হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব -০২+৩

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২
প্রিয়া যখন জানতে পারলো, বাসের ওই ছেলেটা ওর ভার্সিটির ও ডিপার্টমেন্টের নতুন স্যার তখন ওর অজ্ঞান হবার দশা। কিছুতেই মানতে পারছে না সে। শীতের মধ্যেও সে ঘেমে উঠছে। মা*থার ভিতরে ভনভন করছে। প্রিয়ার বান্ধুবী নিশি ওকে হাত দিয়ে ডেকে বলে,

“কীরে? কই হারালি? জারিফ স্যার কিন্তু অনেক কিউট। তাই না?”

“হু!”

নিশি প্রিয়ার অন্যমনস্ক জবাবে ওকে আবারও ঠে*লা দিয়ে বলল,
“কীসের হু? তুই না কালকে পর্যন্ত খুব এক্সাইটেড ছিলি স্যারকে দেখবি বলে? হি ইজ সো হ্যান্ডসাম! জাস্ট লুক এট হিম বেব।”

নিশি কথাটা বলে হা করে স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়া বিষন্ন মুখে গালে হাত দিয়ে ক্লাসে স্যারের দিকে তাকালো। স্যার তখন কম্পিউটারে নিজের মেইল আইডি লগইন সম্পর্কিত ঝামেলা ঠিক করছিল। প্রিয়া জানতো যে তাদের ডিপার্টমেন্টে এক নতুন স্যার আসবে। গতকালই হোয়াটসএপ গ্রুপে তা জানতে পেরেছিল। নতুন স্যারের ছবি ছাড়া অন্যান্য কিছু তথ্য প্রিয়ার জানা ছিল। কিন্তু ওর মনে ঘুণাক্ষরেও আসেনি যে বাসে তার পাশে বসা নার্ভাস ও বিরক্তিকর ছেলেটা নতুন স্যার হতে পারে। শুনেছে, নতুন স্যার নাকি কানাডা থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করে এসেছে। উনার মতো কোয়ালিফাইড স্যারের চেহারাতে নিশ্চয়ই একটা ভাব থাকার কথা! আচ্ছা ছিল কী? প্রিয়ার মনে প্রশ্নের সঞ্চার হয়। মুখ ভার করে বসে থাকে প্রিয়া।
_______________

ফ্ল্যাশব্যাক,
প্রিয়া যখন ক্যান্টিনে বাসের ছেলেটাকে দেখার পরই নিশি, মিম, অর্ষা, সাদ, আয়ান, রিক, রাদ ওদের দেখাতে যায় তখন ওদের সামনের দিকে তাকাতে বলে দেখে ছেলেটা সামনে নেই। প্রিয়া আশেপাশে খুঁজেও তখন ছেলেটাকে পায়নি তারপর দেখে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে তারপর সেদিকে দেখাতে নিলে সেটাও দেখাতে পারে না। প্রিয়ার তখন মনঃক্ষুণ্ণ হয়। প্রিয়া তখন ভাবছিল, ‘যদি ছেলেটা কোনো সিনিয়র হয়? তাহলে কী র‍্যাগ ট্যাগ দিবে?’ মনের দুঃখে আবারও পানি খেতে গেলে বিদঘুটে স্বাদের কারণে পানি মুখ থেকে ফেলে দিয়ে ফ্লাস্কটা ভালো করে ধৌত করতে ভেসিনের কাছে যায়। ভেসিনের কাছেই খাবার পানির কল আছে। সেখান থেকে পানি নিয়ে আসে।

নাস্তার পর ওরা ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরি করে সাথে নতুন স্যার সম্পর্কে বিশদ আলোচোনাও করে। অর্ষার সকালে ক্লাস ছিল তবে সে ঠিক টাইমে আসতে পারেনি। এসেছিল আধঘণ্টা পর তাই আর ক্লাসে যায়নি। অর্ষা নতুন স্যারকে দেখেছে বলে সেগুলোই বলছে। তারপর ওরা ক্লাসে যায় আর সেই ক্লাসটা নতুন স্যার নিবে বলে সবাই খুব এক্সাইটেড।
ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড,
_______________

এবার জারিফ নিজের কাজ শেষ করে সকল স্টুডেন্টের দিকে ভালো করে লক্ষ্য করে। ক্লাসে এসেই সবার উদ্দেশ্যে সালাম ও ‘গুড মর্নিং’ বলে সাথে সকলে কেমন আছে জেনে সে যে নতুন লেকচারার তা জানিয়ে নিজের মেইল আইডি লগইন করতে লেগে পরে। এখন সকলের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।

প্রিয়া এদিকে নিজের শালটাকে উল্টো করে জড়িয়ে মুখে মাক্স পরে নেয়। ওর শালটার এক পাশ লাল আরেকপাশ কালো। দুই সাইডই ব্যবহার করা যায়। পুরো ক্লাসে কারও মুখে মাক্স নেই শুধু প্রিয়া ছাড়া। জারিফ সবাইকে ভালো করে দেখে নিয়ে বলে,

“আমার নাম ইতোমধ্যে আপনারা জেনে গেছেন নিশ্চয়ই! তাও আরেকবার বলছি। মাইসেল্ফ জারিফ আহমেদ। আমি ‘ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া’ থেকে অনার্স, মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি বাট আমার পিএইচডি করার ইচ্ছে এখন নেই। পিএইচডি করলে আরো তিন বছর সময় যেত কিন্তু আমার পারিবারিক কারণে আমি দেশে ফেরত এসেছি। পরে না হয় আবার যাবো। এই তো এখন আপনাদের সামনে। আপনাদের নিউ লেকচারার হিসেবে। আর কিছু জানার আছে আমার সম্পর্কে?”

সবাই মাথা নাড়িয়ে না জানায়। জারিফ তা দেখে হেসে বলে,

“কিন্তু আমার জানা আছে। আপনাদের সাথে এটাই আমার ফার্স্ট ক্লাস এমনকি আমার এই ভার্সিটিতে ফার্স্ট ক্লাস নেওয়া। সকালে মিটিং ছিল সিনিয়রদের সাথে। যেহেতু এটাই আমার লেকচারার লাইফের ফার্স্ট ক্লাস তাই আপনাদের পরিচয় জানার আছে। আপনারা সকলে আপনাদের নাম-ঠিকানা, স্কুল এন্ড কলেজ এটুকু বলবেন। কাউকে দাঁড়িয়ে বলতে হবেনা। নিজ নিজ সিটে বসেই বলবেন। সো লেটস স্টার্ট।”

স্টুডেন্টরা সকলে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে কেউ বসে কেউ দাঁড়িয়ে। এদিকে প্রিয়ার অবস্থা কাঁদো কাঁদো। তাকে চিনে ফেললে মহা ঝামেলা। ক্লাসে চল্লিশ জন স্টুডেন্ট। প্রিয়া তো আর লাস্টে বসেনি। সে তো সাইডের দিকে প্রায় ফার্স্টের দিকেই বসেছে। একে একে প্রিয়ার পরিচয় দেওয়ার সময় এলে প্রিয়া ভয়ে ঢোক গিলে অতঃপর ক্ষীণ স্বরে বলে,

“আমি প্রিয়া হাসান। আমার স্কুল কলেজ দুটোই সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ। আমি ঢাকাতেই থাকি।”

জারিফ খানিকটা হেসে বলে,
“ওয়েল প্রিয়া, ক্যান ইউ ওপেন ইউর মাস্ক? ইফ ইউ হ্যাভ নো প্রবলেম সো দেন।”

প্রিয়ার এবার হাত-পা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়েছে। বাসের ঘটনাটার জন্যই সে বাজে ভাবে ফেঁসে গেছে। সামনে থেকে নিশি পেছোনে ঘুরে ফিসফিস করে বলে,

“কীরে? তুই আবার মাক্স পড়ছিস কেনো? মাক্স খোল।”

প্রিয়া নিশির মাথা সামনে ঘুরিয়ে দেয়। জারিফ প্রিয়ার হাবভাব দেখে বলল,

“ধর্মীয় দিক হলে সরি। আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু হার্ট। তবে আপনার গেটআপ দেখে মনে হচ্ছে না আপনি রিলিজিয়াস কারণে মাক্স পরেছেন।”

প্রিয়া চোখ-মুখ খিঁচে ফেলেছে। ওর চুলগুলো খোলা তাও একদম ছেড়ে রেখেছে। প্রিয়া ভাবতে শুরু করলো। হুট করে মস্তিষ্কে দারুন বুদ্ধি এলে হালকা কেশে বলে,

“একচুয়ালি স্যার আমার ফ্লু আছে। আমি চাইনা সবাই এফেক্টেড হোক।”

“ওহ। ইটস অকে। প্লিজ সিট ডাউন।”

প্রিয়া হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। মুখে মাক্স লাগিয়ে রাখতেও ওর বিরক্ত লাগছে। এমনিতে ঠান্ডার কারণে নাক বন্ধ এখন মাক্সের উপর দিয়ে শ্বাস নিতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। পাশের সিট থেকে মিম বলে,

“তোর এতো চিন্তা আমাদের জন্য? কই সকালেও তো মাক্স ছাড়া ঘুরছিলি। হুট করে তোর মনে এতো দয়া-মায়ার উদয় হলো কী করে?

প্রিয়া চোক পাঁকিয়ে তাকায়। এবার পেছোন থেকে রাদও বলে,
“মনে হয় স্যারকে দেখে ওর সচেতনতা বেড়ে গেছে। স্যারের জন্য কেয়ার দেখাচ্ছে। আমরা তো আর কেউ না। স্যারের যাতে ক্ষতি না হয় সেটা লক্ষ্য রাখছে।”

প্রিয়া পেছোনে ঘুরে মাক্স নামিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে,

“কারন জানলে এসব বলতি না। আমি বাধ্য হয়েই মুখে মাক্স লাগিয়েছি। আসছে তার জন্য আমি কেয়ার দেখাবো! ক্লাসের পর বলতেছি।”

আবার মুখে মাক্স লাগিয়ে সামনের দিকে ঘুরে। দেড় ঘণ্টা শেষ। জারিফ ডিপার্টমেন্টের দিকে চলে গেছে। এই রুমেই আবার ওদের ক্লাস। সাদকে ও রিককে পাঠিয়েছে ক্যান্টিন থেকে রোল, সিঙ্গারা, সমুচা, ডিমচপ, সবার জন্য নিয়ে আসতে। দশ মিনিট ব্রেক আছে। এবার নিশি জিজ্ঞেস করে,

“তোর কি হয়েছে সেটা বল? মাক্স পড়া ও ফ্লু এসব? তোরে তো ল্যাবেও মাক্স পড়তে দেখা যায় না।”

প্রিয়া এবার কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,

“আজকে সকালে বাসে স্যারের সাথে আমি বসেছিলাম। আমি স্যারকে মিন করে বিরক্তি প্রকাশ করেছি আর নামার সময়ও মিন করে বলেছি। আল্লাহ্ জানে স্যার কী না কী ভেবেছে। এই ভয়ে আমি মাক্স পরে নিয়েছি সাথে দেখ শালটাকেও উলটে নিয়েছি।”

প্রিয়ার দুঃখী দুঃখী কন্ঠে কেউ একটু ছিঁটেফোঁটাও দুঃখ পেলো না। ওরা সবাই সমস্বরে হেসে উঠলো। প্রিয়া ওদের হাসি দেখে বোকার মতো তাকালো। তারপর ভ্রুকুটি করে বলল,

“তোরা হাসছিস? কেমন নির্দয় তোরা? আমি কীভাবে রক্ষা পাবো সেটা না বলে তোর হাসছিস! কেমন হা*রামি তোরা!”

অর্ষা চোখ মুখে রাজ্যের বিস্ময় এনে বলল,

“এতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলে তোর পাশে বসেছে আর তুই কিনা! এতো ব*ল*দ কেন তুই?”

প্রিয়া ওদের প্রতি বিরক্ত হয়ে সেখান থেকে উঠে অন্যত্র গিয়ে বসে। ওরা শুধু স্যারের গুণগানই গাচ্ছে।
#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩
পরপর টানা দুইটা ক্লাস করে ক্যান্টিন থেকে লাঞ্চ করে নেয়। মধ্য দুপুর এখন। লাঞ্চ শেষে ক্যাম্পাসে এসে বসে। প্রথমদিন হিসেবে ওরা বিন্দাস। আজকে তিনটাই ক্লাস। সপ্তাহে চারদিন ক্লাস নিয়েছে চারটা সাবজেক্টের। প্রতি সাবজেক্টের ক্লাস সপ্তাহে দুইটা করে হয়। রাদ অর্ষাকে ডেকে করিডোরের দিকে আঙুল উঁচিয়ে দেখায়,

“ওই দেখ তোর দুই ক্রাশ একসাথে যাচ্ছে! জারিফ স্যার আর শারদ ভাইয়া।”

অর্ষা মিমের সাথে ফোনে কিছু একটা দেখছিল। এখন সেখান থেকে চোখ তুলে সামনে রাদের দেখানো দিকে তাকালো। জারিফ নবম সেমিস্টারের ছাত্র শারদের সাথে কথা বলতে বলতে যাচ্ছে। এখন জারিফ ভার্সিটি থেকে বেরোবে। অর্ষা গালে হাত দিয়ে সামনের দিকে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এদিকে প্রিয়া রাদের কথায় চমকে গিয়ে হুড়মুড় করে মাস্কটা মুখের উপর তুলে দেয় আর নিশির পিছোনে মুখ লুকানোর চেষ্টাতে আছে। নিশি মোঁ*চড়া মুঁ*চড়ি করে প্রিয়াকে সামনে এনে বলে,

“তুই এমন করছিস কেন ভাই? স্যার তো চলেই যাচ্ছেন। স্যার কি তাকাচ্ছে?”

“যদি তাকায়?”

প্রিয়ার বিচলিত কন্ঠস্বরে নিশি কপাল কুঁচকে বলে,

“মাস্ক তো পরছিস। সে কি এখন ওখান থেকে এখানে তোর মাস্কের ভিতর দিয়ে চেহারা দেখবে! হুদাই ভয় পাস!”

প্রিয়া তাও উুঁকি দিয়ে দেখল জারিফ বেরিয়ে গেছে। স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,

“তোরা বুঝবি নারে। আমি কোনোমতে টিকে থাকা স্টুডেন্ট। আমার এই সেমিস্টারের রেজাল্টে আরও ধস নামবে বুঝে গেছি আমি। এই শ*য়*তা*ন মার্কা স্যার আমারে ফেল করাবে!”

সাদ মাঝ থেকে বলে,
“কেন! তুই কী স্যারের টাকা চু*রি করছিস? বাসের মধ্যে তোর ভাল্লাগে নাই তুই তাই বলছিস।”

অর্ষা ঘোর থেকে বের হয়ে বলল,
“তোরা এমন করিস কেন? আমি একটু ক্রাশ খাচ্ছিলাম! আর প্রিয়া তুইও! স্যারটা কতো কিউট, সুইট, হ্যান্ডসাম দেখছিস? স্যার ক্লাসে কতো সুন্দর করে কথা বলল আজ। তুই পরছিস তোর ওসব নিয়ে। চিল বেব। স্যার খুব কিউট। কিছু বলবে না।”

প্রিয়া অর্ষাকে ধ*মকে বলে,

“চুপ কর তুই। বাসের কাহিনী না ঘটলে আমিও একটু ক্রাশ খেতাম কিন্তু! ধ্যাত! বাসে উঠলে যেনো আমি রাণী হয়ে যাই! আমি ভাবতেছি সাবজেক্টটা ড্রপ দিবো। তার সামনে গেলে তারে দেখলে আমার হাঁটু কাঁপে।”

আয়ান প্রিয়াকে ধমকে বলে,
“বেশি বুঝিস তুই? দরকার পরলে কালকে স্যারের অফিস রুমে গিয়ে সরি বলে আসবি। আর বাসের ভিতরেই তো। বাসে তো কতো লোকেরা মেয়েদের পাশে বসলে বাজে ভাবে নড়াচড়া করে। তাই না? সেই হিসেবে তোর বিহেভ অতোটাও বাজে না। যদিও স্যারের আজ প্রথম ক্লাস বলে নার্ভাস ছিলেন হয়তো।”

বাকিরাও আয়ানের কথায় সায় দেয়। প্রিয়া চুপ করে মুখ ভাড় করে বসে আছে।

______________

জারিফ ভার্সিটির বাহিরে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে। সকালেও সে নিজেদের গাড়ি দিয়ে আসতো তবে ওর ভাই জানালো গাড়িতে প্রবলেম হচ্ছে তাই সার্ভিসিংয়ে দিয়েছে। ওর ভাই আজকে ছুটিতে তাই সে আজ বাসায় থাকছে। হুট করে অতো সকালে সঠিক সময়ে উবার পাওয়া যাবে না বলে বাসে করেই ভার্সিটিতে এসেছে। সকালের ঘটনাটা তাকে খুবই বিরক্ত করেছে। এমনিতে বিদেশ যাওয়ার আগে বাসে চলাচলের অভ্যাস থাকলেও বিদেশে গিয়ে এতো ভীড়সহ বাসে চলাচল করতে হয়নি আর দেশে ফিরে তো নিজেদের গাড়িই আছে। আনকম্ফোর্টেবল লাগছিল। মেয়েটার দিকে সে তাকায়নি একবারও যতক্ষণ বসে ছিল কিন্তু নামার সময় মেয়েটার আচরণ তার ভালো লাগেনি। মেয়েটা ওকে অন্যসব যারা বাসে মেয়েদের হ্যারাস করে তেমন ভেবেছিল ভাবতেই বিরক্তিতে চ উচ্চারণ করে। জারিফ এখন ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। উবার কল করেছে ভার্সিটির থেকে বেরোনোর দশ মিনিট আগে আর এখনও প্রায় দশ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আরও আগে যে উবার ডাকবে তা তার মনেই ছিল না। এখন দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। বাসে করে যেতেও বিতৃষ্ণা হচ্ছে তার। আরও দশ মিনিট লাগবে বলল উবারের ড্রাইভার। শীতকাল বলে দাঁড়ানো যাচ্ছে। রোদের তেজ খুবই স্বল্প। বিকেল নামবে এখনই। ঘড়ির কাঁটায় পোনে চারটা বাজে। আসরে আজান পরছে। বিকেল নামলেই আস্তে আস্তে শীতলতা আবার প্রকৃতিতে ভর করবে।

এদিকে প্রিয়া হাসতে হাসতে ভার্সিটির গেটের কাছে এসে সামনে জারিফকে দেখে পেছোন দিকে দৌঁড় দিয়েছে। জারিফ সবে উবার গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকছে। প্রিয়াকে পেছোন দিকে দৌঁড় দিতে দেখে বাকিরা হকচকিয়ে গেলো। একটু আড়ালে গিয়ে প্রিয়া উুঁকি দিয়ে বিড়বিড় করে বলছে,

“গাড়িতে উঠেন আর চলে যান শ্রদ্ধেয় স্যার। আমাকে ভুলেও দেখবেন না। কিছুতেই না। ভাববেন আমি এই দুনিয়াতে এক্সসিস্ট করিনা। অদৃশ্য মানবী আমি! যারে অনুবিক্ষণ যন্ত্র দিয়েও দেখা যায় না।”

নিশি, মিমরা ওর পাশে এসে দাঁড়ায়। মিম প্রিয়ার মাথায় চা*টা মে*রে বলে,

“তুই কি তাহলে অতিআণুবীক্ষণিক ব্যাকটেরিয়া! যে তোকে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও দেখা যাবে না? এত বড়ো দা*ম*রা মেয়েরে দেখা যাবে না কেন?”

প্রিয়া কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
“তুই নিজে কী? বে*দ্দ*প মাইয়া।”

জারিফকে চলে যেতে দেখে প্রিয়া গা ঝাড়া দিয়ে দাঁড়ালো। তারপর ভাব নিয়ে বলল,

“হুহ্! আমি এখন দৃশ্যমান।”

নিশি বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল,
“ডরপোক কাহিকা!”

বিনিময়ে প্রিয়া মুখ ভেঙ*চি দিলো। তারপর আবার ওরা হাসতে হাসতে যেতে থাকে।

___________

বাড়িতে গিয়ে জুতা-মোজা খুলে জারিফ সোফায় বসেছে। ওর মা ওর জন্য শরবত এনে দেয়। জারিফ মুচকি হেসে শরবতের গ্লাসটা নেয়। জারিফের বড়ো ভাবি তামান্না এসে পাশের সোফায় বসে উচ্ছাসের সাথো জিজ্ঞেস করে,

“ভার্সিটিতে কোনো মেয়েকে পছন্দ হলো?”

কথাটা শোনামাত্র জারিফ বিষম খেলো। জারিফের মা তরুণিমা বেগম জারিফের মাথায় আলতো করে হাত দিয়ে বলেন,

“কি করো বৌমা! এমন সময় কথাটা বলতে হলো? ছেলেটা বিষম খেলো তো।”

“সরি মা। আসলে সারাদিনে আমি অনেক কিছু ভেবে বসেছি। দেবর আমার কম তো সুন্দর না! তার ওপরই ইয়াং লেকচারার। ওর ভার্সিটির মেয়েরা তো ওর উপর ক্রাশ খাবেই। এটা ন্যাচারাল! তারপর…আহা!”

তরুণীমা বেগম বিরক্ত হলেন বড়ো ছেলের বউয়ের দূরদর্শী কল্পনায়। তিনি বলেন,

“এসব চিন্তা করতে কে বলে তোমাকে? জারিফ ভার্সিটিতে ক্লাস করাতে যায়। সেখানে কী সে প্রেম করতে যায়?”

তামান্না শাশুড়িকে বুঝাতে বলে,

“আরে মা! আপনি তো জানেন না। আজকালকার মেয়েরা স্যারদের উপর ক্রাশ খায়। আর ভার্সিটিতে কতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে আছে। জারিফকে তো আমরা বিয়ে দিবো। তাই মেয়ে খোঁজাটা যদি ও ওর পছন্দে করে তাই আর কী!”

তরুণীমা বেগম তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকায় তা দেখে তামান্না চুপ মে*রে যায়। তরুণীমা বেগম বলেন,

“যে আসার সে এমনিতেই আসবে। জারিফ ভার্সিটিত। ক্লাস নিতে যায়। স্টুডেন্টদের পড়াতে যায়।”

তিনি এবার জারিফকে জিজ্ঞেস করেন,

“হ্যাঁ রে, কেমন গেলো প্রথমদিন? সব ঠিক ছিল তো?”

জারিফ আলতো হেসে বলে,
“হ্যাঁ মা। সব ঠিক ছিল। প্রথমদিন তো ইন্ট্রোডাক্টরি ক্লাস। ভালোই গিয়েছে। বাবা কই মা? ভাইয়া আর তুতুল?”

জারিফের মা হেসে বলেন,
“তোর বাবা, ভাই, ভাইপো সবাই হাঁটতে বেরিয়েছে। বাবা-ছেলে-নাতি সব একসাথে গেছে। তুতুল দুইজনের হাত ধরে গেছে।”

তামান্না বলে,
“আমি তো মাকেও বলেছিলাম। শীতের বেলা হাঁটতেই তো মজা। কিন্তু মায়ের আবার হাঁটুতে ব্যাথা। দুপুরের খাবারের পর কিছুক্ষণ তেল মালিশ করলাম।”

জারিফ চিন্তিত হয়ে বলে,
“শীতকালে হাঁটুর ব্যাথা ঠান্ডার কারণে আরও বাড়বে। ঘরের ভিতর মোজা পরে থাকবে কতোবার বলবো তোমায়? ঔষুধ গুলোও তো ভাবি মনে না করালে ঠিক মতো নেও না।”

জারিফের মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
“নেই তো। তোর বউ এলে সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস। তখন দুই ছেলের বউ আমার খেয়াল রাখবে।”

তামান্না মাঝ থেকে বলে উঠে,
“মা আপনার নিরামিষ মা*র্কা ছেলের সাথে কথা বলে যেকোনো মেয়ে বোর হয়ে যাবে। আমার তো কস্ট হচ্ছে বেচারা স্টুডেন্টগুলোর জন্য! কি যে বোরিং কা*টবে ওদের ক্লাসগুলো! আল্লাহ জানে।”

জারিফ তার ভাবির দিকে তাকালে তার ভাবি মেকি হেসে বলে,
“যাই নাস্তা বানাই।”

তামান্না মানে মানে করে সরে যায়। জারিফ একটু কম কথা বলা টাইপ। কাজের বাহিরে খুব একটা কথা বলে না মানে তামান্না এই কয়দিনে দেখেনি। জারিফ বিদেশ থাকাকালীন তামান্না জারিফের বড়ো ভাই জায়ানের বউ হয়ে এসেছে। জারিফ সারাক্ষণ নিজ ঘরে লাইব্রেরিতেই থাকে।
জারিফ ওর মাকে বলে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here