#অতঃপর_প্রেমের_আগমন
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১৬
নিজের রুমে অনবরত পা’ই’চা’রী করছে আদ্রিশ। আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত একবারও আয়ানার দেখা পায় নি সে। আর এতেই তার হা*স’ফা*স অবস্থা। ল’জ্জা বা সং’কো’চ বোধের কারণে কাউকে জিজ্ঞাসাও করতে পারে নি আয়ানার কথা। তবে সে জানে, আয়ানা এই মুহূর্তে আনিকার রুমেই ঘা*প’টি মে*রে বসে আছে। আয়ানার এরূপ ব্যবহারে প্রচুর রা*গ হচ্ছে তার। ইচ্ছা করছে আশপাশের সব ভে*ঙে ফেলতে। আদ্রিশ রা*গে হাতের পাশের ফুলদানি টা উঠালো ভা*ঙা’র জন্য। কিন্তু পরক্ষনেই ফুলদানি টা জায়গায় রেখে নিজের চুল খা*ম’চে ধরে সোফায় বসে পড়লো সে। বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, ‘কার জন্য ভা*ঙ’চু*র করতে যাচ্ছিলাম আমি? উফঃ কি হচ্ছে আমার সাথে? ওকে না দেখতে পেয়ে কেনো এতো রা*গ হচ্ছে আমার? আর এই মেয়েটাও….! একটু রা*গ দেখিয়েছি বলে পা’লি’য়ে বেড়াচ্ছে আমার কাছ থেকে। ই’গ’নো’র করছে আমাকে। তাতে কি দিনশেষে তো এখানেই ফিরতে হবে। তখন দেখো কি হা*ল করি।’ কথা টা বলে বাঁকা হাসলো আদ্রিশ।
অন্যদিকে, আনিকার রুমের বেডে গোল হয়ে বসে আছে আয়ানা। এখন রাত আটটা বা*জে। বাড়িতে আসার পর আদ্রিশ আসার আগেই রুম থেকে কাপড় আর দুইটা বই নিয়ে আনিকার রুমে চলে এসেছে সে। আনিকা তখন ভার্সিটি তে ছিলো। আনিকার রুমে ফ্রেস হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। যাতে কেউ খেতে ডাকতে আসলেও আর না ডাকে। কিছুতেই আদ্রিশের সামনে যাওয়ার সা’হ’স পাচ্ছে না আয়ানা। সেই সময়ের কথা মনে পড়লে এখনো বুক ধু*ক’পু*ক করছে তার। আদ্রিশ যে রা*গী এটা সে নিজেই বলেছিলো আগে, কিন্তু আজ নিজের চোখে তার রা*গ দেখে প্রচুর ভ*য় পেয়েছে আয়ানা।
বিকালে ঘুম থেকে উঠার পর অনু এসে খাইয়ে দিয়ে গেছে তাকে। তারপর থেকে আনিকার সাথে পড়বে বলে বাহানা দিয়ে আনিকার সাথেই আছে সে। আনিকা বুঝতে পেরেছে নিশ্চয় কোনো গ*ন্ড’গো*ল আছে, কিন্তু কিছু জিজ্ঞাসা করে নি আয়ানা কে এই ব্যাপারে।
রাতের খাবারের ডাক পড়লেও নড়লো না আয়ানা। বাহানা দিলো বিকালে খাবার খাওয়ায় আর সন্ধ্যায় নাস্তা করায় পেট ভরা তার। এখন আর কিছু খেতে পারবে না। তাই কেউ আর জোর করলো না। আনিকা নিচে চলে গেলো খেতে।
আনিকা নিচে নেমে টেবিলে বসে পড়লো। টেবিলে সবাই উপস্থিত শুধু আয়ানা বাদে। আদ্রিশের চোখ একজন কে অনবরত খুঁজে যাচ্ছে। কিন্তু সেই ব্যক্তির দেখা নেই। আনিকা আদ্রিশের পাশে বসে তার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
— কি ভাইয়ু কাউকে খুঁজছো নাকি?
আনিকার কথায় অ*প্রস্তুত হলো আদ্রিশ। কোনোরকমে বললো,
— না,,, না কাকে খুঁজতে যাবো।
আনিকা আগের মতোই ফিসফিস করে বললো,
— থাক আর ঢং করতে হবে না। বউ কে খুঁজছো বললেই পারতে। তোমার বউ খাবে না। বিকালে খাবার খেয়েছে আর সন্ধ্যায় আমাদের জোর করায় নাস্তা খেয়েছিলো তাই এখন আর কিছু খাবে না। তবে প্যা*রা নিও না ঘুমানোর আগে ঠিক পাঠিয়ে দিবো।
আদ্রিশ আনিকার দিকে চোখ গ*র’ম করে তাকালো। আনিকা ভ*য় না পেয়ে উল্টা ভে*ট’কা’তে লাগলো। আদ্রিশের অপর পাশ থেকে আহিল ফিসফিস করে বললো,
— বউ ছাড়া ভাই এর অবস্থা পুরাই চিনি ছাড়া চায়ের মতো। একদম তে*তো, ফি*কা।
আহিলের কথা কানে যাওয়ায় এবার বেশ শব্দ করে হাসতে লাগলো আনিকা। আহিল ও সাথে তা*ল দিলো। সবাই ওদের দিকে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই হাসি থামালো তারা। খাওয়ায় মনোযোগ দিলো দুইজন। ওরা দুইজন থেমে যাওয়ায় হা*ফ ছেড়ে বাঁচলো আদ্রিশ। দুইটাই বি*চ্ছু।
——–
রুমের বাইরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আয়ানা। ভিতরে যাবে কি যাবে না, কি করবে বুঝতে পারছে না সে। ভ*য়ে বুক টা কাঁ*প’ছে। যদি আদ্রিশ আবার ব*কে? সে ভেবেছিলো আজ আনিকার রুমেই থেকে যাবে। কিন্তু আনিকা তাকে রুমে এসে বললো,
— কি ব্যাপার আয়ানা পাখি, ঘুমাবে না নাকি আজ? যাও রুমে। ঘুমিয়ে পড়ো। অনেক তো রাত হলো। যাও যাও।
তাকে ঠে*লে*ঠু*লে রুম থেকে বের করে দিলো আনিকা। আয়ানা কয়েকবার তার সাথে থাকার কথা বলতে চেয়েছিলো। কিন্তু এই কথা বললে আনিকা স’ন্দে’হ করতে পারে। তাই কিছু বলে নি। চুপচাপ চলে এসেছে। তবে এখন যে রুমে যেতে ভ*য় লাগছে! আয়ানা ভাবলো ড্রয়িং রুমে চলে যাবে। সবাই হয়তো ঘুমিয়ে গিয়েছে এতক্ষনে। যেই পা উ’ল্টো দিকে ফেরালো পিছন থেকে ডাক পড়লো আয়ানার।
— চুপচাপ রুমে এসো।
আয়ানা পিছন ফিরে দেখলো রুমের দরজায় আদ্রিশ দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিশের গ’ম্ভী’র চাহনি দেখে তাকে উপেক্ষা করার সা’হ’স পেলো না আয়ানা। ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করলো। আয়ানা ভিতরে ঢুকতেই ধু*ম করে দরজা লাগলো আদ্রিশ। যেনো সব রা*গ দরজার উপর ঝা*ড়’তে চায়। দরজা লাগানোর শব্দে ভ*য়ে দেয়ালের সাথে মিশে গেলো আয়ানা। আদ্রিশ আয়ানার দুই পাশের দেয়ালে হাত ঠে*কি’য়ে তার দিকে ঝুঁ*কে আসলো। আদ্রিশের এভাবে এতোটা কাছে আসায় চোখ খি*চে ব*ন্ধ করে দেয়ালের সাথে আরও সি*টি*য়ে গেলো আয়ানা। কানের উপর গ*র’ম নিঃশ্বাস আ*ছ’রে পড়ায় মৃদু ক*ম্প’ন ধরে গেলো তার শরীরে। আদ্রিশ আয়ানার কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদু স্বরে বললো,
— তোমার সা’হ’স তো কম না মেয়ে! আমাকে ই*গ’নো’র করো তুমি। আবার বাইরের ছেলের সাথে হাহা হিহি করো। আজ সারাদিন অনেক জ্বা*লি’য়ে’ছো। তার শা*স্তি তো পেতেই হবে।
শা*স্তি’র কথা শুনে ভ*য়া’র্ত দৃষ্টিতে আদ্রিশের পানে চাইলো আয়ানা। এই মুহূর্তে আদ্রিশ তার খুব নিকটে দাঁড়িয়ে আছে। দুজন এতোটা কাছাকাছি যে তাদের নাক ছুঁই ছুঁই করছে। আদ্রিশের কণ্ঠ শান্ত হলেও কথাগুলো ভ*য়া’ন’ক লাগছে আয়ানার। হুট করে আদ্রিশ দূরে সরে গেলো। আয়ানা হা*ফ ছেড়ে বাঁ’চ’লো আদ্রিশ দূরে যাওয়ায়। আদ্রিশ সোফায় গিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসলো। তার ঠোঁটে লেগে আছে বাঁকা হাসি, যা দেখে ভ*য় পাচ্ছে আয়ানা। সে এখনো আগের মতোই দেয়ালের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে আছে।
আদ্রিশ এবার গ’ম্ভী’র, রা*গী কণ্ঠে বললো,
— কান ধ’রো।
আদ্রিশের হঠাৎ এমন আ’জ’ব কথায় মুখ হা হয়ে গেলো আয়ানার। সে হা*ব’লা’র মতো আদ্রিশের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার বুঝে আসছে না, সে ঠিক শুনেছে না ভুল। আয়ানা কে হা*ব’লা’র মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে ধ*ম’ক দিলো আদ্রিশ। ধ*ম’কে বললো,
— কি বললাম শুনো নি? কান ধ’রো। ফাস্ট। লেট করলে কিন্তু পা*নি’শ’মে’ন্ট আরও বাড়বে। তখন কিন্তু এক পায়ে কান ধ’রে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
আদ্রিশের ধ*ম’কে লা’ফি’য়ে উঠলো আয়ানা। পুরো কথা শুনে মুখ দিয়ে অটোমেটিক্যালি বের হয়ে গেলো,
— কান কেনো ধ’র’বো? কি করেছি আমি?
আদ্রিশ বললো,
— আজ কোনো পড়াশোনা করো নি। তার শা*স্তি পাবে এখন।
আয়ানা কি বলবে ভেবে পেলো না। সে আসলেই কিছু পড়ে নি। বই সাথে নিয়ে গিয়েছিলো ঠিক, কিন্তু পড়ায় মন বসাতে পারে নি। সে কাঁ*দো কাঁ*দো চেহারায় আদ্রিশের দিকে তাকালো। আদ্রিশ কে চোখ রা*ঙি’য়ে তাকাতে দেখে ধীরে ধীরে নিজের কান ধরলো আয়ানা। ঠোঁট উল্টে বারবার নাক টা*ন’ছে সে। যেকোনো সময় কেঁ*দে ফেলবে। নিজের মায়ের বাড়িতে ব*কা শোনা, মা*র খাওয়াতে সে অভ্যস্ত ছিলো। কিন্তু এই বাড়িতে এই প্রথম এমন হচ্ছে, স্বামী নামক মানুষটার সামনে কান ধ’রে দাঁড়িয়ে থাকায় ল*জ্জা’য় মাথা কাঁ*টা যাচ্ছে আয়ানার।
আয়ানার মুখের অবস্থা দেখে ভীষণ হাসি পাচ্ছে আদ্রিশের। সে আগেই ঠিক করে রেখেছিলো আয়ানা আসলে তাকে একটা শা*স্তি দিবে। এতক্ষন রে*গেও ছিলো, কিন্তু আয়ানা কে দেখা মাত্র তার রা*গ কিভাবে যেনো উ’ড়ে গেছে। তারপরও সে রা*গ করার ভা*ন ধরেছে একটু মজা নেয়ার জন্য।
আয়ানার হঠাৎ কা*ন্না’য় ভ*ড়’কে গেলো আদ্রিশ। সে তো দুই মিনিট পরই কান ছে’ড়ে দিতে বলতো। কিন্তু আয়ানা যে এতো অল্পতেই এভাবে কেঁ*দে ফেলবে বুঝতে পারে নি সে।
অন্যদিকে, কান ছে’ড়ে দুই হাতে মুখ ঢেকে ডু*ক’রে কাঁ*দ’ছে আয়ানা। পড়া না পারার জন্য এর আগে কখনোই শা*স্তি পায় নি সে। সব কিছুর পেছনে তো আদ্রিশই আছে আর শা*স্তি তাকে পেতে হচ্ছে। একে তো আদ্রিশ তাকে কান ধ’রি’য়ে’ছে, তারপর তাকে দেখে হাসছিলো। এটা দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারে নি আয়ানা।
আয়ানা কে কাঁ*দ’তে দেখে আদ্রিশের মন টা অ*স্থি’র হয়ে উঠলো। সে দ্রুত পায়ে আয়ানার কাছে এগিয়ে আসলো। কিন্তু কি বলবে বা কিভাবে শান্তনা দিবে ভেবে পেলো না। তারপরও গলা ঝে*ড়ে বলতে লাগলো,
— I,, I’m sorry… প্লিজ কেঁ*দো না। আমি তো একটু মজা করছিলাম তোমার সাথে।
আদ্রিশের কথায় আয়ানার কা*ন্না’র শব্দ আরও বেড়ে গেলো। আদ্রিশ কি করবে ভেবে পেলো না। সে আয়ানার হাত সরানোর চেষ্টা করতে লাগলো। একটুখানি জো*র প্রয়োগ করার পর আয়ানার হাত সরাতে স’ক্ষ’ম হলো সে। সারা মুখে চোখের পানি লে*প্টে আছে। নাক মুখ লাল হয়ে আছে। আয়ানা একবারও আদ্রিশের দিকে তাকাচ্ছে না। মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলেই যাচ্ছে। আদ্রিশ আয়ানার দুই গালে হাত রেখে চোখের পানি মু*ছি’য়ে দিলো। আয়ানার কা*ন্না’র শব্দ কমে এসেছে। কিন্তু এখনো ফুঁ*পি’য়ে যাচ্ছে সে।
আয়ানা কে এভাবে কাঁ*দ’তে দেখে ক*ষ্ট হচ্ছে আদ্রিশের। নিজের উপর রা*গ হচ্ছে তার। কেন যে এমনটা করতে গেলো? আদ্রিশের হুট করে ইচ্ছা হলো আয়ানা কে নিজের মাঝে আ’ব’দ্ধ করে নিতে। কেনো যেনো সে নিজের ইচ্ছাটাকে দ’মা’তে পারলো না। অজান্তেই জড়িয়ে নিজের বুঁকের মাঝে আ’ব’দ্ধ করলো আয়ানা কে। আয়ানাও ভদ্র মেয়ের মতো লে*প্টে রইলো আদ্রিশের বুকে। তার আপাতত কোনো হুঁশ নেই। সে নিজের কা*ন্না’তে ব্যস্ত। আদ্রিশের শার্ট মু*ঠ করে ধরে বুকে মুখ গু*জে কাঁ*দ’তে লাগলো সে। আদ্রিশ মাথায় আলতো করে হাত বু’লি’য়ে দিতে দিতে বললো,
— হয়েছে তো আর কতো কাঁ*দ’বে? আমি স’রি তো। আমি শুধু একটু মজা করতে চেয়েছিলাম। তুমিই কিন্তু আমাকে রা*গি’য়ে দিয়েছো। সারাদিন রুমে আসো নি কেনো? আর আমি তো আগেই বলেছিলাম পড়া না পারলে পা*নি’শ’মে’ন্ট দিবো।
আয়ানা আদ্রিশের বুঁকের কাছে নাক ঘ*ষে কা*ন্না জ*ড়া’নো কণ্ঠে বললো,
— আপনার ভ*য়েই তো রুমে আসি নি। আপনি যদি আবার রা*গ করেন? আর পড়াও তো আপনার কারণেই হয় নি।
আদ্রিশ হালকা হেসে বললো,
— ও, এখন সব দো*ষ আমার তাই না? আচ্ছা মেনে নিলাম আমার দো*ষ সব। কিন্তু কে যেনো নাকের পানি, চোখের পানি দিয়ে আমার পুরো শার্ট ভি’জি’য়ে ফেলেছে! ইশশ।
আদ্রিশের কথায় স’ম্বি’ৎ ফিরলো আয়ানার। ছি*ট’কে দূরে সরে গেলো সে। তাকিয়ে দেখলো, সত্যিই আদ্রিশের শার্ট এর একটা অংশ ভি’জে গেছে। আদ্রিশের মুখের দিকে তাকাতেই দেখলো মিটমিট করে হাসছে সে। ভীষণ ল’জ্জা পেলো আয়ানা। অজান্তেই কতোটা কাছে চলে গিয়েছিলো সে আদ্রিশের! আর এক মুহুর্তও সেখানে দাঁড়াতে পারলো না আয়ানা। এক ছু’টে ওয়াশরুমে ঢু’কে দরজা ব’ন্ধ করে দিলো। অপর দিকে আয়ানার কা*ণ্ডে বেশ শব্দ করেই হেসে ফেললো আদ্রিশ। বুঝতে পারলো, বে’চা’রী প্রচুর ল’জ্জা পেয়েছে। তবে তার মজাই লেগেছে আয়ানা কে ল’জ্জা দিতে।
চলবে?
(