ভালোবাসব_যে_তোকে পর্ব ১

#ভালোবাসব_যে_তোকে
লেখিকাঃসারা মেহেক

বাসর ঘরে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই চলছে মৌ।গাল দুটো অসম্ভব আকারে ব্যাথা করছে সাথে জ্বলছেও খুব।আবার বাহু দুটো ব্যাথায় নড়াতেও পারছে না সে।
নিজের পছন্দের মানুষের এমন নিষ্ঠুর ব্যবহার যে কোনোমতেই মানতে পারছে না মৌ।কি দোষ ছিলো তার।সে কি বলছিলো যে বিয়ে করো? নাহ বলে নি। কিন্তু সমাজের মানুষের মুখটা বন্ধ করার জন্য এমনটা করতে হলো।
” সব কিছুই যদি স্বাভাবিক হতো,আয়ান ভাইয়া আর আমার বিয়েটা যদি না হতো।তাহলে কতোই না ভালো হতো। অন্ততপক্ষে আমি আয়ান ভাইয়ার কাছে ঘৃনার পাত্র তো হতাম না।আমি দূর থেকেই আয়ান ভাইয়াকে সারাজীবন পছন্দ করে যেতাম। ” এ বলেই আবার কান্না করলো মৌ।
আয়ান ঘুমাচ্ছিলো।মৌ এর কান্নার আওয়াজে তার ঘুমটা ভেঙে যায়।সে একটা ধমক দিয়ে বলে,
“উফ আমার ঘুমটাই ভেঙে দিলি তুই।আমার লাইফটা তো অশান্তিতে ভরে দিয়েছিস আবার যে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দিবি তাও না।আমি যদি এরপর আর কান্না শব্দ শুনেছি তাহলে তুই যে এখন খাটের পাশে পরে আছিস সেটুকুও থাকতে দিবো না। এক ধাক্কা মেরে বারান্দায় দিয়ে আসবো।সারারাত থাকিস ঐখানে।”
আয়ানের এ কথা শুনে মৌ একদম চুপ হয়ে যায়।কিছুক্ষণ পর আবারও কান্না করতে থাকে। কিন্তু আয়ান যাতে এ কান্নার শব্দ না শুনে তাই বালিশ মুখে গুঁজে কান্না করছে সে।আজ অনেক কান্না করছে সে।হয়তো কোনোদিনও এমন কান্না করেনি সে।হয়তো এখন থেকে রোজ রোজ এমন কান্নাই করতে হবে তাকে।……

মৌ আর আয়ানের পরিচয়টা দিয়ে নেই।

মৌ এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠবে।দেখতে মাশাল্লাহ সুন্দরী বেশ। একটু চঞ্চল প্রকৃতির সে।তার একটা বড় ভাই আছে। নাম মাহতাব।মৌ আয়ানকে অনেক পছন্দ করে।কিন্তু ভালোবাসে নাকি জানা নেই তার।

আয়ান জব করে। নিজের বাবার বিজনেস আছে তাও তার ইচ্ছা যে নিজ বিজনেস দাঁড় করাবে।এজন্য ফার্স্ট এ জব করে কিছু টাকা জমাচ্ছে সে।আয়ানের ভালোবাসার মানুষ আছে।মেয়েটির নাম মনা।প্রায় ১ বছরের রিলেশন তাদের। আয়ানের ফেমিলি এ ব্যাপারটা জানে।এইজন্যই আয়ান মৌ কে বিয়ে করতে চায় নি।কিন্তু পরিস্থিতির কবলে পরে বিয়েটা করতেই হয় তাকে।আয়ানের ছোটো বোন আছে।তার নাম অহনা।
মৌ আর অহনা দুইজন বেস্ট ফ্রেন্ড। তাদের ক্লাস নাইন থেকে ফ্রেন্ডশিপ।আবার আয়ান আর মাহতাব একই অফিসে জব করে বলে তাদের দুইজনের মধ্যেও খুব ভালো ফ্রেন্ডশিপ।

মৌ প্রথম থেকেই আয়ানকে খুব লাইক করে, কিন্তু কখনো বলে নি। আর আয়ানও বুঝতে পারেনি।

আজকে এক খারাপ পরিস্থিতিতে তাদের দুজনের বিয়ে হয়। আয়ান যেহেতু মনা কে ভালোবাসে তাই সে এ বিয়েটা মন থেকে মানে নি। কিন্তু মৌ তৌ এ বিয়েটা মানে।কারন সে আয়ানকে খুব পছন্দ করে।

কিছুক্ষণ আগে,
মৌ কে আয়ানের রুমে দিয়ে চলে যায় অহনা।কিছুক্ষণ পর আয়ান রুমে আসে।মৌ কিছু বলতে যাবে তার আগেই কষে এক থাপ্পর দেয় আয়ান। মৌ তো হতবাক। সে ভাবতেই পারেনি আয়ান ভাইয়া এমন করবে।

আয়ান প্রচণ্ড রেগে আছে। সে বললো,”এমন কেনো করলি রে মৌ? নিষেধ করতে পারলি না বিয়ে করতে।তুই জানিস আমি মনা কে ভালোবাসি তারপর ও এমন করলি তুই!!হ্যা সবাইকে বলা হয়েছিলো আমরা বিয়ে করছি।কিন্তু তাই বলে সত্যি বিয়ে করতে হবে!!”

মৌ হালকা কাঁদতে কাঁদতে বললো,”আয়ান ভাইয়া আমার সত্যই কিছুই করার ছিলো না। ”

“চুপ,একদম চুপ। আরেকটাও কথা বলবি না।আমি মনার সাথে এখন দেখা করতে যাচ্ছি।ও এই বিয়ের খবরটা জানে না। আর আমি জানাতেও চাচ্ছি না। কারন ও খুব কষ্ট পাবে।”

এ কথা শুনে মৌ এর ভয়ে কলিজা শুকিয়ে এলো।কারন বাসার কেউ এ কথা জানলে খুব খারাপ হবে।আর আয়ানের আব্বুর কানে এ কথা গেলে যে তিনি আয়ানের কি করবেন তা ভাবতেই মৌ এর গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে।প্রচণ্ড পরিমানে রাগি মানুষ তিনি। কিন্তু মনটা অনেক ভালো।
মৌ গিয়ে তৎক্ষনাৎ আয়ানের হাত ধরে ফেলে আর বলে যে,
“আয়ান ভাইয়া আপনি প্লিজ এখন যাবেন না। বেশ রাত হয়ে গিয়েছে।আর আংকেল জানতে পারলে……”কথা শেষ না হতেই মৌ এর গালে আরেকটা চড় পরলো।

আয়ান মৌ এর বাহু দুটো খুব শক্ত করে ধরে বললো,
“তোর সাহস কি করে হয় আমাকে যেতে মানা করার। আমার আব্বু আমি বকা শুনবো তাতে তোর কি? আর তুই ই বা কেনো আমাকে আটকাবি? কোন অধিকারে?”

মৌ একটু ভয়ার্ত গলায় বললো,”একজন স্ত্রীর অধিকারে।আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে তাই আপনার এমন করা উচিত না।”

“খবরদার আমাকে শিক্ষা দিতে আসবি না।”
এ বলেই আয়ান মৌ কে ধাক্কা দেয়।আর মৌ পাশে থাকা সোফার সাথে জোরে বারি খায়।
এরপর আয়ান বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে।আর মৌ কাদঁতেই থাকে।কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পরে সে।

সকালে আজানের আওয়াজে ঘুম ভাঙে মৌ এর।সে তাড়াতাড়ি উঠে নামাজ আাদায় করে নেয়।মোনাজাতে আল্লাহর কাছে অনেক কাঁদে সে।একে তো কালকে রাতে কান্না করার জন্য চোখ ফুলে গিয়েছে তার।আবার সকালে কেদেঁ আরো অবস্থা খারাপ।

নামায পরে মৌ আয়ানার সামনে গেলো।সে নিজেকে দেখে আঁতকে উঠলো।দু গালে আঙ্গুলের হালকা ছাপ পরে গিয়েছে।সে চিন্তা করছে এটা সবার থকে লুকাবে কীভাবে।সে বসে বসে চিন্তাই করে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ দরজায় অহনা নক করলো।
“মৌ, আম্মু ডাকছে তোকে।”

“হুম আসছি।তুই যা।”

এরপর মৌ একটা শাড়ী পরে মাথায় ঘোমটা টানলো।শাড়ীর আঁচল দিয়ে গাল দুটো এমনভাবে ঢেকে রেখেছে যাতে থাপ্পড়ের দাঁগ গুলো না দেখা যায়।

মৌ গিয়ে আয়ানের আম্মুর রুমে নক করলো।
“আসবো আন্টী?”

ভিতর থকে জবাব এলো,”আয় আয়।তুই আবার নক করছিস কেনো?”

মৌ ভিতরে গিয়ে দেখলো সোফায় আয়ানের আম্মু বসে আছে আর তার পাশে ছোটো একটা টুলে অহনা বসে আসে।আয়ানের আব্বু সকালে হাঁটতে বের হয়েছে।

মৌ এর মাথায় ঘোমটা দেখে অহনা বলে উঠলো,”কি রে মৌ,তুই কি এ বাড়ীতে নতুন নাকি হুম?ঘোমটা টেনে বসে আছিস কেনো? খুল ঘোমটা মাথা থেকে।”

মৌ আমতা আমতা করে বললো,”আরে নাহ তেমন কিছু না।আমি তো আগে তোর বান্ধবী হিসেবে আসতাম কিন্তু এখন তো এ বাড়ীর বউ।তাই ঘোমটা দিয়ে রেখেছি।”

আয়ানের আম্মু বললো,”আরে মেয়ের কান্ড দেখো।তোকে কি আমরা কে বলেছি এভাবে লম্বা ঘোমটা দিতে? আর তোর কি কোনো দেবর আছে নাকি যে এভাবে ঘোমটা দিয়ে আসিছ? আমাদের সাথে তো আসিছ।”

মৌ তো কোনোমতেই রাজি হচ্ছে না মাথার উপর থেকে ঘোমটা সরাতে।কারন এতে থাপ্পড়ের দাগগুলো দেখা যাবে।
হঠাৎ অহনা গিয়ে মৌ এর মাথা থেকে ঘোমটাটা সরিয়ে দেয়।অহনা আর তার আম্মু মৌ এর গালে থাপ্পড়ের দাগ দেখে আঁতকে উঠে।
আয়ানের আম্মু কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
“এএসসব আআমার আআয়ান ককরেছে?”

মৌ কি জবাব দিবে এর… সে মাথা নিচু করে ফেলে।

আয়ানের আম্মু তৎক্ষণাৎ অহনাকে বলে,”এক্ষুনি গিয়ে তোর ভাইয়াকে ডেকে আন,এক্ষুনি।”

অহনা তাড়াতাড়ি গেলো আয়ানকে ডাকতে।এদিকে মৌ চুপচাপ বসে আছে।আর আয়ানের মা তো রাগে ফুঁসছে।তিনি ভাবতেই পারেননি তার ছেলে এমন কিছু করবে।

আয়ান কিছুক্ষণ পর ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে হাজির হলো। “কি ব্যাপার আম্মু এতো সকালে কেনো ডেকেছো?”

আয়ানের আম্মু হুট করে কিছু না বলেই আয়ানের গালে জোরে একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয়।
আয়ান তো পুরাই শকড।কারন তার আম্মু কখনো তাকে এভাবে মারে না।খুব বড় রিজন ছাড়া।আর আজকের রিজনটা ছোটোখাটো রিজন তো না।

আয়ান বিস্ময় ভরা চোখে তার আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছে।

“তোর সাহস কি করে হয় মৌ এর গায়ে হাত তোলার?? কে শিখিয়েছে তোকে এসব!!!”

আয়ান বলে উঠে,”আম্মু মৌকে আমি শিক্ষা দিয়েছি।ও আমাকে বিয়ে করার জন্য রাজি হয় কিভাবে এটা জানার পরও যে আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।”

“ও তোহ তুই এ জন্য মৌ এর গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছিস!!ঐ বেয়াদব মেয়ের জন্য!!”

“আম্মু মনা অনেক ভালো মেয়ে।এতে ওর তো কোনো দোষ নেই।অযথা ওকে বকছো কেনো?”

“মৌ এর ও কোনো দোষ নেই।দুই পরিবারের আর ওর নিজের সম্মান বাঁচানোর জন্য এসব করেছে।”

মৌ আর অহনা নিরব দর্শকের মতো সব দেখছে।

“তাই বলে বিয়েই করে নিবে!! কিছুদিন গেলেই সবাই ভুলে যেতো ঐ সামান্য ঘটনাটা।”

“ভুলতো না রে।এ সমাজ মেয়েদের উপর একটু ময়লা ফেলতে পারলেই খুশি হয়।আচ্ছা মৌ না হয় মানা করেনি কিন্তু তুই ও তো কিছু বলিস নি।কেনো?”

“আম্মু মৌ হলো মেয়ে। এ ঘটনায় আমার দিকে কোনো আঙ্গুল উঠতো না।কিন্তু মৌ এর দিকে সবাই আঙ্গুল উঠাতো।”
এ বলেই আয়ান সেখান থেকে রেগে হনহন করে বেড়িয়ে আসে।
🍁🍀

চলবে?…….
(

1 COMMENT

  1. Next part ta plz Din apu…..R Jodi na diya thakan tahola plz bolun….karon ami golpo ta porta chai….R diya thakla porar part ar link din plz….kothao pachi na next part….plz happy ending daban

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here