বাক্সবন্দী চিঠি পর্ব -২১+২২

গল্পঃ বাক্সবন্দী চিঠি
পর্বঃ ২১
লেখকঃ Ninika Jaman Noor
আবিরা সবাই একটা রুপ টপ রেস্টুরেন্টে এলো খেতে। ইতু, অনু, অর্পিতা, রুপু, অহনা, অয়ন, শ্রাবণ, কুয়াশা সবাই এলো সাথে। ইতু প্রথমে রাজি না হলেও অনুদের জোরাজোরিতে রাজি হয়। ইতুকে আবিরের পাশে জায়গা করে দিয়ে সবাই যার যার মতো বসে গেলো। ইতু কিছুতেই আবিরের সাথে বসবে না। সে অনুকে গুতো দিয়ে যাচ্ছে তার পাশে জায়গা দেয়ার জন্য। অনু বিরক্ত হয়ে বললো,” কি হয়েছে? এমন করছিস কেনো? দেখছিস না তোর দুলাভাইর সাথে প্রেম করছি। ডিস্টার্ব করিস না তো।”
ইতু পারছে না অনুকে কাঁচা চিবিয়ে খেতে। সব কয়টা ইচ্ছা করেই তার সাথে এমন করছে।
আবির এতোক্ষন ইতুকেই দেখছিলো, ইতুর এমন জেদ দেখে মুচকি হাসলো। ইতুর হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসালো।
ইতু উঠে যেতে নিলে আবির ইতুর কোমর চেপে ধরে।
আবিরের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায় ইতু।
বাকি সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে তাদের দিকে তাকিয়ে।
শ্রাবণ সে দিকে একনজর তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
“এমন করছো কেনো? সবাই দেখছে।”
“দেখুক তাতে কি। তুই আমার বিয়ে করা বউ তোকে যদি এখন সবার সামনে চুমুও খাই তাহলেও ওদের কিছু বলার থাকবে না।”
“ছিঃ দিন দিন এমন খাটাশ হয়ে যাচ্ছো কেনো?”
“তোর মতো পেত্নীর প্রেমে পড়েছি খাটাশ তো হবোই।”
ইতু নাক মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে ফিরে বসলো।
এতোক্ষন সবাই ওদের কান্ড দেখে মুচকি হাসছিলো ইতুকে এইভাবে মুখ ফুলাতে দেখে সবাই হোহো করে হেসে দিলো।
ইতুর মুখ ফুলানো যেনো আরো বেড়ে গেলো।
“তোরা আমার বন্ধু নাকি শত্রু? খুব মজা লাগছে না? একদিন আমার ও দিন আসবে দেখিস।”
অর্পিতা হেসে বললো,” এখন তোরই দিন চলছে তাও তুই কিছু করতে পারছিস না।”
রুপু বললো,” যানো আবির ভাই তোমাকে দেখার জন্য ও রোজ চুপিচুপি তোমার রুপ এ উঁকিঝুঁকি মারতো। তুমি বাইরে থেকে আসলে যেনো ও দেখতে পারে তাই প্রতিদিন তোমার রুমে গিয়ে জানালা খুলে দিয়ে আসতো। আর তোমার আসার টাইম হলে জানালার পাশে বই নিয়ে পড়ার ভান করতো।”
ইতু বিষ্ফোরিত চোখে রুপুর দিকে তাকিয়ে আছে।
লজ্জায় মাথা কাটা গেছে তার। ইচ্ছা করছে মাটি ফাঁক করে ঢুকে পড়তে।
আবির মুচকি হেসে ইতুর এমন লজ্জা পাওয়া দেখছে। লজ্জা পেলে মেয়েটাকে যে এতো অপরূপ লাগে মেয়েটাকি যানে সেটা?
কুয়াশা বলে উঠলো,” বাহ আমার শালিকা এতো ডেস্পারেট ছিলো? আর আমার বউকে দেখো পাশে যে তার স্বামী বসে আছে তার কোনো খেয়ালই নেই।”
অনু কুয়াশার পেটে গুতো মারলো।
ভাইয়ের সামনে মান ইজ্জত কিছু রাখলো না ছেলেটা। সবার দিকে তাকিয়ে অনুও মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইলো।
অয়ন বলে,”দেখেছিস আবির, তোর জন্য কি কি করেছে? আরেকবার তোকে কোন মেয়ে প্রপোজ করেছিলো বলে মেয়েটাকে কেমন শাসিয়ে ছিলো মনে আছে?”
ইতুরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এই ঘটনা তো অয়নরা জানার কথা না।
অহনা অবাক হয়ে বললো, “এই কাহিনি তোমারা কি করে যানো?”
অয়ন এক গাল হেসে আবিরের দিকে তাকালো। আবির বাঁকা হেসে ইতুর দিকে তাকিয়ে আছে।
“ইতু যে আবিরকে পছন্দ করতো আমরা তো আগের থেকেই যানি। ইভেন আবির নিজেও যানতো। একটু আগে ইতুর যে কাহিনিটা বললে এই কাহিনি আবির নিজেও যানে। প্রতিদিন এমন জানালা খোলা থাকা ইতুর ওই সময় বই নিয়ে সেখানে বসে থাকা এইসব একটা পাগলেও দেখলে বুঝবে।
তাই তো আবির ইচ্ছা করে ইতুকে দিয়ে ওর লাভ লেটার পাঠাতো যেনো ইতুর ফিলিংস চলে যায়।”
ইতু আড় চোখে আবিরের দিকে তাকালো। আবির ইতুর দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে।
ইতু উঠে ছাদের এক কোনায় চলে গেলো। শ্রাবণ উঠতে নিলে দেখে আবির এগিয়ে যাচ্ছে সে আর গেলো না।
শ্রাবণ শান্ত হয়ে এখানে বসে আছে তার এইসব কিছুই ভালো লাগছে না। সে চলে যেতে নিলে অর্পিতা হাত টেনে ধরে। শ্রাবণ ভ্রু কুঁচকে অর্পিতার দিকে তাকায়।
“কি হয়েছে? হাত ধরেছো কেনো?
” অন্যের বউএর দিকে না তাকিয়ে আশে পাশে ও তাকান মেয়ের তো অভাব নেই।”
শ্রাবণ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,” কিসব আজেবাজে কথা বলছো? হাত ছাড়ো সবাই আছে এখানে।”
“তো কি হয়েছে সবাই থাকলে? আমি নিজের জিনিস ধরে আছি কে কি বলবে তাতে আমার কিছু যায় আসে না।”
শ্রাবণ চমকে উঠে বললো,”তোমার জিনিস মানে?”
অর্পিতা মুচকি হেসে রুপুর সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। শ্রাবণ তখনও ঘোরের মধ্যে বসে আছে।
আবির ইতুর পাশে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়ায়। আবির মন দিয়ে ইতুকে দেখছে। বাতাসে মেয়েটার চুল উড়ছে মুখে এক রাস বিষন্নতা। এই রূপেও তাকে মায়াবী লাগছে। আবির হাত বাড়িয়ে চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিলো।
ইতু আবিরের দিকে তাকিয়ে দেখে আবির নেশাভরা চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ইতুর শরীর শিরশির করে উঠে। মাথা নিচু করে ঢোক গিলে নেয় ইতু।
আবির ইতুর গালে হাত দিয়ে আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে ফিসফিস করে বলে,” উঠে এলি কেনো? রাগ করেছিস আমার উপর? ”
ইতু ঠোঁট চেপে ধরে আছে, মাথা নাড়িয়ে ইশারা দিয়ে বুঝায় সে রাগ করেনি।
আবির স্মিথ হেসে বললো,”তাহলে উঠে এলি কেনো?”
ইতু নিচু আওয়াজে বলে, “তুমি আগে থেকে সবই যানতে তাই না?”
“হুম।”
“আমাকে নিয়ে খুব হাসতে না? কেমন পাগলামি করতাম তোমার জন্য।”
আবির তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো,”হাসবো কেনো? ভালোবাসা তো খারাপ কিছু না। আর কখন কার প্রতি ভালোবাসা জন্মাবে এটা আমাদের হাতে নেই। আমি শুধু চাইতাম তোর মনে আমার জন্য যে ফিলিংস ছিলো সেটা যেনো চলে যায়। তোর পুরো দুনিয়াতে শুধু আমি ঘুরছিলাম তখন। আর আমার জীবনে তখন কুহুর আগমনও ঘটে গেছে আমি চাচ্ছিলাম না তুই কষ্ট পাস।”
ইতু মাথা নিচু করেই বললো,”তুমি প্রথম কখন যানলে?”
আবির দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো, “যখন দেখলাম আম্র কাবার্ড থেকে আমার সব চেয়ে পছন্দের টি-শার্ট মিসিং আর তার দুইদিন পরেই জানালার ফাঁক দিয়ে দেখি তুই সেটা পরে দিব্যি নিজের রুমে ঘুরাফেরা করছিস।”
ইতু লজ্জায় চোখ বুজে নিলো। ইসস কি গাধামি করেছে সে। ইতুর আর এক মূহুর্ত এখানে দাঁড়াতে ইচ্ছা করছে না। সরে যেতে নিলেই আবির ইতুর কোমর চেপে ধরে। আঁচল ভেদ করে ইতুর পেটে হাত রাখে। ইতু চোখ খিঁচে বন্ধ করে আবিরের হাত খাঁমচে ধরে।
“কি,, করছো? ছাড়। সব জায়গায় এমন করা লাগবে? আমাকে লজ্জায় না ফেললে হয় না?”
আবির ইতুর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,” তোর লাজুক মুখ দেখলে একদম খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে আমি কি করবো বলতো।”
“তুমি একটা যাচ্ছেতাই।”
কথাটা বলে ইতু গটগট করে চলে গেলো অনুদের কাছে। আবির ও ঠোঁট কামড়ে হেসে ইতুর পিছু পিছু গেলো।
অয়ন আবিরকে পিঞ্চ মেরে বললো, “কিরে ভাই তোর সব জায়গায় রোমাঞ্চ না করলে চলে না? দেখতো ইতু বেচারি লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না।”
আবির ইতুর দিকে তাকিয়ে অয়নকে বললো,”এখনো বিয়ে করিসনিতো তাই বুঝবি না এইসব।”
“বাহ নিজে লুকিয়ে বিয়ে করে এখন আমাকে শুনানো হচ্ছে?”
“লুকিয়ে কোথায়? পরিবারের সবাইকে নিয়ে বিয়ে করেছি। ফকির মিসকিনকে তো আজকে জানালাম।”
“তুই কি আমাদের ফকির মিসকিন বোঝাচ্ছিস?”
আবির দুই হাত তুলে বললো,”দেখ আমি কিছু বলিনি যা বলার তুই নিজেই বলেছিস।”
সবাই আবিরের কথা শুনে হেসে ফেললো।
ডিনার শেষে সবাই বাসায় ফিরে গেলো।
__________________
বাসায় ফিরে ইতু আগে আগে ওয়াসরুমে গেলো ফ্রেশ হতে। ইতু বেরিয়ে এলে আবির ফ্রেশ হয়ে আসে। আবির এসে দেখে ইতু বেডে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আবির ইতুর মতলব বুঝে বাঁকা হাসে।
ধারীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে ইতুর পাশে বসে। ইতুর গাল স্পর্শ করলে ইতু ঝট করে চোখ খুলে বেড থেকে নেমে দাঁড়ায়। আবির ইতুর জায়গায় শুয়ে পড়ে। মাথার নিচে দুই হাত রেখে ইতুর দিকে তাকিয়ে ভ্রু উঁচু করে।
“আবির ভাই সমস্যা কি তোমার? আমি ঘুমোচ্ছিলাম তুমি ডির্স্টাব করলে কেনো?”
“চুপচাপ এখানে আয়।”
“না তুমি। নেমে এসো আমি তোমার সাথে শুবো না।”
আবির ভ্রু কুঁচকে বললো,” কেনো? কি সমস্যা? ”
ইতু কোমরে হাত দিয়ে বললো,” তুমি একটা উঁচু মাত্ররার অসভ্য। তুমি রেস্টুরেন্টে এমন করলে কেনো?”
আবির বেডে আরো শরীর এলিয়া দিয়ে বললো, “কি করেছি?”
“ও এখন ভদ্র সাজা হচ্ছে? তখন তুমি আমার কোমর,,,”
“কি হলো বল! কি করেছি তোর সাথে?” আবিরের ঠোঁটে মুচকি হেসে লেগে আছে।
ইতু বলতে গিয়ে বলতে পারছে না। অসস্তি লাগছে তার কেমন যেন।
আবির বুঝলো এইভাবে ওকে কাছে আনা যাবে না। এইবার নিজেই মাঠে নামলো।
আবিরকে উঠে আসতে দেখে ইতু পিছিয়ে গেলো। দৌড়ে পালাতে গেলেই আবির এসে হাত চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসলো।
ইতু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, “আ..বির ভাই কি করছো ছাড়ো।”
আবির ইতুর কোমর চেপে ধরে তিক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে।
“তোর আর আমার বিয়ে হয়েছে যে আজকে কয়দিন হচ্ছে?”
ইতু মোচড়ামুচড়ি করেই যাচ্ছি আবির থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য।
“জা..নি না আমি। ছাড়ো না এমন করছো কেনো?”
“এমন নাগিন ডান্স না দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়া। জানিস আমার থেকে ছাড়া পাবি না তাও এমন করছিস কেনো?”
“তুমি ছেড়ে দিলেই তো হয়। এমন জ্বালাচ্ছো কেনো?”
আবির আর শক্ত করে ইতুকে কাছে টেনে নিয়ে ফুঁ দিয়ে মুখের উপর পরে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিলো। ইতু সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
“তোকে ছেড়ে দেয়ার জন্য ধরেছি নাকি? এখন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতো তো না হয় আমার হাত অন্য কোথাও গেলে তখন কিন্তু আমাকে দোষ দিতে পারবি না।
ইতু চোখ খিঁচে বিরবির করে বললো, “তুমি একটা ইতর, অসভ্য।”
ইতুর কথাশুনে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো।
“আজকে বিয়ের পাঁচদিন হয়ে যাচ্ছে তাও বউ এর সাথে বাসর করতে পারলাম না। আর এই দিকে বউ আমাকে ভাই ভাই ডাকছে। এটা হচ্ছে সময় মতো বাসর না করার ফল।”
কানের কাছে ফিসফিস করে এমন কথা শুনে ইতুর শরীরের হিম শীতল হাওয়া বয়ে গেলো।
ইতু আবিরের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় আবিরের বুকে মুখ লুকালো।
“বাহ লজ্জা পেয়ে আমার বুকেই লুকানো হচ্ছে? একটু আগে যে পেট থেকে শাড়ি সরিয়ে আমাকে যে নিজের কাছে টানছিলি তার বেলায়?”
ইতু আবিরের বুকে জোরে একটা কামড় বসিয়ে দিলো।
আবির ব্যাথা পেয়ে ইতুর মাথা চেপে ধরলো। পরক্ষণেই ইতু সেখানেটা ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে।
“কেনো লজ্জা দিচ্ছ?”
“তাই বলে এইভাবে কামড়াবি? কোন রাক্ষসীকে বিয়ে করলাম আমি? এমন কামড় খেলে আমি নিজেকে ঠিক কি করে রাখি?”
“তোমাকে ঠিক থাকতে কে বলেছে?”
“আচ্ছা তাই? বিয়ের দিন রাতে শর্ত কে দিয়েছিলো?”
“আচ্ছা থাকো তুমি শর্ত নিয়ে আমি গেলাম ঘুমোতে।
ইতু চলে যেতে নিলেই আবির ইতুকে কোলে তুলে নেয়।
“আমি তো এটাই চাচ্ছিলাম কখন তুই নিজে এসে ধরা দিস আমার কাছে।”
ইতু আবিরের বুকে মুখ লুকালো। আজ কেমন সুখ সুখ লাগছে তার।
আবির ইতুকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে তার উপর আধ শোয়া হলো। ইতুর কপালে চুমু দিয়ে তার ওষ্ঠ জোড়া দখল করে নিলো।
আবির যেনো তাকে সুখের দুনিয়ায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
চলবে।

(
পর্বঃ ২২
ফজরের নামাজ পড়ে আবির ঘরে ঢুকে দেখে ইতু তার আর আবিরের কাপড় গুছাচ্ছে।
“কিরে কাপড় ব্যাগে কেন ঢোকাচ্ছি? এই সকালে কোথায় যাচ্ছিস?”
ইতুর তার দিকে না তাকিয়ে কাপড় ব্যাগে ঢোকাতে ঢোকাতে বললো,” হানিমুনে যাচ্ছি।”
আবির অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
“দাঁড়িয়ে আছো কেন? আমাকে হেল্প করো। লেট হয়ে যাচ্ছে।”
“ইতু তোর মাথা কি গেছে? হঠাৎ করে এই সময় কোথায় যাবি?”
“আমার মাথা ঠিক জায়গায় আছে। আমি এখনই যাবো। আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি ৬ঃ৫০ এ বাস। তাড়াতাড়ি করো।”
আবিরের যেন অবাক হওয়া শেষ হচ্ছে না। মানে কি?
“তুই এগুলো কখন ঠিক করলি?”
“সব বলবো আগে রেডি হও। আমার গুছানো শেষ।”
আবির আর কথা বাড়ালো না। ইতুর কথা মতো রেড়ি হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর ইতু অন্য রুম থেকে রেডি হয়ে এলো। ইতু সেই জামদানী শাড়ি টা পড়েছে যেটা পরে তাদের ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল।
আবির মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
ইতু আবিরের কাছে এসে তার গলা জড়িয়ে ধরে।
“কেমন লাগছে?”
আবির মুচকি হেসে ইতুর কপালে আলতো করে চুমু খেল।
“একদম আমার ভাবুকরানীর মতো। মাশাল্লাহ।”
ইতু আবেশে আবিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
“তুমি যানো তোমার বুকটা পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তির জায়গা?”
“এই যে তুই বললি যেনে গেলাম। আমার বুকের সবটুকু জায়গা শুধু তোর জন্য। ”
“হয়েছে এইবার চলো।”
“আম্মু, আব্বুকে বলেছিস?”
“তাদের সাথে আমার কথা হয়ে গেছে চলো এখন।”
আবির হেসে এক হাতে ইতুর হাত ধরে অন্য হাতে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
দুপুরের কাছাকাছি সময় তারা কক্সবাজার গিয়ে পৌঁছালো। পুরো রাস্তা ইতু ঘুমিয়ে কাটিয়েছে।
তারা পৌঁছে হোটেল বুক করা রুমে ঢুকলো। ইতু আবিরকে টেনে বারান্দার সামনে নিয়ে এলো। ইতু পর্দা সরিয়ে দেখালো। তাদের রুম থেকে সমুদ্র একদম কাছ থেকেই দেখা যায়।
আবির সে দিকে না তাকিয়ে ইতুর উপচে পড়া খুশি দেখছে।
আবির ইতুর কোমর চেপে ধরে তার কাছে নিয়ে এলো।
ইতু হকচকিয়ে তাকালো তার দিকে।
“কি করছো।”
আবির আলতো করে ইতুর ঠোঁটে চুমু খেল। কপালে আসা চুল গুলো কানের পিছে গুঁজে দিয়ে তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,” ধন্যবাদ আমার জীবনে এসে জীবনটা এতো সুন্দর করার জন্য।”
ইতু চোখ নামিয়ে নিলো।
“হয়েছে, ফ্রেস হয়ে নাও।”
আবির দুষ্টু হেসে বলে,” চল তোকে গোসল করিয়ে দি।”
ইতু চিটকে দূরে সরে গেলো।
” ছিঃ বজ্জাত একটা। আমি একা গোসল করতে পারবো। তুমি যাও তো।”
আবির ভ্রু কুঁচকে বললো,” ছিঃ কি৷ আমি কি খারাপ কিছু বলেছি নাকি। আমি আমার লাল টুকটুকে বউ টাকে নিজে গোসল করিয়ে দিবো বলেছি।”
ইতু কপট রাগ দেখিয়ে বললো,” একদম দুষ্টমি করবে না। আমার একটা প্রাইভেসি আছে না?”
আবির ইতুর কথা না শুনে তাকে কোলে তুলে নিলো।
ইতু হাত পা ছড়াছড়ি করতে লাগলো।
“এই একদম ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। ছাড় বলছি। আমার কি কোনো প্রাইভেসি নেই।”
আবির বাথরুমে ঢুকে ইতুর নাকে আলতো কামড় দিয়ে বললো, “আমার সামনে তোর কোনো প্রাইভেসি নেই।”
ইতু নাক ঘষতে ঘষতে আবিরের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে।
আবির ইতুকে নিয়ে ১ঘন্টা পর বাথরুম থেকে বের হলো।
ইতু রেগে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।
আবির কাছে গেলেই বালিশ ছুড়ে মারছে।
“তুমি বলেছো গোসল করিয়ে দিবে এই তোমার গোসল করানো? ১ঘন্টা জালিয়ে মেরেছো।”
আবির ইতুর কাছে গিয়ে তার কোলে মাথা রাখলো।
“এতো রাগ কিসে শুনি?আমার টুনটুনি টা পুরো লাল হয়ে আছে।”
ইতু রাগের ভান করলেও মনে মনে সে ভীষণ খুশি। কে না চায় তার ভালোবাসার মানুষ তাকে এইভাবে জ্বালাক। ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখুক।
“কিছু হয়নি উঠো এখন, সকালে কিছু খাওনি কয়টা বাজে তার খেয়াল আছে? শুধু বউকে দেখলে পেট ভরবে না।”
আবির ইতুর কোমর জড়িয়ে ধরে তার পেটে মুখ গুযে দিলো।
“আরেকটু পরে যাবো। এখন তোমার কাছে থাকতে ইচ্ছা করছে।”
ইতু চমকে উঠলো। আবির এই প্রথম তাকে তুমি বলে সম্মোধন করেছে।
“আবির।”
“হু”
“তুমি কি বললে?”
“তোমাকে তুমি বলেছি। নিজের বউকে তুই তুই করতে কেমন যেন লাগছিলো। তাই আজকে থেকে শুধু তুমি।”
ইতুর কাছে তুমি শুনতে অদ্ভুত লাগলেও কোথাও একটা ভালোলাগা কাজ করছে। ইতু হেসে আবিরের মাথার চুল এলোমেলো করে দিলো।

বিকেলে তারা সমুদ্র দেখতে বের হলো। ইতু একটা আকাশি রঙ এর শাড়ি পড়েছে। আবির হাটতে গিয়ে বার বার তার দিকে তাকচ্ছে।
ইতু খেয়াল করে বললো, “কি হয়েছে এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
আবির মাথা চুলকে হেসে বললো,” চলো না আবার রুমে চলে যাই।”
ইতু হতাশ হয়ে তাকালো তার দিকে।
আবিরের হাত ধরে টেনে নিতে নিতে বলে,” এখন যদি আবার রুমে যাওয়ার কথা বলেছো রাতে রুম থেকে বের করে দিবো।”
“হুমকি দিচ্ছো?”
“হ্যাঁ দিচ্ছি।”
“ঠিক আছে তোমার কাছেই যাবো না।”
ইতু নিজের কপাল নিযে চাপড়ালো। এই কোন পাগল তার কপালে এসে জুটলো। ইতু আবিরের রাগ করা দেখে হাসবে না কাঁদবে বুঝতেই পারছে না।

________________________
শ্রাবণ একটা রেস্টুরেন্টে অনেক্ষন ধরে অপেক্ষা করছে।
পুরো এক ঘন্টা পর অহনা এলো। সে আজ কালো জামদানী শাড়ি পড়েছে। খুব যত্ন করে সেজেছেও।
শ্রাবণ তার দিক থেকে চোখ ফেরাতেই পারছে না।
অহনা শ্রাবণের সামনে এসে তুড়ি বাজালো। শ্রাবণ হুসে এসে নিজেকে ধাতস্থ করে নিলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে এক ঘন্টা পর এসেছে অহনা।
শ্রাবণ রাগ দেখিয়ে বললো, “তুমি কি ম্যানার্স যানো না? আমাকে এতোক্ষন অয়েট করানোর মানে কি?”
অহনা শ্রাবণের সামনের সিটে গিয়ে বসলো। শান্ত গলায় মুচকি হেসে বললো,
“আমি কখন বললাম আপনাকে ওয়েট করতে? আপনার ওয়েট করতে ইচ্ছা না করলে আপনি চলে যেতেন।”
শ্রাবণ অবাক হলো অহনার কথা শুনে। সে ভদ্রতা দেখিয়ে এতোক্ষন অপেক্ষা করেছে এখন তাকেই কিনা বলছে সে কেনো অপেক্ষা করলো? শ্রাবণের নিজের উপর রাগ হলো। কেনো সে এই মেয়ের কথা মতো দেখা করতে রাজি হলো।
শ্রাবণ কিছু না বলেই উঠে চলে গেলো।
অহনা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো তাকে আটকালো না।
অহনা ওয়েটার কে ডেকে একটা ক্যাফেচিনো একটা ব্যাল্ক কফি অর্ডার দিলো।
কফি আসার দুই মিনিটের মধ্যে শ্রাবণ এসে হাজির।
অহনা শ্রাবণকে দেখে বললো,” এতো তাড়াতাড়ি এসে পড়লেন, আমি ভেবেছি আরো লেট হবে।”
শ্রাবণ ভ্রু কুঁচকে অহনার দিকে তাকালো।
“তোমাকে এখানে এইভাবে একা ফেলে যাওয়া উচিত হয়নি তাই এসেছি। অন্য কিছু ভাবার দরকার নেই।”
অহনা তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। শ্রাবণের কাছে অহনাকে অদ্ভুত মনে হলো।
অহনা সেই আগের শান্ত স্বরে বললো, “এই যে এতো সেজে এসেছি আপনি তো একবার ও প্রশংসা করলেন না।”
শ্রাবণ অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। অহনা যে তাকে সরাসরি তার প্রশংসা করতে বলবে সে ভাবেনি। সে কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না।
অহনা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে হাসলো। খিলখিল করে হাসি যাকে বলে। শ্রাবণ মুগ্ধ হয়ে দেখলো।
“থাক আপনাকে আর জোর করে আমার প্রশংসা করতে হবে না। আপনি তো ব্লাক কফি খান, আপনার জন্য অর্ডার করেছি।”
শ্রাবণ কৌতুহলী হয়ে বললো, “তুমি কি করে জানলে আমার ব্লাক কফি পছন্দ? ”
অহনা শ্রাবণের দিকে একটু ঝুঁকে বললো,”আপনার ব্যাপারে আমি সবই যানি।”
শ্রাবণ এক গাল হেসে বললো, তাই? আর কি কি যানো?”
অহনা হেসে কপালের চুল কানের পিছে গুজে বললো,” আমাদের যখন আবার দেখা হবে তখন বললো। এই সব কথা পরের মিটের জন্যই থাক।”
শ্রাবণ শব্দ করে হাসলো।,” তুমি আমার ব্যাপারে কিছুই যানো না। আমাদের আর দেখা হবে না মিস অহনা। ”
অহনা দুই হাত ভাজ করে বললো, ” কেনো? আপনি সিংগাপুর চলে যাচ্ছেন তাই?
শ্রাবণ নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
অহনার ঠোঁটে তখন এক চিলতে হাসি।
চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here