হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব -১০+১১

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১০
প্রিয়ম বাসায় আসার পর প্রিয়া ওর ভাইয়ের রুমে হানা দিয়েছে।

“দেখ ভাই, তোর বন্ধুর ছবি দেখাবি নয়তো আমি অনশন করব। আমি বাদে সবাই তাকে দেখেছিস! এটা মেনে নেয়া যায় না না না। হুহ্!”

প্রিয়ম হাই তুলতে তুলতে বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে বলে,

“যা অনশন কর। নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে অনশন করবি। পানিটুকুও খাবি না। ৪৮ ঘন্টা যদি করতে পারিস তবেই আমি তোকে আমার বন্ধুর ছবি দেখাব।”

প্রিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে প্রিয়মকে এলোপাথাড়ি কয়েকটা কি*ল-ঘু*ষি দিয়ে ফোন ছিনিয়ে নিতে চাইছে। দুই ভাই-বোনের কারাকারি ও চিৎকারে ওদের বাবা-মা এসে হাজির। পিয়ালি বেগম মেয়েকে টেনে এনে জিজ্ঞাসা করেন,

“কী হয়েছে? এমনভাবে লাগছিস কেনো?”

প্রিয়া মুখ কুঁচকে বলল,

“তোমার ছেলেকে বললাম আমি তার বন্ধুর ছবি দেখব, সে দেখাচ্ছে না। আমি একটু কী দেখতে পারি না বলো?”

“না পারিস না। তখন তো মানা করছিস। এখন একেবারে বিয়ের সময় দেখবি। যা রুমে যা। পড়তে বস।”

“ধ্যাত ভাল্লাগে না।”

মায়ের কথায় মন খারাপ করে প্রিয়া চলে যায়। প্রিয়া যেতেই প্রিয়ম হেসে উঠে আর বলে,

“পা*গলিটা বিয়ের দিন শ*ক খাবে।”

পিয়ালি বেগম ও শরীফ সাহেব হালকা হেসে চলে যান। প্রিয়ম ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রোল করতে থাকে।

_______

জারিফ বাসায় এসে রাতের খাবারের পর সবাইকে জানালো প্রিয়া ওর স্টুডেন্ট এবং সেটা সে আজকেই জানলো। সবাই অবাক হলেও প্রচুর হেসেছে। জারিফের ভাবি তামান্না বলে,

“ভাই, তোমার বউকে তুমি বিয়ের পর দিন-রাত পড়াবা কারণ তুমি শিক্ষক। ইশ বেচারির অবস্থা কল্পনা করে আমার প্রচুর হাসি পাচ্ছে! শেষে কীনা তুমি ছাত্রিকে বিয়ে করবা!”

জারিফ ভাবীর কথায় বেচারা মুখ বানালো। জায়ান তামান্নার কথায় প্রতিউত্তর করে,

“তো তোমাকে কী আমি বিয়ের পর পড়ার জন্য চাপ দিয়ে লাভের লাভ কিছু করতে পেরেছি? তুমি অনার্সটা দিয়ে আর পড়বে না তো পড়বেই না বলে বসে রইলে।”

তামান্না ক্ষিপ্র স্বরে বলে,
“বিয়ের পর এক বছর পড়েছি সেটা কম কিসে হ্যাঁ? আমি তো ভেবেছিলাম আর পড়ব না। তাছাড়া আমি পরে চাইলে মাস্টার্স করতে পারব। এখন আমার তুতুল আছে।”

জায়ান সেন্টিমার্কা হেসে চুপ করে যায়। তরুণীমা বেগম এবার বলেন,

“সমস্যা কোথায় তাতে? শিক্ষকরা কি কাউকে বিয়ে করে না? তুই এসব নিয়ে একদম ভাববি না। প্রিয়াকে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। শুক্রবার গিয়ে আকদ করিয়ে আসব। তোদের মতিগতি সুবিধার লাগে না আমার।”

জারিফের বাবা নিজের স্ত্রীকে বোঝাতে বলেন,
“আহা! জারিফ কি বলেছে বিয়ে করবে না? বলেনি তো। ওর যদি সময় প্রয়োজন নিক না।”

“না কোনো সময় না। আকদ করে রাখব তারপর যখন ইচ্ছে হবে বউ অনুষ্ঠান করে আনব। তুমি তো একটা কথাও বলবে না। আমি কারও কথাই শুনব না। সামনের রবিবার নাকি মুন্নি আসবে। তোমার বোনের মেয়ে এসে বাগড়া দিবে। ছেলে আমার মুন্নিকে বিয়ে করতে চায় না তাই যখন একবার প্রিয়াকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে তো জলদি বিয়ে হবে। এখনি প্রিয়ার বাবাকে ফোন করে জানাও শুক্রবার আকদ। আমি কিছু শুনতে চাই না।”

তরুণীমা বেগম কথাটা বলেই উঠে গেলেন। তামান্না বলে,

“বাবা, কী করবেন? শুক্রবার আকদ করাবেন?”

“তোমার মা তো তেমনই বলল। মুন্নিকে নিয়ে যে কেনো ভয় পায়! আমার বোন বিয়েতে না থাকলে কেমন একটা দেখায়। আর তরু এখনও জমিলাকে (জারিফের ফুপি) জানায়নি। পরে জানলে কস্ট পাবে না বলো?”

তামান্না বলে,
“পরে কস্ট পেলেও বড়ো অনুষ্ঠানের কথা বলে দমানো যাবে কিন্তু মুন্নি মেয়েটা আসলে খুব ঝামেলা হবে। তখন আপনি নিজের বোনের কথাও ফেলতে পারবেন না আবার ছেলেরটাও না। মা ঠিকই বলেছেন। আকদটা হয়ে যাক। তারপর দেখা যাবে।”

“আচ্ছা তোমরা যা ভালো বুঝো। আমি তবে শরীফ সাহেবকে ফোন করে জেনে নেই তাদের সমস্যা আছে কীনা?”

তামান্না ও জায়ান সায় দিলে জায়েদ সাহেব প্রিয়ার বাবাকে ফোন করেন। ফোন রিসিভ হলে একে অপরকে সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে কথা শুরু করেন। জায়েদ সাহেব বলেন,

“ভাইসাহেব, যদি কিছু মনে না করতেন কিছু বলতাম।”

প্রিয়ার বাবা কিছুটা উদ্বিগ্ন হন তিনি সুধান,
“জি বলেন।”

“আপনাদের একটা মেয়ে আমি জানি। মেয়ের বিয়ে নিয়ে অনেক ইচ্ছাও থাকবে। সবই পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ্‌। আসলে শুক্রবার যদি আকদটা করিয়ে রাখা যায়। আপনাদের মতামত প্রয়োজন। আকদের পরে ভালো সময় দেখে অনুষ্ঠান করে আপনার মেয়েকে ঘরে উঠাব। আপনারা কি বলেন?”

শরীফ সাহেব তার স্ত্রীর দিকে তাকালেন। পিয়ালি বেগম উৎসুক দৃষ্টিতে স্বামীর পানে চেয়ে আছেন। শরীফ সাহেব জায়েদ সাহেবকে বলেন,

“একটু অপেক্ষা করেন ভাইসাহেব। আমি আমার স্ত্রী ও ছেলের সাথে কথা বলে আপনাকে জানাচ্ছি।”

“আচ্ছা ভাইসাহেব। রাখি তাহলে। আল্লাহ হাফেজ।”

শরীফ সাহেবও বিদায় জানিয়ে ফোন রাখে। তারপর স্ত্রীকে বলেন,

“প্রিয়মকে ডাকো তো। কথা আছে।”

“কী বললেন তিনি?”

“তুমি আগে ডাকো প্রিয়মকে। বলছি সব।”

পিয়ালি বেগম ছেলেকে ডাক দিয়ে আনলেন। প্রিয়ম এসে জিজ্ঞেসা করে,
“বাবা, কিছু বলবে?”

“হ্যাঁ। জারিফের বাবা চাইছেন, শুক্রবার আকদ করিয়ে রাখতে। আমাদের কোনো আপত্তি আছে কিনা জানতে চাইলেন।”

“করুক না। সমস্যা কোথায়?”

প্রিয়মের জবাবে শরীফ সাহেব বলেন,
“আত্মীয়-স্বজনদের কী বলব? তাদের না জানিয়ে মেয়ের আকদ।”

প্রিয়ম বলে,
“তাদের বলবে যে দেখতে এসে আকদ হয়েছে। এখন মামাদের আর চাচা-ফুফুকে বলো। তারা যদি আসতে পারে আসবে। বাকিদের পরে জানালেও হবে।”

শরীফ সাহেব খানিক ভাবলেন তারপর জায়েদ সাহেবকে ফোন করে হ্যাঁ বলে দেন। এবার পিয়ালি বেগম বলেন,

“তাহলে আমি সেলিনা আপাকে (প্রিয়ার ফুফি) ফোন করে জানাই আর আমার ভাইদের কাল জানাবো। তুমি রফিক ভাইকে জানিয়ো। কিছুটা তোড়জোড় তো করতে হবে।”

প্রিয়ম বলে,
“শুধু দেখতে এসে বিয়ে করাবে। এতো কেনো চিন্তা করছো। মেয়েকে কি সেদিনই বিদায় দিবে!”

ছেলের মাথায় চা*টা মে*রে বলেন,
“তুই চুপ কর ব*ল*দ। যা কাজে লেগে পর।”

প্রিয়ম মাথা ডলতে ডলতে চলে যায়। পিয়ালি বেগম প্রিয়ার ফুপিকে ফোন লাগায়।

___________

প্রিয়াকে সকালে ভার্সিটির জন্য বেরোনোর আগে নাস্তার টেবিলে কথাটা জানালে প্রিয়া যেনো আকাশ থেকে টুপ করে পৃথিবীতে পরে এমন অবস্থা! প্রিয়া হতবাক কন্ঠে বলে,

“শুক্রবার! এতো জলদি কেনো? আরও কয়েকদিন পর করো। আমি কি ছেলেকে জানব চিনব না? এখনও দেখতেই পারলাম না।”

“শুক্রবার মন ভরে দেখিস। আমাদের সবার পছন্দ হয়েছে তাছাড়া রাহার পছন্দ আর তোর পছন্দ তো মিলে। রাহার জিজু পছন্দ হয়েছে। ছেলে দেখতে মাশাআল্লাহ্। তুই সেদিন দেখে নিজেই পছন্দ করে বসবি।”

”কিন্তু মা! যদি পছন্দ না হয়?”

“হবে দেখিস। ছেলে স্বল্পভাষী। খুব মনোযোগ দিয়ে তোর সব কথা শুনবে। তোর বকবকের বিপরীতে সে বকবক করবে না। ছেলের পরিবার কতো ফ্রেন্ডলি। ছেলের ভাবীটাকে আমার খুব ভালো লেগেছে। মেয়েটা খুব মিশুক। ঝামেলা হবে না তোদের। এতো পারফেক্ট ম্যাচ কই পাবি!”

প্রিয়া মুখ ভাড় করে নাস্তা করে উঠে গেলো। ওর মনে ভয় হচ্ছে। বিয়ের আগে বরকে নিয়ে কতো কল্পনা ঝল্পনা থাকে মনে। প্রিয়া এসব ভাবতে ভাবতে বাসে উঠে পরে। বাসে দেখা হয় তামান্নার সাথে। তামান্না প্রিয়াকে দেখে নিজের পাশে বসিয়ে হাসি কন্ঠে বলে,

“ভার্সিটিতে যাচ্ছো?”

“হ্যাঁ আপু। আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”

“এই একটু সামনের সুপার মার্কেট থেকে তুতুলের জন্য কিছু কিনব। বিয়ের শপিং হালকা পাতলা সেটা পরে করব মাকে নিয়ে।”

“ওহ। তুতুল কেমন আছে?”

“ও যা দুষ্ট। কী বলব। কাল যখন শুনেছে ওর চাচ্চুর বিয়ে তখন থেকে তোমার ছবি দেখে ছোটোমা বানিয়ে ফেলেছে। তোমাকে জ্বালাবে অনেক।”

প্রিয়া হাসে। তুতুলের ছবি দেখেই প্রিয়ার ওকে আদর করতে ইচ্ছে করছিল। তারপর ওদের মধ্যে টুকটাক কথা হয়। গন্তব্য আসলে তামান্না নেমে যায়।
#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১১
ভার্সিটিতে গিয়ে ফাঁকা লিফটে উঠে কাঙ্খিত ফ্লোরের বোতামে প্রেস করার পর লিফটের দরজা বন্ধ হচ্ছে হুট করে আধ বন্ধ হওয়া দরজা খুলে গেলো আর জারিফ লিফটে প্রবেশ করলো। প্রিয়া আচমকা জারিফকে দেখে থতমত খেয়ে সালাম দিয়ে চুপচাপ লিফটের কোনার দিকে চলে গেলো। জারিফের হুট করে হাসি পেলো কিন্তু হাসলো না। হাসি চেপে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে দরজার দিকে মুখ করে পকেটে হাত গুঁজে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কাঙ্খিত ফ্লোরে লিফট থামার পর জারিফ নেমে গেলো আর প্রিয়া হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো কিন্তু এদিকে সে বেমালুম লিফট থেকে নামার কথা ভুলে গেছে। লিফট উপরের ফ্লোরে উঠার পর নিজের কপাল চাঁ*পড়ে বিড়বিড় করে,

“সবই কপাল! ধ্যাত ভাল্লাগে না।”

এটা বলে উপরের ফ্লোরে নেমে গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলো অথচ সে লিফট দিয়েও নামতে পারতো!

সারাদিনের ক্লাস শেষে লাঞ্চ করে একটু হাত পা মেলে বসেছে। একটু পর বাড়ি ফিরবে। প্রিয়া আয়ানের দিকে তাকালো অতঃপর ওর পাণ্ডুর মুখশ্রী দেখে ভ্রুঁকুটি করে বলে,

“কী হয়েছে তোর? চোখ মুখ বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেনো?”

আয়ান জোরপূর্বক হেসে বলে,
“আরে কিছু না। ভাবছিলাম ক্লাস টেস্ট তো এসে পরছে কিন্তু পড়া হয়নি কিছু। তাই একটু…”

“পড় পড়। ব্রিলিয়ান্ট পোলা। তুই না পড়লে আমাদের কে দেখাবে!”

সবাই সমস্বরে হেসে উঠলো। রাদ ও সাদ আয়ানের হাসির আড়ালে লুকানো ব্যথা আন্দাজ করতে পারে। আরও কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়। বিষয়বস্তু প্রিয়ার বিয়ে। প্রিয়াকে শুক্রবার ছেলেপক্ষ আবার দেখতে আসবে আর ওর বিয়েতে কে কি পরবে সেসব। তারপর বাড়ির জন্য রওনা করে।

_________

পরেরদিন জারিফের ক্লাসে জারিফ প্রিয়াকে একটা পড়া বিষয়ক প্রশ্ন করলে প্রিয়া জবাব দিতে না পেরে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলে জারিফ গম্ভীর কন্ঠে বলে,

“ফাঁকিবাজি করলে চলবে না। পড়ালেখা ভালো করে করতে হবে। দেখতে দেখতে দুইটা উইক চলে গেছে। ক্লাস টেস্ট নিতে হবে সাথে মিড আসছে। সিম্পল পড়া ছিল এটা।”

তারপর প্রিয়াকে বসতে বললে প্রিয়া বসে বিড়বিড় করে বলে,
“আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। অতো পড়তে হবে না। পরীক্ষার সময় টুকটাক পড়ে নিবো। আর আমার গ্যাং তো আছেই।”

আবারও ক্লাসে মনোযোগ দিতে চাইল। জারিফ প্রিয়াকে আরেকবার দেখে পড়ানোতে মন দিলো। জারিফ মনে মনে ভাবে,

“এতো ফাঁকিবাজ মেয়ে আমার বউ হবে ভাবতেও অস্বস্থি হচ্ছে। তার রেজাল্ট খারাপ হলে আমি ডিপার্টমেন্টে কি বলব!”

______

আজ শুক্রবার। সকাল থেকে প্রিয়াদের বাড়িতে ভীড় লেগে আছে। প্রিয়ার মামা, চাচা, ফুফুরা এসেছে। সাথে ছোটো বড়ো কাজিনরা। প্রিয়ার এক বিবাহিত কাজিন ইফা, প্রিয়ার সাঁজ সজ্জার দায়িত্ব নিয়েছে যে কিনা প্রিয়ার ফুফাতো বোন। সকাল উঠিয়ে ওর মুখ, হাত-পায়ে কিসব ফেসিয়াল জিনিসপত্র লাগিয়ে বসিয়ে রেখেছে। রাহা প্রিয়ার এই অবস্থার ছবি তুলছে আর এই ঘর থেকে ওই ঘরে ঘুরছে। কাজিন চারটা ভাই যেগুলোর একটা প্রিয়ার থেকে একটু বড়ো আর দুইটা ছোটো। এগুলো ওর মামাতো ভাই আর আরেকটা প্রিয়মেরও বড়ো যে কিনা ওদের চাচাতো ভাই। তার বউ প্রিয়ার মা-চাচিদের সাথে রান্নার কাজে হাত দিয়েছে। আর কিছু পিচ্চি পিচ্চি বোন আছে সেগুলো ঘরময় দৌঁড়ে বেড়াচ্ছে।

প্রিয়া হাত-পা, মুখ ধুয়ে একেবারে গোসল সেরে এসে বলে,

“ইফাপু, আমি এসব আর লাগাবো না। শীতের মধ্যে আমাকে বারবার পানির ছোঁয়া লাগাতে হচ্ছে। আমি একটু ঘুমাবো। যাও তো তোমরা যাও। টেনশনে আমার কলিজা শুকিয়ে আসছে আর তারা আমার রূপচর্চা করছে!”

“একটু টুকটাক করেই এই অবস্থা! তাহলে অনুষ্ঠানের সময় সপ্তাহ জুরে যে পার্লারে দৌঁড়াতে হবে সেটা!”

“অতো পারব না বাবা! এখন তোমরা দয়া করে যাও। এতো উৎসবমুখর পরিবেশ দেখে মাথা ব্যাথা করছে। ঘুমাব একটু।”

ইফা প্রিয়াকে মেডিসিন নিতে বলে তার স্বামীর খোঁজ করতে চলে যায়। রাহা এসে প্রিয়ার পাশে বসে তারপর বলে,

“তোমার একটা দেবর থাকলে আমি সেটাকে বিয়ে করব। আহা! তারপর দুইবোনে মিলে মুভি দেখব।”

“আজকে যদি জামাই আমার পছন্দ না হয় তো আমি তোর মুভি দেখা জন্মের মতো ঘুঁ*চিয়ে দিবো মনে রাখিস। যা ভাগ।”

রাহা ঠোঁট উলটে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে একটু কান্নার অভিনয় করে বলে,

“সত্যি বলছি আপু, সবাই জিজুর ছবি দেখে বলেছে জিজু একটা ছেলে হুর!”

“ছেলে হুর! সেটা আবার কি?”

রাহার উদ্ভট কথার বিনিময়ে প্রিয়া প্রশ্ন করলে রাহা জবাব দেয়,

“আরে সুন্দর মেয়েদের হুরপরীর সাথে তুলনা করলে সুন্দর ছেলেদেরও ছেলেহুর বলাই যায়! নাহলে পরীরর মেইল ভার্সনটা জ্বি*ন! এখন হুরজ্বি*নের থেকে ছেলেহুর কথাটা মানায়।”

প্রিয়া বিরক্তিতে নিজের কপাল চেপে ধরে চিৎকার করে বলে,

“বের হ আমার রুম থেকে। এখন গিয়ে দোয়া-দুরুদ পড় যাতে তোর উপর ঝড় না বয়। বের হ।”

রাহা ভদ্র বাচ্চার মতো সুরসুর করে বেরিয়ে গেলো। প্রিয়া দরজা লক করে জানালার পর্দা টেনে বারান্দার দরজার পর্দা টেনে ভেজা চুলগুলো বালিশের উপর এলিয়ে দিয়ে কম্বল পেঁচিয়ে ঘুম দিয়েছে।

_______

জারিফের বাড়িতে অতো তোড়জোড় নেই। জায়েদ সাহেব তার ভাইকে জানিয়েছেন আর তার বোনকে একটু আগে জানিয়েছেন যে জারিফের জন্য মেয়ে দেখতে যাবেন। জারিফের ফুফি সেই রংপুর থাকেন। অতোদূর থেকে এখন চাইলেও আসতে পারবেন না। প্লেনে করে আসা গেলেও সেটা জমিলা বেগমের স্বভাব বিরুদ্ধ। জমিলা বেগম কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিজের কথার মাধ্যমে যা জায়েদ সাহেব নিজের বোনের কথায় বুঝেছে তাই আর আকদের কথাটা বলেননি।

জারিফের চাচা, খালা, মামারা এসেছেন। উনাদের ছেলে-মেয়েরা কেউ দেশের বাহিরে বা কেউ অনেক দূরে আছে চাকরিসূত্রে তাই জারিফের সব কাজিন আসতে পারেনি। দুইটা কাজিন ভাই যারা ইউনিভার্সটিতে পড়ে আর স্কুল পড়ুয়া একটা কাজিন বোন ফিহা এসেছে। জারিফ নিজের রুমে বসে কিসব কাজ করছে তাই ওকে কেউ বিরক্ত করছে না। তামান্না ফিহার কাছে তুতুলকে ধরিয়ে দিয়ে গোছগাছ করছে। জুম্মার পরপরই প্রিয়াদের বাড়িতে যাবে। তামান্নার মা-বাবা ও বড়ো ভাই এসেছেন। তামান্নার বড়োভাই এবার মাস্টার্সে পড়ছে সাথে জব করছে।

_______

জুম্মার নামাজের পর জারিফরা প্রিয়াদের বাড়িতে প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি ও বিভিন্ন রকমের মিষ্টান্ন ও ফল নিয়ে হাজির হলো সাথে কাজিও। প্রিয়াকে সাঁজাতে তামান্না ও ফিহা জিনিসপত্র নিয়ে প্রিয়ার ঘরে গেলো। প্রিয়াকে ডার্ক ওয়ান রঙের হালকা কাজের বেনারসিটা পড়ায়। তারপর হালকা সাঁজগোজ করিয়ে ড্রয়িংরুমে আনে। প্রিয়া মাথা নিচু করে চোখ-মুখ খিঁচে রেখেছে। বরের মুখ দেখবে তাই ভয় হচ্ছে। প্রিয়াকে জারিফের বরাবর সোফায় বসায়। জারিফের মা তরুণীমা বেগম প্রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

“মাশাআল্লাহ্। অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে মা। আমার ছেলেকে এবার দেখো। দুজনকে মানাবে ভালো।”

প্রিয়া আঁড়চোখে দেখতে চেষ্টা করলো। লজ্জায় মুখ তুলতে পারছে না। তামান্না অপেক্ষা করছে প্রিয়ার রিয়াকশনের। সে প্রিয়াকে শুনিয়ে জারিফকে বলে,

“জারিফ দেবরজি, তোমার দুলহান তো লজ্জায় তোমাকে দেখতে পারছে না। একটু লজ্জা ভাঙাও!”

রাহা, প্রিয়মরা হেসে উঠলো। জারিফ নামটা শুনে প্রিয়ার বুকের ভিতর ধক করে উঠে। তাড়াহুড়ো করে চোখ তুলে সামনে তাকিয়ে নিজের চোখকে বিশ্বাস করা যেনো গলার কাঁ*টা মনে হচ্ছে। সামনে তার ডিপার্টমেন্টের স্যারকে দেখে অক্ষিগোলক কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। এদিকে জারিফ ভাবশূণ্য! সে প্রিয়ার সাথে একবার চোখাচোখি করে নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে আছে। যেনো যা হচ্ছে তা কোনো অবাক বা হতবাক করা বিষয়ই না।

জারিফের বাবা কাজিকে বলে উঠেন,
“কাজি সাহেব, বিয়ে পড়ানো শুরু করেন।”

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।
চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here