিন করে বলি,,,
” দেখেছো আমরা কত লাকি?বিয়ের পরেও প্রেম করছি।আচ্ছাহ,যেটার জন্য ফোন করেছিলাম!”
” কী?”
” থাকো তুমি ঢাকা।তো রাত্রে কিভাবে আসলা?”
” বিকালের দিকে ঝগড়া হলো না?তারপরই মেসে যাই আমি।ওয়ারড্রফে তোমার দেওয়া গিফট গুলা দেখে অনেক রাগ হয়।ডিসিশন নেই তোমার কোনো স্মৃতিই রাখবো না।রওনা দিই সন্ধ্যায়।রাত্রে গিয়ে উঠি ছোট ভাইয়ের মেসে।তারপর সেখান থেকে তোমাদের বাসায় যাই।দেয়াল টপকে তোমাদের বাসায় ঢুকি। তোমায় নিচে ডাকি।তুমি আসো আর বাকীটা ইতিহাস..”
অনর্গল কথাগুলো বলে হেসে দেয় ফালাক।ওর হাসি দেখে হাসি আটকে রাখতে পারিনি।হেসে দিই আমিও।সত্যিই ওপরওয়ালা যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
চলবে,,ইনশাআল্লাহ