তুমিময় আসক্তি পর্ব -১৯+২০

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম (লেখিকা)
“১৯”

– রুদ্রর সামনে দাঁড়িয়ে আছে দোলা। রুদ্রর জ্ঞ্যান ফিরেছে অনেক আগেই। জ্ঞ্যান ফেরার পর রুদ্র একটা কথাও বলেনি কারো সাথে। ঘটে যাওয়া সমস্ত কিছু কাটিয়ে উঠতে তার সময়ের প্রয়োজন। জীবন তাকে নিয়ে বারবার উপহাস করছে। যতবার ঘুরে দাঁড়াতে চাই! কেউ না কেউ ঠিক তাকে মাটিতে থুবড়ে ফেলছে। ভালোবাসা নামক শব্দটা যেনো বারবার খেলা করছে তাকে নিয়ে। দোলা রত্না চৌধুরীর সাথে কথা শেষ করে রুদ্রর কাছে ছুটে আসে । এত হাহাকার না পাওয়ার মধ্যে একটু মানসিক শান্তি রুদ্রকে সে দিতে চাই এই সন্তানের খবরটা দিয়ে। দোলাকে দেখে তানিয়া, রাজ অবাকই হয় একটু। রুদ্রর সামনেও যেতে বারণ করে তারা। রুদ্র যদি আবার হাইপার হয়ে যায় দোলাকে দেখে সে ভয়ে। কিন্তু দোলা ওদের কথা না শুনে ভেতরে আসে।
– দোলাকে দেখে রুদ্র রাগী গলায় বলে তুমি এখানে? কেনো এসেছো এখানে? আমি তোমার মুখ দেখতে চাইনা। প্লিজ চলে যাও আমার সামনে থেকে। আমাকে বাঁচতে দাও একটু৷ আমি মানসিক শান্তি চাই তোমাদের থেকে দূরে যেয়ে। রুদ্রর কথায় দোলা ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে। কিছু বলার মতো শক্তি যেনো সে পাইনা৷ রুদ্র অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে এই অল্প সময়ে। যা তার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে৷ এমন শক্ত সামর্থ মানুষ বিশ্বস্ততার কাছে হেরে কিভাবে নুয়ে পড়েছে দোলা যেনো সেটা গভীর ভাবে উপলব্ধি করতে পারছে।

– দোলাকে চুপচাপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুদ্র যেনো আরও বেশি রেগে যায়৷ উত্তেজিত কন্ঠে বলে কি বললাম শুনতে পাওনি তুমি। চলে যাও এখান থেকে। রুদ্রর কন্ঠস্বর পেতেই রাজ আর তানিয়া ভেতরে আসে। রাজ রুদ্রকে ধরে শান্ত হতে বলে আর তানিয়া দোলাকে ঠেলায় বাইরে আসার জন্য। কিন্তু দোলা এক চুল পরিমাণ সরে না৷ রুদ্রর সাথে কথা শেষ না করে সে এখান থেকে বের হবে না এই পণ যেনো তার মাঝে।

– ভাবি কেনো পাগলামি করছো? চলো না এখানে থেকে। ব্রো দেখছো তো কত হাইপার হয়ে আছে তোমাকে দেখে৷ একটু সময় দাও সব কিছু মানিয়ে নিতে৷ আবার সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো। তুমি চলো এখানে থেকে। তানিয়ার কথায় দোলা মুচকি হেসে বলে আমি চাইনা আর কিছু ঠিক হোক তানিয়া। দোলার আকষ্মিক এমন কথায় তানিয়া, রাজ ভ্রু কুচকে বিস্ময়কর দৃষ্টি রাখে।
– তোমার কথা ঠিক বুঝলাম না ভাবি? জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বলে তানিয়া।
– আপাতত না বুঝলে। সময় আসলে ঠিক বুঝে যাবে৷ আমার উনার সাথে কিছু কথা আছে৷ সেগুলো বলে আমি চলে যাবো। দোলার কথা শেষ হতেই রুদ্র বলে হ্যাঁ চলে যাও তুমি। অনেক দূরে চলে যাও। চাইনা আমি আর কাউকে। তোমাকেও না। আমি তোমাকে জোর করে বিয়ে করেছিলাম ইচ্ছের বিরুদ্ধে। ভেবেছিলাম আমার ভালোবাসা দিয়ে সব কিছু গুছিয়ে নেবো। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। আমি জানতাম না ভালোবাসা নামক যে বীজ আমি পুতে যত্ন করে গাছে রুপান্তরিত করতে চেয়েছি সেটা অনেক আগেই কারো ঘরের বটবৃক্ষ ছায়া হয়ে আছে। তুমি মুক্ত দোলা। আজ থেকে তুমি স্বাধীন। যার সাথে ইচ্ছে! যা ইচ্ছে করতে পারো। আমি আর তোমাকে বাধা দেবো না৷ আমি যে এতদিন তোমাকে জোর করে আঁটকে রেখেছি। ভালোবাসা নামক যে টর্চার করেছি তার জন্য তুমি দারুণ উপহার দিয়েছো আমায়৷ তারপরও আমি মাফ চাই তোমার কাছে৷ আমাকে ক্ষমা করে দিও সব কিছুর জন্য। তুমি চলে যাও দোলা মুখ ফিরিয়ে নেয় রুদ্র৷ দোলার নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে৷ গলা দমে আসে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে আমি প্রেগন্যান্ট রুদ্র! দোলার এই একটা বাক্য যেনো রুদ্র কানে বেশ কয়েকবার আঘাত করে। একই সুরে কথাটা বাজতে থাকে।
– আমি আপনার সন্তানের মা হতে চলেছি। দোলা আশাবাদী হয়ে তাকিয়ে থাকে রুদ্রর দিকে। রুদ্রর রিয়াকশন টা নিজ চক্ষে দেখতে চাই সে।
— ভাবি! তুমি সত্যি মা হতে চলেছে? উল্লাসিত কন্ঠস্বর তানিয়ার। তার মধ্যে আনন্দের মুখরতা। খুশিতে দোলা দুই কাধ চেপে ধরে বুকে জড়িয়ে নেয়। ঠোঁট এলিয়ে হেসে বলে তুমি সত্যি বলছো ভাবি? তুমি সত্যি মা হতে চলেছো? তানিয়া যেনো কোনো ভাবে মানতে নারাজ। এত কিছুর মধ্যে এমন একটা খুশির সংবাদ সত্যি অবাক করে দেওয়ার মতো। দোলা মুচকি হাসার চেষ্টা করে বলে হ্যাঁ তানিয়া! আমি সত্যি বলছি। আমি মা হতে চলেছি।

– রুদ্র হুট করে এসে দোলার হাত চেপে ধরে। এতে তানিয়া, দোলা রাজ চমকে উঠে সবাই। সবার এটেনশন এতখন দোলার দিকে ছিলো। যার ফলে রুদ্রকে খেয়াল করেনা৷ রুদ্রর স্যালাইন চলছিলো হাতে৷ ওইটা ছাড়িয়ে দোলার কাছে আসে। স্যালাইন লাগানো অংশ থেকে ফিরনি দিয়ে রক্ত পড়ছে।
– রুদ্র কি করছিস তুই? তোর হাত দিয়ে রক্ত ঝরছে ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে বলে রাজ। রুদ্র সে-সবে পাত্তা না দিয়ে ঠোঁটের কোণে প্রত্যাশিত হাসি ধরে বলে তুমি সত্যি মা হবে দোলা। আমি বাবা হবো। রুদ্রর মধ্যে প্রবল উত্তেজনা। আনন্দে পাগলপারা অবস্থা। সব মলিনতা, দুঃখ কষ্ট ছাপিয়ে সুখের সন্ধান তার মধ্যে।
– রুদ্র হুট করে দোলার পেটে হাত রাখে।। দোলা চমকে উঠে পিছু সরে যায়।
– আমার বেবি! কথাটা বলে রুদ্র জোরে জোরে হাসতে থাকে। সবাই অবাক চোখে রুদ্রকে দেখছে৷ রুদ্রর এই পাগলামো কে দেখছে তারা। একটা বাচ্চার জন্য এতটা উতলা থাকতে পারে একটা মানুষ এটা রুদ্রকে না দেখলে হয়তো জানতো না এরা।
– আমি বাবা হবো।আমার কি যে আনন্দ হচ্ছে। তানিয়া শুনেছিস আমি বাবা হবো। আমার বেবি আসবে। আমি তাকে কোলে নিয়ে সারা বাড়ি ঘুরবো। অনেক অনেক খেলনা নিয়ে আসবো। ওই ছোট ছোট দুটি হাত এসে আমাকে স্পর্শ করবে। রুদ্রর এমন ছেলেমানুষী দেখে সবাই অবাক৷

— রুদ্র তুই আবারও ভুল করছিস। এই বাচ্চা তোর না। দোলা কার বাচ্চার মা হতে যাচ্ছে সেটাই জানা নেই৷ আর তুমি বলছিস এটা তোর বাচ্চা৷ তুই এমন পাগলামো করিস না রুদ্র কথাটা বলতে বলতে আসে জেসমিন চৌধুরী। এতখন দরজার বাইরে থেকে সবটা শুনে সে। দোলাকে বাড়ি থেকে বেরুতে দেখে সেও দোলার পিছু পিছু আসে এখানে।

– পিপি! খবরদার আমার বাচ্চার দিকে আঙ্গুল তোলার সাহস দেখাবে না। এটা আমার বাচ্চা৷ আমার বেবি৷ গম্ভীর কন্ঠে বলে রুদ্র। জেসমিন চৌধুরী অবাক হয়ে বলে রুদ্র তুই কিন্তু ভুল করছিস। দোলা তোকে আবারও ঠকাচ্ছে। কার না কার বাচ্চা তোর নামে চালিয়ে দিচ্ছে৷
– ফুপি! চিৎকার করে উঠে দোলা। আর চুপ থাকা সম্ভব হয়না তার।
– অনেক বাজে কথা বলেছেন এবার চুপ করুন দয়া করে। আমাকে যা ইচ্ছে বলুন কিন্তু আমার বাচ্চাকে নিয়ে একটাও বাজে কথা শুনতে চাইনা। আঙ্গুল তুলে বলে দোলা।
– মা তুমি কখনো শুধরোবে না তাই না? তোমার এইসব বাজে কথা বন্ধ করে যাও এখানে থেকে। কটাক্ষ কন্ঠে বলে তানিয়া।
তুই চুপ থাক। সব সময় ভাবি ভাবি করে মাথা খাস। তুই কি জানিস এই মেয়ের পেটে পেটে কত কি আছে। নির্লজ্জ, চরিত্রহীন মেয়েমানুষ একটা।
মা! রেগে উত্তেজিত কন্ঠে তানিয়া চিৎকার করে জেসমিন চৌধুরীকে চুপ করিয়ে দেয়।
– জেসমিন চৌধুরী চোখ পাকিয়ে তাকায় তানিয়ার দিকে।
– দোলার পেটের সন্তান যে রুদ্রর তার কি প্রমাণ আছে? হুট করে বলে জেসমিন চৌধুরী।
– এটা আমার সন্তান আমি জানি। তাই নতুন করে আমার কোনো প্রমাণের দরকার নেই। তুমি দয়া করে এইসব কথা বন্ধ করো পিপি। আমার সন্তানকে নিয়ে আমায় ভাবতে দাও। তোমার এই বিষয়ে না ভাবলেও চলবে।
– রুদ্র তুই আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা কর। জেসমিন চৌধুরীকে হাত উঠিয়ে থামিয়ে দিয়ে রুদ্র কাঠগলায় বলে আমি সব কিছু বুঝতে পারছি৷ তুমি এবার তোমার মুখটা বন্ধ করো আর যাও এখানে থেকে। দোলা যে আমার সন্তানের মা এটা আমার থেকে ভালো আর কারো জানার কথা নয়৷ সো আমি যখন বলেছি এটা আমার সন্তান তো আমার সন্তানই।
– তুই এতটা কীভাবে শিওর হচ্ছিস রুদ্র? কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে জেসমিন চৌধুরী।

– রুদ্র কিছুখন তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে বিয়ের পর দোলাকে আমি কখনোই একা ছাড়িনি। আর না কোথাও যাওয়ার পারমিশন দিয়েছি। তাহলে তুমি কোন ভিত্তিতে বলো এই সন্তান অন্য কারোর? চোখ মুখ লাল করে কথাটা বলে রুদ্র।

— শুধুমাত্র এই ভিত্তিতে উনি বিশ্বাস করলেন এটা উনার বাচ্চা। তার মানে উনি আমার বাচ্চাকে নিয়ে এই কারণে কোনো দ্বিধা রাখে না৷ যদি এর অন্যথা হতো তাহলে উনি? আর ভাবতে পারে না দোলা৷ চোখ দিয়ে এক-ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। মাথাটা ভনভন করতে থাকে।

– আচ্ছা তুমি কি এই বাচ্চাটা শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবছো? হঠাৎ করে রুদ্র বলে উঠে দোলার ভাবনার মাঝে৷ দোলা চোখ মুখ কুচকে তাকায়।
– তুমি চাওনা এই বাচ্চাটা দুনিয়াতে আসুক? তুমি রোজার মতো কিছু করার কথা ভাবছো না তো। তুমি আমার সন্তানকে মেরে ফেলার চিন্তা করছো না দোলা? উত্তেজনা রুদ্রর মধ্যে। রাজ, তানিয়া সবাই চমকানো চোখে তাকিয়ে থাকে রুদ্রর দিকে। কি অবান্তর কথা বলছে রুদ্র এটা ভাবতেই শিউরে ওঠে তারা। আর দোলা সেতো অনুভূতিহীন হয়ে গেছে রুদ্রর এই কথাগুলো শুনে। তার নিজের সন্তান নাকি সে খুন করবে। কীভাবে?

– এ-সব কি বলছেন আপনি রুদ্র? কোন ভিত্তিতে কথাগুলো বলছেন আপনি? আমি আমার সন্তানকে মেরে ফেলবো? এটা কিভাবে বলতে পারেন আপনি? এটা আমার সন্তান রুদ্র। আমি ওর মা। আমি গর্ভে ধারণ করছি আর আমি তাকে মেরে ফেলবো। এই দুনিয়ায় আলো দেখাবো না?
– তোমাদের মতো মেয়েদের দ্বারা সবই সম্ভব দৃঢ় কন্ঠে বলে রুদ্র।
– দোলা বিমুঢ় দৃষ্টিতে তাকায়৷ রুদ্রর এই কথার বিপরীতে কি জবাব দেওয়া যায় তার জানা নেই।
-দোলা তুমি সন্তানকে পৃথিবী আলো দেখার সুযোগ করে দাও প্লিজ। তুমি ওর কোনো ক্ষতি করো না। তুমি যদি বাচ্চা না চাও সমস্যা নেই। লাগবে না তোমাকে। তুমি শুধু আমার বাচ্চাটাকে আমার হাতে তুলে দেবে। তারপর যেখানে ইচ্ছে তুমি যাও, যার সাথে ইচ্ছে ঘর বাধো আমার আপত্তি নেই৷ তুমি শুধু বলো আমার বাচ্চার কোনো ক্ষতি করবে না। আমাকে বাবা ডাক শোনার সুযোগটা তুমি দেবে দোলার হাত চেপে ধরে অনুনয় করে বলে রুদ্র। দোলার শ্বাস নিতে যেনো কষ্ট হচ্ছে৷ রুদ্রর কথাগুলো ভেতরে গিয়ে আঘাত করছে বারবার। হৃদয়টাকে ক্ষতবিক্ষত করে তুলছে।
– দয়া করে এমন কথা বলবেন না রুদ্র। আমি একটা মা। আমি কখনো আমার সন্তানকে হত্যা করতে পারিনা। সবাইকে আপনি এক পাল্লায় তুলে ওজন করতে যাবেন না দয়া করে। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে দোলা। রুদ্রর কথাগুলো যে তাকে কি পরিমাণ আঘাত করেছে সেটা দোলা ছাড়া বোঝার ক্ষমতা কারো নেই।

– রুদ্র তুই কেনো এইসব কথা বলছিস? এটা যেমন তোর সন্তান তেমন দোলারও সন্তান। আর দোলা একটা মা হয়ে কীভাবে নিজের সন্তানকে… রোজাও তো মা ছিলো রাজ। রুদ্রর এই একটা কথায় থমকে যায় সবাই।
– সবাই মা হতে পারে না ব্রো। যে সত্যিকারের মা হওয়ার যোগ্যতা রাখে সে কখনোই নিজের সন্তানের ক্ষতি তো দূর একটা আঁচড়ও পড়তে দেবে না। তুমি দয়া করে দোলা ভাবি আর রোজাকে এক সাথে গুলিয়ে ফেলো না। দুজন সম্পুর্ণ পৃথক মানুষ। তাদের চরিত্র চিন্তা ভাবনা সম্পুর্ণ রুপে আলাদা। তানিয়ার কিঞ্চিৎ রাগ হয় রুদ্রর প্রতি। যার জন্য এই কঠিন কথাগুলো বলতে সে বাধ্য হয়।

– আমি আপনার সন্তানকে এই পৃথিবীতে নিয়ে আসবো রুদ্র কথা দিলাম৷ আমাকে নিয়ে আপনার মধ্যে যে ভ্রান্ত ধারণা, যে ভুল আপনি গেঁথে রেখেছেন সব কিছু আমি মুছে দেবো। আমার চরিত্রে যে তক্তমা আপনি লাগিছেন সেটাও আমি ধুয়েমুছে দেবো। শুধু একটু অপেক্ষা। আমাকে একটু সময় দিন দয়া করে। কথাটা বলে দোলা বেরিয়ে আস কেবিন থেকে। দোলা বাইরে এসে বেঞ্চে বসে কান্নায় ভেঙে পড়ে। সব দিকে গ্রাস করেছে দোলাকে। বন্ধুত্বের বিশ্বাসঘাতকতা, স্বামীর অবিশ্বাস, চরিত্রে কালি, দোষ না করেও সম্পুর্ণ রুমে দোষী সাবস্ত হওয়া। দোলা যেনো ভুলের মাঝ দরিয়ায় হাবুডুবু খাচ্ছে।

– শান্ত হো দোলা। তোর যে এখন ভেঙে পড়লে চলবে। শক্ত হতে হবে৷ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে৷ ওই সামিরকে শাস্তি দিতে হবে৷ দোলার কাধে হাত রেখে আশ্বস্ত দিয়ে বলে কথাগুলো আশা। এই সময় আশাকে দেখে দোলা একটু অবাকই হয়। তানিয়াও দোলার পেছন পেছন এসে আশাকে দেখে ভ্রু কুচকায়।

– তুই এখানে? দোলা চোখের পানি মুছে বলে উঠে।
– আমি আসতে বলেছি।কথাটা বলতে বলতে বেরিয়ে আসে রাজ। সবাই বিস্মিত হয়ে তাকায়।
– সামির অনেক অন্যায় করেছে দোলা আমাদের সাথে। অনেক মিথ্যা বলেছে আমাদের। সামির কখনোই আমাদের ব্যাচ ছিলো না। মিথ্যা নাটক সাজিয়ে আমাদের বন্ধু হয়েছে। সামির রুদ্র ভাইয়াদের ব্যাচ আর সবচেয়ে বড় কথা সামির রুদ্রর ভাইয়ার প্রথম স্ত্রী রোজার কাজিন। সামির অনেক খারাপ একটা মানুষ। অনেক মেয়ের জীবন ও নষ্ট করেছে। আর এখন তোর পেছনে পড়েছে। আশার কথায় দোলা যেনো একের পর এক শক পেতে থাকে।
– তানিয়া যেনো অবিশ্বাস্য হয়ে সব কিছু শুনছে।

— তুই এত কিছু কিভাবে জানলি?আগ্রহ চাহনি রেখে বলে দোলা।
– আশা রাজকে দেখিয়ে বলে উনি গিয়ে ছিলেন আমার কাছে তোর আর সামিরের বিষয় জানতে৷ আমি তো অনেক অবাক হয় উনার মুখে তোর আর সামিরের রিলেশন আছে শুনে। কারণ এইটা সম্পুর্ণ মিথ্যা। এরপর উনি আমাকে জানায় এইসব৷ আর বাকিটা আমি জানতে পাই সামিরের ফ্রেন্ড শাবনম আপুর থেকে। উনি সম্পর্কে আমাদের আত্মীয় হয় কিন্তু সামিরকে খুব ভালো করে চেনে। সামির যে কতবড় খারাপ মানুষ এটা সবাই জানে। আশার কথায় ভেঙে পড়ে দোলা। চারপাশটা অন্ধকারে ছেয়ে আসে। কিন্তু একটা ভাবনা সামির এত কিছু কেনো করলো? শুধু কি দোলার জন্য নাকি রোজার কথায়?

– ভেঙে পড়লে হবে না ভাবি। তোমার আর ব্রোর সম্পর্ক যারা নষ্ট করতে চেয়েছে। ব্রোর জীবনটা যারা বিষিয়ে দিয়েছে তার প্রত্যেকে শাস্তি পেতে হবে৷ তোমার সাথে যে অন্যায় করেছে তার শাস্তিও তাদের দিতে হবে। তানিয়ার কথায় দোলা দৃঢ় কন্ঠে বলে আমি সামিরের সাথে কথা বলবো। কেনো করেছে এমন তার উত্তর চাই আমার। এই নোংরা খেলায় কেনো আমাকে গুটি হিসেবে ব্যবহার করেছে তার হিসাবেও আমার চাই।
– তুই একা না দোলা আমি আছি তোর পাশে৷ আমি সাহায্য করবো তোকে।
– আমিও আছি। আশার কথা শেষ হতেই তানিয়া বলে।
– তোমার এই ভাইও তোমার সাথে আছে দোলা। আমি জানি তুমি কোনো অন্যায় করতে পারো না৷ রুদ্রর সাথে কোনো অন্যায় করতে পারো না এই বিশ্বাস আছে৷ তুমি যে রুদ্রকে ভালোবাসো এটাও আমি জানি। রাজের কথায় দোলা একটা হাসি রাখে যেটা এখন শুধুই তাচ্ছিল্যের হাসি স্বরুপ।
#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম (লেখিকা)
“২০”

“” রোজা ঝামেলা হয়ে গেছে। ব্যস্ত ভঙ্গিতে ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে বলে জেসমিন চৌধুরী। রোজা কানে ফোন ধরে ভ্রু কুচকে কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে পিপি?
– রুদ্র মনে হয় দোলাকে আর ছাড়বে না। আবার এক হয়ে যাবে ওরা। আমাদের এত প্ল্যান এত কিছু সব বৃথা চলে গেলো।
হেয়ালি না করে কি হয়েছে সেটাই বলো। বিরক্ত নিয়ে বলে রোজা।
– দোলা মা হতে চলেছে রোজা। জেসমিন চৌধুরীর মুখ থেকে এই কথা শোনামাত্র চমকে উঠে রোজা। আঁতকে ওঠা কন্ঠে বলে কিহ?
– তুমি তো জানোই রুদ্র একটা বাচ্চার জন্য কতটা উতলা হয়ে আছে। যেই শুনেছে দোলা মা হবে সব ভুলে গেছে। দোলাকে তার কাছে রাখবে বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত। যদি রুদ্র আর দোলা একসাথে থাকে তাহলে কি হবে বুঝতে পারছো। ওদের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি, ঝামেলা সব একটু একটু করে শেষ হয়ে যাবে। রোজা ভাবনায় পড়ে যায়। হঠাৎ এমন একটা খারাপ খবর শুনতে হবে না ভাবিনি সে। রোজা তো জানে রুদ্র বাচ্চা বলতে অজ্ঞান। রোজা তো ইচ্ছে করে তার সন্তান এবর্শন করে আসে। যাতে রুদ্র আঘাতটা গভীর থেকে পাই। একদম ভেঙে পড়ে রুদ্র! তাই রোজা নিজের সন্তানকে এই পৃথিবীর আলো দেখায় না। আবার রুদ্র সেই বাচ্চা পাওয়ার আনন্দ ভোগ করবে। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখবে এটা কোনো ভাবে হতে দেবে না রোজা। রোজা ফোন কেটে দিয়ে ভাবতে থাকে কি করবে। সামিরের কথা মাথায় আসতেই ফোন দেয় সামিরকে। এরপর জরুরি আসতে বলে তার কাছে।
— পরের দিন সকালে রুদ্রকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। রুদ্র এখন সুস্থ মোটামুটি। রুদ্র আগের থেকে দোলাকে বেশি চোখে হারায় এখন। কারণ অবশ্যই বাচ্চাটা। রুদ্র আর কোনো ভাবে তার বেবির ক্ষতি হতে দেবে না।
— দোলা প্রেগন্যান্ট এটা শোনার পর সামির হতাশ হয়। দোলার বেবিকে কোনো ভাবেই মানতে পারে না। তবে সামির এখনো জানে না দোলা তার সব সত্যি জেনে গিয়েছে।
“” দোলা রুদ্রর জন্য খাবার রেডি করে নিয়ে আসে৷ দোলা এখন যতটা সম্ভব রুদ্রর থেকে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করছে। রুদ্রর জন্য যতটুকু না করলে নয় ততটুকু দায়িত্ব সে পালন করছে। রাজ রুদ্রর এখানেই আছে। রত্না চৌধুরী বলে তাকে থাকার জন্য।
তুমি খেয়েছো? রুদ্রর জন্য খাবার নিয়ে আসলে জিজ্ঞেস করে রুদ্র দোলাকে। দোলা রুদ্রর দিকে একবার তাকিয়ে কাজে মন দেয়।
– কি বললাম শুনতে পাওনি? আমার কথার জবাব দিচ্ছো না কেনো? খেয়েছো তুমি? দেখো দোলা আমি চাইনা আমার বেবির কোনো রকম সমস্যা হোক। যেহেতু আমার বেবি তোমার মধ্যে আছে। তাই যতদিন ও এই দুনিয়ায় না আসছে ততদিন তোমাকে ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া করতে হবে৷ ওর যাতে যাতে ভালো হয় তাই তাই করতে হবে। রুদ্রর কথায় দোলার গা জ্বলে উঠে। এমন ভাব করছে এই সন্তান একা তারই।
– দোলা এখনো খাইনি এটা সত্যি। আর খাওয়ার ইচ্ছেও নেই। মানসিক শান্তি না থাকলে কোনো কিছুই ভালো লাগে না। খাওয়া তো দূরে থাক সব কিছুতেই বিষন্ন লাগে।

— আমি একটু পরে খাবো। আপনি খেয়ে নিন৷ এরপর আপনার ওষুধ খেতে হবে। সাবলীল ভাবে বলে দোলা৷ তবে রুদ্রর দিকে একবারও তাকায় না।
– আমি জানতাম তুমি এমন কিছুই করবে। হঠাৎ রুদ্রর এমন কথায় দোলা ভ্রু কুচকে তাকায়।
– তুমি ইচ্ছে করে না খেয়ে আছো তাই না। যাতে করে বেবিটা কষ্ট পাই। তার ক্ষতি হয়। তুমি তো চাও বেবিটা মারা যাক। তুমি কি পেটের মধ্যেই শেষ করে দেওয়ার চিন্তা করছো ওকে।
– রুদ্র” চিৎকার করে উঠে দোলা।
– অনেক সহ্য করছি আপনার বাজে কথা৷ দয়া করে এইসব কথা বন্ধ করুন৷ এটা আমার সন্তান বুঝেছেন আপনি। আপনার যতটা অধিকার আছে ঠিক ততটাই অধিকার আমার আছে ওর উপর। বরং আপনার থেকে বেশি অধিকার আমার। কারণ ও আমার অংশ। আর আমি আমারই অংশকে… থেমে যায় দোলা। দয়া করে আমাকে আর মানসিক পীড়া দিবেন না। আমি আর পারছি না৷ খাওয়া নিয়ে আপনার সমস্যা তো। ওকে ফাইন! তাই বলে দোলা রুদ্রর আনা খাবার থেকে খাবার নিয়ে মুখে দেয়৷ চোখে পানি, মনে ব্যথা। খাবার কি গলা দিয়ে নামে তাই। তারপরও জোর করে খাবার গিলতে যায় দোলা। খাবার গলায় বেধে কাশতে শুরু করে। রুদ্র ব্যতিব্যস্ত হয়ে পানি ধরে দোলার মুখে। দোলার ইচ্ছেও করে না এই পানিটা পান করতে৷ বিশেষ করে রুদ্র হাত থেকে তো নয়ই। কিন্তু বাধ্য হয়ে পানিটা পান করে। দোলা উঠে চলে যায়। রাজ আসে সে-সময়৷ দোলাকে অশ্রুমাখা চোখে বেরিয়ে যেতে দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে৷ রুদ্রর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসার চেষ্টা করে বলে কি অবস্থা এখন তোর?
রুদ্র রাজের দিকে একবার তাকায় শুধু। কিন্তু কিছু বলে না।
— রুদ্র তোকে কিছু কথা বলি যদি কিছু মনে না করিস তো। রাজের এমন রহস্যময় কথায় রুদ্র বিস্ময় নিয়ে তাকায়।
– তুই দোলার সাথে অন্যায় করেছিস এটা যেমন সত্য তেমন এখনো যে অন্যায় করে যাচ্ছিস এটাও সত্য। রাজের কথায় রুদ্র অবাক চোখে তাকায়।
– দোলা অনেক ভালো একটা মেয়ে এটা তুই যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবি আমার মনে হয় ততই তোর জন্য ভালো। তোর কারনে দোলার মনে যে দাগ পড়ে গেছে সেটা কিন্তু সহজে মোছার নয়৷ এখনো হয়তো সময় আছে! যদিও আমি শিওর জানি না দোলার মধ্যে কি চলছে! ও কি করবে৷ তবে আমার মনে হয় তোর ভাবা উচিত সব কিছু এখন৷ দোলাকে বিশ্বাস করা৷ এই যে তুই বারবার আঘাত করছিস দোলাকে এতে কতটা খারাপ প্রভাব পড়ছে তার মধ্যে ভেবেছিস কখনো? এতে কিন্তু তোর বেবিরও ক্ষতি রুদ্র। ওই সন্তান যেমন তোর তেমন দোলারও৷ তুই এটা কিভাবে বলতে পারিস যে দোলা সে সন্তানের ক্ষতি করবে৷ তাকে মেরে ফেলবে। তুই বাবা হওয়ার আগে সে একজন মা। এটা কীভাবে ভুলতে পারিস৷ দোলাকে বিশ্বাস করা ছাড়া তোর হাতে কিন্তু অপশন নেই।

– আমি তো চাই দোলাকে বিশ্বাস করতে। ইনফ্যাক্ট আমি ওকে নিয়ে সারাজীবন থাকতে চাই। কিন্তু কিভাবে? আমি বিশ্বাস করে বারবার ঠকে গেছি। আমি তো এমন ছিলাম না৷ চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেছিলাম একজনকে। আর প্রতিদান কি দিলো আমায়৷ নিঃস্ব করে গেছে তার বদলে। দোলাও তাই করলো আমার সাথে৷ বিশ্বাস নামক শব্দটাই আমার ভয় করে এখন।
-রাজ বুঝতে পারে রুদ্র কার কথা বলছে।
– রুদ্র একটা উপহাসে হাসি রেখে বলে, পৃথিবীতে সব মানুষ যেমন ভালো নয় তেমন সব মানুষ খারাপও নয়। একজন যে পাপ করেছে সেটা সবাই করবে এটা তো ভিত্তি নেই৷ তাহলে বিশ্বাস বলে শব্দটা পৃথবীতে থাকতো না। তুই রোজাকে মন থেকে মুছে ফেল রুদ্র৷ ওর অধ্যায় বন্ধ করে দে। মনে করবি তোর জীবনে ওই সময়টা কখনোই আসেনি। অতীত ভেবে বর্তমান, ভবিষ্যৎ শেষ করিস না৷ জীবনটা বিচিত্রময়। তাই সামনে এগিয়ে যেতে হবে বিশ্বাস রেখে আর এটাই বাস্তব।

– রুদ্র! কোথায় তুমি? দেখো আমি চলে এসেছি। আমি ফিরে এসেছি তোমার কাছে চিৎকার করে বলতে বলতে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে রোজা। রুদ্র, রাজ অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকায়।এতদিন পর রোজার কন্ঠস্বর পেয়ে নড়েচড়ে উঠে রুদ্র। হতভম্ব হয়ে যায় সে।
– রোজার চিৎকারে একে একে সবাই বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। রত্না চৌধুরী, জেসমিন চৌধুরী, তানভীর আহমেদ, তানিয়া। দোলা তানিয়ার ঘরেই ছিলো। হঠাৎ মেয়েলি চিৎকারে বিব্রত হয়ে উঠে। কৌতুহলবসত সবাই এসে উপস্থিত হয় ড্রয়িং রুমে। রোজার হাতে বড় একটা সুটকেস। সম্ভবত তার প্রয়োজনীয় জিনিস আছে সেখানে৷ রোজাকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে সে এখানে থাকার জন্য একদম প্রস্তুত হয়ে এসেছে৷ রাজ আর রুদ্রও বেরিয়ে আসে। দীর্ঘদিন পর রোজার মুখটা দেখে থমকে দাঁড়ায় রুদ্র। তার মধ্যে আর সেই ভালো লাগা নয় বরং ক্রোধ জাগ্রত হয় রোজাকে দেখে। দোলাও চোখ মুখ কুচকে থাকে রোজাকে দেখে৷ একদমই আশা করেনি তাকে৷ রোজাকে দেখে দোলার মধ্যেও ক্রোধ দেখা দেয়।

– তুমি এখানে? আবার কি নাটক করতে এসেছো নতুন করে। শক্ত গলায় বলে রত্না চৌধুরী। রোজাকে দেখে তিনিও বেশ চমকে যান।
– মা! কথাটা বলে রোজা রত্না চৌধুরীর দিকে ছুটে গিয়ে পায়ে সালাম করে। রত্না চৌধুরী নাক সিটকায় তাতে।
– তুমি কেমন আছো মা? আমি আবারও তোমাদের মাঝে চলে এসেছি। আমি যে ভুল করেছি সেটা বুঝতে পেরেছি। আমি আবারও সব কিছু ফিরে পেতে চাই মা। হাসিমুখে কথাগুলো বলে রোজা। সবাই ভ্রু কুচকে রোজাকে দেখছে। দোলার মধ্যে রাগের মাত্র তরতর করে বাড়ছে৷ জেসমিন চৌধুরী হাসিমুখে তামাশা দেখছে দাঁড়িয়ে।

— রোজা তুই? হঠাৎ এইভাবে ফিরে আসার কারণ কি? রাজ বলে সন্ধিহান চোখে। রাজের কথায় রোজার রাগ হলেও সেটা প্রকাশ করে না। মুখে হাসিটা বজায় রেখে বলে আমি এখানে কেনো এসেছি বুঝতে পারছিস না? আমি রুদ্রর কাছে ফিরে এসেছি। আমার স্বামীর কাছে ফিরে এসেছি।
— তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে রোজা! দোলার কথায় সবার মনোযোগ সেদিকে যায়। রোজা ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে বলে মানে?
– মানে তুমি যাকে এখন স্বামী বলে দাবি করছো তিনি আর তোমার স্বামী নেই৷ রুদ্র আমার স্বামী। আমি উনার বর্তমান ওয়াইফ। তোমার কোনো অধিকার নেই উনাকে স্বামী বলার। দোলার কথায় রোজা আকাশ থেকে পড়ে এমন একটা ভাব নিয়ে অবাক হয়ে বলে রুদ্র তুমি বিয়ে করেছো? কীভাবে পারলে এটা করতে? তুমি না আমাকে ভালোবাসতে। পাগলের মতো ভালোবাসতে। তাহলে কোথায় গেলো তোমার সেই ভালোবাসা? রুদ্র শুধু ভ্রু কুচকে স্বাভাবিক দৃষ্টি ভঙ্গি রেখে রোজাকে পর্যবেক্ষণ করছে।

– মনে হচ্ছে তুই এই প্রথম জানলি রুদ্র বিয়ে করেছে? এর আগে কখনো শুনিসই নাই? বিস্মিত চাহনি নিয়ে বলে রাজ।
– জানলে নিশ্চয় পুনরায় জিজ্ঞেস করতাম না। রোজার সোজা জবাব।
– ও আচ্ছা! তার মানে তুমি সত্যি জানো না তাই না রোজা? কিন্তু সামির ঠিকই জানে কথাটা। আর আমি যতদুর জেনেছি সামির তোমার কাজিন। তো সে তোমায় বলেনি কথাটা?
– দোলার কথায় রোজা ঘাবড়ে যায়। আমতাআমতা করে বলে সে যাই হোক। আমি আর রুদ্রকে ছাড়ছি না৷ রুদ্রর ভাগ আমি কাউকে দেবো না। রুদ্র আমার ছিলো আর আমারই থাকবে।
– রোজার কথায় রাজ, তানিয়া হেসে উঠে দুজনেই শব্দ করে। সবাই কৌতুহলী হয়ে তাকায় ওদের দিকে। রত্না চৌধুরীর ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে কয়টা চড় বসিয়ে দিতে রোজার গালে। এই সব ন্যাকামি একদম সহ্য হচ্ছে না তার। রুদ্র এখনো কেনো চুপ করে আছে সেটাই বুঝতে পারছেন না তিনি। জেসমিন চৌধুরী বেশ মজা লুটছে দূরে দাঁড়িয়ে।

– সত্যি রোজা আপু। তোমার জবাব নেই। নাটক তুমি বরাবরই খুব ভালো করো। আজো তার প্রমাণ পেলাম৷ তোমার না কোনো টিভি সিরিয়ালে যোগ দেওয়া উচিত। তাহলে কিন্তু তোমার সেই নাম ডাক আসবে। দয়া করে তোমার ওই মিথ্যে অভিনয় এখানে দেখাতে এসো না৷ কেউ তোমার এইসব দেখতে চাইনা। তুমি না ব্রো কে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে। আচ্ছা ওয়েট” তুমি যার হাত ধরে চলে গিয়েছিলে সে কোথায়? সে তোমাকে কি তাড়িয়ে দিয়েছে৷ তাই তুমি আবার ব্রোর পেছনে পড়েছো। অবশ্য তোমার মতো মেয়ে সংসার করার যোগ্য নয় এটা জানা কথা। তাচ্ছিল্যের সুরে বলে তানিয়া।
– তানিয়া! উচ্চস্বরে বলে উঠে রোজা।
– একদম গলা তুলে কথা বলবে না আমার সাথে। সত্য কথা খুব গায়ে লাগে না। তোমার মতো জঘন্য মেয়ে আমি আমার জীবনে একটাও দেখিনি। আমার তো মনে হয় তুমি ইচ্ছে করে সব কিছু করছো। এই যে ব্রো আর দোলা ভাবির মধ্যে যে দ্বন্দ্ব সেটাও তুমি করছো পেছন থেকে। তানিয়ার কথায় জেসমিন চৌধুরী চমকে তাকায়৷ রোজাও ঘাবড়ে যায়। ইচ্ছে করছে তানিয়ার মুখটা এখনই বন্ধ করে দিতে। রোজা যথাসম্ভব নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখছে।

– রুদ্র! তুমি কিছু বলছো না কেনো? দেখো সবাই কেমন অপমান করছে আমায়। তোমার সামনে তোমার রোজাকে অপমান করছে৷ তোমার ভালোবাসাকে অপমান করছে৷ তুমি কিচ্ছু বলবে না। আমি তোমাকে সবটা খুলে বলবো রুদ্র। কেনো গিয়েছিলাম আমি তোমায় ছেড়ে। তুমি আমার সাথে চলো বলে রোজা রুদ্রর দিকে আসতে গেলে দোলা সামনে এসে দাঁড়ায়। রোজা দাঁতে দাঁত চেপে বলে সরে যাও সামনে থেকে। আমি রুদ্রর সাথে কথা বলব।

– বলেছি না উনি আমার স্বামী। আমার স্বামীর সাথে বাইরে কোনো মেয়ে কথা বলুক এটা আমি চাইনা।

– রুদ্র তোমার স্বামী হওয়ার আগে আমার স্বামী ছিলো। আমার ভালোবাসা ছিলো। কোন অধিকারে বাধা দাও তুমি আমায় রেগে বলে রোজা।
– স্ত্রীর অধিকারে! যে অধিকারটা এখন তোমার নেই৷ যেটা তুমি নিজ হাতে শেষ করেছো। সাঁজানো সংসার ছেড়ে নিজ ইচ্ছেয় চলে গেছো। অবশ্য এটা বললে তোমার সাথে মানানসই হবে যে একটা সাজানো গোছানো সংসার তুমি ভেঙে তছনছ করে দিয়ে গেছো। মানুষ গুলোকে ভেতর থেকে ভেঙেচুড়ে দিয়ে গেছো। আবার সেই সংসারেই ফেরার ইচ্ছে পোষণ করছো। তোমাদের মতো মেয়েদের সত্যি লজ্জাসংকোচ কিছু নেই তাই না? আচ্ছা কেনো ফিরে এসেছো আবার? এইটা দেখতে আমার স্বামী আমার সাথে কতটা আনন্দে আছে। নাকি এই আনন্দ তোমার সহ্য হচ্ছে না তাই আবারও সব কিছু ভেঙে গুড়িয়ে দিতে এসেছো। একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো এই মানুষটার উপর তোমার কোনো অধিকার নেই৷ তাই ভালোই ভালোই বলছি বেরিয়ে যাও এখানে থেকে । দোলার কথায় রত্না চৌধুরী অনেক খুশি হয়৷ মুখের উপর সঠিক জবাব দেওয়ার জন্য মনে মনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। রাজের মধ্যেও ভালো লাগা কাজ করে। তানিয়া তো ঠোঁট এলিয়ে হাসে৷ জেসমিন চৌধুরী মুখটা বাকিয়ে রাখে৷ রুদ্র শুধু ভ্রু কুচকে কান্ডকলাপ দেখছে।

— উড়ে এসে জুড়ে বসেছো আবার বড় বড় কথা বলছো৷ এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলার তুমি কেউ না। আমি রুদ্রর সাথে কথা বলবো। আমার বিশ্বাস রুদ্র এখনো আমাকে ভালোবাসে। আমাকে চাই৷ রুদ্র তুমি বলো আমাকে ভালোবাসো? রোজার মধ্যে অনেকটা কনফিডেন্স রুদ্রকে নিয়ে।
– উনি তোমার সাথে কোনো কথা বলতে চাইনা। তাই চুপচাপ আছে এটাও বুঝতে পারছো না। আর কতভাবে বোঝানো লাগবে তোমায়৷ একটা মেয়ে মানুষ হয়ে এতটা বেহায়াপনা না করলেও পারো।

দোলার কথায় রোজা রেগে বলে সেই কখন থেকে তোমার বাজে কথা শুনছি! তোমাকে টলারেট করছি। সরো সামনে থেকে বলে দোলাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়৷ ধাক্কাটা এতো জোরে ছিলো যে আর হঠাৎ করে হওয়ায় দোলা নিজেকে সামলাতে পারে না৷ ছিটকে পড়ে যায় মাটিতে। পড়ে যেতেই দোলা আহ শব্দ করে উঠে ব্যথায়। সবাই আতংকিত হয়ে দোলা বলে চিৎকার করে উঠে। রুদ্র ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে উচ্চস্বরে দোলা বলে রোজার দিকে রাগী লুক নিয়ে কষিয়ে দুইটা চড় বসিয়ে দেয়। হঠাৎ করে রুদ্র এমন একটা কাজ করবে কেউ ভাবতে পারেনি৷ আর রোজা সে-তো একদমই প্রস্তুত ছিলো না এই সবের জন্য। জেসমিন চৌধুরী কেঁপে উঠে। তানিয়া কিছুটা হলেও শান্তি পাই এতে।

— চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here