#শ্রাবণের_ধারা ~(৩য় পর্ব)~
#লেখনীতে_ওয়াসেকা_তাবাসসুম ~
~আর এক মূহুর্ত দাঁড়ালো না আবির। একদম সোজা হেঁটে চলে গেল। একদিকে আমি এখনো ভাবছি যে,
— সব ঠিক আছে কিন্তু একটা জিনিস তো বুঝলাম না উনি সব এমন কৌতু*হল নিয়ে কেন করে? কথাগুলো কেমন ঘো*লা পানির মতো কিছুই বুঝা যায় না। খালি নামটা বলতেই এমন করলো মনে হলো নিজের নাম নিজেই ভু*লে গেছে। কিন্তু এখন এখানে বসে মশা মে*রে তো লাভ নেই। তার থেকে বাসায় যাওয়া ভালো।
বাসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। আজকে বাইরের আবহাওয়াটা বেশ সুন্দর, একদম মন ছুঁয়ে যাওয়া এবং উপভোগ করার মতো। তবে বি*র*হে*র টানে মনকে আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে ক*ষ্ট হচ্ছে। তূর্যর কথা ভাবতেই নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে আ*ক্ষে*পে ভরে যাচ্ছে মন। শুধু মনে হচ্ছে, তূর্য এমনটা না করলেও পারতো।
যখন প্রথমবার তূর্যর বে*ই*মা*নির শি*কা*র হয়েছিলাম, চারদিক কেমন অ*ন্ধকার লাগছিল। এতোটা বিশ্বাস করেছিলাম যে কোনদিন এমনটা আশাও করিনি। তবে সেদিন যখন ওকে রেস্টুরেন্টে আরেক নারীর হাতে হাত রেখে বসে থাকতে দেখেছিলাম, বিশ্বাসটা যেন কাঁ*চের ভা*ঙ্গা টুক*রো*র মতো হয়ে গেল। অনেক অ*শ্রু ঝরি*য়েছি*লাম সেদিন, যা ভুলে যাওয়ার মতো না।
তারপর একদিন তূর্য আমার কাছে এলো তার অ*প*রা*ধের ক্ষ*মা আদায় করে নিতে এবং সে সফল হলো। তূর্যকে ভালোবেসেছিলাম তাই ফিরিয়ে দিতে পারিনি। ওকে দ্বিতীয় সুযোগ দিয়েছিলাম তবে ওর প্রতি বিশ্বাসের সূতো আলগা হয়ে গেছিল। এর এবার তূর্য আবার প্রমাণ করে দিল ভালোবাসা ওর কাছে তু*চ্ছ বস্তু, যা শুধুমাত্র মুখেই বলতে পারে সে।
এতো ভালো অ*ভি*ন*য় কীভাবে করে মানুষ? তূর্যর এই স্বভাবটা বাদ দিলে যেন ওর থেকে ভালো প্রেমিক দুটো পাওয়া যাবে না। তবে স*ম*স্যা*টা তো এখানেই ভালোবাসার মানুষের কাছে আসল চাওয়াটাই তো সততা, যা তূর্যর ছিল না।
——————-
দুপুর আর বিকালের মাঝামাঝি একটা সময়। ক্লা*ন্ত শরীর নিয়ে বাসায় ঢুকলাম। আমার নি*রা*শ চেহারা দেখে আম্মু জিজ্ঞাসু চাহনিতে বললো,
— তোকে এমন কেন দেখাচ্ছে? আজকে ভার্সিটিতে অনেক ধ*ক*ল গেছে তাই না?
— ধ*ক*ল তো গেছেই আম্মু। অনেক ক্লান্ত সবকিছু থেকে, আমি রুমে গেলাম।
— সবকিছু থেকে মানে? তুই ঠিক আছিস তো?
— না তেমন কিছু না আম্মু, বাদ দাও।
— কিন্তু ধারা………
আম্মুর বলা বাক্য শে*ষ না হতেই চলে এলাম ঘরে। আম্মুকে সবটা বলতে পারলে হয়তো মনটা হালকা হতো তবে এই বিষয় নিয়ে আর আলোচনা করতে চাই না। হাতের ব্যাগটা পড়ার টেবিলে রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। শে*ষ*মে*ষ মুখে পানির ঝা*প*টা পরতেই একটু শান্তি অনুভব হলো। আম্মুর আদেশ অনুযায়ী খাওয়া দাওয়া শে*ষ করে আবার নিজের কক্ষে অবস্থান নিলাম।
বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলাম। ক্লান্ত শরীরটা এবার শান্তির জায়গা পেল। চোখে কেমন ঘুম ঘুম ভাব আসছে, তার উপর পে*টে*র তৃ*প্তির জন্য এক প্লেট ভাত খেয়ে এসেছি। এখন তো চোখ দুটোর ঘুমের প্রতি ভালোবাসা প্র*খ*র হয়ে উঠবে। চোখ দুটো মেলে ঘুমের রাজ্যে হা*রিয়ে যাবো ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠলো। বেশ বি*র*ক্ত অনুভব হলো তার পরেও পরিচিত নাম দেখে ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরলাম,
— হ্যালো? হ্যা জিনিয়া বল।
— এই কি বল হ্যা? বলবি তো তুই।
— আমি? আমি কি বলবো? ফোন দিলি তো তুই।
— আরে বাবা! আমি তো ফোন দিয়েছি লাইব্রেরীর ঘটনা শুনতে, তুই যে কালকে আসবি তারপর আমাকে সব বলবি এমনটা প্ল্যান করে রেখেছিস আমি ভালো মতোই জানি।
— কথাটা ভু*ল বলিস নাই কারণ আমার প্ল্যান এমনটাই ছিল।
— আমি আগেই জানতাম খুকি। এখন সুন্দর মতো সব কাহিনী বল আমাকে নাহলে তোকে তা*ল*গা*ছে উ*ঠি*য়ে রে*খে আসবো বলে দিলাম।
— বলছি বলছি। আজকে লাইব্রেরীতে যাওয়ার পর ওনাকে অনেকক্ষণ খুঁজতে হয়েছে তারপর ওনাকে পেলাম আর নোটগুলো দিলাম। তারপরে কিছু কথা হয়েছিল আর কথা শে*ষে উনি চলে গেলেন। এই তো!
— আসল কথা বল। ওর নামটা কি?
— নাম তো আবির। তবে বুঝলি নাম বলতে গিয়েই এমন ভাব করলো যেন নামটাই জানে না।
— বেচারা তোকে দেখে মনে হয় সব ভু*লে গেছে।
এসব বলে জিনিয়া খিলখিল করে হাসতে লাগলো। ওর কথা শুনে হাসবো না কি কাঁ*দবো কিছুই বুঝতে পারছি না। আরো কিছুক্ষণ ব*ক*ব*ক করে ফোন কে*টে দিলাম। চোখের পাতা মেলে দিয়ে হা*রি*য়ে গেলাম ঘুমের রাজ্যে।
——————-
সকাল সকাল পাখিগুলোর কি*চি*রমি*চি*র দিয়ে ঘুমের অ*ব*সা*ন ঘটলো। জানালার বাইরে তাকাতেই মনটা প্রফুল্ল হয়ে গেল। আহা! শরৎ এর দিন থেকে রাত সবটাই কতো সুন্দর। এক নতুন দিনের শুরু করতে উঠে পড়লাম। নাস্তা করেই বেরিয়ে পড়লাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে, বাবার আদেশে বাড়ির গাড়িটা নিয়ে যেতে হলো। এতে আমার সম্মতি না থাকলেও বাবার আদেশ অ*মা*ন্য করলাম না।
ক্যাম্পাসে গেটে নেমে হাঁটা শুরু করলাম। মনটা আনন্দিত হলেও একটা ভ*য় কাজ করা শুরু করলো। সে ভ*য়ে*র নাম “তূর্য”। যে কি না নিজের ইচ্ছা পূরণে সব করতে পারে। তারপরেও মনে সাহস নিয়ে ক্লাসের দিকে এগিয়ে গেলাম। ক্লাসে গিয়ে চুপ করে সিটে বসে পড়লাম। কিছুক্ষণ বাদে কারো ডাকে পিছনে ঘুরে তাকালাম।
— এই নাও তোমার নোটগুলো।
— তোমার সব ক*পি করা শে*ষ? এক রাতেই?
— হ্যা তো? এইটা কোনো ব্যাপার না কি?
হা হয়ে তাকিয়ে আছি। এইটা কি মানুষ না কি ভি*ন্ন গ্র*হে*র প্রাণী? এক রাতেই এতো গুলো নোট ক*পি করা শে*ষ? আমার অবাক দৃষ্টির দিকে নিজের দৃষ্টি নি*ক্ষে*প করে আবির বলে উঠলো,
— এভাবে হা হওয়ার মতো কিছু হয়নি। আমি মানুষটা খুব ফা*ষ্ট তাই এগুলা আমার কাছে পানি।
— বাহ্ খুব দারুন তো।
আবার সেই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে মোবাইলে মনোযোগ দিল। আমিও ভাব নিয়ে সামনে ফিরলাম। ভাব কি উনি একাই দেখাতে পারে? হুহ আমাকে তো এখনো চিনো নাই খোকা। নিজের উপর নিজেই প্রা*উ*ড ফিল করতে লাগলাম, এমন সময়ে জিনিয়া প্রবেশ করে আমার পাশে বসলো।
— আজকে আমার সাথে বাসায় যাবি বুঝলি? মায়ের আদেশ আপনাকে নিয়ে যেতে হবে। ক্লাসগুলো শে*ষে আমার সাথেই বের হবি বুঝলি?
— আমি তো বাসায় কিছু বলে আসি নি।
— আহা আম্মু কথা বলে নিবে আন্টির সাথে। তুই চুপচাপ ভ*দ্র হয়ে আমার সাথে চলে যাবি বুঝলি?
জিনিয়াকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই ক্লাসে টিচার চলে এলেন। মা*থা না*ড়ি*য়ে জিনিয়ার প্রস্তাবে রাজি হলাম। টিচারকে দেখে সবাই সালাম দিল। কিছুটা হলেও আ*ন্দা*জ করতে পারলাম উনিই বোধহয় নতুন টিচার, যিনি কয়েকদিন হলো জয়েন করেছেন। উনি ওনার জায়গায় দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললেন,
— হ্যালো স্টুডেটস। আমি আপনাদের নতুন টিচার সাজিদ। কয়েকদিন হলো জয়েন করেছি আর আজ আপনাদের সাথে ক্লাস পেলাম। আশা করি সবাই ভালো আছেন। “ভালো না থাকলেও আমি চলে এসেছি আপনাদের ভালো করে দিতে”।
শে*ষে*র কথাটা অ*দ্ভু*ত এক সুরে বললেন উনি। ওনার কথা শে*ষ হতে না হতেই আবির বলে উঠলো,
— আমাদের ভালো করাটা আপনার কাজের মধ্যে পড়ে না কি?
আবিরের এমন কথায় সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো। শিক্ষকের সাথে এমন আচরণ কেউ করে না কি? ছেলেটা আসলেই পা*গ*ল। এদিকে সাজিদ স্যার এক তা*চ্ছি*ল্যের হাসি দিয়ে বললেন,
— আমার কাজ নিয়ে তুমি খুব ইন্টারেস্টেড মনে হচ্ছে।
— তেমন একটা না তবে কিছুটা।
— বাহ্ ভালোই তো। নতুন নতুন বিষয়ে ইন্টারেস্টেড থাকা ভালো তবে আমার কাজে ইন্টারেস্টিং কিছুই পাবে না তুমি।
— সেটা তো সময়ই বলে দিবে স্যার…..।
এখানে ঠিক কি হচ্ছে? আবিরের অ*দ্ভু*ত ব্যবহার তার সাথে স্যারের ওর কথায় তাল মিলানো সবটাই কেমন যেন লাগছে। এরমধ্যেই খেয়াল করলাম স্যার আবিরের দিকে কেমন তী*ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। দুইজনের ব্যবহার কেমন যেন লাগল।
আবিরের দিকে ফিরে আস্তে আস্তে বললাম,
— পা*গ*ল হয়ে গেছো না কি? টিচারের সাথে কেউ এইভাবে কথা বলে?
আবির খালি আমার দিকে একবার তাকালো তবে কিছুই বললো না। যেন আমার কথার কোনো গুরুত্বই নেই। এরমধ্যেই সাজিদ স্যার প*রি*স্থি*তি শান্ত করে ক্লাস শুরু করলেন এবং ক্লাস শে*ষে যথারীতি চলে গেলেন।
————–
ক্লাস শে*ষ করে সোজা জিনিয়ার সাথে ওর বাসায় চলে গিয়েছিলাম। আন্টি জিনিয়াকে বলেই দিয়েছিল ধ*রে বেঁ*ধে হলেও আজকে আমাকে নিয়ে যেতে। জিনিয়া আর আমার বন্ধুত্বটা অনেক পুরনো তাই একটা পারিবারিক বন্ধনও তৈরি হয়ে গেছে এতো দিনে। ওর বাসায় অনেকক্ষণ থেকে শে*ষে একাই নিজ বাসার উদ্দেশ্যে বের হলাম। আন্টি জিনিয়াকে আমার সাথে পাঠাতে চাইলে, আমিই মানা করে দিলাম। এখন আর ও বের হয়ে কি করবে? এইটুকু পথ নাহয় নিজের স*ঙ্গ উপভোগ করি।
এখনো সম্পূর্ণ রাত হয়নি তবে আকাশে চাঁদের রশ্মি মেঘের বু*ক চি*রে উঁ*কি দিতে শুরু করেছে। শরতের ঠান্ডা হাওয়া বইছে, আহা! এতো সুন্দর অনুভূতি। বাবাকে আগেই বলে দিয়েছি আমি রিকশা করে বাড়ি ফিরবো। সকালবেলা আদেশ পালন করেছি, এখন আমার কথা শুনতে হবে। বাবাও বললো ঠিক আছে তবে সা*ব*ধা*নে আসতে।
জিনিয়ার বাসা ভার্সিটির অনেকটা কাছেই তাই ওর আসা যাওয়াতে অ*সু*বি*ধা হয় না। আমিও ভার্সিটির রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছি কারণ ভার্সিটির ওইদিকে রিকশার অভাব হয়না। তবে এইদিকটা ভার্সিটির উল্টা পাশ অর্থাৎ এইদিকে পিছনের গেট। এইদিকে মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। ভার্সিটির সামনের দিকটা যেমন জমকালো, পিছনের দিকটা তেমনই নি*শ্চু*প।
মনের আনন্দে হেঁটে চলেছি আর আবহাওয়া উপভোগ করছি। হাঁটতে হাঁটতে ভার্সিটির পিছনের গেটে এসে পৌঁছালাম। চারদিক নি*শ্চু*প শুধুমাত্র বাতাসে শুকনো পাতার আওয়াজ। এই আওয়াজ যেন আরো বি*ক*ট হয়ে উঠলো। শুকনো পাতায় কারো পা পড়লে যেমন আওয়াজ হয় ঠিক তেমনি। কৌ*তু*হ*লে*র ব*শে এগিয়ে গেলাম বিষয়টা দেখতে।
এই আঁ*ধা*রে কারো উপস্থিতি অনুভব করলাম। কিন্তু এতো রাতে এইখানে কে আসবে? আর কি কাজেই বা আসবে? আশেপাশে চোখ বুলানো শুরু করলাম। ভার্সিটির পিছনের গেটের থেকে কিছুটা দূরত্বে একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। এতো রাতে এটা কে? আর কি উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে এখানে?
মানুষটার পিছনে পিছনে গেলাম। সে ও সামনে আগাতে লাগল আর আমি তার পিছনে পিছনে আগানো শুরু করলাম। হঠাৎ সে গা*য়ে*ব হয়ে গেল। সামনে কাউকে আর দেখতে না পেয়ে পিছনে ঘুরলাম আর তখনি কারো চোখে চোখ পরতেই চেঁ*চি*য়ে উঠতে যাবো!
এমন সময়ে সে আমার মু*খ চে*পে ধ*র*লো আর তারপরেই…………..
চলবে…………………..^-^
[আগের পর্বেও সাপোর্ট করার জন্য ধন্যবাদ। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। গঠনমূলক মন্তব্য কি আশা করতে পারি? যাই হোক লেখিকা এবং গল্পের সাথেই থাকবেন আশা করি। হ্যাপি রিডিং ^_^]