এক খণ্ড কালো মেঘ পর্ব -২১

#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_২১
#নিশাত_জাহান_নিশি

“জামাটা শুকোতে দিয়েছিলাম তাই।”

রাফায়াতের সতর্ক দৃষ্টি পড়ল এবার অয়ন্তীর পরিহিত ভেজা জামাটির দিকে। দূর হতেই আঁচ করা যাচ্ছে জামাটি এখনও কী পরিমাণ ভিজে আছে। বেশীক্ষণ এই ভেজা জামাটি গাঁয়ে পড়ে থাকলে নির্ঘাত জ্বর, সর্দি-কাশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এমনিতেও অয়ন্তীকে দেখতে কেমন যেন রোগা রোগা লাগছে! পেছনের চুলগুলি থেকেও টপটপ করে পানি ঝড়ছে। সদ্য শাওয়ার নিয়েছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। এই মাঝরাতে হঠাৎ অয়ন্তীর গোসল করার কারণ রাফায়াত খুঁজে পায়না! এমন তো না যে অতিরিক্ত গরম পড়ছে, গরমে বিতৃষ্ণা লাগছে, সেই গরমে রুমে থাকা যাচ্ছেনা। রুমে তো এসিও ফিট করা আছে। তবুও কেন এই মাঝরাতে অয়ন্তীর গোসল করতে হবে?

রুমের দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে নিলো রাফায়াত। কপালে কয়েকদফা সন্দেহের ভাজ ফুটিয়ে তুলল। পুনরায় সে অয়ন্তীর মুখোমুখি দাঁড়ালো! গোয়েন্দা টাইপ ভাবসাব নিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত গুজল। ভ্রু জোড়া ঈষৎ উঁচিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,,

“এত রাতে গোসল কেন?”

অয়ন্তী অবাক হলো! রাফায়াতের দিকে উদ্ভট দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। নির্বোধ গলায় পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ল,,

“অদ্ভুত! এ আবার কেমন প্রশ্ন?”

“অভেয়েসলি এটা একটা সময় উপযোগী প্রশ্ন! বলো এই মাঝরাতে হঠাৎ শাওয়ার নিলে কেন?”

“এই? আপনার কী মাঝেমধ্যে মাথার তার-টার ছিঁড়ে যায় না-কী? কীসব উদ্ভট উদ্ভট প্রশ্ন করে বসেন বলুন তো?”

মুহূর্তেই অয়ন্তীকে শাসিয়ে উঠল রাফায়াত! চোখ-মুখ ঘোরতোরভাবে লাল করে সে অয়ন্তীর মুখের কাছে আঙুল তুলল। ডানপিটে গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“সত্যি করে বলো রুমে কে এসেছিল?”

“মানে? কী বলতে চাইছেন আপনি?”

“অনিক এসেছিল তাইনা?”

চোঁয়াল শক্ত হয়ে এলো অয়ন্তী! রাগে তার মাথা শুদ্ধু ফেটে যাচ্ছিল। এমনিতেও তাকে কি’ড’ন্যা”প করে আনা হয়েছে। একা একটা রুমে তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তার উপর খাওয়াদাওয়া, কাপড়চোপড়ের সমস্যা তো হরদম লেগেই আছে। এতকিছুর পরেও রাফায়াত কী করে পারছে তার দিকে অহেতুক আঙুল তুলতে? তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলতে? মনুষ্যত্ব কি এই লোক বেচে খেয়েছে? বিবেকবুদ্ধি, জ্ঞানশক্তি সব কী জলাঞ্জলী দিয়েছে? ঝগড়ুটে ভাব নিয়ে অয়ন্তী রাফায়াতের সন্দিহান দৃষ্টিতে আগ্রাসী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। অতঃপর ঝাঁজালো গলায় বলল,,

“ফা’উ’ল কথা বলবেন না একদম। অনিকের সাথে আমি কন্ট্রাক্ট করব কী করে আজব? আমার কাছে কোনো ফোন বা অন্য কোনো অপশন আছে কী অনিকের সাথে কানেক্ট হওয়ার?”

কথার মাঝখানেই রাফায়াত হঠাৎ ঢুলুঢুলু শরীরে অয়ন্তীর কাঁধের উপর ছিঁটকে পড়ল! শরীরের ব্যালেন্স রাখতে না পেরে সে অয়ন্তীর কাঁধ থেকে ফসকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল! খাটের কর্ণারে লেগে তার কপালের অনেকখানি অংশ কেটে গেল! কপাল থেকে দড়দড়িয়ে র’ক্ত গড়ানো শুরু হতেই অয়ন্তী ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল। হচকানো প্রকাণ্ড চক্ষু দ্বারা সে চোখ বুজে পড়ে থাকা রাফায়াতকে দেখতে লাগল। লোকটা সম্পূর্ণ অনুভূতিশূণূ। কোনো রকম উহ্ আহ্ শব্দটিও করলনা। কেবল মাথাটা এপাশ থেকে ওপাশ দুলাতে লাগল। হয়ত এভাবেই ব্যথা প্রকাশ করছে!

আতঙ্কিত হয়ে অয়ন্তী রাফায়াতের মাথাটা তার পায়ের উপর রাখল। র”ক্ত বের হতে থাকা কপালটিতে আলতো হাত ছুঁয়ালো। অমনি রাফায়াত চাপা স্বরে আহ্ করে উঠল। অয়ন্তী ঘাবড়ে উঠল৷ বুঝতে পারল তার ব্যথা লাগছে। যত্ন পাওয়ার সাথে সাথেই তীব্র ব্যথার অুনভূতি বাইরে বের হয়ে এসেছে! রাফায়াতের চিরাচরিত বিভৎস মুখের দিকে তাকালো অয়ন্তী। উদগ্রীব গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কী হয়েছে আপনার? হঠাৎ মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেলেন কেন?”

মিটিমিটি স্বরে রাফায়াত প্রতিউত্তরে বলল,,

“আ’ম সো টায়ার্ড অয়ন্তী। আই নিড টু স্লিপ।”

রাফায়াতের মুখ থেকে নেশা জাতীয় দ্রব্যের বিদঘুটে গন্ধ আসছিল! কাছাকাছি আসাতেই সেই অরুচিকর গন্ধটা অয়ন্তীর নাকে লাগল। শীঘ্রই নাক সিঁটকে নিলো অয়ন্তী। ওড়না দ্বারা নাক ঢেকে নিলো। তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“আজও আপনি নেশা করে এসেছেন হ্যাঁ?”

ব্যথা ভুলানোর সঙ্গী পেয়ে রাফায়াত হঠাৎ অয়ন্তীর কোমড় প্যাঁচিয়ে ধরল! প্রতিবার অগোছালোভাবে তপ্ত শ্বাস ফেলতে লাগল। ঘটনার আকস্মিকতায় অয়ন্তী হকচকিয়ে উঠল! কাঠের পুতুলে পরিণত হলো। তক্ষণি রাফায়াত কেমন যেন ছন্নছাড়া গলায় বলে উঠল,,

“নেশা ছাড়া আর কী আছে জীবনে বলো? আমার জীবনটাই তো নেশাময়।”

অয়ন্তী তার সর্বাত্নক চেষ্টা করল রাফায়াতকে তার শরীর থেকে ছাড়ানোর। নেশায় মাতাল হয়ে আছে রাফায়াত। উদ্দেশ্য কখন কোন দিক থেকে কোন দিকে চলে যায় বলা যায়না! তাই আগে নিজের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিতে চাইল অয়ন্তী। দু’হাত দ্বারা রাফায়াতকে ঠেলতে লাগল সে। ভীরু গলায় বলল,,

“দেখি ছাড়ুন আমায়। উঠুন এখান থেকে।”

“কেন? ভয় পাচ্ছ?”

“না তো! কীসের ভয়?”

“তাহলে এমন ছুটোছুটি করছ কেন? আগ বাড়িয়ে যখন আমায় ধরতে এসেছ তো আমি না ছাড়া অবধি তোমার আজ মুক্তি নেই!”

“আমি তো আর ইচ্ছে করে আপনাকে ধরতে আসিনি। মাথা ফেটে গিয়েছে আপনার, তাই মানবতার খাতিরে ধরতে এসেছিলাম!”

“ঐ একই হলো। একবার যেহেতু ধরেই ফেলছ তো আমি না ছাড়া অবধি আমার হাত থেকে তোমার কোনো পরিত্রাণ নেই!”

“আরে এসব ভাট বকা বন্ধ করুন প্লিজ। ছাড়ুন আমাকে। কপালে ব্যান্ডেজ করতে হবে আপনার।”

“এখানে ব্যান্ডেজ পাবা কই?”

“ব্যান্ডেজ না পেলেও অন্য একটা ব্যবস্থা তো করতে-ই হবে।”

“আমি জানি কী ব্যবস্থা করবে!”

“কী ব্যবস্থা?”

“ফিল্মের হিরোইনদের মত এখন তোমার ওড়নার কাপড় ছিঁড়ে নিশ্চয়ই আমার কপালে বেঁধে দিবা! তাই আগে ভাগেই বলছি এসব ফিল্মি স্ক্রিপ্ট আমার সাথে করতে এসো না। তুমি বরং কিছুক্ষণ শান্ত হয়ে বসে থাকো। র’ক্ত পড়া এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। শরীরের র’ক্ত তো এমনিতেই একটু একটু করে শেষ হয়ে আসছে তাইনা? আর কত ঝড়বে তারা? কিছুদিনের মধ্যে এই ক্ষতটাও হয়ত শুকিয়ে যাবে। শরীরের ক্ষত নিয়ে আমি এই মুহূর্তে ভাবছিনা। মনের ক্ষতটা আমায় বাঁচতে দিচ্ছে না! সেই ক্ষত সারানোর ঔষধ যেহেতু আমি একবার পেয়ে-ই গেছি আজ রাতের জন্য সেই ঔষধ আমি ছাড়ছিনা!”

অয়ন্তীকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রাফায়াত স্বস্তির শ্বাস ফেলল। ব্যথার মাঝেও একরাশ সুখ নিয়ে নিশ্চিন্তে চোখজোড়া বুজল! অয়ন্তী নির্বাক মূর্তি হয়ে বসে রইল। দেহ থেকে প্রাণ বুঝি তার বের হয়ে আসছিল। এই কেমন সর্বনাশা স্পর্শ রাফায়াতের? দেহ শুদ্ধু লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে তার। কাঁটা দিয়ে উঠছে সমস্ত শরীর। শিরদাঁড়া বেয়ে উষ্ণ ঝড় বইছে। তবে সেই ঝড়কে অচেনা কোনো কারণেই অয়ন্তী থামাতে চাইছেনা! এমনকি আজ তার গাঁয়ে কলঙ্কের দাগ লাগলেও না! যেই ছোঁয়ায় সুখ থাকে সেই ছোঁয়া কোনো সীমাবদ্ধতা মানেনা। কোনো বাঁধা-বিঘ্নতা মানেনা। মাতাল চাহনিতে অয়ন্তী বার কয়েক রাফায়াতের নিবিড় মুখশ্রীতে তাকালো। এসি চলছে তবুও যেন রাফায়াতের ঘাড়ে, গলায়, মুখে ঘামের উৎপত্তি দেখা যাচ্ছিল। ভাবুক হয়ে অয়ন্তী খুব সাবধানতার সাথে রাফায়াতের গাঁ থেকে শার্টটা খুলে দিলো। যদিও কালো রঙের শার্টটিতে রক্তের দাগ তেমন মাখোমাখো ভাবে দেখা যাচ্ছেনা। তবুও চিপচিপে ভিজে দাগটা চাইলেও নিষ্পত্তি করা যাচ্ছেনা।

শার্টটা গাঁ থেকে খুলতেই অয়ন্তী হঠাৎ আঁতকে উঠল! বুকে, পিঠে এবং নাভীর কাছাকাছিতে গভীর কালসিটে দাগ পড়ে আছে রাফায়াতের! হাতের কব্জিতেও নেই বৈ কী! বিকেলেও তো এই দাগগুলো ছিলনা রাফায়াতের গাঁয়ে। তবে এখন হঠাৎ এই দাগু গুলোর উদয় ঘটল কীভাবে? তার মানে কী রাফায়াত কারো সাথে মা’র’পিট করে এসেছে? এই মানুষটার কাজ-ই কী কেবল কোমলমতী দেহটাকে মা’র’পি’ট করে ক্ষত-বিক্ষত করা? এ আবার কেমন ধাঁচের মানুষ? যার মধ্যে নিজের প্রতি বিন্দুমাত্র যত্নশীলতাও নেই?

অয়ন্তী পড়ে গেছে মহা ফ্যাসাদে। না পারছে রাফায়াতকে তার শরীর থেকে সরাতে আর না পারছে রাফায়াতকে এই বিক্ষিপ্ত অবস্থায় দেখতে! যদিও এই মুহূর্তে রাফায়াতের সেবা-শ্রুশ্রুষা এবং চিকিৎসা অনিবার্যভাবে প্রয়োজন। তবুও যেন রাফায়াত সেই অনিবার্য বিষয়টি নিয়েই বড্ড উদাসীনতা দেখাচ্ছে!

____________________________________

সূর্যের তীব্র আলোর ছঁটা অয়ন্তীর নিবদ্ধ আঁখিদ্বয়কে দ্বিধাহীনভাবে বিরক্ত করে তুলছে! আগুনের ফুলকি ছিটকে পড়ার ন্যায় অসম্ভব জ্বালা করছে তার চোখদুটো। ঘুমের রেশ কাটিয়ে অয়ন্তীর পক্ষে সম্ভবপর হচ্ছিলনা আঁখিজোড়া টেনে মেলে ধরতে। গাঁয়েও তার কেমন যেন ভারী কিছু পড়ে থাকার অনুভূতি হচ্ছে। সমস্ত শরীরে কেমন যেন ব্যথা ব্যথাও লাগছে। অসহনীয় সেই ব্যথা। মেরুদন্ডে ভর দিয়ে উঠার মত নয়! তার শরীরকে যেন সেই ভারী বস্তুটি ঘোরতোরভাবে দখল করে রেখেছে। ব্যথার ভার আরও দ্বিগুন বৃদ্ধি করে তুলছে।

ইতোমধ্যেই অয়ন্তীর মনে হলো সাইলেন্ট মুডে তার আশেপাশেই কোথাও ফোন বাজছে! এই পর্যায়ে এসে অয়ন্তী বাধ্য হলো ঘুমের রেশ কাটিয়ে চোখ মেলে তাকাতে। অস্ফুটে নেত্রদ্বয়ে সে অগ্রে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই অপ্রত্যাশিতভাবে রাফায়াতকে তার বুকের পাঁজরে আবিষ্কার করল! নিমিষেই ভড়কে উঠল অয়ন্তী। শরীরে ভর করা আড়মোড়া না ভেঙেই সে এক ধাক্কায় রাফায়াতের ব্যথাযুক্ত মাথাটিকে তার বুক থেকে মাটিকে ছিটকে ফেলল! অথচ এইদিকে কোনো হেলদুল নেই রাফায়াতের! ম’রা মানুষদের মত নির্বিঘ্নে ঘুমুচ্ছে সে। মাথায় তুচ্ছ ব্যথার অনুভূতিও পাচ্ছেনা। কার্যসিদ্ধি হতেই অয়ন্তী ধড়ফড়িয়ে শোয়া থেকে ওঠে বসল। হকচকানো দৃষ্টি ফেলল রাফায়াতের নিষ্ক্রীয় মুখশ্রীতে। আবারও সেই ফোন বাজার শব্দ। শব্দটি রাফায়াতের প্যান্টের পকেট থেকেই আসছে।

কৌতূহলী হয়ে অয়ন্তী সকল সীমাবদ্ধতা ভুলে রাফায়াতের প্যান্টের পকেট দুটো হাতাতে লাগল! অবশেষে ডান পাশের প্যান্টের পকেটটিতে সে বাজতে থাকা ফোনটিকে খুঁজে পেল। তাড়াহুড়ো করে অয়ন্তী কলটি তুলার পূর্বেই অতি শীঘ্রই কলটি কেটে গেল। নাম্বারটি ফোনে সেভ করা ছিলনা বিধায় অয়ন্তী বুঝতে পারলনা কে আসলে রাফায়াতকে কল করেছিল। ভাগ্যিস ফোনটিতে স্ক্রীণ লক ছিলনা! তাই ফোনটি খুলতে তার বেশী বেগ পেতে হলোনা। ইতোমধ্যেই নাম্বারটি থেকে একটি এম.এম.এস এলো। কেউ একটা ৫ মিনিটের ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়েছে ফোনটিতে।

অতি আগ্রহ নিয়ে অয়ন্তী ভিডিও ক্লিপটি অন করার পূর্বেই ঐ নাম্বারটি থেকে পুনরায় একটি মেসেজ এলো! মেসেজটি হলোঃ

“এই শা’লা! মা’ল খেয়ে পড়ে আছিস কোথায়? ভিডিও ক্লিপটা দেখ তাড়াতাড়ি। অনিক একটু আগেই ক্লিপটা আমাকে সেন্ড করেছে। কাল রাতের খু’না’খু’নির ভিডিওটা অনিকের কাছে গেল কীভাবে হ্যাঁ? কে করেছে এই ভিডিও?”

মেসেজটি পড়া শেষে অয়ন্তী বিপুল উৎসাহ নিয়ে ভিডিও ক্লিপটিতে ক্লিক করতেই আচমকা সশব্দে চিৎকার করে উঠল! মূলত ভিডিওটিতে রাফায়াত কাউকে জা’নো’য়ারদের মত একের পর এক ছু’রি’কা’ঘাত করছিল!

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here