ঘর বাধার স্বপ্ন পর্ব -১৫

#ঘর_ বাধার_স্বপ্ন
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব:১৫

ধ্রুব অবনির হাত টান দিয়ে বললো’ আমার কিন্তু তোকে নিয়ে খুব টেনশন হয়। নিলিমাকে বিশ্বাস করা তোর উচিত হয়নি। ওই খুব ডেঞ্জারাস।’

অবনি ধ্রুবের দিকে শান্ত চাহনিতে তাকিয়ে বললো’ কিছু হবে না। এতো টেনশন করো না।’
এই বলে অবনি ফ্রেশ হতে গেলো। আর ধ্রুব গোমড়া মুখ করে বসে রইলো। অবনি ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখে ধ্রুব গোমড়া মুখ করে বসে আছে। অবনি ধ্রুবের কাছে এসে নিজের চুলের পানি ধ্রুবের মুখে দিয়ে বললো’ কিউট বর মুখ গোমড়া করে আছো কেনো?

ধ্রুব মুখ ফুলিয়ে বললো’ না কিছু না।’ অবনি ধ্রবের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ধ্রুবের চুলে হাত বুলাতে লাগলো। ধ্রুব মুচকি হেসে অবনিকে জড়িয়ে ধরলো।

এদিকে
” নিলিমা রুমে বসে আছে। নিলিমার ফোনে হঠাৎ কল বেজে উঠলো নিলিমা ফোন হাতে নিয়ে নাম্বারটা দেখে মুচকি হেসে রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে নিলিমার মা বললো’ হ‍্যালো নিলিমা।’

নিলিমা তখন বললো ‘ আম্মু তুমি ঠিক আছো তো?

নিলিমার মা তখন বিরক্ত কন্ঠে বললো’ আমি একটা পুলিশ অফিসার কে ঘু’স খাইয়ে তোকে কল দিয়েছি আমার হাতে বেশি টাইম নেই ফোন নিয়ে যাবে।’

নিলিমা বললো’ এখন কিভাবে জেল থেকে বের হবে?

নিলিমার মা পৈশাচিক হাসি দিয়ে নিলিমাকে পরের প্লান বললো। নিলিমা মুচকি হেসে কল কেটে দিয়ে বললো’ অবনি তুই আমার উপরে মায়া দেখিয়ে অনেক বড় ফুল করেছিস। এইবার দেখ আমার মাকে জেলে দেওয়ার ফল আমি তোকে কিভাবে দেয়।’
——-
রাতে অবনি আর ধ্রুব ছাদে বসে আকাশের তারা দেখতেছে। হঠাৎ অবনির ফোনে কল আসতেই অবনি ফোন ধরতেই অপর পাশ থেকে পুলিশ অফিসার বললো’ ম‍্যাম আপনার ফুপি জেল থেকে পালিয়েছে।’

কথাটা শুনে অবনি অবাক হয়ে বললো’ কিভাবে পালালো?

পুলিশ অফিসার নিচু কন্ঠে বললো’ সন্ধ্যায় আমাদের সবাই কে পানি দেয় সফিউল্লাহ কিন্তু ও আমাদের পানিতে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে সবাই কে খাওয়াই দিয়েছে তারপর এই সুযোগে ওই আর আপনার ফুপি পালিয়ে যান।’

অবনি চিন্তিত কন্ঠে বললো’আপনারা যেভাবেই হোক খোঁজ লাগান।’ পুলিশ অফিসার বললো’ আচ্ছা।’
তারপর অবনি কল কেটে দিলো। ধ্রুব চিন্তিত কন্ঠে অবনিকে বললো’ ফুপি বড় কোনো ষড়যন্ত্র করতেছে।’

অবনির ফোনে মেসেজ আসলো অবনি মেসেজটা দেখে অবাক হলো। তারপর দীর্ঘ শ্বাস আড়াল করে ধ্রুবের বুকে মাথা রাখলো।

পরের দিন
সকাল বেলায় অবনি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে এসে দেখে সবাই বসে আছে। অবনি ধ্রুবের মায়ের কাছে এসে বললো’ আম্মু কি হয়েছে সবার মুখ ভার কেনো?

ধ্রুবের মা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললো ‘ কালকের ঘটনার পর সবার মন খারাপ হয়ে গেছে।’ অবনি কিছু একটা ভেবে ধ্রুবের মাকে বললো’ ওয়েট এক মিনিটের মধ্যে সবার মন ভালো করে দিবো, এই বলে অবনি রান্নাঘরে এসে সবাইকে কফি বানিয়ে দিলো তারপর অবনি ধ্রুবের কানে কানে বললো’ গান চালাও আমরা নাচবো।’

ধ্রুব ভ্রু উল্টে বললো’ এখন? অবনি বললো’হুম।’ তারপর ধ্রুব গান চালাতেই অবনি আফিহার হাত ধরে নাচতে লাগলো। সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। অবনি ধ্রুবের মায়ের হাত ধরে নাচতে লাগলো একে একে সবার সাথে নাচতে লাগলো। অবনির কাজ দেখে সবাই হেসে অবনিকে জড়িয়ে ধরে বললো’ পাগলি মেয়ে একটা।’ ধ্রুব এক দৃষ্টি কোণে তাকিয়ে আছে অবনির দিকে। অবনি ধ্রুবের দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হতেই লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো অবনি। ধ্রুব মাথা চুলকে মুচকি হেসে অবনিকে ইশারা করে বললো ছাদে আসতে। অবনি সাথেই ছিলো ধ্রুবের নানি ওনি ধ্রুবের দিকে তাকাতেই দেখে ধ্রুব ইশারা করে রুমে আসতে বলছে। ধ্রুবের নানি ভ্রু কুচকে মনে মনে বললো ‘ও আমাকে কি বলবে?

এদিকে
অবনিকে ধ্রুবের মা বলেছে একটু পরে আমার রুমে আশিস। অবনি ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে বললো’ ওকে।’ধ্রুব তো ভেবেছে তাকেই বলেছে সেই জন্য ধ্রুব তাড়াতাড়ি করে রুমে এসে অবনির জন্য অপেক্ষা করতেছে। ধ্রুবের নানি ধ্রুবের পিছু পিছু এসে রুমে ডুকবে তার আগেই ধ্রুব তার নানিকে অবনি ভেবে হাত টান দিয়ে রুমের মধ্যে আনতেই নানিকে দেখে অবাক হয়ে কিছুটা জোড়ে বলে তুমিইইইইই?

ধ্রুবের নানি তখন চোখ রাঙিয়ে বলে’ তুই না আমাকে ইশারা করলি রুমে আসতে এখন আবার অবাক হচ্ছিস কেনো? আর এই ভাবে হাত টান দিলি কেনো?

ধ্রুব হো হো করে হেসে বললো’ নানু আমি মজা করেছি তোমার সাথে।’ ধ্রুব হাতে তালি দিয়ে হো হো করে হেসে বললো’ দেখেছো তুমি কিছুই বুঝোনি বোকা।’ বলেই হাসতে লাগলো। ধ্রুবের নানি ভ্রু কুচকে বিরবির করতে করতে নিজের রুমে চলে গেলো।

কিছুক্ষন পর
অবনি রুমে এসে বসে ফোন টিপতেছে। ধ্রুব অবনির কাছে এসে বললো’ তোকে ভেবে আমি নানিকে, ধ্রুব আর বলবে তার আগেই মনে মনে বললো’ না না ওকে বলা যাবে না তাহলে আমাকে এই কথা নিয়ে পচাবে।’

অবনি ভ্রু কুচকে বললো’ কি?

ধ্রুব হাসতে হাসতে বললো’ কিছু না।’অবনি ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে বললো’ এইভাবে পাগলের মতো হাসতেছো কেনো?
ধ্রুব হাসতে হাসতে বললো’ আমি পাগল হয়ে গেছি।’
অবনি ধ্রুবের কথার আগা মাথা না বুঝেই ধ্রুবের তাকিয়ে রইলো।

ধ্রুব হাসি থামিয়ে অবনিকে বললো’ যাতো আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আয়। গলা শুকিয়ে গেছে।’ অবনি ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে আচ্ছা বলে পানি আনতে গেলো।

অবনি ড্রয়িং রুমে এসে টেবিল থেকে পানি নিতেছে হঠাৎ অবনির মনে পরলো আজকে নিলিমা কে আর আবিদ কে সকাল থেকে দেখেনি। অবনি বিরবির করে বললো’ এই মেয়ে আবার কোথায় গেলো? অবনি এইগুলো বলতেছে হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। অবনি পানির গ্লাস নিয়েই দরজা খুলতেই চমকে গেলো। অবনির যেনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। অবনি আসতে না দেখে ধ্রুব অবনির পিছু পিছু এসে দরজার সামনে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে ‘এই ভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? বলে ধ্রুব দরজার দিকে তাকিয়ে চমকে যায় কারন নিলিমা বিয়ের সাজে দাঁড়িয়ে আছে আর তার পাশেই আবিদ নিলিমার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে দুজনে সদ‍্য বিয়ে করেছে। ধ্রুব অবাক হয়ে বললো’ তোরা এই পোশাকে কেনো?

নিলিমা তখন বিরক্ত কন্ঠে বললো’ তোমাকে বলতে বাধ্য নয়। ভিতরে যেতে দাও আমাদের।’

নিলিমার কথায় অবনি দরজা থেকে সরে দাড়ালো। আবিদ অবনির দিকে একবার তাকিয়ে ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে বললো’ নিলিমাকে আমি বিয়ে করেছি।’

ধ্রুব তখন চেচিয়ে বললো’ মানে?
অবনি বাড়ির সবাই কে ডাকলো। সবাই এসে আবিদ আর নিলিমাকে বিয়ের সাজে দেখে অবাক হয়ে গেলো। ধ্রুবের মা আবিদের কাছে এসে বললো’ তোরা এই ভাবে সেজে আছিস কেনো?

নিলিমা শয়তানি হাসি দিয়ে আবিদের মায়ের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে বললো’ মামি আজ থেকে আমি এই বাড়ির বউ। আপনার ছেলের স্ত্রী।’

ধ্রুবের মা অবাক হয়ে বললো’ মানে তোমরা কখন বিয়ে করলে?আর আমাদেরকে জানালে না কেনো?

আবিদ তার মায়ের কাছে এসে বললো’ আম্মু নিলিমা আমাকে ভালোবাসে আর তোমাদের বললে তো ওর সাথে বিয়ে দিতে না যার জন্য এইভাবে বিয়ে করতে হয়েছে।’

নিলামা বললো’ তোমরা আমাকে মানলেও আমার কিছু যায় আসে না আর না মানলেও।’

অবনি নিলিমার কাছে এসে থা’প্পড় দিয়ে বললো’ তোকে ভেবেছিলাম তুই হয়তো সুধরে গিয়েছিস। কিন্তু তুই ভালো মানুষের নাটক করতেছিস? তুই তোর মাকে পালাতে সাহায্য করেছিস ছিহ্।’

নিলিমা রাগি কন্ঠে আস্তে করে অবনিকে বললো’ এই বাড়িতে আমি বউ হয়ে এসেছি তোর সর্ব’না’শ করতে। তুই আমার মাকে জেলে দিয়েছিলি। এর ফল তো তোকে পেতেই হবে।’

আবিদের মায়ের মাথা ফেটে যাচ্ছে রাগে। আবিদের দাদি নিলিমার হাত ধরে টেনে বললো’ বাড়ি থেকে বের হয়ে যা তুই।’

নিলিমা রাগি কন্ঠে বললো’ ছাড়ো আমাকে এই বাড়ি থেকে আমি যাবো না।’

অবনি দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে আবিদের মাকে বললো’ আম্মু ওদেরকে মেনে নাও। এখন তো কিছু করার নেই।

আবিদের মা বললো’ আবিদ যদি একবার আমাকে বলতো তাহলে আমি রাজি হয়ে যেতাম কিন্তু ও পালিয়ে বিয়ে করেছে।’

অবনি শান্ত চোখে তাকিয়ে বললো’ এখন তো কিছু করার নেই যা হবার হয়ে গেছে। তুমি নিলিমাকে মেনে নাও।’

নিলিমা আবিদের দিকে তাকিয়ে বললো’ আমার এতো নাটক দেখার টাইম নেই। আমি রুমে গেলাম।’ এই বলে নিলিমা রুমে চলে গেলো। আবিদের মা অবনিকে বললো’ তোকে বলেছিলাম দুধ কলা দিয়ে কাল’সা’প বাড়িতে রাখিস না। ও কি বলে গেলো শুনেছিস তো?

আবিদ বললো’ আম্মু?

আবিদের মা চোখ মুখ শক্ত করে রুমে চলে গেলো। ধ্রুব অবনির কাছে এসে ওর হাত টান দিয়ে রুমে নিয়ে এসে বললো’ কি করছিস কি তুই? নিলিমার হয়ে কেনো কথা বলছিস?

অবনি বললো’ দেখেন বিয়ে তো যেভাবেই হোক হয়েছে এখন না মেনে নিলে সমস্যা হতে পারে যার জন্য..

অবনি আর কিছু বলতে না দিয়ে ধ্রুব রাগান্বিত কন্ঠে বললো’ তুই জানিস রাতে নিলিমার মা পালিয়েছে জেল থেকে? আর এই সব নিলিমাই করেছে।’

অবনি চিন্তিত কন্ঠে বললো,,

চলবে…
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। কাল গল্প দিতে পারিনি কারন বাসাই একটা অনুষ্ঠান ছিলো সেই জন্য। কেমন হয়েছে অবশ্যই বলবেন। হ‍্যাপি রিডিং।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here