#মন_যাকে_চায়
#পর্ব_৭
#সুবর্না_আক্তার_জুথি ✍️✍️
গতকাল রাতের ঝড়ে অনেক কিছু বদলে গেছে। অজানা সম্পর্ক নতুন পরিচয় পেয়েছে,আবার কারো সম্পর্ক নতুন মানে খুঁজে পেয়েছে।
আজকে রিয়ার বিয়ে খুব ভোরে সবাই ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। বাইরে অনেক হৈচৈ শোনা যাচ্ছে। ইশিতা গোসল করে আয়নায় সামনে এসে দাঁড়ায়, কোমর পর্যন্ত ছড়ানো চুল বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।
“আজ আয়নায় নিজেকে দেখে খুব লজ্জা পেলো ইশিতা। নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করলো সে।”
বিছানায় তাকিয়ে দেখলো অনুভব খুব গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। কাল রাতে যেহেতু বৃষ্টি হয়েছে তাই আবহাওয়া শীতল হয়ে আছে।”গত রাতের বৃষ্টির কথা মনে পড়তেই ইশিতার মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেল।”
ইশিতা ধীরে ধীরে অনুভবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চুপটি করে বসে অনুভবের কপালে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দিলো।
অনুভব চোখ মেলে তার সামনে স্নিগ্ধ পবিত্র একটা মুখ দেখতে পেলো।
“ইশিতা তুমি কি করছিলে এটা?”
কয় কিছু না তো, মুচকি হেসে বলল ইশিতা।
“অনুভব এবার নিজের দিকে তাকিয়ে বললো আচ্ছা ইশিতা কাল রাতে কি আমাদের মধ্যে কিছু হয়েছে?”আমার ঠিক মনে পড়ছে না।
ইশিতা কিছু বলার আগেই দরজায় টোকা দেয়ার আওয়াজ শুনতে পেল।
তুমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও আমি আসছি।
“আরে দাঁড়াও, উওর টা তো দিয়ে যাও।”
পিছনে ফিরে লাজুক হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেল ইশিতা।
গতকাল রাতের কথা অনুভবের মনে পড়ছে না। শুধু এটুকু মনে আছে ডায়নার কথা সবাইকে যেনতেন ভাবে বোঝানোর পর ঈশান আর রাতুলের সাথে বেরিয়ে গেছিল।
রাতুল একপ্রকার জোর করেই তাকে কিছু একটা খাইয়েছিল।
তারপর কখন ঘরে এসেছে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে কিছুই মনে নেই।
চোখ বন্ধ করলে ইশিতার মুখটা ঝাপসা ঝাপসা দেখতে পাচ্ছে।
রাতের কথা মনে পড়তেই ডায়নার কথা মনে পড়লো। আরে আমি একদম ভুলে গেছিলাম না জানি কি করছে মেয়েটা।
অনুভব উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেল।
___________
গতকাল রাতের ঘটনা।।
এই কে তুমি?আর এখানে চিৎকার কেন করতেছো?
তুষার আহমেদ বললেন ।
আমি ডায়না। আমি আমেরিকা থেকে এসেছি। অনুরাগ কোথায়?
সবাই এবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে শুরু করলো। কারণ তাদের জানামতে সেখানে অনুরাগ নামের কেউ নেই।
দিলারা জামান এবার এগিয়ে এসে বলল ওই মনে হয় পাগলা গারদ থেইকা পালাই আইছে।দেখতেছ না কেমন ছেঁড়া ছেঁড়া জামা কাপড় পইড়া আছে।ওই মনে হয় খুব গরীব তাই এতো ছোট ছোট পোশাক পরছে।
হাউ ডেয়ার ইউ বলে ডায়না রেগে গিয়ে দিলারা জামানের দিকে তেড়ে আসলো।
তাদের দুজনের মাঝে এসে দাড়ালো ইশিতা।
ইশিতা কে দেখে ডায়না পিছনে সরে এলো তারপর আবার অনুরাগ অনুরাগ বলে ডাকাডাকি শুরু করলো।
হঠাৎই তার ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো। খুব মনোযোগ সহকারে পড়ে ডায়না সবার দিকে তাকালো।
তারপর মুখে হাসি এনে বললো এবার বুঝতে পারছি আপনারা কেন বলছেন অনুভব এখানে নেই।
আসলে আপনারা সবাই তাকে অনুভব নামে জানেন সেজন্য।
এবার অনুভব ভীড়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসলো।প্রত্যেকে তার উওরের অপেক্ষায় আছে।
“অনুভব এবার ইশিতার মুখোমুখি হয়ে বললো ও আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড ডায়না।” ডায়না আমেরিকায় থাকে। কয়েকমাস আগে ডায়নার সাথে ফোনে টুকটাক কথা হতো তবে সেটা এস এম এসে।
আমার কাছে থেকে বাংলাদেশের বর্ননা শুনে ডায়নার খুব ইচ্ছে হয় আমাদের দেশ দেখার। সেটা অবশ্য আমাকে বলেছিল।
কিন্তু ও যে এভাবে হুট করে চলে আসবে ভাবতে পারিনি। ইশিতা আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম তাই ডায়নার কথা তোমাকে জানাই নি।কিন্তু দেখ আমি নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম।
সেখানে উপস্থিত অনেকেরই কথা গুলো হজম করতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। বিশেষ করে ইশিতার। অনুভব তার কাছে থেকে এতোবড় একটা কথা লুকিয়েছে।
ফেসবুক ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় দেওয়াতে ডায়না খুব রেগে যায় তবু সিনক্রিয়েট না করে চুপ করে থাকে।
সবাই আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হলো। অনেকেই ভূত দেখার মতো করে ডায়নাকে দেখছে বিদেশি বলে কথা।
সে না হয় বুঝলাম দুলাভাই কিন্তু মিস ডায়না তোমাকে অনুরাগ বলে কেন ডাকছে?আর মিস ডায়না কি করে জানালো তুমি এখন কোথায় আছো?
অনুভব এবার ঈশান কে চোখ দিয়ে গিলে খাওয়ার মতো করে তাকিয়ে আছে। (আসলেই তুই একটা শালা এমনিতেই তোর বোনকে সামলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে তার উপর তুই আরো কঠিন করে দিচ্ছিস মনে মনে বলল অনুভব )
ডায়নার বেস্টফ্রেন্ড অনুরাগ নাকি দেখতে হুবহু আমার মতো ছিল।বছর দুয়েক আগে মারা গেছে।
তাই ডায়না আমাকে অনুরাগ নামে ডাকে।
আর তোমার পরের প্রশ্নের উত্তর হলো আমি এখানে আসার আগে ওর সাথে কথা বলেছিলাম তখন কথায় কথায় গ্রামে আসার কথা বলেছি।
রাতুল বললো তোমাদের প্রশ্নপর্ব শেষ হলে মিস ডায়নাকে ঘরে যেতে দেয়া হোক। এতোটা পথ জার্নি করে এসেছে।তার তো রেস্টের প্রয়োজন তাই না।
হ্যা তাইতো এই লিজা ইশিতা তোমরা ওরে ঘরে নিয়া যাও। কিছু খাবার দাবার দাও। তুষার আহমেদ বললেন।
হ্যা চলো আমিও যাচ্ছি তোমাদের সাথে,অনুভব বললো।”ডায়না মনে মনে এটা ভেবে শান্তি পেলো এবার অন্তত অনুরাগের সাথ সাথে কথা বলতে পারবে।”
“না তোমাকে যেতে হবে না বিদেশিনী কে আমি একাই হ্যান্ডেল করতে পারবো।”ডায়নার চিন্তায় পানি ঢেলে দিয়ে বললো ইশিতা।”
ডায়নাকে আসতে দেখে অনুভব আড়ালে চলে যায় তারপর ডায়নাকে এস এম এস করে যে এখন আমি যা বলবো যা করবো তাতে তুমি সম্মতি জানাবে।সুযোগ বুঝে আমি তোমাকে সবকিছু খুলে বলবো।প্লিজ আমার কথাটা রাখো তা নাহলে অনেক বড় বিপদ হয়ে যাবে।
তাই ডায়না চুপ করে আছে।
ইশিতা অবশ্য তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছে।সিলিং ফ্যানের সঙ্গে চার্জার ফ্যানের ব্যবস্থা করেছে গরমে যেন কষ্ট না হয় তাই। আলাদা করে খাবার রান্না করে পাঠিয়েছে আমাদের দেশের অতিথি বলে কথা।
ইশিতা কে তা না জানলেও তার ব্যবহার বেশ মুগ্ধ করেছে ডায়না কে।
রাতের অনুষ্ঠান খাওয়া দাওয়া সব মিলিয়ে ডায়নার সাথে কথা বলার সময় হয়ে ওঠেনি অনুভবের। আর তারপর তো রাতুল আর ঈশানের সাথে বেরিয়েছিল।
_________
ডায়নার জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করেছিল ইশিতা।সব ঠিক ছিল কিন্তু সমস্যা বাঁধল গোসল করা, আর টয়লেট নিয়ে।
সাত সকালে উঠে হাঙ্গামা শুরু করেছে ডায়না।একে তো বিয়ে বাড়িতে অনেক কাজ তার মধ্যে আবার উটকো ঝামেলা বললেন রাহেলা বেগম।
“হোয়াট ডু মিন বাই উটকো ঝামেলা?”
শোন মেয়ে তোমার ওসব ইংরিজি শোনার সময় আমার নেই।
“নেহাৎ তুমি অনুভবের মেহমান তা না হইলে তোমার এতটুকুন টুকুন জামা পরা আর পটর পটর করে ইংরিজি বলা আমি বার করতাম রেগে রেগে বলল রাহেলা বেগম।”
অবস্থা বেগতিক দেখে লিজা ইশিতা কে ডেকে আনলো।
মামী আপনি যান আমি দেখছি। ইশিতা বললো।
ইশিতা আমাদের জন্য কফি নিয়ে এসো প্লিজ ডায়নার সাথে আমার কিছু পার্সোনাল কথা আছে।
কি এমন কথা অনুভব যেটা আমার সামনে বলা যায়না। তুমি হুটহাট করে কেন বদলে যাও।”কখনো অগাধ ভালোবাসা কখনো বিস্তর অবহেলা।”
ইশিতা মন খারাপ করে বেরিয়ে গেল সেটা অবশ্য অনুভবের দৃষ্টি এড়াই নি।
সে তো চাইতো ইশিতা যেন কষ্ট পায়। কিন্তু ইশিতা কে কাঁদতে দেখলে, কষ্ট পেতে দেখলে অনুভবের বুকের ভিতর চিনচিন ব্যাথা অনুভূত হয়।
তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। আসলে অনুভব দোটানায় পড়ে গেছে সে নিজেই বুঝতে পারছে না।তার #মন_যাকে_চায় আসলে সে কে?
“তার বিবাহিত স্ত্রী নাকি প্রেমিকা?”
ডায়না জড়িয়ে ধরতেই অনুভবের চিন্তায় ছেদ পড়ল।
দ্রুত ডায়নাকে সরিয়ে দিল তারপর বললো আমি এখন তোমাকে যা বলছি মন দিয়ে শোন।
অনুভব আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। না কেউ নেই সবাই ব্যস্ত।
“কথা পরে হবে আগে তোমাকে একটু আদর করে নেই বেবি।”
আহ্ এসব পরে হবে আগে আমার কথা শোন। অনুভবের ধমক খেয়ে ডায়না চুপ হয়ে গেল।
অনুভব এবার তার এখানে আসা থেকে শুরু করে সমস্ত ঘটনা বললো।
ডায়না রাগে ফেটে পড়ল আর বললো, তুমি আমার সাথে চিট করেছো।
“হাউ ডেয়ার ইউ অনুরাগ?”
আমাদের এতো দিনের রিলেশন!” তবুও তুমি কি করে ঐ মেয়েটাকে বিয়ে করতে পারলে?”
তুমি এই ভাবে আমাকে ঠকালে?”শুধু আমাকে নয় তুমি তোমার সাথে জড়িত প্রত্যেকটা মানুষকে ঠকিয়েছো।”
তুমি আমার অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করো। যেখানে আমি তোমাকে ভালোবাসি সেখানে আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করতে কতটা কষ্ট হয়েছে।
ওকে ফাইন আমি সব বুঝলাম এবার তুমি সবাইকে সত্যি কথা বলবে আর ইশিতা কে ডিভোর্স দিয়ে আমার সাথে ফিরে যাবে।
ডিভোর্সের কথা শুনে অনুভবের মুখটা শুকিয়ে গেল।
কি আমার কথা শুনবে তো অনুরাগ। ঠিক আছে তুমি যা চাও তাই হবে।
তবে এখানে নয়।ঢাকা ব্যাক করার পর।
আর হ্যাঁ আরেকটা কথা প্লিজ এখানে নিজেকে এডযাস্ট করে নাও নাহলে ঢাকায় ফিরে যাও আমি এসে তোমার সাথে যোগাযোগ করবো। তাছাড়া আমরা কাল পরশুর মধ্যে ব্যাক করবো।
ডায়না কিছুতেই অনুরাগ কে ইশিতার কাছে রেখে যাবে না। তাই বললো সে এডযাস্ট করে নিবে আর তাদের সাথেই ফিরবে।
আবারো ডায়না অনুভবকে জড়িয়ে ধরল।
অনুভব খুব বিরক্ত হচ্ছিল।
কিছু একটা পরার শব্দ শুনে ডায়নাকে সরিয়ে দিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলো……………
।
।
।
#চলবে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।