শ্রাবণের ধারা পর্ব -০৪

#শ্রাবণের_ধারা ~(৪র্থ পর্ব)~

#লেখনীতে_ওয়াসেকা_তাবাসসুম ~

~সামনে কাউকে আর দেখতে না পেয়ে পিছনে ঘুরলাম আর তখনি কারো চোখে চোখ পরতেই চেঁ*চি*য়ে উঠতে যাবো! এমন সময়ে সে আমার মু*খ চে*পে ধ*র*লো আর তারপরেই দৃষ্টির মি*লনে আঁ*ত*কে উঠলাম। চোখ দুটো চেনা চেনা লাগলো। সে ধীরে ধীরে মুখের উপর থেকে কালো মাস্ক সরালো। তারপর নিজের চুলগুলো ঝা*ড়া দিয়ে আগের থেকেও বেশি এলো*মেলো করে নিলো। তার এই কর্ম*কা*ণ্ডে একদফা অ*বা*ক হলাম আমি। সে আমার দিকে তাকানো মাত্রই তাকে চিনতে পেরে আরেকদফা অ*বা*ক হলাম আমি। “আবির!” মনে মনেই অ*বা*ক হয়ে নামটা বলে উঠলাম। সে ভ্রু কুঁচকে বললো,

— এই অসময়ে এখানে কি করছো তুমি?

— হুমমমম হুমমমমম।

— হুম হুম করছো কেনো? আমি জিজ্ঞেস করলাম এইখানে কেন তুমি?

— “আরেহ মহাশয় মু*খে*র উপর থেকে হাতটা তো সরাবেন??? নাহলে একটা মানুষ কিভাবে কথা বলবে?” মনে মনে তাকে এগুলো বলতে শুরু করলাম। তারপরে চোখ দিয়ে ইশারা করে বুঝালাম হাতটা সরাতে। সে বুঝতে পেরে ততক্ষণাৎ হাত সরিয়ে নিল। এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। রা*গে গ*জ*গ*জ করতে করতে বললাম,

— আরেকটু হলেই তো উ*প*রে চলে যেতাম।

— হ্যা তো?

চোখ বড় বড় করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছি। এ কেমন মানুষ রে বাবা? এখানে আমার কিছু হয়ে গেলে তাতে তো ওর কিছু আসবে যাবেই না। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবির বলে উঠলো,

— এখানে কি করছো তুমি? এই রাতের বেলা?

— এই একই প্রশ্ন তো আমিও করতে পারি? তুমি এই সময়ে ভার্সিটির পিছনের গেটে কি করছো?

— আমি কি করছি তা দিয়ে তো তোমার কাজ নেই।

— তাহলে আমি কি করছি এইটা দিয়েও তো তোমার কাজ থাকার কথা না।

— কথার উত্তর না দিয়ে এইভাবে উ*ল্টা কথা বলা কোথা থেকে শিখেছো হ্যা?

— এই তো কয়েকদিন আগেই “আবির” নামক ছেলের কাছ থেকে শিখলাম।

আমার উত্তরে আবির প্রথমে চোখ বড় বড় করে তাকালো আবার সাথে সাথেই কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। এইদিকে ওকে দেখে হাসি কিভাবে আট*কাবো এই চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছি। আবির কিছু বলতেই যাবে হঠাৎ থেমে গেলো। একটু থেমে বলা শুরু করলো,

— কেউ আসছে।

— মানে?

— মানে এইদিকে কেউ আসছে। এখনই লু*কিয়ে পড়তে হবে।

আর কিছু না বলে ততক্ষণাৎ আমার হাত ধ*রে ভার্সিটির গেটের পাশে ঝো*পে*র মধ্যে লুকিয়ে পড়লো আবির আমাকে নিয়ে। যেহেতু ভার্সিটির পিছনের দিক তাই এইদিকে তেমন একটা পরিস্কার করে না। ফলে গাছ-গাছালি দিয়ে ভরে উঠেছে জায়গাটা। আজকে এই গাছ-গাছালিই কাজে লেগে গেল।

এইদিকে আবির এখনো শ*ক্ত করে আমার হাত ধরে আছে। সামনে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে, কেউ আছে কি না সেটা। আবির এতো শ*ক্ত করে আমার হাত ধ*রে আছে যে কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছি না। তবে ভিতরে কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি অনুভব করলাম। এর আগে এমন অনুভূতি হয়নি কখনো। আবিরের পিছনে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে এসব ভেবে চলেছি এমন সময়ে শুনতে পেলাম,

— এতো কি ভাবছো? তোমার জন্য যে আজকে ফেঁ*সে যেতাম। কি হতো তখন?

— আমার জন্য? আমি আবার কি করলাম?

— ওহ্ তাই? আমি তো চুপচাপ নিজের কাজ করেছিলাম মাঝখান দিয়ে তুমিই তো ঝা*মেলা লাগালে।

— আমি করলাম কি এইটাই তো বুঝতে পারছি না।

আবির এবার হতাশ দৃষ্টি নিয়ে বললো,
— না তুমি কিছুই করো নাই, সব আমি করছি।

— হ্যা সেটা তো আমিও জানি যে সব তুমি করেছো।

আমার উত্তর শুনে আবিরকে দেখে মনে হচ্ছে এতোক্ষণে বে*চা*রা আ*ধ*পা*গ*ল হয়ে গেছে। নিজেকে সামলে শান্ত গলায় বললো,

— এখন কিছু করার নেই। তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে।

— তোমার সাথে যেতে হবে মানে? কোথায় যাবো?

— আমি এখন ভার্সিটির ভিতরে যাবো আর তুমি আমার সাথে যাবে, বুঝতে পেরেছো?

— কিহ!! এই অ*ন্ধ*কা*রে ভার্সিটির ভিতরে? আর এই সময়ে ভার্সিটির ভিতরে যাবো কিভাবে? গেট পর্যন্ত ব*ন্ধ এখন।

— তোমার কি মনে হয় আমি যখন এখানে এসেছি এসব না ভেবে এসেছি? কখনই না। আমি প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করতেই পছন্দ করি।

— সে তো বুঝলাম কিন্তু ভিতরে যাবো কিভাবে?

— গেট টো*প*কে আবার কিভাবে?

কথাগুলো খুব স্বাভাবিক ভাবে বললো আবির যেন তার কাছে এগুলা কোনো ব্যাপারই না। এইদিকে আমার ওর কথা শুনে এতোক্ষণে মাথা ঘু*রা শুরু হয়ে গেছে। আবির এবার তা*ড়া দিয়ে বললো,

— দেখো বেশি সময় নেই। তুমি যখন এখানে এসে পরেছো তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে। আমি কোনো রি*স্ক নিতে পারবো না।

এরপর আবির আমার হাত ধরে আগাতে যাবে তখন দুইজনেই বুঝতে পারলাম এই এতোক্ষণ আমরা একে অপরের হাত ধরে ছিলাম। এইটা বুঝতে পেরে কেমন অ*স্ব*স্তি*ক*র বোধ হলো, সাথে সাথে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলাম। আবিরের দিকে তাকাতেও কেমন লাগছে, ইস কি যে করি আমি! আবির আবার বললো,

— চলো এখন।

— কিন্তু আমি পারবো না। পড়ে যাবো তো।

— আমি আছি তো।

“আমি আছি তো” এই এক বাক্যে মনের মধ্যে এক শীতল হাওয়া বয়ে গেল। এইভাবে তো আগে কখনোই কেউ ভরসা দেই নি। এইভাবে ভরসার হাত বাড়িয়ে দেই নি কেউ, যাকে বিশ্বাস করে এগিয়ে যেতে পারবো। মা-বাবার পরে এই প্রথম মনে হচ্ছে কাউকে মন থেকে বিশ্বাস করা উচিত। আবির আমার নি*স্ত*ব্ধ*তা বুঝতে পেরে বললো,

— দেরি করো না ধারা। আবার কেউ চলে আসলে আমরা দুইজনই বি*প*দে পড়ে যাবো।

— আচ্ছা চলো।

— শুনো আমি আগে যাচ্ছি তারপর তুমি আসবে বুঝলে?

আমি মাথা নে*ড়ে সম্মতি জানালাম। আবির আগে গেল আর কি সুন্দর গেট পার করে দিল। দেখে মনে হচ্ছে কি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। এরপর আমাকেও যেতে ই*শা*রা করলো। আমিও আল্লাহর নাম নিয়ে উঠে পড়লাম। গেট পার করে ওইপাশে এসেও পড়লাম। যখনই মাটিতে পা নামাবো, পা বে*কে বসলো। নিচে পড়তেই যাবো তখনই কারো শ*ক্ত বাহুদ্বয় আমাকে আ*ব*দ্ধ করে নিল। কারো কমল কন্ঠ কানে এলো,

— চোখ খুলতে পারো, তুমি পড়ো নাই।

আমি সা*হ*স নিয়ে চোখ খুলে দেখি আবিরের কো*লে এসে পৌঁছেছি। আবির অতি সযত্নে আমাকে নামিয়ে দিল। আবার হাঁটতে হাঁটতে বলা শুরু করলো,

— এখন একদম চুপচাপ হাঁটবে ঠিক আছে? কোনো শব্দ যেন না হয়।

— ঠিক আছে। কিন্তু তুমি এই রাতে এখানে কেন এসেছো?

— আমার দরকার আছে তাই এসেছি।

— এই তুমি কি প্র*শ্ন*প*ত্র চু*রি করার চিন্তায় আছো?

আমার কথা শুনে আবির দাঁড়িয়ে গেল। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করেও যেন শান্ত করতে পারলো না। ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

— আমাকে কি মনে হয় তোমার? জীবনে সব করতে পারি কিন্তু চি*টিং স্বপ্নেও করিনি বুঝেছো? আমি এখানে অন্য কাজে এসেছি। আমার সাথে চলো চুপচাপ।

আমি আর কিছু বললাম না। আবিরের সাথে চুপচাপ হাঁটা ধরলাম। ভার্সিটির ভিতরে প্রবেশ করে আবির টিচার্স রুমের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। কিছুই বুঝতে পারছি না, ছেলেটার মাথায় চলছে কি? কি করতে চায়?

টিচার্স রুমে প্রবেশ করে আবির আমাকে এক কোণায় দাঁড়ানোর আদেশ দিল। আমিও বা*ধ্য মেয়ের মতো ওর কথা শুনলাম। তারপর আবির কিছু ফা*ই*ল ঘাঁ*টা ঘাঁ*টি করতে লাগলো। অনেকক্ষণ ঘাঁ*টা*র পর ওকে দেখে মনে হলো কা*ঙ্খি*ত ফা*ই*ল পেয়ে গেছে। অনেক মনোযোগ দিয়ে সেটাতে চোখ বুলাতে লাগল, ঠিক তখনই কারো পায়ের আওয়াজ পেলাম।

আওয়াজ কানে আসতেই আবিরের কা*ছে গেলাম। কি করবো এখন কিছুই বুঝতে পারছি না। পায়ের আও*য়াজ আরো কাছে চলে এসেছে বুঝতেই আবির আমাকে টে*নে এক কো*ণা*য় নিয়ে গেল।

দুজনের মধ্যে দূরত্ব কমে গেল, কোনো পুরুষের এতোটা কা*ছা*কা*ছি কোনো যাইনি কোনোদিন। হৃদয় স্প*ন্দ*ন বেড়ে গেল। আবিরের উ*ষ্ণ নিঃশ্বাস আমার উপরে পড়ছে। চাঁদের রশ্মি ওর চেহারাতে পড়তেই ওর সৌন্দর্য হাজার গুণ বে*ড়ে গেল। আগে তো কখনো এমন লাগেনি ওকে তবে আজ এমন লাগছে কেন?

আবিরের সাথে দৃষ্টির মি*ল*ন ঘ*ট*তেই হৃদয় স্প*ন্দ*ন থেমে গেল। কিছু বলতে যাবো তখনই আবির…………..

চলবে……………….^-^

[এই ঝামেলায় পড়েও আপনাদের জন্য গল্প কন্টিনিউ করছি। আশা করি আগের মতোই সাপোর্ট পাবো। লেখিকা এবং গল্পের সাথেই থাকবেন। হ্যাপি রিডিং ^_^]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here