#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম (লেখিকা)
“১৫”
–” দোলা সামিরের থেকে ছাড়া পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে। সামির যেনো পণ করেছে! তার কথা না শোনা পর্যন্ত দোলাকে সে ছাড়বে না।
– কেনো করছো এমন সামির? প্লিজ আমাকে যেতে দাও। অসহায় কন্ঠস্বর দোলার।
– আমার কথাটা শুনো দোলা। আমি তোমার ভালো চাই বিশ্বাস করো। আহত কন্ঠে বলে সামির।
–
— দোলা নিজেকে শান্ত করে বলে আচ্ছা বলো কি বলবে।
– আমি জানি তুমি রুদ্রর সাথে ভালো নেই। আমি এটাও জানি যে রুদ্র তোমার উপর অত্যাচার করে। তুমি বাধ্য হয়ে রুদ্রর সাথে আছো। কারণ তুমি রুদ্রকে ভালোবাসো না। আর রুদ্র এটারই যোগ্য। ও কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়। দৃঢ় কন্ঠে বলে সামির।
— তুমি কীভাবে জানলে যে রুদ্র আমার উপর অত্যাচার করে? আমি রুদ্রর সাথে বাধ্য হয়ে থাকছি। আমি কি কখনো বলেছি তোমাকে এইসব সামির? দোলার কথায় হকচকিয়ে উঠে সামির। ঘাবড়ে যাওয়া চোখে তাকিয়ে আমতাআমতা করে বলে তুমি না বললেও আমি সব জানি দোলা।
কীভাবে? সেটাই জানতে চাচ্ছি আমি। দোলার মধ্যে বিশাল কৌতুহল।
— যাকে ভালোবাসি তার খোঁজ রাখবো না! তার সম্পর্কে জানবো না তাই কখনো হয় দোলা। সাবলীল ভাবে সামির। কিন্তু দোলার ঠিক বোধগম্য হয়না সামিরের কথা।
– ভালোবাসো মানে? কি বলতে চাইছো তুমি সামির?চোখ মুখ কুচকে যায় দোলার।
– সামির মাথা নিচু করে বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি দোলা। আর সেটা আজ নয় অনেক আগে থেকে। আমাদের বন্ধুত্বের শুরু থেকে আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু কখনো বলতে পারিনি। ভেবেছিলাম সময় মতো তোমার কাছে আমার মনের কথাগুলো প্রকাশ করবো। কিন্তু তার আগে তুমি রুদ্রকে বিয়ে করে নাও।
— আর এই জন্যই তুমি আমার আর উনার সম্পর্কটা নষ্ট করতে চাও। এখন আমি সবটা বুঝতে পারছি সামির। এই হলো তোমার গুরুত্বপূর্ণ কথা। তুমি আমাকে ভালোবাসো বলে আমাকে পেতে চাও এখনো। আর তার জন্যই তুমি উনার নামে উল্টো পালটা কথা বলে আমার মনটা বিষিয়ে তুলতে চাও উনার সম্পর্কে।
– দোলার কথায় সামির আঁতকে ওঠা চোখে তাকিয়ে ব্যস্ত হয়ে বলে না না দোলা। তুমি আমাকে ভুল ভাবছো। আমি সে জন্য কিছু করছি না। সত্যি রুদ্র তোমার যোগ্য নয়৷ ও ভালো নয় দোলা। আর তার প্রমাণ আমি তোমাকে দেখাবো ওয়েট বলে সামির পকেট থেকে ফোন বের করতে যায় তখনই দোলা ধাক্কা দিয়ে সামিরকে সরিয়ে দেয়। অবাক চোখে তাকায় সামির।
– আমি খুব ভালো করে বুঝে গেছি সামির৷ তুমি উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এইসব করছো। তুমি আমার আর উনার সম্পর্কে ভাঙন ধরাতে চাও। যাতে তোমার পথ ক্লিয়ার হয়ে যায়৷ কিন্তু এমনটা কখনোই হবে না সামির। তবে একটা জিনিস হবে আজ থেকে। তোমার সাথে আমার যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো সেটা আর থাকবে না৷ তুমি বন্ধুত্বের মর্যাদা দিতে পারোনি সামির কথাটা বলে দোলা ছুটে বেরিয়ে আসে ক্লাসরুম থেকে। সামির নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে দোলার দিকে।
– দোলা দুইতলায় ছিলো। আশা দোলাকে খুঁজতে খুঁজতে নিচে চল আসে৷ ওয়াসরুম থেকে এসে দোলাকে না দেখতে পেয়ে ভাবে দোলা হয়তো নিচে চলে গেছে৷ তাই সে নিচে চল আসে।
– দোলাকে ছুটে আসতে দেখে আশা দোলাকে থামিয়ে দেয়।
– দোলার চোখের মধ্যে পানিতে টলমল।
– কি হয়েছে দোলা? তুই এইভাবে ছুটছিস কেনো? আর কোথায় ছিলিস তুই। আমি তো তোকে উপরে দেখলাম না। দোলা নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে আমি বাড়ি যাবো আশা। আমার কিছু কাজ আছে। তুই তানিয়াকে প্লিজ বলে দিবি কথাটা বলে দোলা দাঁড়ায় না এক মুহুর্ত। হনহন করে চলে আসে৷ দোলা আসতেই তানিয়া বেরিয়ে আসে ক্লাসরুম থেকে। আশা অবাক হয়ে দোলার পাণে চেয়ে। হঠাৎ কি হলো বুঝতে পারছে না।
– একি আশা তুমি এখানে দাঁড়িয়ে যে? ভাবি কোথায়? তানিয়ার কথায় আশা মুখটা মলিন করে বলে দোলা এই মাত্র চলে গেলো।
– চলে গেলো? উত্তেজিত কন্ঠে বলে তানিয়া। ভাবি আমাকে না নিয়ে চলে গেলো? কিন্তু কেনো?
-ওর নাকি কি একটা কাজ আছে। আর তাই তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো৷ আশার কথায় তানিয়া ভাবনায় পড়ে যায়। দোলার আবার কি এমন কাজ আছে এখন৷ এরপর তানিয়াও বেরিয়ে যায় সাথে আশাও।
— দোলা হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে। দোলাকে একা ফিরে আসতে দেখে বিস্মিত চোখে তাকায় রত্না চৌধুরী। তিনি ড্রয়িংরুমেই বসা ছিলেন।
— আমার কি সামিরের কথাগুলো শোনা উচিত ছিলো? কি বলতে চেয়েছিলো সামির? আর আমাকে কি দেখাতে চাই। কি প্রমাণের কথা বলছিলো সে? উফফ মাথা গরম করে চলে আসাটা ঠিক হয়নি। আমার আর একটু সময় দেওয়া উচিত ছিলো সামিরকে। এইসব ভাবতে ভাবতে আসে দোলা। দোলার শরীরটা খারাপ করছে খুব। হয়তো অতিরিক্ত চিন্তা করার ফলে। দোলা প্রচন্ড ঘেমে আছে।
– কি রে দোলা মা৷ তুই একা কেনো? তানিয়া কোথায়?
রত্না চৌধুরীর কথায় দোলা চমকে উঠে। কারণ সে অন্যমনস্ক থাকায় রত্না চৌধুরীকে খেয়াল করেনি প্রথমে। দোলা পিছু ঘুরে কিছু বলতে যাবে তার আগে মাথার মধ্যে চক্কর দিয়ে উঠে। দোলা একহাতে মাথা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলে। দোলাকে এমন করতে দেখে রত্না চৌধুরী ঘাবড়ে যাওয়া গলায় বলে কি হয়েছে দোলা? তুই ঠিক আছিস। রত্না চৌধুরীর কথার জবাব দেওয়া হয়ে উঠে না দোলার! মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
– দোলায়ায়া চিৎকার করে উঠে রত্না চৌধুরী। রত্না চৌধুরীর চিৎকারে দুজন সার্ভেন্ট ছুটে আসে। সাথে সাথে তানিয়াও হাজির হয় সেখানে৷ দোলার পেছনেই ছিলো সে। তাই বাড়ি ফিরতে বেশি সময় লাগে না। দোলাকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে তানিয়া চমকানো চোখে তাকিয়ে উচ্চস্বরে ভাবি বলে উঠে ছুটে আসে। রত্না চৌধুরী হুইলচেয়ার নিয়ে এগিয়ে আসে। সবার মধ্যে ভীষণ উত্তেজনা। জেসমিন চৌধুরী সবার চিৎকার শুনে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। দোলাকে এইভাবে পড়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকায় শুধু এরপর একটা ভেংচি কেটে বলে যতসব ঢং এরপর আবারও ঘরে চলে যায়। তানভীর আহমেদ বা রুদ্র কেউ-ই বাড়িতে নাই।
— হসপিটালের করিডোরে অপেক্ষা করছে সবাই। রুদ্র খবরটা শোনামাত্র ছুটে আসে। তার আগেই সন্দেহ হয়েছিলো দোলার শরীর ভালো নেই। শুধুমাত্র দোলার জেদের জন্য রুদ্র ডক্টর দেখাতে পারে না৷ রুদ্রর মধ্যে ভীষণ টেনশন, হারানোর ভয়। কি হয়েছে দোলার ভাবতেই ঘামছুটে যায় যেনো রুদ্রর। তানিয়া আর তানভীর আহমেদও আছে সাথে৷ তানিয়া এম্বুলেন্স খবর দিলে তারাই দোলাকে নিয়ে আসে এখানে। এরপর রুদ্রকে খবর দেয়।
… দোলাকে নিয়ে আসা হয়েছে একঘন্টা হয়েছে। অতিরিক্ত ট্রেস নেওয়াতে দোলা জ্ঞ্যান হারায়। তাছাড়া আগে থেকে শরীর খারাপ তো আছেই৷ ডক্টর দোলার সমস্ত রকম টেস্ট করান। কিছুখন বাদে দোলার জ্ঞ্যান ফিরে। খবরটা রুদ্রর কান অব্দি আসতেই ছুটে যায় রুদ্র। এতখন তার প্রাণ’টা যেনো সাথে ছিলো না৷ দোলার জ্ঞ্যান ফিরেছে শুনে স্বস্তি পাই একটু।
— আমি জানতাম তোমার শরীর ঠিক নেই। বলেছিলাম ডক্টর কল করি। কিন্তু তুমি আমার কথা শুনোনি৷ তুমি আমার একটাও কথা শোনো না দোলা। এই যে শরীর খারাপ নিয়ে হসপিটাল আছো খুব ভালো লাগছে এখন তাই না। মনোক্ষুন্ন হয়ে বলে রুদ্র। দোলা ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে শুধু। রুদ্রর মধ্যে স্পষ্ট আতংক দেখতে পাচ্ছে দোলা। রুদ্র দোলার হাত চেপে ধরে কোমল কন্ঠে বলে এখন কেমন আছো দোলাপাখি? দোলা কিছু বলে না। শুধু মোহময় চাহনিতে রুদ্রকে উপলব্ধি করছে। সত্যি এই মানুষটা এত চিন্তিত আমাকে নিয়ে? আমার জন্য এত অস্থিরতা? আর সেই মানুষটা কীভাবে খারাপ হতে পারে? সামির কেনো এইগুলো বলছিলো। কি এমন আছে? দোলার মধ্যে আবারও একই ভাবনা। দোলাকে চুপ থাকতে দেখে রুদ্র ভ্রু কুচকে বলে কি হলো দোলা কিছু বলো। কোনো সমস্যা নেই তো আর। তুমি ঠিক আছো?
– আমি ঠিক আছি রুদ্র! চিন্তা করবেন না। রোদের মধ্যে এসেছি তার জন্য.. আর একটাও এক্সকিউজ শুনতে চাইনা দোলা। এবার যা বলার ডক্টর বলবে। তোমার নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে। নয়তো এতটা দুর্বল তুমি কীভাবে হবে। দোলাকে থামিয়ে দিয়ে বলে রুদ্র। এর মধ্যে তানিয়া আসে।
– ব্রো ডক্টর তোমায় ডেকেছে। তানিয়ার কথায় রুদ্র দোলার হাতটা মুঠো বন্দী করে বলে তুমি বসো আমি আসছি। এরপর দোলার হাতের তালুতে ঠোঁট স্পর্শ করে চলে যায় রুদ্র। তানিয়া এসে বসে দোলার পাশে।
– হঠাৎ কি এমন হলো বলো তো ভাবি। তুমি ভার্সিটি থেকে এইভাবে চলে আসলে। বাড়িতে এসে দেখি তুমি জ্ঞ্যান হারিয়ে ফ্লোরে পড়ে। মামি খুব চিন্তায় আছে তোমাকে নিয়ে। ইনফ্যাক্ট আমি নিজেও ঘাবড়ে গিয়েছিলাম অনেক। তোমার শরীর খারাপ করছে সেটা তো আমাকে জানাতে পারতে। গাড়ি না নিয়ে হুট করে চলে এসেছো। এটা যদি ব্রো জানতে পারে তাহলে কি হবে ভাবতে পারছো। তুমি তো বকুনি খাবে সাথে আমিও। তানিয়ার কথায় দোলা মুচকি হেসে বলে কিছু হবে না তানিয়া৷ চিন্তা করো না৷ তাছাড়া আমি ঠিক আছি দেখো।।
— মিস্টার চৌধুরী! আমরা আপনার ওয়াইফের বেশ কিছু টেস্ট করিয়েছি। সেগুলোর রিপোর্ট আসতে দুদিন লাগবে। এরপর আমরা আপনাকে ইনফর্ম করবো ওকে। তবে চিন্তা করবেন না। আপনার ওয়াইফ সুস্থ আছে। তেমন কোনো চিন্তার বিষয় নেই।
– যদি ঠিকই থাকবে তাহলে হঠাৎ এমন হওয়ার মানে কি ডক্টর? ডক্টরের কথার বিপরীতে বলে উঠে রুদ্র৷
– আমার মনে হয় উনি ঠিক ভাবে খাওয়া দাওয়া করেন না। আর কোনো কিছু নিয়ে অনেক টেনস থাকেন৷ যার ফলে এমন সমস্যা উনার। কয়দিন রেস্ট নিলে আর ঠিকঠাক ভাবে খাওয়া দাওয়া করলে আবার সুস্থ হয়ে উঠবেন উনি। তাছাড়া আমরা অন্য কিছুও ভাবছি সেটা রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত শিওর হতে পারছি না। এই কথাটা শুনে রুদ্র ঘাবড়ে যায়। ভয়ার্ত ফেসে তাকিয়ে বলে অন্য কোনো সমস্যা? কি হয়েছে ডক্টর দোলার।
– আরে মিস্টার চৌধুরী ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আপনার ওয়াইফের সিরিয়াস কিছুই হয়নি৷ আর রিপোর্ট আসলে আমরা আপনাকে শিওর জানাবো। এখন উনাকে নিয়ে যেতে পারেন সমস্যা নেই। ডক্টরের কথায় রুদ্র মুচকি হেসে বলে থ্যাঙ্কিউ ডক্টর। এরপর রুদ্র বেরিয়ে আসে চেম্বার থেকে।
— রুদ্রর ঘরে রত্না চৌধুরী, রাশেদ মিয়া, রোকন, তানিয়া তানভীর আহমেদ সবাই উপস্থিত আছে। সময়টা সন্ধ্যার পর। দোলার শরীর খারাপ খবরটা পেয়ে রাশেদ মিয়া ছুটে আসে মেয়েকে দেখার জন্য। রুদ্র এই সময় বাড়িতে নেই। একটা কাজের জন্য বেরুতে হয় তাকে। তবে এই সময়টা দোলাকে ছেড়ে কোথাও যেতে একদম নারাজ রুদ্র। কিন্তু কি করার কাজের জন্য তো যেতেই হবে।
– আমি আর খাবো না মা। বাড়ি এসে পর্যন্ত তোমরা আমাকে এটা ওটা খাওয়ায় চলেছো। এত খেলে আমি তো একদিনে মটু হয়ে যাবো। গাল ফুলিয়ে বলে দোলা।
– কোনো কথা শুনবো না দোলা। ডক্টর স্ট্রেট জানিয়ে দিয়েছে তোমাকে ঠিক ভাবে খাওয়া দাওয়া করতে হবে। কারণ তোমার শরীর প্রচন্ড উইক। তাছাড়া রুদ্রর কড়া নির্দেশ যে একদম অনীহা করা যাবে না খাবার নিয়ে। মৃদু হেসে বলে রত্না চৌধুরী।
– দোলা অসহায় চাহনি রাখে রত্না চৌধুরীর দিকে।
– জামাই যা বলে তাই শুনবি দোলা মা। আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম বলতো। হঠাৎ তোর এমন শরীর খারাপ হলো কীভাবে?.
– আমি ঠিক আছি বাবা চিন্তা করোনা। আমার জন্য তোমার শরীর খারাপ করবে এবার। দোলার কথায় রাশেদ মিয়া হাসার চেষ্টা করে।
— রাত দশটায় রুদ্র বাড়ি ফিরে। রাশেদ মিয়া একটু আগে চলে গেছে রোকনকে নিয়ে। দোলা পড়ে গেছে বিপাকে। এসে পর্যন্ত ঘরে শুয়ে বসে আছে। এইভাবে ঘরে বসে থাকতে কার ভালো লাগে। তানিয়া এতখন দোলার সাথে ছিলো৷ রুদ্র আসায় বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।
– রুদ্র ফ্রেস হয়ে এসে দোলার পাশে বসে। দোলা মুখটা গোমড়া করে বসে আছে।
– কি সমস্যা? ভ্রু উঁচিয়ে বলে রুদ্র দোলাকে এইভাবে বসে থাকতে দেখে।
— আপনার জন্য সবাই আমাকে এইভাবে ঘরে বসিয়ে রেখেছে। কেউ কিছু করতে দিছে না আবার একটু পর পর খাওয়া। এইভাবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে ভালো লাগে নাকি মলিন কন্ঠে বলে দোলা।
– সেটা তোমার আগে ভাবা ছিলো দোলা-পাখি। রুদ্রর কথায় দোলা বিস্ময় নিয়ে বলে মানে?
– মানে খুবই সিম্পল! শরীর খারাপ করার আগে ভাবা উচিত ছিলো তোমার। যেহেতু শরীর খারাপ করেছো এখন রেস্ট করতে হবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত।
– কিন্তু আমি তো সুস্থ! করুণ স্বরে বলে দোলা।
– সেটা তুমি বললে তো হবে না। যখন আমার মনে হবে তুমি সুস্থ তখনই তুমি অন্য কিছু করবে। তার আগে প্রোপার রেস্ট নিবে৷ একদম কোনো কথা শুনবো না।
– জানি না কখনো সুস্থ হবো কি-না আপনার চোখে বিড়বিড় করে বলে দোলা। দোলার কথায় মুচকি হাসে রুদ্র দোলার অগোচরে।
– আচ্ছা রুদ্র একটা কথা বলব?
– দোলার হঠাৎ এমন কথায় রুদ্র কৌতুহলী হয়ে বলে হুম বলো। পারমিশন নেওয়ার কি আছে দোলাপাখি। তোমার যা ইচ্ছে তাই বলতে পারো। রুদ্রর কথায় দোলা কিছুক্ষন অপলক ভাবে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, আচ্ছা রুদ্র আপনার মধ্যে এমন কিছু আছে যা আমি জানি না। হঠাৎ দোলার এমন কথায় ঘাবড়ে যায় রুদ্র। কিছুটা সংশয়, ভয়ের ছাপও বিদ্যমান হয়।
– কি হলো বলুন না৷ আপনার কি কোনো অতীত আছে যেটা আপনি আমার থেকে লুকিয়ে গেছেন? দোলার মধ্যে প্রবল কৌতুহল জানার।
– রুদ্র হতভম্ব হয়ে যায়। কি বলবে বুঝতে পারছে না। কিন্তু দোলা হঠাৎ এই কথা কেনো জিজ্ঞেস করছে এটাও রুদ্রর ভাবনা ছাড়া হয়না।
– আমার আবার কি অতীত থাকবে। কি যা-তা বলছো দোলা? তোতলানো স্বরে বলে রুদ্র। দোলা সন্ধিহান চোখে তাকিয়ে বলে আপনি এতটা ঘাবড়ে কেনো আছেন রুদ্র? আমি তো জাস্ট এমনি জানতে চাইলাম।
– তুমি রেস্ট করো দোলা। আমার কিছু কাজ আছে। সেগুলো শেষ করি বলে রুদ্র উঠে ল্যাপটপ হাতে বারান্দায় চলে যায়। দোলা প্রশ্ন গুলো নিজের মধ্যে রেখে আশাহত হয়ে বসে থাকে৷
– রুদ্রর মধ্যে উত্তেজনা। হঠাৎ দোলা এইসব কথা কেনো জানতে চাইছে? কি হয়েছে। রুদ্রর মধ্যে আবার ও একটা ভয় কাজ করে।
— একটা কাজও ঠিক ভাবে করতে পারো না তুমি। আবার স্বপ্ন দেখো দোলাকে পাওয়ার। কি করতে বললাম আর কি করলে তুমি? দোলাকে সামান্য প্রমাণ গুলো দেখাতে পারলে না। ক্রোধান্বিত হয়ে বলে ব্যক্তিটি।
– আমি কি করবো যদি দোলা রাজি নাহয়। আমি তো অনেক ট্রাই করেছিলাম সবটা বলার। করুণ স্বরে বলে সামির।
– এবার যা করার আমাকেই করতে হবে দেখছি। শুনলাম দোলার নাকি শরীর খারাপ হঠাৎ করে। রুদ্র তো এখন দোলাকে নিয়ে অনেক ব্যস্ত।
– কিহ! দোলার শরীর খারাপ? কি হয়েছে দোলার। আর তোমাকে কে বলল? উত্তেজিত কন্ঠে বলে সামির।
– আমাকে কে বলল সেটা বড় বিষয় না। এখন আমাদের খুব সাবধানে কাজ করতে হবে৷ রুদ্র আর দোলাকে আলাদা করতে হবে এটাই মূল কথা৷ নাহলে কিন্তু তুমি কখনোই দোলাকে পাবে না সামির।
– আমাকে কি করতে হবে এখন? সামিরের কথায় ব্যক্তিটি মুচকি হেসে বলে তোমাকে আর কিছুই করতে হবে না৷ যা করার আমি করবো এবার। ওয়েট এন্ড সি বলে শব্দ করে হাসতে থাকে সে।
— এইভাবে চলে যায় আরো দুদিন। দোলা এখন সুস্থ পুরোপুরি। সবাই বিশেষ ভাবে খেয়াল রেখেছে দোলার। তবে অপেক্ষা দোলার রিপোর্ট গুলো আসার। রুদ্র অফিসে বসে আছে৷ সামনে আছে রাজ। এই সময় একজন কর্মচারী আসে রুদ্রর রুমে।
– স্যার আপনার জন্য একটা পার্সেল এসেছে। কর্মচারীর কথায় রাজ এবং রুদ্র দুজনেই ভ্রু কুচকায়। হঠাৎ পার্সেল আবার কে পাঠালো ভাবে রুদ্র। এরপর পার্সেলটা হাতে নিয়ে ওই লোকটাকে চলে যেতে বলে। বাদামি রঙের খাম একটা।
– এই সময় পার্সেল কে দেবে বলতো? রুদ্রর কথায় রাজ ঠোঁট উল্টোয়। রুদ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পার্সেল আসা খামটা খুলে দেখতে থাকে।
#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“১৬”
–” রুদ্র খাম’টা খুলে দেখতেই চমকে উঠে। স্থীর চাহনিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে খামের ভেতরের বস্তু গুলোর দিকে। হিংস্রতা আবারো চোখ মুখে জেগে উঠে। চোখ দুটো আগুনের ফুলকির ন্যায় দপদপ করে উঠে। রাগে চিৎকার করে ছুড়ে মারে খামটা। হঠাৎ রুদ্রর এমন কান্ডে চমকে উঠে রাজ। ঘাবড়ে যাওয়া চোখে কৌতুহল নিয়ে বলে কি হয়েছে রুদ্র? তুই এমন করছিস কেনো? কি আছে খামে বলে রাজ খামের মধ্যে থাকা ছবিগুলো হাতে তুলে আঁতকে উঠে ভয়ার্ত চোখে তাকায় রুদ্রর দিকে। রুদ্রর শরীর কাঁপছে রাগের কারণে।
– আমি আগেই জানতাম দোলা ঠক, প্রতারক। ও আমাকে ঠকিয়েছে। বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও পর-পুরুষের সাথে সম্পর্ক রেখেছে। তুই না আমাকে বলেছিলি রাজ” দোলা এমন ধরনের মেয়ে না। আমার ভুল হচ্ছে৷ আমি শুধু শুধু ওর উপর অত্যাচার করছি। এইগুলো কি তাহলে? আন্সার মি চিৎকার করে বলে রুদ্র।
– রুদ্র আমার কথাটা শুন। হয়তো সত্যি আমাদের ভুল হচ্ছে৷ দোলা এমন টাইপের মেয়ে নয়। কেউ ইচ্ছে… শাট আপ রাজ! জাস্ট শাট আপ। আমি আর একটাও কথা শুনতে চাইনা তোর মুখ থেকে। আমি আগে থেকে জানতাম দোলা সামিরকে ছাড়া থাকতে পারবে না। দোলা কখনোই ভালো মেয়ে ছিলো না। যদি সে ভালো হতো তাহলে আরেকটা মেয়ের জীবন এইভাবে নষ্ট করতো না৷ আর এখন ” বিয়ের পরও পরোকিয়া চালিয়ে যাচ্ছে ছিহ ধিক্কার জানায় রুদ্র।
– তুই শিওর কীভাবে হচ্ছিস রুদ্র যে এই ছবিতে থাকা ব্যক্তিটি সামিরই?
– আমি জানি এটা সামির। তার জন্য আমার আলাদা ভাবে কোনো প্রমাণের দরকার নেই। আমি ওকে সুযোগ দিয়েছিলাম। নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম৷ ওর সব ভুল ক্ষমা করে দিয়ে নতুন ভাবে পথ চলতে চেয়েছিলাম আর কি করলো দোলা এটা? কি প্রতিদান দিলো তার। ভার্সিটির নাম করে এইসব নোংরামি করে বেড়ায় ও। আমার নিজের প্রতি নিজেরই করুণা হচ্ছে আজ৷ আমি আবারও ঠকে গেলাম রাজ। আমি আমার ভালোবাসার কাছে হেরে গেলাম আবারও আজ ভেঙে পড়ে রুদ্র।
— রুদ্র আমার কথাটা শুন৷ তুই এত হাইপার কেনো হচ্ছিস। আমাদের বিষয়টা ভালো ভাবে দেখা উচিত। দরকার হয় দোলার সাথে কথা বলবো এই ব্যপারে আমরা।
রাজের কথা শুনে রুদ্র হাসে। পাগলের মতো হাসতে থাকে। রাজ অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে রুদ্রর দিকে।
তোর কি মনে হয় রাজ” আমি দোলাকে এমনি এমনি ছেড়ে দেবো আজ। কোনো প্রশ্ন করবো না। আমার জবাব চাই জবাব। সব কিছুর উত্তর আজ দোলাকে দিতে হবে। সব কিছু আজ তার জানতে হবে কথাটা বলে রুদ্র রাজের হাত থেকে ছবিগুলো এক প্রকার ছিনিয়ে নিয়ে হনহন করে বেরিয়ে যায়৷ রাজ পিছু ডাকলেও রুদ্র কানে নেয় না। রাজ চিন্তিত হয়ে বসে পড়ে চেয়ারে। কিছু একটা ভেবে বেরিয়ে আসে সেও।
— দোলা তার রুমে নির্বাক ভঙ্গিতে বসে আছে। এমন একটা সত্যের মুখোমুখি হবে সে ভাবতে পারিনি৷ রুদ্র তার থেকে এত বড় সত্যি লুকিয়ে যাবে কল্পনাও করেনি৷ দোলার মধ্যে ক্ষোভ, অভিমান, হীনতা আসে সবার প্রতি। এই বাড়ির প্রতিটি মানুষ তাকে ঠকিয়েছে৷ সত্যটা আড়াল করেছে । দোলার কান্না পাচ্ছে ভীষণ। চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। দোলা বন্ধ ঘরের রহস্য জেনে যাওয়ায় এতো তোলপাড় তার মধ্যে। অনেক চেষ্টার পরে দোলা সফল হয় ওই ঘর পর্যন্ত যেতে। আর গিয়ে যা কিছু দেখে তার জন্য দোলা একদম প্রস্তুত ছিলো না। দোলা চোখের পানি মুছে নিজেকে শক্ত করে। আজ সবার থেকে তার সব প্রশ্নের উত্তর চাই। কেনো তার থেকে সত্যটা আড়াল করা হয়েছে তার জবাব দোলার চাই। দোলা ঘর থেকে বের হতে যাবে এমন সময় রুদ্র আসে। দোলা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে তাকিয়ে থাকে রুদ্রর দিকে। অভিমানটা যেনো রাগে আকার নেয়। কিন্তু দোলা লক্ষ্য করে রুদ্রকে অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে আজ৷ সেই হিংস্রতা তার মধ্যে ফুটে উঠেছে। কিন্তু কেনো? দোলার ভাবনার মাঝে রুদ্র হাতে থাকা ছবিগুলো ছুড়ে মারে দোলার দিকে। দোলা চমকে উঠে তাতে। রুদ্রর দিকে একবার তাকিয়ে নিচে তাকাতেই চোখ যেনো কপালে উঠে যায়। তার আর সামিরের ভার্সিটির সেই মুহুর্তের ছবি জ্বলজ্বল করছে এখানে। দোলার মধ্যে ভয় চেপে বসে। তার অভিমান তার প্রশ্ন গুলো আপাতত অবসান নেয়। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে দোলা। দোলা তো এই ভয়টাই করেছিলো যাতে রুদ্র না জানে কিছু। কিন্তু সেটাই হলো। কিন্তু এইভাবে ছবিগুলো কে তুলেছে৷ প্রতিটি ছবি এত নিখুঁত ভাবে তোলা হয়েছে যে! যে কেউ দেখলে বলবে সামির আর দোলা বেশ অন্তরঙ্গ অবস্থায় সময় কাটিয়েছে৷ এমনকি কয়েকটা ছবিতে মনে হচ্ছে সামির দোলাকে কিস করছে। দোলা একবার রুদ্র তো একবার ছবি গুলোর দিকে তাকাচ্ছে। ভেতরে ভেতরে আরও দুর্বল হয়ে উঠছে দোলা। হাত-পা রীতিমতো কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে। রুদ্রর চোখ মুখে যে হিংস্রতা বিরাজ করছে তাতে দোলা নিশ্চিত তার জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে না।
— এইগুলোর মানে কি দোলা? শান্তশিষ্ট কন্ঠস্বর রুদ্রর? কিন্তু দোলা আঁতকে উঠে রুদ্রর কথায়। কিছু একটা বলার মতো অবস্থাও তার মধ্যে নেই। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে৷ কোনো রকম আওয়াজ চাইলেও বের করতে পারছে না। শুধু ভয়ার্ত চোখ দুটো রুদ্রর দিকে দিয়ে রেখেছে।
– উত্তর দাও দোলাপাখি। এইগুলোর মানে কি? কেনো করলে তুমি এমন? আমি তো তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম৷ তোমাকে একটা সুযোগ দিতে চেয়েছিলাম আর তার প্রতিদান তুমি এইভাবে দিলে। পুরাতন প্রেমিকের সাথে এইভাবে সময় স্পেন্ড করলে। রুদ্রর ঠোঁটে হাসি। কিন্তু এটা কোনো সুখকর হাসি নয়৷ তাচ্ছিল্যের হাসি,ঘৃণার হাসি, রাগ, জেদ অভিমান সব মিশ্রিত তার মধ্যে। রুদ্রর শান্ত থাকাটা দোলার মধ্যে তীব্র ভয় বাড়িয়ে দিচ্ছে।
– কি হলো দোলা কিছু বলো। আজ তোমার চুপ থাকলে তো চলবে না। এতদিন আমি বলে এসেছি আমি সব কিছু করে এসেছি৷ আজ তুমি বলবে আমি শুনবো। বলো বলো। দোলা এখনো চুপ৷ দোলাকে চুপ থাকতে দেখে রুদ্রর রাগের মাত্রা বেড়ে যায়। মাথায় যেনো আগ্নেয়গিরির লাভা ফুটন্ত।
– চুপ করে আছো কেনো উত্তর দাও আমায়? কেনো ঠকালে আমায়? কেনো প্রতারণা করলে আমার সাথে। স্বামী থাকা সত্ত্বেও পর-পুরুষের সাথে সম্পর্ক রাখার কি মানে দোলা? আমি জানতাম তোমার আর সামিরের রিলেশন আছে কিন্তু সেটা তো বিয়ের আগে ঠিক ছিলো। বিয়ের পরেও কেনো করলে এমন? কেনো আমার ভালোবাসাকে অপমান করলে তুমি? রুদ্রর চোখে পানি চলে আসে অজান্তে। ভালোবাসার কাছে পরাজিত হলে হৃদয় জুড়ে কি ক্ষত হয় সেটা একমাত্র হৃদয় ভাঙা ব্যক্তিটায় জানে।
— আমি কিছু করিনি বিশ্বাস করুন রুদ্র। এইসব মিথ্যা অনেক কষ্টে বলে দোলা।
– এখনো মিথ্যা বলছো দোলা। কীভাবে? কীভাবে পারছো এত কিছুর পরেও মিথ্যা বলতে৷ আচ্ছা কোনটা অস্বীকার করবে তুমি? এই ছবিগুলো, সামিরের সাথে তোমার গভীর সম্পর্ক আছে সেটা। নাকি তুমি নিজ হাতে একটা মেয়ের জীবন শেষ করেছো সেটার। দোলা অবাক হয়ে তাকায়। বিস্মিত কন্ঠে বলে আমি কোনো মেয়ের জীবন নষ্ট করেছি?
– হ্যাঁ করেছো। তুমি জেনে বুঝে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করেছো৷ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছো তাকে। তুমি শুধু ঠক-প্রতারকই না দোলা৷ তুমি একজন খুনি।
– রুদ্র! কি বাজে বকছেন এইগুলো। উত্তেজিত কন্ঠে বলে দোলা।
– একদম গলা তুলে কথা বলবে না আমার সাথে৷ অন্যায় করে আবার গলাবাজি হচ্ছে৷ তোমার মতো বাজে মেয়ের জন্য আজ সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো অবহেলিত। তোমরা তো ভালোবাসা নিয়ে খেলা করো শুধু আর ভোগান্তি তো হয় আমাদের মতো সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষ গুলোর৷ যেমন ভালোবাসার প্রতিদান স্বরুপ জীবন দিতে হয়েছে নেহাকে। তার জন্য দায়ী তুমি। তুমি সামিরের সাথে রিলেশন করে নেহাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছো। তুমি জানতে নেহা সামিরকে ভালোবাসে আর তুমি কি করলে৷ সব জেনে-বুঝে সামিরের সাথেই সম্পর্কে জড়ালে।
– রুদ্রর কথায় দোলা কি রিয়াকশন দেবে সেটাই ভুলে গেছে। শুধু বাকহারা হয়ে তাকিয়ে আছে।
– নেহা আমার সব চেয়ে কাছের বন্ধু ছিলো। আমি রাজ নেহা একে অপরের ভালো বন্ধু ছিলাম। কিন্তু জানি না নেহা কীভাবে ওই সামির কু* বাচ্চার প্রেমের ফাঁদে জড়িয়ে যায়৷ আমরা প্রথমে কিছুই জানতাম না৷ কারণ নেহা আমাদের কিছু বলতে পারেনি সাহস করে আর সেটাও সামিরের জন্য। কারণ সামির জানতো আমরা যদি নেহার সাথে ওর রিলেশনের কথা জানি তাহলে নেহাকে সাবধান করে দেবো। সামিরের প্রতিটি কুকর্মের কথা ফাঁস করে দেবো। তাই কায়দা করে নেহাকে রাজি করায় যাতে ও আমাদের কিছু না বলে। এরপর সামির ভালোবাসার কথা বলে বিয়ের প্ররোচনা দিয়ে ভোগ করে নেহাকে। নেহা এইসবের কিছুই বুঝতে পারেনি। কারণ সে-তো সামিরকে সত্যি ভালোবেসেছিলো। এরপর যখন নেহা অজান্তে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যায় সামিরকে জানালে সামির সব অস্বীকার করে। এমনকি নেহা বিয়ের কথা বললে সেটাও অস্বীকার করে। দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। এরপর থেকে অবহেলা শুরু করে সামির নেহার প্রতি। নেহা যখন সামিরের মুখোমুখি হয় আবার তখন সামির জানায় তোমার সাথে নাকি সামিরের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক আছে। আর সেটা খুব শীগ্রই বিয়েতে পরিনতি নেবে৷ নেহা তার সম্মান তার ভালোবাসা তার অনাগত সন্তানের অধিকার পেতে যখন তোমার কাছে ছুটে যায় তখন তুমি তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দাও। একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের কষ্ট বুঝোনি। উল্টো অপমান করে তাড়িয়ে দাও শূন্য হাতে। সামিরকে তুমি বিয়ে করবে এটা বলে দাও নেহাকে।
– দোলা কয়েক-পা পিছিয়ে যায়। আহত চোখে তাকিয়ে থাকে।
– জানো নেহার পরিণতি? কি হয়েছে তার সাথে জানো? জানবে কি করে? তোমাদের মতো মেয়েরা তো সম্পর্ক ভাঙতে জানে শুধু। কারো ব্যাপারে খবর নেওয়ার সময় কোথায়।
– দোলার মনে পড়ে যায় আজ থেকে প্রায় সাত-আট মাস আগের কথা৷ যখন সামির দোলাকে বলেছিলো একটা বাজে মেয়ে নাকি তার পিছু করেছে। অহেতুক দোষ দিচ্ছে। কিন্তু সামির মেয়েটাকে চিনে না। এরপর সামির নেহার ব্যাপার বুঝিয়ে বলে। তবে যা কিছু বলে সবই মিথ্যা দিয়ে ভরা৷ দোলা সরল মনে সব কিছু বিশ্বাস করে। কারণ সে সামিরের কোনো বাজে কাজ বা খারাপ কিছু দেখেনি। তাই সামির যে কোনো খারাপ কাজ করতে পারে সেটা কখনোই বিশ্বাস হয়না। এরপর দোলা যখন জানতে চাই তার কি করতে হবে এর জন্য। তখন সামির দোলাকে বলে নেহা তার কাছে আসলে যাতে এইগুলা বলে। তার সামিরের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করবে। নেহা যেনো সামিরের পিছু ছেড়ে দেয়। নেহা দোলার সম্পর্কে জেনে গিয়েছিলো আর নেহা সামিরকে এটাও বলেছিলো যে সে দোলার কাছে গিয়ে সব কথা বলে দেবে। সব জানার পর সামির তার মতো করে সবটা সাঁজিয়ে নেয়৷ এরপর দোলাকে ভুলভাল বোঝায়। দোলা সামিরের কথা মতো কাজ করে। নেহা আসলে এইসব বলে অপমান করে। তবে দোলার অনেক খারাপ লেগেছিলো সেদিন নেহাকে দেখে। নেহা যখন দোলার পা ধরে সামিরকে ভিক্ষা চাই তখন দোলার ইচ্ছে করছিলো সব কিছু বলে দিতে। কিন্তু দোলা সামিরের কথা ভেবে আর কিছু বলতে পারে না। কিছু সময়ের জন্য দোলা মেনেই নেয় নেহা ভালো মেয়ে নয়। ছেলেদের ফাঁসানো তার স্বভাব। কিন্তু এর মধ্যে এত বড় ধোকা থাকবে দোলা কল্পনাও করেনি। সামির এত জঘন্য খারাপ একটা মানুষ দোলার কল্পনাতেও আসেনি কখনো। সব কিছুর জন্য দোলার নিজের প্রতি করুণ, ধিক্কার জানায়।
– দোলা তার ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলে আমি কিছু করিনি রুদ্র। নেহাকে আমি এইসব বলেছিলাম ঠিকই কিন্তু আমাকে এইগুলো সামির… তার আগে রুদ্র দোলার গলা চেপে ধরে।
– একটাও কথা শুনতে চাইনা আর। তোর মতো বাজে মেয়ের মুখ দিয়ে আর নেহার নাম নিবি না। আমার ভুল ছিলো তোকে বিয়ে করা৷ তোকে ভালোবাসা। আমি যদি জানতাম আমার বেস্ট ফ্রেন্ড যার জন্য জীবন দিয়েছে যার প্রতারণার স্বীকার হয়েছে সেটা তুই ছিলিস। তাহলে তোকে বিয়ে তো দূর তোকে সেদিনই মেরে পুতে রাখতাম। কিন্তু আফসোস আমি প্রথম দেখায় তোকে ভালোবেসে ফেলি দ্বিতীয়বারের মতো। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর আমার মনে নতুন করে ভালোবাসার জন্ম নেয় তোকে দেখে। তোকে দেখে আমার মনে হয়েছিলো আমার নতুন জীবনের সূচনার নতুন অধ্যায় তুই। কিন্তু না তুই সেই বিষাক্ত কাটা। যা একবার বিঁধলে মরণব্যাধি রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। তুই আমার জীবনের কোনো সজীবতা বয়ে আনার জন্য নয় বরং আমার তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার জন্য আগত হয়েছিস। তোকে নিয়ে নতুন করে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখাটা ছিলো আমার বোকামি। কিন্তু যখন সবটা জানতে পারি ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়৷ নতুন জীবনে পদার্পণ হয়ে যায় আমার তোকে নিয়ে। তখন ইচ্ছে করছিলো নিজের চুল নিজে ছিড়ি। যাকে ঘৃণা করি তাকেই ভালোবাসতে হবে ভাবিনি। নতুন করে কোনো প্রতারক আমার জীবনে আসবে আমি ভাবিনি। তখন না পারতাম সইতে আর না পারতাম মানিয়ে নিতে আর না পারতাম এড়িয়ে যেতে। একদিকে ভালোবাসা আরেক দিকে ঘৃণা। হাঁপিয়ে উঠি আমি সব কিছুতে৷ এরপরও আমি কিছু জানতে বা বুঝতে দিইনি তোকে। ভেবেছি সব ঠিক হয়ে যাবে। নিজেকে শোধরাই নিবি তুই। কিন্তু আমার ভাবনা ভুল ছিলো তার প্রমাণ এই ছবিগুলো।
– দোলা আজ বুঝতে পারে রুদ্র কেনো তার সাথে এমন করতো। কেনো অল্পতে সন্দেহ করতো। কিন্তু এখানে তো তার কোনো দোষ নেই। তাহলে কেনো তার শাস্তি সে পাবে?
— দোলা রুদ্রর থেকে ছাড়া পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে। রুদ্র খুবই শক্ত করে দোলার গলা চেপে ধরে আছে৷ এখনই দোলার প্রাণ পাখি উড়াল দেবে যা ভাব। রুদ্র চাইলেও আজ নিজেকে সামলাতে পারবে না। তার মধ্যে যে ঝড় বয়ছে সেটা সহজে থামার নয়।
— দোলা নিজের সর্বস্ব দিয়ে রুদ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। রুদ্রর থেকে ছাড়া পেয়ে গলায় হাত দিয়ে কাশতে থাকে। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। লাল হয়ে উঠেছে দুটো চোখ। জোরে জোরে টানা শ্বাস নিতে থাকে।
— তোকে আজ আমি নিজ হাতে শেষ করবো। ভাবিস না আমাকে ঠকিয়ে পার পেয়ে যাবি৷ সব কিছুর মূল্য আজ তোকে দিতে হবে বলে রুদ্র কোমর থেকে বেল্ট খুলতে থাকে৷ দোলা তাই দেখে আরও ঘাবড়ে যায়। দেয়ালের সাথে শিটে দাঁড়ায় গিয়ে। শরীর খারাপ করতে থাকে দোলার। রুদ্র বেল্ট খুলে উপরে উঠায় দোলাকে মারার জন্য এমন সময় রত্না চৌধুরী রুদ্র বলে চিৎকার করে ডেকে উঠে। তানিয়া ছুটে এসে দোলাকে জড়িয়ে ধরে। মায়ের ডাকে রুদ্রর হাত থেমে যায়। দোলা জড়োসড়ো হয়ে বসে পড়ে নিচে।
— চলবে….