হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব -৮+৯

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৮
প্রিয়ম ফোনটা হাতে নিতেই আবারও জারিফের কল এলো। কল রিসিভ করলে জারিফ অপর প্রান্ত থেকে বলছে,

“মা-বাবা ও ভাবি নাকি কাল তোদের বাড়ি গিয়ে তোর বোনকে পছন্দ করে এসেছে। জানিস তুই?”

“হ্যাঁ। বাবা খাবারের টেবিলে বলল। অবাক হয়ে গেছি আমি। কী থেকে কী হলো!”

জারিফ চিন্তিত সুরে বলল,
“মা যে হুট করে এমন করবে ভাবনায়ও আসেনি। কী করব এখন?”

প্রিয়ম জারিফের কথার ধাঁচ না বুঝে জিজ্ঞেস করে,
“তোর অন্যকাউকে পছন্দ আছে? থাকলে মানা করে দে। আমি তোর বেস্টফ্রেন্ড বলে যে তোকে বাধ্য হতে হবে এর কোনো কারণ নেই।”

জারিফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আরে না। আমার কারও সাথে এসব প্রেমঘটিত সম্পর্ক নেই। না কানাডা যাওয়ার আগে ছিল আর না এখন আছে। ভাবি আমার ফোনে তোর বোনের ছবি দিয়েছে। এখনও দেখিনি কিন্তু তোর বোন নাকি আমাকে দেখতে চায় না। আমাকে তার পছন্দ না হলে তো পরে আফসোস করবে।”

“আমি এখনও ওকে জিজ্ঞেস করিনি। বাবা বলেছে তোকে কাল বাড়িতে নিয়ে আসতে। তোর যদি বিয়েতে অমত থাকে তাহলে বিনাসংকোচে মানা কর।”

“ভেবে দেখি।”

জারিফ ফোন রেখে ভাবির দেওয়া ছবিটা দেখছে। মেয়েটাকে তার ভালোই লেগেছে। আর বেস্টফ্রেন্ডের বোন। জারিফ তার মাকে গিয়ে জানায়,

“তোমাদের যদি ফারদার ভালো লাগে তবে আগাও। আমার অপছন্দ হয়নি।”

জারিফের মা বেজায় খুশি। সে খুশি হয়ে ছেলের কপালে চুমু দেন আর বলেন,

“তবে সামনের শুক্রবার গিয়ে তোকে নিয়ে দেখে আংটি পড়িয়ে আকদ করে আসব।”

জারিফ “আচ্ছা” বলে চলে যায়। প্রিয়ার ছবি দেখেও জারিফ চিনতে পারেনি কারণ জারিফ সেদিন বাসে বসা মেয়েটার চেহারা ভালো করে লক্ষ্য করেনি। আর ছবিতে দেখলেও অনেক সময় চেনা মানুষকেও চেনা যায় না।

_____________

প্রিয়ারা সকালের ক্লাসটা করে ক্যাম্পাসে বসেছে। নিশি আজ পুডিং বানিয়ে এনেছে তা নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে গেছে কিন্তু প্রিয়া পুডিং অতোটা পছন্দ করে না। সর্বোচ্চ ছোটো এক পিস খেতে পারে কিন্তু আজ খেতে ইচ্ছেই করছে না। নিশি প্রিয়াকে কয়েকবার খাওয়ার জন্য বলেও লাভ হয়নি। প্রিয়া আনমনে কিছু একটা চিন্তা করছে। মিম ওকে ডেকে বলে,

“কীরে তুই কই হারালি?”

হকচকিয়ে উঠে প্রিয়া। আমতা আমতা করে বলে,
“কই? কোথাও নাতো!”

সাদ রম্য স্বরে বলে,
“মনে হয় জামাইয়ের দুঃখে বান্ধুবী আমার বৈরাগী হয়েছে।”

পুরো বন্ধুমহল হেসে উঠলো। অর্ষা উদাসী কন্ঠে বলে,
“কবে যে একটা জামাই হবে? আর কবে তার পকেট ফাঁকা করব! এই চিন্তায় আমি দিনরাত ঘুমাতে পারিনা কিন্তু তোর কী হলো রে প্রিয়া? তুই তো আমার মতো বিয়ে পা*গলী না।”

প্রিয়া ভাবলেশহীন কন্ঠে বলে,
“বিয়ে পা*গলী নই বলেই তো আমার বিয়েই আগে ঠিক!”

সবাই গোল গোল চোখ করে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়া ওদের চাহনি দেখে লম্বাশ্বাস নিয়ে বলে,

“তোরা ঠিকই শুনছিস। পরশু ভাইয়ার বন্ধুর পরিবার এসে দেখে গেছে। তোদের জানাতে পারিনি কারণ তখন আমি বুঝতে পারছিলাম না। রাতে ভাইয়া এসেছিল তার বন্ধুর ছবি দেখাতে কিন্তু রাহা আমাকে দেখতে দিলো না। রাহার ভাষ্যমতে, রাহার যদি পছন্দ হয় তবে বিয়ে হবে কারণ রাহার ও আমার সব ক্রা*শ সেম! এদিকে ভাইয়ার বন্ধু রাহার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। আর ছেলের বড়োভাইকে দেখেছি। রাহা বলল, ছেলে তার বড়ো ভাইয়ের থেকেও সুদর্শন। ছেলের ব্যাকগ্রাউন্ডও ভালো। ভাইয়ার বেস্টফ্রেন্ড তো।”

হতবাক কন্ঠে মিম বলল,
“তো তুই দেখবি না?”

“না। আমার বিয়েতে আপত্তি নেই আর রাহার পছন্দেও না। রাহার কথামতো সত্যি একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে। ছেলেকে না দেখে আজকাল কেউ বিয়ে করেনা কিন্তু আমি করব।”

সবাই প্রিয়াকে অভিনন্দন জানাচ্ছে আর হেসে হেসে কথা ও পিঞ্চ তো আছেই। কিন্তু একজনের মনে আষাঢ়ের কালোমেঘে ছেয়ে গেছে। রাতের অমানিশায় আচ্ছন্ন তার হৃদয় অন্তরিক্ষ। সেই কেউটা আয়ান। ভার্সিটির ফার্স্ট দিন থেকে প্রিয়ার প্রতি নিজের মনে দুর্বলতা অনুভব করে সে কিন্তু বন্ধুত্বের খাতিরে সে সব চেপে গেছে কারণ প্রিয়া জীবনে রিলেশনশিপ নামক প্যারা নিতে চায় না। আয়ান প্রিয়ার মুখশ্রীতে এক আলাদা ভয়, এক্সাইটমেন্ট ও লাজুকতা দেখল। হৃদয়ের র*ক্তক্ষরণ সে আর কাউকে বোঝাতে পারবে না। সাদ ও রাদ আয়ানের দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে। আয়ানের পাণ্ডুর মুখশ্রী তাদেরকে হৃদয়ের ভাঙন বুঝাচ্ছে। আয়ান ওদের উদ্দেশ্যে জোরপূর্বক মলিন হাসে। ওরাও বিনিময়ে হেসে আয়ানকে টেনে দূরে নিয়ে গিয়ে রাদ হড়বড়িয়ে বলে,

“তুই বললি না কেনো? তুই তো প্রিয়াকে ভালোবাসিস।”

“নারে। আমার বাড়িতেও এখন বিয়ে মানবে না আর প্রিয়া আমাকে বন্ধু ছাড়া অন্যকিছু ভাবে না। ওর চোখে-মুখে তোরা লাজুকতা দেখেছিস? ও সবসময় এরেঞ্জ ম্যারেজ প্রিফার করতো। নাহলে বল? ছেলের ছবি না দেখেও কতোটা লাজুক আভা ওর মুখাবয়বে।”

সাদ আয়ানের কাঁধে হাত রেখে বলে,
“সহ্য করতে পারবি? আমাদের ভার্সিটি লাইফ কিন্তু সবে শুরু। আরও সাড়ে তিন বছর প্রিয়া তোর চোখের সামনে ঘুরবে। সে খুশিও থাকবে। পারবি সহ্য করতে?”

আয়ান মলিন হেসে বলে,
“পারব। আমি অতোটা এক্সপ্রেসিভ না। যদি হতাম তবে প্রিয়া বুঝতো। আশাকরি তোরাও এই ব্যাপারে আর কথা বাড়াবি না। আমি ভেবেছিলাম প্রিয়ার পরিবার ওকে অনার্সের পর বিয়ে দিবে। আমি এখানে দুই বছর পড়ার পর ক্রেডিট ট্রান্সফার করে এব্রোডে চলে যাবো। আমার রেজাল্ট ভালোই। সবই হবে প্রিয়াকে ছাড়া।”

বিষণ্ণতা ও খুশি দুইটাই ছোঁয়াচে। একজনের থেকে অন্যজনে বহন করে। প্রিয়ার লুকানো খুশিতে যেমন নিশি, মিম, অর্ষা খুশি তেমনিভাবে আয়ানের বিষন্নতায় সাদ, রাদ বিষন্ন।

________
জারিফ ক্লাসে এসে পড়ানো শুরু করেছে। খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে পড়াচ্ছে। পড়াতে পড়াতে স্টুডেন্টদের দিকে নজর যাবেই। সবাইকে বোর্ডের লেখাটা লিখতে বলে হঠাৎ নজর গেলো কর্নারের সারির চার নম্বর চেয়ারে। মেয়েটার চেহারা পরিচিত লাগছে কিছুটা। এই ক্লাসের স্টুডেন্ট যেহেতু পরিচিত হওয়া স্বাভাবিক কিন্তু ক্লাসে দেখেছে বলে মনে পরছে না। প্রিয়া খাতায় লিখতে লিখতে জারিফের দিকে তাকালে ভয় পেয়ে যায়। জারিফ সরু দৃষ্টিতে প্রিয়ার দিকে তাকানো। প্রিয়া আজ মাস্ক পরেনি। ভেবেছে সপ্তাহখানেকের মধ্যে নিশ্চয়ই জারিফ বাসের ঘটনাটা ভুলে যাবে। এখন জারিফের চাহনি দেখে প্রিয়া কাশি আসার ভান করে ব্যাগ থেকে দ্রুত মাস্ক বের করে পরে নেয়। জারিফও প্রিয়ার অস্থিরতা ও অপ্রস্তুত হতে দেখে নজর সরিয়ে আবার বোর্ডে মনোযোগ দেয়।

প্রিয়া এরপর এটেন্ডেন্সের সময়ও কোনোমতে এটেন্ডেন্স দিয়ে বাঁচে। জারিফ প্রিয়ার নামটা মনে রাখে। জারিফ ক্লাস থেকে বের হয়ে যাবার পর প্রিয়া বলে,

“ধুর! কী হলো এটা!”

নিশি বলে,
“কী হলো?”

“আমি তো ভেবেছি এক সপ্তাহের মধ্যে বেটা ভুলে যাবে কিন্তু এখন দেখি সে সরু নজরে আমার দিকে দেখছিল। কেমন সন্দেহের দৃষ্টি ছিল স্যারের।”

মিম হাই তুলতে তুলতে বলে,
“সে কী এমনে এমনে টিচার হইছে? তাদের চোখ-কান সর্বদা খোলাই থাকে। যেহেতু সে তোকে কিছু বলেনি তাই নিশ্চিন্তে থাক। কিচ্ছু হবে না। সেও বুঝবে যে তুই না জেনে করেছিস।”

প্রিয়া চুপ করে বসে রইল। চিন্তা তার কিছুটা হলেও হচ্ছে।
#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৯
জারিফ নিজের অফিসরুমে বসে ফোনে প্রিয়ার ছবি দেখছে যেটা গতকাল ভাবী দিয়েছিল। গতকাল মেয়ের নামটাও ‘প্রিয়া হাসান’ শুনেছিল আর আজকে ক্লাসে স্টুডেন্ট প্রিয়াকে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল। জারিফ প্রিয়মকে ফোন করলো।
প্রিয়ম অফিসে কম্পিউটারে কাজ করছিল আর কফি খাচ্ছিলো। দুপুরের খাবার খেয়ে এসে কফি না খেলে চোখে রাজ্যের ঘুমেরা এসে ভর করে। ফোন তার ভাইব্রেশন মুডে। ফোনের ভাইব্রেশনে টেবিলে কম্পন সৃষ্টি হওয়ায় প্রিয়ম ফোনটা নিয়ে দেখলো জারিফের কল। রিসিভ করে বলে,

“হ্যাঁ দোস্ত বল।”

“তোর বোন কোন ভার্সিটিতে পড়ে? আর কোন ডিপার্টমেন্ট?”

প্রিয়ম ভার্সিটির নাম বলে তারপর বলে,
“কেনো? কী হয়েছে?”

“তুই এটা আমায় আগে বলবি না?”

প্রিয়ম কপাল কুঁচকে চোখ ছোটো করে খানিক ভাবলো অতঃপর আপনাআপনি তার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল।

“তার মানে! তুই প্রিয়ার ডিপার্টমেন্টের স্যার?”

জারিফ ইতোমধ্যে কপালে হাত ঘষছে। প্রিয়ম বলে,

“তাহলে বিয়েটা ক্যান্সেল করে দে। তোর ঝামেলা হতে পারে। আমি আমার পরিবারকে ম্যানেজ করে নিবো। নো টেনশন।”

জারিফ ভাবুক স্বরে বলে,
“আমি ভেবে নেই। বাসায় বলি তার আগে তুই কাউকে বলিস না। প্রিয়াকেও না।”

“আচ্ছা ভেবে জানা।”

“ওকে রাখছি।”

জারিফ ফোন রেখে দুই হাতের ওপর কপাল ঠেকিয়ে ভাবতে লাগল। লাঞ্চ করতে যায় সে। টিচার্স মিটিং রুমে কেউ চাইলে লাঞ্চ করতে পারে। জারিফ সেখানেই গেলো। সেখানে দুয়েকজন সিনিয়র কলিগদেরও পেলো। উনাদের সাথে হাই, হ্যালো করে লাঞ্চ সেরে নেয়। লাঞ্চ শেষে সেখানে চেয়ারপার্সন স্যার এলে জারিফকে দেখে বলেন,

“কী ব্যাপার জারিফ? তোমাকে স্ট্রেসে লাগছে।”

চেয়ারপার্সন স্যার অনেকটাই বয়স্ক। জারিফ উনাকে সালাম দিয়ে বলে,

“নাথিং স্যার। অ্যাই অ্যাম ফাইন।”

“উহুম। কিছু তো হয়েছে। ইউ ক্যান শেয়ার উইথ আস। দেয়ার ইজ সামথিং হুইচ উই ক্যান্ট শেয়ার উইথ আওয়ার ফ্যামিলি বাট দ্যাট উই ক্যান শেয়ার উইথ আওয়ার কলিগ। রাইট?”

জারিফ সৌজন্য হাসলো। অন্য দুইজন কলিগও সায় দিলে জারিফ বলে,

“একচুয়ালি আমার বিয়ে ঠিক হচ্ছে।”

“ওয়াও দ্যাটস নাইস। একটা দাওয়াত পাচ্ছি। কনগ্রেটস!”

চেয়ারপার্সন স্যারের উচ্ছাসতায় আলতো হাসে জারিফ। অন্য কলিগরাও শুভেচ্ছা জানায়। জারিফ এবার তাদের ধন্যবাদ দিয়ে বলে,

“আমার ফ্রেন্ডের বোনের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিক করছে। মেয়েকে আমি এর আগে দেখেছি বলে মনে পরছে না। এমনকি মেয়েও আমাকে দেখেনি এবং বিয়ের আগে দেখতে চায় না এমনটাই জানিয়েছে।”

এক কলিগ বলে উঠে,
“একে অপরকে না দেখে বিয়ে করবেন? ব্যাপারটা রোমাঞ্চকর কিন্তু একটা কিন্তু থেকে যায়।”

“হ্যাঁ তবে তার ছবি দেখে গতকাল রাতে আমি মত দিয়েছি কিন্তু আজকে…!”

“আজকে কী জারিফ সাহেব?”

জারিফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“তাকে আমি আমার ক্লাসে দেখেছি। গত এক সপ্তাহের ক্লাসে ‘প্রিয়া হাসান’ নামের মেয়েটি নিজের ফেস কাভার করে রেখেছিল বিধায় তার ফেস আমার আননোওন ছিল। আজ তার ফেস কাভার ছিল না। আর আজকেই দেখলাম সে সেই মেয়েটা যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হচ্ছে।”

পিনপতন নিরবতায় ছেঁয়ে গেলো রুমে। হুট করে চেয়ারপার্সন স্যার শব্দ করে হেসে উঠলেন সাথে অন্যরাও। তিনি বললেন,

“এটা ভবিতব্য ছিল বলেই এক সপ্তাহ তাকে তুমি দেখোনি। আর বিয়েতে মত দেওয়ার পর জানলে। তাছাড়া মেয়েও তোমাকে দেখতে চায় না।”

জারিফ বিচলিত কন্ঠে বলল,
“কিন্তু স্যার! এটা কেমন একটা দেখায়।”

অন্য এক কলিগ বলল,
“কেমন দেখায়? আমার ওয়াইফ আমার মাস্টার্সের ছাত্রী ছিল। এটা কোনো ফ্যাক্ট না। দুটো মানুষ ও দুটো পরিবার যদি রাজী থাকে তাহলে বহিরাগতদের কথা চিন্তা করা মূর্খতা। আপনি এটার জন্য বিয়ে করবেন না! সেটা বাজে লাগবে। বিয়ে না করেও যখন ওই মেয়ের ক্লাস নিবেন তখন আপনি নিজে আরও বেশি অপ্রস্তুত হবেন।”

জারিফ শুনলো। এবার চেয়ারপার্সন স্যার বলেন,
“তুমি পরের সেমিস্টার থেকে প্রিয়া যদি তোমার সাবজেক্টে পরে তবে যেই সেকশনে সে থাকবে সেই সেকশন তুমি সুইচ করে অন্যজনকে দিবে। জাস্ট সিম্পল। চাইলে তুমিও নিতে পারো। এতে আমাদের কোনো প্রবলেম নেই।”

জারিফ কিছুটা আশ্বস্ত হলো। স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল। চেয়ারপার্সন স্যার মুচকি হেসে বলেন,

“দেখলে, শেয়ার করাতে তোমার প্রবলেম কতো দ্রুত সমাধান হয়ে গেলো? শেয়ারিং ইজ কেয়ারিং।”

জারিফ বিনিময়ে নম্র হাসলো। তারপর উনাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলো। প্রিয়মকে মেসেজ করে দিলো,

“কাউকে জানানোর প্রয়োজন নেই যে আমি তোর বোনের ডিপার্টমেন্টর লেকচারার। সময় সবটা জানাবে।”

টেক্সট সেন্ড করে হাসলো কিন্তু প্রিয়ার মুখ লুকানোটা ঠিক বুঝতে পারলো না।

_____________

শীতল হাওয়া সাথে ধোঁয়া উঠানো কফি নিয়ে গায়ে শাল জড়িয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে বারান্দায় বসে আঁধার অম্বরে চন্দ্রমার লুকোচুরি দেখছে প্রিয়া। হেডফোনে বাজছে ‘শ্রেয়া ঘোষালের’ আমার একলা আকাশ থমকে গেছে গানটা। খনে খনে চোখ বন্ধ করে গানটা অনুভবও করছে।
এদিকে প্রিয়ম ও জারিফ যে গেইট দিয়ে ঢুকেছে তাতে ওর বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। প্রিয়ার বারান্দাটা সামনের দিকে হলেও প্রিয়া দক্ষিণামুখী চেয়ারে বসে আছে আর বাড়িটা পূর্বমুখী।

জারিফকে প্রিয়ার মা সাদরে ভিতরে আনলো। প্রিয়ার দরজায় দুয়েকবার টোকা দিয়েও লাভ হলো না কারণ প্রিয়া কিছুই শোনেনি। প্রিয়ার ফোনও ফ্লাইটমুডে। জারিফের সাথে কথা বলতে প্রিয়ার বাবা আসেন। জারিফ তাকে নম্রভাবে সালাম দেন। শরিফ সাহেব সালামের জবাব দিয়ে জারিফের সাথে কুশলাদি সেরে অনেক কিছু জিজ্ঞেসা করলেন। তিনি জানতে পারলেন জারিফ তার মেয়ের ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক। তিনি বললেন,

“এতে কোনো সমস্যা হবে না?”

“আঙ্কেল আজকেই এটা জানতে পারি আমি তারপর চেয়ারপার্সন স্যার ও সিনিয়র দুয়েকজন কলিগের সাথে কথা হয়। তারা বলেছে, সমস্যা হবে না।”

জারিফের উত্তরে প্রিয়ম ফ্রেশ হয়ে এসে ওর পাশে বসে বলে,

“আরে বাবা, তোমার মেয়ে তো জারিফকে বিয়ের আগে দেখবে না বলেছে। তাহলে একদিক দিয়ে ভালোই হয়। মেয়ে তোমার জানতে পারলো না।”

বলেই হেসে দিলো। জারিফও হালকা হাসলো। শরীফ সাহেব বলেন,
“ওটা তো রাহার দুষ্টামি। সত্যি কী সে দেখবে না?”

“বলল তো তাই। রাহার সাথে সেও এক্সাইটেড। আমরাও ওকে জানাবো না যে জারিফ ওর স্যার। বিয়ের পর দেখা যাবে। তোমার ফেলটুস মেয়ে এবার যদি পড়ালেখায় সিরিয়াস হয়!”

সবাই হাসলো। প্রিয়ার মা নাস্তা এনে হাজির করলেন। তিনি জিজ্ঞেসা করলেন,

“কী নিয়ে হাসাহাসি হচ্ছে? তুমি কিছু নেও বাবা।”

জারিফকে খেতে বললেন তিনি। প্রিয়ম তার মাকে শর্টকাটে সবটা বললে তিনি অবাক প্লাসে হাসেনও। প্রিয়াকে বললে প্রিয়া যে হা*ঙ্গামা করবে তা তিনিও জানেন তাই তিনি কথাটা চেপে গেলেন যেহেতু প্রিয়া ছেলেকে বিয়ের আগে দেখবে না বলেছে।
আরও কিছুক্ষণ থেকে জারিফ ও প্রিয়ম বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল। প্রিয়া তখন বারান্দার সামনের দিকে ঘুরে দুইটা অবয়বকে বেরিয়ে যেতে দেখল। কান থেকে হেডফোন খুলে এবার রুমের বাহিরে মগ রাখতে গেলো সাথে ফ্রিজে কিছু আছে নাকি খুঁজতে গেছে। ড্রয়িংরুম থেকে মাকে খাবারের প্লেট আনতে দেখে প্রিয়া ভ্রুঁ কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

“মা, কেউ এসেছিল?”

প্রিয়ার মা হাতের কাজ করতে করতে বলেন,
“হ্যাঁ। তোর মতো গ*ন্ডা*রের চা*ম*ড়া তো সবার না! ঘরের ভিতর ঢুকলে দিন-দুনিয়ার খবর থাকে না। মেহমান এসে চলেও গেছে।”

প্রিয়া ঠোঁট উলটে বলে,
“আমাকে না জানালে জানব কী করে? কে এসেছিল?”

“তোর ভাইয়ের বন্ধু। যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক।”

প্রিয়া অবাক হয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে হড়বড় করে বলে,
“আমায় ডাকোনি কেনো? দেখতাম ছেলেকে।”

পিয়ালি বেগম এবার মেয়ের মা*থায় ঠু*য়া মে*রে বলেন,

“তোর আর দেখতে হবে না। একদম বিয়ের আসরে দেখবি।”

এটা বলে তিনি রান্নাঘরে চলে গেলেন আর প্রিয়া ঠোঁট উলটে সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে পানি খেয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here