#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_৫৯
#Sharmin_akter_borsha [লেখিকা]
“কেমন লাগবে তোমার অভ্র? যখন তুমি জানতে পারবে তোমারই বিয়ের আসরে তোমার হবু বউকে বিয়ে করে বউ বানিয়ে ফেলেছি আমি আদ্রিক। তখন তোমার চেহারাটা জাস্ট দেখার মতো হবে। মনে আছে সেদিনের কথা? আমারই বিয়ের দিনে আমাকে কিডনেপ করে আমার বিয়ে ভঙ্গ করেছিলে? আজ আমি ঠিক তাই করেছি তোমার সাথে। তোমারই খেলায় তোমারই অস্ত্র দ্বারা তোমাকে বাজিমাত করে দিয়েছি। আহহ, হিয়া! তোমার জীবনের এক মাত্র কর্তব্য তাকে ব্যবহার করে, বিয়ে বাড়ি থেকে তোমাকে সরিয়ে দিয়েছি আর তোমার বদলে বিয়ে করবো আমি। তোমার উপর নজর ছিলো আমার বহুদিন আগে থেকেই শুধু একটা সুযোগ খুঁজছিলাম। আর সে সুযোগ টা তুমি নিজ থেকে আমাকে দিয়েছো। সেদিন শপিংমলে তোমার সাথে হিয়াকে আমি দেখেছিলাম। এবং সেদিনের সব কথাও আমি শুনি। তারপর তুমি আসলে বাড়িতে আছো কি না সেটাই যাচাই করতে গিয়েছিলাম তোমাদের বাড়ির ল্যাম্পপোস্টের নিচে তোমাকে দেখতে গিয়েছিলাম।
কিন্তু তুমি মাত্রারিতিক্ত চালাক হওয়ায় আমাকে না দেখেও সন্দেহ করো ওখানে কেউ আছে। সুযোগ বুঝে চলে যাই তোমার ফ্লাটে হিয়াকে যেখানে রেখেছো। তোমার সকল গার্ডদের মে’রে সেখান থেকে হিয়াকে তুলে নিয়ে আসি তারপর দুপুরে তাকে আহত করে রাস্তায় ফেলে দেই। সেখান থেকে সোজা তোমাদের বাড়ি চলে আসি। আর আমি আসতে আসতে তোমার কাছে হিয়ার খবর টাও পৌঁছে যায়। তুমি ভেবেছিলে যাবে আর আসবে কিন্তু তুমি এটা ভাবোনি এসব কিছু আমার প্লান। একবার বাড়ি থেকে বের হলে যে আর সহজে ফিরতে পারবে না। এখন মি.অভ্র তুমি তোমার কর্তব্য সামলাতে গিয়ে যে ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছো চিরকালের জন্য আর আমি আমার ভালোবাসা ফিরে পাবো চিরজীবনের জন্য একেই বলে যেমন কর্ম তেমন ফল। ’
মি. সাগর খানের গলা জড়িয়ে ধরে মনে মনে কথাগুলো উপলব্ধি করে এক কুৎসিত হাসি দিলো আদ্রিক। তৎপর সকলে ঘুরে স্টেজের দিকে এগিয়ে গেলো। বর্ষাকে ও জানাতে হবে তাদের সিদ্ধান্ত। তবে স্টেজের কাছে আসতেই সকলের কপালে চামড়া ভাজ পরলো। স্টেজের সোফার উপরে শুধু বর্ষার মাথার ওড়না টা রয়েছে কিন্তু বর্ষা কোথাও নেই। ওড়না খুলে রেখে কোথায় গেছে? সকলে হন্তদন্ত হয়ে বর্ষাকে পুরো কমিউনিটি সেন্টার খুঁজতে লাগলো কিন্তু বর্ষা কোথাও নেই। কেউ কোথাও পেলো না বর্ষাকে।
সব কিছুই প্লান মাফিক সহি যাচ্ছিল হঠাৎ বর্ষা কোথায় চলে গেলো? ভেবেই রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে দেয়ালে সর্ব শক্তি দিয়ে পাঞ্চ মারলো আদ্রিক।
__________
মেইন রোডে একটার পর একটা গাড়ি শা শা শব্দ করে চলে যাচ্ছে। রাতের শহরটা বেশ সুন্দর লাগছে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্ট গুলো তে আলো জ্বলছে। গাড়ির হেডলাইটে আবছা হলুদ আলো জ্বলছে। রাস্তার পাশে দোকান গুলো তে ও আলো জ্বলছে। শুধু বর্ষার ভেতরটা আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। একা একা হেলতে দুলতে রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। এমন ভাবে হাঁটছে পেছন থেকে যে কেউই দেখলে বলবে বর্ষা ড্রিংকস করেছে সে মাতালের মতো হাঁটছে। কিন্তু তেমন কোনো কিছুই না শুধু মনটা ভেঙে গুড়িয়ে গেছে।
পেছন থেকে বর্ষার হাত ধরে কেউ একজন হিচকা টান মারলো। বর্ষা আনমনে হাঁটতে হাঁটতে খানিক মেইন রোডে নেমে পরেছিল আরেকটু হলেই একটা গাড়ি ধাক্কা মেরে চলে যেতো।
বর্ষা অপ্রস্তুত হয়ে পরে আচমকা টান মারায় নিজের সজ্ঞানে ফিরে আসে। মুন্নি ইতস্ততভাবে বলে উঠল, ‘ পাগল হয়ে গেছিস তুই? আদ্রিক কি না কি বলল তা সত্য মনে করে রাস্তায় চলে আসছিস নিজের জীবন দিতে? ’
বর্ষা মুন্নির দিকে তাকিয়ে ক্ষীণকন্ঠে বলল, ‘ আমি মর’তে আসিনি তাপ্পি! ’
‘আরেকটু হলেই তো গাড়ির নিচে চাপা পরতি। কোন দিকে তাকিয়ে হাঁটছিলি তুই? হুঁশশ কোথায় তোর? ’
বর্ষার দুই বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে বলল মুন্নি। বর্ষা মুন্নির হাত ছাড়িয়ে দিয়ে বলল, “ হাত ছাঁড়ো আমি বাড়ি যাবো! ”
চোখের পানি আঁটকে রাখার যথার্থ চেষ্টা করছে বর্ষা। মুন্নির হাত ছাড়িয়ে বর্ষা যেতে নিলে মুন্নি বর্ষার হাত ধরে নেয় তখনই ধাতস্থ কন্ঠে বর্ষার উদ্দেশ্য মুন্নি বলল, ‘ বর্ষা দাঁড়া! তোর হাতের পালস্ চেক করতে হবে। ’
বর্ষা মুন্নির দিকে তাকিয়ে শালিনকন্ঠে বলল, ‘ কেনো? আমার কিছু হয়নি আমি ঠিক আছি। ’
মুন্নি রাগী গলায় বলল, ‘ একটু চুপ করে দাঁড়া আমাকে দেখতে দে। ’
বর্ষা পাথরের মতো স্তব্ধ দাঁড়িয়ে রইল। সেকেন্ড কয়েক হাত ধরে রাখে মুন্নি। নিমিষেই চোখ জোড়া বড়সড় করে বর্ষার দিকে তাকায়। শুকনো ঢোক গিলে হাত ছেড়ে দেয় সে তারপর বর্ষার দিকে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে, “ বর্ষা তুতত, তুই প্রেগন্যান্ট! ”
বর্ষার চোখ জোড়া চরকগাছ। মুন্নির কথাটা কান পর্যন্ত যেতেই বর্ষা নির্বাক বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে আসছে তার নিমিষেই দুনিয়া উলট পালট হয়ে গেলো। যে খবরটা সে খুশি ও আনন্দের সাথে উপভোগ করতে পারতো আজ সে খবর টা কে কান্নায় ডুবিয়ে দিয়েছে। দুইহাত পেটের উপর রাখে বর্ষা। মুন্নি বর্ষার কাঁধের উপর হাত রাখার সাথে সাথেই বর্ষা হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে এক পর্যায়ে কাঁদতে কাঁদতে হাঁটু ভেঙে মাটিতে বসে পরে। বর্ষার কান্নার আওয়াজে আশেপাশের লোকেরা তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মুন্নি দুইহাতে বর্ষাকে সামলানোর চেষ্টা করছে। কয়েকজন সহৃদয়বান মহিলাগন এগিয়ে আসেন। মেয়েটা কেনো কাঁদছে তা জানার জন্য মুন্নি তাদেরকে শুধু বলল, ‘ আপনারা প্লিজ আমাদের জন্য একটা গাড়ি ঢেকে দিবেন, আমার বোন অসুস্থ ওকে হাসপাতালে নিতে হবে। ’
একজন পুরুষ একটা গাড়ি দাঁড় করালেন। মুন্নি বর্ষাকে ধরে গাড়িতে উঠাইয়ে বসালো। গাড়ি স্টার্ট হলো কিন্তু বর্ষার কান্না এখনো থামেনি। পেটে হাত দিয়ে অনবরত কেঁদে যাচ্ছে। একহাত দিয়ে বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে আছে মুন্নি অন্য হাত দিয়ে বর্ষার একহাত শক্ত করে ধরে রাখছে। মুন্নি বর্ষার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। সে বর্ষার কাছে জানতে চায়, ‘ বাচ্চা কিভাবে আসলো বিয়ের আগে? ’
বর্ষা মুন্নিকে দুইহাতে জড়িয়ে ধরে। কিয়ৎক্ষণ নিরব থেকে বলতে লাগে অতীতের সে সব কথা অভ্রর সাথে আগে বিয়ে হয়েছে এবং কিভাবে কি হয়েছে সব কিছু কান্না জড়ানো কন্ঠে বলল বর্ষা। মুন্নি শানিতকন্ঠে বলল, ‘ এইসব কথা বাড়ির সকলকে আগে কেনো বলিসনি? ’
বর্ষা আর কিছুই বলতে পারলো না দুই চোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরছে তার। এই মূহুর্তে এত কিছু জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে না ভেবে আর কোনো প্রশ্ন করে না মুন্নি।
______________
বাড়িতে আসার পর, মুন্নি তার চাচাকে কল দিয়ে বলে দেয়, বর্ষা বাড়িতে চলে আসছে এবং মুন্নি বর্ষার সাথে এসেছে।
তারাও দেরি না করে তারাহুরো করে বাড়িতে চলে আসে। বাড়িতে এসেও শান্তি নেই সকলে বর্ষাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বর্ষার দুইপাশে তার বাবা মা বসে আছে। বর্ষা সে তো নিজের মধ্যেই নেই তার একবার অভ্রর কথা মনে পরছে তো আরেকবার পেটের মধ্যে ছোট বাচ্চাটার কথা মনে পরছে।
‘যার কথা’ সে আর মুন্নি ছাড়া আর কেউ জানে না৷ আর সবাইকে জানাবেই বা কোন মুখে? এ কথা জানালে যে সকলে থুথু ফেলবে। কেউ তো আর বিশ্বাস করবে না বাচ্চা টা অবৈধ বা জারজ সন্তান নয়। তাদের যে বিয়ে হয়েছিল সেটাও তো কেউ জানে না। কি বলবে সবাইকে? আর কি করবে এখন এই মূহুর্তে? বর্ষার যে এখন তার অভ্রকে তার পাশে খুব প্রয়োজন।
বর্ষার বাবা বর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বিস্মিত হয়ে বলল, ‘ মা’রে সমাজের লোকেরা নানান কথা বলবে। আমরা সকলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোর সাথে আদ্রিকের বিয়ে দেওয়ার৷ ’
বাবার কথা কান অব্ধি যেতেই একরাশ বিস্ময় নিয়ে বর্ষা তার বাবার দিকে তাকালো পরক্ষণে রাগী গলায় বলল, ‘ তোমরা কিভাবে ভাবলে বাবা আমি অভ্রর জায়গায় আদ্রিককে বিয়ে করে নেবো। এটা অসম্ভব কোনো ভাবেই সম্ভব নয়৷ আদ্রিক তো দূরে থাক আমি অভ্র কে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না। সারাজীবন এমনি থেকে যাবো তবুও এই বর্ষা অভ্রর ছাড়া কারো হবে না। তোমরা এখন আমার রুম থেকে চলে যাও। এই নিয়ে আর কেউ কোনো কথা প্লিজ বলো না। আমার কোনো কিছু ভালো লাগছে না। আমাকে একা ছেড়ে দাও প্লিজ। ’
ব্যর্থ হয়ে বর্ষার রুম থেকে সকলে বের হয়ে চলে গেলো। মুন্নি যাওয়ার আগে বলল, ‘ ভেবে দেখ কি করবি। বাচ্চা টা রাখবি নাকি না। ’ বলে সে নিজেও চলে গেলো।
বন্ধ রুমে বাতি নিভিয়ে একা বসে আছে বর্ষা। তার কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছে না সে এই মূহুর্তে কি সিদ্ধান্ত নিবে বসে বসে ভাববে, অভ্র কেনো করলো তার সাথে এমন কি কারণ ছিলো তার এভাবে চলে যাওয়ার পেছনে? তাহলে সত্যি কি এটাই অভ্র কোনোদিন তাকে ভালোবাসেনি। সময়ের সাথে সাথে শুধু অভিনয় করে গেছে। সব কিছুই কি তার অভিনয় ছিল? তাহলে অভ্র আমাকে নয় হিয়াকে ভালোবাসে? আমি তার কাছে শুধু মাত্র একটা মোহরা ছিলাম? ’
অন্য দিকে বর্ষার বাবা আদ্রিককে ফোন করে জানিয়ে দেন বর্ষা তাকে বিয়ে করতে রাজি নয়। আদ্রিক রাগে চোয়াল শক্ত করে মোবাইলটা ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। মাত্রারিতিক্ত রাগ ও ক্ষোভে গজগজ করে বলে, ‘ এত কিছু করেও খাঁচার পাখি খাঁচাতে পাখি বন্ধি করতে পারলাম না। কি আছে ওই অভ্রর মধ্যে যা আমার মধ্যে নেই? কেনো সবাই শুধু তাকেই ভালোবাসে আর কেনো সবাই শুধু তাকেই চায়? ’
.
.
.
দুইটা দিন পাড় হয়ে গেলো অভ্রর এখনো কোনো খবর নেই। বর্ষা কয়েক ঘন্টা পর পর অভ্রর রুমে এসে একা বসে থাকে। অভ্রর রুমে এসে বসে থাকলে তার আত্মা শান্তি পায় এ রুমে যে তার অভ্র বসবাস করতো তার অভ্রর স্পর্শ গন্ধ সব রয়েছে এ রুমের আনাচে-কানাচেতে এখানে আসছে বুক ভরে শ্বাস নেয় সে এক প্রশান্তি অনুভব করে বর্ষা। কিন্তু যত সময় যাচ্ছে ততই তার মন দূর্বল হয়ে পরছে। অভ্রর ফোন এখনো বন্ধ, না জানি সে কোথায় ও কোন অবস্থা’তে আছে? রুমের মধ্যে দৌঁড়ে আসলো মরিয়ম। বিছানার এক কোণায় বসে ছিল বর্ষা। মরিয়ম বর্ষার কাছে গিয়ে বলল, ‘ বর্ষা আপু তোমাকে মুন্নি আপু তার রুমে ডেকেছে। ’
‘ তুই যা আমি আসছি ’ বলল বর্ষা।
মিনিট পাঁচেক পর বর্ষা মুন্নির রুমে গেলো। মুন্নি বর্ষাকে বিছানার উপর বসতে বলল। দুইটা ঔষধ বর্ষার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘ একটা বাচ্চা সুস্থ রাখার ঔষধ আরেকটা বাচ্চা নষ্ট হওয়ার। এখন তুই ডিসিশন নে তুই কি করবি। বাচ্চা রাখবি কি, রাখবি না। আমি তোর প্রেগন্যান্সির খবর গোপন রাখবো এটা তোকে প্রমিজ করছি। যা করবি তারাতাড়ি কর আমি এখন আসছি। তাছাড়া জানিসই তো আমাকে কাল চলে যেতে হবে। ’
বলে মুন্নি বর্ষার সামনে থেকে উঠে চলে গেলো। রুমের মধ্যে একা বর্ষা বসে আছে চোখের সামনে দুইটা মেডিসিন যেটা ঠিক করবে তার বাচ্চার আগামী দিনের ভবিষ্যত। কি করবে এই পরিস্থিতিতে বর্ষা? একবার বাচ্চা নষ্ট হওয়ার ঔষধ টার দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার অন্য ঔষধ টার দিকে তাকাচ্ছে। বড়ই দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে সে। আজ যদি অভ্র তার পাশে থাকতো তাহলে হয়তো তাকে এ রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন কখনো হতে হতো না।
কি করবে এখন বর্ষা কি করা উচিত তার?
#অবন্তর_আসক্তি
#লেখিকা: শারমিন আক্তার বর্ষা
#পর্ব____৬০
বর্ষার নিশ্চল চাহনি আয়নার দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে, কথা বলার বাক-শক্তি কিয়ৎক্ষণের জন্য হারিয়ে ফেলেছে। বিছানার ডান পাশেই ডেসিনটেবিল। বর্ষা বিছানার যে জায়গা টায় বসে আছে সেখান থেকে আয়নাতে তার অর্ধেক প্রতিবিম্ব দেখা যায়।
ক্ষীণচোখে তাকালো বাচ্চা নষ্ট হওয়ার ঔষধ টার দিকে কিয়ৎক্ষণ পর হাত বাড়িয়ে হাতের মধ্যে ঔষধটা নিয়ে মুঠি বন্ধ করে শুকনো এক ঢোক গিলে বিছানা থেকে নামলো। এগিয়ে যায় সামনের দিকে, বিছানার পাশে টেবিলের উপর রাখা পানি ভরা বোতল, বর্ষা বোতল টা হাতে নেয়। ঔষধটা মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে ঢোকে ঢোকে পুরো বোতলের পানি পান করে নেয়। বোতলটা হাত থেকে সাথে সাথে ফ্লোরে পরে একটা শব্দ তুলে।
বর্ষা হাঁটু ভাজ করে মাটিতে বসে পরে। দুই হাঁটুর মধ্যে মাথা রেখে ঢুকে ঢুকে কেঁদে উঠে৷ কি হয়ে গেলো তার সাথে এটা তো সে কল্পনাও করেনি।
দু’ঘন্টা ধরে পেটে ব্যাথা সহ্য করছে বর্ষা। রাতে হাল্কা কিছু খাবার খাওয়ার পরপরই হঠাৎ করে পেটে ব্যাথা শুরু হয়। সেই থেকে বিছানায় শুয়ে আছে। চোখের কার্নিশে অশ্রুকণা জড় হয়েছে। কয়েক মাস আগের কথা খুব করে মনে পরে গেলো তার। এর আগেও তো একবার পেটে ব্যাথা হয়েছিল। তখন তো সারাক্ষণ অভ্র তার পাশে বসে ছিল। আর আজ সে রকম ব্যাথা আবারও হয়েছে কিন্তু পাশে বসে থাকা মানুষ টা আর নেই।
পরদিন সকালে-
মুন্নি বাড়ির সকলের কাছ থেকে বিদায় নেয়। কিন্তু কোথাও বর্ষা কে না দেখে তার রুমের দিকে পা বাড়ায়। মুন্নির পিছু পিছু বাকিরাও আসে কিন্তু বর্ষার রুমে এসে তো চরম ভাবে অবাক হয় সবাই। প্রশ্নবাচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বর্ষার বাবা বলে উঠল, ‘ বর্ষা তুমি লাগেজ কেনো গুছিয়েছো, কোথায় যাচ্ছো তুমি? ’
বর্ষা লাগেজের চেন লাগাতে লাগাতে বলল, ‘ আমিও মুন্নি আপুর সাথে যাচ্ছি। এখানে থাকতে আমার অস্বস্তি হচ্ছে আমি থাকতে পারছি না এখানে। এমন কোথাও যাওয়া প্রয়োজন যেখানে গেলে অন্তত আমি স্বস্তি পাবো। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি মুন্নি আপুর সাথে যাবো। প্লিজ কেউ বাঁধা দিও না। ’
সাগর খান মুন্নির উদ্দেশ্য জানতে চেয়ে বললেন, ‘ মুন্নি, বর্ষা তোমার সাথে যাবে তুমি আগে কেন বলোনি? ’
মুন্নি আমতা আমতা করে বলল, ‘ চাচ্চু আমি নিজেই তো জানতাম না। তোমাকে কিভাবে বলবো?’
বর্ষার বাবা মেয়ের ভালোর কথা চিন্তা করে যেতে বলেন এবং তিনি এটাও বলেন কিছুদিন পর তিনি নিজে গিয়ে বর্ষাকে সাথে করে নিয়ে আসবে। আর মুন্নিকেও দেখে আসবে।
কিন্তু বর্ষা রাজি হলো না সে বলল, কোনো প্রয়োজন নেই তোমাদের কারো যাওয়ার। আমি এ বাড়িতে আর ফিরবো না। আমি কোথায় আছি এ বিষয়ে কেউ জানতে চাইলে কাউকে বলবে না। আমি একান্তই একা থাকতে চাই। সব কিছু থেকে নিজেকে বরখাস্ত করে অচেনা এক জায়গায় নিজে নতুন করে বসবাস করতে চাই। সেখানে আমার অতীতের কোনো ছায়া আমি চাই না। ইচ্ছে হলে মাঝেমধ্যে আমি কল দিয়ে তোমাদের খবর নেবো। কিন্তু তোমরা কেউ আমার সাথে কনটাক্ট করার চেষ্টা অব্ধি করবে না। ’
বলে বর্ষা সকলের সামনে থেকে লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে গেলো। তার পিছু পিছু মুন্নি ও বের হয়৷ বাড়ির বাহিরে হাসপাতালের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে বাকি চারজন আগে থেকেই গাড়িতে বসে আছে এখন শুধু মুন্নির যাওয়ার অপেক্ষা। মুন্নি গেলে তারা তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়া দিবে। সকলের থেকে আরও একবার বিদায় নিয়ে গাড়ি উঠল বর্ষা মুন্নি।
ফাঁকা রাস্তায় তীব্র গতিতে গাড়ি চলছে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে বর্ষা।
মুন্নি বর্ষার কাঁধে হাত দিয়ে বলল, “ তুই সিইওর তো বর্ষা? ভেবে নিয়েছিস ভালো করে কি করতে চাচ্ছিস তুই? ’
বর্ষা ছোট্ট করে বলল, ‘ হুম! ’
______________🌸
দুইদিন আগে, ♠
হাসপাতালের বেডে অন্তিম নিঃশ্বাস ফেলছে আলভি। সে হচ্ছে অভ্রর ডানহাত যাকে ছাড়া অভ্র এক মিনিটও চলতে পারে না। সব কাজের পূর্বে অভ্র আলভিকে খুঁজে। আলভিকে ছাড়া ও তার অনুপস্থিতিতে অভ্র কোনো সিদ্ধান্তও নেয় না। যে কোনো বড় ডিসিশনে আলভির মন্তব্য অভ্রর কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
শুনশান রাস্তায় অভ্রর দিকে ধেয়ে আসছে একটা গুলি। আলভি অভ্রকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। আর নিজে অভ্রর জায়গায় দাঁড়িয়ে পরে গুলিটা এসে আলভির বুক ঝাঁঝরা করে দেয়। চোখের পলকে আলভি মাটিতে পরে যায়। ধুলো বালি রাস্তার মাঝখানে পরে রয় আলভির দেহ। বুক থেকে রক্ত গলগলিয়ে পরছে। অভ্র ছুটে গিয়ে আলভির মাথা উঠিয়ে নিজের কোলে রাখে। আলভি আমতা আমতা করে কিছু বলার চেষ্টা করে কিন্তু বলতে পারে না। অভ্রর সামনে চার থেকে পাঁচ জন লোক এসে দাঁড়ায় ও তাদের দু’জনকে কভার করে নেয়। মানুষগুলো অদ্ভুত পোশাক পরা তারাও সামনে থাকা দু’জন লোকের শরীরে গুলি চালায়। গুলি অভ্রর গায়ে নয় অন্য কারো গায়ে লেগেছে দেখে তারাও ছুটে পালিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু পালাতে পারেনি। তার আগেই পেছন থেকে গুলি লেগে মাটিতে পরে যায়। দুইদিকে শুধু জঙ্গল বড় বড় গাছ আর মাঝখান দিয়ে কাঁচা রাস্তা। অভ্র একজনকে বলল, গাড়ি নিয়ে আসো।
গাড়ি আনা হলে আলভিকে নিয়ে অভ্র গাড়িতে উঠে। যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে যেতে হবে।
অভ্র আলভির গালে হাত দিয়ে তাকে ডাকছে। সে শুধু দুই চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে। অভ্রর বিয়ের শেরওয়ানি রক্তে চিপচিপে হয়ে গেছে দু’হাতে আলভির রক্ত লাল হয়ে গেছে।
হাসপাতালে পৌঁছালে আলভিকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। দু’ঘন্টা পর আইসিইউ থেকে ডাক্তার বের হয়ে বলেন, গুলি তারা বের করেছেন কিন্তু পেসেন্টের অবস্থা খুবই খারাপ। তার বাঁচার চান্স খুব কম।
সে কথা শুনে অভ্র ডাক্তারের কলার ধরে নেয়। আর বলতে লাগে, যে কোনো কিছুর মূল্যে আলভিকে সুস্থ করে দেন। ওর কিছু হলে আপনি বাঁচবেন না।
নিহান অভ্রকে ধরে অন্য দিকে নিয়ে গিয়ে বলল, শান্ত হো ভাই ভুলে যাস না এটা একটা হাসপাতাল আর এখানে আলভির সাথে সাথে হিয়া ও এডমিট আছে।
অভ্র ভারী নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘ হুম! আমার মাথা ঠিক ছিলো না সরি। বাই দ্য ওয়ে, হিয়ার এখন কি অবস্থা জ্ঞান ফিরেছে ওর? ডাক্তার কি বলছে? ’
নিহান বলল, ‘ আলহামদুলিল্লাহ কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। মনে হচ্ছে তারাতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে কিন্তু এখনো জ্ঞান ফিরে আসেনি। ’
অভ্র একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলল, ‘ বলেছিলাম ফ্লাট থেকে বের না হতে যদি কোনো কথা শুনে। মেয়েরা হয়ই এমন নিজের মনমানি করে আর পুরুষের হয় যত জ্বালা। ’
নিহান ফের বলল, ‘ অভ্র আজ না তোর বিয়ে! তুই চলে যা আমরা আছি তো এখানে তাছাড়া ভাবি হয়তো তোর জন্য অপেক্ষা করছে। ’
অভ্র নিহানের কাঁধের উপর হাত রেখে দুইটা চাপড় দিয়ে বলল, ‘ হুম ঠিক বলেছিস। আমি এখন আসছি কোনো ইমারজেন্সি হলে আমাকে খবর দিস। ’
হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার আগে অভ্র তিন্নিকে কল দিয়ে ওখানকার অবস্থা জানার জন্য শেরওয়ানির পকেটে হাত দিয়ে ফোন খুঁজছে, কিন্তু পকেটে হাত দিয়ে ফোন পেলো না। দুই আঙুল কপালে রেখে স্লাইড করতে কারতে ভাবতে লাগলো, ফোনটা হয়তো মারামারি করার সময় ওই জঙ্গলের আশে পাশে কোথাও পরে গেছে। অভ্র নিজের শরীরেও অনেক আঘাত পেয়েছে তা দেখে একজন ডাক্তার এগিয়ে এসে বলল, আপনি নিজেও আহত চলুন আমার সাথে আপনাকে ব্যান্ডেজ করে দেই।
অভ্র আর না করতে পারলো না সে চলে গেলো ডাক্তারের সাথে। ব্যান্ডেজ করা হয়ে গেলে নিহান অভ্রর কেবিনে আসে আর বলে, হিয়ার জ্ঞান ফিরেছে।
হিয়ার সাথে দেখা করার জন্য হিয়ার কেবিনে ঢুকে। হিয়া অভ্রর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অভ্র হিয়ার দিকে এক নজর তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয় আর নিহানের উদ্দেশ্য বলে, ‘ হিয়া সুস্থ হয়ে গেলে ওকে ওর মামার বাড়ি পাঠিয়ে দিও। আজ থেকে হিয়ার কোনো দায়িত্ব আমার নয়। ‘
বলেই অভ্র কেবিন থেকে বের হয়। অভ্রর যেতেই হিয়া শব্দ করে কান্না শুরু করে দেয়। বাহিরে আসতেই অভ্র নিহানের উদ্দেশ্য আবারও বলল, ‘ তোর ফোনটা দেঁতো আমার ফোন হয়তো কোথাও পরে গেছে। বাড়িতে একটা ফোন করা প্রয়োজন! ’
নিহান কিছু না বলে ওর ফোন অভ্রর দিকে বাড়িয়ে দিলো, ফোনটা হাতে নিতে যাবে তখনই অভ্র দেখল দুজন গার্ড ওদের দিকে দৌঁড়ে আসছে। অভ্র ভ্রু কুঞ্চিত করে তাদের দিকে এগিয়ে গেলো, তারা হন্ত দন্ত হয়ে বলল, বস আলভি স্যার আর নেই।
অভ্র তাদের কথা শুনে দৌঁড়ে আলভির কেবিনের দিকে গেলো সাথে নিহান ও আসলো। হাসপাতালের বেডের উপর সাদা চাদরে মুড়ানো আলভির নিস্তেজ দেহ পরে আছে। মিনিট খানেকের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় অভ্র।
আলভির শেষ কাজ অভ্র নিজে করতে চায়। বলে হাসপাতাল থেকে অভ্র আলভিকে লাশবাহী ফ্রিজ গাড়ি করে আলভির গ্রামের বাড়ি নিয়ে যায়। সেখানেই আলভির দাফনের কাজকর্ম শেষ হয়। এক মাত্র ছেলেকে হারিয়ে আলভির বাবা মা ও ছন্নছাড়া হয়ে যায়। অভ্র তাদের পাশে বসে তাদেরকে সান্ত্বনা দেয়। এদিকে অভ্রর মাথা থেকে বিয়ে বর্ষা সব কিছুই বেরিয়ে যায়। ফিরে আসতে চেয়েও ফিরে আসতে পারেনি অভ্র।
শহরে ফিরে অভ্র জানতে পারলো পরিবারের সকলে আদ্রিকের সাথে বর্ষার বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তখন নিজের মধ্যে নিজে সে গুঙিয়ে ম’রে। ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণা খুব বেদনা দ্বায়ক। সে ভেবেছিল বিয়েটা বুঝি হয়ে গেছে। তাই আর পরে বাড়ি ফিরে আসেনি আর না কারো সাথে কোনো যোগাযোগ করেছে। দুইদিন পরে জানতে পারে বর্ষা বিয়েতে রাজি হয়নি৷ তাই অভ্র বাড়ি ফিরবে ভাবে তখন মুরাদ অভ্রকে জানায়, বর্ষা মুন্নির সাথে কোথাও চলে গেছে। এবং সে তোমার সম্পর্কে অনেক ভুলভাল কথা চিন্তা করেছে। বর্ষা তোমাকে ভুল বুঝে চলে গেছে। আর যাওয়ার আগে বলে গেছে সে আর ফিরে আসবে না। আর কেউ যাতে কাউকে না বলে সে কোথায় গেছে। বর্ষা ভেবেই নিয়েছিল তুমি হিয়ার জন্য তাকে ছেড়ে গেছো।
কথাগুলো শোনার পর পুরোপুরি ভেঙে পরে অভ্র। চোখের কার্নিশ বেয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরে। মুরাদ তাকে সামলাতে গেলে অভ্র মুরাদকে নিজের সামনে থেকে চলে যেতে বলে এবং নিজেও সিদ্ধান্ত নেয় আর ফিরবে না ওই বাড়িতে যে বাড়িতে তার রাগরাগিণী নেই।
__________________🌸
___________🌸
৬মাস পর,
বারান্দার গ্রিল এক হাতে শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র৷ সন্ধ্যা হয়ে আসছে পাখিরাও পাখা মেলে নিজেদের বাড়ির দিকে উড়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ করে গা ঠান্ডা করে দিয়ে উত্তরের ধমকা হাওয়ায় বইছে। সে বাতাস গায়ে মেখে অভ্র ভাবান্তর হয়ে নির্মূল কন্ঠে বলল, ❝ এক তুমি, যাকে প্রতিটা মূহুর্ত দেখার জন্য হাজারও শোকে মরছি আমি! ভালো নেই আমি রাগরাগিনী! জানি তুমিও হয়তো ভালো নেই! জানিনা কোন প্রান্তে চলে গেছো আমাকে একা করে দিয়ে। বলেছিলাম সব পরিস্থিতিতে পাশে থাকবো আমি ছিলাম ও আছি রাগরাগিণী শুধু তুমি হারিয়ে গেছো। সামান্য এইটুকু বিশ্বাস রাখতে পারোনি তুমি আমার উপর? ভুল বুঝে চলে গেলে বহুদূরে আমার ধরা ছোঁয়ার বাহিরে! ভালোবেসে ছিলে শুধু ভালোবাসার মানুষটার উপর বিশ্বাস রাখতে পারোনি। এই ছয় মাসে এমনও একটা দিন যায়নি যখন তোমার কথা আমার মনে পরেনি। খুব মিস করি তোমায়৷ তোমার কি মনে পরে না একটা বারও আমার কথা? আমার যে খুব মনে পরে তোমার মিষ্টিমুখটা। ভালোবাসি রাগরাগিণী আজও খুব যত্ব করে। ফিরে আসবে কি কভু তুমি আমার অন্ধকার শহরে? আমি যে তোমার শোকে ম’রে যাচ্ছি রাগরাগিণী! নিস্তব্ধ পরে আছে আমার হাসোজ্জ্যল সাম্রাজ্য তুমি ছাড়া শূন্য সবই! ❞
তিন মাস পর-
বর্ষা একটা চেয়ারের উপর বসে আছে। আচমকা চিৎকার দিয়ে বলে উঠল, ‘ মুন্নি আপু তোমার পেছনে ব্যাঙ! ’
মুন্নি ব্যাঙ খুব ভয় পায়, তাই ব্যাঙ কথাটি শুনেই ‘আহহ’ বলে চিৎকার দিয়ে বিছানার উপর উঠে দাঁড়ালো। মুন্নি লাফানো দেখে এদিকে বর্ষা ফিক করে হেসে উঠল। চার তলা ফ্লাটের মধ্যে ব্যাঙ কোথা থেকে আসবে? ভাবতে ভাবতে বর্ষার দিকে তাকালো মুন্নি আর দেখলো বর্ষা হাসছে তা দেখে কোমড়ে হাত রাখলো মুন্নি আর বলল, ‘ ওরে পাঁজি মেয়ে বড় বোনের সাথে ফাজলামি? ‘
‘ ওই তুমি এখানে ব্যাঙ ভয় পাও কি-না একটু চেক করছিলাম! ‘ বলল বর্ষা।
এক হাত উপরে তুলে মুন্নি বলল, ‘ এ রকম আর করলে দেখিস মাইর খাবি। ‘
তারপর মুন্নি রাতের খাবার রান্না করার জন্য কিচেনে চলে গেলো আর বর্ষা চলে আসলো বারান্দায়। আকাশের গোল আকৃতির চাঁদটার দিকে তাকিয়ে বলল, “ তুমি কোথায় ও কি অবস্থা তে আছো আজও জানি না। কিন্তু আমার এটা ভেবেই শান্তি যে আমরা দু’জনে একই আকাশের নিচে আছি। ওই দূর আকাশের চাঁদ টা আমি দেখতে পাচ্ছি হয়তো অন্য কোথা থেকে তুমিও দেখতে পাচ্ছো। চাঁদ টা যে আমাদের দুজনের মাথার উপরে আছে। আচ্ছা অভ্র ভাইয়া, কোনোদিন দেখা হলে সত্যি করে বলবে তুমি আমাকে কেনো ঠকালে? সেদিন তুমি চলে না গেলে আজ হয়তো আমাদের ছোট্ট একটা পরিবার হত? তুমি আমি আর আমাদের___ ”
শেষ পর্যন্ত বলে থমকে গেলো বর্ষা। চোখের কার্নিশ বেয়ে পড়া জলটা হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে নিলো আর কর্কশভাবে বলল, ‘ যাগ্গে সেসব কথা! ’
তখনই রান্না ঘর থেকে আওয়াজ দিলো মুন্নি, “বর্ষা এত রাতে বারান্দায় কি করছিস? দেখছিস না কেমন উড়নচণ্ডীর মতো বাতাস বইছে নিশ্চয়ই বৃষ্টি আসবে রুমে চলে যায়। আর আসার পর বারান্দার দরজা টা ভালো করে বন্ধ করে দিয়ে আয়।”
চলবে?
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]