#স্বীকৃতি
#পর্ব_১৩
#Saji_Afroz
.
.
.
লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছে আফসানা। ফাহিম তাকে দেখে হেসে বললো-
আমি তোমার ফাহিম ভাই! এতো লজ্জা পাবার কিছু নেই।
.
ঘোমটা সরিয়ে আফসানা বললো-
ফাহিম ভাই?
-উফফ না! শুধুই ফাহিম।
.
মৃদু হাসলো আফসানা।
ফাহিম বললো-
আমি জানি আমার সাথে সহজ হতে একটু তো সময় লাগবেই তোমার৷ আমি তোমাকে সে সময়টা দিতে চাই। যদিও সুন্দরী বউকে সামনে পেয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করা কষ্টকর হবে। তবুও মানিয়ে নিতে পারবো আমি। তুমিও সময় দাও নিজেকে। বিয়েতো হয়েই গেলো। ধীরেধীরে নাহয় সবই হবে।
.
ফাহিমের কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলো আফসানা। ভাগ্য করে স্বামী সে পেয়েছে বটে!
.
.
.
রোদের আলো মুখে পড়তেই ঘুমটা ভেঙে গেলো খুশবুর।
কাল রাতে কখন যে চোখ দুটো তার লেগে এসেছিলো, বুঝতেই পারেনি।
উঠে দাঁড়ালো সে। মনোরম স্নিগ্ধ সকালের সৌন্দর্য্য টা উপভোগ করতে লাগলো। পৃথিবী বড্ড সুন্দর। এই সুন্দর পৃথিবীতে অতীতের কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকার কি খুব দরকার? একটাই তো পৃথিবী। একটা মানুষ সর্বোচ্চ ১০০বছর বাঁচে। এই ১০০বছর সুখে কি থাকা যায়না? একটু চেষ্টা করলেই তা সম্ভব।
এসব ভেবে রুমের দিকে এগিয়ে গেলো খুশবু।
আরহাম গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তার মুখের দিকে তাকাতেই খুশবুর বুকের ভেতরে কেমন যেনো মোচড় দিয়ে উঠলো। কি দোষ এই মানুষটির? এসব তো তার মতো ভালো মানুষের প্রাপ্য নয়। সে কি পারেনা অতীত ভুলে গিয়ে নতুন করে সব শুরু করতে? ফারাজেরও ইচ্ছে এটা। তাহলে সে কেনো কষ্ট দিচ্ছে আরহাম নামক এই মানুষটিকে?
একবার কি সে চেষ্টা করেই দেখবে? নতুন করে ভালোবাসতে?
.
আর কিছু না ভেবে খুশির ফোন নাম্বারে ডায়াল করলো খুশবু।
বেশ কয়েকবার রিং হবার পরে রিসিভ করলো খুশি। ঘুমঘুম কন্ঠে সে বললো-
কিরে আপু! এতো সকালে তুই?
-আচ্ছা খুশি, একটা মানুষ কি দ্বিতীয়বার ভালোবাসতে পারে?
.
বোনের প্রশ্ন শুনে খুশির ঘুম যেনো উধাও হয়ে গেলো। এক লাফে বসে পড়লো সে বিছানার উপরে। হেসেই খুশি বললো-
আরহাম ভাইয়াকে ভালোবেসেছিস নাকি?
-তোকে যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটার উত্তর দে।
-হু যায়।এবার বল কেনো?
-কিছুনা।
.
ফোনের লাইন কেটে দিলো খুশবু।
খুশির বুঝতে বাকি রইলোনা, খুশবুর মনে কিছু একটা চলছে।
বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সে। এগুতে থাকলো উঠোনের দিকে। উঠেছেই যখন অনন্তের সাথে দেখা করা যায় এখন।
সেতো ভোরেই উঠে।
.
.
আরহামের কাছে এগিয়ে আসলো খুশবু। ইচ্ছে করছে তাকে সবটা বলতে। কি কি ঘটেছিলো তার সাথে সব জানাতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সে যে নিরূপায়! মাকে কথা দিয়েছে, আরহাম কিছু যেনো না জানে। ওয়াদায় আবদ্ধ খুশবু। তাই সে কিছু বলতে পারেনা আরহাম কে।
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলো খুশবু।
.
.
পা ঝুলিয়ে দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে অনন্ত।
হঠাৎ কেউ তার দুচোখ চেপে ধরলো।
অনন্ত হেসে বললো-
আমি জানি খুশি, এটা তুমি।
.
অনন্তের চোখ জোড়ার উপর থেকে হাতটা সরিয়ে, তার পাশে বসতে বসতে খুশি বললো-
কি করে বুঝলে?
-ভালোবাসার মানুষের স্পর্শ বুঝা যায়।
-এতো ভালোবাসো?
-হু।
-তোমার চোখ বন্ধ করে, ২০টা মেয়ের হাত ধরতে দিলে আমার হাত কোনটা বুঝতে পারবে?
-যদি তুমি সেখানে থাকো তাহলে অবশ্যই পারবো।
.
খুশি মৃদু হাসলো। এরপরেই সে তার কথার ঝুলি খুলে বসলো।
একটার পর একটা কথা বলতেই আছে। তার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনন্ত।
কেনো এতো ভালো লাগা কাজ করছে তার মাঝে? এভাবে যেনো অনন্তকাল কাটিয়ে দিতে পারবে সে।
এটাই কি তবে সত্যিকারের ভালোবাসা?
.
.
ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আরহামকে বিছানার উপরে দেখতে পেলো খুশবু।
দুজনের চোখাচোখি হতেই আরহাম গম্ভীর গলায় বলে উঠলো-
ওয়াশরুম টা কি তোমার একার? এতোক্ষণ যাবৎ থাকার কোনো মানে হয়?
.
আরহামের এমন ব্যবহারের সাথে পরিচিত নয় খুশবু। তাই সে খানিকটা ঘাবড়ে গেলো। আরহাম তাকে চুপ থাকতে দেখে বললো-
কি বললাম শুনলেনা?
.
শান্ত স্বরে খুশবু বললো-
এতো যদি তাড়া থাকে বসে না থেকে চলে গেলেই পারেন।
-তাড়া অবশ্যই আছে৷ অফিস যাবো আমি।
-আপনি বোধহয় ভুলে যাচ্ছেন। ছুটি নিয়েছিলেন আপনি।
-ছুটি ক্যান্সেল করবো! তাতে তোমার কি সমস্যা?
-আমার কেনো সমস্যা হবে!
-দেখি সরোতো! এমনিতেই দেরী করে দিলে। তার উপর মুখের উপরে তর্ক করছো। যত্তসব।
.
আরহাম ওয়াশরুমে চলে গেলো। নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে খুশবু।
চোখ বেয়ে তার পানি পড়ছে।
চোখের পানি গুলো মুছতে মুছতে বিড়বিড়িয়ে খুশবু বললো-
উনার কথায় এতোটা কষ্ট কেনো পাচ্ছি আমি!
.
.
.
কয়েকদিন কেটে গেলো…
আরহাম অপেক্ষা করছে, খুশবু এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য।
তার কাছে কোনো প্রমাণ নেই যে, বিয়ের পরেও খুশবু তার প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে কথা বলে। তাই সে নিজের বাসায় এসব নিয়ে কথা তুলতেও চায়না। খুশবুকে নিজের মতোই ছেড়ে দিয়েছে। চলে যাবার পরেই নাহয় বাসায় সবটা জানাবে। তবে একটা কথা মাথায় সে ভালোভাবেই গেঁথে নিয়েছে। খুশবুকে সে আর সুযোগ দিতে পারেনা। খুশবুর মন প্রাণ জুড়ে রয়েছে ফারাজ। ফারাজও তাকে ভালোবাসে। তাহলে সে কেনো বাঁধা হয়ে থাকবে! দুটো ভালোবাসার মানুষের মাঝে দেয়াল হয়ে থাকার কোনো ইচ্ছে তার নেই। তার চেয়ে বরং খুশবু চলেই যাক। কিন্তু খুশবু তো কিছু বলছেই না। সে কি নিজেই সবটা জানতে চায়বে তার কাছে? কেনো তাকে এভাবে ঠকানো হচ্ছে জানতে চায়বে কি?
.
-শুনছেন?
.
খুশবুর ডাকে নড়েচড়ে উঠলো আরহাম। খুশবু বললো-
আপনি কি কোনো কারণে আমার উপরে রেগে আছেন?
.
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আরহাম জবাব দিলো-
তোমার উপরে নয়, নিজের উপরে রেগে আছি।
-বুঝলাম না?
.
আজ কেনো যেনো নিজেকে আটকে রাখতে পারছেনা আরহাম।
মনেহচ্ছে সবটা জানতে না পারলে যেনো শান্ত হবেনা তার মনটা। তাই আর অপেক্ষা না করেই বলে ফেললো-
তোমার কি মনেহচ্ছেনা তুমি আমাকে ঠকাচ্ছো?
.
আরহামের এমন একটা প্রশ্নে চমকে গেলো খুশবু।
তাহলে কি আরহাম সব জেনে গিয়েছে!
আরহাম তার চিন্তিত মুখটা দেখে বললো-
হু আমি সব জানি। কদিন আগে রাতে, বারান্দায় বসে তুমি তোমার প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে ফোনে কথা বলেছিলে। সবটা আমি শুনেছি খুশবু। কেনো এমন টা করলে তুমি আমার সাথে?
.
আবারো নিশ্চুপ খুশবু। কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছেনা সে।
তাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে আরহামের রাগ হতে লাগলো।
আচমকা খুশবুর অনেকটা কাছে এসে, তার দুহাত পেছনে নিয়ে চেপে ধরে আরহাম বললো-
ঠকিয়ে বিয়ে করেছো, বিয়ের পরেও ঠকাচ্ছো। কি পেয়েছো টা কি আমাকে!
-আহ! আমার লাগছে।
-লাগুক। আমার যে হৃদয়ে লেগেছে সেটা কি তুমি দেখেছো? শুধু নিজের টাই দেখে গেলে!
.
খুশবু ব্যাথায় মুখে শব্দ করতে লাগলো। তাকে এক ধাক্কায় বিছানার উপরে ফেলে দিলো আরহাম।
রাগে ফোঁসাতে ফোঁসাতে বললো-
একটা কথাও তুমি বলছোনা! তার মানে তুমি ফারাজের কাছেই চলে যেতে চাও?
.
খুশবু কেঁদে চলেছে। আরহামের কেনো যেনো আজ মায়া হচ্ছেনা তার প্রতি। বরং অনেক বেশি ঘৃণা কাজ করছে খুশবুর প্রতি। আরহাম কর্কশ কন্ঠে বললো-
তোমার মতো চরিত্রহীনার সাথে এক ঘরে থাকা সম্ভব নয় আমার। ফারাজেরই যোগ্য তুমি। ওর কাছেই চলে যাও।
.
আরহামের কথা পিঠে কোনো এতোক্ষণ খুশবু না বললেও এখন জবাব দিলো সে।
-চলে যাবো আমি, চিন্তা করার কিছু নেই।
.
আরহাম উচ্চ শব্দে হেসে বললো-
ফারাজের কাছে যাবার কথা শুনেই মুখে খই ফুটলো! বেশ ভালোই।
.
চোখ দুটো ভিজে গেলো আরহামের। সে কি চায় আসলে!
.
বিছানা থেকে উঠে পড়লো খুশবু। কোনো কথা না বলে ব্যাগ গোছাতে লাগলো সে। এভাবে যে আরহামের কাছ থেকে দূরে যেতে হবে ভাবেনি সে।
ভালোবাসায় এতো কষ্ট কেনো!
.
চলবে