#অতঃপর_প্রেমের_আগমন
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_০৪
আদ্রিশ ফোনে কথা শেষ করে রুমে ঢুকে দেখলো আয়ানা নাক মুখ কুঁচকে বসে আছে আর বিড়বিড় করে কিছু একটা বলছে। আদ্রিশ গেস করলো হয়তো তাকে নিয়েই কিছু বলছে। কিছুক্ষন পর দরজায় টোকা পড়তেই আদ্রিশ গিয়ে দরজা টা খুলে দিলো। আয়ানা দেখলো কালকে গাড়িতে তার পাশে বসা মেয়েটি ভেতরে ঢুকছে। তার হাতে অনেকগুলো প্যাকেট দেখা যাচ্ছে। আদ্রিশ মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— শোন আমার কিছু কাজ আছে। আমি ছাদে যাচ্ছি। কেউ ডাকলে আমাকে একটু জানিয়ে দিস। আর আমি যাওয়ার পর এই বাচ্চা কে সম্পূর্ণ রূপে তৈরি করে তারপর যাবি। নাহলে আবার অন্য কোনো ঝামেলা বাধিয়ে বসে থাকবে।
কথা শেষ করে আয়ানার দিকে বাঁকা চোখে তাকালো আদ্রিশ। আয়ানা গাল হালকা ফুলিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ানার রাগ হচ্ছে। তাকে বাচ্চা কেনো বলবে? সে তো এতটাও বাচ্চা না।
আদ্রিশ আয়ানা কে বাচ্চা বলায় হুহা করে হেসে দিলো মেয়ে টা। অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বললো,
— তুমি চিন্তা করো না ভাইয়ু। আমি ভাবি কে সুন্দর মতো তৈরী করে নিচে নিয়ে যাবো। আর শোনো ১০ টায় সবাই ব্রেকফাস্ট করবে। কালকে দেরিতে ঘুমানোর কারণে অনেকেই উঠতে পারে নি। তাই আজকে একটু লেটে ব্রেকফাস্ট করা হবে। তুমি ১০ টার সময় টেবিলে চলে এসো তাহলেই হবে। এবার বের হও। তোমার বউ কে রেডি করি।
আদ্রিশ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। একবার আয়ানার দিকে তাকিয়ে স্টাডি টেবিলের কাছে চলে গেলো। অনেকগুলো ফাইল টাইপ কিছু, ল্যাপটপ আর ফোন নিয়ে রুম থেকে চলে গেলো। আয়ানা আদ্রিশের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। মেয়ে টা গাল টেনে দেয়াতে ধ্যান ভা’ঙ’লো তার। মেয়ে টা আয়ানার গাল টেনে বললো,
— ভাবী, ভাইয়ু কিন্তু ঠিকই বলেছে। তুমি আসলেই একটা বাচ্চা। একদম কিউট বাচ্চা। আমার তোমাকে দেখে অনেক আদর আদর পাচ্ছে। ওহহো তোমাকে তো আমার পরিচয় দেয়া হলো না। আমি আনিকা। আদ্রিশ আর আহিল ভাইয়ার ছোট বোন।
আয়ানা মনে মনে ভাবলো, ‘এই আদ্রিশ টা কে? আহিল ভাইয়া তো মীরা আপুর বর। তাহলে আদ্রিশ কি উনি? হয়তো।
মনে মনে বার কয়েক আদ্রিশের নাম আওড়ালো আয়ানা। এর মধ্যেই আনিকা বলতে লাগলো,
— আমি অনার্স প্রথম বর্ষে আছি। শীঘ্রই দ্বিতীয় বর্ষে চলে যাবো। আমি তো মনে হয় তোমার তুলনায় বড়। অবশ্য বয়সে বড়, সম্পর্কে তুমি আমার বড়। তুমি চাইলে আমাকে নাম ধরেও ডাকতে পারো। যেভাবেই ডাকো না কেনো, আমাকে নিজের বান্ধুবী মনে করবে কেমন! আজ থেকে তুমি, আমি ফ্রেন্ড ওকে?
আয়ানা, আনিকার বন্ধুত্বসুলভ ব্যবহারে খুব খুশি হলো। আনন্দে চোখ জ্ব’ল’জ্ব’ল করে উঠলো তার। হালকা হেসে বললো,
— ওকে কিন্তু তুমি তো আমাকে ভাবী ভাবী করছো। তাহলে কিভাবে হবে? তুমি আমাকে নাম ধরে ডাকবে।
আনিকা বললো,
— সম্পর্কে তুমি আমার বড় ভাবী হও। তাই তোমাকে ভাবী ডাকতেই হবে। নাহলে মা, বড় আম্মু রাগ করতে পারে। আচ্ছা এক কাজ করা যাক। তোমাকে সবার সামনে ভাবী ডাকবো। আর অন্যান্য সময় আয়ানা ওকে?
আয়ানা বললো,
— ওকে।
আনিকা, আয়ানা কে তাড়া দিয়ে বললো,
— এবার যাও তো দ্রুত শাওয়ার নিয়ে আসো। তোমাকে রেডি করে দেই। এই যে এই ব্যাগ নিয়ে যাও। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় সব জিনিস আছে। আর শাড়িটা বাইরে থাক। তুমি বাইরে আসলে আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।
আয়ানা সম্মতি জানিয়ে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
———
আনিকা আয়ানা কে নিচে নিয়ে এসেছে। ডাইনিং টেবিলের কাছাকাছি আসতেই আয়ানা দেখলো তিনজন মহিলা আর তার আপু মিলে টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখছে। তিনজনের মধ্যে কালকের সেই ভদ্র মহিলাও আছেন। তিনি আয়ানা কে দেখামাত্র এগিয়ে আসলেন। কাছাকাছি এসে গালে হাত রেখে বললেন,
— আম্মু ঘুম ভালো হয়েছে? কোনো সমস্যা হয় নি তো?
এতো আদুরে গলায় জিজ্ঞাসা করায় চোখ ভরে উঠলো আয়ানার। কতগুলো দিন পর কেউ এভাবে তার খোঁজ নিলো। তার মাও তো তাকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু সৎ বাবার কারণে তার ধারে ঘেঁষতে পারতো না।
আয়ানা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বুঝালো। কিন্তু আয়ানার চোখে পানি দেখে অস্থির হয় গেলো মহিলা টি। অস্থির কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে আম্মু? তোমার চোখে পানি কেনো? কেউ কিছু বলেছে তোমাকে? নাকি আদ্রিশ কিছু বলেছে বলো আমাকে।
আয়ানা দ্রুত মাথা নাড়ালো। চোখের পানি মুছে বললো,
— আসলে আন্টি আপনার ওই ভাবে জিজ্ঞেস করায় আম্মুর কথা মনে পড়ে গেলো। তাই চোখে পানি চলে এসেছে।
ভদ্র মহিলাটি আলতো হেসে আয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
— রিসেপশন শেষে তোমাদের বাড়িতে যাবে তো। মন খারাপ করার কি আছে। আর আম্মাজান আমিও কিন্তু তোমার আরেকটা আম্মু। তাই আদ্রিশ যেভাবে আম্মু বলে ডাকে সেভাবেই আম্মু আর তুমি করে বলবে। নাহলে কিন্তু আমি রাগ করবো হুম।
আয়ানা একের পর এক অবাক হচ্ছে। এই বাড়ির সবাই কি এতোটা ভালো? এতো জলদি তাকে এতোটা আপন করে নিচ্ছে। এর মধ্যে আরেক মহিলা এগিয়ে এসে বললো,
— এই যে,, এই যে আমিও কিন্তু আরেকটা মা তোমার। আমাকে ছোট মা বলবে ঠিক আছে তো?
এদের অমায়িক ব্যবহারে মুগ্ধ হলো আয়ানা। মুখ দিয়ে কোনো কথা আসলো না। শুধু মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। আড়চোখে একবার মীরার দিকে তাকালো। মীরার ঠোঁটেও হাসি লেগে আছে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো আয়ানা। তারমানে তার মীরা আপু রাগ করে নেই তার উপর।
— এই যে পিচ্চু শোনো আমি কিন্তু তোমার বড় ভাইয়া বুঝলে!
পিছন থেকে কারোর কথায় তার দিকে তাকালো আয়ানা। আহিল কে চিনতে তার অসুবিধা হলো না। আহিল পুনরায় বললো,
— আমাকে ভাইয়ু বলবে। এমনিতে আমার একটা পে’ত্নী বোন আছে। কিন্তু তুমি আমার ভালো বোন হবে। আর কোনো কিছুর দরকার হলে ভাইয়ু কে বলবে বুঝেছো?
আয়ানা আলতো হেসে মাথা নাড়ালো। আনিকা মুখ ফুলিয়ে রাগী চোখে তাকালো আহিলের দিকে। আহিলের হাতে জোরে একটা চি’ম’টি দিতেই লাফিয়ে উঠলো সে। বললো,
— আরে তুই তো আমার সোনা বোন, লক্ষী বোন। মা’রি’স না প্লিজ। সবার সামনে আমার ইজ্জত মে’রে দিলো এই মেয়ে।
আহিলের কথায় সবাই হেসে দিলো। সবাই এতো ভালো দেখে মনে মনে ভীষণ শান্তি অনুভব করলো আয়ানা।
———
ঠিক ১০ টা বাজার ৫ মিনিট আগে টেবিলে হাজির হলো আদ্রিশ। আহিল আর আহিলের বাবা বসেই ছিলো। আদ্রিশ বসতেই তার পেটে একটা খোঁ’চা দিলো আহিল। ফিসফিস করে বললো,
— কি ব্রো! বাসর রাত কেমন কা’ট’লো?
আদ্রিশ ক’ট’ম’ট চাহনি দিতেই ভদ্র ছেলের মতো সোজা হয়ে বসে গেলো আহিল। একে একে সবাই টেবিলে এসে বসছে। সবার শেষে রান্নাঘর থেকে একত্রে বের হলো আয়ানা আর আদ্রিশের আম্মু অনু। দুইজনের মধ্যে অনেক ভাব হয়েছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অনু আয়ানা কে কিছু একটা বলছে আর আয়ানা মিটমিট করে হাসছে। আয়ানার হাসিতে চোখ আ’ট’কে গেলো আদ্রিশের। হাসলে ফোলা গালজোড়া আরও কিছুটা ফুলে উঠছে। যার কারণে মা’রা’ত্ম’ক কিউট লাগছে তাকে। আদ্রিশের গম্ভীর চাহনি আয়ানার উপর বিচরণ করতে লাগলো। হালকা রঙের একটা শাড়ি পড়ানো হয়েছে আয়ানাকে। মুখে নেই কোনো প্রসাধনীর ছাপ। তারপরও কতোটা স্নিগ্ধ, পবিত্র লাগছে।
দ্রুত নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিলো আদ্রিশ। মনে মনে বলতে লাগলো, ‘কি হচ্ছে আমার সাথে? আমার চোখেজোড়া এতোটা বেহায়া কি করে হতে পারে। না নিজের চোখ কে সামলে রাখতে হবে। নাহলে এই চোখই আমার স’র্ব’না’শ ঘটিয়ে ছাড়বে বলে মনে হচ্ছে।’
চলবে?
(