#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৪
জারিফ বিকেলে ব্যালকনিতে বসে একটা নভেল পড়ছে। ইংরেজি নভেল “ম্যান সার্চ ফর মিনিং”। বইটার রাইটার “ভিক্টর ফ্রাঙ্কল”। বইটি ১৯৪৬ সালে পাবলিশড হয়েছিল। এটি মূলত, দ্বিতীয় বিশ্বযু*দ্ধের সময় নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দী হিসেবে তার অভিজ্ঞতা ও তার সাইকোথেরাপিউটিক দিকটি নিয়ে বিশদ বিবরণ দেওয়া। যা জীবনের ইতিবাচক অনুভূতির জন্য উদ্দেশ্যকে বুঝায় তারপর সেই ফলাফল কল্পনা করে জীবনকে বুঝে (বইটি সম্পর্কে গুগল থেকে তথ্য নিয়েছি)। বই পড়ার সাথে এক কাপ ধোঁয়া উঠা চা! আহা! শীতের বিকেল, সূর্য ডুবে যাচ্ছে। বড়ো বড়ো কয়েকটা গাছে আড়ালে আরক্তিম দিবাকর তার দিনের শেষ কিরণ ছড়াচ্ছে। গায়ে হুডি জড়ানো অবস্থায় সময়টা সত্যি মনোমুগ্ধকর।
একটু আগেই জারিফের ভাবি এসে ওকে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে গেছে। জারিফ কফি চেয়েছিল কিন্তু ওর ভাবি মালাই চা ধরিয়ে দিয়ে বলে গিয়েছে,
“শোনো দেবরজি, এই বিকেলবেলা চা খাও। কফি তুমি অন্য যেকোনো সময় খেও। বইয়ের সাথে চা দারুন মানাবে।”
জারিফ আর কথা বাড়ায়নি তখন। মুচকি হেসে ভাবির হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। চায়ের স্বাদ নিয়ে বুঝলো, সত্যি সময়টা সুন্দর ও উপভোগ্য লাগছে।
____________
বাসে লোকজনের ভীড়ের সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে প্রিয়া সন্ধ্যায় বাড়ি পৌঁছালো। নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় টান টান হয়ে শুয়ে পরেছে। বাসে উঠতেই তার দফারফা। ওর বাবা একজন কৃপণ ব্যক্তি। যার কারণে তিনি গাড়ি কিনতে ইচ্ছুক না। তবে প্রিয়ার বড়ো ভাই প্রিয়মের ইচ্ছে আছে কিন্তু সে সবে মাস্টার্স কম্পিলিট করে জবে ঢুকেছে। সে আগে থেকেও পার্ট টাইম জব করতো কারণ মাস্টার্সের ক্লাস তো রাতে হতো। প্রিয়ার মা এসে ওকে এমন ভাবে চিৎপটাং হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে বলেন,
“যা হাত মুখ ধুয়ে আয়। উঠ। মাগরিবের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।”
প্রিয়া আলসেমি ছেড়ে উঠে হাত-মুখ ধুয়ে নিলো। আসরের নামাজের সময় হতেই ভার্সিটিতেই পড়েছিল। নামাজটা পড়ে আবার রেস্ট করবে। প্রিয়ম বাড়ি না ফেরা অব্ধি প্রিয়া ঘুমাবে। প্রিয়ম বাড়ি ফিরলেই শুরু হবে ক্যা*টফা*ইট! নামাজ পড়ার পর ওর মায়ের ডাকে কাঁদো কাঁদো ফেস করে রান্নাঘরে গেলে ওর মা বলে,
“যা চা বানা। তারপর পাকোড়া গুলো ভে*জে নিবি। প্রিয়ম চলে আসবে।”
প্রিয়া চোখ মুখ সংকুচিত করে বলে,
“চা পরে বানাবো। এখন চা খেলে আমি ঘুমাবো কিভাবে? তোমার ছেলের আসতে আরও ঘণ্টাখানেক বাকি। তোমার পাকোড়াতো মাখানোও হয়নি। পরো বানাবোনে। একটু মেরিনেট হয়ে থাক এগুলো।”
প্রিয়ার মা প্রিয়া মা*থায় চা*টা মেরে বলে,
“বল*দি কোথাকার! পাকোড়া মেরিনেট করে রাখলে পানি ছেড়ে দিবে। সাথে সাথে ভা*জতে হয়। যা ভাজ।”
প্রিয়া মা*থায় হাত দিয়ে ঠোঁট উলটে মায়ের দিকে তাকালো কিন্তু বিশেষ লাভ হলো না। তিনি চোখ রাঙিয়ে চলে গেছেন। প্রিয়া আর কি করবে! চা বানিয়ে বাবা-মাকে দিয়ে নিজেও খেলো তারপর পাকোড়া মাখিয়ে ভাজতে শুরু করলো।
__________
রাতে জারিফের বাবা খাবার টেবিলে জারিফকে বলেন,
“সন্ধ্যায় তোমাকে খুঁজলাম কিন্তু তুমি নাকি বেরিয়েছিলে। এই দশ-পনেরো দিন তো কোথাও গেলেও না। তা কোথায় গিয়েছিলে?”
জারিফ মুখের খাবারটা গিলে বলে,
“এই একটু বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। এই কয়দিন অনেক কাজের কারণে বেরোনো হয়নি। আজ ভাবলাম বেরোই।”
জারিফের বাবা বলেন,
“আমি তো ভেবেছিলাম, তুমি দেশে এসে খুশি না। তাই হয়তো ঘর থেকে বেরোতে না।”
জারিফ খাওয়া থামিয়ে বাবার দিকে তাকায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“তোমাদেরই ইচ্ছে ছিল আমি বাহিরে গিয়ে পড়ি। বুয়েটে ‘ওয়াটার রিসোর্সেস’ পেয়েছিলাম তারপর আমায় তুমি কানাডাতে পাঠিয়ে দিলে সিএসসি পড়তে। এখন আমি সেখান থেকে পিএইচডির অফার রিজেক্ট করে এসেছি তাও তুমি এই কথা বলো?
জারিফের বাবা জাবেদ সাহেব হতাশ স্বরে বলেন,
“কানাডাতে পড়তে গেছো ঠিক আছে কিন্তু আমি চাই না আমার ছেলে সারাজীবন দূরে থাকুক। পিএইচডি কয়েক বছর পরে করলেও তো হবে। স্টাডি লিভে গেলেও পারবে। কিছুদিন দেশে থাকো।”
জারিফ কিছু বলল না তখন। খাওয়া শেষে জারিফ বলে যায়,
“আসলে তোমরা ভেবেছিলে, আমি মারিয়াকে বিয়ে করে কানাডা সেটেল হবো! মারিয়া আমার গুড ফ্রেন্ড। নাথিং এলস। সেটেল হওয়াল হলে আমি এমনিতেই হতে পারব।”
জারিফ নিজের রুমে চলে যায়। জাবেদ সাহেব চুপচাপ খেয়ে উঠে পরেন। সত্যি সে এবং বাকিরা ভেবেছিল মারিয়াকে বিয়ে করবে জারিফ। জারিফের ফেসবুকে প্রায় সব পোস্টেই মারিয়া থাকেই। তাই তারা ছেলেকে ডেকে আনেন।
কিছুক্ষণ পর জারিফের রুমের দরজায় খটখট শব্দ হয়। জারিফ দরজা খুলে দেখে ছোটো তুতুল তার বই নিয়ে এসেছে। জারিফকে দেখে ডাগর ডাগর চোখে তাকিয়ে হেসে বলে,
“চাচ্চু, আমাকে একটু পড়াবে? আমি খুব ভালো পড়তে পারি জানো?”
জারিফ মুচকি হেসে চার বছরের তুতুলকে কোলে তুলে নেয়। তারপর বিছানায় বসিয়ে বলে,
“কী পড়বে বলো? আমি তো জানি তুতুল সোনা সব পারে।”
“হুম হুম। পারি তো। কিন্তু এখন যুক্তবর্ণ শিখবো।”
জারিফ হালকা ঢোক গিলে। বাংলা তার প্র্যাকটিস নেই। এখন ভাইপোকে পড়াতে হবে। জারিফ ভয়ে ভয়ে পড়াচ্ছে যাতে ভুল না হয়।
__________
পরেরদিন,,
প্রিয়া আজকে বোরখা পরে ভার্সিটিতে এসেছে। ওকে দেখে এক দেখায় চেনার উপায় নেই। ক্যাম্পাসে গিয়ে অর্ষার পাশে গা ঘেষে ধ*পাস করে বসে পরলে অর্ষা হকচকিয়ে উঠে। অর্ষা বলে উঠে,
“এই কে আপনি? আমার গা ঘেষে বসলেন কেনো? ওইদিকে তো আরও জায়গা আছে। সেখানে বসেন।”
প্রিয়া এবার অর্ষাকে ঠু*য়া মে*রে মাস্ক নামিয়ে বলে,
“আমি প্রিয়া। চিনতে পারলি না ব*ল*দি!”
প্রিয়ার কথায় অর্ষা তো অবাক হয়েছেই সেই সাথে বাকিরাও। মিম নিজের জায়গা থেকে উঠে এসে অবাক কন্ঠে বলে,
“এই তোরে জ্বি*নে ধরছে? রাতারাতি বোরখা! বোরখা পরা ভালো কিন্তু এক রাতের মধ্যে কি এমন হলো?”
প্রিয়া বিরক্তি নিয়ে বলে,
“স্যারের হাত থেকে বাঁচার উপায়। এটা ইশা আপুর বোরখা। কালকে ভাইয়াকে ব্ল্যা*কমেইল করে ইশা আপুর থেকে বোরখা নিয়েছি। আমি তো বোরখা পড়ি না। বাসায় যাওয়ার পথে ফিরিয়ে দিবো আবার।”
আয়ান বলে,
“ধা’র করার থেকে একটা কিনেই নিতি। তোকে যদি স্যারের থেকে এভাবে লুকিয়ে থাকতে হয় তবে কতোদিন এভাবে বোরখা ধা’র করবি?”
“দেখি কতোদিন।”
নিশি এবার হাসতে হাসতে বলে,
“কিন্তু আজ তো জারিফ স্যারের ক্লাস নেই! বোরখাটা তোর কালকে লাগবে। কালকে আবার সকাল সাড়ে আটটায় ক্লাস। অতো সকালে বোরখা নিতে ইশা আপুর বাড়িতে যাবি?”
প্রিয়া এবার ঠোঁট উলটে তাকিয়ে আছে। পরে হতাশ স্বরে বলে,
“যাহ! পরবো না। এমনেও আমি বোরখাতে কম্ফোর্টেবল না।”
বন্ধুরা প্রিয়ার অসহায় চাহনিতে কিছুক্ষণ হাসাহাসি করে ক্লাসে চলে যায়।
ক্লাস শেষে করিডোর দিয়ে কথা বলতে বলতে হাঁটছিল তখন জারিফকে আসতে দেখে প্রিয়া ওয়াশরুমের ভিতর ঢুকে পরে। আজকে যেহেতু ক্লাস নেই তো সে জারিফের সামনে পরতে ইচ্ছুক না। জারিফ ওর মতো ক্লাসে চলে গেছে। প্রিয়ার এসব লুকোচুরি দেখে এবার ওরা বিরক্ত। এতো ভয়ের মতো কাজও তো করেনি। প্রিয়া ওদের চেহারর ভাবগতি দেখে আমতা আমতা করে বলে,
“আসলে আমার ভয় না। অনেকটা আনইজি লাগতেছে। আমি শুধু শুধু সেদিন বিরক্তি প্রকাশ করেছিলাম। আমার উচিত হয়নি ওভাবে বলা। এখন তো উনি স্যার। তাই।”
মিম হতাশ কন্ঠে বলে,
“থাক যতোদিন এভাবে চলতে পারিস। তবে পরে জানলে স্যার তোকে অন্যকিছুও ভাবতে পারে।”
প্রিয়া মুখ ভাড় করে ওদের সাথে ক্যান্টিনে যেতে থাকে। সব ক্লাস শেষে আজ বিকেলের মধ্যেই বাড়ি ফিরে প্রিয়া। বাড়ি ফিরে ওর মামাতো বোনকে দেখে আরেকদফা বিরক্ত হয়।
#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৫
প্রিয়ার মামাতো বোন ওকে দেখে দৌঁড়ে আসে। মামাতো বোনটা ছোটোই। ক্লাস এইটে পড়ে কিন্তু অতিমাত্রায় বা*চাল! প্রিয়া নিজেও বা*চাল টাইপ তাই ওর মামাতো বোন রাহাকে ওর তেমনটা ভালো লাগে না। প্রিয়া চায় ওর সামনের মানুষটা ওর সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে। প্রিয়া বিছানায় ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে এসে বসে। তখন থেকে রাহা উৎসুকভাব তাকিয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কিছু বলতে চায়। প্রিয়া বলে,
“কিছু বলবি?”
“আসলে আপু, তোমাকে না বলতে পারলে পেটের ভিতর কেমন গুড়মুর করছে।”
প্রিয়া সেন্টি টাইপ হাসি দিয়ে বলে,
“তাহলে বল।”
“জানো? আমি এখানে কেনো এসেছি?”
প্রিয়া ঘার নাড়ায় মানে জানেনা। রাহা বলতে থাকে,
“আমি কালকে এক স্যারের নামে গসিপ করছিলাম আর সেই স্যার যে আমার পেছোনে দাঁড়িয়েছিল বুঝিনি। এখন তাই আজ স্কুলে যাবো না বলে এখানে চলে আসছি। শুধু হাসির ছলে এটুকু বলেছিলাম, ‘স্যার ম্যাথ করতে করতে মাথায় টা*ক বানিয়ে ফেলেছে।’ এখন কী করব বুঝতে পারছি না। বিশ্বাস করো আমি বুঝিনি স্যার ওখানে থাকবে আর ওইটুকু বাদে আর কোনো খারাপ কথা বলিনি। প্রসঙ্গটা এক বান্ধুবী তুলেছিল যে ওই স্যার নাকি অনেক কড়া। ম্যাথের মধ্যে একটা একক লিখতে ভুল করলে পুরো ম্যাথ কে*টে দেয়। স্যার আমার ক্লাস নেয় না তাও স্কুলে যেতে ভয় হচ্ছে। ক্লাস নাইনে নাকি ছেলেদের সেকশনে ম্যাথ ক্লাস নেয়। এখন যদি স্যার রাগ করে আমাদেরও ম্যাথ নিতে আসে তাহলে?”
প্রিয়া বেদনাতুর দৃষ্টিতে তাকালো। নিজের দুঃখ রাখার জায়গা নাই এখন আরেকজন। প্রিয়ার মনে হলো, ‘জারিফ স্যার যে স্যার এটা তো সে জানতো না। তাহলে তো স্যারের ব্যাপারটা ভুলে যাওয়া উচিত। সে অযথায় এতো ভয় পাচ্ছে। তার থেকে রাহার ব্যাপারটা গুরুতর। সে যে তাকেই মিন করেছে তার প্রমান কী?’
প্রিয়া সিদ্ধান্ত নিলো এই সপ্তাহে আর একটা ক্লাস। সেটা কা*টিয়ে নিয়ে সামনের সপ্তাহ থেকে আর লুকাবে না। রাহাকে বলে,
“স্যারের কাছে গিয়ে মাফ চেয়ে নিস। এখন কী আর করবি বল? আমিও একটা ঝামেলা করে ফেলেছিলাম তবে তোরটা শুনে মনে হচ্ছে আমারটা অতোটাও খারাপ ছিল না। আমি নিজেকে ডিফেন্ড করতে পারব।”
রাহা জানতে চাইলো কিন্তু প্রিয়া কথা কা*টিয়ে ওকে নিয়ে মুভি দেখতে বসলো।
____________
জারিফের কলেজের বন্ধুরা বলছে ট্যুরে যাবে। জারিফও রাজি হলো। দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটিতে একটু অ্যাডভেঞ্চার টাইপ ট্যুর দিবে। তার জন্য ওরা সুন্দরবন বেছে নিলো। সুন্দরবনে অ্যাডভেঞ্চার করার মতো তেমন কিছু নেই কিন্তু সেখানে টেন্টে রাত্রি যাপন করা আর মনের মধ্যে বন্য প*শুদের ভয় নিয়ে থাকাটাও একটা অ্যাডভেঞ্চারের মতো। জারিফের পরিবারও চাইছে একটা ফ্যামিলড ট্যুরের কথা। তবে তুতুলের জ্বর আর জায়ান এই সপ্তাহে ছুটি নিতে পারবে না কারণ অফিসে কাজ আছে। সামনের সপ্তাহেও হবে না। তাই সামনের সপ্তাহের পরের সপ্তাহে বৃহঃপতিবার, শুক্রবার, শনিবার এই তিনদিনের ট্যুর দিবে।
সন্ধ্যার পর বাসায় এসে শুনে জারিফের ফুফাতো বোন মুন্নি, যে কীনা ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। সে কলেজের কোচিং টেস্ট পরীক্ষা শেষ হলেই এখানে আসবে। জারিফের সাথে দেখা করতে সে খুব উৎসুক। মুন্নির একটা পরীক্ষা শেষ হয় তো আরেকটা শুরু হয় তাই সে এতোদিন আসতে পারেনি। কয়দিন পর কয়েকদিনের ছুটি পাবে সেই খুশিতে আসবে। জারিফ যখন কানাডা গিয়েছিল তখন মুন্নি ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়তো। মুন্নি এই বাসায় আসলে জারিফের পিছু লেগেই থাকতো যা জারিফের পছন্দ ছিল না। জারিফের বুকশেলফ অগোছালো করতো। সেই মুন্নির আগমনের বার্তা শুনে জারিফ যারপরনাই হতাশ। যদি ওর আগের মতোই স্বভাব থাকে তবে জারিফ কী করবে! হতাশ হয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
তামান্না আবার জারিফের মুখশ্রীর হতাশা কিছুটা ঠাওর করতে পারলো তাই সে তরুণীমা বেগমকে বলে,
“মা, মুন্নির সাথে জারিফের বিয়ে নিয়ে কি কিছু ভাবছেন?”
তরুণীমা বেগম ভ্রুঁকুটি করে বলেন,
“কেনো? জারিফ কি মুন্নিকে পছন্দ করে?”
তামান্না হড়বড়িয়ে বলে,
“আরে না না। জারিফকে তো মুন্নির আসার খবরে হতাশ হলো মনে হচ্ছে। আমি তো জারিফ কানাডা যাওয়ার আগে জারিফকে দেখিনি আর মুন্নির সাথে সম্পর্ক কীরকম তাও জানিনা। মুন্নি আমার বিয়ের পর যতোবার এখানে এসেছে সে জারিফের কথা বলতে বলতে মুখ দিয়ে ফেনা বের করে ফেলতো। আর এদিকে জারিফের চোখে-মুখে মুন্নির আসার খবরে হতাশা ও বিরক্তির ছাঁপ।”
তরুণীমা বেগম বলেন,
” মুন্নি জারিফকে বিরক্ত করতো। জারিফের জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করতো যা জারিফের পছন্দ না। তাই জারিফ ওকে আগেও পছন্দ করতো না। জারিফের বিয়ে নিশ্চয়ই আমরা ওর পছন্দের বাহিরে দিবো না। শুধু ভিনদেশী ও অন্য কালচারের মেয়েকে চাইনি জারিফের জীবনে আনতে। আমি ও তোমার বাবা ভেবেছিলাম জারিফের সাথে হয়তো মারিয়ার সম্পর্ক আছে।”
“আচ্ছা মা? যদি জারিফ আপনাদের কস্ট না দিতে নিজের অনুভূতি লুকিয়ে যায় তবে? যদি জারিফ সত্যি মারিয়াকে পছন্দ করতো বা করে তবে?”
তামান্নার কথায় তরুণীমা বেগম চিন্তায় পরে গেলেন। তামান্না শাশুড়ির চিন্তিত মুখাবয়ব দেখে উঠে গেলো আর কথা না বাড়িয়ে। তরুণীমা বেগম জারিফের সাথে এই বিষয়ে খোলসা করে কথা বলবেন বলে ভাবলেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। নিজে ছেলের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে গেলেন।
জারিফ সবে হাত-মুখ ধুয়ে বসেছে তখনি দরজায় নকের শব্দে দরজা খুলে মাকে দেখে হালকা হাসে। তরুণীমা বেগম কফির মগ হাতে ভেতরে ঢোকে। ছেলের হাতে কফির মগ দিয়ে পাশে বসে। জারিফ কফিতে চুমুক দিয়ে দেখে তার মা হয়তো কিছু বলতে চায়। উনাকে বিব্রত লাগছে। সে জিজ্ঞেস করে,
“কিছু বলবে মা?”
তরুণীমা বেগম ধীর স্বরে বলেন,
“হ্যাঁ আসলে কিছু বলতাম।”
“তো বলো। এতো ভাবতে হবে না তোমার। যা বলার বলো।”
জারিফের মা ইতস্তত করে বলেন,
“তুই কি সত্যি মারিয়াকে পছন্দ করতি? না মানে সত্যিটা জানতে চাই। তোর মনে যা আছে তাই বলবি।”
জারিফ এতক্ষণে বুঝলো আসল কারণ। জারিফ হালকা হেসে বলে,
“তুমি তো আমাকে চিনোই। কোনো মানুষের উপর আমার ফিলিংস থাকলে আমি সেটা সহজে ভুলি না। ফিলিংসটা ঘৃণার হোক বা ভালোবাসার। মারিয়া আমার শুধু ভালো বন্ধু। এমনকি মারিয়া এইনগেজড। তার ফিয়ন্সে অন্য শহরে থাকে চাকরিসূত্রে। ওর ফিয়ন্সের সাথেও আমার ভালো সম্পর্ক।”
তরুণীমা বেগম নিশ্চিন্ত হলেন। তিনি এবার ভাবলেন মুন্নির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন। মুন্নি যে জারিফকে পছন্দ করে সেটা সে মুন্নির কথাবার্তায় টের পেয়েছেন খানিকটা। তাছাড়া তামান্নাও বলল আজ।
“মুন্নিকে তোর কেমন লাগে?”
জারিফ ভ্রুঁকুটি করে মায়ের দিকে চাইলেন। মুন্নির নাম শুনতেই চেহারায় এক ধরণের বিরক্তির ভাব উদয় হয়েছে। জারিফ বলে,
“কাজিন হিসেবে যেমন লাগা উচিত। ততোটুকুই। হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
“না এমনি। থাক তবে। গেলাম আমি।”
তরুণীমা বেগম চলে যান। জারিফ লম্বাশ্বাস নিয়ে কফিতে চুমুক দিয়ে দরজা লাগিয়ে ল্যাপটপ খুলে বসে। দুইদিন পর্যন্ত সবগুলো ক্লাসের ফার্স্ট ক্লাস থাকায় পড়ানো লাগেনি। আগামীকাল থেকে পড়ানো শুরু তাই নিজে পড়াটুকু তর্জমা করে নিচ্ছে সাথে বুঝানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব।
_____________
সকাল সকাল প্রিয়া আজকে নিজের কনফিডেন্স লেভেল বাড়িয়ে রেখেছে। সকাল থেকে কোনো ঝামেলাতেও পরতে হয়নি। ফ্রেন্ডদের সাথে আজকে নরমাল কথাবার্তা ছাড়া কোনো কথা বলেনি। জারিফের ক্লাসে মুখে মাস্ক লাগিয়ে কর্নারের সারিতে একদম ফার্স্ট সিটে বসেছে। আজকে ক্লাসে কনসেনট্রেট করবেই। তাও একটা সপ্তাহ যদি মুখ না দেখিয়ে থাকতে পারে তাহলে পরের সপ্তাহ থেকে আর মাস্ক পরতে হবে না।
চলবে ইনশাআল্লাহ্,
।