#ঘর_বাধার_স্বপ্ন
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব:৮
আবিদের মা কিছু বলবে তার আগেই দেখে অবনি আর আফিহা দাঁড়িয়ে আছে। আবিদের মা অবনিকে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে বললো’ কোথায় গিয়েছিলি তোরা?
আবিদের মায়ের কথায় অবনি কিছু বললো না। আফিহা বললো’ একটু বাহিরে গিয়েছিলাম।’
অবনির দাদি বিরক্ত মাখা কন্ঠে বললো
‘ শুন তোরা আবিদের সাথে তিনদিন পর অবনির বিয়ে হবে।’
ধ্রুব দাদির কথা শুনে অবাক হয়ে বললো
‘ হুয়াটট..! মাইশার সাথে না আবিদের বিয়ে আজ?
আবিদের মা ধ্রুবকে কিছুক্ষন আগের ঘটনা সব বললো। সব শুনে তো ধ্রুব অবাক হয়ে গেলো। অবনির দাদি বললো ‘ অবনির তো বাবা নেই আর ভাইও নেই তাই ওকে অন্য বাড়িতে না পাঠিয়ে আবিদের সাথে বিয়ে দিয়ে এই বাড়িতেই রেখে দিতে চায়।’
অবনি আবিদের দিকে তাকাতে দেখে আবিদ তার দিকে তাকিয়ে আছে। অবনি তার দাদিকে বললো’ দাদি আমি কিছু বলতে চায়
অবনির দাদি তখন মুখ বাকা করে বললো
‘ তোকে কিছু বলতে হবে না। আমরা সবাই যা ডিসিশন নিয়েছি এইটাই শেষ ডিসিশন।’
অবনি তার দাদির কথায় মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলতে লাগলো। ধ্রুবর চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে গেলো। ধ্রুব হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেলো। অবনি ধ্রুবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিজেও রুমে চলে গেলো।
ধ্রুব নিজের রুমে এসে রাগে দেয়ালে ঘু’সি মারলো। সে কখনোই অবনিকে হারাতে চাই না। ধ্রুব রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে বললো’ আমাকে অবনির মনে নিজের জন্য ফিলিংস তৈরি করতে হবে।আমি জানি ও আমাকে ভালোবাসে তবে সেটা বুঝতে পারছে না।এই কয়দিনের মধ্যে যে করেই হোক ওর মনে আমার জন্য জায়গা করতে হবে।
—
অবনি নিজের রুমে এসে আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে বললো ‘ কি করবো এখন আমি? একদিকে আবিদ আরেক দিকে ধ্রুব ভাইয়া কি করা উচিত আমার?
পিছন থেকে আফিহা বললো
‘ আপুই তুই বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে যার মুখ দেখবি তুই তাকেই গ্রহন করবি।’
অবনি তখন বললো
‘ কি বলতেছিস তুই?
‘ একবার চেষ্টা করে দেখনা।’
আফিহার কথায় অবনি বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই ধ্রুবের মায়া ভরা মুখ ভেসে উঠলো। অবনি চোখ খুলে ফেললো। আফিহা বললো ‘ কাকে দেখেছিস নিশ্চয়ই ধ্রুব ভাইয়াকে?
অবনি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো ‘ হ্যাঁ।’ আফিহা হেসে বললো আমি জানতাম।’
কিছুক্ষন পর
অবনি ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। আবিদ পিছন থেকে অবনিকে বললো ‘ অবনি সরি আমি তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি কিন্তু বিশ্বাস কর এখন আমি বুঝতে পারছি। এখন থেকে তোকে আমি আর কষ্ট দিবো না। ভালোবাসবো তোকে।’
আবিদের কথায় অবনি তাচ্ছিল্য হেসে হাতে তালি দিয়ে বললো
‘ তুমি আমার জীবনটাকে বিষাক্ত করে দিয়েছো শুধু তুমি না এই পরিবারের সবাই। আমাকে দিনের পর দিন তুমি অবহেলা করেছো। আমার সাথে প্রতারণা করেছো। আমাকে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখিয়ে সেই স্বপ্ন টুকরো টুকরো করে ভেঙ্গে দিয়েছো তুমি। এখন মাইশা তোমাকে ঠকিয়েছে এখন আমাকে ভালোবাসা দেখাতে এসেছো বাহ্ চমৎকার তোমার অভিনয়।’
আবিদ মাথা নিচু করে বললো
‘ আমার প্রতি তোর অনেক অভিমান জমে আছে। আমি তোকে আমার ভালোবাসা দিয়ে সব অভিমান দূর করে দিবো। এইবার তুই আবিদ আহমেদের ভালোবাসা দেখবি।’
এই বলে আবিদ চলে গেলো। আবিদ যেতে ধ্রুব অবনির কাছে এসে ভেজা কন্ঠে বললো
‘ অবনি আমি তোকে কখনোই আবিদের সাথে দেখতে পারবো না। আমি তোকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।’
ধ্রুবের কথায় অবনির মনে অন্যরকম অনুভূতি তৈরি হলো। অবনি মুচকি হাসি দিয়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো।
পরের দিন
” সূর্যের কড়া রোদ্দুর মুখে পরতেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো অবনি। পিটপিট করে চোখ খুলে দেয়ালে টানানো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাতটা বেজে গেছে। অবনি তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে আসতেই তার দাদি তাকে দেখে ফোড়ন কেটে বললো ‘ এতো দেরি হলো কেনোরে? মেয়ে মানুষ ভোর বেলা উঠবি তা না মহারানির মতো আট দশটায় উঠিস এই রকম যেনো আর না দেখি।’
অবনি চুপচাপ শুনে রান্নাঘরে এসে সবার জন্য খাবার বানাতে লাগলো। আবিদের মা অবনিকে বললো ‘ ধ্রুবের জন্য এক মগ কফি নিয়ে যা তো ওর মাথা ব্যথা করতেছে বলে।’
ধ্রুবের মাথা ব্যথার কথা শুনে অবনির মন নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো। অবনি তাড়াতাড়ি করে কফি বানিয়ে ধ্রুবের রুমে এসে দেখে ধ্রুব দাঁড়িয়ে আছে। অবনি বললো’ এই নিন আপনার কফি।’
ধ্রুব অবনির হাত টান দিয়ে নিজের কাছে এনে মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো’ অবনি আমি তোকে ভালোবাসি। তোকে কোনো ভাবেই অন্য কারো সাথে দেখতে পারবো না মরে যাবো আমি।’
অবনি তখন ধ্রুবের মুখ হাত দিয়ে বললো
‘ একদম মরার কথা বলবেন না।’
ধ্রুব কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো
‘ তাহলে উত্তর দে আই লাভ ইউর না হলে আমি চলে যাবো।’
অবনি তখন ধ্রুবের কথায় লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে বললো ‘ আমিও আপনাকে ভালোবাসি।’
এই বলে অবনি চলে গেলো।
অবনির কথায় ধ্রুব খুশি হয়ে গেলো।
————
তিন দিন পর
আজ অবনি আর আবিদের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান। অবনি আবিদকে বিয়ে করতে রাজি না কিন্তু মায়ের কথায় রাজি হয়েছে। ধ্রুব অবনিকে বলেছে সবাই কে বলে দিবো তোর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে কিন্তু অবনি ধ্রুবকে বলেছে তুমি চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে। ধ্রুব আর কিছু বলেনি। অবনিদের বাড়িটা অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। অবনিকে পার্লারের লোক সাজিয়ে দিতেছে। কিছুক্ষন পর অবনিকে স্টেজে নিয়ে এসে বসানো হলো।
এদিকে
আবিদের মা আবিদকে চিন্তিত কন্ঠে বললো
‘ আবিদ এই সব যা হচ্ছে সব কি ঠিক হচ্ছে?
আবিদ তখন তার মাকে জড়িয়ে ধরে হেসে বললো
‘ আম্মু সব ঠিক হচ্ছে ট্রাস্ট মি।’
ধ্রুব আবিদ আর তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুবের ইচ্ছা করতেছে সবাই কে বলে দিতে কিন্তু সে পারছে না অবনিকে যে সে কথা দিয়েছে।
আবিদ তার মাকে আবার বলে উঠলো
‘ আম্মু অবনি আর আমি আছিই তো একে অন্যর জন্য। এই বিষয়ে তুমি কোনো সন্দেহ রেখো না। ওকে আমি নিজের করেই ছাড়বো। আমি ওকে অনেক ভালোবাসি।’
ধ্রুবের মাকে ধ্রুবের দাদি ডাকতেই তিনি দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে চলে গেলো। অবনির দাদি ধ্রুবের মাকে বললো ‘ গায়ে হলুদ শুরু করো বউমা।’ ধ্রুবের মা আচ্ছা বলে আবিদকে ডাক দিয়ে অবনির পাশে বসলো। তারপর আবিদের মুখে হলুদ দিতে লাগলো। আবিদের মা ধ্রুবের কাছে এসে বললো ‘ ধ্রুব আবিদকে হলুদ লাগিয়ে আয়।’
ধ্রুব আচ্ছা বলে আবিদের কাছে আসলো। ধ্রুবকে দেখে আবিদ হেসে বললো ‘ আরে ব্রো এই রকম গোমড়া মুখ করে আমাকে হলুদ লাগাবে? তুমি তো জানোই আমি অবনিকে কতটা ভালোবাসি। ট্রাস্ট মি আমি আজ থেকে অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকাবো না।’
আবিদের কথায় ধ্রুব মুচকি হেসে হলুদের বাটি থেকে হলুদ নিয়ে অবনির দিকে তাকিয়ে আবিদের চোখ মুখে লাগিয়ে দিলো। ধ্রুবের এই রকম কাজে অবনি ধ্রুবের দিকে কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে পরমূহুর্তে মুচকি হাসলো। আবিদ বিরক্ত কন্ঠে ধ্রুবকে বললো ‘ তোকে দিয়ে একটা কাজও হয় না এইভাবে কেউ হলুদ লাগায়?
ধ্রুব তখন বললো
‘ তোর কথা শুনে চোখটা বন্ধ করে দিলাম যাতে অন্য কোনো মেয়ের দিকে না তাকাতে পারিস।’
আবিদ চোখ বন্ধ করে বললো’ পানি দাও তো।’
আবিদের মা আবিদের কাছে এসে বললো ‘ তোমরা ওকে দেখো আমি অবনিকে হলুদ লাগিয়ে আসছি।’
ধ্রুব দ্রুততার সঙ্গে তার মাকে বললো
‘ মা তুমি আবিদকে দেখো। দেখো না ও চোখ খুলতে পারছে না।’
আবিদের মা বললো’ হ্যাঁ বলে আবিদের কাছে আসলো। ধ্রুব আফিহাকে ডেকে বললো অবনিকে রান্নাঘরে আসতে। আফিহা আচ্ছা বলে অবনির কাছে এসে বললো আপুই তোকে ডাকছে ধ্রুব ভাইয়া রান্নাঘরে।
অবনি তখন আফিহার কথায় রান্নাঘরে আসতেই ধ্রুব অবনিকে হেচকা টান দিয়ে অবনির কোমর জড়িয়ে ধরলো। অবনি কেপে উঠলো। অবনি ধ্রুবের কাজ দেখে বললো’ কি করছেন কি? কেউ দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।’
ধ্রুব তখন মুচকি হেসে বললো
‘ কিছু হবে না।’
অবনি তখন চিন্তিত কন্ঠে বললো
‘ আপনি না বলেছিলেন আমার গায়ে হলুদ প্রথমে আপনি ছোঁয়াবেন? সেটা তো এখন সম্ভব নয়।’
অবনির কথায় ধ্রুব রান্নাঘর থেকে হলুদের বাটি এনে শান্ত চাহনিতে বললো’ তোমাকে সর্বপ্রথম আমিই হলুদ লাগাবো।’
অবনি তখন ভ্রু উলটে বললো
‘ বুঝতেছেন না আগে ছেলের গায়ে হলুদ দিয়ে মেয়ের গায়ে ছেলের বাড়ির হলুদ দেয়।’
ধ্রুব হলুদের বাটি থেকে হলুদ এনে নিজের দু গালে লাগালো। অবনি আগের নেয় অবাক হয়ে ধ্রুবের কাজ দেখতে লাগলো। ধ্রুব অবনি গালে নিজের গালের হলুদ লাগিয়ে দিলো। অবনি কেপে কেপে উঠলো। ধ্রুবকে এতোটা কাছে দেখে অবনির হার্টবির্ট দ্রুতগতিতে চলাচল করতেছে। ধ্রুব অবনির কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিলো। অবনি মুচকি হেসে দ্রুততার সঙ্গে স্থান ত্যাগ করলো। আবিদের মা অবনির মুখে হলুদ দেখে কিছুটা অবাক হয়ে বললো’ তোর মুখে হলুদ এলো কথা থেকে?
অবনি তখন থমথমে গলায় বললো,,,
#চলবে…..
( ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। পড়ে মন্তব্য করার অনুরোধ রইলো। হ্যাপি রিডিং)