শুধু তোমারই জন্য ২ পর্ব -০৯+১০

#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|৯|

আনিতা ওর আব্বুর সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আনিতার আব্বু আর ছোট চাচ্চু দুজনেই সোফায় বসা। পাশেই আহিয়ানের ভাই আর আম্মু বসে আছে। সাথে অবশ্য আহিয়ানও আছে। আনিতা এখন বুঝতে পারছে কাল রাতে আহিয়ান কোন সারপ্রাইজের কথা বলেছিলো। আগে যদি জানতো তাহলে আনিতা অন্তত কিছুটা প্রস্তুত থাকতে পারতো। এখন এই ধাক্কাটা সামলাতে ও নিজেই হিমশিম খাচ্ছে। আনিতা জানে ওর আব্বু এত অল্প বয়সে ওকে বিয়ে দিবে না। আর ওর চাচ্চু ওকে ফোন দেওয়ার সময় বলে দিয়েছিলো, যদি উল্টাপাল্টা কিছু শুনে তো জানে মেরে ফেলবে। কি হবে এখন? কি জবাব দিবে ওর আব্বুকে ও? যদি থাপ্পড় লাগিয়ে দেয় একটা তখন? ভয় লাগছে খুব আনিতার। আর ওদিকে আহিয়ান কি সুন্দর সোফায় বসে আছে। এমন ভাব করছে যেন এখানে কিছু হচ্ছেই না। আনিতার আব্বু আনিতাকে কিছুটা ধমকের সুরে বলে,

–“কি হলো চুপ করে আছো কেন? কথা বলছো না কেন?”

–“না মানে আব্বু___”

–“তোমার আহিয়ানের সাথে সম্পর্ক আছে কি না? ভালোবাসো তুমি ওকে? এক কথায় উত্তর দিবা। হ্যাঁ কি না?”

–“ভ্ ভালোবাসি।”

কথাটা বলে আনিতা চোখ বন্ধ করে থাপ্পড় খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে রইলো। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো কয়েক সেকেন্ড বাদেও আনিতার গালে থাপ্পড় পড়লো না। আনিতা পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলো ওর আব্বু আহিয়ানের আম্মুর সাথে কথা বলছেন। আনিতার অবস্থা দেখে আহিয়ান ঠোঁট কামড়ে ধরে নিঃশব্দে হেসে ফেললো। সেটা আর কারো চোখে না পড়লেও আনিতার চোখ এড়ালো না। আনিতা চোখ পাকিয়ে তাকাতেই আহিয়ান ঠোঁটে আঙুল দিয়ে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো,

–“ওকে আর হাসবো না।”

আনিতা ভেঙচি কেটে অন্যদিকে তাকালো। আনিতার আব্বু আনিতাকে ভিতরে চলে যেতে বললেই আহিয়ানের আম্মু আনিতাকে থামিয়ে দেয়। আনিতাকে নিজের পাশে বসিয়ে কথা বলে কিছুটা সময়। তারপর আনিতার হাতে এক হাজার টাকার কয়েকটা নোট গুজে দেয়। যদিওবা আনিতা নিতে চাচ্ছিলো না। উনি জোর করেই টাকাগুলো আনিতার হাতে গুজে দেন। তারপর আনিতাকে যাওয়ার ইশারা করলেই আনিতা ওখান থেকে উঠে সোজা রুমে চলে যায়। টাকাগুলো আনিতা ড্রয়ারে রেখে ফোন হাতে নিয়ে আহিয়ানকে টেক্সট করে,

–“পাগল হইছেন আপনি? আমাকে না জানিয়ে ভাইয়া আর আন্টিকে কেন নিয়ে এসেছেন? আব্বু যদি বারন করে দেয় তখন অপমানিত হবেন না উনারা? অন্তত আমার এইচএসসি এক্সাম অব্দি ওয়েট করতেন। আমি বাসায় জানাতাম তারপর না হয় আন্টিকে নিয়ে আসতেন।”

ম্যাসেজটা আহিয়ানের নাম্বারে সেন্ড করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আনিতা। এতক্ষণে আটকে রাখা কথাগুলো আহিয়ানকে বলতে পেরে এখন যেন বেশ হালকা লাগছে। মিনিট দুয়েক বাদে আহিয়ান রিপ্লাই করলো,

–“আন্টি না ডেকে আম্মু ডাকার অভ্যাস করো। এক সপ্তাহের মধ্যে আমাদের বিয়ের রেজিষ্ট্রেশন করবো আমরা। তাও আবার তোমার ফ্যামিলির পারমিশন নিয়ে। যেভাবেই হোক রাজি করাবো আমি। আর তোমার এইচএসসি এক্সাম হতে এখনো প্রায় দের বছর বাকী আর এতদিন আমি ওয়েট করতে পারবো না। যদি হারিয়ে ফেলি?”

–“পাগল একটা।”

–“হ্যাঁ #শুধু_তোমারই_জন্য।”

ম্যাসেজটা দেখে মুচকি হাসলো আনিতা। পরবর্তীতে আর কোনো রিপ্লাই করলো না ও। আনিতা মনে মনে আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছে ওর আব্বু যাতে রাজি হয়ে যায়। কোনো অমত যাতে না করেন তিনি।

দুদিন কেটে গেলো এর মাঝে। আনিতার আব্বু ভাবার জন্য সময় নিয়েছেন। আহিয়ানও ঢাকায় ফিরে গিয়েছেন। আহিয়ান আর আনিতার সম্পর্ক নিয়ে আনিতার আব্বু বা চাচ্চু আর কোনো প্রশ্ন করেনি আনিতাকে। বাড়িতে ওদের দুজনকে নিয়ে কোনো কথাই হচ্ছে না। আনিতা ওর আব্বুর হাবভাব দেখেও বুঝতে পারছে না ওর আব্বু হ্যাঁ বলবে নাকি না বলবে। চিন্তা হচ্ছে প্রচুর। আয়রা অবশ্য আনিতাকে বলেছে টেনশন না করতে। যা হবে ভালোই হবে। কিন্তু আনিতার মাথা থেকে চিন্তা যাচ্ছেই না। রাতে শুয়ে শুয়ে ইউটিউবে ভিডিও দেখছিলো আনিতা। সেই মূহুর্তেই আহিয়ানের ম্যাসেজ এলো। আনিতার এখন আলসেমি হচ্ছে প্রচুর। ওর ইচ্ছে করছে না ইউটিউব থেকে বের হয়ে ম্যাসেজটা দেখার। তারপরও আলসেমি ছেড়ে ম্যাসেজটা চেক করলো ও। আহিয়ান লিখেছে,

–“আনিতা থেকে মিসেস আহিয়ান আদৃত হওয়ার জন্য প্রিপারেশন নিতে শুরু করো পিচ্ছি-পাখি।”

কথাটা বুঝতে আনিতার কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। খুশিতে লাফিয়ে উঠে আনিতা। তড়িঘড়ি করে রিপ্লাই করে,

–“আব্বু রাজি হয়েছে সত্যিই?”

–“তোমার কি মনে হয় আমি মিথ্যে বলছি আনি?”

–“না সেরকম কিছু না।”

–“হুম বুঝেছি। ফোন রেখে ঘুমিয়ে পড়ো এখন।”

–“কথা বলবেন না?”

–“মাত্রই অফিস থেকে ফিরলাম। শাওয়ার নিয়ে ডিনার করতে করতে অনেকটা রাত হয়ে যাবে।”

আনিতা সময় দেখে নিলো একবার। সাড়ে এগারোটা বাজে। এমনিতে তো সাড়ে নয়টা, দশটা নাগাদ আহিয়ান চলে আসে অফিস থেকে। এই ভেবে আনিতা রিপ্লাই করলো,

–“আজকে এত লেট করে ফিরলেন যে?”

–“কাজের খুব প্রেশার যাচ্ছে।”

–“আচ্ছা আপনি তাহলে খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বেন কিন্তু। রাত জাগবেন না একদম।”

–“যথা আজ্ঞা ম্যাডাম।”

–“আচ্ছা বাই।”

–“ভালোবাসি পিচ্ছি-পাখি।”

–“আমিও ভালোবাসি আমার পাগলটাকে।”

সবেমাত্র পার্লার থেকে সেজে বাড়ি ফিরলো আনিতা। পিছনের গেট দিয়ে বাসায় ঢুকেছে আনিতা। উঠোনে ছোটখাটো একটা প্যান্ডেল করা হয়েছে। আনিতা আর আহিয়ানের বিয়ে আজকে। আনিতার আব্বু মেনে নিয়েছেন ওদের সম্পর্কটা। আপাতত আনিতা এখন ওদের বাসায়-ই থাকবে। আনিতার এইচএসসি এক্সাম শেষ হলেই অনুষ্ঠান করে আনিতাকে আহিয়ানদের বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। তবে আহিয়ান চাইলে মাঝে মধ্যে আসতে পারে। আহিয়ানের ফ্রেন্ড আনিতার ফ্রেন্ড সকলেই উপস্থিত আছে এখানে। আনিতা ফোন হাতে নিয়ে সেল্ফি তুলছে একের পর এক। নিজের বিয়ে বলে কথা তার উপর আবার ভালোবাসার মানু্ষটার সাথে। আনন্দের কোনো সীমা নেই।

বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ দুজন লোক এলো আনিতার রুমে। কাবিননামায় আনিতার সিগনেচার নিতে। সাথে আনিতার আব্বু আর চাচ্চু ছিলো৷ হঠাৎ করেই আনিতার বুকের ভিতরটা কেমন জানি ভাড়ী হয়ে এলো। শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো কষ্ট হচ্ছে আনিতার। চোখ উপচে পানি গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে। এক পর্যায়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে আনিতা৷ আনিতার আব্বু আনিতার পাশে বসে এক সাইড থেকে জড়িয়ে নেয় আনিতাকে। আনিতা ওর আব্বুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। আনিতার এমন কান্নায় আনিতার আব্বুরও বুক ভারী হয়ে উঠছে৷ আজকে থেকে তার মেয়েটা পর হয়ে যাবে। অন্যের অধীনের চলে যাবে কথাটা ভাবতেই আনিতার আব্বুর চোখ জলে ভড়ে উঠলো। আনিতার আব্বু চোখের কোনে জমা পানিটুকু মুছে নিয়ে বলে,

–“কাঁদছো কেন আম্মু? তুমি তো এখনি আমাদের ছেড়ে যাচ্ছো না। আমাদের সাথেই তো থাকবে তুমি।”

–“আব্বু আজকে থেকে আমি পর হয়ে যাবো তোমাদের থেকে তাই না?”

–“কে বলেছে পাগলী? মেয়েদের বিয়ে হলেই সে পর হয়ে যায় না। একটা মেয়ে সবসময় তার বাবার আদরের রাজকন্যাটাই থাকে। তাতে সে যত দূরেই চলে যাক না কেন? তুমিও আমার কাছে সেই আগের মতো রাজকন্যাই থাকবে বুঝলে?”

আনিতা মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো। আনিতার আব্বু আনিতার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,

–“তাহলে কাঁদছো কেন? আর কাঁদবে না।”

আনিতার চাচ্চু আনিতার দিকে কাবিননামা আর কলম এগিয়ে দিলো। আনিতা কাঁপা কাঁপা হাতে কলমটা তুলে নিলো। হাত কাঁপছে আনিতার। সাইন করার জন্য হাত নামাতেই একটা মেয়ে এসে দৌড়ে আনিতাকে জড়িয়ে ধরলো। আনিতা পাশে ফিরতেই দেখে ওর কাজিন নূর। পুরো নাম সুমাইয়া নূর, সবাই নূর বলেই ডাকে। নূরকে দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো আনিতা। কাল থেকে বেশ মন খারাপ ছিলো নূর আসবে না বলে। কিন্তু এখন হঠাৎ করে চলে আসায় আনিতা বেশ খুশি হয়েছে৷ নূরের সাথে কথা বলার পর কাঁপা কাঁপা হাতে সিগনেচার করে দেয় আনিতা। লোক দুজন আর আনিতার আব্বু ও চাচ্চু বের হয়ে যান রুম থেকে। একটা সিগনেচার, শুধুমাত্র একটা সিগনেচারের মাধ্যমেই আনিতা আহিয়ানের হয়ে গেলো। বদলে গেলো আনিতার জীবন। আনিতা থেকে মিসেস আহিয়ান আদৃত হলো শুধুমাত্র এই একটা সিগনেচারের মাধ্যমেই। আনিতার মনের মাঝে এক অন্যরকম ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে এখন ওর।

বিয়ের ঝামেলা চুকিয়ে মুরব্বিরা সকলেই চলে গিয়েছেন। আহিয়ান আর ওর ছোট বোন অদ্রি আছে, সাথে তন্ময় ওরা সকলে তো আছেই। রুহি আর নাহিয়ানও থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু হঠাৎ করেই নুজাইরাহ অসুস্থ হয়ে যাওয়াতে চলে গিয়েছে ওরা। রাত সাড়ে নয়টা কি দশটা বাজে। আনিতাদের ছাদে বসে সকলে আড্ডা দিচ্ছে। আনিতাও আছে এখানে তবে ও চুপচাপ বসে আছে। আনিতার খুব ঘুম পাচ্ছে। কিছুক্ষণ বাদে বাদেই আনিতা হাই তুলছে। আর বসে থাকতে না পেরে আনিতা উঠে দাঁড়ালো। আনিতাকে চলে যেতে দেখে রোদেলা জিজ্ঞেস করলো,

–“কোথায় যাচ্ছিস?”

–“আমার খুউউউউউব ঘুম পাচ্ছে। তাই ঘুমোতে যাচ্ছি তোরা আড্ডা দে। গুড নাইট।”

পিছনে না ফিরেই আনিতা কথাগুলো বলল। তন্ময় আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে,

–“ঘুম পাচ্ছে না ছাই। এই মূহুর্তে যে তোমাদের মনে কি পাচ্ছে তা আমরা খুউব ভালো করে জানি।”

প্রত্যুত্তরে আনিতা কিছু বলল না। নেমে এলো ছাদ থেকে। তবে তন্ময় কথাটা বলার পরে আড্ডা মহলে যে ওদের নিয়েই কথা হচ্ছে সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে আনিতা। বেচারা আহিয়ান! এখন সবাই ওকে নিয়েই পড়বে। এই ভেবে আনিতা কিছুটা আফসোস হলো। কিন্তু ওর কি? ওর তো ঘুম পাচ্ছে। ও বরং ঘুমাক। এই ভেবেই আনিতা রুমে গিয়ে ওভাবেই শুয়ে পড়লো৷

দুটো টেবিল একসঙ্গে লাগিয়ে রোদেলা আহিয়ান ওরা সকলে খেতে বসেছে। আনিতার আম্মু আর দুই কাকিয়া মিলে খাবার সার্ভ করছে। আনিতার আম্মু খেয়াল করলেন এখানে সবাই আছে। কিন্তু আনিতাকে দেখছে না। আনিতার আম্মু অনিমাকে জিজ্ঞেস করলেন,

–“অনিমা, আনিতা কোথায়?”

–“ঘুমোচ্ছে।”

–“না খেয়ে ঘুমোচ্ছে কেন? দুপুরেও তো তেমন খেলো না। আর আহিয়ান এখানে একা একা খাবে কেমন না? নতুন জামাই ও আজকে শশুড় বাড়িতে ওর প্রথমদিন। আনিতা নেই এখানে ও কি ভাববে? যা গিয়ে ডেকে নিয়ে আয় ওকে।”

অনিমা উঠে যেতে চাইলে আহিয়ান ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

–“আনিতা ঘুমোচ্ছে ঘুমাক। আমার কোনো সমস্যা হবে না। ওর খাবারটা বরং আমি রুমে নিয়ে যাবো।”

–“কিন্তু__”

–“আমার সত্যিই কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আর আমি কিছু ভাবছিও না। এটা তো আমার নিজের বাড়ির মতোই তাই না?”

আহিয়ানের কথায় আনিতার আম্মু আর কাকিরা মুচকি হাসলো। খাওয়া শেষে আহিয়ান অনিমা অদ্রি আর নূর বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। তন্ময় ওরাও ছিলো এতক্ষণ। মাত্রই শুতে গেলো সবাই। আয়রা এসে অনিমাকে বলল,

–“খাবারটা নিয়ে একটু আনিতার রুমে রেখে আসো।”

আহিয়ান উঠে খাবার প্লেট হাতে নিয়ে বলল,

–“অনিমার যেতে হবে না। আমি যেহেতু এখন রুমেই যাবো তাহলে আমিই নিয়ে যাচ্ছি।”

আয়রা মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো৷ আহিয়ান প্লেটের ওজন পরিমাপ করে বলে,

–“মনে তো হচ্ছে অনেক খাবার দিয়েছেন। এত খাবার আপনাদের মেয়ে খায় তো?”

–“মেয়ে একা কেন খাবে? সাথে মেয়ের জামাইও তো খাবে।”

–“একটু আগেই তো খেলাম। আর কত খাবো?”

–“হুম বুঝলাম। কিন্তু আপনি যে ভালো করে খাননি। পাশে বউ ছিলো না তো তাই খেতে পারেননি। সেজন্য দুজনের খাবারটাই দিয়ে দিলাম।”

মুচকি হাসলো আহিয়ান। সাথে আয়রাও। আয়রার সাথে আনিতা আর আহিয়ানের অন্যরকম বন্ডিং। তিনজনেই বেশ ক্লোজ। আহিয়ান মৃদু হেসে খাবার প্লেটটা হাতে নিয়ে রুমে চলে গেলো। বেড সাইড টেবিলে খাবারের প্লেটটা রেখে দরজা আটকে দিলো। বিছানার দিকে পা বাড়াতেই দরজায় কড়া নাড়লো কেউ। আহিয়ান দরজা খুলতেই দেখে নূর দাঁড়িয়ে আছে। হাতে দুধের গ্লাস। আহিয়ানকে দেখে নূর দাঁত বের করে হেসে বলে,

–“রোমান্সে ডিস্টার্ব করলাম না তো জিজু।”

–“একদমই না শ্যালিকা। রোমান্স করার মতো সেই সৌভাগ্যটা আমার নেই। যদি থাকতো তাহলে কি আর তোমার বোন এভাবে পড়ে পড়ে ঘুমাতে পারতো?”

–“এখন ঘুমিয়ে নিচ্ছে এই কারনে যাতে সারা রাত জেগে আপনার সাথে রোমান্স করতে পারে। বুঝলেন?”

–“হ্যাঁ বুঝলাম তুমি অনেক রোমান্টিক। রোমান্স সম্পর্কে তোমার অনেক ধারনা আছে। কিন্তু কি বলো তো তোমার বোনটা রোমান্সের র টাও বুঝে না। আমার সামনে আসলেই ওর কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে যায়।”

–“ব্যাপার না। আজকে রাতে লজ্জা ভাঙিয়ে দিন তারপর আর কাঁপা-কাঁপি শুরু হবে না আপনি সামনে গেলে।”

–“বুঝেছি তোমারও বিয়ের ব্যবস্থা খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে।”

–“হ্যাঁ করুন না প্লিজ। আমি তো আর বাসায় বলতে পারছি না নিজের বিয়ের কথাটা। আপনি একটু বলে দিন প্লিজ আমি বড় হয়েছি, আমাকে যাতে বিয়ে দেয়।”

আহিয়ান মৃদু হেসে নূরের মাথায় গাট্টা মারলো। নূর আর আহিয়ান একসাথেই কিছুটা শব্দ করে হেসে দিলো। আহিয়ান নূরের হাত থেকে দুধের গ্লাসটা নিয়ে ‘গুড নাইট’ বলে দরজা আটকে দিলো। নূর হাসতে হাসতে চলে গেলো ওখান থেকে। আহিয়ান দুধের গ্লাস রেখে বিছানার দিকে ঘুরতেই দেখে আনিতা গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। পড়নে এখনো বিয়ের লেহেঙ্গাটা। এত ঘুম যে জামাটা পালটে পর্যন্ত ঘুমোয়নি। আনিতার কান্ডে মুচকি হাসলো আহিয়ান।

চলবে ইনশাআল্লাহ~#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|১০|

আহিয়ান বেশ কিছুটা সময় আনিতার দিকে তাকিয়ে থাকে। ঘুমন্ত আনিতাকে দেখতে আহিয়ানের কাছে বেশ ভালোই লাগছে। সময়টা যদি এখানেই থেমে যেতো? তাহলে খুব ভালো হতো না? বেশ কিছুক্ষণ এক ধ্যানে আনিতার দিকে তাকিয়ে থেকে নড়েচড়ে বসলো আহিয়ান। ফোন হাতে নিয়ে দেখে বারোটা বাজতে আর অল্প কিছু সময় বাকী আছে। আনিতাকে ডাকলো কয়েকবার। কিন্তু আনিতা উঠলো না। উলটো নড়েচড়ে আবার পাশ ফিরে শুয়েছে। আহিয়ান আনিতার ওড়নার এক কোনা পেচিয়ে আনিতার কানে সুরসুরি দিচ্ছে। কানে সুরসুরি দেওয়াতে লাফিয়ে উঠে আনিতা৷ পাশে আহিয়ানকে দেখে চিৎকার করতে গেলেই আহিয়ান আনিতার মুখ চেপে ধরে বলে,

–“চিৎকার করতে যাচ্ছো কেন? পরে সবাই উল্টাপাল্টা ভাববে।”

আহিয়ান আনিতার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলে আনিতা বড় বড় শ্বাস নিতে থাকে। তারপর আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,

–“আপনি? আপনি এই ঘরে কি করছেন? কেউ দেখে ফেললে কি ভাববে বুঝতে পারছেন? যান এখান থেকে। এক্ষুনি বের হোন।”

আনিতার কথায় আহিয়ান আয়েশ করে আনিতার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। তারপর আনিতার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,

–“কেউ কিচ্ছু ভাববে না। তো ম্যাডাম আপনি কি ভুলে গিয়েছেন আজকে যে আমাদের বিয়ে হলো?”

বিয়ের কথা মনে হতেই আনিতার আজকের সব কথা মনে পড়ে গেলো। ঘুম থেকে উঠার পর একদমই ভুলে গিয়েছিলো সবটা। আহিয়ান ওর স্বামি? আজকে একই সাথে এক ঘরে থাকবে কথাটা ভাবতেই আনিতা লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো। আনিতাকে লজ্জা পেতে দেখে আহিয়ান বাঁকা হেসে বলে,

–“এখনই এতো লজ্জা পেলে চলবে? এখনো তো লজ্জা পাওয়ার মতো কিছুই করলাম না।”

আনিতার মুখটাকে লজ্জায় লাল করে দেওয়ার জন্য আহিয়ানের এই কথাটুকুই যথেষ্ট ছিলো। আহিয়ান স্পষ্ট বুঝতে পারছে আনিতা কাঁপছে। এই মেয়েটা ওর সামনে আসলেই এরকম কাঁপতে শুরু করে৷ কেন আহিয়ান কি বাঘ নাকি ভাল্লুক? যে ওকে সামনে দেখলেই এভাবে থরথর করে কাঁপতে হবে? এটাই মাঝে মাঝে ভেবে পায় না আহিয়ান। আহিয়ান শোয়া থেকে উঠে বসে বলে,

–“যাও হাতমুখ ধুয়ে জামা পালটে আসো।”

আনিতা বিনাবাক্যে বিছানা ছেড়ে উঠে গেলো। কাবার্ড থেকে জামা বের করে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে আহিয়ান বলে,

–“শাড়ি পড়বে প্লিজ?”

আহিয়ানের এমন নেশালো কন্ঠ শুনে আনিতা ওখানে থেমে যায়। শাড়ির কথা শুনে একটা শুকনো ঢোক গিলে আনিতা। ও ঠিকঠাক ভাবে এখনো শাড়ি পড়তে জানে না। আনিতাকে চুপ করে থাকতে দেখে আহিয়ান বলে,

–“ওকে পড়তে হবে না।”

কথাটা আনিতার কানে পৌঁছাতেই ফিরে তাকালো আহিয়ানের দিকে। আহিয়ান আনিতার দিকেই তাকিয়ে আছে। আনিতা আবার কাবার্ডের দিকে এগিয়ে গেলো। হাতের জামাটা কাবার্ডে রেখে সোনালি পাড়ের কালো সুতি শাড়ি হাতে নিলো। আহিয়ান আড়চোখে দেখছিলো আনিতাকে। আনিতা পিছন ঘুরতেই আহিয়ান ফোনে মনোযোগ দেয়। আনিতা কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে যায়। প্রায় আধ ঘন্টা বাদে দরজা খোলার শব্দে আহিয়ান মাথা তুলে তাকায়। আনিতা টাওয়েল দিয়ে চুলগুলো মুছতে মুছতে ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে বসলো। চুলগুলো একপাশে নিয়ে মুছতে শুরু করে। চুলগুলো সামনে নেওয়াতে আনিতার ফর্সা পিঠ দৃশ্যমান। সেদিকে আহিয়ানের চোখ পড়তেই কিছু সেকেন্ডের জন্য থমকে গেলো ও। হুশ ফিরতেই দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো আহিয়ান। এই শীতের রাতে আনিতা গোসল করেছে কথাটা মনে হতেই আহিয়ানের রাগ হলো বেশ। আনিতার সামনে গিয়ে ওকে হ্যাঁচকা টান দিয়ে দাঁড় করালো নিজের মুখোমুখি। আচমকা এমন হওয়াতে আনিতা বেশ ভড়কে গেলো। আহিয়ানের চোখে কিছুটা রাগ দেখতে পেলো আনিতা। আহিয়ান গলার স্বর হালকা উঁচু করে বলে,

–“এমনিতেই শীতকাল তার উপর আবার রাত সাড়ে বারোটা বাজে। এত রাতে শাওয়ার নিয়েছো কেন?”

–“ভ্ ভারী সাজ ছিলো আর চুলগুলোও এলোমেলো হয়ে ছিলো। সাজ তুলতে গিয়ে ভ্ ভিজে গিয়েছিলাম তাই__”

–“তাই বলে এত রাতে শাওয়ার নিবে তুমি? পাগল হইছো? এমনিতেই তোমার ঠান্ডার প্রবলেম আছে না? যদি অসুস্থ হয়ে পড়ো তখন?”

–“ঠিক আছি তো আমি। চিন্তা করছেন কেন এত?”

–“চিন্তা করবো না? চিন্তা করতে না করছো আমাকে?”

–“আমি সেটা বলিনি তো।”

–“তো?”

কথায় কথা বাড়বে তাই আনিতা চুপ করে রইলো। আহিয়ান আগের তুলনায় এখন একটু বেশিই রেগে আছে। আনিতা চায় না রাগারাগিটা আরো বাড়ুক। প্রসঙ্গ পাল্টাতে এদিক ওদিক তাকাতেই আনিতার চোখ পড়লো খাবার প্লেটের দিকে। আনিতা মুখটাকে কিছুটা অসহায় করে বলে,

–“খুউব ক্ষুধা পেয়েছে আমার।”

আনিতার কথায় আহিয়ানের মনে পড়লো ও রুমে খাবার নিয়ে এসেছিলো আনিতার জন্য। ধরতে গেলে দুপুর থেকেই না খাওয়া আনিতা। ইশ্ একদম ভুলে গিয়েছিলো। এখন আহিয়ানের নিজের উপর রাগ হতে লাগলো। আহিয়ান আনিতার গালে হাত দিয়ে বলে,

–“সরি আমি একদম ভুলে গিয়েছিলাম। চলো খাবে।”

–“নামাযটা পড়ে নেই আগে?”

আহিয়ান মৃদু হেসে বললো,

–“চলো।”

জায়নামাজ বিছিয়ে দুজনে একসাথে নামায পড়ে নিলো। আনিতা জায়নামাজটা জায়গা মতো রেখে বিছানায় গিয়ে আসাম করে বসলো। আহিয়ান খাবার প্লেট-টা আনিতার সামনে রাখতেই আনিতা ভ্রু কুঁচকে বলল,

–“এত খাবার? আপনি খাননি রাতে?”

–“খেয়েছিলাম তবে সামান্য। তাতে পেট বা মন কোনোটাই ভরেনি।”

–“কেন?”

–“তুমি ছিলে না পাশে তাই।”

লজ্জায় কান লাল হয়ে এলো আনিতার। ছেলেটা কেমন দৃষ্টিতে যেন আনিতাকে দেখছে। আর আহিয়ানের সেই দৃষ্টিতেই বারবার ঘায়েল হচ্ছে আনিতা। সাথে লজ্জায় চোখমুখ লাল হয়ে আসছে। আনিতা প্রসঙ্গ পাল্টাতে মাথা নিচু করে বলল,

–“খাইয়ে দিবেন?”

আনিতার কথায় আহিয়ান মৃদু হেসে উঠে গেলো। খানিক বাদে হাত ধুয়ে এসে আনিতাকে খাইয়ে দিতে লাগলো। সাথে নিজেও কিছুটা খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে আনিতা উঠে প্লেট নিয়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে। পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে আছে। অর্থাৎ সকলেই ঘুমে মগ্ন। অবশ্য ঘুমোবে না কেন? রাত্রি একটার বেশি বাজে। আনিতা প্লেট কিচেনে রেখে রুমে চলে এলো। দরজা লাগিয়ে বিছানার দিকে ঘুরতেই আনিতার শাড়ির কুচিগুল খুলে মেঝেতে পড়ে গেলো। আচমকা এমন হওয়াতে আনিতা বেশ লজ্জা পেয়ে যায়। আনিতা তড়িঘড়ি করে শাড়িটা উঠিয়ে নিলো মেঝে থেকে। এতক্ষণ কোনোমতে শাড়িটা পেঁচিয়ে পড়ে ছিলো। কিন্তু এখন? এখন কি হবে? এজন্যই আনিতা শাড়ি পড়তে চায়। শাড়ি একদমই সামলে রাখতে জানে না ও। আনিতা বার কয়েক চেষ্টা করলো কুচিগুলো ঠিক করে নিতে। কিন্তু বারবার কুচিগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। মাথা কাজ করছে না ওর। তার উপর আহিয়ান বিছানায় বসে একদৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ফলে আরো অস্বস্তিতে পরে যাচ্ছে আনিতা। আহিয়ানের ওভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে আরো নার্ভাস হয়ে যাচ্ছে যার ফলে কুচিগুলো ঠিক করতে পারছে না। আনিতা ওভাবেই ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো৷ আহিয়ান এতক্ষণ ধরে আনিতাকে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছিলো। আনিতাকে এখন ওয়াশরুমের দিকে যেতে দেখে আহিয়ান ঠোঁট কামড়ে ধরে নিঃশব্দে হাসলো। তারপর পা বাড়ালো আনিতার দিকে। আনিতা ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা আটকে দিতে গেলেই আহিয়ান দরজায় হাত দেয়। ফলে আনিতা দরজা লাগায় না। আহিয়ান হ্যাঁচকা টানে আনিতাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। তারপর আনিতার হাত থেকে এলোমেলো কুচিগুলো নিয়ে সেগুলো গোছালো করে গুজে দেয়। আহিয়ান যখন কুচিগুলো গুজে দিচ্ছিলো তখন আহিয়ানের হাত আনিতার পেট স্পর্শ করে। সঙ্গে সঙ্গেই কেঁপে উঠে আনিতা। হার্ট খুব দ্রুত বিট করছে। থেকে থেকে লাফিয়ে উঠছে হৃদপিণ্ডটা। আহিয়ানের স্পর্শে জমে বরফ হয়ে গেলো আনিটা। আহিয়ান বুঝত পেরে মুচকি হাসলো। আনিতাকে অবাক করে দিয়ে আচমকা আহিয়ান ওকে কোলে তুলে নিলো। পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে আনিতা সাথে সাথেই আহিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরলো। প্রথমবার এরকমটা হওয়াতে বেশ লজ্জা পাচ্ছে আনিতা। লজ্জায় আহিয়ানের বুকে মুখ লুকালো। আনিতাকে কোলে করে নিয়ে আহিয়ান সুইচবোর্ডের দিকে গিয়ে দাঁড়ালে আনিতা ঘরের লাইট অফ করে দিলো। আনিতা আবারো আহিয়ানের শার্ট খামচে ধরলো। আহিয়ান আনিতার মাথার পিছনের চুলগুলো মুঠো করে ধরে আনিতার মুখ একদম ওর মুখের সামনে নিয়ে এলো। অদ্ভুত ভাবে আহিয়ান তাকিয়ে আছে আনিতার দিকে। চোখ ফেরানো দায় হয়ে যাচ্ছে। ঘোরলাগা দৃষ্টিতে আহিয়ান দেখছে আনিতাকে। আচমকাই আহিয়ান আনিতার ঠোঁট জোড়া নিজের আয়ত্ত্বে নিয়ে নেয়। আনিতার পুরো শরীর কেঁপে উঠে। আনিতা আহিয়ানকে সরিয়ে দিতে চাচ্ছে কিন্তু আহিয়ান আরো গভীর ভাবে মিশিয়ে নিচ্ছে নিজের সাথে। প্রথম স্পর্শ প্রথম অনুভূতি। একপর্যায়ে হাল ছেড়ে দিয়ে শান্ত হয়ে যায় আনিতা। আরো মিনিট দুয়েকের মতো আহিয়ান আনিতার ঠোঁটে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে ছেড়ে দেয় আনিতার ঠোঁট। ছাড়া পেয়ে আনিতা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। শ্বাস নিতে থাকে পরপর। আহিয়ান জোরে দুটো শ্বাস নিয়ে বলে,

–“আমি যখন ভালোবাসবো তখন একদম শান্ত হয়ে থাকবা। ফিল করবা আমার ভালোবাসাগুলোকে। আর যদি ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করেছো তো আরো বেশি করে ভালোবাসবো।”

আনিতা কিছু না বলে চুপ করে রইলো। লজ্জা লাগছে এবারে বেশ। এরকম কেউ করে? আর একটু হলেই ও দম বন্ধ হয়ে মারা যেতো এরকম একটা অবস্থা। আনিতাকে লজ্জা পেতে দেখে আহিয়ান মুচকি হাসলো। তারপর আনিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

–“প্রথম স্পর্শ প্রথম অনুভূতি। বেশ ছিলো কিন্তু।”

আহিয়ানের কথায় আনিতার কান গরম হয়ে এলো লজ্জায়। হৃদপিণ্ড প্রতিনিয়ত লাফিয়ে যাচ্ছে। আনিতার অবস্থা বুঝতে পেরে আহিয়ান আবারো মৃদু হাসলো। কিছু বলল না আর। অনেক লজ্জা পেয়েছে মেয়েটা আপাতত আর লজ্জা দিতে চাচ্ছে না। আহিয়ান আনিতাকে কোলে করে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। আনিতা আহিয়ানের গলা ছেড়ে দিয়ে পাশ ফিরে শুতে গেলেই আহিয়ান আটকে দেয় আনিতাকে। তারপর শব্দ করে খুউউব গভীর ভাবে একটা চুমু খায় আনিতার কপালে। আবারো খানিকটা কেঁপে উঠলো আনিতা। আনিতার কপাল থেকে নিজের ঠোঁট সরিয়ে নিয়ে আনিতার পাশে শুয়ে পড়লো আহিয়ান। আনিতার গলায় কিছুক্ষণ মুখ গুজে রেখে ধীর কন্ঠে আহিয়ান বলল,

–“কিছু কথা বলার আছে আনি।”

–“ব্ বলুন তবে আগে দূরে সরে যান প্লিজ।”

–“উঁহু এখন তো যাচ্ছি না। বিয়ে করা বউ তুমি আমার। সো এখন আমি এভাবেই থাকবো। যখন ইচ্ছে হবে কাছে আসবো যখন ইচ্ছে হবে ভালোবাসবো।”

–“অ্ অস্বস্তি হচ্ছে।”

–“হোক।”

আহিয়ান আনিতার গলা থেকে মুখ সরিয়ে আনিতার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলল,

–“মাসখানেক আগে তুমি সতেরোতে পা দিয়েছো। এখনো অনেকটাই ছোট তুমি। তাই আমি আপাতত ফিজিক্যালি মিশতে চাচ্ছি না তোমার সাথে। অন্তত ১৮+ হোক তারপর ভাবা যাবে এ বিষয় নিয়ে। তোমার কোনো আপত্তি আছে এতে?”

আনিতা মাথা নাড়িয়ে ‘না’ জানালো। অর্থাৎ আনিতার আপত্তি নেই এতে। আনিতা অবশ্য মনে মনে বেশ খুশিই হলো আহিয়ানের এরকম একটা সিদ্ধান্তে। আহিয়ান আনিতাকে একবার পরখ করে বাঁকা হেসে বলে,

–“তুমি যদি চাও তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি এখনই রাজি__”

–“এই না না। একদম না প্লিজ।”

আনিতার কান্ডে আহিয়ান ঠোঁট কামড়ে ধরে খানিকটা শব্দ করেই হেসে দিলো। আনিতার কোমড় ধরে টেনে আনিতাকে আরো কাছে নিয়ে আসলো আহিয়ান। তারপর আনিতার কানের লতিতে হালকা ভাবে একটা কামড় দিয়ে ফিসফিস করে বলল,

–“ফিজিক্যালি যাচ্ছি না ঠিকই। তবে একটু আগে যে ভালোবাসাগুলো দিলাম সেগুলো কিন্তু আমি সুযোগ পেলেই করে বসবো। বারন করতে পারবে না একদম।”

আনিতা আর কিছু বলতে পারলো না। হাত পা অবস হয়ে আসছে ওর আহিয়ানের এতটা কাছে আসায়। আর আহিয়ানের এরকম লাগামহীন কথাবার্তা শুনে আনিতার তো হার্টফেল হওয়ার উপক্রম। মৃদু হেসে সরে আসলো আহিয়ান। আনিতার কপালে শব্দ করে একটা চুমু খেয়ে বলল,

–“ঘুমাও এখন।”

আনিতা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানাতেই আহিয়ান বলল,
–“ভালোবাসি।”

প্রত্যুত্তরে আনিতাও বলল,
–“আমিও ভালোবাসি।”

আহিয়ান মুচকি হেসে আনিতাকে বুকের মাঝে টেনে নিলো। আনিতাও চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মতো আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে রেখে ওর বুকে মাথা রেখে আহিয়ানের হার্টবিট শুনতে লাগলো। আনিতাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রেখেই খানিক বাদে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয় আহিয়ান। আহিয়ানের হার্টবিট শুনতে শুনতে একপর্যায়ে আনিতাও ঘুমিয়ে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ~

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here