#অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২
উনার ভয়ে আমি সবকিছু গোছাতে গিয়ে আরো এলোমেলো করে ফেলি।এবার আমার সত্যিই কান্না পাচ্ছে।এ জীবনে আর রান্নাঘরে পা রাখব না,আল্লাহ এবারের মতো বাঁচিয়ে দাও।খিদের চোটে মরে গেলেও রান্না ঘরে আসব না।এসব ভাবতে ভাবতেই দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম।এবার আমার কি হবে!কাচুমাচু হয়ে রান্নাঘরের এক কোনায় দাঁড়িয়ে রইলাম।উনি দরজা লাগিয়ে ভেতরে আসছেন মনে হয়,আমি এবার চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
উনি হয়তো এসে পরেছেন,কিছুক্ষন বাদেই চিল্লিয়ে উঠলেন উনি।এবার আমি আরো কোনার দিকে চেঁপে দাঁড়ালাম।চোখ বন্ধ করেই দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুসময় পর পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলাম উনি আমার থকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছেন।হুট করে আমার কাছে এসে আমার ডান হাত চেপে ধরে রাগী কন্ঠে বলেন,
“কি করেছ তুমি এটা,রান্নাঘরে কেনো এসেছো”
হাত চেপে ধরাতে ব্যাথা লাগছিল,ব্যাথা সয্য করতে না পেরে বললাম,
“ছাড়ুন ব্যাথা লাগছে”
উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে হনহন করে চলে গেলেন।আমি ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে তাড়াতাড়ি লাইট অফ করে ঘুমানোর ভান করে শুয়ে থাকলাম।
কিছুসময় পর এসে উনি দরজা ধাক্কা দিতে লাগলেন।আমি তাও না উঠে ঘুমানোর ভান ধরে শুয়ে রইলাম।আয়াজ এবার রেগে গিয়ে বললেন,,
“তুৃমি কি দরজা খুলবে,নাকি আমি দরজা ভেঙে ফেলবো”
এবার আমি সত্যিই ভয় পেয়ে গেলাম,তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে চোখমুখ খিচে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।উনি কটমট চোখে তাকিয়ে বিরক্তকর কন্ঠে বললেন,,
“তুমি দরজা খুলছিলে না কেনো,আমি কি তোমায় খেয়ে ফেলবো নাকি”
আমি এবার ভয়ে ভয়ে উনার দিকে তাকালাম উনি আমার কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছেন।বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।আমি উনাকে ভয়ে ভয়ে বললাম,,
“আসলে তখনকার ঘটনার জন্য আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম।সরি,প্লিজ আমাকে কিছু বইলেন না”
উনি আমার বিরক্তি নিয়ে বললেন,”যা পারো না তা করতে যাও কেনো,আর চলো খেতে হবে।”
এই বলেই আয়াজ চলে গেলেন আমি পিছুপিছু ডাইনিং টেবিলের সামনে গেলাম।রান্নাঘরে চোখ যেতেই দেখলাম সব ঠিক,আগের মতোই গোছানো।উনি হয়তো গুছিয়েছেন।উনি খাবার বেড়ে টেবিলে রাখছিলেন,আমাকে দেখে বলেন,
“বসে পড়ো”
আমি তাড়াতাড়ি বসে পড়লাম।উনি আমায় খাবার বেড়ে দিয়ে খেতে বললেন।আমিও চুপচাপ খেয়ে নিলাম।উনি আমায় ঘুমাতে বলে চলে গেলন নিজের রুমে।আমিও চুপচাপ নিজের রুমে চলে আসলাম,আমি দরজা বন্ধ করে বেলকনিতে চলে এসেছি,বেলকনিটা খুব সুন্দর। কিছু ছোট ছোট ঝুলন্ত ফুলের টব দিয়ে সাজানো ছোট্ট বেলকনিটা।এখন থেকে এটা আমার বেলকনি।
রাতের আকাশ দেখতে আমার খুব ভালো লাগে গ্রামে থাকতে প্রায় ছাদে বসে রাতের আকাশের চাঁদ দেখতাম।বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে।আম্মু আব্বু আহিন কে খুব মিস করছি।ফারিনকে ও খুব মিস করছি।দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললাম,,
“আমার সাথে এমন না হলেও পারত”
কিছুক্ষন বারান্দায় থেকে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।
|
|
রোদের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো।সকাল হয়ে গেছে।কাল থেকে একটা শাড়ি পরে আছি।অসয্য লাগছে।ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলাম।রুম থেকে বের হয়ে ড্রইংরুমের সোফায় বসে পড়লাম।কি করবো ভাবতে থাকলাম।রান্না ঘরেও যেতে পারব না।কিছুক্ষণ পর রান্না ঘর থেকে শব্দ আসতে লাগল।বুঝতে পারলাম আয়াজ রান্না করছেন।আমি চুপিচুপি রান্না ঘরে উকি দিলাম।উনি কি যেনে রান্না করছেন।উনি এদিক ওদিকে তাকাতেই,আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে আবার সোফায় বসে পড়লাম।
কিছুক্ষন বাদে উনি রান্না ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন।একবার আমার দিকে তাকিয়ে।নিজের রুমে চলে যান।আমি কি করবো ভেবে পেলাম না।ধূর এমন বোরিং লাইফ ভাল্লাগে কারো।বাড়িতে থাকলেই ভালো হতো।এইসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে আয়াজ চলে এলেন।আগের ড্রেসে নেই এখন ফরমাল লুকে রেডি হয়ে এসেছেন হয়তো কোথাও যাবেন।ওহ আমি তো ভুলেই গেছিলাম উনি একটা কোম্পানির এমডি।উনি তো মনে হয় এখন অফিসে যাবেন।
এই সব হাবিজাবি ভাবার মাঝেই আয়াজ ডাইনিং রুম থেকে ডাক দিলেন।আমি উনার ডাক শুনে ডাইনিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিলেন।খাবার সাজানো শেষ হতেই উনি আমাকে টেবিলে বসতে বললেন।আমিও ভদ্র মেয়েদের মতো বসে পড়লাম।উনি খাবার বেড়ে দিয়ে বললেন,
“তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও তোমার ড্রেস কিনতে যাবো।”
আমি উনার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বললাম,”আপনি যেয়ে কিনে আনলে ভালো হতো,আমার আসলে মার্কেটে যেতে ভালো লাগে না।”
উনি খাওয়া ছেড়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,
“তুমি কি পাগল নাকি,তুমি ছাড়া তোমার ড্রেস কিভাবে কিনবো আমি।”
আমি আসলেই একটা বলদ,নাহলে কেউ এমন আজীব কথা বার্তা বলে।আম্মু ঠিকই বলতো আমি একটা গাধা।উনি তাড়াতাড়ি করে খেয়ে আবার নিজের রুমে চলে গেলেন,আমিও তাড়াতাড়ি করে খেয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।চুল গুলো আঁচড়ানো হয়নি কাল সকাল থেকে,তাড়াতাড়ি চুলগুলো আঁচড়িয়ে নিলাম, আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিলাম।না সব ঠিক আছে।এর ভিতরেই উনি ডাক দিলেন।আমি তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
উনি আমাকে দেখে বলেন লিফটের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে।আমিও তাই করলাম।উনি দরজা লক করে এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন।উনি অনেক লম্বা আমি উনার কাধ পর্যন্ত।ইশ,এতো লম্বা কেনো উনি।লিফট আসতেই আমি আর উনি লিফটে ঢুকে পড়লাম।লিফটের ভিতরে অনেকগুলো ছেলে ছিল,তাই অস্বস্তি হচ্ছিল আমার।হঠাৎ হাত ধরে উনার একপাশে নিয়ে গেলেন আমায়।একহাতে জড়িয়ে ধরলেন।
হকচকিয়ে গেছিলাম উনার হঠাৎ এইভাবে ধরায় কিন্তু এখন ভালো লাগছে আমার অনেক।লিফট নিচে এসে থামতেই উনি আমার হাত ধরে বের হলেন।বিল্ডিং এর বাহিরে এসে আমাকে বললেন,
“তুমি দাঁড়াও এখানে আমি গাড়ি বের করে আসছি।”
আমি উনাকে বললাম,”আচ্ছা ঠিক আছে।”
উনি চলে গেলেন গাড়ি আনতে।কিছুক্ষণের ভিতরেই চলে আসলেন উনি গাড়ির গ্লাস নামিয়ে আমাকে গাড়িতে উঠতে বলেন।আমি ও গাড়িতে উঠে বসে পড়ি।
“সিট বেল্ট লাগাও”
করুন চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,”আমি তো পারি না।”
উনি আমার দিকে একটু ঝুঁকে সিট বেল্টটা লাগিয়ে দিলেন।উনি সরে যেতেই আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।কারণ উনি যখন আমার দিকে ঝুঁকে ছিলেন তখন আমার হার্টবিট লাফালাফি করছিল।উনি সরে যেতেই আমি বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস ছাড়তে লাগলাম।উনি আমার অগোচরে মুচকি হাসি দিলেন।
হঠাৎ করে গাউি থামে যায়।আমি এতোসময় জানলা দিয়ে ঢাকার শহর দেখছিলাম।গাড়ি থেমে যেতেই আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
“গাড়ি থামালেন কেন”
উনি সিট বেল্ট খুলতে খুলতে বলেন,
“আমরা চলে এসেছি।”
“আচ্ছা এই মলের নাম কি”
“যমুনা ফিউচার পার্ক”
আমি ভ্রু-কুচকে আয়াজকে বললাম,
“আপনি না বললেন ড্রেস কিনতে আসছেন,তাহলে পার্কে আসলেন কেনো।”
“আরে বলদ এইটার ভিতরে পার্ক আর মল দুইটাই আছে।তুমি কি বাংলাদেশের মানু্ষ বলো তো,এখন তো আমার সন্দেহ হচ্ছে।তুমি যমুনা ফিউচার পার্কের নাম আগে শুনো নাই”
আমি এবার কি বলবো ভেবে পেলাম না,বোকা বোকা হাসি দিয়ে বললাম,
“আসলে শুনেছি কিন্তু ভুলে গেছিলাম হে হে”
উনাকে জ্বালানোর জন্যই এমন করছিলাম কিন্তুু নিজেই ধরা খেয়ে গেলাম।তারপর উনি গাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন।আমি ও বের হলাম।উনি আমায় নিয়ে মলের ভিতরে ডুকলেন।আমি হা করে আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম।অসম্ভব সুন্দর জায়গা।শুনেছি ঠিকি সবার কাছে কিন্তু এতো সুন্দর কল্পনা করিনি।
আয়াজ আমায় বিভিন্ন ড্রেস দেখাচ্ছেন।ড্রেসগুলো অনেক সুন্দর মনে হচ্ছে আমি পুরো মলটাই উঠিয়ে নিয়ে যাই।উনি আমায় এতো এতো ড্রেস কিনে দিলেন।আমি হা করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“এতো ড্রেস কে পড়বে”
উনি বিল দিচ্ছিলেন।আমার কথাশুনে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“কেনো তুমি,তুমি ছাড়া কি আমার বাসায় আর কোনো মেয়ে আছে”
আমি মাথা চুলকে হেসে বললাম,”ও’হ সরি,বুঝতে পারিনি কিন্তু এতো জামা দিয়ে কি করবো আমি!”
উনি বিরক্তিকর কন্ঠে বললেন,”ফেলে দিবা Stupid”
আমি আর কথা বাড়ালাম না।মল থেকে বের হতে হতে দুপুর হয়ে গেছে।উনি আমায় নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টের ভিতরে ডুকলেন,তারপর খাবার অর্ডার করে সেগুলোকে প্যাক করে দিতে বললেন।আমি চুপ করে উনার কাজগুলো দেখতে ছিলাম।কিছুক্ষণ পর খাবার চলে আসে।উনি বিল পে করে আমার হাত ধরে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গাড়ির সামনে আসলেন।
গাড়িতে বসতেই উনি গাড়ি চালাতে শুরু করেন।বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে যে কখন ঘুমিয়ে গেছি টেরই পায়নি।
যখন চোখ খুলাম তখন দেখলাম আমি আমার রুমের বিছানায় শুয়ে আছি।আমি না গাড়িতে ছিলাম তাহলে এখানে আসলাম কিভাবে,আয়াজ এনেছেন!হয়তো উনিই এনেছেন।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম শপিং ব্যাগ গুলো রুমের ছোট সোফাটাতে রাখা।আমি তাড়াতাড়ি ওখান থেকে একটা ড্রেস নিয়ে গোসল করতে চলে গেলাম।
গোসল করে এসে ওড়না গায়ে দিয়ে রুম থেকে বের হলাম।আয়াজ আমাকে দেখে বলল,
“খেতে বসো”
আমি হাতদিয়ে নাড়াচাড়া দিচ্ছি আর ভাবছি আমাকে গাড়ি থেকে কে আনলো জিজ্ঞেস করবো না থাক যদি ধমক দেন।উনি আমার খাবার নাড়া দেখে বলল,
“খাচ্ছ না কেন?আর তুমি কি কিছু বলবে”
আমি উনার কথায় মানে মানে করে বললাম,
“আসলে গাড়ি থেকে আমায় কে আনলো তাই ভাবছিলাম হে হে”
উনি খেতে খেতে বললেন,”গাড়িতে তে কি আমি তুমি ছাড়া আর কেউ ছিল”
আমি না বোধক মাথা নাড়ালাম।উনি সেটা দেখে বলল,
“তাহলে তোমার বোঝা উচিত যে আমিই এনেছি।”
আমি আর কথা বাড়ালাম না।তারপর আমরা দু’জন খেয়ে নিলাম।খাওয়ার পর উনি সব গুছিয়ে আমায় ডাক দিলেন,
“ইশা একটু শুনে যাও তো”
উনার এই ডাকে কি ছিলো জানি না কিন্তু আমার হার্টবিট জোড়ে জোড়ে লাফাতে লাগলো।আমি নিজেকে স্বাভাবিক করে রুম থেকে বের হলাম।
চলবে…….?
(