#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৬
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে প্রিয়াকে নিয়ে জারিফের মা এসেছেন জুয়েলারির ডিজাইন পছন্দ করতে। পছন্দ হলে বানাতে দিবেন। প্রিয়া আসতে চায়নি কিন্তু তামান্না ও তরুণীমা বেগমের অতি উৎসাহতে মানা করতে পারেনি। তাদের মতে, বিয়ে তোমার পরবেও তুমি তো পছন্দও তোমার হওয়া উচিত। কিছুটা সময় নিয়ে জুয়েলারির ডিজাইন পছন্দ করার পর পুরোনো চেনা কারিগরকে ডিজাইন দেখিয়ে ফিরে এসেছে।
বসন্ত ঋতুর বিদায় প্রহর আসন্ন। এপ্রিল মাসের আজ প্রথম দিন। সামনে প্রিয়াদের ফাইনাল পরীক্ষা আসছে। দিনগুলো খুব দ্রুতই পেরিয়ে যাচ্ছে। সেমিস্টার ফাইনালটা এপ্রিলের শেষ অর্ধে। নিশি, মিমরা প্রিয়ার বিয়েতে কী কী করবে ভেবে ফেলেছে। জারিফের শ্যালিকা হিসেবে তখন জারিফকে নাকা*নিচো*বানি খাওয়ানোর দায়িত্ব ওদের। প্রিয়া ওদের পরিকল্পনা শুনে নিজেও এক্সাইটেড!
“আরে ইয়ার! আমিও তোদের সাথে জয়েন হবো। উনার এক্সপ্রেশন কেনো মিস করব বল! কিভাবে না*কা*নিচো*বানি খায় তা দেখব না? উফ জোস হবে!”
প্রিয়ার এক্সাইটমেন্ট দেখে নিশি, মিমরা হেসে লুটোপুটি খাওয়ার দশা। সাদ রম্যস্বরে বলে উঠে,
“ওকে দোস্ত। তুই বউ সাঁজে আমাদের সাথে গেইট ধরবি। টাকা না দিলে আমরা বান্ধুবী দিবো না। স্লোগান হবে!”
আরেকদফা হাসির রোল। ওদের এই হাসি আড্ডা চলতেই থাকে। ফাইনালের সময় এসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, কুইজ, ল্যাব সবকিছুর একটা এক্সট্রা প্যারা থাকে। এতো ব্যাস্ততার মধ্যে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মনে খানিকটা প্রশান্তির হাওয়া বয়।
______
এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে পহেলা এপ্রিল থেকে। মুন্নির চারটা পরীক্ষা শেষ হয়েছে। সে সেই যে জারিফদের বাড়ি থেকে এসেছে তারপর এইচএসসি পরীক্ষার আগেরদিন তার মামা-মামিকে ফোন করে দোয়া চেয়ে আর কথা বাড়ায়নি। জাবেদ সাহেব তার বোনকে বলেছিলেন বিয়ের ডেটটা ওদের জন্যই মে মাসের প্রথম সপ্তাহের পর রাখছ । ততোদিনে মুন্নির প্র্যাকটিকেল পরীক্ষা বাদে অন্য সব পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু মুন্নি বিয়েতে আসতে চায় না সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে। সে কিছুতেই বিয়েতে আসবে না। সে বিয়েতে আসলে আবার যদি পা*গলামি করে কোনো ব্যাঘাত ঘটায়? এই ভয় নিয়ে মুন্নি মানা করে দিয়েছে তার জন্য বিয়ের তারিখে দেরি করতে। ওদের সুবিধাজনক সময়ে বিয়েটা হয়ে যাক। তাই এখন বিয়ের তারিখ মে মাসের প্রথম কয়েকদিনেই।
মুন্নিকে এখন আর আগের মতো হাসতে দেখে না ওর বাবা-মা। মেয়ের মনের বিষাদ তাদেরকেও আচ্ছন্ন করে তোলে। মুন্নি মনম*রা হয়ে বিকেলের সময়টা ছাদে বসে থাকে। ওদের বাড়িটা দুইতলা আর নিচের তলায় যেই দুই পরিবার থাকে তারা স্বামী-স্ত্রী প্রত্যেকে চাকুরী করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা চাকুরী তাদের। তাই ছুটির দিন ব্যাতিত অন্যসব দিন ছাদে কেউ উঠে না। মুন্নি একাই উঠে। এপ্রিল মাসের প্রথম দিন মুন্নিদের বাড়িতে ওর বাবার খুব কাছের বন্ধুর বড়োভাইয়ের ছেলে এসেছে চাকরিসূত্রে একমাসের জন্য থাকবে বলে। এক মাস পর মেসে উঠবে। ছেলেটার নাম রাদিফ। সে একজন মেকানিকেল ইঞ্জিনিয়ার। রাজশাহী থেকে দিনাজপুর এসেছে। রাদিফ প্রতিদিন বিকেলে অফিস থেকে ফেরার পথে ছাদে একটা মেয়েকে খোলা চুলে বসে থাকতে দেখে। সে কেবল মেয়েটির মুখের একাংশই দেখে। মেয়েটি কখনও আকাশের দিকে আবার কখনও অদূরে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে। আজ এতোদিন হলো এই বাড়িতে এসেছে সে, সেই প্রথমদিন রাতে খাবারের সময় মিরাজ সাহেব তার একমাত্র মেয়েকে ডেকে এনেছিলেন। সেদিনই প্রথম মুন্নিকে দেখে ও পরিচিত হয় রাদিফ। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত মুন্নির সাথে আর দেখাও হয়নি। ছাদে প্রতিদিন বসে থাকা উদাসী মেয়েটা মুন্নি কিনা সেই ব্যাপারেও সন্দিহান রাদিফ। প্রতিটাদিন দেখে মেয়েটাকে। আজ ভাবলো একবার সেই খোলা চুলের রমণীকে সামনাসামনি দেখতে ছাদে উঠবে। বাড়ির ভেতরে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে সন্ধ্যা নামার কিছুক্ষণ আগে ছাদে উঠলো রাদিফ।
সূর্য অস্ত গেছে এই মাত্র। পশ্চিমাকাশে রক্তিম গোধূলি শেষ আভা ছড়াচ্ছে। ছাদের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে রাদিফ সেই গোধূলির রক্তিম আলোয় এলোকেশীকে দেখছে। আর মাত্র কিছুক্ষণের মধ্যে মাগরিবের আজানের সুমধুর ধ্বনিতে কায়নাত মুখরিত হবে। রাদিফ ধীর পায়ের ছাদে প্রবেশ করলো তারপর নিঃশব্দে মুন্নির থেকে এক হাত দূরত্বে দাঁড়ালো। রাদিফ কয়েক সেকেন্ড মুন্নিকে অবলোকন করে বুঝলো মুন্নির ধ্যান নেই এখানে। সে অন্য কোনো অপার্থিব বা সম্মোহিত হয়ে আছে। রাদিফ কিছুটা ধীর কন্ঠে বলল,
“এই সন্ধ্যেবেলায় খোলাচুলে থাকতে হয় না। জানেন না?”
নিরবতার মাঝে কারও কন্ঠস্বরে সজ্ঞানে ফিরল মুন্নি। পাশ ঘুরে এক ঝাপসা পুরুষ অবয়ব দেখল। ঝাপসা দেখার কারণ নিরন্তর আকাশের দিকে দৃষ্টি স্থীর করে রাখাতে এখন সবকিছু অন্ধকার অন্ধকার লাগছে। মুন্নি চোখ হাত দিয়ে মুছে নেয় তারপর খানিক চোখ বুজে নিয়ে আবার খুলে। রাদিফ মুন্নির থেকে জবাব না পেয়ে আবারও বলে,
“আর কয়েক মিনিট পর আজান পরবে। এই সময় ছাদে আছেন আবার চুলও এলোমেলো করে খোলা। সময়টা কিন্তু তেনাদের ঘোরাফেরার সময়। এখানরার পরিবেশটাও গাছ-গাছালিতে ঘেরা। এসব জায়গা তেনাদের পছন্দ এমনিতেই।”
মুন্নি এবার রাদিফকে খেয়াল করলো। মস্তিস্কে একটু জোর দিয়ে মনে করতে পারলো রাদিফ তার বাবার বন্ধুর ভাতিজা। মুন্নি মলিন হেসে হেয়ালি করে বলে,
“তেনাদের বলতে যাদের বুঝিয়েছেন, তারা আমার উপর ভর করবে না। এমনিতেই আমার মন-মস্তিষ্কে যা ভর করে আছে তা তেনাদের থেকেও ভয়ংকর।”
রাদিফ বেশ মজা পেলো মুন্নির হেয়ালিপূর্ণ কথায়। রাদিফ ট্রাউজারের পকেটে হাত গুঁজে আরেক কদম সামনের পাশে এগিয়ে বলল,
“তেনারা ভর করলে তখন বুঝতেন। তখন আর এসব বলতেন না। কিছু আবার প্রেমিকও আছে! যারা রূপবতী কন্যাদের উপর নিজেদের নজর বহাল রাখে চিরকাল। তাই এসময় দাদী-নানীদের কাছে শুনেছি, চুল খোলা রাখলেও মাথায় কাপড় রাখতে হয়।”
মুন্নি হেসে উড়না টেনে মাথায় দিলো। রাদিফও নিঃশব্দে হাসলো। রাদিফ জিজ্ঞেস করে,
“আপনার তো এইচএসসি পরীক্ষা চলছে। কেমন হচ্ছে পরীক্ষা?”
“জি আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।”
রাদিফ আর কথা খুঁজে পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলে,
“আপনি সায়েন্স থেকে না?”
“জি।”
রাদিফ ঘার নাড়ালো। মুন্নি আসমানের দিকে একবার তাকিয়ে বলে,
“আমি তাহলে যাই। এখুনি আজান পরবে।”
“আমিও যাবো। চলুন।”
ওরা ছাদ থেকে নেমে গেলো। একসাথেই বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। মুন্নির মা ওদের দুজনকে একসাথে ঢুকতে দেখে একটু অন্য নজরে তাকালো বটে কিন্তু কিছুটা খুশিও হলো। রাদিফ ছেলেটাকে তার ভালোই লেগেছে। ছেলেটার ব্যাবহারও সুন্দর। মুন্নির সাথে যদি এই কয়েকদিনে একটু ভাব জমে তবে তিনি মুন্নির বাবাকে বলবেন রাদিফের কথা।
রাদিফ নিজের রুমে যেতে যেতে মুন্নিকে বলে,
“কিছু মনে না করলে বিকেলে আমরা একসাথে চায়ের আড্ডা বসাতে পারি। অ্যাই মিন কালকে আমার অফিস একটু জলদি ছুটি হবে। তখন একটা চায়ের আড্ডা তো হওয়াই যায়।”
মুন্নি চোখে হাসলো তারপর বলল,
“কালকে পর্যন্ত যদি অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হয় তবেই।”
রাদিফের কাছে মুন্নির এই বলার ধরণও হেয়ালি লাগলো। মুন্নিতো নিজের রুমের দিকে চলে গেছে। রাদিফও নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।
________
রাতে প্রিয়া একটা টপিক বুঝতে পারছে না। টপিকটা অন্য সাবজেক্টের তাও সে ভাবলো জারিফকে জিজ্ঞেস করবে। এখন জারিফ যদি কিছু মনে করে? সেই দোটানায় আছে। ফাইনাল পরীক্ষার আর সপ্তাহ খানেক আছে। এর মাঝে প্রিয়ার একদিন চোখে এলার্জির কারণে ভার্সিটিতে যেতে পারেনি। সেদিনই সেই স্যার ওই টপিকটা পড়িয়েছে। প্রিয়া চাইলে আয়ানের থেকে বুঝে নিতে পারতো কিন্তু তার তো ভার্সিটিতে গেলে পড়া বোঝার কথা মনেই থাকে না। কিছুক্ষণ ভেবে পরে জারিফকে মেসেজই করলো। প্রিয়ার মেসেজ দেখে জারিফ হোয়াটসএপে কল দিলো। প্রিয়া সালাম দিয়ে বলে,
“আসলে অন্য একটা সাবজেক্টের একটা টপিকটা বুঝতে পারছি না। আপনি কি ফ্রি আছেন?”
“হ্যাঁ। মাত্রই কাজ শেষ করলাম। বলো।”
“ডিনার করেছেন?”
“করব। তুমি বলো।”
“না থাক। আগে ডিনার করে আসেন। তারপর আস্তে ধীরে বলব। যান যান ডিনার করে আসেন।”
জারিফ হেসে ফেলে অতঃপর বলে,
“তুমি ডিনার করেছো?”
প্রিয়া এবার অপ্রস্তুত হয়। কারণ সে তো ডিনার করেনি। সে সন্ধ্যায় নুডুলস আর কফি খেয়েছে। প্রিয়া আমতা আমতা করে বলে,
“রাতে খেয়েছি তো। যান আপনি খেয়ে আসেন। টাটা।”
দ্রুত ফোন কা*ট করে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে। পাশে থাকা কুকিজের বয়াম খুলে কুকিজ খেতে থাকে। এই চকোলেট কুকিজ তার অনেক পছন্দের।
#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৭
টানা দেড় ঘণ্টা জারিফের থেকে পড়া বুঝে রাত বারোটায় শেষ হলো। প্রিয়া লম্বা হাই তুলে বলে,
“সব ক্লিয়ার। এইবার পরীক্ষার সময় মনে থাকলেই হয়। এতো পড়া উফ! ফাইনালটা শেষ হলে একটু শান্তি দশ-পনেরো দিনের জন্য। আচ্ছা শুনুন?”
জারিফ টেবিলের উপর গালে দুই হাত ঠেকিয়ে বসে বসে ল্যাপটপের স্ক্রিনে প্রিয়াকে দেখছিল। প্রিয়া জারিফের গতিবিধির উপর নজর দেয়নি। এবার প্রিয়ার ডাকেও জারিফ সেই একই ভঙ্গিতে বসে আছে। দৃষ্টিতে মা*দ*কতা। প্রিয়া কথা বলতে বলতে স্ক্রিনে জারিফের দিকে নজর গেলে ভ’ড়কে উঠে। থতমত খেয়ে যায় জারিফের পলকহীন দৃষ্টিতে। কপালের সামনে পরে থাকা চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়। কলম দিয়ে টেবিলে কিছুটা শব্দ করে যাতে জারিফ নড়েচড়ে বসে। কিন্তু জারিফ মোটেও নড়লো না। অনড় অবস্থায়ই ঠোঁট নাড়িয়ে বলল,
“বলো শুনছি।”
প্রিয়া অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলে,
“আপনি এভাবে থাকলে আমি তো বলতে পারব না।”
“কেনো আমার এভাবে থাকাতে তোমার কী সমস্যা?”
জারিফের কা*টকা*ট প্রশ্নে কিয়ৎক্ষণ মৌন রইল প্রিয়া। তারপর ঢোক গিলে বলল,
“না মানে সমস্যা না কিন্তু আমার কথা বলাতে মনোযোগ আসছে না।”
জারিফ হাতের উপর থেকে মুখ তুলে হালকা হাসলো অতঃপর চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বলল,
“নাও তোমার মনোযোগ ফেরানোর ব্যাবস্থা করলাম।”
প্রিয়া জারিফের মুখাবয়ব দেখে চমৎকার হাসলো।
“অ্যাই ফিল, অ্যাই অ্যাম দা মোস্ট লাকিয়েস্ট ওমেন ইন দিস ওয়ার্ল্ড! ডোন্ট নো হোয়াই।”
জারিফ চোখে হেসে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
“অনেক রাত হলো ঘুমাও। তিন দিন পর সেমিস্টার ফাইনাল। গুড নাইট।”
প্রিয়া কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ হলো। জারিফ বলে,
“নারীর অভিমানও সুন্দর যদি দৃষ্টিতে ভালোবাসা থাকে।”
থমকে যাক প্রহর একে অপরের নয়নযুগলে দৃষ্টি নিবদ্ধ থেকে। হৃদয়ে লুকানো প্রেম চোখের ভাষায় প্রকাশ পাক। পূর্ণ হোক হৃদয়।
__________
অপেক্ষমাণ সময় বড্ড দ্রুত গতিতে চলে। পরীক্ষার সময় মনে হয় ঘড়ির পেন্ডুলাম অতি দ্রুত গতিতে চলে। এক অস্থীরতা পূর্ণ মূহুর্ত। আজ ফাইনালের শেষ পরীক্ষা। পরীক্ষা দিয়ে এসে গ্রাউন্ডে একেকজন হাত-পা ছাড়িয়ে বসেছে। সাদ বলে,
“উফ কী যে এক প্যারার মধ্যে সপ্তাহটা পার করেছি! এটলাস্ট একটু রিলিফ পেলাম। এক্সাম যেমনই হোক না কেনো, এখন শান্তি শান্তি ফিলিং হচ্ছে। এই কয়টা দিন যেনো গ*লা কা*টা মু*র*গীর মতো ছটফট করেছি। এতক্ষণে জা*নে পানি এসেছে।”
সাদ কথাটা বলেই পাশে তাকিয়ে দেখলো ওর কথার সাথে কেউই তাল মিলাচ্ছে না। মেয়ে চারটা মাথা হাঁটুতে ঠেকিয়ে বসে আছে আর আয়ান ও রাদ ফোনে কি যেনো করছে। সাদ ভ্রুঁ কুঁচকে আয়ানের পেছোনে গিয়ে কাঁধ পেঁচিয়ে ধরলো। সাদ দেখলো আয়ান অনলাইনে বাসের কিছু একটা দেখছে। সাদ কিছুটা জোরেই বলে উঠলো,
“কী মামা! ফাইনাল শেষ হতেই ট্যুর প্ল্যান? আহা! তো কোথায় প্ল্যান করলি?”
সাদের কথায় ঝিমিয়ে থাকা বাকিরাও নড়েচড়ে বসে। অর্ষা বলে,
“নট ফেয়ার ইয়ার। কয়দিন পর প্রিয়ার বিয়ে। হাতে ছয়-সাত দিন আছে। এখন ট্যুর প্ল্যান করলে প্রিয়া যেতে পারবে না। ওর বিয়ের পর যাই। ও স্যারকে নিয়ে শর্ট হানিমুনে গেলো আর আমরা ট্যুর। জোস না?”
মাঝ থেকে রাদ বলে উঠে,
“না। জোস না। প্রিয়া হানিমুনে যাবে সেখানেও আমরা যাবো! তাও স্যারের সাথে? কেমন অ’ড লাগে।”
আয়ান ওদের এতো আকাশকুসুম চিন্তা-ভাবনাতে এক বালতি জল ঢেলে বলে,
“কেউ যাবে না। জাস্ট আমি একা। আমি কোনো ট্যুরে যাচ্ছি না। একটা কাজেই যাচ্ছি। ”
সাদ আয়ানের কাঁধে ধা*ক্কা দিয়ে বলে,
“আগেরবারও এই রকমই করেছিস। এবার আমরা যাবোই। অন্তত আমি ও রাদ তো মাস্ট। তোর কোনো কথা শুনব না।”
আয়ান ওদেরকে হতাশ স্বরে বলে,
“বিলিভ মি। এটা কোনো ট্যুর না। সাজেক, বান্দরবান, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন এসব কোথাও বা কোনো টুরিস্ট স্পটেই যাচ্ছি না। আমি খাগড়াছড়ি যাচ্ছি। একটা বিশেষ কাজে। আর্জেন্ট।”
“তোর আর্জেন্ট কাজে আমরা দুইজনও যাবো। দেখ সেমিস্টার ব্রেক। কোনো কাজ-কাম নাই। বাসায় শুধু শুয়ে বসে ঘুমানো ছাড়া। আমাদের জন্যও টিকেট বুকড কর।”
আয়ান ওদের বুঝানোর প্রয়াস করলো কিন্তু দুইজনের অকা*ট্য যুক্তিতে হার মেনে শেষে রাজি হলো। ওদিকে নিশি, মিম, অর্ষা, প্রিয়া বাঁকা নজরে এই তিন বন্ধুকে দেখছে। ওদের তিনজনের তো এই চারজনের দিকে সামান্যতমও ভ্রুঁক্ষেপ নেই। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ওদের মনোযোগ আকর্ষণে ব্যার্থ হলে মিম ব্যাগ থেকে কলম বের করে সাদের পিঠে গুঁ*তো দেয়।
“তোদের তিনটাকে সামনের খা*লে ফে*লে দিবো। এতো নি*র্দয় কেনো তোরা? আমাদের চারজনকে কি তোদের চোখে লাগে না? গোনায় ধরিস না আমাদের।”
আয়ান অসহায় কন্ঠে বলে,
“বিশ্বাস কর, এই দুটোকে যে নিচ্ছি এটাই তো আমার জন্য প্রবলেম হয়ে যাচ্ছে। তোদেরকে কিভাবে নিবো? দুইদিনে জন্য যাবো। কাল সকালে রওনা করব। পরশুদিন ও তার পরেরদিন থেকে রওনা করব। আর প্রিয়ার তো বিয়ে। তোদেরও তোড়জোড় আছে তাই না?”
“তাই না! এখন তো বাহানা। যাহ্ যাবো না।”
নিশির মুখ বাঁ*কানো কথায় আয়ান বিপাকে পরে গেলো। কিন্তু সত্যি সে ছেলো দুটোকে নিতে পারলেও মেয়েদের পারবেই না। হতাশ নিঃশ্বাসে অভিমান মেনে নিলো।
__________
ছাদে বসে পড়ন্ত বিকেলে চা বিলাশ করছে দুটো মানব-মানবী। এপ্রিলের শেষ দিন। প্রকৃতিতে গ্রীষ্মের তাপদাহ প্রখর হতে প্রখর। বিকেলের সময়টা কিছুটা শীতলতা বিরাজ করে। মুন্নি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চোখে হেসে আকাশ দেখছে। তার বিপরীতে বসা রাদিফ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মুন্নির মুখচ্ছবি বোঝার চেষ্টা করছে। হালকা টিয়া রঙের থ্রিপিসে ফর্সা গড়নে ফুটে উঠেছে। রাদিফ বলে,
“আপনি সবসময় আকাশপানে কী দেখেন?”
“আমার সুখ!”
মুন্নির ভাবলেশহীন জবাবে রাদিফ বিভ্রান্ত হয়ে হাসলো। মেয়েটার দৃষ্টি কিন্তু একটুও তার দৃষ্টিসীমা থেকে হটেনি। রাদিফ বলে,
“মানে?”
“একটা গান শুনবেন?”
মুন্নির হঠাৎ এহেনো নিঃসঙ্কোচ আবদারে রাদিফ মানা করতে পারলো না।
“দূর হতে আমি তারে সাধিব
গোপনে বিরহডোরে বাধিব
দূর হতে আমি তারে সাধিব
গোপনে বিরহডোরে বাধিব
বাধনবিহীন সেই যে বাধন
অকারণ
মায়াবন বিহারিনী
মায়াবন বিহারীনি হরিনী
গহন-স্বপন-সঞ্চারিণী
কেন তারে ধরিবারে করি পণ
অকারণ
মায়াবন বিহারীনি”
“জানেন এইটুকু আমার অনেক ভালো লাগে। মনে গেঁথে আছে একদম।”
রাদিফ মুগ্ধচিত্তে মুন্নির গান ও কথাগুলো শুনলো। মুন্নি এখন হাসি চোখে আকাশ দেখছে। রাদিফ বলে উঠলো,
“আপনি গান শিখেছেন কখনও?
ঘার ঘুরিয়ে রাদিফের দিকে চেয়ে বলে,
“হ্যাঁ ছোটোবেলায়।”
“আপনার গানের গলা খুব সুন্দর।”
“ধন্যবাদ।”
পরন্তু দুজনেই মৌন। আজ রাদিফ জলদি ফিরেছে কারণ কালকে সে শিফট হবে মেসে। রাদিফ এই কয়দিনে মুন্নির প্রতি খানিকটা দুর্বল হয়ে পরেছে। ইতস্তত করে বলে,
“আপনার ফেসবুক আছে? ফ্রেন্ডলিস্টে কী জায়গা হবে আমার?”
মুন্নি বলে,
“আপাততো ডিএক্টিভ।”
“আপনার বাবা-মা তো আজকে রাতের বাসে ঢাকা যাবেন। আপনার জন্য মালা খালাকে রেখে গেলেন। শুনেছি আপনার মামাতো ভাইয়ের বিয়ে। বিয়ের তারিখটা পেছোলেও পারতো।”
রাদিফের কথায় মুন্নির চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। কা*টকা*ট জবাব দেয়,
“না পারতো না। জলদি বিয়ে হলেই ভালো। সন্ধ্যা নামছে আমি নিচে গেলাম।”
এই বলে মুন্নি হনহন করে ছাদ থেকে নেমে গেলো। রাদিফ বোকার মতো বসে রইল। সে কী এমন বলল যে মুন্নি এভাবে চলে গেলো তা ভেবে পেলো না।
চলবে ইনশাআল্লাহ,