#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_৩৫
#নিশাত_জাহান_নিশি
ঘুমের মধ্যেই যেন রাফায়াত তার মৃ/ত্যু/র আগাম সংকেত পেল! ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠল সে। আশেপাশে ভয়াল দৃষ্টি বুলাতেই দেখতে পেল সূর্য্যের আলোক রশ্মি জানালার পর্দা ভেদ করে হুড়মুড়িয়ে তার ঘরে প্রবেশ করছে।
বিধ্বস্ত হয়ে মাথা ঝাঁকালো রাফায়াত। কপালে হাত রেখে অবান্তর কিছু ভাবনাচিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করল সে। তবে কিছুতেই যেন নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না তার মনের ভেতর চেপে বসা বিধ্বংসী সেই ভাবনাচিন্তা। বরং তা কল্পনা থেকে ক্রমশ বাস্তবে ভয়ঙ্করভাবে প্রভাব ফেলছে তার উপর। না এভাবে সবকিছু সয়ে রয়ে আর বসে থাকা যাচ্ছেনা। স্বপ্ন হয়তো বাস্তবে পরিণত হতে বেশী সময় লাগবে না! হুড়োহুড়ি করে বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো রাফায়াত। খাটের কার্ণিশ ঘেঁষে থাকা কালো রঙের টি-শার্টটি গাঁয়ে জড়িয়ে নিলো। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল নয়টা পঁয়তাল্লিশ বাজছে ঘড়িতে। এগারোটার পর অয়ন্তী রওনা হবে ঢাকার উদ্দেশ্য। তার হাতে আরও একঘণ্টা পনেরো মিনিট আছে। এই টুকুনি সময়ের মধ্যেই তাকে প্রিয়ার সাথে একবার থানায় দেখা করতে যেতে হবে! প্রিয়ার সাথে কথা বলে পুরোপুরি নিশ্চিত না হলে কোনো কাজেই মন বসাতে পারবেনা সে। মনটা অস্থির হয়ে থাকবে। মনোযোগ নষ্ট হবে।
সময় বেশী অপচয় না করে রাফায়াত প্রায় আধঘণ্টার মধ্যেই থানায় যাওয়ার জন্য তৈরী হয়ে গেল। সকালে হালকা নাশতা করার সামান্য সময় টুকুনিও নিলো না সে। তার মা, ভাবি অনেক জোর করেও তাকে কিছু খাওয়াতে পারলনা। থামতেই চাইল না যেন রাফায়াত। বাইক নিয়ে ছুটে চলল থানার উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণের মধ্যে থানায় পৌঁছে তাকে নানান কাঠখড় পোঁড়ানোর পর প্রিয়ার সাথে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হলো। তাও আবার নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ। পনেরো মিনিটের বেশী সময় নয়! এই পনেরো মিনিট সময়-ই এখন তার কাছে মন্দ কিছু নয়।
লোহার তৈরী বেড়ির এক পাশে আসামীরা এবং তার অন্য পাশে তাদের আত্নীয়স্বজনরা। হইচই পড়ে গেছে যেন। আশেপাশে ভীড় জমে গেছে আত্মীয়স্বজনদের। রাফায়াতও এরমধ্যে অন্যতম। প্রিয়ার সাথে দেখা করার জন্য তাকে পাঁচ মিনিটের বেশী অপেক্ষা করতে হয়নি। মাথায় কালো রঙের একটি ওড়না প্যাঁচিয়ে মাথাটা নুইয়ে প্রিয়া রাফায়াতের মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। যদিও তাদের মাঝখানে লোহার বেড়ি। তাকানো যাচ্ছেনা প্রিয়ার দিকে। একদিনেই যেন মুখটা তার শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে রাফায়াত তাকিয়ে রইল প্রিয়ার দিকে। কেমন যেন কম্পিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,
“কেকেকেমন আছিস?”
পূর্বের ন্যায় মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে থেকে প্রিয়া স্বাভাবিক গলাতেই বলল,,
“ভালো আছি। তুমি?”
“আচ্ছা? তুই কি আমার থেকে কিছু গোপন করছিস প্রিয়া?”
রাফায়াতের হঠাৎ এমন প্রশ্নে হকচকিয়ে উঠল প্রিয়া। উৎকণ্ঠিত চোখে সে মাথা উঁচিয়ে তাকালো রাফায়াতের দিকে। চো/রে/র মন পুলিশ পুলিশ প্রিয়াকে দেখে যেন এমনটিই মনে হলো! ভ্রু কুঁচকালো রাফায়াত। সন্দেহের জাল বুনতে লাগল সে। বিষয়টা প্রিয়া ভালো চোখে দেখল না। বরং সন্দেহ কাটাতে সে সূচালো গলায় রাফায়াতকে বলল,,
“কই না তো! কী গোপন করব?”
“সত্যিই কি তুই সেদিন অনিককে খু/ন করেছিলি প্রিয়া?”
“অপরাধ না করলে আমি নিশ্চয়ই সেদিন কোর্টে দাঁড়িয়ে আমার দোষ স্বীকার করতাম না তাইনা?”
“এর পেছনেও কিছু আছে! যা আমার মন বলছে। এখনও সময় আছে প্রিয়া সত্যিটা স্বীকার কর। আমি আছি তোর পাশে। খালাতো ভাই হিসেবে। তোর আপন কেউ হিসেবে। তোর সাথে কোনো অন্যায় আমি হতে দিবনা। ভরসা রেখে আমার কাছে সব শেয়ার কর।”
“আমি যা বলার সেদিন কোর্টে বলে দিয়েছি রাফায়াত ভাই। নতুন করে আর কিছু বলার নেই। তুমি প্লিজ আর কখনো আমার সাথে দেখা করতে এসো না! পাপবোধটা তখন আরও গাঢ় হয় বুঝলে? কষ্ট হয় ভীষণ। অয়ন্তীকে নিয়ে তুমি বরং সুখেই থাকো রাফায়াত ভাই। আর পারলে খালামনিকে বলো আমাকে ক্ষমা করে দিতে। এতগুলো বছরেও আমি উনার আদর্শ মেয়ে হয়ে উঠতে পারিনি। কলঙ্কের দাগ লেপ্টে দিয়েছি আমার মা সম খালামনির কপালে।”
“প্রিয়া প্লিজ বুঝার চেষ্টা কর। যদি তুই কারো ভয়েও অপরাধটা তোর কাঁধে নিস সেটাও আমাকে বল। আমি চেষ্টা করব তোর হেল্প করতে। এভাবে যাবজ্জীবন তুই জেলে থাকতে পারবিনা প্রিয়া। পুরো জীবনটা তোর ধ্বংস হয়ে যাবে।”
“এনাফ ভাইয়া! অনেক হয়েছে। এবার তুমি যাও প্লিজ। আমাকে আমার মত থাকতে দাও। এখানে আমি ভালো আছি। সবার সাথে মিলেমিশে আছি। তুমিও তোমার লাইফ নিয়ে হ্যাপি থাকো প্লিজ। নিজের ভালোর কথা চিন্তা করো। আর কখনো তুমি আমার সাথে দেখা করতে আসবেনা। আর আসলেও আমার সাথে দেখা হবেনা৷ কারণ, আমি তোমার সামনে আর কখনই আসব না!”
রাফায়াতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই প্রিয়া তেড়েমেড়ে চলে গেল জায়গা থেকে! ব্যর্থ হলো রাফায়াত। প্রখর ক্ষিপ্ত হয়ে সে থানা থেকে বের হয়ে গেল। সামনের টং দোকানে দাঁড়িয়ে খালি পেটেই একটি সিগারেট ধরালো। প্রিয়ার চ্যাপ্টারটা কিছুতেই যেন তার মাথা থেকে দূর হচ্ছেনা। ক্রমশ এই মহাবিপাকে জড়িয়ে পড়ছে সে। যদিও প্রিয়ার কথাবার্তার ধরণ দেখে মনে হচ্ছিল যে, সে যা যা বলেছে সব তার মন থেকেই বলেছে কারো শিখিয়ে দেওয়া কথা নয়। তবুও যেন কোথাও না কোথাও একটা অসামঞ্জস্যতা রয়েই গেছে। যা ভেদ করা রাফায়াতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে!
এরমধ্যেই হঠাৎ অয়ন্তীর মেসেজ এলো তার ফোনে। আধ ঘণ্টার মধ্যেই যেন সে বাসস্ট্যান্ড থাকে। ঢাকার উদ্দেশ্যে তারা রওনা হয়ে গেছে। মেসেজটি পাওয়া মাত্রই রাফায়াত ব্যস্ত হয়ে উঠল। হাতে থাকা সিগারেটটি সে কোনো রকমে শেষ করে বাইক নিয়ে ছুটল বাসস্ট্যান্ডের দিকে। গত রাতের কথা হঠাৎ মনে পড়ে গেল তার। তাই হাতে করে একটি ফুটন্ত লাল গোলাপ নিয়ে গেল সাথে! বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাতেই সে অয়ন্তীকে কল করে বলল স্ট্যান্ডের বাইরে এসে দাঁড়াতে। রাফায়াতের কথামত অয়ন্তী তার বাবা-মাকে বুঝিয়ে তড়িঘড়ি করে স্ট্যান্ডের বাইরে এসে দাঁড়ালো। কাঠ ফাটা রোদের মধ্যে রাফায়াত ফুল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা তার। তীব্র ঘামের প্রভাবে গাঁয়ে থাকা কালো টি-শার্টটিও তার গাঁয়ের সাথে একদম চিপকে লেগে আছে। চুল, দাঁড়ি-গোঁফ অসম্ভব বড়ো হয়ে আছে বিধায় গরমটা যেন সাংঘাতিকভাবে লাগছে তার গাঁয়ে। ফর্সা মুখের আদলটি শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে! প্রচণ্ড দুঃশ্চিতাগ্রস্ত দেখাচ্ছে তাকে। রাফায়াতের এই ভেঙে পড়া অবস্থা দেখতে পারছেনা অয়ন্তী। এমন রাফায়াতকে তো সে চায়নি। সুস্থ, সুন্দর, হাসি-খুশি, গোছানো এবং পরিপাটি রাফায়াতকে দেখতে চেয়েছে সে। যা দিন দিন তার জন্য দুঃসহ হয়ে দাঁড়িয়েছে!
অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা অয়ন্তীকে দেখামাত্রই রাফায়াত দ্রুত পায়ে হেঁটে অয়ন্তীর মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। ম্লান হেসে অয়ন্তীর দিকে ফুলটি এগিয়ে দিলো। বার কয়েক অয়ন্তীর দিকে বিমুগ্ধিত দৃষ্টি ফেলল। প্রেমময় গলায় বলল,,
“খুব সুন্দর দেখাচ্ছে তোমাকে।”
কাঙ্ক্ষিত মানুষটির কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েও যেন সন্তুষ্ট হলোনা অয়ন্তী! ভাবুক দৃষ্টিতে সে রাফায়াতের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ তাকিয়েই রইল। অতঃপর তৎপর গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,
“এমন ছন্নছড়া কেন দেখাচ্ছে আপনাকে? কী হয়েছে?”
“কী হবে আবার? কিছু হয়নি তো।”
“কোনো কিছু নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করছেন?”
“তুমি চলে যাচ্ছ। তাই মনটা একটু খারাপ লাগছে!”
“সত্যি?”
“আমাকে দেখে বুঝতে পারছ না?”
মনে জমা মেঘ সরে গেল অয়ন্তীর! চাপা হাসি হাসল সে। রাফায়াতের মুখ থেকে এমন প্রাণ জুড়িয়ে যাওয়ার মত উত্তর আশা করেনি সে। আশেপাশে যাতায়াত করতে থাকা মানুষদের উপেক্ষা করেই সে রাফায়াতের নাক টেনে দিলো! হিতাহিতজ্ঞান যেন ভুলে বসল সে। চক্ষুজোড়া চড়কগাছ করে রাফায়াত অয়ন্তীর দিকে তাকালো। ভরা পাবলিক প্লেসে কী করছে এই পাগলী? বিপরীতে একগাল হাসল অয়ন্তী। মিষ্টি গলায় বলল,,
“একেবারেই তো আমি চলে যাচ্ছি না তাইনা? তুমি চাইলে হয়ত সপ্তাহে একবার হলেও আমাদের দেখা হবে। যদি তুমি আমার টানে ছুটে যাও তো! আর তাছাড়া ফোনে তো কথাবার্তা চলবেই। এতে এতো মন খারাপ করার কী আছে শুনি?”
রাফায়াতের হাত থেকে অয়ন্তী গোলাপ ফুলটি ছোঁ মেরে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে এলো। চোখ বুজে ফুলটির মিষ্টি ঘ্রাণ শুকতে লাগল। মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় মুগ্ধিত হয়ে রাফায়াত কেবল মিষ্টি দেখতে অয়ন্তীকে অপলক দেখতে লাগল। অয়ন্তী যেমন তার হাতে থাকা ফুলটিকে নিষ্পলক দেখছে। তেমনি রাফায়াতও তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ফুলটিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে দেখছে! অয়ন্তীর ভালোবাসায় সে সিক্ত হয়ে উঠছে। দিন দিন ডুবে যাচ্ছে অয়ন্তীর প্রেমে। উপলব্ধি করতে পারছে অয়ন্তীকে ছাড়া তার জীবন অন্ধকার। অয়ন্তীকে পাওয়ার জন্য সে সব করতে পারে। প্রয়োজনে নিজেকে পাল্টেও ফেলতে পারে। তার অতি শখের রা/জ/নী/তিও ছেড়ে দিতে পারে!
এরমধ্যেই হঠাৎ অয়ন্তীর বাবা-মায়ের ডাক এলো। বাস ছেড়ে দিবে এক্ষণি। যেতে হবে তাকে। রাফায়াতের দিকে একবার বিমূর্ষ দৃষ্টিতে তাকালো অয়ন্তী। মুখটা কালো করে নিলো রাফায়াত। অয়ন্তীকে ছাড়তে যেন ইচ্ছে করছেনা তার। তবে স্বভাবগত কারণে মুখ খুলে সেই কথাটি বলতেও পারছেনা অয়ন্তীকে! মনের মধ্যেই চেপে রেখেছে। রাফায়াতের না বলা মনের ভাব ইতোমধ্যেই পড়ে নিয়েছে অয়ন্তী। মুহূর্তেই যেন সে রাফায়াতের গালে হাত রেখে ভগ্ন গলায় বলল,,
“নিজের যত্ন নিও হ্যাঁ? টাইমলি খাবার দাবার খেয়ো। সারাদিন শুধু মিছিল মিটিং নিয়ে ব্যস্ত থেকো না। নিজেকেও কিছু সময় দিও। রাত দশটার বেশী বাড়ির বাইরে থাকবে না ওকে? সিগারেট খাবে। তবে তা স্বল্প পরিমানে। আর আজকের মধ্যেই এসব চুল, দাঁড়ি, গোঁফ কেটে ছোটো করে নিও। মা/স্তান টাইপ দেখাচ্ছে এভাবে। অয়ন্তী কোনো মা/স্তা/নকে ভালোবাসেনি! সে ভালোবেসেছিল সহজ সরল, হাসি-খুশি, সবদিক থেকে পরিপাটি দেখতে একটি ছেলেকে।”
মাথা নুইয়ে রাখল রাফায়াত। ভেজা চোখ তুলে অয়ন্তীর দিকে তাকানোর সাহসটুকুও নেই তার! মাথা নাড়িয়ে কেবল অয়ন্তীর হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলালো। মাথাটা নিচু করে অয়ন্তী কিছুক্ষণ লুকিয়ে ছুপিয়ে বিষণ্ন রাফায়াতকে দেখল! দেখা শেষে টলটলিয়ে চোখের জল ফেলে সে পেছন ঘুরে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। মাথা তুলে অয়ন্তীর যাওয়ার পথে তাকালো রাফায়াত। নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে কেবল সেদিকে তাকিয়ে-ই রইল। অয়ন্তীর ছায়া পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হতেই রাফায়াত পিছু ঘুরল। কাতর মনে বাইকে ওঠে বসল। কাজ টাজ ফেলে আজ সে বাড়ি ফিরে গেল। নেতার কোনো ফোন কলও ধরল না! আজ নিজেকে কিছুটা সময় দিতে চায় রাফায়াত। চারদেয়ালের মাঝে নিজেকে বন্দি রেখে। মন খারাপকে আরও একটু প্রশ্রয় দিতে! কী এমন ক্ষতি হবে হ্যাঁ? অয়ন্তীকে মনে রেখে আজকের দিনটা তার নামেই উৎসর্গ করতে?
________________________________
কেটে গেল মাঝখানে প্রায় একমাস! ধীরে ধীরে রাফায়াত এবং অয়ন্তীর ভালোবাসা গাঢ় হতে লাগল। সারাক্ষণ ফোনে চ্যাটিং আর ভিডিও কলে থাকা হয় তাদের। পুরোনো রাফায়াতকে যেন ক্রমশ ফিরে পাচ্ছে অয়ন্তী। খুব বাধ্য একটা ছেলে। যে কী না এখন অয়ন্তীর কথায় ওঠে আর বসে! অয়ন্তীর কথামত রা/জ/নীতি থেকে অল্প অল্প করে সরে আসছে রাফায়াত। দলীয় কোনো মিছিল মিটিংয়েও অংশগ্রহণ করা হচ্ছেনা তার। সময় পেলে শুধু সন্ধ্যার সময়টাতেই নেতাকে সময় দেয় সে। তাও আবার এক, দু’ঘণ্টার জন্য। যদিও এই নিয়ে দুজনের মধ্যে খুব মনোমালিন্য। তবুও যেন এসব আমলে নিচ্ছেনা রাফায়াত। নেতা যে তার উপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে আছে তা বুঝেও যেন না বুঝার মত ভান ধরছে রাফায়াত!
প্রেম ভালোবাসার ফাঁকে ফাঁকে রাফায়াত এখন টুকিটাকি জব প্রিপারেশনও নিচ্ছে। নিয়ম করে রাত দশটার পর সে পড়তে বসছে! ঘণ্টা খানিক পড়ে আবার ওঠে যাচ্ছে। সবকিছু তার রুলসের মধ্য চলে এসেছে এখন। খাওয়াদাওয়া, পড়াশোনা, ঘুমানো, পরিবারের ভালোমন্দের খেয়াল রাখা সব তার আয়ত্তের মধ্যে চলে এসেছে। রাফায়াতের এই আমূল পরিবর্তে খুশি রাফায়াতের গোটা পরিবার। বিশেষ করে রাফায়াতের মা। আকাশের চাঁদ যেন তিনি হাতে পেয়ে গেছেন। অয়ন্তীর সাথে যে রাফায়াতের ঘোরতোর প্রেম চলছে সে বিষয়ে চঞ্চল আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে চলছে রাফায়াতের পরিবারকে! বুঝেও সবাই না বুঝার ভান ধরছে। এই মুহূর্তে রাফায়াতকে ঘাঁটাতে চাচ্ছেন না তারা। প্রেম চলছে চলুক। সময় হলে রাফায়াতই মুখ ফুটে সব বলবে তাদের সেই আশায়।
দুপুরের খাবার খেয়ে রাফায়াত তার শোবার ঘরে প্রবেশ করল। তখন ঘড়িতে দুপুর প্রায় দুইটা। টেবিলের উপর থেকে ফোনটি হাতে নিয়েই সে মুখটি কালো করে ফেলল। অয়ন্তীর নাম্বার থেকে এখনো কোনো ফোন আসেনি। মেসেঞ্জারেও প্রায় ষোলো ঘণ্টা যাবত এক্টিভ দেখাচ্ছে না তাকে। কাল রাত থেকে উধাও সে। শেষ বারের মত অয়ন্তীর নাম্বারে ডায়াল করল রাফায়াত। নাম্বারটি রীতিমত সুইচ অফ এলো! ঘাবড়ে গেল রাফায়াত। মাথায় হাত চলে গেল তার। আর এভাবে নিশ্চিন্তে বসে থাকলে চলবেনা। অয়ন্তীর কিছু একটা হয়েছে বুঝতে আর বাকী রইল না তার। ঝটপট চঞ্চলকে ফোন দিয়ে সে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। মনে বাড়তে থাকা ভয়কে আর বাড়তে দেওয়া যাবেনা।
সন্ধ্যা হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে তারা ঢাকা এসে পৌঁছালো। রিকশা ভাড়া করে তারা অয়ন্তীর বাড়ির সামনে আসতেই দেখতে পেল বেশ জাঁকজমকভাবেই অয়ন্তীদের বাড়ির গেইট সাজানো হয়েছে। মনে হচ্ছে যেন এটা কোনো বিয়েবাড়ি!
#চলবে…?
[খারাপ কিছু ঘটার সম্ভাবনা নেই। যা হবে ভালো হবে।]