শুধু তোমারই জন্য ২ পর্ব -১১+১২

#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী।

|১১|

সাড়ে সাতটা নাগাদ আনিতার ঘুম ভেঙে যায়। আড়মোড়া ভেঙে উঠটে গেলেই বুঝতে পারলো আহিয়ান ওকে এখনো কাল রাতের মতোই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। মৃদু হাসলো আনিতা। আলতো করে আহিয়ানের চুলগুলো ছুঁইয়ে দিলো। ঘুমন্ত আহিয়ানকে দেখতে বেশ লাগছে আনিতার। অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো আনিতা। ওর পেটের উপর থেকে আহিয়ানের হাতটা আলতো ভাবে সরিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো আনিতা। ফ্রেশ হয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো আনিতা। নিজের দিকে খেয়াল করলো একবার। কুচিগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। শাড়ি পড়ে ঘুমানোর ফলে শাড়িটা কুঁচকে আছে। কাবার্ড থেকে একটা কূর্তি নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। মিনিট পাঁচেক বাদেই চেঞ্জ করে আসলো আনিতা। আহিয়ান তখনো ঘুমিয়ে আছে। অনেক রাত করে ঘুমানোর ফলে আহিয়ানকে আর ডাকলো না। দরজা খুলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

আনিতা সোফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে ফোন ঘাটছে প্রায় মিনিট বিশেক হবে। রোদেলা ওরা কেউ এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। তাই একা একাই বসে আছে ও। এখন ফোন ঘাটা ছাড়া ওর আর কোনো কাজ আছে বলে মনে হচ্ছে না। একা একা বোরিং ফিল করছে খুব আনিতা। রখনই আয়রা ধপ করে এসে আনিতার পাশ ঘেঁষে বসে পড়লো। আনিতার দিকে কিছুক্ষণ জহুরি চোখ দিয়ে তাকিয়ে রইলো। তারপর আনিতার দিকে খানিকটা ঝুকে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

–“কি ব্যাপার আম্মাজান? কালকের রাতটা কেমন কাটলো? ফিলিংসট কেমন কালকে রাতের?”

আনিতা চোখ পাকিয়ে তাকালো আয়রার দিকে। সাথে সাথেই আয়রা হেসে দিলো। আনিতা ভ্রু কুঁচকে বলল,
–“এই তোমার লজ্জা করে না আমাকে এসব জিজ্ঞেস করতে? আমি না তোমার শাশুড়ী হই?”

–“আজকালকার শাশুড়ী বউমা কোনো ব্যাপার না বুঝেছো?”

–“তো আমি কি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম বাসর রাতে আমার চাচ্চুর সাথে তুমি কি কি করেছিলা?”

–“এই বলবো আমরা কি কি করছিলাম? শুনবে তুমি? বলি?”

–“এই না না। একদম না।”

আনিতার কথা বলার ভঙ্গি দেখে আয়রা উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। আনিতা মুখ ফিরিয়ে আবারো ফোনে মনোযোগ দিলো। আয়রা কিছু সময় আনিতার সাথে গল্প করে ওখান থেকে উঠে কিচেনে চলে গেলো। কিছু সময় বাদেই অনিমা অদ্রি আর নূর বের হয়ে এলো। নূর এসেই ধপ করে আনিতার পাশ ঘেঁষে বসে ওকে জড়িয়ে ধরলো। নূর কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে গেলেই আনিতা বলে,

–“কাল রাতের ব্যাপারে যদি কিছু জানতে চাস তো থাপ্পড় লাগাবো এখনি। থাপ্পড় খেতে না চাইলে চুপচাপ থাক।”

–“এই তুই বুঝলি কি করে আমি কাল রাতের কথা জানতে চাচ্ছিলাম।”

–“টপ সিক্রেট। বলা যাবে না।”

প্রত্যুত্তরে নূর ভেঙচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আনিতা মৃদু হাসলো। একে একে সবাই ঘুম থেকে উঠে চলে এলো। আনিতা ওদের সাথে কথা বলে নিলো কিছুক্ষণ। ওরা সবাই আনিতাকে পিঞ্চ মেরে কথা বলছিলো। যা আনিতার একদমই সহ্য হচ্ছিলো না। লজ্জায় লাল নিল সবুজ হচ্ছিলো আনিতা৷ শেষে উপায় না পেয়ে উঠে এলো ওখান থেকে। রুমে এসে আনিতা জোরে দুটো শ্বাস নিলো আগে। এতক্ষণ যেন দম বন্ধ করা অবস্থায় ছিলো আনিতা। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো আহিয়ান এখনো ঘুমোচ্ছে উপুড় হয়ে। আনিতা গিয়ে আহিয়ানের পাশে বসলো। আহিয়ানের চুলে হাত বুলাতেই আহিয়ান পিটপিট করে তাকালো আনিতার দিকে। আনিতাকে দেখতে পেয়ে আহিয়ান ওর কোমড় টেনে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো। তারপর আনিতার কোলে মাথা রেখে দুহাতে কোমড় আগলে নিলো আহিয়ান। আনিতার পেটে মুখ গুজে পড়ে রইলো আহিয়ান। আনিতার হার্টবিট মিস হচ্ছে। আহিয়ানের এতটা কাছে আসাতে। দ্রুত শ্বাস নিচ্ছে আনিতা। শরীরে কম্পন সৃষ্টি হয়েছে। অন্যরকম শিহরণ জাগছে আনিতার। আনিতা কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল,

–“দরজা খোলা আছে। কেউ এসে পড়বে তো। সরুন।”

–“আসলে আসুক তাতে সমস্যা কি? আমার বিয়ে করা বউকে আমি জড়িয়ে ধরে রেখছি অন্যকাউকে তো আর না।”

–“প্লিজ সরুন না।”

–“এভাবে থাকতে ভালো লাগছে না? অন্যকিছু করবো তাহলে? ওই যে কিছুটা কালকে রাতের মতো।”

–“এই একদম না। আপনি উঠুন না প্লিজ। নাস্তার টেবিলে সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।”

আহিয়ান বিরক্তি নিয়ে উঠে বসলো। দিব্যি তো ছিলো ওভাবে। কি দরকার ছিলো ডেকে তোলার? মেয়েটা কি বুঝে ও কাছে আসলেই আহিয়ান অন্যরকম হয়ে যায়? স্পর্শ করতে ইচ্ছে করে সবসময় ওকে? আহিয়ান উঠে পড়াতে আনিতা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। আহিয়ানের হাত ধরে ওকে বিছানা থেকে নামিয়ে ঠেলে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো৷ কাবার্ড থেকে একটা টাওজার আর টি-শার্ট বের করে ওয়াশরুমের দরজায় নক করলো। আহিয়ান দরজা খুলে আনিতার হাত ধরে টেনে ভিতরে নিয়ে দরজা লক করে দিলো। আহিয়ান যে এরকম করে বসবে সেটা আনিতা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি। শাওয়ার ছেড়ে আহিয়ান শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। আর আনিতা একদম দেয়ালের সাথে লেপ্টে রয়েছে। আহিয়ানের একহাত আনিতার কোমড়ে৷ আর অন্যহাত দেয়ালে রাখা। আনিতার গলায় মুখ ডুবায় আহিয়ান৷ আহিয়ানের সারা শরীর ভেজা থাকার ফলে আনিতাও ভিজে যাচ্ছে। কিছুটা সময় বাদে আহিয়ান আনিতার গলা থেকে মুখ সরিয়ে ঠোঁট জোরা আয়ত্ত্বে নিয়ে নেয়। মিনিট দুয়েকের মতো খুউউব গভীর ভাবে আনিতার ঠোঁটে চুমু খেয়ে আনিতার কপালে কপা ঠেকিয়ে দাঁড়ায় আহিয়ান। আহিয়ানের চুল থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় পড়া পানিগুলো আনিতার সারামুখ ভিজিয়ে দিচ্ছে। বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে আনিতা। আহিয়ান বাঁকা হাসে আনিতার অবস্থা বুঝতে পেরে৷ আহিয়ান আনিতার কোমড় ধিরে টেনে ওকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। আনিতা দুহাতে আহিয়ানের বুকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। আনিতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আহিয়ান মাথা চুলকে খানিকটা হাসলো।

আনিতা বাইরে থেকে ওয়াশরুমের দরজা লক করে দিলো। সাথে রুমের আর বারান্দার দরজাও লক করেছে। কাবার্ড থেকে আর একটা কূর্তি বের করে পড়ে নিলো সেটা। পরনে জামাটা পুরো ভিজে গিয়েছিলো। ওপাশ থেকে আহিয়ান বলছে,

–“পিচ্ছি-পাখি দরজা খুলো না। কতক্ষণ এভাবে ওয়াশরুমে দাঁড়িয়ে থাকবো?”

–“ওয়েট। জামা চেঞ্জ করছি আমি।”

চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো আহিয়ান। কিছুক্ষণ বাদে আনিতা গিয়ে দরজা খুলে দিতেই আহিয়ান বের হয়ে এলো। তাকালো একবার আনিতার দিকে। আনিতা চোখ সরিয়ে নিলো সঙ্গে সঙ্গেই। মৃদু হাসলো আহিয়ান। আহিয়ানকে যেতে বলে আনিতা বের হয়ে গেলো রুম থেকে। আনিতা গিয়ে চেয়ার টেনে রোদেলার পাশে বসে। রোদেলা আনিতার দিকে কিছুটা ঝুকে বলে,

–“তুই তো খুব ফাস্ট, রুমে গেলি পনেরো মিনিট কি বা তার বেশি হবে এর মাঝেই ড্রেস চেঞ্জ? এতটুকু সময়ে কেমতে কি দোস্ত?”

রোদেলার কথা শুনে আনিতা চোখ রাঙিয়ে তাকায় ওর দিকে। তা দেখে রোদেলা মৃদু হেসে মুখে আঙুল দিয়ে চুপ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ বাদে আহিয়ান এসে বসলো আনিতার পাশে। আহিয়ানের অন্যপাশে অনিমা বসা। আহিয়ান আসলে সকলে একসাথে খাবার খেতে শুরু করে। আহিয়ান নিজে খাচ্ছে আবার মাঝে মাঝে আনিতা আর অনিমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। দূর থেকে আনিতাদ আব্বু আম্মু এসব দেখে মুচকি হাসলো। আহিয়ান আনিতাকে এতটা ভালোবাসে। এত যত্ন করে আর কি চাই তাদের? নাস্তা শেষে ড্রয়িংরুমে বেশ কিছুটা সময় আড্ডা দিয়ে রুমে চলে যায় আহিয়ান। আনিতা আরো কিছু সময় ওদের সাথে বসে গল্প করে।

আজকে রোদেলা শুভ তন্ময় ওরা সকলেই চলে যাবে। সাথে অদ্রিও যাবে ওর ক্লাস শুরু হয়েছে। অদ্রি এবারে ক্লাস টেনে পড়ে৷ সাইন্স গ্রুপ থেকে। তাই ক্লাস মিস দেওয়াটা ঠিক হবে না ওর। সেজন্যই তন্ময় ওদের সাথে আজকেই ফিরে যাবে৷ আহিয়ানও যেতে চেয়েছিলো কিন্তু আনিতাদের বাসার সবাই জোর করেই রেখে দেয়। আর কটা দিন থেকে যেতে বলেন। তিন দিন বাদেই আনিতার আব্বু চলে যাবেন সেজন্যই জোর করে রাখা হয় আহিয়ানকে।

দেখতে দেখতে আরো কটা দিন কেটে যায়৷ আনিতার আব্বুও চলে গিয়েছেন। উনাকে এয়ারপোর্টে ছাড়তে আনিতা অনিমা আহিয়ান ফাইয়াজ আর আনিতার ছোট চাচ্চু গিয়েছিলেন। আহিয়ান চলে যাবে কাল সকালে। এখান থেকেই সোজা অফিস জয়েন করতে হবে। আর্জেন্ট ফোন এসেছে অফিস থেকে। সেই নিয়ে আনিতার একটু আধটু মন খারাপ হচ্ছে। কিন্তু কি করার? যেতে তো হবেই। এভাবে তো আর শশুড় বাড়িতে থেকে যেতে পারবে না। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। মিনিট দশেকের মাঝেই মাগরিবের আজান দিবে। আনিতা ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখদুটো ওদের বাসার পিছনের ওই দূর মাঠের দিকে। যেখানে আহিয়ান বাচ্চাদের সাথে ক্রিকেট খেলছে। আর মাঠের এক কিনারে বসে ফাইয়াজ ফোনে কথায় বলায় ব্যস্ত। এই কটা দিন খুব ভালো সময় কাটিয়েছে ওরা দুজনে। তাই তো কালকে আহিয়ান চলে যাবে বলে আনিতার বেশ মন খারাপ।

–“কি হতো যদি কাছেপিঠেই কোথাও একটা আহিয়ানের বাসা হতো তাহলে?”

একদৃষ্টিতে দূর মাঠে ওই আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকেই কথাটা বলল আনিতা। গাল বেয়ে একফোঁটা অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে আবার তা মুছেও নিলো ও। আর যাই হোক কাঁদবে না ও। এটাই মনস্থির করলো। দরকার হলে আহিয়ান চলে যাওয়ার পর কাঁদবে তারপরও ওর সামনে কিছুতেই চোখের পানি ফেলবে না৷ ওরই এতটা কষ্ট হচ্ছে তাহলে আহিয়ানের তো হবেই ওকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য।

মাগরিবের আজান পড়তেই আহিয়ান আর ফাইয়াজ মাঠ ছেড়ে বাসায় এলো। রুমে ঢুকে সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে আগে ফ্রেশ হয়ে নিলো আহিয়ান। সাথে পরনে টি-শার্ট-টা চেঞ্জ করে নিলো ঘামে একেবারে ভিজে গিয়েছে তাই। বারান্দায় আনিতাকে দেখতে না পেয়ে অনিমাকে ডাকলো আহিয়ান। বেড সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে এক চুমুকে অর্ধেক গ্লাস ফাঁকা করে ফেলল ও। কিছু সেকেন্ড বাদেই অনিমা এসে বলল,

–“ডাকছিলেন ভাইয়া?”

–“হুম। তোমার আপু কোথায়? দেখছি না যে।”

–“ছাদে গিয়েছিলো তো। মনে হয় এখনো নামেনি। আমি গিয়ে ডেকে নিয়ে আসছি। আপনি বসুন।”

–“না থাক। তুমি গিয়ে স্কুলের পড়া কমপ্লিট করো। আমি যাচ্ছি ছাদে।”

–“আচ্ছা।”

অনিমা রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আহিয়ান বিছানা থেকে ফোন নিয়ে পকেটে পুরে ছাদের দিকে পা বাড়ালো। আহিয়ান গিয়ে দেখলো আনিতা উলটো ঘুরে ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে। ও পিছন থেকে গিয়ে আনিতাকে জড়িয়ে ধরলো। আনিতা প্রথমে চমকে উঠলেও স্পর্শ চিনে পরে স্বাভাবিক হয়ে গেলো। আহিয়ান পিছন থেকে আনিতার কাঁধে থুতনি রেখে দুহাতে পেট জড়িয়ে ধরলো। আনিতা আহিয়ানের হাতের উপর নিজের হাত রাখলো। অজান্তেই আনিতার গাল পেয়ে একফোঁটা অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়লো। আহিয়ান বুঝতে পেরে সাথে সাথেই আনিতাকে ছেড়ে দিয়ে ওর দু কাঁধ ধরে নিজের দিকে ঘুরালো। আনিতার দু গালে হাত রেখে বলল,

–“কি হয়েছে আনি? কাঁদছো কেন তুমি? কেউ কিছু বলেছে?

আনিতা মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো৷ আহিয়ান আবারো ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–“তাহলে? শরীর খারাপ লাগছে? এই ওয়েট কত তারিখ আজকে? পে্ পেটে ব্যাথা করছে তোমার?”

আনিতার এবারেও মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। আহিয়ান আনিতাকে নিজের কাছে টেনে ওর চোখ মুছে দিয়ে বলে,
–“তাহলে? বলো না কি হয়েছে? টেনশন হচ্ছে তো আমার। কাঁদছো কেন তুমি?”

আনিতা কিছু না বলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আহিয়ানকে। আহিয়ানও জড়িয়ে নিলো ওকে দুহাতে৷ আনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
–“মন খারাপ?”

এবারে আনিতা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। আহিয়ান এতক্ষণে একটা স্বস্তির শ্বাস নিলো। হঠাৎই মনে পড়লো ও কালকে চলে যাচ্ছে। এবারে আহিয়ান আনিতার মন খারাপের কারন বুঝতে পারলো। আনিতাকে ছেড়ে দাঁড়ালো আহিয়ান। আনিতার দুগালে হাত রেখে আনিতার মুখটা উঁচু করে ওর কিছুটা সামনে নিয়ে বলল,

–“কালকে চলে যাচ্ছি বলে মন খারাপ?”

আনিতা হ্যাঁ বলে আবারো জড়িয়ে ধরলো আহিয়ানকে। আহিয়ান মুচকি হাসলো। আনিতার মাথায় আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বলল,
–“আরেহ পাগলী এতে মন খারাপ করে কাঁদার কি আছে? আবার আসবো তো। সারাজীবনের জন্য তো আর চলে যাচ্ছি না। আমার বউ যতদিন এই বাড়িতে আছে ততদিন আমি আসবোই। আর এখন তো আমাদের বিয়ে হয়েছে লুকিয়ে চুড়িয়ে আর দেখা করতেও হবে না। সরাসরি বাসায় ঢুকে পড়বো। আনি কেঁদো না প্লিজ।”

আনিতা আহিয়ান বুক থেকে মাথা তুলে আহিয়ানের দিকে তাকালো। কাঁদোকাঁদো স্বরে বলল,
–“আর কিছুদিন থেকে গেলে হয় না? প্লিজ।”

আহিয়ান মুচকি হেসে আনিতার নাক টেনে দিয়ে বলল,
–“ইমারজেন্সি ফোন এসেছে অফিস থেকে দেখলেই তো। আর আমার কি ইচ্ছে করছে আমার এই পিচ্চি বউটাকে রেখে যেতে? আমার কি কষ্ট হচ্ছে না তুমিই বলো?”

–“জানি না আমি।”

–“আচ্ছা জানতে হবে না। আমার কি ইচ্ছে করছে জানো?”

–“না বললে জানবো কি করে?”

–“তা-ও তো কথা। আচ্ছা শুনো বলছি__”

–“হুম।”

–“আমার ইচ্ছে করছে, আম্মু__আই মিন তোমার আম্মুকে গিয়ে বলি, আম্মু আপনার মেয়েকে ছাড়া তো আমি থাকতে পারছি না। ওর এক্সাম শেষ হওয়ার পর যে আমাদের বাড়ি যাওয়ার কথা সেইটা ক্যান্সেল। ওকে আমি কালই আমার সাথে করে নিয়ে যাবো।”

আনিতা আহিয়ানের বুক থেকে মাথা তুলে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো ওর দিকে। আনিতার এই মূহুর্তে আহিয়ানের ফেস এক্সপ্রেশন দেখে বেশ হাসি পাচ্ছে৷ হাসি কন্ট্রোল করে আনিতা চোখ পাকিয়ে বলল,
–“এই কথাগুলো যদি আপনি গিয়ে আম্মুকে বলেন তাহলে সবাই কি ভাববে জানেন তো?”

আহিয়ান মলিন মুখে আনিতার দিকে তাকিয়ে বলল,
–“বলবে দুদিন হলো বিয়ে করেছে এখনই বউ ছাড়া থাকতে পারে না। এই ছেলে তো দেখছি একেবারেই বউ-পাগল।”

আহিয়ানের কথা এবং মুখ এক্সপ্রেশন দেখে আনিতা এবার না হেসে পারলো না। খানিকটা শব্দ করেই আনিতা হেসে উঠলো। আহিয়ান মুগ্ধ হয়ে আনিতার হাসি দেখলো। যাক এতক্ষণ ম্যাডামের মুখ হাসি ফুটেছে। কথাটা ভেবে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো আহিয়ান। তারপর আনিতার দিকে কিছুটা ঝুকে বলল,
–“এই চেষ্টা করে দেখি না একবার। আম্মুকে গিয়ে বলে দেখি কি বলেন উনি। যদি লটারি মিলে গেলো তাহলে তো ভালোই।”

আহিয়ানের কথা শুনে আনিতা চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল,
–“এই একদম না। পরে সবাই বলবে আমার জামাই বউ পাগল। আর এটা শুনতে আমার মোটেও ভালো লাগবে না।”

আহিয়ান ঠোঁট কামড়ে ধরে খানিকটা শব্দ করেই হেসে ফেলল আনিতার কথায়। তার আনিতাকে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো নিজের বুকের মাঝে।

চলবে ইনশাআল্লাহ~#শুধু_তোমারোই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|১২|

কপালের উপর উল্টোভাবে হাত রেখে বিছানার হেডবোর্ডের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে আনিতা। মাথাটা ধরেছে খুব। রাতে তেমন ঘুম হয়নি সেজন্য। ফোন ভাইব্রেশনের শব্দে চোখ মেলে তাকালো আনিতা। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আহিয়ান কল করেছে। সময় দেখে নিলো একবার। সকাল সাড়ে দশটা বাজে। ফোন রিসিভ করে কানে নিলো ও। ওপাশ থেকে আহিয়ান বলে,
–“হ্যাঁ আনিতা।”

–“বলুন কোথায় আছেন এখন? ঠিকঠাক মতো গিয়ে পৌঁছাতে পেরেছেন তো?”

–“হ্যাঁ মাত্রই অফিসে ঢুকলাম। কি করছো তুমি?”

–“এই তো কিছু না। এমনি বসে আছি।”

–“মাথা যন্ত্রণা আছে এখনো?”

–“কিছুটা।”

–“খেয়ে মেডিসিন নাও যাও।”

–“আপনার সাথেই তো নাস্তা প্লাস মেডিসিন দুটোই খেলাম তাহলে আবার কেন?”

–“সে তো খেয়েছো আরো দু ঘন্টারও বেশি সময় আগে। আর মাথা যন্ত্রণার জন্য তেমন খেতে পারোনি। এখন খেয়ে মেডিসিন নাও আবার৷ তারপর রেস্ট করো।”

–“ইচ্ছে করছে না।”

–“যা বলছি চুপচাপ তা করো। আর খেয়ে টেক্সট করে জানাবা আমাকে। মনে থাকবে?”

–“হুম।”

–“না খেয়ে মিথ্যা বললে কিন্তু খারাপ হবে খুব। আমি আম্মু বা অনিমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করবো কিন্তু খেয়েছো কিনা।”

–“আচ্ছা রে বাবা খাবো বলছি তো।”

–“কি বললা?”

–“কই কিছু না তো।”

–“না একটু আগে কি বললা তুমি?”

–“বাবা বলছি।”

–“আমি তোমার বাবা লাগি?”

–“নাহ তো। আপনি আমার বাবা লাগতে যাবেন কোন দুঃখে? ওটা তো এমনি কথার কথা বলছি আজব তো মশাই।”

–“কি লাগি আমি তোমার?”

–“জামাই লাগেন জামাই।”

–“হুম গুড। মনে রাখবা কথাটা। জামাইর কথা সবসময় শুনতে হয় বুঝলা? এখন যাও খেয়ে নাও আগে।”

–“আচ্ছা।”

–“বিজি হয়ে পড়বো এখনি। তুমি আমাকে টেক্সট করে রেখো। আমি ফ্রি হয়ে কল ব্যাক করবো। ওকে?”

–“হুম।”

–“ভালোবাসি পিচ্ছি, রাখছি।”

ফোন রেখে দিলো আহিয়ান। আনিতা ওঠে ওয়াশরুমে গিয়ে হাতমুখে পানি দিলো। তারপর চেয়ার টেনে বসে টেবিলে মাথা রাখলো। কিছুক্ষণ বাদেই আনিতার আম্মু এসে আনিতার সামনে খাবার প্লেট আর ঔষধের পাতা রাখলো। তা দেখে আনিতা বলে,

–“তুমি বুঝলে কি করে খেতে এসেছি আমি?”

–“আহিয়ান ফোন করে বলেছে খাবার দিতে। তুই যদি আবার খেতে না আসিস সেজন্য। মাথা ব্যাথা কি অনেক করছে?”

–“নাহ সামান্য আছে।”

কপাল চাপড়ানোর মতো অবস্থা এখন আনিতার৷ উফস এই ছেলেটা পেলো কি? সামান্য মাথা ব্যাথাই তো। এজন্য কি বারবার খাবার খেয়ে ঔষধ নিতে হবে? পাগল একটা। আনিতা আর কিছু না বলে খেতে শুরু করলো। আনিতার আম্মু কিচেনে চলে গেলেন আবার।

এর মাঝে অনেকগুলা দিন কেটে যায়। আনিতা ওরা সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছে। দোতলার একটা ফাঁকা ক্লাসে বসে আড্ডার আসর জমিয়েছে আনিতা আর ওর ফ্রেন্ডরা। আচমকাই কেউ একজন বলে উঠলো,
–“কাঠবিড়ালি শুনছো?”

এরকম ডাকে আনিতা চমকে উঠলো। কেননা এই নামে ওকে শুধুমাত্র অনিকই ডাকতো৷ যখন সম্পর্ক ছিলো ওদের দুজনের। কিন্তু এরপর তো আর ডাকেনি তাহলে আজ কেন? এর আগে যখন একবার দেখা হয়েছিলো তখনও তো নাম ধরে ডেকেছিলো। তাহলে আজ কেন এই নামে ডাকছে? পিছনে তাকিয়ে অনিককে দেখে আরো একদফা চমকে গেলো আনিতা। অনিক? ও কি করছে এখানে? মনে মনে এরকম হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। দৃষ্টি সরিয়ে নিলো আনিতা। তাকাতে চায় না আর ওই মানুষটার দিকে। ওর মন প্রান সবটা জুড়ে এখন শুধু আহিয়ান আছে। অন্যকাউকে নিয়ে ও এখন আর বিন্দুমাত্র ভাবতে চায় না। অনিক আবারো বলে,
–“একটু শুনো না কিছু কথা আছে।”

আনিতা উল্টো দিকে ঘুরে বসেই বলল,
–“আপনার যা বলার আছে আপনি বলতে পারেন। আমি শুনছি।”

–“তুমি থেকে আপনি হয়ে গেলাম কবে থেকে?”

–“যেদিন থেকে আমার মন জুড়ে অন্য একজনের বসবাস শুরু হয়েছে ঠিক সেদিন থেকে।”

–“হাসালে। তুমি আমাকে ভুলে অন্যকাউকে নিয়ে ভাবছো এটাও আমায় বিশ্বাস করতে হবে?”

প্রত্যুত্তরে আনিতা আর কিছু বলল না। ও বলতে চাইছে না কিছু। অনিক এবারে কিছুটা এগিয়ে এসে বলল,
–“তোমার সাথে কথা বলার জন্য আমি মিরপুর থেকে ছুটে এসেছি। সত্যিই কিছু কথা ছিলো একটু শুনবে প্লিজ?”

–“বললাম তো আমি শুনছি আপনি বলুন।”

–“একটু সাইডে চলো প্লিজ।”

কিছুক্ষণ ভেবে আনিতা হাই বেঞ্চে থেকে নেমে দাঁড়ালো। রোদেলা ওদের থেকে চার পাঁচ হাত দূরত্বে গিয়ে দাঁড়ালো দুজনে। রোদেলা ওরা সবটা নিরব দর্শকের মতো দেখছে। ওরা সকলে এটাই বুঝে উঠতে পারছে না হঠাৎ করে এই অনিক উদয় হলো কেন? আর ওর কি-ই বা বলার আছে? অনিক আনিতার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আগের তোমার সাথে এখন তোমাকে আমি একদমই মিলাতে পারছি না। এতটা চেঞ্জ এই কয়েকমাসে?”

আনিতা মৃদু হেসে জবাব দিলো,
–“মানুষ পরিবর্তনশীল। আর আমিও তো একটা মানুষ। সবাই তো সবসময় একরম থাকে না মিস্টার। বাদ দিন এসব। আপনি কি বলতে এসেছেন সেটা বলুন।”

অনিক আমতা আমতা করে বলে,
–“আ্ আনিতা আমি এই কয়েকমাসে রিয়্যালাইজ করতে পেরেছি আ্ আমি তোমাকে ভা্ ভালোবাসি। এই কয়েক মাসে আমি তোমার জন্য যেই টান-টা অনুভব করেছি সেটা গত ছয় বছরেও আমি কনার জন্য অনুভব করিনি।”

অনিকের কথাটা শুনে আনিতা কিছুটা শব্দ করেই হাসলো। তা দেখে অনিক বলল,
–“তুমি হাসছো?”

আনিতা হাসি থামিয়ে সিরিয়াস ভাব নিয়ে এলো চোখমুখে। তারপর বলল,
–“আর হাসছি না। তারপর বলুন?”

–“ব্যাক করা যায় না আমার লাইফে? সত্যি বলছি আর কষ্ট দিবো না তোমাকে। তোমার ভালোবাসাটা আমার খুব দরকার আনিতা। আমি আগে বুঝিনি তুমি আমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসো। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি। আর এই ভালোবাসাটা আমি হারাতে চাই না আনিতা।”

–“এই সামান্য কয়েক মাসের ভালোবাসাটা আপনার এখন এতই প্রয়োজন হয়ে পড়লো? যার কাছে কিনা আপনার আর কনার ছয় বছরের ভালোবাসা আজকে তুচ্ছ? কিন্তু আমি তো আর এখন আপনাকে ভালোবাসি না।”

–“মিথ্যা বলছো তুমি। আমি দেখেছি তুমি আমার জন্য কতটা পাগলামি করেছো। তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো। প্রথম যেদিন আমাদের দেখা হয়েছিলো সেদিনও আমি তোমার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পেয়েছিলাম। সেই ভালোবাসাটা আমি অগ্রাহ্য করতে পারিনি। এতদিন নিজের সাথে অনেক লড়েছি। তাই তো আজ তোমার কাছে ছুটে এসেছি আমি।”

–“এখন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখুন তো সেই ভালোবাসাটা আর দেখত পান কিনা? পাবেন না কারন এখন আমার চোখে অন্যকেউ তার জন্য আমার ভালোবাসাটা দেখতে পায়।”

অনিক আনিতার হাত দুটো ধরে বলল,
–“আনিতা আমি জানি তুমি মিথ্যে বলছো সবকিছু। তুমি আমাকে ছাড়া অন্যকাউকে ভালোবাসতে পারো না। ভুল করেছি আমি। কিন্তু এখন তো শুধরে নিতে চাইছি। প্লিজ ব্যাক করো না। চলো না আবার সবটা ঠিক করে নেই।”

আনিতা ঝামটা মেরে অনিকের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
–“ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ মি। বললাম না আমি ভালোবাসি না আপনাকে? অন্যকাউকে ভালোবাসি আমি। যে আমাকে তার থেকেও বেশি ভালোবাসে। যে আমাকে হারানোর ভয়ে মাত্র দেড় মাসের সম্পর্কেই বিয়ে করে__”

–“পিচ্ছি-পাখি?”

কথার মাঝেই আহিয়ানের কন্ঠস্বর পেয়ে চমকে উঠলো আনিতা। আহিয়ান? ও আবার ভুল বুঝবে না তো? তাড়াতাড়ি পাশ ফিরে তাকালো আনিতা। দরজার কাছেই আহিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। অনিকও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আহিয়ানের দিকে৷ আনিতা যে এখন আর অনিককে ভালোবাসে না সেটা বুঝানোর জন্য আনিতা দৌড়ে গিয়ে আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরলো। আহিয়ানও জড়িয়ে নিলো আনিতাকে নিজের সাথে। অনিক অবাক চোখে শুধু দেখছে সবটা। আনিতা আহিয়ানকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
–“আপনি যে আজকে আসবেন সেটা আমাকে আগে থেকে জানালেন না কেন?”

মৃদু হেসে আহিয়ান জবাব দিলো,
–“বলে দিলে কি আর সারপ্রাইজ থাকতো বলো?”

–“তা অবশ্য থাকতো না ”

আহিয়ান আনিতাকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে রোদেলা জেরিন তাসকিয়া ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,
–“শ্যালিকারা ভালো আছো তো?”

রোদেলা ওরা তিনজনে একসাথে হেসেই জবাব দিলো যে ওরা ভালো আছে। আহিয়ানের দৃষ্টি এখন অনিকের উপর গিয়ে ভালো ভাবে পড়লো। অনিককে দেখে আহিয়ান অবাক হলো বেশ। আনিতার হাত ধরেই অনিকের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আহিয়ান বলল,
–“অনিক? তুই এখানে? আনিতার সাথে কথা বলছিলি দেখলাম। দুজন দুজনকে আগে থেকেই চিনিস?”

আনিতা ঘাবড়ে গেলো এবার। অনিক যদি উল্টাপাল্টা কিছু বলে দেয় তখন? অন্যদিকে অনিকও বেশ অবাক হচ্ছে। আহিয়ান তো কিছু মাস আগে বিয়ে করেছে তাহলে আনিতাই কি আহিয়ানের? নাহ আর ভাবতে পারলো না অনিক। অনিককে চুপ থাকতে দেখে আহিয়ান আনিতাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–“আনি ও হচ্ছে আমার ফুপ্পির ছেলে। মানে আমার কাজিন। ওর একটা কাজ থাকাতে বিয়েতে আসতে পারেনি। আর অনিক ও হচ্ছে আনিতা আমার ওয়ান এন্ড অনলি বউ। মানে তোর ভাবী।”

আনিতা অবাক হলো বেশ। আহিয়ান আর অনিক ওরা দুজনে ভাই? যদি অনিক কখনো উল্টাপাল্টা কিছু বুঝায় আহিয়ানকে? অনিকের জন্য যদি ওর আর আহিয়ানের মাঝে ঝামেলা সৃষ্টি হয় তখন? তখন কি করবে আনিতা? এসব ভেবে আনিতার হাত পা অবস হয়ে আসতে শুরু করলো৷ আহিয়ান অনিককে বলল,
–“তুই বললি না তো এখানে কি করছিস?”

–“ও্ ওই এক ফ্রেন্ডের সাথে একটা কাজে এসেছিলাম। এখানে আনিতা মানে ভাবীকে এই কলেজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছিলাম। একটা আর্টিকেল বানাতে হবে আমাদের। সেজন্যই__”

–“আচ্ছা বুঝতে পেরেছি।”

পাশ থেকে রোদেলা আহিয়ানকে বলে উঠে,
–“জিজু ভাইয়ের সাথে তো সবসময়ই কথা বলতে পারবেন। এখন আমাদের সাথে এসে আড্ডায় যোগ দিন তো।”

আহিয়ান মুচকি হেসে আনিতাকে নিয়ে ওদের সামনের হাই বেঞ্চে গিয়ে বসলো৷ সাথে অনিককেও ডেকে বসালো অন্য একটা বেঞ্চিতে। সকলে মিলে বেশ আড্ডা দিচ্ছে। শুভ এসেও জয়েন হলো ওদের সাথে। অনিক চুপচাপ শুধু শুনছে। আর আড়চোখে আনিতাকে দেখছে। এতে আনিতার বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। আড্ডার এক পর্যায়ে রোদেলা কলেজ ট্যুরের কথা বলল। তা শুনে আহিয়ান বলে,
–“কোথায় নেওয়া হচ্ছে এবারে কলেজ থেকে?”

জেরিন বেশ উৎফুল্ল মনে বলল,
–“গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সমাধি কমপ্লেক্সে।”

আনিতা আহিয়ানের হাত ধরে ঝাকিয়ে বলল,
–“এই শুনুন না। একটা কথা বলবো।”

–“বলো।”

–“ওরা সব্বাই যাবে ট্যুরে। আমিও যাবো। আপনি একটু আব্বু আম্মুকে ম্যানেজ করে দিন না।”

–“বাসায় থেকে যেতে দিচ্ছে না?”

–“আজকেই জানলাম ট্যুরের কথা। বাসায় এখনো জানায়নি। কিন্তু আমি জানি আব্বু যেতে দিবে না।”

–“তাহলে বলছো কি করে উনারা যেতে দিবে না?”

–“দিবেই তো না। আমি জানি যেতে দিবে না। ক্লাস টেনে তিন চারদিন অব্দি কান্নাকাটি করে তারপর রাজি করিয়েছিলাম। এবার আপনি একটু বলে দিন না প্লিজ।”

–“জার্নি করতে পারো না বলেই যেতে দিবে না তাই তো?”

আহিয়ানের কথায় আনিতা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো। আহিয়ান আনিতার হাতজোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে বলল,
–“তাহলে কি দরকার যাওয়ার? আব্বু আম্মু তো তোমার ভালোর জন্যই বলছে৷ ওখানে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তো তোমার আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে। তখন আরো মন খারাপ হবে বেশি এই ভেবে যে, ট্যুরে গিয়েছো ঠিকই তবে এঞ্জয় করতে পারোনি।”

আহিয়ানের কথা শুনে আনিতা গোমড়া মুখ করে বসে রইলো। রোদেলা তাসকিয়া জেরিন শুভ ওরা চারজনেই আহিয়ানকে বলল আনিতা না গেলে ওরা কেউ-ই যাবে না৷ আহিয়ান একপলক তাকালো আনিতার দিকে। আনিতা মাথা নিচু করে মুখ ভাড় করে বসে আছে। তা দেখে আহিয়ান মৃদু হেসে আনিতাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল,
–“বাব্বাহ আমার পিচ্চিটা দেখি রাগ করছে। আচ্ছা আচ্ছা অনেক রাগ করেছো। আর রাগ করতে হবে না। শিউর থাকো তুমি ট্যুরে যাচ্ছো। আমি বাসায় জানাচ্ছি আজকে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ~

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here