#জীবনের_থেকেও_বেশি
#পর্বঃ১০
#লেখাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
ঐশীর মাথা ঘুরাচ্ছে হয় তো জ্বরটা আবার আসছে। মাথা ধরে বসে আছে সে। সবকিছু ঝাপসা দেখছে।
ঐশী পিটপিট করে চোখ খুলে চারিপাশে দেখতে লাগল। মাথার কাছে নিজের মাকে বসে থাকতে দেখলো। তিনি চিন্তিত দৃষ্টিতে ঐশীর দিকে তাকিয়ে আছেন। ঐশী উঠে বসতে চাইলো কিন্তু শরীর দুর্বল থাকায় উঠতে পারলো না। আফসানা বেগম ঐশীকে ধরে বসিয়ে দিলো। ঐশী ছলছল নয়নে আফসানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল
“আম্মু আমি কতক্ষণ অজ্ঞান ছিলাম। আর ওনি এখনো আসেননি।”
আফসানা বেগম নিজের কান্না চেপে রেখে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো নাফিস সাহেব চোখ গরম করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ওনি ঐশীর মাথাটা নিজের বুকে আকড়ে ধরে বললেন
“তুই পুরো একদিন অজ্ঞান ছিলি। আর তামিম চৌধুরী আসেনি তোকে দেখতে।”
ঐশী ডুকরে কেঁদে উঠলো। শক্ত করে আফসানা বেগমকে জরিয়ে ধরে বলল “আম্মু ওনি হয় তো কোনো বিপদে আছেন। তাছাড়া ওনি আমার কাছে আসতেনই”। ঐশী আফসানা বেগমকে ছেড়ে দিয়ে ওর ফোন খুঁজতে লাগলো। বালিশের পাশে ফোনটা পেয়েও গেল। ফোনে কোনো মেসেজ বা কল না দেখে ঐশীর মন আরো খারাপ হয়ে গেল। ওর কেন যেন মনে হচ্ছে তামিম কোনো বড় বিপদে আছে। কিন্তু ওইদিনকার ওই মেয়েটা না আর কিছু ভাবতে পারছে না ঐশী। কান্নাগুলো সব দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।
নাফিস সাহেব কিছু একটা ইশারা করলো আফসানা বেগম চোখ দিয়ে নাবোধক জবাব দিলেন। কিন্তু পরক্ষণেই নাফিস সাহেবের ভয়ংকর চোখ দেখে কাঁপাকাপা হাতে ঐশীকে নিজের বুক থেকে ওনার মুখামুখি করে একটা ঢোক গিলে বলল
“দেখ মা আমি কখনো তোর কাছে কিছু চাইনি। আজ একটা জিনিস চাইবো দিবি।”
ঐশী প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে ওনার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল
“আম্মু এমন করে বলছ কেন! তুমি বল আমি তোমার সব কথা শুনবো।”
আফসানা বেগম ঐশীর একটা হাত ধরে বললেন ” কথা দে তোর বাবা যে বিয়ের ব্যবস্থা করছে সেটাই তুই মত দিবি আর কোনো কথাবার্তা ছাড়াই বিয়েটা করে নিবি। আর তোর যা ঠিক মনে হবে তাই করবি। ভেবে চিন্তে ডিসিশন নিবি। ”
ঐশী চোখ বড়বড় করে বলল ‘আম্মু এগুলো কি বলছ তুমি। তুমি তো জানো আমি ওনাকে কতটা ভালোবাসি। আর আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আমি বিবাহিত।”
আফসানা বেগম নিজের চোখের পানি লুকিয়ে বললেন “আমি এসব জানিনা তুই রাজি হয়ে যাহ। বল রাজি তো। কি রে কথা বলছিস না কেন।”
ঐশী বুঝতে পারছে না কি করবে সে। ঐশী বলল “আম্মু তুমি আমাকে কিছুদিন সময় দিবে। আমি একটু ভেবে জানাবো।”
আফসানা বেগম দরজার পাশে দাড়িয়ে থাকা নাফিস সাহেবের দিকে তাকালেন। ওনি হ্যাঁবোধক সম্মতি দিতেই। আফসানা বেগম ঐশীকে সময় দিয়ে রুম থেকে চলে গেছেন। রাতের খাবার খাইয়ে দিয়ে গেছেন আফসানা বেগম ঐশীকে। ঐশী মনমরা হয়ে জানালা গ্রিল ধরে দাড়িয়ে এক দৃষ্টিতে বাহিরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ বেয়ে তার নোনা জল বেয়ে পরছে।
রাত প্রায় দুইটা ছুই ছুই। ঐশী এখনো একি ভাবেই দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ কারো উষ্ণ হাতের স্পর্শ তার পেটে অনুভব হতেই সে কেঁপে উঠলো। “ভুত ভুত” বলে চেচাতে ধরবে তার আগে তামিম ওর মুখ চেপে ধরে বলে উঠলো “জান আমি আমি চিল্লিও না।” সে চমকিত হয়ে পিছু ঘুরতেই দেখলো তামিম একটা মুচকি হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু তার মাথায় হাতে ব্যান্ডিজ। ঐশী অস্থির হয়ে বলতে লাগলো “কি হয়েছে আপনার। আপনার এ অবস্থা কিভাবে হলো।” বলতে বলতে কেঁদে দিলো ঐশী।
তামিম ঐশীকে নিজের বুকে আকড়ে ধরে বলল “শান্ত হও জান। কেঁদে কেঁদে কি অবস্থা করেছ চোখ মুখের খেয়াল করেছ। আর তুমি জানো না আমি তোমার কান্না সহ্য করতে পারিনা।”
তামিম ঐশীকে নিয়ে বেডে বসলো। ঐশীর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো। তার চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো। তামিম বলল
“নাফিস সাহেব আমাদের অফিসে গুন্ডা পাঠায় আমাকে মেরে ফেলার জন্য। কিন্তু ভাগ্যক্রমে আমি তখন বাসায় ছিলাম নিলয়ের ফোন পেয়ে সেখানে আমি যাই সঙ্গে অনেক লোকজন নিয়ে যাই যার জন্য আমরা সবাই বেঁচে যাই। ওখানে অনেক ঝামেলা হয়। আমাকে আক্রমণ করা হয়েছিল। আমার অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। আমি বেড থেকে উঠতেও পারছিলাম না। কিন্তু আমি যখন শুনলাম তোমার বাবা খালি এইটুকুতে থেমে থাকেনি। তোমাকেও ভুল বুঝাতে চেয়েছিলো। আমার ফোনটাও চুরি হয়ে যায় ওইদিন। নিলয়ের মুখে তোমার এমন অবস্থা শুনে আমি আর থাকতে পারিনি। আমি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে এসেছি। হাসপাতালের চারপাশে নাফিস সাহেবের লোক পাহারা দিচ্ছে। অনেক কষ্টে এসেছি।”
এশী বলল “তাই তো আমার মনের ভিতরে কেমন করছিলো। আপনার ফোনে মেয়ের কন্ঠ শুনে আমি ঘাবড়ে গেছিলাম। কিন্তু কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মন বলছিলো আপনি কোনো বিপদে পরেছেন।”
ঐশী তামিমকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। তামিমের ক্ষত স্থানে লাগলেও সে মুখে মুচকি হাসি নিয়ে ঐশীকে জরিয়ে ধরলো।
তামিম বলল “তুমি তোমার আম্মুর কথায় রাজি হয়ে যাও।”
ঐশী ঝট করে তামিমকে ছেড়ে দিয়ে বলল “কি বলছেন এগুলো আপনি”
তামিম বলল “আরে পাগলি বিয়ে তো তোমার আর আমারই হবে শুধু দেখ আগে আগে কি হয়। আমার কিছু কাজ আছে সেটা করতে কিছুদিন সময় লাগবে। আর তুমি রাজি হবে ঠিকিই তবে কিছু সময় চাইবে। তারমধ্যে আমি কাজ শেষ করে তোমাকে নিয়ে যাবো।” বলেই এক রহস্যময় হাসি দেয়।
ঐশী কিছুই বুঝতে পারছেনা। কি করতে চাইছে তামিম। সে এগুলো বাদ দিয়ে আলতো হাতে হাত বুলিয়ে দেয় তামিমের ক্ষত স্থানে। তামিমের মুখে অসংখ্য চুমু দিতে থাকে। তামিম এবার দুষ্টুমি ভাব নিয়ে বলল
“আমার বউ দেখছি আমার থেকেও বেশি রোমান্টিক। এতো চুমু দিও না জান আমি যে নিজেকে কন্টোল করতে পারছিনা।” বলেই ঐশীর কোমর পেচিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এসে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। ঐশীও মনের সুখে তামিমকে কিস করতে থাকে। তামিম কিছুক্ষণ পর ঐশীকে ছেড়ে দিলো। দুইজনই হাপাচ্ছে। ঐশী তামিমের দিকে তাকিয়ে বলল “ভালোবাসি আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি আপনাকে।”
তামিম ঠোঁটে একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে বলল “আমিও তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি জান।”
ঐশী চোখ ছোট ছোট করে বলল “আচ্ছা আপনি রুমে আসলেন কিভাবে। আর মেইন গেট কিভাবে পার হলেন।”
তামিম হেসে বলল “সবই আমার শাশুড়ি মায়ের কেরামতি। আই লাভ ইউ মাই সুইট শাশুড়ি আম্মু।”
ঐশী অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে বলল “আম্মু”
তামিম বলল “জি জান শাশুড়ি আম্মু। উনিই তো আমাকে চুপি চুপি বাসায় ঢুকিয়ে দিয়ে মই দিয়ে তোমার রুমে আসতেও সাহায্য করেছে।”
ঐশী তার চোখ আরো রসগোল্লার মতো করে বলল “মই দিয়ে আমার রুমে আপনি আসছেন। এই অবস্থায়”
তামিম ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল “কি আর করতাম তোমার ওই খাটাশ বাপ তো উঠে পরে লেগেছে আমার থেকে তোমাকে আলাদা করতে।”
তামিম মুখ ছোট করে এসব কথা বলা দেখে হেসে দিলো ঐশী। ঐশীকে হাসতে দেখে তামিম নিজের বুকে বাঁপাশে হাত রেখে বলল “ইশ এরকম করে হেসো না জান। বুকে লাগে যে।”
তামিমের কথা শুনে ঐশী আবার হাসতে লাগলো। তামিম ঐশীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলো। তামিমের কান্ডে ঐশী মুচকি একটা হাসি দিলো। ঐশী তামিমের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। তামিম গল্প করতে লাগলো ঐশীর সঙ্গে। ঐশীর সারাদিন সব কষ্ট দুঃখ দূর হয়ে গিয়েছে তামিমের সঙ্গে দেখা হয়ে। তামিম ঐশীর কোমর পেচিয়ে ধরে ওর পেটে মুখ গুজে দিলো।
ঐশীর কাতুকুতু লাগায় ও খিলখিল করে হেসে দিলো। তামিম ঐশীর পেট থেকে মুখ তুলে ঐশীর মুখে দিকে তাকিয়ে বলল “কি হয়েছে জান হাসছো কেন!”
ঐশী বলল “কাতুকুতু লাগছে যে।” তামিম হাসলো। হঠাৎ
#জীবনের_থেকেও_বেশি
#পর্বঃ১১
#লেখাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
হঠাৎ দরজার ওপাশ থেকে নাফিস সাহেবের গলা শুনে ভয়ে আতকে উঠলো ঐশী। ওনি ডাকছে ঐশীকে ডাকছে। ঐশী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় ভোর হয়ে গিয়েছে। ঐশী তামিমের দিকে তাকিয়ে দেখলো ছেলেটা ঘুমিয়ে গিয়েছে। ঐশী কি করবে বুঝতে পারছে না। ওইদিকে নাফিস সাহেবের ডাকার বেগ বেড়েই যাচ্ছে।
ঐশী ঘরটা একদম অন্ধকার করে দিলো। ভয়ে ভয়ে দরজার কাছে গিয়ে কাঁপাকাঁপা হাতে দরজা খুলে দিলো। নাফিস সাহেব রাগী দৃষ্টিতে ঐশীর দিকে তাকিয়ে কটমট করে বলল
“কি করছিলে এতক্ষণ দরজা খুলতে এতো দেড়ি হলো কেন!”
ঐশী ভয়ে ভয়ে বলল “না মানে আব্বু আসলে ঘুমিয়ে ছিলাম তো। টের পাই যে তুমি আসেছ।”
নাফিস সাহেব ঘরের দিকে উঁকি দিতে লাগল। ঘরটা অন্ধকারে ঘুটঘুট করছে। তা দেখে ওনি বললেন “ঘরের একি অবস্থা করে রেখেছ ঘরের কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।”
ঐশী বলল “আমার জীবনটাই তো অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।”
নাফিস সাহেব এক পলক সন্দেহভাজন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে গেলেন। ঐশী একটা সস্থির নিশ্বাস ফেলল। হঠাৎ ঘাড়ে কারো ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই কেঁপে উঠলো সে। ঐশী বলল
“একি আপনি ঘুম থেকে উঠলেন কখন। আব্বু তো উঠে গিয়েছে। এখন কি হবে।”
তামিম দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বলল “জান তুমি কি সুন্দর দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে বললে যে তোমার জীবনটাই অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছিলো সত্যি সত্যিই আমি মরে গিয়েছি।” ঐশী দৌড়ে এসে তামিমের ঠোঁট আকড়ে ধরলো। তামিম অবাক হয়ে গেল। ঐশী কিস করার বদলে কামুড় দিছে। তামিমের ব্যথা লাগছে তবুও সে কিছু বলছে না। হঠাৎ তার গালে কিছু উষ্ণ ছোঁয়া পেল। তামিম বুঝতে পারলো ঐশী কান্না করছে। তামিম ভাবতে লাগলো ঐশী তো ওরে কামুড় দিছে। ওর তো কান্না করার কথা কিন্তু ঐশী কান্না করছে। আজিব তো!
ঐশী তামিমকে ছেড়ে দিয়ে ওর কলার ধরে বলতে লাগল “ওই তুই মরা মরা করিস কেন। তোকে ছাড়া থাকতে হবে এই কথা আমি ভাবতেই পারিনা। আর তুই শুধু মরার কথা বলিস। আর কখনো যদি তোর মুখে মরার কথা শুনি তাহলে কিন্তু..!”
তামিম ঐশীর কোমর পেচিয়ে ধরে বলল “আচ্ছা জান আমি আর বলবো না। আমি বুঝতে পারিনি আমি এটা বলায় তুমি রেগে যাবে। সরি জান আমি আর কখনো এই কথা বলবো না।” বলেই একটা চুমু দিলো ঐশীর কপালে।
ঐশী বলল “এখন ছাড়ুন আমাকে। আজান দিয়েছে নামাজটা পড়ে ফেলি। আপনিও আসুন। আমি আগে ওযু করে আসি তারপর আপনি।”
তামিম ঐশীকে ছেড়ে দিলো। ঠোঁট উল্টিয়ে তামিম বেডে গিয়ে বসলো। ঐশী মুচকি হাসি দিয়ে ওয়াশরুমে গেল ওযু করতে।
ঐশী আর তামিম নামাজ পরে নিলো। তামিম বালিশে হেলান দিয়ে বসে ঐশীকে দেখতে লাগলো। ঐশী এবার বলল
“সকালে তো আব্বু আসবে তখন কি হবে।”
তামিম মুচকি হেসে বলল “তখন আমি চলে যাব। এখনই বের হতে হবে আমাকে।”
ঐশী মন খারাপ করে বলল “আমি আপনার সঙ্গে যেতে চাই। আমি আপনাকে না দেখে থাকতে পারবো না।”
তামিম বলল “না না জান এমন কাজ ভুলেও করো না। এখন উল্টাপাল্টা কিছু করতে গেলে তোমার বাবা আমাদের দুইজনকেই মেরে ফেলবে। শুধু আমাদের না তাহিয়া আর নিলয় ও অনিরাপদ। ওদের ও বাঁচাতে হবে। এখনও আমার কিছু কাজ আছে।”
ঐশী জরিয়ে ধরলো তামিমকে। তামিম ওর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো।
এমন করেই চলতে লাগলো দিনগুলো। তামিম গভীর রাতে আসে আর ভোরের আলো ফোটার আগেই চলে যায়। তামিমের অফিসের সমস্যার প্রধান কারণ হচ্ছে নাফিস সাহেব আর নোমান। ওই দিন অফিসে গুন্ডা পাঠিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো নাফিস সাহেব। এমনকি একটা মেয়েকে টাকা দিয়ে ভুল বুঝাই ঐশীকে। সব কথাই ঐশী জানে।
দীর্ঘ সাত দিন যাবত এই রকম করে আসা যাওয়া করছে তামিম। কিন্তু আজ না আসতে দেখে ঐশী চিন্তায় পরে গেলো। ও কি কোনো বিপদে পরলো। ভাবতেই বুকটা কেঁপে উঠলো তার। ঘুমহীন রাত কাটলো ঐশীর। সারাটা দিনও চিন্তায় কেটেছে ঐশীর। তামিমের ফোনে অনেক বার কল করেছে ঐশী। কিন্তু সে কল ধরেনি। ভালো লাগছে না ঐশীর। অপেক্ষায় রয়েছে ঐশী তামিমের একটু খবর পাওয়ার জন্য।
দুইদিন পার হয়ে গিয়েছে তামিমের কোনো খবর নেই। ঐশী চিন্তায় চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে। তিনদিন হবে আজ গভীর রাতে বারান্দার দরজা খুলে অপেক্ষায় বসে আছে ঐশী। এক দৃষ্টিতে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে সে। হঠাৎ নিলয়কে মই বেয়ে উপরে উঠতে দেখে অবাক হয়ে বলল
“একি ভাইয়া আপনি ওনি কোথায় ওনার কোনো বিপদ হয়নি তো। কি হয়েছে ভাইয়া।”
নিলয় ঐশীকে শান্ত করে বলল “তোমাকে আমার সঙ্গে এই বাসা থেকে পালাতে হবে।”
ঐশী বলল “কিন্তু কেন ভাইয়া কি হয়েছে”
নিলয় বলল “না তেমন কিছু না এখন চলো তো আমার সঙ্গে। আর কথা বারিও না।”
ঐশী আর কথা বাড়ালো না নিলয় সঙ্গে বারান্দা বেয়ে নিচে নেমে এলো।
নিচে আফসানা বেগম চিন্তিত মুখে দাড়িয়ে আছে। ওনি ওদের নিরাপদভাবে বাহিরে বের করে দিলেন। শেষে ওনি ঐশীকে বললেন
“ঐশী মা তামিমকে কোনো কষ্ট দিস না। ছেলেটা ছোট থেকে অনেক কষ্ট সহ্য করেছে। আর ছেলেটা তোকে অনেক ভালোবাসে। নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে সে। কখনো অবিশ্বাস করিস না ওকে। জেনে রাখিস ও যাই করুক তার পিছনে যেকোনো কারণ অবশ্যই থাকবে। আর ভালো থাকিস।” বলেই একটা চুমু এঁকে দিয়েছিলেন ঐশীর কপালে।
নিলয় ঐশীকে নিয়ে বেরিয়ে দৌড়াতে লাগলো। হঠাৎ নিলয় থমকে দাড়িয়ে গেল। ঐশী হাটুতে হাত দিয়ে হাপাতে হাপাতে বলল
“কি হলো ভাইয়া এমন করে দাড়িয়ে গেলেন কেন?”
নিলয় কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল “নোমান তুই!”
নিলয়ের মুখে নোমানের নাম শুনে ঐশী আতকে উঠে সামনে তাকিয়ে নোমান আর অনেকগুলো মানুষ দেখে ভয় পেয়ে গেল। নিলয়ের শার্ট আকড়ে ধরে ওর পিছনে দাড়িয়ে রইলো ঐশী।
নোমান চেঁচিয়ে বলে উঠলো “ঐশী চলে আয় আমার কাছে। ভালোয় ভালোয় বলছি চলে আয় এইদিকে।”
ঐশী নিলয়ের আরো পিছনে লুকালো।
নোমান বন্দুক তাক করলো নিলয়ের দিকে তার বলল “তুই যদি এখন না আসিস তাহলে এই ছেলেটাকে মেরে ফেলব।”
নিলয় ঐশীকে উদ্দেশ্য করে বলল “ঐশী তুমি মেইন রোডের দিকে চলে যাও। ওখানে তাহিয়া আর তামিম গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তামিমের শরীরের অবস্থাটা তেমন ভালো না তাই আমি এসেছিলাম তোমাকে আনতে। যাও প্লীজ তাড়াতাড়ি। আমাকে নিয়ে চিন্তা কর না।”
ঐশী বলল “না ভাইয়া তোমাকে এইরকম অবস্থায় রেখে আমি কিছুতেই যেতে পারবো না।”
নিলয় বলল “যাও বলছি তামিম তোমার অপেক্ষায় আছে।”
ঐশী বলল……
(চলবে)
(