#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী
|২৭|
আহিয়ানদের বিল্ডিংয়ের সামনে এসে মাত্রই গাড়ি থামলো। তন্ময় নেমে পেছনের দরজা খুলে আনিতাকে ধরে। আহিয়ান নেমে গিয়ে আনিতাকে কোলে করে নিয়ে ভিতরে ঢুকে লিফটের দিকে এগিয়ে যায়। ফোর্থ ফ্লোরে এসে লিফট থেমে যেতেই আহিয়ান বের হয়ে ডানদিকের থার্ড ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়ে। আনিতাকে আহিয়ানের কোলে সেন্সলেস অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে আহিয়ানের আম্মু দৌড়ে আসেন ওদের কাছে৷ চিন্তিত কন্ঠে প্রশ্ন করেন,
–“আনিতার এখনো জ্ঞান ফিরেনি? এতটা সময় ধরে সেন্সলেস হয়ে আছে৷ সিরিয়াস কিছু হয়নি তো?”
আহিয়ান ওর আম্মুকে চোখ দিয়ে আস্বস্ত করে বললো,
–“রিল্যাক্স আম্মু। দুদিন ধরে শরীরের উপর দিয়ে তো আর কম ধকল যাচ্ছে না। খাওয়া ঘুম ঠিক মতো হচ্ছে না। তারউপর আজকে আবার অতিরিক্ত কান্না করেছে। সেজন্যেই সেন্সলেস হয়েছে।”
–“আচ্ছা আমি আমার রুম খালি করে দিচ্ছি। তুই ওকে আমার রুমে নিয়ে আয়।”
কথাটা বলেই আহিয়ানের আম্মু দ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। ওনার রুমে কিছু মেহমান বসে ছিলো। ওনাদের বের করে গেস্টরুম বা অন্যান্য রুমে গিয়ে বসতে বলে তার রুম খালি করে দিলেন। আহিয়ান ওখানে গিয়ে আনিতাকে শুইয়ে দিয়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে।
চোখেমুখে পানি ছিটা দেওয়ার পর মিনিট পনেরো বাদে আনিতার সেন্স ফিরে আসে। আহিয়ানের আম্মু গিয়ে বুকে আগলে নেন আনিতাকে। তখনই ফাইয়াজ অনিমা আর শুভ রুমে আসে। ফাইয়াজ গিয়ে আনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই আনিতা ফাইয়াজকে জাপ্টে ধরে কাঁদতে থাকে। ভাঙা ভাঙা গলায় বলে,
–“ভা্ ভাইয়া আমি আব্বুর কাছে যাবো। থাকবো না এখানে। ভালো লাগছে না আমার। প্লিজ নিয়ে চলো না।”
ফাইয়াজ মুচকি হেসে আনিতার মাথায় হাত রেখে বলে,
–“এখন থেকে তো এটাই তোর বাসা। এই বাসার মানুষগুলোই তোর আপনজন। প্রথমে কষ্ট হলেও এখানেই যে থাকতে হবে। যখনই ইচ্ছে হবে তখনই গিয়ে ঘুরে আসবি বাসায় থেকে। আহিয়ান যেতে না পারলে আমাকে বলবি আমি এসে নিয়ে যাবো তোকে।”
–“বিয়ে হইছে বলে কি ওটা আমার বাসা না? ওই বাসার মানুষগুলো কি আমার পর হয়ে গেছে?”
–“আরেহ পাগলী এমন কেন হবে? বাবা মা কখনো পর হয় নাকি? আমি বোঝাতে চেয়েছি এখন থেকে এটাও তোর নিজেরই বাসা। এই বাসার মানুষগুলোও তোর আপন। তোর বাবার বাসার মতোই বুঝলি?”
আনিতা কিছু বললো না। মিনিট দুয়েক বাদে রুহি এলো রুমে। এসে আনিতাকে নিয়ে বাইরে বের হয়ে এলো। বরন করা হবে ওদের। তখন আনিতা সেন্সলেস ছিলো বলে বরন করা হয়নি। আহিয়ান আর আনিতা ফ্ল্যাটের বাইরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আহিয়ানের আম্মু দুজনকে বরন করে দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে ওদের ভিতরে আসার জন্য জায়গা করে দিলেন। ভিতরে আসার জন্য ওরা পা আগাতেই রুহি তাতে বাঁধ সাধে৷ অবাক চোখে তাকায় সকলে রুহির দিকে। রুহি একগাল হেসে বললো,
–“আমার জা এত কষ্ট করে পায়ে হেঁটে ভিতরে আসবে কেন? আনিতাকে কোলে নিয়ে ভিতরে আসো তুমি।”
রুহি কথাটা বলার সাথে সাথেই আহিয়ান আনিতাকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
–“ওহ এই কথা? আগে বলবে তো। তাহলে আমার বউকে এত কষ্ট করে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো না। বরনের সময়ও ওকে কোলে তুলেই রাখতাম।”
আহিয়ানের এমন লাগামহীন কথায় আনিতা লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো। ওর কথা শুনে সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠে। লজ্জায় আনিতা আহিয়ানের বুকে মুখ লুকায়। আহিয়ান আনিতাকে কোলে করে ভিতরে ঢুকে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসিয়ে দেয়৷ আনিতাকে বসিয়ে দিয়েই আহিয়ান নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। আনিতার দুই পাশে অনিমা আর অদ্রি বসে আছে। আর নুজাইরাহ আনিতার কোলে। আশেপাশের ফ্ল্যাটের লোকজন এসে নতুন বউ দেখে যাচ্ছে। সবাইক নতুন বউয়ের মুখ দেখে কম বেশি মন্তব্য করছে। এসবে আনিতার বেশ লজ্জা লাগছে। শুভ সোফার হাতলে বসে আনিতার মাথায় গাট্টা মেরে বললো,
–“কিরে শাকচুন্নী ফাইনালি তাহলে শশুড় বাসায় এসেই পড়লি? এবার আমারেও একটু কারো সাথে সেটিং করায় দে না। তোর সবাই জোরা শুধু আমি একাই সিংগেল।”
আনিতা পালটা শুভর বাহুতে একটা থাপ্পড় মেরে বললো,
–“আমি তোরে বদদোয়া দিলাম, তুই আজীবন সিংগেলই থাকবি।”
বেশ কিছুটা সময় এভাবে আড্ডা চলে সকলের। হঠাৎ করেই আনিতার পেটে পেইন হচ্ছে। সাথে মাথাটাও ধরেছে। আনিতা অদ্রিকে বললো,
–“আমাকে একটু রুমে দিয়ে আসবে? ভালো লাগছে না।”
অদ্রি অস্থির কন্ঠে বললো,
–“তোমার শরীর খারাপ লাগছে তুমি আমাকে আগে বলবা না? চলো।”
কথাগুলো বলেই অদ্রি আনিতাকে ওর মায়ের রুমে নিয়ে শুইয়ে দিলো। অদ্রি অনিমা থাকতে চেয়েছিলো ওর কাছে। ও জোর করেই বাইরে পাঠিয়েছ। ঘুমোবে ও একটু। তাই অদ্রি আর অনিমা দুজনেই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। রুম থেকে বের হওয়ার আগে আনিতা বললো,
–“অদ্রি লাইট অফ করে দিও প্লিজ।”
অদ্রি ‘আচ্ছা’ বলে লাইট নিভিয়ে চলে গেলো রুম থেকে। মিনিট পাঁচেক বাদেই আহিয়ান হদতন্ত হয়ে রুমে এসে লাইট অন করলো৷ আনিতা তখন গুটিশুটি মেরে একহাত পেটে এবং একহাত কপালের উপর দিয়ে শুয়ে ছিলো। আনিতা উঠে বসার আগেই আহিয়ান ওর পাশে গিয়ে বসে চিন্তিত কন্ঠে বললো,
–“অদ্রি বললো শরীর খারাপ লাগছে তোমার। কি হয়েছে? বলো আমাকে। ডক্টর নিয়ে আসবো?”
–“এত উতলা হওয়ার কিছু হয়নি। এমনি পেটে পেইন করছিলো আর মাথা ধরেছে।”
–“না খেয়ে থাকলে তো পেটে পেইন করবেই না? আর আরো জোড়ে চিৎকার করে কাঁদো মাথা ব্যাথা এমনি চলে যাবে।”
–“রাগ করছেন কেন?”
–“তো করবো না? দুদিন ধরে খাওয়া দাওয়া করোনি আসার সময় ওভাবে কাঁদলে শরীর তো খারাপ লাগবেই।”
–“আমার জায়াগায় আপনি হলে বুঝতেন মেয়েদের বাবার বাড়ি ছেড়ে আসাটা কতখানি কষ্টের।”
আহিয়ান আনিতাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“আচ্ছা এখন এসব কথা না বলি? আম্মুকে খাবার আনতে বলছি চুপচাপ খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নিবা ওকে?”
–“আপনি খাবেন না?”
–“আমি ফাইয়াজদের সাথে খেয়ে নিবো। আগে তুমি খেয়ে নাও কেমন?”
কথাগুলো বলে আহিয়ান আনিতার কপালে চুমু দিয়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে। মিনিট দুই বাদেই আহিয়ানের আম্মু আর রুহি খাবার হাতে নিয়ে রুমে এলেন। আহিয়ানের আম্মু খাবার প্লেট নিয়ে আনিতার সামনে বসে বললো,
–“তোর শরীর খারাপ লাগছে আগে বলবি না আমাদের? কাজের জন্য তোর দিকটা খেয়ালও রাখতে পারছি না। আমারই উচিত ছিলো আগেই তোকে খাইয়ে দেওয়া।”
–“আহ আম্মু! তেমন কিছু না তো। অযথা চিন্তা করছেন আপনারা মা-ছেলে।”
–“আপনি কি হ্যাঁ? রুহি আমাকে তুমি বলে তুইও আমাকে তুমিই বলবি। আর কিছু মনে করিস না। তোকে তুই করে বললাম বলে।”
আনিতা মৃদু হেসে বললো,
–“কিছু মনে করার কি আছে? তুমিও তো আমার আম্মুই। আর আম্মুরা কি মেয়েদের তুমি করে বলে নাকি? তুই-ই তো বলে।”
–“আচ্ছা অনেক কথা হয়েছে। এবার চুপচাপ করে খেয়ে নে।”
কথাগুলো বলে আহিয়ানের আম্মু ভাতে হাত দিতে গেলেই আহিয়ান এসে ডাকে উনাকে। আহিয়ান রুমে এসে বলল,
–“আম্মু ভাবীর কাছে খাবারটা দিয়ে আসো। তুমি এখানে ফাইয়াজ অনিমা ওদের খেতে দাও।”
আহিয়ানের কথা শুনে উনি খাবার প্লেটটা রুহির হাতে দিয়ে বের হয়ে গেলেন রুম থেকে। আহিয়ান যাওয়ার আগে রুহিকে বললো,
–“ভাবী ও খেতে না চাইলে জোর করে খাওয়াবা। আমার বউ যদি কম খেয়েছে না তাহলে ওর পানিশমেন্ট তুমি পাবা। সবটা খাওয়াতে না পারার জন্য।”
রুহি মুচকি হেসে বললো,
–“তোমার বউকে তাহলে আমি খাওয়াতে পারবো না ভাই। তোমার বউকে তুমি নিজেই খাওয়াও এসে।”
–“আপাতত এটা সম্ভব না বলেই তোমাকে বলছি।”
কথাগুলো বলতে বলতে আহিয়ান বের হয়ে গেলো রুম থেকে। রুহি হাসতে হাসতে আনিতার মুখে এক লোকমা ভাত তুলে দিলো। খুব কষ্টে আনিতা ভাত চিবোচ্ছে। তা দেখে রুহি বললো,
–“কোনো সমস্যা হচ্ছে?”
–“করলা ভাজি দিও না। খুব তেতো এটা।”
–“ইশ্ আগে বলবি তো। আমি জানতাম না।”
কথাগুলো বলে রুহি ভাজিগুলো একসাইডে রেখে দিলো। মাছের বাটি থেকে এক পিস ভূনা ইলিশ পাতে তুলে নিলো রুহি। মাছের কাটা বেছে তারপর খাওয়াতে শুরু করলো আনিতাকে। দু/তিন লোকমা খাওয়ার পর আনিতা আর খেতে না চাইলে রুহি বললো,
–“তোর বর কি বলে গেলো শুনিস নি? আমার আবার বাপু অত পানিশমেন্ট পাওয়ার শখ জাগেনি।”
কথাগুলো বলতে বলতে রুহি গরুর মাংস তুলে নিলো প্লেটে। জোর জবরদস্তি করে অর্ধেকটা খাবার খাইয়ে রুহি চলে গেলো রুম থেকে। কিছুক্ষণ বাদে ফাইয়াজ রুমে এলে ওর ফোন দিয়ে বাসার সকলের সাথে কথা বলে ও। ফোনের মাঝেও আনিতার সেকি কান্না। বাসার সকলেই বোঝায় ওকে। আজকের রাতটাই তো। কালকে তো আবার বাসায় যাচ্ছেই। আনিতাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ফোন রেখে দেন উনারা।
–
রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ বাজে। গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে আনিতা। ক্লান্ত থাকায় শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়ে ও। রুহি এসে আনিতাকে দু/তিন বার ডাকার পর আনিতা চোখ মেলে তাকায়। রুহি আনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
–“আহিয়ানের রুমে যাবি চল।”
কথাটা বলেই আনিতাকে ধরে বিছানা থেকে নামালো। আহিয়ানের রুমের সামনে এসে দেখলো ছোটখাটো একটা জটলা পাকানো এখানে৷ আহিয়ানের রুমের দরজা আটকে ওর সব বন্ধুরা কাজিনরা দাঁড়িয়ে আছে। রুহি আনিতাকে আহিয়ানের পাশে দাঁড় করিয়ে দিয়ে সবার সাথে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
–“দেখো ভাই এত সময় নষ্ট করছো কেন? আখেরে কিন্তু তোমারই লস। ভিতরে গিয়ে এখনো ফটোশুট করা বাকী। সাথে আরো কতকিছুও তো বাকী তাই না? রাত তো শেষ হতে চললো। তাই বলবো কি এত সময় নষ্ট না করে টাকাটা দিয়েই দাও।”
–“আমাকে কি ফকির বানানোর ধান্দা তোদের সকলের? ভাবী তোমার বরের মত আমার অত টাকা পয়সা নেই। লজ্জা করে না তোমার দেবরকে ফকির বানানোর প্ল্যান করছো?”
–“দেবর তো আমার একটাই। আর বাসর তো তুমি একবারই করবা। এত কষ্ট করে আমরা ঘর সাজিয়েছি আমাদের খুশি না করেই তুমি বউ নিয়ে ভিতরে চলে যাবে এমন তো হবে না।”
–“ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন ভাবী, বাসর আমি এর আগেও একবার করছি। আর তখনো তোমরা আমার থেকে টাকা নিছো। তাহলে তো এখন টাকা দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। না?”
–“এত কিছু শুনছি না। তুই টাকা বের কর আগে।”
তন্ময়ের কথায় আহিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“তোর বিয়েতে আমি সুধে আসলে সব ফেরত দিবো শালা।”
কথাগুলো বলে আহিয়ান পকেট থেকে ওয়ালেট বের করতেই রুহি ছোঁ মেরে সেটা নিয়ে নেয়৷ দরজা খুলে আহিয়ান আনিতাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকতে গেলেই বাধ সাধে ক্যামেরাম্যান। তিনি ভিতরে গিয়ে বলেন বউকে কোলে নিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতে। উনি ভিতর থেকে সবটা ভিডিও করবেন। আহিয়ান তো আবার খুবই বাধ্য ছেলে। বউকে কাছে পাওয়ার চান্স কিছুতেই মিস করতে চায় না। তাই একটানে আনিতাকে কোলে তুলে নিলো। তারপর দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। ভিতর থেকে সবটা ভিডিও করা হচ্ছে। ফটোগ্রাফার বেশ কিছু স্টাইলে দুজনের ফটোশুট করে নেন আগে। তারপর ভিডিও করেন কিছুটা সময়। তারপর তিনি রুম থেকে চলে যান। কিন্তু তন্ময় রাতুল আরহান শুভ রুহি অদ্রি আর ওর ফ্রেন্ড আরাধ্যা দাঁড়িয়ে আছে এখনো। এককোনে অনিকও দাঁড়িয়েছে এসে যখন ওদের ফটোশুট চলছিলো। আনিতার চোখ অনিকের উপর পড়তেই ও কিছুটা কেঁপে উঠে। অনিক ওদের দুজনের দিকেই তাকিয়ে আছে। বিশেষ করে আনিতার দিকে। আহিয়ান বিষয়টা বুঝতে পেরে আনিতার হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে নিলো। বিষয়টা অনিকের চোখ এড়ালো না, তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে রুম থেকে বের হয়ে গেলো ও।
রাত দুটো নাগাদ বাজে। তন্ময় ওরা এখনো রুম থেকে যায়নি। দুজনকে জ্বালিয়েই যাচ্ছে৷ ফাইয়াজ অবশ্য চলে গেছে অনেক আগেই। ছোট বোনের বাসরঘর বলে কথা ও তো আর এখানে থাকতে পারে না। আহিয়ান ওদের দিকে করুন ফেস করে তাকিয়ে বললো,
–“আচ্ছা তোরা চাইছিস কি? আমাকে একটু বলবি? রাত ফুরিয়ে ভোর হতে চললো। আমাদের এত সুন্দর রাতটাকে স্পয়েল না করলেই হচ্ছে না তোদের তাই না?”
রাতুল বাঁকা হেসে বললো,
–“ওমা ঘন্টা দেড়েক আগেই না বললি তোদের একবার বাসর হয়েছে। তারপর এসবের কোনো মানেই হয় না? বাসর তো একবার করেছিস আর করার দরকার কি? চল সবাই মিলে জম্পেশ একটা আড্ডা দেই বাসরঘরে। আজকের এই রাতটা ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবে৷”
আরহান রাতুলের কথায় সম্মতি জানিয়ে বললো,
–“হ্যাঁ কাল সকাল সকালই নিউজপেপারের হেডলাইনে তোদের দুজনের নাম বের হয়ে যাবে। বড় বড় অক্ষরে ছাপানো হবে, ‘নতুন বর বউ বাসর ঘরে তাদের প্রাইভেসি টাইম স্পেন্ড না করে বন্ধুবান্ধব নিয়ে বাসরঘরেই জম্পেশ আড্ডা বসিয়েছে বিস্তারিত___”
–“তোদের বেলায় যদি সবকিছু আমি সুধে আসলে না উঠাইছি তাহলে আমার নাম আহিয়ান আদৃত না। যা ভাগ শালা।”
কথাগুলো বলতে বলতে আহিয়ান সবগুলোকে ঠেলে রুম থেকে বের করে দিয়ে ওদের মুখের উপর শব্দ করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো৷ আহিয়ানের কান্ডে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ওরা সকলেই উচ্চস্বরে হেসে উঠে।
চলবে ইনশাআল্লাহ~#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী
|২৮|
সাড়ে সাতটার মতো বাজে। আহিয়ান ঘুম থেকে উঠে দেখে আনিতা বিছানায় নেই। দরজা খোলা, তারমানে রুমেও নেই। আহিয়ান আলসেমি ছেড়ে বিছানা থেকে নেমে জিন্স আর শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আধ ঘন্টা বাদে ফ্রেস হয়ে বের হলো। একদম ঠিকঠাক ভাবে রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে গিয়ে সোফায় বসলো। মিনিট দুয়েক বাদে অদ্রি এসে এক মগ কফি দিয়ে গেলো। অদ্রি চলে যেতে নিলেই আহিয়ান বলে,
–“আনিতা কোথায় অদ্রি? ওকে দেখছি না যে।”
–“বড় ভাবীর সাথে কিচেনে আছে।”
প্রত্যুত্তরে আহিয়ান কিছু না বলায় অদ্রি চলে গেলো। আহিয়ান কফির মগে এক চুমুক দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। কফির মগ হাতেই কিচেনের সামনে গিয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। রুহি সকালের নাস্তা বানাচ্ছে আনিতা দাঁড়িয়ে দেখছে সেটা। মাঝে মধ্যে মশলাপাতি এগিয়ে দিচ্ছে। নাহিয়ান এসে দাঁড়ায় আহিয়ানের সামনে। আহিয়ান কফির মগে আর একটা চুমুক দিয়ে ঠিক হয়ে দাঁড়ালো। নাহিয়ান আহিয়ানকে আগাগোড়া স্ক্যান করে বললো,
–“কি করছিস এখানে?”
আহিয়ান আমতা আমতা করে বললো,
–“ক্ কিছু না তো।”
ওদের দুই ভাইয়ের কথায় রুহি আর আনিতা পাশ ফিরে তাকায়। আনিতা নাহিয়ানকে দেখে ঘোমটা টেনে মাথায় দিলো। রুহি বাঁকা হেসে বললো,
–“কি ভাই? বউকে ছাড়া এক মূহুর্তও বুঝি চলছে না?”
আহিয়ান দাঁত কেলিয়ে হেসে জবাব দিলো,
–“না গো ভাবী। সবে মাত্র কালকে বউকে নিয়ে আসলাম বাড়িতে। আর আজকে সকালেই যদি ঘুম থেকে উঠে পাশে বউকে না দেখতে পাই তাহলে কিভাবে চলে বলো? অস্থির অস্থির তো লাগবেই।”
আহিয়ানের কথায় আনিতা লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো। রুহি আর নাহিয়ান মুখ টিপে হাসছে। নাহিয়ান আহিয়ানের পিঠে চাপড় মেরে বললো,
–“মুখ সামলে কথা বল হারামী। এখানে আমি তোর বড় ভাই-ও আছি।”
আহিয়ান করুন সুরে বললো,
–“তুমি বড় ভাই আছো তাতে কি? তুমি যে বিয়ের পর পর প্রথম কয়েক মাস বউকে সাথে করে নিয়ে বেলা আটটা বাজে রুমের দরজা খুলেছো সে বেলায়? তখন মনে ছিলো না বাসায় তোমার ছোট ভাই-ও আছে। সে-ও ইন ফিউচার এসবই করবে। আফটার অল বড়াদের থেকেই তো ছোটরা শিখে।”
আহিয়ানের কথায় নাহিয়ান কেশে উঠলো। ইশ্ ছোট ভাইয়ের বউয়ের সামনে বেচারার মান-সম্মান বলতে আর কিচ্ছু রইলো না। অবশিষ্ট সম্মানটুকু থাকতে মানে মানে ওখান থেকে কেটে পড়লো নাহিয়ান। ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আহিয়ান রুহি শব্দ করে হেসে ফেললো। আনিতা বড্ড কষ্ট করে হাসি চেপে রেখেছে। ও যদি হাসে তাহলে কেমন একটা দেখায় না? হাজার হলেও নাহিয়ান ওর ভাসুর। রুহি হাসি থামিয়ে আনিতার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“ওভাবে হাসি চেপে রেখে পরে আবার পেট ফেটে মরে যাস না। হাসি আটকে রাখতে নেই বৎস এখনই সময় হেসে নে।”
রুহি এমন ভাবে কথাগুলো বললো আনিতা না হেসে পারলো না। সাথে রুহি আর আহিয়ানও হেসে উঠলো।
–
বিকেল তিনটা বেজে সাইত্রিশ মিনিট। রুহি অদ্রি অনিমা সবে আনিতাকে নিয়ে পার্লার থেকে এলো। আহিয়ান আর আনিতার রিসেপশনের জন্য বুকড করা হলে-ই এসেছে ওরা। স্টেজের উপর সিংহাসনের মতো বড় দুটো চেয়ার বসানো। রুহি আনিতাকে সেখানে নিয়েই বসালো। বেবি পিংক কালার লেহেঙ্গা পড়েছে আনিতা। আর আহিয়ান কালো প্রিন্স স্যুট। কিছুক্ষণ বাদে আহিয়ান এসে আনিতার পাশে বসলো। আনিতা আহিয়ানের দিকে ঘুরে বললো,
–“আপনার ফোনটা একটু দিবেন? আমার ফোনটা অনিমার কাছে। নয়তো___”
আহিয়ান পকেট থেকে ফোন বের করে আনিতার হাতে দিয়ে বললো,
–“এত এক্সকিউজ দেওয়ার কি আছে? যখন ইচ্ছে হবে তুমি নিজেই নিয়ে নিবে আমার পারমিশন নেওয়ার দরকার নেই।”
আনিতা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। আনিতা ফোনের লক নিজেই খুলে নিলো। আনিতা আগে থেকেই আহিয়ানের ফোনের পাসওয়ার্ড জানে। তাই আর আহিয়ানকে লক খুলে দিতে বলতে হলো না। আনিতা বললো,
–“আব্বুর নাম্বার কি সেভ করা আছে আপনার ফোনে?”
–“হ্যাঁ, কেন বলো তো?”
–“ফোন করবো আব্বুকে। এখনো আসছে না কেন?”
–“তুমি আসার মিনিট পাঁচেক আগেই উনারা সকলে এসেছেন। ভাইয়া খাওয়ার ওখানে___
এইটুকু বলতেই আহিয়ান থেমে গেলো। দাঁত দিয়ে জিভ কেটে বললো,
–“ইশ্ একদম ভুলে গিয়েছিলাম তুমি তো আব্বুর সাথে খাবে বলে খাওনি। চলো চলো।”
কথাগুলো বলে আহিয়ান আনিতার হাত ধরে স্টেজ থেকে নেমে খাওয়ার ওখানে চলে গেলো। আনিতার আব্বু আর চাচ্চু তখনো খেতে বসেনি। বাকি সকলে খাচ্ছে। আনিতা গিয়ে ওর আব্বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। আনিতার আব্বু হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। মেয়েকে এক হাতে জড়িয়ে নিয়ে বললেন,
–“কি হলো মা কাঁদছো কেন? এসেছি তো আমরা। তোমার এই আম্মুর সাথে কথা হয়েছে আমরা তোমাদের আজই নিয়ে যাবো।”
আনিতার আব্বু কিছুটা থেমে আবারো বললো,
–“খাওনি তো এখনো। খাবে তো চলো।”
আনিতা সম্মতি জানালো। আহিয়ানের পরিবারের সকলে আনিতার আব্বু চাচ্চুরা কাকিমারা সবাই মিলে বড় একটা টেবিলে খেতে বসলো। আনিতার এক পাশে আহিয়ান আর অন্যপাশে ওর আব্বু বসেছে। আনিতার আব্বু মেয়েকে নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছেন।
স্টেজে আহিয়ান আর আনিতা দুজনে চেয়ারে বসে আছে। ওদের দুজনের পুরো ফ্রেন্ড সার্কেল ওদের সাথে দাঁড়িয়ে গ্রুপ পিক তুলছে। একসময় আনিতা ওদের যাওয়ার সময় হয়ে আসে। আনিতা ওরা সকলের থেকে বিদায় নিয়ে ওদের বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হয়। আহিয়ানের সাথে আজকে রাতুল তন্ময় আরহান অনিক ছাড়া আর কেউ যায়নি। আহিয়ান আর আনিতা অবশ্য ওর ভাই ভাবী আর অদ্রিকে বেশ কয়েকবার বলেছিলো। কিন্তু গত কয়েকদিন শরীরের উপর যে ধকল গেলো তারপর আর এই জার্নিটা ওরা করতে চাইছে না। শরীর সায় দিচ্ছে না। সবাই বড্ড ক্লান্ত।
রাত আটটা নাগাদ ওরা সকলে আনিতাদের বাসায় এসে পৌঁছায়। সকল রিচুয়্যালস মেনে আনিতা নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়েছে। আহিয়ান ড্রয়িংরুমে সকলের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। অনেকে আবার বর দেখতে এসেছে। বেশ কিছু সময় বাদে আহিয়ান উঠে রুমে যেতেই দেখে আনিতা ওভাবেই শুয়ে আছে। দরজা ভিরিয়ে দিয়ে আহিয়ান আনিতার পাশে গিয়ে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। সাথে সাথেই চোখ মেলে তাকালো আনিতা। আহিয়ান ওর দিকে কিছুটা ঝুকে বললো,
–“এভাবে শুয়ে আছো কেন? শরীর খারাপ লাগছে? পেটে পেইন করছে আবারো?”
–“একটু হচ্ছে।”
আনিতা কাচুমাচু করে শুয়ে আছে। ওর বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। নয়দিন বাদে আজ সকাল থেকে আবার ব্লিডিং হচ্ছে ওর। অস্বস্তির কারনে আহিয়ানকে বলতেও পারছে না। বেবি মিসক্যারেজ হওয়ার পর প্রায় বাইশ তেইশ দিন অব্দি ব্লিডিং হয়েছে। মাঝে সুস্থ হয়েছিলো আজকে নয়দিনের মাথায় হঠাৎ করেই আবার ব্লিডিং হচ্ছে। সাথে পেটে পেইনও হচ্ছে। আহিয়ান বুঝতে পারছে আনিতার কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু ঠিক আন্দাজ করে উঠতে পারছে না। আহিয়ান আনিতার হাত দুটো ধরে বললো,
–“আনি কি হয়েছে তোমার? বলো আমাকে। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে না তুমি ঠিক আছো।”
আনিতা আমতা আমতা করে বললো,
–“আস্ আসলে__”
–“কি হয়েছে আনিতা? বলো আমাকে।”
–“ব্ ব্লিডিং হচ্ছে সাথে পেটে পেইন।”
–“কখন থেকে হচ্ছে?”
–“স্ সকাল থে__”
–“আনিতা আর ইউ ম্যাড? সকাল থেকে ব্লিডিং হচ্ছে আর তুমি আমাকে এখন বলছো? লাস্ট ন’দিন আগে ভালো হয়েছিলে না? আবার এখনই। পে্ পেটে কি বেশি পেইন হচ্ছে? চলো ডক্টর এর কাছে যাবো এক্ষুনি।”
–“কি বলছেন এসময়ে?”
–“হ্যাঁ এক্ষুনি। পরে যদি আবার পেইন বেরে যায় তখন? চেঞ্জ করে এক্ষুনি বের হবো আমরা।”
–“কাল সকালে যাই? এখন গেলে কেমন একটা দেখায় না?”
–“আনি__”
–“প্লিজ। এখন না। ঘুমোলে ঠিক হয়ে যাবে। কাল সকালে যাবো প্রমিস।”
আহিয়ান আর কিছু বললো না। বাড়ি ভর্তি লোকজন। এসময়ে হসপিটালে চলে গেলে সবাই খুব একটা ভালো চোখে দেখবে না। তাই আহিয়ান আনিতার কথাটা মেনে নিলো।
রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বাজে। আনিতা ওরা সকলে মিলে খেতে বসেছে। আনিতার অবশ্য খাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু আহিয়ান জোর করে খাবার টেবিলে নিয়ে এসেছে ওকে। আনিতা শুধু চেয়ার টেনে বসে আছে। আহিয়ানই খাইয়ে দিচ্ছে ওকে। দূর থেকে আনিতার আম্মু এই দৃশ্যটা দেখে আচল দিয়ে চোখের পানি মুছলেন। সব বাবা মা চায় এরকম একজন ছেলেকে তার মেয়ের জামাই করতে।
খাওয়া শেষে সকলে বায়না ধরেছে ছাদে বসে আড্ডা দিবে। সকলে রাজিও। শুধুমাত্র আহিয়ান ছাড়া। ও যাবে না সাথে আনিতাকেও যেতে দিবে না। আনিতা অবশ্য যেতে চাচ্ছেও না। ও খেয়েই রুমে চলে গিয়েছে। আহিয়ান তাসকিয়াকে ডেকে বললো,
–“তোমরা গিয়ে আড্ডা দাও। তোমার ফ্রেন্ডের শরীর ঠিক ভালো না।”
–“কি হয়েছে ভাইয়া? আনিতার শরীর কি খুব খারাপ?”
–“ব্লিডিং হচ্ছে আবার। সকালটা হোক। হসপিটালে নিয়ে যাবো। ওরা বুঝতে চাইছে না কিছু। তুমি ওদেরকে একটু বুঝিয়ে বলো। আমি রুমে যাচ্ছি।”
–“আচ্ছা ভাইয়া। আপনি রুমেই যান। আমি সবাইকে বুঝিয়ে বলবো।”
আহিয়ান মৃদু হেসে রুমে চলে গেলো। আনিতা কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। আহিয়ান দরজা আটকে রুমের লাইট অফ করে দিয়ে আনিতার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। আনিতাকে টেনে নিজের বুকের উপর এনে শোয়ালো। আনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
–“কেমন লাগছে এখন?”
আনিতা আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“মেডিসিন নেওয়ার পর এখন একটু ভালো লাগছে।”
–“আচ্ছা। ঘুমানোর চেষ্টা করো এখন।”
আনিতা কিছু না বলে চুপ করে শুয়ে রইলো আহিয়ানের বুকের উপর। রাতে আনিতা যখন হসপিটালে যাওয়ার জন্য রাজি হচ্ছিলো না তখন আহিয়ান ওর পরিচিত একজন ডক্টরের থেকে গাইনী ডক্টরের নম্বর নেন। তাকে সবকিছু খুলে বললে তিনি কিছু ঔষধ দেন। আহিয়ান সেই ঔষধ এনেই আনিতাকে খাওয়ায় যার ফলে এখন আনিতার পেইন এবং ব্লিডিং কিছুটা কমেছে। আনিতার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আহিয়ানও একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।
–
বিকেল সাড়ে তিনটা নাগাদ বাজে। আহিয়ান আনিতাকে নিয়ে এখনই ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়বে। সন্ধ্যায় আনিতাকে নিয়ে ডক্টর এর কাছে যাবে। তাই এখনই বেরিয়ে পড়বে ওরা। আনিতা এবারেও যাওয়ার সময় সবাইকে ধরে বেশ কান্নাকাটি করে। সবাই আনিতাকে বেশ বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠায়। আনিতার আম্মু বারবার আহিয়ানকে বলে দিয়েছে ডক্টর কি বলে সেটা যেন ওনাদের ফোন করে জানায়। আহিয়ান সে ব্যাপারে আস্বস্ত করে এসেছেন উনাদের।
আনিতার অসুবিধার কথা ভেবেই আহিয়ান ওরা সবাই গাড়িতে করে যাচ্ছে। আহিয়ানের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে আনিতা৷ আহিয়ান ওর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। দু ঘন্টার পথ পেরিয়ে গাড়ি আহিয়ানদের বাসার সামনে এসে দাঁড়ায়। ঘুমিয়ে পড়েছে আনিতা। তাই আহিয়ান ওকে আর ডাকলো না। আনিতাকে কোলে করে নিয়েই লিফটে উঠে পড়লো ও।
কলিংবেলের শব্দে অদ্রি এসে দরজা খুলে দিলো। আনিতাকে এভাবে আহিয়ানের কোলে দেখে বেশ ঘাবড়ে গেলো ও। চিৎকার করে ওর আম্মুকে ডাকতেই আহিয়ান বলে,
–“চিৎকার করছিস কেন? ওর কিছু হয়নি ঘুমোচ্ছে ও।”
অদ্রির চিৎকারে আহিয়ানের আম্মু আর রুহি ততক্ষণে ড্রয়িংরুমে চলে আসেন। আনিতাকে এভাবে দেখে আহিয়ানের আম্মু বিচলিত কন্ঠে বলেন,
–“কি হয়েছে আনিতার? ও এভাবে___”
–“কিছু হয়নি আম্মু। ঘুমোচ্ছে। তবে ওর শরীরটা বেশি ভালো না। সন্ধ্যায় ডক্টরের এপয়েন্ট আছে সেখানে যাবো আনিতাকে নিয়ে।”
–“শরীর ভালো না মানে? আর ডক্টরের কাছে যাবি মানে?”
আহিয়ান রুমে গিয়ে আনিতাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সবটা বললো ওর আম্মুকে। আহিয়ানের আম্মুও বেশ চিন্তিত হয়ে আছেন আনিতার কথা শুনে। হঠাৎ করে আবার মেয়েটার হলো কি? সিরিয়াস কিছু না তো? এসব ভেবেই ভয়ে উনার বুক কেঁপে উঠলো।
রাত সাড়ে আটটা বাজে। আহিয়ান আর আনিতা এখনো হসপিটালে বসে আছে। সন্ধ্যায় ডক্টর দেখেছেন আনিতাকে। বেশ কিছু টেস্ট দিয়েছেন আনিতার। তার রিপোর্টস গুলোর জন্যই ওয়েট করছে ওরা। কিছু সময়ের মাঝে রিপোর্ট হাতে পেলেই আবার ডক্টরকে নিয়ে সেগুলো দেখাতে হবে। মিনিট দশেক বাদে সব ধরনের রিপোর্ট কাউন্টারে এসে জমা হলেই আহিয়ান সেগুলো সংগ্রহ করে নেয়। এবং আনিতাকে নিয়ে ডক্টরের কেবিনের সামনে গিয়ে বসেন। তিন/চারজনের পরের সিরিয়ালে আছে ওরা। কিছু সময় বাদে আনিতাকে ডাকলেই আনিতা আর আহিয়ান ভিতরে চলে যায়। আহিয়ান রিপোর্ট গুলো ডক্টরের দিকে এগিয়ে দেয়। বেশ সময় নিয়ে ডক্টর রিপোর্ট গুলো দেখছেন। এদিকে আহিয়ানের চিন্তায় গলা শুকিয়ে আসছে বারবার। কি এসেছে রিপোর্টে?
চলবে ইনশাআল্লাহ~
[