একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব -৪৫+৪৬

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
৪৫+৪৬
#WriterঃMousumi_Akter.

ছোঁয়া ওশানের ঘরে প্রবেশ করেই ধপ করেই ঘরের দরজা লাগিয়ে দিল।তাতে বিকট শব্দ হলো।ওশান দ্রুত গিয়ে ঘরের দরজা ধাক্কাতে শুরু করল আর ছোঁয়াকে ডাকাডাকি শুরু করল।কিন্তু ছোঁয়া কিছুতেই ঘরের দরজা খুলছে না।ওশান রাগে কটমট করতে করতে ওর মায়ের সাথে ঘরভর্তি মানুষের সামনে বিশ্রী ব্যবহার করল।দাঁত কিড়মিড় করে বলল, “আম্মা সামান্য একটু পড়ে গিয়ে কি তুমি ম” রে গিয়েছ?মানুষ আর পড়ে না তাই না?তুমিই কি আজ প্রথম পড়লে?দুনিয়ার যত্তসব ভনিতা তোমার কাছে।একটু পড়ে গিয়েছ তাই বলে এমন আহামরি কিছু হয়নি।মানে যা তা ক্লাসের মহিলা তুমি!কী দরকার ছিল ছোঁয়ার সাথে ওমন ব্যবহার করার?ও কি তোমাকে ইচ্ছা করে ফেলেছে?বাড়িতে পা না দিতেই তুমি বললে কি না ও তোমাকে ফেলে দিয়েছে!ও এখন ঘরে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।সোনার চামচ মুখে দিয়ে বড়ো হয়েছে।সামান্য কারো কথাও ওর গায়ে সয় না।এখন যদি উলটা-পালটা কিছু করে বসে!আমি কিন্তু তোমাকে ছা’ ড়’ ব না।”

শাশুড়ি বোধহয় স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি তার ছোটো ছেলে এমন বিশ্রী ব্যবহার করবে।চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে ওশানের দিকে।

মামি শাশুড়ি বললেন, “ছিঃ!ছিঃ! ওশান!তোমার মা তোমার জন্য কী না করে!সেই মায়ের সাথে এভাবে কথা বলছ তুমি?”
‘ফোঁড়ন না কেটে বাড়ি যান তো মামি।আপনাদের ডেকেছি এখানে?এই আপনারা সবাই যে যার বাড়িতে যান তো। ভীড় কইরেন না।কী দেখতে এসছেন?সার্কাস হচ্ছে না কি দাওয়াত করে নিয়ে এসেছি?’
ওশানের মামি অপমানিত হয়ে বলল, “এখানে কি আমরা থাকতে এসেছি?জিনাত চল এখান থেকে।ছিঃ!ছিঃ!একদিন বউ এনেই কী যা তা ব্যবহার!ওশানের মা এইবার দেইখো তোমার কপালে দুঃখ আছে।”
জিনাত বলল, “আহা মা! দেখছ না ওশানের মাথা ঠিক নেই। তোমরা যাও আমি আসছি।”
‘তুমি কেন থাকবে এখানে?’
‘সার্কাস দেখতে থেকে যাচ্ছি।’

ওশানের মামিসহ পাড়ার সবাই যে যার বাড়িতে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পরে ছোঁয়া ঘরের দরজা খুলল। পরনে কচি কলাপাতা রঙের একটা থ্রী পিছ।থ্রী পিছটা তো তন্ময়ের দেওয়া।ছোঁয়ার হাতের ঘড়িটাও তন্ময়ের।তন্ময়ের সব কিছু নিজের শরীরে জড়িয়ে ওশানের সাথে কেন এলি ছোঁয়া!
ছোঁয়া বাইরে বের হলে ওশান ছোঁয়ার মুখে হাত দিতে গেলেই ছোঁয়া তড়িৎ বেগে সরে গিয়ে বলল, “এভাবে ডাকছিলে কেন আমাকে?”
‘আমি ভাবছিলাম মায়ের কথায় ভেতরে কোনো অঘটন ঘটাচ্ছো কি না।’
‘অদ্ভুত!তোমার মায়ের কথায় আমি কেন সু’ ই’ সা’ ই’ ড করতে যাব?একটু বেশিই ভেবে ফেললে না?আমার জীবন কী এত সস্তা ওশান,যে তোমার মায়ের কথায় সুইসাইড করতে যাব?যখন সুইসাইড করা উচিত ছিল আমিতো তখন লই সুইসাইড করলাম না।নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ আমি কত বেশি স্ট্রং।’
‘এখনো রে’ গে আছো?’
‘নো!রে’ গে নেই।জীবনের সব থেকে ভালো একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে কেমন একটা প্রশান্তি অনুভব করছি ওশান।ট্রাস্ট মি,টুডে আই আম সো হ্যাপি।আমি আমার লাইফের সব থেকে বেষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।এতদিন আমায় ছাড়া অনেক কষ্টে ছিলে তাই না?আমি এসে গিয়েছি তো!তোমার পুরা লাইফ যাতে সুন্দরভাবে কাটে সে ব্যবস্থাই করব।’
‘ যাক!এখন একটু শান্তি পেলাম।আম্মার কথায় তুমি কিছু মনে করনি তো?’
‘মনে করার কি কথা নয়?এ বাড়িতে কি আমি সেধে এসেছি?আমার আসাতে যদি উনার অসুবিধা হয় তাহলে আগেই বলে দিতে পারতেন।আমি তো উনাকে ফেলে দিইনি।তাহলে কেন বলল ফেলে দিয়েছি?এটা বলে উনি কী বুঝালেন?বাড়ির বউ খারাপ?এ বউ রাখা যাবে না?’
‘না না আম্মা এসব ভাবেনি ছোঁয়া।’
‘না ভাবলে কেন বললেন?উনার বলার কী উদ্দেশ্য ছিল?’
‘আচ্ছা আম্মার হয়ে স্যরি বলছি।’
‘তুমি কেন স্যরি বলবে?যে ভুলটা করেছে তাকেই স্যরি বলতে বলো।’
‘আচ্ছা বলছি তুমি মাথা ঠান্ডা করো প্লিজ।আম্মা তোমাকে স্যরি বলবে।’
ওশান হনহন করে ওর আম্মার রুমের দিকে গেল।
এতক্ষণে আমি সুযোগ পেলাম ছোঁয়ার সাথে কথা বলার।ছোঁয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।ছোঁয়া আমার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল।আমার চোখ-মুখ জুড়ে রয়েছে বিস্ময়।ছোঁয়া বুঝতে পারল হাজারও প্রশ্ন আমার ভেতরে। বেশ কঠিন গলায় বললাম, ”এসব কী ছোঁয়া?কী হচ্ছে এসব?তোর কি রুচিতে বাঁধল না এই কুলাঙ্গারের সাথে আসতে?”
আমার প্রশ্নে ছোঁয়া কোনো উত্তরই দিল না।ওর চোখ-মুখ জুড়ে ভ*য় দেখছি আমি।
আমি আবারও প্রশ্ন করলাম, “ওশান তোকে ফাঁসিয়েছে তাই না?বল কী করেছে। আমি ওশানকে লাল ঘর দেখিয়ে ছাড়ব।”
এরই মাঝে ওশান আর তার আম্মা এদিকে আসছে।ছোঁয়া আমাকে বলল,
”প্লিজ সারাহ আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না তোকে।নিজের বিপদ ডাকিস না।”
‘কীসের বিপদ?’
ছোঁয়ার হাত চেপে ধরে বললাম, “বল আমাকে।তোকে বলতেই হবে।”
এরই মাঝে ওশান চলে এলো।ছোঁয়া আমার হাত জোরে ঝাড়া মেরে বলল, “কী হচ্ছে কী এসব?কী জানতে চাস?দেখছিস তো বিয়ে করেছি,আলাদা করে জানার কী আছে?”
এটুকু বলেই ওশানের দিকে তাকাল।ওশানের মা বেশ নত হয়ে বললেন,
“আমার কথায় কিছু মনে করো না মা।”
ওশান আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “কী ব্যাপার ওভার কনফিডেন্সের রাণী?আমি ওশান।আমাদের মতো ছেলেরা কখনো হারে না।তাই ফিউচারে ভুলেও আমার সাথে চ্যালেঞ্জ নিতে এসো না।”
‘চলো ছোঁয়া ‘
‘কোথায়?’
‘রুমে।’
ওশানের আম্মা বললেন,”আগে খেয়ে নাও মা। এসো ডায়নিং-এ খাবার দিয়েছি।”
আমার দিকে বললেন, “রোশান কি খাবে না সারাহ?”
‘হুম খেয়ে ওষুধ খাবে।’
‘চলো ওর খাবার নিয়ে যাও।’
ডায়নিং টেবিল জুড়ে আজ কয়েক পদের রান্না হয়েছে।আমি,জিনাত,ছোঁয়া,ওশান সবাই বসেছি।শাশুড়ি ভাঙা কোমর নিয়ে তীব্র ব্যাথা নিয়েও খাবার সার্ফ করছেন।
ছোঁয়ার প্লেটে বড়ো মাছে দিয়ে বললেন, “মা আমি নিজ হাতে সব তোমার জন্য করেছি।”
ছোঁয়া প্লেটে ভাত নাড়াচ্ছে আর নিচু হয়ে তাকিয়ে আছে।চোখ ভরা পানি।একটা ভাতও মুখে দিল না।জিনাত আর ওশান তৃপ্তি করে খাচ্ছে।আমিও খাবার খাচ্ছি না।প্লেটে শুধু আঙুল দিয়ে খাবার নেড়ে যাচ্ছি।ছোঁয়ার দিকে অভিজ্ঞ নয়নে তাকিয়ে আছি।ওঁর কান্নার কারণ তন্ময়।হৃদয়টা জর্জরিত হচ্ছে ছোঁয়া সহ্য করতে পারছে না।বাম হাত দিয়ে চোখের পানি মুছল।জিনাত বলল, “ছোঁয়া এত দেরি করে এলে কেন এ বাড়িতে?আরও আগে এলেই কিন্তু ভালো হতো।দেখেছ আমার ফুপি তোমাকে কত ভালোবাসে?ভালোবেসে নিজ হাতে সব রান্না করেছে।খেয়ে নাও বুঝছ।’
ওশান বলল, “খেয়ে দেখো কী টেস্টি হয়েছে!আম্মার হাতের রান্না আমি আর ভাইয়া হাত চেটে খেয়েছি আগে।”

আমি বুঝতে পারছি ছোঁয়ার মুখ দিয়ে খাবার নামছে না।ও খাবার মুখেও নিতে চাইছে না।সবার বলাতে জোর পূর্বক খাবার একবার মুখে নিয়েই উঠে দাঁড়াল ছোঁয়া। ইয়াক বলে মুখের খাবার ছুঁড়ে মারল।শাশুড়ি আর জিনাতের চোখে-মুখে ঝাল তেলের তরকারি লাগল।এরপর মুখ সিঁটকে বলে উঠল, “ইয়াক থু!এটা কোনো খাবার হলো?এসব খাবার মানুষ রান্না করে?এর থেকে আমাদের বাসার কাজের বুয়া রহিমা খালাও বেটার রান্না করে।এত বয়স হয়ে গিয়েছে এখনও ঠিকভাবে রান্নাটাও শিখেননি?আপনার ছেলে এই খাবার খাওয়ানোর জন্য আমাকে প্রেশার দিয়ে যাচ্ছে!এত দামি মাছ,তরকারী এত জঘন্য ভাবে রান্না করে নষ্ট করলেন?”
‘আসলে অনেক দিন রান্না করি না তো এইজন্য মা।’
জিনার আর শাশুড়ির চোখ-মুখ ঝালে জ্বলে যাচ্ছে।জিনাত ছোঁয়ার ওড়না টেনে নিজের মুখের ঝাল তেল মুছে বলল, “মুখ জ্বলে যাচ্ছে আমার।”
ছোঁয়া ক্রোধান্বিত চোখে জিনাতে দিকে তাকিয়ে সেই এঁটো হাতেই ঠাস ঠাস করে জিনাতের দুই গালে দুইটা থা’ প্প’ ড় মে- রে বলল,
“হাউ ডেয়ার ইউ!হাউ ডেয়ার ইউ রাস্কেল?আমার এই ড্রেসটা লাখ টাকা দামের ড্রেসের থেকেও দামী।তুমি কোন সাহসে আমার ওড়নায় তোমার হাত মুছলে?ছোটোলোক কোথাকার।”

এটুকু বলেই ছোঁয়া চলে গেল।এত কিছুর মাঝেও জিনাতের দুই গালে তেল আর ঝোলের দাগ দেখে ফিক করে হেসে দিলাম আমি।হেসে দিয়ে সামান্য কিছু খাবার নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম।
কানে হালকা হালকা ভেসে আসছে।জিনাত বলছে, “ফুপি ছোঁয়া কিন্তু এসব ইচ্ছা করেই করছে।”
‘আমরাও বুঝতে পারছি, দুইদিন যাক মানিয়ে নিতে সময় দে।’
_____________________
রুমে এসে দেখি উমি ঘুমিয়ে পড়েছেন।ওষুধের প্যাকেটও খোলা।ওষুধ খেয়েই কি ঘুমিয়েছেন!উনার কাপালে হাত বুলিয়ে পাতলা একটা কাঁথা গায়ে জড়িয়ে দিয়ে তন্ময়ের নাম্বারে ফোন দিলাম।তন্ময় ফোন তুলছে না।এরপর মৃন্ময়ের নাম্বারে ফোন দিলাম।
মৃন্ময় ফোন তুলে বলল, “কই ছিলি তুই?ফোনের পর ফোন দিচ্ছি।”
‘তোরা আমাকে হাসপিটালে রেখে কই পালালি?’
‘তোর জামাই রোশান স্যার,এর মানে আমাদের ক্যারিয়ার ধ্বংসের পথে এখন।’
‘হোপ,ওসব বাদ দে।তন্ময় কই?ওর খেয়াল রাখিস। যেন খারাপ কিছু না করে।’
‘সারাহ,মানুষ মানুষকে এতটা ভালবাসে আর এতটা বিশ্বাস কীভাবে করতে পারে?ভেবেছিলাম তন্ময় নিজের কথা ভাবছে।কিন্তু না।তন্ময় বলছে,
“আমি জানি ছোঁয়া আমাকে ভালবাসে।আমি ছোঁয়ার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি,তীব্র ভালোবাসা।এক সমুদ্র সমান ভালোবাসা।ছোঁয়া নিজের ইচ্ছায় যায়নি ওখানে।ছোঁয়া নিজের ক্ষতি করে ফেলবে।সারাহ যেন ছোঁয়ার খেয়াল রাখে।”
‘তন্ময় কী করছে এখন?’
‘নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে বুকে হাত বেঁধে।হয়তো তীব্র কষ্টগুলো বিশাল আকাশ আর বহমান স্রোতস্বিনী ওঁর দীর্ঘশ্বাসটুকু ভাগ করে নিচ্ছে।তন্ময়ের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না সারাহ!তন্ময়ের ব্যাথিত হৃদয় হাহাকার করছে।শুধু টানা নিঃশ্বাস নিচ্ছে আর বলছে,”ছোঁয়া ম” রে যাবে!”
‘ছোঁয়ার কিছুই স্বাভাবিক লাগছে না মৃন্ময়।ছোঁয়াকে তো আমরা চিনি।ও কি ওই টাইপ মেয়ে যে ওশানের মতো ছেলেকে বিয়ে করবে?’
‘ছোঁয়া আমি সারাজীবন জেলে থাকব বা ফাঁসি হোক,কোনো সমস্যা নেই আমার।কিন্তু আমি ওশানকে খু” “ন ক’ ‘রে ফে’ ল’ ব।ছোঁয়ার লাইফটা নষ্ট করে ফেলছে,আর তরীর সাথে যা করছে আমি ওই মাদারবোর্ডকে কী করব গ্যারান্টি দিতে পারছি না!’
‘আর আমার তো এ বাসায় থেকেই মনে হচ্ছে পু’ তে ফেলে জেলে যায়।এই এক ওশানের জন্য আমাদের সবার জীবনটা কেমন বিশ্রী হয়ে গেল।’
‘ওর শাস্তির দরকার বুঝলি।চরম শাস্তি।’
‘কিন্তু এর মাঝে ছোঁয়া যদি নিজের ক্ষতি করে!’
‘ছোঁয়ার মুখ ওঁর মা-বাবা আর কোনদিন দেখবে না বলে দিছে।ওঁর খোঁজ নিতে গেছিলাম ওঁদের বাড়িতে। ওঁদের বাড়িতে তুমুল অশান্তি শুরু হয়েছে।কোন মা-বাবা চাইবে না একটা চরিত্রহীন ম্যারিড ছেলের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে হোক। জানিস সারাহ,কিছু একটা চলছিল!ওঁর মা বলল ছোঁয়া নাকি গলায় দড়িও দিয়েছিল।কিন্তু কী কারণে দিয়েছিল সেটাও তাঁরা জানেন না।হাজারবার প্রশ্ন করেও কোনো উত্তর পাইনি ওঁর মা।’
‘ছোঁয়া একবার শেয়ার করুক আমার সাথে,বাকিটা বুঝে নিচ্ছি।’

ফোন কেটে রুম জুড়ে পায়চারি করছি।রাত বারোটা বাজে,ঘুম নেই চোখে।ওশান এতক্ষণ ওর মায়ের রুমেই ছিল।কী সলা পরামর্শ করে এলো কী জানি!ওশান রুমে আসতেই ছোঁয়া আর ওশানের কথপোকথন শোনা যাচ্ছে।আমাকে পুরোটা শুনতে হবে।কিন্তু কীভাবে শুনব!ওদের কথা না শুনলে ক্লিয়ার হতে পারব না ঘটনা টা ঠিক কী।রুমের দরজা খুলে আস্তে করে ঘরের পিছন দিয়ে ওশানের রুমের পেছনে গেলাম।ওশানের ঘরের জানালার গ্লাস কিছুটা খোলা আছে।নিকষ কালো অন্ধকার চারদিকে।ভ’য়-ডর ফেলে জানালার নিচে বসে উঁকি দিলাম।

_____________________
‘ছোঁয়া তুমি কেন এমন ব্যবহার করছ?আমি কিন্তু জানি তুমি ইচ্ছাকৃত এমন ব্যবহার করছ।প্লিজ মাথাটা ঠান্ডা করো।’
‘মাথা কি ঠান্ডা করার কথা ওশান?’
‘আজ আর তোমার সাথে কথা বলব না।ঘুম দাও। মাথা ঠান্ডা হোক কাল সকালে আমরা ডিসকাস করব।’
বলেই ওশান বিছানায় বসল।
‘আমার ঘুম পাচ্ছে ওশান। প্লিজ লিভ।’
‘ঘুমোও আমি তোমার মাথা টিপে দিই।’
‘তুমি কি এখানে ঘুমোবে ওশান?আর তুমি আমার মাথা টিপে দিবে মানে?তুমি কী ভুলে গিয়েছে যে আমাদের বিয়ে হয়নি?’
এ কথা বলেই ছোঁয়া ক্রোধান্বিত চেহারা নিয়ে জানালার এদিকে এসে দাঁড়াল।
ওশানও এগিয়ে এলো ছোঁয়ার সামনে।এসে বলল,
“না,ভুলিনি।”
কথাটা শুনেই আমার মাথার মধ্যে চক্কর মেরে উঠল।ওদের বিয়ে হয়নি তাহলে ওভাবে এলো কেন?
আমি দ্রুত ফোন ফ্লাইট মুডে দিয়ে ক্যামেরা অন করলাম।জানালার নিচে যে ফাঁকা জায়গা আছে সেখানে ক্যামেরা রাখতেই ওদের দু’জনের অবয়ব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
ছোঁয়া আবারও বলল, “কিন্তু তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে কিছুই মনে নেই তোমার।আমার মাথা টিপে দিতে চাইছ, ঘুমোনোর প্রস্ততি তো এ ঘরেই নিচ্ছ।”
‘আমি নিচে ঘুমোচ্ছি,বাইরে গেলে সারাহ সন্দেহ করবে।’
‘সারাহ!সারাহ!সারাহ!আর কত তুমি সারাহ’র পিছে লাগবে?আমি তো এসেছি তাই না?এখনও সারাহকে নিয়ে আতংক তোমার গেল না?’
‘সারাহ অনেক বেশি ভয়ংকর ছোঁয়া!আমার জীবনে সারাহকে যত ভ’ য় পাই আমি কোনো ছেলেকেও অত ভয় পাই না। ও হচ্ছে অঘটনঘটনপটিয়সী।ওর দ্বারা অসম্ভব কিছুই নেই।’
‘তোমার আতংক কমাতে তো আমি চলেই এসেছি তাই না?’
‘হুম এসেছ,বাট ছোঁয়া আমি কিছু বলতে চাই।প্লিজ আমার কথা মাথা ঠান্ডা করে শোনো।’
‘কী শুনব? এখনও কিছু বাকি রেখেছ শোনাতে?’
‘ছোঁয়া প্লিজ ভুলে যাও সব।আমি যা যা করেছি,তোমাকে পাওয়ার জন্য করেছি সব।জানি কাজগুলো খারাপ করেছি।তাও তো তোমাকে ভালোবেসে কাছে পাওয়ার জন্যই করেছি।আমার আর অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।শুধু তোমাকে আমার জীবনে লাগবে বলেই এতকিছু করেছি।প্লিজ ছোঁয়া সব ভুলে এসো না আমরা আগের মতো সুন্দর জীবন শুরু করি।একদম নতুন করে।’
‘ভুলব!কী ভুলব আমি?তোমাকে আমি কী বলেছিলাম?আমাকে জাস্ট দশটা দিন টাইম দাও।জাস্ট দশটা দিন।তোমাকে আমি বললাম, যে দশ দিনের আগে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভবপর নয়। আমার স্মার্ট কার্ড আমার বাবার কাছে।বাবা আমার দিকে নজর রাখছে।কোনো কাজী অফিসে গিয়ে কালেমা পড়া সম্ভব নয়।তুমি কী করলে ওশান?বিয়ে দশদিন পরে হবে তবুও আমাকে এসে তোমার বাড়ি থাকতে হবে।এবং আজই আসতে হবে।তোমার দেরি সহ্য হচ্ছে না।আমি নাকি এই দশ দিনে অন্য প্লান করে তন্ময়ের সাথে ভেগে যাব।তুমি তন্ময়ের মেসে গাঁজায় আসক্ত কোন নিজের পরিচিতকে উঠালে।আমাকে ক্রমাগত হুমকি দিয়ে গেলে তন্ময়ের বেডের নিচে ব্যাগে-প্যান্টের পকেটে মাদকদ্রব্য রেখে তন্ময়কে গাঁজাখোর,নেশাখোর প্রুভ করে ওঁর ফিউচার নষ্ট করে দিবে।পুলিশও নাকি তুমিই পাঠাবে।তন্ময়ের মেসে ছদ্মবেশে তোমার পরিচিত কে আছে সেটা কারোরই জানা নেই।তন্ময়কে পুলিশে ধরলে ওর লাইফটা নষ্ট হয়ে যেত।এখনকার পুলিশদের সম্পর্কে আর কী বলব!তারাও তো তাদের দায়িত্ব পালন করবে।একটা স্টুডেন্টের কাছে গাঁজা-ইয়াবা পাওয়া গেলে সেটাতে যে সে আসক্ত নয় সেটা প্রুভ করতে করতেই তার জীবন কেটে যাবে।তুমি আরও কী বললে এসব শেষে তন্ময় জেল থেকে বের হলেও ওঁকে তুমি খু” ন করে দিবে।কেন তুমি তন্ময়ের পিছে লাগলে বলো?কী ক্ষতি করেছে ও তোমার?তন্ময় একটা ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন ছেলে।অনেক বেশি আত্মস্মমান ওঁর।বাংলাদেশের গর্ব।একবার ওঁকে পুলিশ ধরলে সেটা নিয়ে নিউজ হয়ে গেলে তন্ময় সু’ ই’ সা’ই’ ড করত।তুমি ঘুরে ফিরে তন্ময়ের পিছেই কেন লাগলে এইভাবে?’

‘সরি ছোঁয়া এসবের জন্য।না হলে তুমি আমার কাছে আসতে রাজি হতে না।’

‘এর পর তুমি সারাহকে নিয়েও হুমকি দিলে!তুমি ভালো করেই জানো সারাহ আমার জীবনে কী।বললে তোমার ভাই সারাক্ষণ বাসায় থাকে না।তুমি তোমার মা আর জিনাত মিলে সারাহকে বন্ধ ঘরে রেখে আ’ গু’ ন জ্বা’ লি’ য়ে পু’ ড়ি’ য়ে দিয়ে বলবে জাস্ট এ’ক্সি’ডে’ন্ট।সারাহ আমার জীবনে কতটা জায়গা জুড়ে আছে তুমি জানোনা।’

‘আমি এসবই তোমার জন্য করেছি।তোমাকে পেতে।’

‘আমাকে পেতে তুমি কী না করলে ওশান?আমাদের রিলেশনের সময়কার কিছু ছবি তুমি রেখে দিলে।রিলেশন থাকলে তো মানুষের কত রকমের কথাই হয়ে থাকে।একদিন আবেগে তোমাকে জাস্ট একটা ছবি দিয়েছিলাম। ছবিটা অতটাও নোংরা ছিল না।তুমি কী করলে সেই ছবি রেখে অন্য খারাপ ছবির সাথে এডিট করে নেটে ভাইরাল করার হুমকি দিলে।আমি পাপ করেছিলাম, আমি সরল ছিলাম, তোমাকে ট্রাস্ট করেছিলাম।তোমার আর আমার কিস করা কিছু ছবি ছিল।যেটা তুমি আমার অজান্তে ভিডিয়ো করেছিলে এবং ছবি তুলেছিলে।আমি স্বীকার করছি এটা আমার পাপ ছিল।আমি আবেগে অনেক ভুল করেছিলাম।তুমি ক্রামাগত হু’ ম’ কি দিলে এসব আমার আত্মীয়দের মাঝে পাড়া-প্রতিবেশী, তন্ময়ের গ্রামে এসব ছড়িয়ে দিবে।আমার বাবার সম্মান তুমি নষ্ট করবে।নেট দুনিয়ায় এসব ছড়িয়ে দিবে।সৃষ্টিকর্তার কাছে আমার প্রার্থনা থাকবে পৃথিবীর কোনো মেয়ে যেন রিলেশনে থাকা অবস্থায় অন্তত এই ভুলটা না করে।কোনো ক্লোজ পিকচার,হাত ধরা, অন্তরঙ্গ হওয়া এসব কিছুই যেন না করে।কেননা যারা ভালোবাসে যাদের খারাপ উদ্দেশ্য থাকে না তারা বিয়ের আগে এসব বলেই না।রিলেশনে থাকা অবস্থায় আবেগে মনে হয় যা করছি ঠিক করছি।আর মানুষটিকে চরম বিশ্বাস করে ফেলি আমরা।মনে হয় এই মানুষটা আমার সাথে প্রতারণা করতেই পারে না। কিন্তু পরে বোঝা যায় একটা ভুল জীবনকে কোথায় নিয়ে যায়।অন্তত আমাকে দেখে প্রতিটা মেয়ের শিক্ষা নেওয়া উচিত। কাউকে বিশ্বাস করা উচিত তবে অন্ধবিশ্বাস করা উচিত নয়।’

‘তুমি এমনি এমনি এলে কি আমি এসব করতাম।তোমাকে ছাড়া আমি জাস্ট পা’ গ’ ল হয়ে যাচ্ছিলাম ছোঁয়া।তাই এসব পথ অবলম্বন করেছিলাম।’

‘আমাকে পেতে আর কী অপকর্ম করতে বাকি রাখলে তুমি?বাকি ছিল তরী।তুমি তাকেও বাদ রাখোনি।ওঁ না তোমার সনন্তানের মা?তোমার সন্তান বড়ো হয়ে যখন শুনবে তুমি ওর মায়ের ঘনিষ্ঠ ভিডিয়ো ধারণ করেছিলে,তখন কতটুকু সম্মান করবে তোমাকে?তুমি তরীর ভিডিয়ো কেন করলে?এখন থেকে তো মেয়েরা তোমার মতো কুলাঙ্গারের জন্য নিজের স্বামীর সাথেও ঘনিষ্ট হতে ভ’ য় পাবে।’

‘কী করব আমার উপায় ছিল না।সারাহ যেদিন এ বাড়িতে এলো আমার সব প্লান নষ্ট হয়ে গেল।সারাহ এ বাড়িতে আসার পরই তুমি আমার থেকে আলাদা হয়ে গেলে।তাই আমি ওই টাইমেই ভেবে রেখেছিলাম তরীকে আমার ইউজ করা লাগতে পারে।ও বোকাসোকা মেয়ে ভিডিয়ো করেছি না কি কিছুই বুঝতে পারেনি।’

‘তোমার মুখে জাস্ট থুতু দিতে হয়।নিজের ফেস হাইড করে তরীর ফেস খোলা রেখে সেই ভিডিয়ো নেটে ভাইরাল করতে চাও।তরী একটা সহজ সরল মেয়ে।এসব ভিডিয়ো দেখে ও সহ্য করতে পারত না।সাথে সাথে নিজেকে শে’ ষ করে ফেলত।তুমি আমাকে পাওয়ার জন্য কী না করলে! আমাকে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করলে আমার জন্য তরী আজ ডিভোর্সি। আমাকে পেতে তুমি তরীকে ডিভোর্স দিয়েছ।আজ নেট দুনিয়ায় তরীর ভিডিয়ো ভাইরাল হলে সেজন্যও নাকি আমি দায়ি থাকব!
এমনিতেই নিজের কাছে সব সময় নিজেকে অপরাধী মনে হয়।তরীর কথা ভেবে প্রায় রাতেই এক অজানা ব্যাথায় বুক চিন চিন করে।জেনে করি আর না জেনেই করি;তরীর সংসার ভাঙার কারণ তো আমিই।মেয়েটার সামনে ভ” য়ে মাফ চাইতেও যায়নি আমি।সে মুখ আর সাহস কোনটাই আমার নেই।আবার আমার জন্য ওঁর সম্মান তুমি নিলামে উঠাবে।আমি কী ম’ র’ লে’ ও শান্তি পাব?তুমি ভেবো না আমার ছবির জন্য আমি ভ’ য়ে এখানে এসেছি।তুমি আমার প্রতিটা প্রিয় মানুষের ক্ষতি করার হু’ম’কি দিয়েছ।তন্ময়, তরী,সারাহ এদের নিরাপত্তার জন্য আমি এখানে এসেছি।তুমি এতই নিচু মানসিকতার মানুষ যে অগ্রিম হুঁশিয়ারী দিয়ে দিলে তোমাকে পুলিশ এরেস্ট করলেও সাথে সাথেই সব ভাইরাল হবে।এমন কি তন্ময় কেও পুলিশ ধরবে।তোমার বিশ্বস্ত কারো কাছে পেনড্রাইভ রেখে দিয়েছ।তোমাকে পুলিশ ধরেছে তার কানে গেলেই আড়ালে বসে সে সব ভাইরাল করবে।এমন কি আমি সু’ ই ‘ সা’ ই’ড করার সিদ্ধান্ত নিলেও তরী আর তন্ময় মাফ পাবে না।ছিঃ!ওশান ছিঃ!।তুমি আমার মরার পথও বন্ধ করে দিয়েছ।এসব থেকে বাঁচতে তোমার মায়ের হেল্প চাইলাম।তোমার মা উল্টা তোমাকেই সাপোর্ট করলেন।বললেন আমি যেন তোমার সাথে চলে আসি।’

‘ছোঁয়া তুমিতো জানোই এসব আমি তোমাকে পেতেই করেছি।এসব কিছুর জন্য সরি।রিয়েলি সরি।প্লিজ ভুলে যাও সব কিছু।’

‘ভুলব! কী ভুলব?’

‘আমি সব কিছু ডিলিট করে দিব ছোঁয়া।তোমাকে কখনো আমি কোনো কষ্ট দেব না।অতীত ভুলে আমরা একটা নতুন জীবন শুরু করি।’

‘তুমি এখন এ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাও ওশান।না কি এখানে শারীরের তৃপ্তি মেটাতে এসেছ?এসব যদি ভুলেও ভেবে থাকো তাহলে এ বাড়িতে আমার লা’ শ ঝুলবে।সারাহ তোমাকে ছাড়বে না তখন।তুমি আসতে বলেছ আমার জীবনের সব সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে প্রিয় মানুষগুলোর কাছে ঘৃণার পাত্রী হয়ে এখানে এসেছি।দয়া করে তন্ময় আর সারাহ’র কোনো ক্ষতি করো না আর তরীর ভিডিয়োটা ডিলিট করে দাও।প্লিজ ওশান প্লিজ।’

‘আমি সব ডিলিট করে দেব তুমি ভেবো না।’

‘ওকে,নাউ গো প্লিজ।একা থাকতে দাও আমাকে।’

‘আচ্ছা তুমি একা থাকো।মাথা ঠান্ডা করো প্লিজ।’

ওশান রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেল।ছোঁয়া রুমের দরজা লাগিয়ে ওয়ালে হেলান দিয়ে বসে হাউমাউ করে কেঁদে দিল।কাঁদতে কাঁদতে বলল,

“তোকে ছাড়া ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তন্ময়।জানি তুই ভালো নেই।আমিও ভালো নেই।একটা খারাপ মানুষ আমার জীবনের সব শান্তি শেষ করে দিয়েছে তন্ময়।আমি এই পৃথিবীতে আর বেশি দিন থাকব না।সব কিছুর জন্য আমি দায়ী।আমি ওশানের থেকে দশ দিন সময় নিয়েছি।তরীর ভিডিয়ো ডিলিট করাতে পারলে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেব।’

চলবে?..

(পাঠক মহল এত অস্থির কেন?প্রতিটা লেখক-লেখিকাই একটা থিম নিয়ে লেখা শুরু করে।সেই থিমকে কেন্দ্র করে লেখে।

একটা মানুষ যখন পাপ করে তখন করতেই থাকে দেখবেন।আর চালাক মানুষ ভাবে আমি কখনোই ধরা পড়ব না।তাই একটার পর একটা পা’প চালিয়ে যায়। পাপের বোঝা যখন ভারী হয় তখনই শাস্তি শুরু হয়।কারো না কারো কাছে সে ধরা পড়েই যায়।পা’প চিরকাল কেউ ঢেকে রাখতে পারে না।একটা মানুষকে শাস্তি দিতে গেলে নিশ্চয়ই উপযুক্ত প্রমানেরও দরকার আছে।গল্পে আমি দুইটা বিষয় বুঝাতে চেয়েছি।এক রিলেশন এ থেকে অন্তত কারো সাথে ঘনিষ্ট হওয়া বা পিকচার দেওয়ার ক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত। আর ওশানের ব্যাপার টা হলো একটা খারাপ মানুষ কতটা নিকৃষ্ট হতে পারে আর এসব ব্লাকমেইলের স্বীকার যারা তাদের ভ**য় না পেয়ে নিজের ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করা।আইনি স্টেপ নেওয়া।না হলে ভোগান্তির শেষ থাকে না।এখনো তো পুরো গল্প শেষ হয়নি তাই সব টা ক্লিয়ারও না।হয়তো ব্যাপারটা একটু সিনেমাটিক হয়ে গিয়েছে।যেহেতু এটা গল্প তাই অনেক কিছুই বাস্তবের সাথে মিলবে না।গল্পে কিছুটা পারিপার্শ্বিক অবস্থা কিছুটা কল্পনা মিশিয়েই লেখা।ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন।চেষ্টা করছি বেষ্টটা দেওয়ার।লিখতে লিখতে হয়তো একদিন পারব বেষ্ট কিছু দিতে।ভালবাসা সবাইকে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here