#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(১২)
কলির ম*রদেহ ফ্লোরে পরে আছে,নিষ্প্রাণ চোখ উন্মুক্ত, চারিদিকে র*ক্তে*র ছড়াছড়ি, দেয়ালে র*ক্ত দিয়ে বেশ বড় করে লেখা।
প্রমত্ত অঙ্গনা
কেসটা বিচলিত করল ইন্সপেক্টর জিসানকে,ছয় বছর আগে একজন পুরুষের লা*শে*র পাশে তার র*ক্ত দিয়ে একই নাম লেখা পাওয়া যায়,অনেক তদন্তের পরও সে অঙ্গাত খু*নি*কে এখনও খুঁজে পাওয়া যায় নি,এর দু’বছর পর তিনটে খু*ন হয় কয়েকদিন পর পর আর তাদের লা*শে*র পাশেও সেই একই নাম পাওয়া গিয়েছিল,র*ক্ত দিয়ে লিখা প্রমত্ত অঙ্গনা,আর আজ চার বছর পর আবারও লা*শে*র পাশে একই নাম বেশ চিন্তিত করল জিসানকে,কে এই প্রমত্ত অঙ্গনা!কেন সে এভাবে খু*ন করছে!আর এতো নিখুঁত তার কাজ যে কোনো প্রামাণ এখন অব্দি পুলিশ খুঁজে পায় নি তার বিরুদ্ধে।
কক্ষের বারান্দার এক কোণে অবস্থান নিয়েছে আদ্রিশ,আজ অনেক দিন পর হাতে আবারও সি*গা*রে*ট নিয়েছে,প্রতিটা নে*শা*ক্ত চুমুক মনে করিয়ে দিচ্ছে আঁখির স্মৃতি,আচমকা উৎফুল্ল হাসিতে তার গালে ফুটে উঠা সে টুলটা আজ খুব করে অধরে ছুঁয়ে দিতে মন চাইছে আদ্রিশের,চোখের সামনে ভাসছে আঁখির হুটহাট করে বেড়ানো দুষ্টুমিগুলো,কানে যেন বার বার বেজে উঠছে
খিলখিল করে মুক্তোঝরানো তার হাসির স্বর।আঁখির এভাবে আদ্রিশকে ছেড়ে নেওয়া মেনে নিতে পারছেই না সে।জীবনে যতই যে এসে যাক না কেন আঁখি যে তার জন্য আল্লাহ ব্যতীত সকল কিছুর উর্ধ্বে।আদ্রিশের জীবন জুরে এমন কিছু নেই যার স্পর্শ তাকে আঁখির কথা প্রতিনিয়ত মনে না করিয়ে দেয়। আঁখিকে ছাড়া একেকটা দিন হাজার বছরের সমান মনে হচ্ছে আদ্রিশের কাছে,আঁখিকে ফিরিয়ে তার আনতেই হবে,যতই যা অসাধ্য তাকে সাধন করতে হয় না কেন সে করবে ভেবে নিয়েছে।হঠাৎ পিছন থেকে তাকে বেশ শক্ত করে জড়িয়ে ধরল রিদিকা,আদ্রিশ সিগারেট ফেলে পাক ফিরে রিদিকাকে বিনা বাক্যে বুকে টেনে নিল,তার স্পর্শে আঁখির ছোঁয়া অনুভব করতে চাইল তবে ব্যার্থ হলো,আঁখির ছোঁয়া পৃথিবীর এমন কোনো নারী নেই যার সংস্পর্শে গিয়ে ভুলে যাবে আদ্রিশ।শান্ত গলায় বলল এবার।
আমি আঁখিকে খুব ভালোবাসি রিদিকা।
আঁখির হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তাটা পরে আদ্রিশের বাড়ির সামনা দিয়ে, ভালোবাসার মানুষটির বাসস্থানের সামনে দিয়ে যেতেও বুক কাঁপে আঁখির বার বার।কতটা হাস্যকর ব্যাপার, একসময় এটাই ছিল তার স্থায়ী ঠিকানা তার স্বপ্নের মহল,সে মহল আর সেই রাজপুত্র উভয়েই যে এখন অন্য নারীর রাজত্ব,কথাটা ভাবনায় আসলে বুক ফেঁটে কান্না নামে আঁখির,রোজ যাওয়ার সময় বাড়িটার উপর চোখ বুলিয়ে যায়,আজও সেদিকটায় যাওয়ার ক্ষনে চোখ উঁচিয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে বাড়িটার দিকে তাকাতেই চোখে গেল আঙ্গাঙ্গি করে দাঁড়িয়ে থাকা যুবক আর রমণীর উপর,চোখে যেন ম*রি*চ পরল আঁখির,বুকের ভিতরটা চূ*র্ণ বি*চূ*র্ণ হয়ে গেল এক নিমিষেই, তড়িৎ বেগে কান্না এলে ঠোঁট চেপে তা দমাতে চাইল,চোখ সরিয়ে নিল তাড়াতাড়ি সেই নোংরা দৃশ্য থেকে,আদ্রিশ এতটা নিচে নামবে জানলে তাকে কখনও জীবনে জড়িয়ে নিত না,আজকে আঁখির তার বাবার বলা আদ্রিশকে নিয়ে কথাগুলো বড্ড মনে পরল,তার বাবা ডা.আশরাফ খান বলেছিলেন নোংরাকে কখনও পরিষ্কার করে রাখা যায় না,যার বংশে নড়চড় তার ভবিষ্যতে প্রজন্ম মজবুত হবে কেমনে,শুধু শিক্ষা কারো ডিএনএ পাল্টে দিতে পারে না,বংশের দোষ থেকেই যায়।কথাগুলো হারে হারে আজ মিলে যাচ্ছে আঁখির জীবনের সাথে,তবে না আদিল ভাইয়া তো এমন হন নি,ওর শরীরেও তো একই বংশের রক্ত,আসলে সবকিছুই ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভর করে,হয়তবা কাপুরুষ হতে বংশ লাগে না কয়েকটা লক্ষণই যথেষ্ট।এসব ভাবনার দখলে পরে রাস্তা কাটাতে লাগল আঁখির।
আদ্রিশের বলা কথাটায় শরীরে জ্ব*ল*ন শুরু হল রিদিকার,স্বামীর মুখে অন্য নারীর নাম– হোক না সে তার প্রথম স্ত্রী, স্বামী তো তারও,স্বামী ভাগ কোন নারী অন্যকে দেয়!জ্ব*ল*নে*র ভাবনা ধামাচাপা দিয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করল রিদিকা।
আদ্রিশ আবারও বলল।
আসলে রিদিকা ওকে কতটা ভালোবাসি আমি জানি না,শুধু জানি ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারি না,দম বন্ধ লাগে আমার,ও কোনো মতেই ফিরে আসতে চাইছে না,কিন্তু আমিও হার মানব না,ওকে যে ফিরতেই হবে,তুমি দেখে নিও ও আসবে।
রিদিকা এবার মুখ উঁচিয়ে আদ্রিশকে বলল।
″এতই যখন ওকে ভালোবাসো তবে আমায় কেন আনলে জীবনে? কেউ সতী*নে*র ভাগ মেনে নেয় না,আমি তো তাও মেনে নিয়েছি আঁখির কথা ভেবে কারণ আমি ওকেও যথেষ্ট ভালোবাসি,একসাথে তো থাকতেই পারতাম,কিন্তু ও তো হিং*সে করে চলে গেল আমায়,এতে আমার বা তোমার তো কোনো দোষ নেই।
″খবরদার যদি ওকে হিংসুটে বলেছ তো।ভুলে যেও না ও আমার প্রথম স্ত্রী, আমার মনের রানী,ওর বিরুদ্ধে কোনো একটা শব্দও সহ্য করব না আমি।″
আদ্রিশ বেশ রেগে গিয়ে রিদিকাকে নিজ থেকে ছাড়িয়ে দিল,কর্কশ স্বরে কথাগুলো শুনিয়ে চলে গেল,রিদিকা বেশ অবাক হলো আদ্রিশের ওর সাথে করা এমন আচরনে, আজ দেড় বছর ধরে আঁখি আদ্রিশের সাথে থাকছে রিদিকা,কই কখনও তো আঁখির সাথে এমন আচরণ করতে দেখে নি আদ্রিশকে,আঁখি বরং অনেক রাগ অভীমাণ করত আদ্রিশের সাথে কিন্তু আদ্রিশ সে তো সর্বকালের বিবাগী ছিল আঁখির,তার রাগ অভীমাণ অনায়াসে মেনে নিত,কতো আদর ভালোবাসা ছিল তার আঁখির প্রতি,তবে রিদিকার ক্ষেত্রে তা কেন মিলছে না!রিদিকাও তো তার স্ত্রী আঁখির ন্যায়,তবে কেন বেদাবেদ?সেদিন আদ্রিশের সামনে আঁখি মারল রিদিকাকে কিন্তু আদ্রিশ তো তাকে তেমন কিছু বলল না।আর আজ রিদিকার বলা আঁখির বিরুদ্ধে অল্প একটা শব্দও সহ্য হলো না আদ্রিশের।
আঁখি আদ্রিশের ডিভোর্সের খবর মিডিয়াতে চলে গেছে,কাজে পৌঁছানোর পর থেকে অনেক জবাবদিহিতার সামনে পরেতে হয়েছে আঁখিকে,চারিদিকেই খবরটা ছড়াছড়ি পেয়ে গেছে অল্পসময়ে,তবে উক্ত বিষয় থেকে বেশি চিন্তিত করছে আঁখিকে অন্য কিছু,কলি তো মারা গেছে তবে খবরটা কে ফাঁস করল।কলির মৃত্যু সংবাদের আতঙ্ক এখনও কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় নি ,উপর থেকে এসব,সকাল হতে না হতেই ফেসবুকেই কলির মৃ*ত্যু সংবাদ পায় আঁখি।যতটুকু আঁখি জানে কলি খবরটা ফাঁস করে নি,তবে কে করল এমনটা?প্রশ্নটা বড্ড বিরক্তি নিয়ে এলো আঁখির মস্তিষ্কে।
কলির মৃ*ত্যু এদিকে আঁখি আর তার বিচ্ছেদের ব্যাপার যা নিয়ে এখনও তাদের নিজেদের মধ্যেই কথা হয় নি ভালো করে তা মিডিয়ার চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়াল,ইতিমধ্যে আশপাশের লোক সমালোচনা শুরু করে দিয়েছে বিষয়টা বড্ড লজ্জার লাগছে আদ্রিশের কাছে।কে ফাঁস করল তবে ব্যাপারটা?কলি তো মা*রা গেছে তার মৃ*ত্যু*র ১৬ ঘন্টা পর খবর বের হয়েছে,তবে এমনও হতে পারে খবরটা কলি আগে তার স্টাফকে দিয়ে রেখেছিল আর তারাই খবরটা ফাঁস করেছে এমন ভাবনা এলো আদ্রিশের মনে,কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো কলিকে মারল কে!তাও তার কক্ষের দেয়ালে প্রমত্ত অঙ্গনা লিখা পাওয়া গেছে,আদ্রিশ অনেক সময়ই আদর করে আঁখিকে প্রমত্ত অঙ্গনা বলে ডাকত,কারণ আঁখি আদ্রিশকে নিয়ে বেশ পা*গ*লা*মি করত তাই,কিন্তু তার আঁখি কারো খু*ন করতে পারে না জানে আদ্রিশ,তবে সেই প্রমত্ত অঙ্গনা আসলে কে?
″স্যার আপনি তো এবছর তিনজন নতুন সার্জন নিতে চেয়েছিলেন আমাদের হাসপাতালে, তাই তো বেস্টদের লিস্ট চাইলেন,আর এখন যে সবার থেকে খ্যাত–যে আমাদের হাসপাতালের জন্য গর্ব হয়ে দাঁড়াবে তাকেই আনতে চাইছেন না।ডা.আঁখি ব্যতীত বাকি যে কাউকেই আপনি সিলেক্ট করে নিলেন!কেন স্যার?
″আমাকে কাজ শিখাতে এসো না ডা.রায়হান,ভুলে যেও না আমি সবার সিনিওর, হাসপাতালের ওনার।″
″সরি স্যার,কিন্তু ন্যায় আর সত্যের শিক্ষা আপনার কাছ থেকেই পাওনা আমার,আপনি আমার গুরু,আমি আপনার অনেক সম্মান করি,কিন্তু এ বিষয়ে আপনার সাথে মত মেলাতে পারলাম না আমি,তাই দুঃখীত।ব্যক্তিগত জীবনকে কখনও প্রোফেশনাল লাইফে না জরানোর শিক্ষা আপনিই দিয়েছেন,সেটা এখন আপনি নিজে ভুলে গেলে বাকিরা কি শিখবে স্যার আপনার কাছ থেকে?আপনার হাসপাতাল আপনার যা ইচ্ছে তাই করবেন আমি তো শুধু আমার মতামত জানালাম।চলি স্যার আমার ডিউটি আছে।″
কথাগুলো বলে চলে গেলেন ডা.রায়হান,ধাতব মুর্তির ন্যায় সেখানে দাঁড়িয়ে রইলেন ডা.আশরাফ খান।
আঁখি আদ্রিশের বিচ্ছেদ হতে চলেছে খবরটা জানতে পেয়ে অবাকের শীর্ষে পৌঁছাল আদৃত,পরিষ্কার জানানো হয়েছে সেখানে– লয়্যার আদ্রিশ রাহমান প্রথম স্ত্রীর অমতে দ্বিতীয় বিয়ে করে নেন যার ফলস্বরূপ তার প্রথম স্ত্রী ডা.আরশিয়া আনজুম আঁখি তাকে ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন,বর্তমানে উনি স্বামীর ঘর থেকে আলাদা অবস্থান করছেন।খবরটা শুনে যেন আদৃতের পায়ের নিচ থেকে মাটি বিচ্যুত হয়ে গেল।নিজের কানে ও চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না আদৃত,যার সুখের জন্য নিজের জীবন অন্ধকারে ভরে নিল আজ সে দুঃখের সাগরে ভাসছে,ভেবেই র*ক্ত জ্বলে উঠল আদৃতের,ইচ্ছে করল এখনই গিয়ে আদ্রিশের প্রাণ নিজ হাতে নিয়ে নিক।সাহস হল কি করে আদ্রিশের তার সুখপাখিকে পী*ড়া দান করার,না, পারল না আদৃত নিজেকে সংযত করতে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বেড়িয়ে গেল বাড়ি থেকে,পিছন থেকে মা ডেকে উঠলেন।
″আদৃত বাবা আমার কোথায় যাচ্ছিস?″
″ল*ম্প*ট কে তার জায়গা দেখিয়ে দিতে।″
ছেলেকে কখনও এমন রুপে বা এমন কথা বলে কোথাও বেরুতে দেখেন নি শায়েলা মির্জা,অত্যন্ত শান্ত আর গম্ভীর চরিত্রের অধিকারী আদৃত,কিন্তু আজকে যেন কোনো আলাদা এক আদৃতকে দেখতে পেলেন উনি।
মেয়ের বিষয়ে নিউজ দেখে ব্যাথাপূর্ণ হলো বাবার মন,এই ভয়েই যে মেয়ের সেই আবদার মেনে নিতে নারাজ ছিলেন উনি,কলিজার টুকরার গায়ে ফুলের টোকারও ভয় যে এখনও সেই বাবার হৃদয়ে সমপরিমাণ রয়ে গেছে,সন্তানেরা মা বাবাকে পলকেই পর করে দিতে পারলে বাবা মা যে কখনও পারেন না তাদের জীবন থেকে মুছে ফেলতে।
আদ্রিশ বেশ চিন্তিত হয়ে বসে আছে,কাজে আসলেও মন লাগছে না তার,হঠাৎ কেউ সেখানে প্রবেশ করলে চোখ তুলে তাকালো,ছয় বছর পর ডা.আদৃতকে দেখে চমকে গেল সে,আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল।
″ডা.আদৃত আপনি,ছয় বছর পর?″
″হ্যাঁ আমি,হয়ত আল্লাহই আমাকে এখানে আনিয়েছেন আঁখি সুখে আছে আমার এই ভ্রুমটা ভেঙে দেওয়ার জন্য।″
″আপনি কি বলতে চাইছেন ডা.আদৃত?″
আদৃত এবার অতিরিক্ত রাগে এগিয়ে গিয়ে আদ্রিশের কলার চেঁপে ধরে বলল।
″সহজ ভাষায় বুঝিস না,তাই না?তুই ভালোয় জানিস আদ্রিশ আঁখিকে নিয়ে আমি কতটা সিরিয়াস,ভুলে যাস নে সেদিন আঁখি সামনে না এলে তোর হাত উপরে ফেলতাম আমি আঁখির হাত ধরে টান দেওয়া নিয়ে,যেটা শুধু অল্প একটা কারণ ছিল।সে জায়গাতে আঁখির পাশে তোকে মেনে নিয়েছি শুধু আঁখির সুখের কথা ভেবে,কিন্তু ভুলে যাস নে আমি সেই আদৃত,এখনও আঁখিকে ততটাই ভালোবাসি,ওর গায়ে ফুলের আঁচড়ও সইব না আমি।″
″ডা.আদৃত আপনি কিন্তু লিমিট ক্রস করছেন,শক্তি শুধু আপনার শরীরে নেই আমারও আছে,আপনার সম্মান করছি বলে ভাববেন না ভয় পেয়ে আছি,আঁখি আমার স্ত্রী, আর আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আপনি কথা না বললেই খুশি হবো।″
কথাটা কানে যেতেই ধাক্কা মেরে আদ্রিশকে ফ্লোরে ফেলে দেয় আদৃত,বেশ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠে।
এখনই দেখিয়ে দিতে পারতাম কার গায়ের জোর কত বেশি তবে তোর মতো কা*পু*রু*ষের গায়ে হাত তুলে আমি নিজের হাত নষ্ট করতে চাই না।আর কথা রইল আঁখির, পেয়ে যার মর্ম করতে পারিস নি তাকে ফিরে পাওয়ার আশা কি করে রাখিস।আঁখিকে দ্বিতীয়বার ফিরে পাওয়ার ভ্রমে পরে থাকিস না,ভালো হবে না তোর জন্য।
আদৃত চলে আসলো সেখান থেকে,আদ্রিশের ভিতর তোলপাড় হতে শুরু হলো,আদৃত ফিরে এসেছে এখন যদি সে আবারও আঁখির মন জয় করে যায় তখন কি হবে আদ্রিশের!না,এতোকিছুর বিনিময়ে এতো সাধনার পর আঁখিকে পেয়ে আদ্রিশ তাকে হাতছাড়া করবে না কোনো কিছুর বিনিময়েও।
পাহাড় পরিমাণ দুঃশ্চিতা নিয়ে একটা সার্জারি সেরে এসে বসল আঁখি,হাসপাতাল টা ছেড়ে দিবে ভাবছে,আর সেই রাস্তা দিয়ে আসার সক্ষমতা নেই তার।পারবে না মনের এমন দূরাবস্থা রোজ মানিয়ে নিতে,সকালের সেই দৃশ্যটা বার বার চোখে ভাসছে আঁখির।এমন কতশত সকালের শুরু এভাবে হতো আঁখির তা শুধু সেই জানে।
একদিন সকালবেলা আঁখি কক্ষের বারান্দার প্রান্তে দাঁড়িয়ে রাস্তায় গাড়ি চলাচল দেখছিল,সহসা তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আদ্রিশ,বেশ অভিমান নিয়ে আঁখি নিজে থেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে তাকে,আদ্রিশ এদিকে তার ঘাড়ে পা*গ*লে*র মতো চু*মু দিয়ে যাচ্ছে।
″ছাড়ো আমাকে আদ্রিশ।″
″সারারাত আদর করতে দাও নি,এবার আর ছাড়ছি না তোমায়,কতো সরি বলার পরও ছাড় দিলে না তুমি আমায়,তবে আর নয় অভিমান,অনলি ভালোবাসা।″
″স্মোক কারিদের ভালোবাসি না আমি।″
″আমায় তো বাসো? ″
″না।″
″এমনটা বলো না বুকে বড্ড পীড়া অনুভব হয় ফুলপরি।″
″হুম আমার তো বুকে কখনও কোনো পীড়া হয় না,আমি তো রোবট, অনুভুতিহীন।″
″আরে এমনটা কেন বলছ,বললাম তো ছেড়ে দিব একদম,আর ভুলেও হাত লাগাব না ওসবে,ভেবে দেখে আগে দিনে চারটে খেতাম আর এখন ছয় মাসে একটা,তোমার জন্য কতো বড় পরিবর্তন ঘটিয়ে নিলাম আমি,তুমি কি খুশি নও।″
″না,পুরোপুরি ছাড়তে হবে।″
″একটু সময় তো দাও।″
″ওকে দিলাম,ততদিন যতদিন তুমি আমার পাশে না এসে থাকতে পারবে।″
″ও মা এ কি বলে,এমনটা হলে তো এই ক্ষনেই সি*গা*রে*টের বংশ নাশ করলাম জীবন থেকে।চলো এবার ভালোবাসায় ভরিয়ে দেই তোমায়।″
অতঃপর আদ্রিশ আঁখিকে পাজকোলে নিয়ে কক্ষের পানে হাঁটা দিল,দুষ্টামিতে আঁখি মোচড়ামুচড়ি করছে আর হাসছে।
কি করছো আদ্রিশ ছাড়ো,আরে কাজ আছে তো,আল্লাহ এই কোন পাগল জুটল আমার কপালে।ছাড়ো আদ্রিশ।হা হা হা
চলবে………