অষ্টপ্রহরে পেয়েছি তোমায় পর্ব -০৩

#অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৩

আয়াজের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি,ঢুকবো কি ঢুকবো না বুঝতে পারছি না।ধূর কি করব।

“বাইরে দাঁড়িয়ে হাবিজাবি না ভেবে ভেতরে আসো।”

উনার কথায় চমকে উঠলাম উনি তো ভিতরে তাহলে আমাকে দেখলেন কিভাবে।আমি আর কিছু না ভেবে ভিতরে ঢুকলাম।উনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছেন হয়তো কোথাও যাবেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“আপনি আমায় ডেকেছেন কেনো।”

উনি আমাকে বসতে বললেন,আমি বেডের উপর বসে রইলাম।উনি চুল ঠিক করে কার্বাডের কাছে গেলেন কার্বাডের ভিতর থেকে কিছু বের করলেন।তারপর সেটা হাতে নিয়ে আমার কাছে আসলেন আমার থেকে কিছুটা দূরে চেয়ার টেনে বসলেন।আমার দিকে শপিং ব্যাগটা দিয়ে বললেন,
“এটা তোমার জন্য”

আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,”কি আছে এটাতে।”

উনি ব্যাগটা আমার হাত থেকে নিয়ে ব্যাগটা খুলে একটা ফোন বের করলেন।ফোনটা আমার হাতে দিয়ে বললেন,

“এটা তোমার”

আমি ফোনটা হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখে বললাম,
“আমি ফোন দিয়ে কি করবো,আমার তো ফোনের প্রয়োজন নেই”

“এখন থেকে প্রয়োজোন আছে,কারণ আমি অফিসে গেলে বাসায় তুমি একা থাকবা আমার টেনশন হবে”

আচ্ছা আমি একা বাসায় থাকলে উনার টেনশন হবে কেনো।আমি কিছু বলব তার আগেই উনি বললেন,

“সিম ও লাগানো আছে আর আমার নাম্বার ও সেভ করা আছে,সমস্যা হলেই আমাকে ফোন দিবা ঠিক আছে”

আমি এই ব্যাপারে আর কিছু বললাম না।এর ভিতরে উনার ফোনে কল আসল উনি চেয়ার ছেড়ে বারান্দায় চলে গেলেন কথা বলতে।আমি ফোনটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে লাগলাম।হঠাৎ বারান্দার থেকে চিল্লানোর আওয়াজ আসতে লাগলো।আমি ভয় পেয়ে,বারান্দার দরজার কাছে গিয়ে উকি দিলাম।উনি প্রচন্ড রেগে কথা বলছেন,আমি ভয় পেয়ে গেলাম।উনি লাস্ট একটা কথা বললেন যেটা আমার কানে এলো,
“আমি ওকে ভালোবাসি,তুমি আমাকে আর ফোন দিবা না।”

উনি ফোন কাটতেই আমি উনার রুম থেকে বের হয়ে আসলাম।উনি কাউকে ভালোবাসেন!এই কথাটা শোনার পর থেকে খারাপ লাগছে আমার।কিন্তু কেনো খারাপ লাগছে আমার।আমি উনার রুম থেকে বের হয়ে,সোফায় বসে পড়লাম।কিছুক্ষণ পড় উনি বের হলেন উনার রুম থেকে উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে দরজা খুললেন বাহিরে যাওয়ার জন্য আমি পিছন থেকে ডাক দিয়ে বললাম,
“শুনুন”
উনি আমার ডাকে পিছনে ফিরে বললেন,
“হ্যাঁ বলো”
আমি সোফা থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁডালাম।আমতা আমতা করে বললাম,
“আসলে হয়েছে কি আমার না এখানে একা একা ভালো লাগছে না,আপনি কি আমাকে একটু ঘুরতে নিয়ে যাবেন”
উনি জুতা পড়তে পড়তে বললেন,”এখন না আমি এখন কাজে যাচ্ছি।আমি তোমাকে রাতে নিয়ে যাবো।রাতে ঢাকার শহর দেখতে অনেক ভালো লাগে”

আমি খুশি হয়ে বললাম,”আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু আপনি আসার সময় আমার জন্য ফুসকা নিয়ে আসবেন।আর আমি একা বসায় কি করবো এতো সময়,আপনি কখন আসবেন।”

উনি আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“আমার আসতে একটু লেট হতে পারে।তুমি কিন্তু রান্না ঘরে একদম যাবে না,খিদে পেলে খাবার টেবিলে আছে ওখান থেকে নিয়ে খাবে বুঝেছো।”

আমি মাথা নাড়ালাম।উনি আবার আমায় বললেন,
“আর কেউ আসলে দরজা খুলবে না,আর ফোনে ওয়াইফাই কানেক্ট করা আছে যা ইচ্ছা তাই দেখতে পারো।”

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,”আচ্ছা ঠিক আছে”

উনি বের হওয়ার আগে আমি বলে উঠলাম,”আপনি সাবধানে যাবেন”

উনি আমার কথায় মুচকি হেসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।উনি চলে যেতেই আমি উনার রুমে চলে এলাম,উনার রুমটা অনেক গোছানো উনি হয়তো সবকিছু গুছিয়ে রাখতে পছন্দ করেন।উনার বেলকনিতে গেলাম,উনার বেলকনিটা অনেক সুন্দর আর আমারটা থেকে অনেক বড়ো।একটা দোলনা ও আছে।আমি দোলনায় গিয়ে বসে পড়লাম।

ফোনটা হাতে নিয়ে ইউটিউবে ঢুকলাম।আগে থেকেই ওয়াইফাই অন করা ছিল।ইউটিউবে ঢুকে কয়েকটা ভিডিও দেখলাম।এখন আর ভাল্লাগছেনা ফোন দেখতে তাই ফোনটা দোলনার উপর রেখে দিলাম।রেলিং এর উপর হাত দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আকাশ দেখতে লাগলাম,সন্ধ্যা হতে চললো।আমি সন্ধ্যার আকাশ দেখতে লাগলাম।আযান দিয়ে দিবে হয়তো।আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা গান মনে আসলো,গুনগুন করে গাইতে লাগলাম,

তুমি আকাশের বুকে
বিশালতার উপমা,
তুমি আমার চোখেতে
সরলতার প্রতিমা।

আমি তোমাকে গড়ি
ভেঙ্গেচুড়ে শতবার
রয়েছো তুমি বহুদূরে,
আমাকে রেখে ছলনায়।

গান গাইতে গাইতে আমি দোলনায় বসে পড়লাম।ঘুম আসছে খুব।জানিনা কখন ঘুমিয়ে পড়েছি।আয়াজের ডাকে ঘুম ভাঙলো।আমি পিটপিট করে উনার দিকে তাকালাম।উনি আমার দিকে ঝুকে আমাকে ডাকছিলেন আমি চোখ খুলতেই উনি সরে গেলেন।আমি তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম।
ভালো করে বসে বললাম,”আপনি কখন আসলেন”

উনি উঠে দাঁড়িয়ে বললো,”আমি এসেছি মাত্র।কিন্তু তোমার জন্য তো আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি তুমি এখানে কেনো ঘুমিয়েছ তোমার রুম ছিল না নাকি।”

আমি বোকা হেসে বললাম,”আসলে সন্ধ্যার আকাশ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গিয়েছি।আচ্ছা এখন কয়টা বাজে।”

উনি ঘড়ি দেখে বললেন ৯টা বাজে।আমি অবাক হয়ে গেলাম আমি এতোসময় ঘুমিয়েছি।উনি আমায় ফ্রেশ হতে বলে নিজেও ফ্রেস হতে চলে গেলেন।আমিও নিজের রুমে চলে আসলাম।ফ্রেশ হয়ে বের হতেই আয়াজের ডাক কানে আসলো।আমি তাড়াতাড়ি করে উনার কাছে চলে আসলাম।উনি আমায় দেখে বলেন,

“তুমি কি পিজ্জা খাও”

“হ্যা খাইতো”

“আচ্ছা তাহলে খেয়ে নাও আমরা ১১ টার দিকে বের হবো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

বেরোনোর কথা শুনে আমার মনটা খুশিতে লাফ দিয়ে উঠলো।কিন্তু উনি পিজ্জা কই পেলেন।আরে ইশা তুই তো আসলেই বলদ,উনি আসার সময় নিয়ে এসেছে হয়তো।খাওয়া শেষ হতে হতে ১০ঃ৩০ বেজে গেছে।উনি আমায় রেডি হতে বলে নিজের রুমে চলে গেলেন।আমি রুমে গিয়ে উনার কিনে দেওয়া ড্রেস গুলোর ভিতরে কোনটা পড়ব বুঝতে পারছিনা,ধূর ভাল্লাগে না কিছু।বেডের উপর সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছি।এর ভিতরেই উনি আমার রুমি ডুকলেন,এমন অবস্থা দেখে বললেন,

“কি করেছ তুমি এইটা”

আমি করুন চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,”আসলে বুঝতে পারছি না কোনটা পড়ব”

উনি সব ড্রেসগুলো একবার দেখে ওখান থেকে একটা সাদা রঙের ড্রেস আমার হাতে ড্রেসটা পড়তে বলে চলে গেলেন।আমিও রেডি হতে চলে গেলাম।রেডি হয়ে আমি রুম থেকে বের হলাম।বের হয়ে দেখি উনি সোফায় বসে বসে ফোন দেখছেন।আমায় দেখে উনি উঠে দাঁড়ালেন।তারপর আমরা বের হলাম।

এখন গাড়িতে বসে আছি।উনি পাশেই ড্রাইভ করছেন।আমি জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছি।উনি ঠিকই বলেছিলেন,রাতের শহর অনেক বেশি সুন্দর।কেউ যে আমার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,সেদিকে আমার খেয়ালই নেই।উনি হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে দেন।আমি উনার দিকে প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে আছি।উনি বুঝতে পেরে বললেন,

“গাড়ি থেকে নামো”

আমি উনার কথামতো গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম।উনি আমার হাত ধরে ফুচকার দোকানে নিয়ে আসলেন,আর বললেন,

“আসলে তখন আমার মনে ছিল না সেজন্য আনতে পারিনি,তাই এখন আমিও তোমার সাথে ফুচকা খাবো”

এই বলে উনি ফুচকা ওয়ালা মামাকে বললেন,

“মামা দুই প্লেট ফুচকা দেন,দু’টোই মিডিয়াম ঝাল
দিবেন”

আজকে উনাকে কেমন অন্যরকম লাগছে।আজকে উনি আমার সাথে কেমন হেসে হেসে কথা বলছেন।আমি উনার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

“এভাবে হা করে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই,আর আমি এমনই।আমি বদমেজাজি না,কিন্তু যখন রেগে যাই তখন নিজের মাথা ঠিক থাকে না।”

আমি আরো অবাক হলাম কারণ উনি আমার মনের কথা জানলেন কিভাবে।আমি অবাক হয়ে বললাম,

“আপনি আমার মনের কথা জানলেন কি করে”

উনি হো হো করে হেসে দিলেন।উনার হাসিটা অনেক সুন্দর।উনি হাসি থামিয়ে বললেন,

“তোমার মুখের রিয়াকশন দেখে আন্দাজ করে বলেছি।”

আমি আর কথা বাড়ালাম না কারণ মামা ফুচকা দিয়ে দিয়েছেন।আমি ফুচকা খেয়েই চলেছি একমনে।উনি না খেয়ে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছেন,আমি উনার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললাম,

“এভাবে আমার দিকে না তাকিয়ে খান”

উনি আমার কথায় তাড়াতাড়ি করে খাওয়া শেষ করলেন।আমার ও খাওয়া শেষ।আয়াজ বিল দিয়ে আমার হাত ধরে গাড়ির কাছে আসলেন আমাকে উঠতে বলে নিজেও উঠলেন।গাড়ি স্টার্ট দিলেন।আমি এবার বললাম,

“কোথায় যাবেন এখন”

“আমার প্রিয় জায়গায়,যাবে”

“হুম চলুন”

উনি একটা নদীর সামনে এসে গাড়ি থামালেন।আমার তো নদী দেখেই মনটা আরো ভালো হয়ে গেল গাড়ি থেকে নেমে আয়াজ আমার হাত ধরলেন।উনি আমাকে নিয়ে নদীর পাড়ে আসলেন।আমি আর উনি নদীর পাড়ে বসে পড়লাম।অনেক বাতাস হচ্ছে।

হঠাৎ উনি বলে উঠলেন,”ইশা”

“হু,বলেন”

উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”গ্রামে থাকতে কি তোমার কাউকে ভালো লাগতো”

আমি নদীর দিকে ছিলাম।উনার হঠাৎ এমন প্রশ্নের মানে বুঝলাম না। উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

“উহু আমাদের গ্রামে তো কোনো ভালো ছেলেই নেই আর যারা আছে ওদের আমার ভালো লাগত না,আমি ছেলেদের সাথে কথাও বলতাম না।ছেলেদের সাথে কথা বলা আব্বু পছন্দ করতেন না”

উনি সামনের দিকে তাকিয়ে বললেন,”ওহ”

আমি উনাকে বললাম,”আপনার কাঁধে একটু মাথা রাখব”

উনি মাথা নাড়লেন।আমি উনার কাঁধে মাথা রাখলাম।ওভাবে কখন ঘুমিয়ে গেছি জানি না।আয়াজ আমার দিকে তাকিয়ে দেখলেন আমি ঘুমিয়ে গেছি।উনি একহাতে জড়িয়ে ধরে মুচকি হাসলেন।কিছুসময় পর আমাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন।তারপর নিজে বসে গাড়ি চালাতে লাগলেন।
|
|
আয়াজের ডাকে ঘুম ভাঙলো।উঠে বসে উনার দিকে তাকালাম উনি অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন।উনি অন্যদিকে তাকিয়েই বললেন,

“ওড়না পরে বাহিরে আসো”

কথাটা বলেই উনি চলে গেলেন।আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম উনি কি বলল তারপর নিজের শরীরের দিকে তাকালাম,হায় আল্লাহ আমি উনার সামনে ওড়না ছাড়া এতোসময় বসে ছিলাম।তাড়াতাড়ি ওড়ন পরে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।উনার সামনে যেতে লজ্জা করছে।যাবো কি যাবো না ভাবার মাঝে উনার ডাক পড়ল,আমি আর কিছু না ভেবে উনার কাছে চলে গেলাম।উনি টেবিলে বসে পড়েছে,আমাকে দেখে বসতে বললেন।আমিও বসে পড়লাম।

খেতে খেতে মনে পড়ল আমি তো নদীর পাড়ে বসে ছিলাম আয়াজের কাঁধে মাথা রেখে তাহলে বাসায়
আসলাম কখন,আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,

“আমরা বাসায় কখন এসেছিলাম”

উনি খেতে খেতে বললেন,”তুমি ঘুমিয়ে পড়ার পর পরই চলে এসেছি।আসতে আসতে ১টা বেজে গেছে।”

আমি উত্তরে বললাম,”ওহ”

চলবে…..?

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here