#কালো মেঘে রোদ্দুর (পর্ব:12)
♡আরশিয়া জান্নাত
মিসেস রেহানা চুপ করে বসে রইলেন তার সামনে আজাদ সাহেব স্বাভাবিকভাবে চায়ে চুমুক দিচ্ছেন। নিরবতা ভেঙে মিসেস রেহানা বললেন, তোমার বড় ছেলে শেষে কি না অভিনেত্রীকে বিয়ে করতে যাচ্ছে? ঐ নায়িকার সাথে তার নাকি বহুবছরের সম্পর্ক! ও কি জানতোনা আমরা সিনেমা জগতকে কতটা অপছন্দ করি?
তোমার ছেলে তো বাচ্চা খোকা না রেহানা! সে সবটাই বুঝে জানে। তারপরো যখন ওর তাকে পছন্দ হয়েছে আমার কি বলার আছে?
কিছু বলার নেই তোমার?
অবশ্যই নেই একটা ত্রিশ বছরের উপযুক্ত ছেলেকে আমি কি বলবো? সংসার সে করবে আমি বা তুমি না।
এতোদিন যখন মেয়ে দেখছিলাম কিছু বলেনি কেন? তোমার পছন্দের মেয়ের ওখানেও তো কত কাহিনী হলো তখনো তো বলেনি ওর পছন্দের কেউ আছে!
তোমাকে বলেনি রেহানা তবে আমি জানতাম বিষয়টা। শুধু আমিই না বাসার সবাই জানতো তুমি ছাড়া। তুমি এইসব নিয়ে যেমন রিয়েক্ট করো কেউই বলার সাহস করেনি। তাছাড়া তোমার ছেলেও তখন দ্বিধায় ছিল।
তোমরা সবাই জানতে!
হু
বেশ তো সবাই যখন জানো সবাই যখন রাজী এখানে আমি তো কেউ না। আমাকে বলার প্রয়োজনবোধ করেনি কেউ। এখন যার যাকে ইচ্ছে বিয়ে করুক আমি কিছু বলবোনা। অবশ্য বললেও কেউ শুনবেনা।
এভাবে ভেবোনা রেহানা। একটু বুঝতে চেষ্টা করো। সময় পাল্টেছে। ছেলেমেয়েরা বাবা-মায়ের পছন্দেই বিয়ে করবে এই ট্রেডেশন এখন আর নেই।
কে বলেছে নেই? আমাদের ফ্যামিলিতে এখন পর্যন্ত কাউকে দেখেছো নিজের পছন্দে বিয়ে করতে? আমার ভাই-বোনের একটা ছেলেমেয়েও কি অবাধ্য হয়েছে?
সবাই এক না।
মানছি এক না ও পছন্দ করে এনেছে তাও মানলাম। কিন্তু এমন এক মেয়ে যে কিনা সিনেমা করে। হাজারটা লোকে তাকে দেখে কিসব ড্রেস পড়বে। নরপুরুষের সাথে কোমর দুলিয়ে নাচবে,ইটিসপিটিস করবে। তার কার্যকলাপ আমার আত্মীয়স্বজন হতে শুরু করে গ্রামের সবাই টিভিতে দেখবে। আর বলবে এ তো রেহানার ছেলের বৌ! এইসব আমি মেনে নিবো ভাবছো? আমার বাপের বাড়ি হাজী বাড়ি বলে প্রসিদ্ধ। আমাদের ফ্যামিলিতে সবাই পরহেজগার লোক। মারহাম নন মারহাম কত কঠোরভাবে মানে তুমিতো জানোই! আমি সেই বাড়ির মেয়ে হয়ে এমন খোলামেলা মেয়েকে ঘরে তুলবো? অসম্ভব।
তিক্ত সত্য কি জানো রেহানা তোমার ছেলেই কিন্তু মেয়েটাকে প্রথম ভালোবাসার কথা বলেছে। তুমি কঠোরভাবে ইসলাম মেইনটেইন করা ফ্যামিলির মেয়ে হলেও আমার ছেলেমেয়ে কোনোটাই সেই ধাঁচের হয়নি। বলতে পারো এ আমাদেরই ব্যর্থতা। অন্যের মেয়েকে দোষ না দিয়ে নিজের টার দোষ দেখো যদি দোষারোপ করার থাকে। তোমার ছেলে যে অন্য কাউকে বিয়ে করবেনা তার প্রমাণ তো ইতিমধ্যে পেয়েছো। কম মেয়ে দেখোনি এই পর্যন্ত কোথাও কি ওর সম্মতি ছিল? এরপরো কিভাবে আশা রাখো ওর থেকে?
রেহানা হুহু করে কেঁদে উঠলো। আসলেই তো তার পেটে ধরা সন্তান কিভাবে পারলো এমন মেয়েকে ভালোবাসতে? সে তো জানতোই তার পরিবার কেমন মেয়ে পছন্দ করে।
ইসরাত উপন্যাসের বই মেলে রাখলেও ওদিকে তার একটুও মন নেই। বেলকনীতে বসে বাবা-মায়ের কথাবার্তা সবটাই শুনেছে সে। সত্যি বলতে ফারিনকে তার একটুও ভালো লাগেনি। মেয়েটা কেমন যেন স্বার্থপর টাইপ। নিজের পছন্দকে সবসময় প্রায়োরটি দিলেও রাইয়্যানের জন্য এক বিন্দু ছাড় দেয়নি কখনো। ভাইয়া যখন বলেছিল মডেলিং টা না করে অন্য কিছু করতে সে কেমন গর্জে উঠেছিল এটা তার প্যাশন বলে বলে। অথচ ভাইয়া,,,,,
ভালোবাসা আসলেই অদ্ভুত। কেউ কেউ খোলা আকাশে ঘোরার স্বাধীনতা পায় আর কেউ কারাগারে বদ্ধ জীবনযাপন করে!
__________
ঠাকুরগাঁও থেকে ফেরার পরপরই মোহনার সঙ্গে দেখা করতে এলো রাফি। মোহনা তাকে দেখেই হেসে বললো, ভবঘুরে সাহেব ফিরলেন তাহলে!
এবার একসঙ্গে অনেক জায়গায় ঘুরেছি তাই এতোদিন লেগেছে।
হুম সে তো বুঝতেই পেরেছি আপনিতো আবার ট্যুরে গেলে নেটওয়ার্কে থাকেন না। যেখানে গেছেন তার মাঝে বিভোর থাকেন সম্পূর্ণরূপে।
রাফি মাথা চুলকে বললো, এজন্যই গার্লফ্রেন্ড জোটেনা।
ট্রাই করেছিলেন?
হ্যাঁ। একটা মেয়ের সঙ্গে কিছুদিন কথাবার্তা হয়েছিল। আমি তখন সিলেট দুই সপ্তাহের ট্যুরে গেছি। এসে শুনি সে অন্যজনের সঙ্গে রিলেশনে গেছে। আমি জিজ্ঞাসা করতেই বলেছিল যে ছেলে গফের চেয়ে ট্যুর নিয়ে বেশি সিরিয়াস তার সঙ্গে থাকা অসম্ভব! তার উপর আমি ট্যুরে গেলে একেবারেই বিচ্ছিন্ন থাকি এটা আসলে কেউই মানতে পারবেনা।
হাহাহা আপনি আসলেই খুব অদ্ভুত। তা কেমন ঘুরলেন?
বেশ ভালো। আপনি ভালো আছেন তো?
হ্যাঁ। চলেন কোথাও বসি।
আমার পকেট কিন্তু একদম ফাঁকা। কোথাও বসলে আপনাকেই পেমেন্ট করতে হবে।
এইটুকু কমনসেন্স আমার আছে মিস্টার।
আন্টি আর পিহু ভালো আছে?
হ্যাঁ। আপনার বাসার সবাই?
ভালো। নতুন অফিসে কেমন লাগছে?
খারাপ না। তবে সবাই একটু বেশিই স্মার্ট একটু অস্বস্তি হয়।
আপনিও কিন্তু খুব স্মার্ট মিস মোহনা।
আপনি বাড়িয়ে বলছেন
মোটেই না আমি কখনোই বাড়িয়ে বলিনা। আচ্ছা একটা কথা বলি?
আমাদের সম্পর্কটা কি এখনো ফর্মালিটির? কিছু বলার আগে পারমিশন নেওয়ার কি আছে?
সেটা ভেবে বলিনি।
বলুন কি বলবেন?
না থাক কিছু না
আপনি সবসময় এমন করেন। এটা কিন্তু বিরক্তিকর।
স্যরি!
মোহনা ফুচকা খাওয়ায় মন দিলো। আর ছেলেটা তাকিয়ে দেখতে লাগলো অল্পতে রেগে লাল হওয়া মেয়েটাকে।
।
।
আপু শুনেছিস রাইয়্যান ভাইয়ার বিয়ে এই সোমবার।
তোহ আমি কি করবো?
তুই অবাক হলিনা?
নাহ। অবাক হবার কি আছে? সে তো আমার বফ না যে বিয়ে করবে শুনে অবাক হবো! তাছাড়া যাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন তার সঙ্গেই শেষ পর্যন্ত হচ্ছে জেনে ভালো লেগেছে।
তুই জানলি কি করে?
রাইয়্যান সাহেব দেখা করেছিলেন। ইনভাইটও করলো।
ওহ।
তোকে নিশ্চয়ই ইলহাম বলেছে?
হ্যাঁ।
পিহু বিয়ে করবি?
মানে কি?
মানে কিছু না। তোর যদি কাউকে পছন্দ হয় কিংবা বিয়ে করতে চাস আমাকে বলিস।
তুই বিয়ে করবিনা আপু? আমি জব বা টিউশন করবো তুই নিশ্চিন্তে বিয়ে করে সংসার কর।
তোকে বলেছিলাম না একটা হাঁদারাম আছে! সে ছয়মাসেও বলতে পারেনাই সে যে আমাকে পছন্দ করে।
হয়তো সে তোর সাথে নিজের ম্যাচ পাচ্ছেনা। মানে তুই এখন উনার চেয়ে বেটার জব করিস। হয়তো সেজন্য কনফিডেন্স পাচ্ছেনা। এক কাজ কর তুই বরং প্রপোজ কর।
আমি? একজনকে বলে রিজেক্ট হয়েছি এবারো যদি হই? দেখা গেল সে আসলে ওরকম কিছু ভাবছেনা?
দেখ একটা মানুষ তোকে হুদাই এতোদিন ফলো করেনি। সামান্য একটা ফুড ডেলিভারির কাস্টমারকে কেউ মনে রাখে? তারপর তোকে কতদিন নক করছে, তুই বলেছিস তোকে দেখলেই সে নার্ভাস হয়ে যায়। এসব কিন্তু পজিটিভ সিগন্যাল। আর শোন আপু তুই তো টেস্ট করেছিস আর সেই টেস্টে সে হাই স্কোরে পাশ করেছে। তাই আমার মনে হয় তোর উচিত সরাসরি বলে দেখা।
আমি চাইছি উনি বলুক। অন্তত বলতে পারমু কেউ একজন প্রপোজ করছিল!!
হাহাহাহাহা। তাহলে ওয়েট করতে থাক।
হাহ আমার ওয়েটিং শেষ হবেনা এই জীবনে!
চলবে,,,