অষ্টপ্রহরে পেয়েছি তোমায় পর্ব -০৪

#অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৪

উনি খাবার শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলেন।কিছুক্ষণ বাদে ফরমাল ড্রেসআপে বাহিরে আসেন।আমি সোফায় বসে ছিলাম।উনি আরেকটা সোফায় বসে বলেন,
“শোনো আমি অফিসে যাচ্ছি,আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।আমি দুপুরের খাবার রান্না করে রেখে গেছি।দুপুরে ভদ্র মেয়ের মতো খাবার খাবে।আমি কিন্তু ফোন দিবো,ফোন নিজের কাছে রাখবে।ঠিক আছে!”

উনি কথাগুলো দাঁড়িয়ে গেলেন আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম।উনি হুট করে এমন একটা কাজ করবে ভাবিনি,উনি আমার কপালে চুমু দিয়ে বলেন,

“সাবধানে থেকো বউ”

কথাটা বলেই উনি চলে গেলেন,আমি হা করে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।ঘোর কাটতেই দরজাটা লাগিয়ে সোফার উপর বসলাম।এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।এমন তো আগে কখনো আমার সাথে হয়নি।আমি সোফায় বসে ভাবতে লাগলাম উনি আমায় বউ ও বলেছেন।ধূর আর ভাবতে পারছি না।ফোন দেখি।ফোন অপেন করলাম,ফোন কিছুক্ষণ দেখার পর আর ভালো লাগছে না। কি করবো ভেবে পেলাম না।তাই আয়াজের রুমের বারান্দায় চলে গেলাম।

বারান্দার সোফায় বসে কয়েকটা ছবি তুললাম।ছবি তোলার পরে,কিছুক্ষণ দোলনায় বসে ব্যাস্ত শহর দেখতে লাগলাম।আগে আম্মুর কাছে ঢাকায় আসার জন্য অনেক বায়না করতাম।ঢাকায় আসার পর এখন মনে হয় আমাদের গ্রামই সুন্দর ছিল।কতো মজা করতাম।কিছুক্ষণ পর আমি আবার ড্রইংরুমে এসে সোফায় বসে পড়লাম।

টিভি চালালাম।কার্টুনের চ্যানেলে দিয়ে কার্টুন দেখতে লাগলাম।মোটু-পাটলু হচ্ছে।মোটু-পাতলু আমার সব থেকে প্রিয় কার্টুন।কার্টুন দেখার মাঝে ফোন বেজে উঠল।আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আয়াজ ফোন করেছেন।ফোনটা রিসিভ করে কানে দিলাম।

উনি আমায় বললেন,”কি করো?”

“কার্টুন দেখি,আপনি”

কার্টুনের কথাশুনে উনি হো হো করে হেসে দিলেন।আমার অভিমান হলো উনার উপর,উনি হাসলেন কেনো?আমি কি এমন কথা বলেছি।কার্টুন তো সবাই দেখে।উনি হাসি থামিয়ে বললেন,,

“আমি কেভিনে বসে ল্যাপটপে কাজ করছি।কিন্তু তুমি এখন ও কার্টুন দেখো,কার্টুন তো ছোট বাচ্চারা দেখে”

আমার রাগ হলো উনাকে কে বলেছে যে কার্টুন ছোটরা দেখে।কার্টুনতো সবাই দেখে।আমি রাগ নিয়ে বললাম,

“আপনাকে কোন হনুমান বলেছে হ্যাঁ যে কার্টুন ছোট বাচ্চারা দেখে।কার্টুন সবাই দেখে বুঝেছেন।যে বলেছে সে একটা লেজ ছাড়া শেয়াল,ঘিলু ছাড়া গাধা, ছাগলের ৫ নম্বর বাচ্চার ৭ নম্বর বাচ্চা,শালি ফকিন্নি।”

আমি এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলাম।

“আরে থামো থামো আর বইলো না,আমি এখন ফোন রাখছি বাই”

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উনি ফোন কেটে দিলেন।আমি হা করে কিছুসময় ফোন এর দিকে তাকিয়ে আবার কার্টুন দেখায় মনোযোগ দিলাম।টিভি দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে গেছে।আমি টিভি অফ করে দিয়ে গোসল করতে চলে গেলাম।গোসল শেষে বের হলাম।চুল মুছে ড্রইংরুমে চলে গেলাম।ড্রইংরুমে যেতেই দেখলাম আমার ফোন বাজছে।দ্রুত গিয়ে ফোন রিসিভ করলাম ওপাশ থেকে রাগী কন্ঠে আয়াজ বলে উঠলেন,

“তোমায় বলে ছিলাম না ফোন নিজের কাছে রাখতে ফোন কই ছিল তোমার।আমাকে টেনশনে না ফেললে হয়না তোমার”

“আমি গোসল করতেছিলাম মাত্র বের হলাম,এখন কি আমি ওয়াশরুমেও ফোন নিয়ে যাবো”

উনি এবার নরম হলেন।উনি শান্ত কন্ঠে বললেন,”খেয়েছো?”

আমি না বললাম।উনি আমায় বললেন ফোন কাটো আমি ভিডিও কল দিচ্ছি তুমি এখনই আমার সামনে খাবে।আমার লজ্জা লাাগছে ভিডিও কলে থাকলে খাবো কি করে।তাও ফোন রিসিভ করে টেবিলের উপর গ্লাস রেখে ফোনটা ওখানে রেখে খাওয়া শুরু করলাম।আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি উনি নিজেও খাচ্ছেন।আমি খেয়ে উঠে পড়লাম তাড়াতাড়ি।অস্বস্তি হচ্ছিল উনার সামনে বসে খেতে।হাত ধুয়ে এসে উনাকে বলে কল কেটে দিলাম।উনি আবার ফোন দিলেন,কিন্তু এবার দিলেন অডিও কল।আমি ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে বললেন,

“সাবধানে থেকো।কেউ আসলে কিন্তু দরজা খুলবে না”

আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,”আমি বুঝেছি তো।এক কথা কতোবার বলবেন!”

উনি মুচকি হেসে বললেন,”একশোবার বলবো আমি,আর আমার কথা তুমি শুনবা ঠিক আছে বাই।”

উনার কথা শুনে মুচকি হাসলাম।উনি একটা পাগল ছেলে।না হলে ছোটদের মতো এমন কেউ করে।আমি ফোনটা নিয়ে কিছুক্ষণ গেম খেললাম।বিকেল হয়ে গেছে গেম খেলতে খেলতে।আমি এবার ছাদে যাবো ভাবলাম।ছাদে গেলাম।ছাদটাও অনেক সুন্দর।আমি বেশ কিছুক্ষণ ছাদে বসেছিলাম।তারপর আবার বাসায় চলে আসলাম।সন্ধ্যা হতে চলল।বোরিং কেটেছে আজকের দিনটা আমার।

সন্ধ্যা হয়ে গেয়েছে।আমি আয়াজের রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি।এই জায়গাটাই আমার প্রিয় এখানে আসার পর এখানেই আমি বেশি সময় কাটিয়েছি।কলিংবেলে বেজে উঠল।বারান্দা থেকে বের হয়ে দরজা খুলতে চলে গেলাম।দরজা খুলতেই আয়াজের ক্লান্ত মুখটা ভেসে উঠল।উনি ভেতরে ঢুকে সোফায় বসে পড়লেন।উনাকে ক্লান্ত লাগছিল।তাই তাড়াতাড়ি করে এক গ্লাস শরবত বানিয়ে আনলাম।উনাকে ডাক দিয়ে বললাম,

“এই যে শুনছেন,এই শরবতটা খেয়ে নিন।ক্লান্তিভাবটা চলে যাবে।”

উনি কনো কথা না বলে চুপচাপ শরবতটা খেয়ে নিলেন।তারপর আবার চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে বসে রইলেন।আমি গ্লাসটা রেখে এসে উনার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম।আচ্ছা উনার কি মাথা ব্যাথা করছে।উনাকি কি জিজ্ঞেস করবো নাকি না!আর কিছু না ভেবেই জিজ্ঞেস করলাম,,,

“আপনার কি মাথা ব্যাথা করছে”

উনি চোখ খুলে আমার দিকে তাকালেন তারপর আাস্তে করে বললেন,”হু”

“আমি মাথা টিপে দেব”

উনি মাথা নাড়লেন।আমি সোফায় গিয়ে বসতেই উনি আমার কোলে মাথা রাখলেন।আমি আাস্তে আস্তে মাথা টিপটে লাগলাম।কিছুসময় পর উনি উঠে গেলেন।আমকে বললেন,

“আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

উনি চলে গেলেন উনার রুমে।আমি সোফায়ই বসে থাকলাম উনি কিছুক্ষণ পরই চলে এলেন।গোসল করেছেন।চুল থেকে পানি পরছে।উনাকে এতো সুন্দর লাগছে কেনো।আমি কি প্রেমে পড়ালাম নাকি।আমার বান্ধবীরা বলতো প্রেমে পড়লে নকি ওপর মানুষের সবকিছুই ভালো লাগে।উনার ডাকে আমার ঘোর কাটল।

“ইশা তাড়াতাড়ি এদিকে এসো”

আমি দ্রুত উনার কাছে গেলাম।উনি রান্না করছেন।আমি রান্না ঘরের ভিতরে ঢুকবো কি ঢুকবো না সেই নিয়ে দ্বিধায় আছি।কারণ উনি আমায় রান্না ঘরে ঢুকতে নিষেধ করেছেন।
উনি আমায় এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলেন,”ভিতরে আসো”

আমি ভিতরে ঢুকে উনার পাশে দাঁড়ালাম।উনি আমায় বললেন,
“একা একা রান্না করতে বোরিং লাগছে চলো গল্প করি”

আমি বললাম,,”আচ্ছা চলুন গল্প করি”

উনি আমায় বললেন,,”আজকে সারাদিন কি কি করেছ তাই দিয়েই শুরু করো”

আমি আয়াজকে সারাদিনের যা করেছি তাই বললাম।আমি হঠাৎ করে উনাকে একটা প্রশ্ন করলাম,,

“আচ্ছা আপনি এতো রান্না শিখলেন কিভাবে?”

উনি আমার কথায় মুচকি হেসে বললেন,,”আমি তো কাজের জন্য এখানে থাকি।তাই নিজের রান্না নিজেই করে খাই।প্রথম প্রথম বুয়া রেখেছিলাম বাট খেতে পারিনা ওদের হাতের খাবার।তাই নিজেই শিখেছি।তুমি রান্না পারো?”

“হুম পারি তো”

আমার কথায় উনি ভ্রু-কুচকে বললেন,,”তাহলে ওইদিন ডিম ভাজতে গিয়ে রান্না ঘরের ওই অবস্থা করেছিলে কেন?”

“আসলে হয়েছে কি আমি জানি না কোথায় কি ছিল খুঁজতে গিয়ে সব এলোমেলো করে ফেলেছি।”

এর ভিতরেই উনার রান্না শেষ।উনি আমায় টেবিলে বসতে বলে খাবার আনতে চলে গেলেন।আমি চেয়ার টেনে বসে পড়লাম।খাওয়া দাওয়া শেষ করে,কি করবো ভাবতেছিলাম।উনি সবকিছু গুছিয়ে আমার কাছে আসলেন। আমি উনাকে দেখে বললাম,,

“আপনি কি আমাকে একটু আব্বুর সাথে কথা বলিয়ে দিতে পারবেন”

উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,”আমার কাছে তো নাম্বার নেই। আর তোমার কলেজে ভর্তির ডেট চলে এসেছে এমনি তেও আমাদের তোমার বাড়িতে যেতে হবে।”

বাড়িতে যাওয়ার কথা শুনেই মনটা খুশিতে লাফিয়ে উঠল।ইশ,কতোদিন আম্মু,আব্বু আর ভাইকে দেখিনা।উনাকে আমি হুট করে জড়িয়ে ধরলাম,জড়িয়ে ধরে বললাম,,

“থ্যাংকু থ্যাংকু মিস্টার গুমড়ো মুখো”

আমার খেয়াল হলো আমি কি করেছি।খুশির ঠেলায় কি করেছি বুঝতে পারিনি।ওনাকে তাড়াতাড়ি করে ছেড়ে দিয়ে।সরি বলে দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।উনি হতভম্ব হয়ে বসে আছেন হয়তো ভাবেইনি আমি এমন করবো।কিছুক্ষণ পর মুচকি হেসে বিড়বিড় করে বললেন,

“আমার পিচ্চি বউ তাহলে আমার প্রেমে পড়েছে কিন্তু ও কি বললো গুমরো মুখো।আমাকে কোন দিক দিয়ে গুমরো মুখো দেখায়।”

আমি দরজা আটকে বেডে এসে বসলাম।মনে হচ্ছে বুকের ভেতরে কেউ হাতুড়ি দিয়ে পিটাচ্ছে।আমি বুকে হাত দিয়ে আজকে সারাদিনের কথা মনে করলাম।উনি আমার সাথে যা যা করেছেন এগুলোতে আমার বিরক্তি লাগেনি।বরং আমার অনেক বেশি ভালো লেগেছে।ধুম করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।
|
|
সেদিনের পর আজ সাতদিন হয়ে গেছে।এই সাতদিন উনি আমার সাথে যা যা করেছেন তাতে আমি খুব অবাক হয়ে গিয়েছি।হুটহাট হাতধরা,চুমু দেওয়া,শাসন করা আরো কতো কি।কিনতু এইসব কিছুই আমার খুব ভালো লাগতো।আজকে আমরা বাড়ি যাচ্ছি আমাদের।আমার কাগজ পত্র সব লাগবে কলেজে ভর্তি হতে তাই উনি আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন আমাদের বাড়িতে।আমার খুশিও লাগছে আবার ভয় ও লাগছে কারন ওখানে গেলে কি হবে কে জানে।গ্রামের মানুষ কি বলবে।আর কিছু না ভেবে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম।

দীর্ঘসময় পরে আমারা পৌছালাম আমাদের গ্রামে।এখান থেকে বাড়িতে যেতে এখনো আধা ঘন্টা লাগবে।ভয়ে আমার বুক ধকধক করছে।কি হবে সামনে তাই ভেবে!

চলবে…….?

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here