এক খণ্ড কালো মেঘ পর্ব -৩৬

#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_৩৬
#নিশাত_জাহান_নিশি

সন্ধ্যা হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে তারা ঢাকা এসে পৌঁছালো। রিকশা ভাড়া করে তারা অয়ন্তীর বাড়ির সামনে পৌঁছাতেই দেখতে পেল বেশ জাঁকজমকভাবেই অয়ন্তীদের বাড়ির গেইট সাজানো হয়েছে। মনে হচ্ছে যেন এটা কোনো বিয়েবাড়ি!

চলতি রিকশা থেকে হুড়োহুড়ি করে নেমে পড়ল রাফায়াত। জানে পানি নেই তার। মাথায় যেন বিস্তর আকাশটা ভেঙে পড়েছে। বদ্ধ উন্মাদের চেয়ে কোনো অংশে কম মনে হচ্ছেনা তাকে। অয়ন্তীদের বাড়িতে অনুষ্ঠান? হঠাৎ কীসের অনুষ্ঠান লেগেছে? অয়ন্তী তো এই ব্যাপারে তার সাথে কিছু শেয়ার করেনি। তবে কী তার মন এতক্ষণ যা যা খারাপ কিছুর ইঙ্গিত করছিল বাস্তবে এখন তাই হচ্ছে? কেন তার খারাপ ভাবনাচিন্তা গুলোই বার বার এভাবে সত্যি হয়ে যায়? কেন সুখ এসেও প্রিয় দুঃখরা তাকে ভালো থাকতে দেয়না? এভাবে আর কতদিন? একটা মানুষ এভাবে আর কত সহ্য করতে পারে?

বাহারী ফুল দ্বারা সুসজ্জিত গেইটটির সামনে আত্নীয়স্বজনদের সমাগম। বেশ হাসি-খুশি দেখাচ্ছে সবাইকে। বিয়ের ধূম লেগেছে এমনটিই মনে হচ্ছে। দিশাহারা হয়ে চঞ্চলকে ঠেলে রাফায়াত দৌঁড়ে গেল গেইটের সামনে। একত্রে দাঁড়িয়ে থাকা দু/তিন জন ভদ্র মহিলার মুখোমুখি দাঁড়ালো সে। উত্তেজিত গলায় তাদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“কীসের অনুষ্ঠান হচ্ছে এই বাড়িতে?”

তাদের মধ্য থেকে একজন ভদ্র মহিলা বেশ বিনয়ের স্বরেই জবাবে রাফায়াতে বললেন,,

“আজ এই বাড়ির ছোটো মেয়ের আকদ হচ্ছে!”

আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ালো না রাফায়াত। পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গেল তার। তবুও তার প্রাণপন চেষ্টা কিছু অনর্থ হওয়ার পূর্বেই তার ভালোবাসার কাছে পৌঁছানোর। পাগলের মত দিক বিদিক ভুলে সে কীসের উপর দিয়ে যে দৌঁড়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল এসবের কিছুই জানা নেই তার। আত্মীয়স্বজনদের ঠেলে বাড়ির বসার ঘরে প্রবেশ করতেই দেখতে পেল কাজী সাহেব নিয়ে প্রস্তুত দু’পক্ষের লোকজন! একপাশে অয়ন্তীর বাবা-মা এবং অন্য পাশে লাল পাঞ্জাবি পরিহিত বর এবং বরের পরিবার! রাগে মাথা কাজ করছিলনা রাফায়াতের। সামনে একটি কাঠের চেয়ার পেতেই সে চেয়ারটিতে জোরে এক লা/থ মারল! অমনি উদ্ভ্রান্ত রাফায়াতের দিকে চোখ পড়ল অয়ন্তীর বাবা এবং মায়ের। তাৎক্ষণিক দুজনেরই কলিজা মোচড় দিয়ে উঠল! ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে অয়ন্তীর বাবা বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালেন। কাঠ কাঠ গলায় তিনি রাফায়াতকে কিছু বলার পূর্বেই রাফায়াত তেজস্ক্রিয় রূপ ধারণ করল! ঘাড়ের রগ টান টান করে সে চোয়াল উঁচালো। বিদ্রোহী গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“অয়ন্তী কোথায়?”

আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালেন না অয়ন্তীর বাবা। চ্যালচ্যালিয়ে হেঁটে তিনি রাফায়াতের মুখোমুখি এসে দাঁড়ালেন। পিছু ঘুরে আ’হাম্ম’ক বনে থাকা পাত্রপক্ষদের ইশারায় কিছু বুঝালেন। হয়ত বা তাদের শান্ত হতে বললেন। যদিও তারা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছেন অয়ন্তীর সাথে রাফায়াতের চ’ক্ক’র চলছে! তবুও যেন তারা অয়ন্তীর বাবার ইশারায় আরও কিছুক্ষণ শান্ত হয়ে অপেক্ষা করতে চাইলেন। দু’হাত দ্বারা রাফায়াতকে ঠেলে তিনি আড়ালে নিয়ে এলেন। মাথা ঠাণ্ডা করে বেশ নম্র স্বরে রাফায়াতকে বুঝিয়ে বললেন,,

“দেখো রাফায়াত। আমি জানি অয়ন্তীর সাথে তোমার একটা প্রেমের সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। আর সেজন্যই আমরা হুট করে তার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি! তোমার মত একটা গু/ন্ডা, মা/স্তান, এবং বেকার ছেলের হাতে তো আমরা নিশ্চয়-ই আমাদের একমাত্র মেয়েকে তুলে দিতে পারিনা তাইনা? তুমি তো খুব বুদ্ধিমান ছেলে। আশা করি আমার কথাটা বুঝবে। অয়ন্তীর ভালোর জন্য হলেও অয়ন্তীকে ছেড়ে দিবে।”

মাথা ঠাণ্ডা করতে পারলনা রাফায়াত। মুখশ্রী তার রক্তিম বর্ণ ধারণ করল। কপালের রগগুলো ভেসে উঠল। ধৈর্য্য শক্তি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল। অয়ন্তীকে ছেড়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ সে মানতে পারল না! ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস ফেলে সে শক্ত গলায় জবাবে বলল,,

“গু/ন্ডা মা/স্তান হলেও আমার একটা মন আছে আঙ্কেল। বেকার হলেও আমার অনেক স্বপ্ন আছে! সেই সব স্বপ্ন আমার আপনার মেয়েকে ঘিরেই! আপনার মেয়ে পাশে আছে বলেই আমি এখন গু/ন্ডামি, ম/স্তা/নি করা ছেড়ে দিয়েছি! রাজনীতির সাথেও এখন আমার তেমন কোনো সম্পৃক্ততা নেই। পাশাপাশি চাকরীর জন্যও যথাসাধ্য চেষ্টা করছি আমি। আল্লাহ্ চাইলে হয়ত কিছুদিনের মধ্যেই আমার সেই বেকারত্বও ঘুঁচে যাবে। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের মাঝখানে আপনারা এসে ভুল করেছেন আঙ্কেল। রাফায়াতের দেহে প্রাণ থাকতে সে তার ভালোবাসা কে কখনো অন্য কারোর হতে দিবেনা। এটা তার জেদ নয়। বরং তার প্রতিজ্ঞা। রাগিয়ে ভুল করলেন আমায়। আপনার সামনে দিয়ে এখন আমি আপনার মেয়েকে তুলে নিয়ে যাব! আর আপনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু দেখবেন। কিছু করতে পারবেন না।”

“জাস্ট শাট আপ রাফায়াত। আইনী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব আমি!”

“যা ইচ্ছে করুন। রাফায়াত এসবে ভয় পায়না। আশা করি নতুন করে রাফায়াতকে চেনার মত কিছু অবশিষ্ট নেই আপনার? রাফায়াত মানেই আগুন! আপনার মেয়ের ভালোবাসায় সে এখন যেমন গলে বরফ হয়ে গেছে তেমনি তাকে হারানোর ভয়ে নতুন করে আবার আগুন হয়ে জ্বলে উঠতেও তার কোনো দ্বিধা নেই।”

অয়ন্তীর বাবাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলোনা না রাফায়াত। হিংস্রতা ছড়িয়ে পড়ল তার সর্বাঙ্গে। পুরোনো রাফায়াত যেন আবারও তার স্বভাবে ফিরে এলো! অয়ন্তীর বাবাকে ডিঙিয়ে সে বর এবং বর পক্ষের লোকজনের দিকে একবার তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। চোখের লেলিহান ইশারায় বলল এখান থেকে চলে যেতে। বর এবং বরপক্ষের সবাই খামোশ খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সব যেন তাদের মাথার উপর দিয়ে গেল। রাগে নাক টানল রাফায়াত। দৌঁড়ে সে অয়ন্তীর শোবার ঘরের দিকে পা বাড়ালো। এরমধ্যেই কোঁমড়ে হাত গুজে চঞ্চল অয়ন্তীর বাবার মুখোমুখি দাঁড়ালো! ঠাট্টার স্বরে বলল,,

“কেন পাগলটাকে রাগাতে গেলেন আঙ্কেল? এখন কী হবে বলুন তো? এত স্বাদের বাড়িটা আপনার। আহারে! রাফায়াতের তেজের আগুনে জ্বলে পুড়ে খাঁক হয়ে যাবে সব! বাই দ্যা ওয়ে আঙ্কেল, ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিয়ে রেখেছেন তো?”

চোখ গরম করে অয়ন্তীর বাবা চঞ্চলের দিকে তাকাতেই চঞ্চল শুকনো ঢোঁক গিলল! জায়গা থেকে সরে এসে সে বেশ ভাব সাব নিয়ে পাত্রের পাশাপাশি দাঁড়ালো। কানের কাছে বিড়বিড়িয়ে বলল,,

“বস। পাত্রীর আসল বর চলে এসেছে। আপনি বরং যে লেবাসে পাত্রীকে বিয়ে করতে এসেছেন না? সেই লেবাসটা খুলে আসল পাত্রকে পড়ার সুযোগ করে দিন! এতে কী হবে বলুন তো? আসল পাত্রের সাথে যেমন পাত্রীর বিয়েটাও হয়ে যাবে তেমনি আপনারও অনেক অনেক সওয়াব কামাই হয়ে যাবে। এত ভালো আইডিয়া দেওয়ার জন্য থ্যাংকস দেওয়ার দরকার নেই। আমার কাজই এটা ফ্রিতে মানুষকে আইডিয়া দেওয়া!”

হিংস্র সাপের ন্যায় ফোঁস ফোঁস করে উঠল পাত্র! ক্ষিপ্র চোখে চঞ্চলের দিকে তাকালো। অমনি চঞ্চল ভাবশূণ্য গলায় বলল,,

“এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই ওকে? পাত্র হিসেবে আপনি ঘাগটিয়া!”

রেগেমেগে পাত্রপক্ষ বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। সাথে কাজীকেও নিয়ে চলে গেল। অয়ন্তীর বাবা এবং মাকে মুখের উপর যা ইচ্ছে তা বলে গেল! কঠিন ভাষায় অপমান করে গেল তাদের। বাড়ি ভর্তি লোকজনসহ পাড়ার লোকরাও ছাড়ল না তাদের কথা শুনাতে! মুহূর্তের মধ্যেই যেন বিয়েটা ভেঙে গেল। অয়ন্তীর মা এবং বাবা লজ্জায় ভেঙে পড়লেন! মাথায় হাত দিয়ে তারা বসে পড়লেন। কেন যে অনিকের বাবা-মায়ের কথা শুনে তারা জোর করে অয়ন্তীকে বিয়েটা দিচ্ছিলেন! তাই ভেবেই অস্থির হয়ে পড়লেন। নিজেদের মান-সম্মান খুইয়ে এখন তারা সর্বশান্ত।

অনেকক্ষণ যাবত রুমের দরোজা ধাক্কানোর পরেও ভেতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ মিলছিল না অয়ন্তীর! দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে ভেঙে ফেলার উপক্রম হয়ে গেল প্রায়। অয়ন্তীর নাম ধরে অনবরত ডাকতে লাগল রাফায়াত। ধৈর্য্য হারালো না মোটেও। অজানা ভয়ে তার গলা শুকিয়ে আসছিল! ভেতরের যন্ত্রণাটা তখন প্রগাঢ় হতে লাগল। যে হারে তার খারাপ চিন্তাভাবনাগুলো বাস্তবের রূপ ধারণ করছে না জানি কী কী অপেক্ষা করছে আরও! খারাপ কিছু আবার ঘটে গেল না তো? এমনিতেই সময় খারাপ যাচ্ছে তার। এরচেয়ে খারাপ কিছু হলে মানতে পারবেনা সে। ম/র/ণ দশা হয়ে যাবে তার। সময় যত বাড়ছিল ততই যেন তার ভেতরের হাহাকারটা বাইরে বের হয়ে আসছিল। দমটা যেন তার যাই যাই করছিল।

শেষবারের মত দরজায় রাফায়াত তার সর্বশক্তি দিয়ে জোরে এক লা/থ মারল। অমনি দরজা খুলে অয়ন্তী বধূবেশে বের হয়ে এলো! শরীরটা কেমন যেন ঢুলছে তার। এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা সে। চোখের পাতাগুলোও কেমন যেন অস্বাভাবিকভাবে কাঁপছে। দেখতে তেমন ঠিকঠাক দেখাচ্ছেনা তাকে। সাংঘাতিক কিছু একটা হয়েছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। রাফায়াতকে দেখেও যেন অয়ন্তীর মধ্যে খুশির কোনো ছিটেফোঁটা নেই! বিষয়টায় বড্ড অবাক হলো রাফায়াত। ভীতসন্ত্রস্ততা তার বেগতিক বাড়তে লাগল। উৎকণ্ঠিত হয়ে সে অয়ন্তীর দিকে এক-পা এগিয়ে গেল। অমনি অয়ন্তী হঠাৎ মাথা ঘুরে রাফায়াতের বুকের পাঁজরে ছিটকে পড়ল! অস্ফুটে গলায় বলল,,

“আমাকে হসপিটালে নিয়ে চলো রাদিফ! আমি বাঁচতে চাই প্লিজ!”

আতঙ্কে জর্জরিত হয়ে উঠল রাফায়াত। যদিও কথা তার কণ্ঠনালীতে প্যাঁচিয়ে আসছিল তবুও যেন সে তার সর্বশক্তি কাজে লাগিয়ে কাঠ কাঠ গলায় অয়ন্তীর দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কীকীকী হয়েছে তোমার?”

“ঘুঘুঘুমের ঔষধ খেখেয়েছি আমি!”

নাক থেকে নিঃশ্বাস পড়ার আগেই অয়ন্তীকে কোলে তুলে নিলো রাফায়াত। এক একটা মুহূর্ত যেন তার বিভীষিকাময় কাটছিল। অয়ন্তীর যতক্ষণ শ্বাস পড়ছিল ততক্ষণ যেন রাফায়াতও ভালো ছিল! শ্বাস পড়ার শব্দটা ক্রমশ মিইয়ে আসতেই রাফায়াতের ছটফটানি শুরু হলো! সেন্সলেস হয়ে গেল অয়ন্তী। দিন দুনিয়ার খবর নেই তার। উপরের তলা থেকেই রাফায়াত চিৎকার করে চঞ্চলকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল,,

“চঞ্চল। গ্যারেজ থেকে অয়ন্তীদের গাড়িটা বের কর প্লিজ। অয়ন্তীকে নিয়ে এক্ষণি হসপিটালে যেতে হবে।”

নিচতলায় রাফায়াতের গলার শব্দ পৌঁছাতেই হকচকিয়ে উঠল সবাই! বিশেষ করে অয়ন্তীর মা এবং বাবা সোফা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালেন। রাফায়াত কেন অয়ন্তীকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলল তা জানতে তারা ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। পেরেশান হয়ে চঞ্চল সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বিধ্বস্ত হয়ে ছুটে আসা রাফায়াতের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“কী হয়েছে অয়ন্তীর?”

“ঘুমের ঔষধ খেয়েছে। প্লিজ টাইম ওয়েস্ট না করে গাড়িটা বের কর।”

সঙ্গে সঙ্গেই অয়ন্তীর মা চিৎকার করে উঠলেন! কলিজা শুকিয়ে কাঠ। বড়ো মেয়েকে হারানোর পরে এই ছোটো মেয়েকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকা উনার। এখন আবার তাদের বোকামির জন্য ছোটো মেয়েকেও হারাতে বসবেন না তো তারা? দৌঁড়ে তিনি সিঁড়ির দিকে ছুটে গেলেন। অয়ন্তীর বাবা পাগলের মত গাড়ির চাবি খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। দৌঁড়ে উনার ঘরে গিয়ে চাবিটা হাতে করে নিয়ে এলেন। তড়িঘড়ি করে চাবিটা হাতে তুলে নিলো চঞ্চল। গ্যারেজের উদ্দেশ্যে দৌঁড়ে গেল সে। আতঙ্কিত হয়ে অয়ন্তীর মা এবং বাবা অয়ন্তীর আশেপাশে ঘিরতেই রাফায়াত তাদের বাঁধ সাধল! বিক্ষুব্ধ গলায় বলল,,

“একদম না৷ ওর ধারে কাছেও আপনারা ঘেঁষবেন না। আপনারা তাকে এত পরিমাণ ট’র্চার করেছেন যে সে বাধ্য হয়েছে ঘুমের ঔষধ খেতে! আমি ওর পাশে থাকতে আপনাদের মত সো কল্ড বাবা-মায়ের কোনো প্রয়োজন নেই!”

তব্ধ হয়ে থাকা অয়ন্তীর বাবা-মাকে ঠেলে রাফায়াত বাড়ির বাইরে চলে এলো। গাড়ির ব্যাকসিটে অয়ন্তীকে নিয়ে একপাশে বসে পড়ল সে। কিছু একটা ভেবে অয়ন্তীর মাকে ডেকে সে অয়ন্তীর অন্যপাশে বসিয়ে দিলো! অয়ন্তীর বাবাকে বসিয়ে দিলো চঞ্চলের পাশে। দ্রুত গতিতে গাড়ি ছেড়ে দিলো চঞ্চল। বাতাসের আগেই পুরো এলাকায় যেন রটারটি হয়ে গেল অয়ন্তীর সু/ই/সা/ইড করতে যাওয়ার খবরটা!

__________________________

ট্রিটমেন্টের প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা পর অয়ন্তীর জ্ঞান ফিরেছে। রাত তখন প্রায় বারোটার কাছাকাছি। কেবিনে অয়ন্তীর সাথে এখন কেউ না থাকলেও রাফায়াত তার মাথার কাছে ঠায় বসে আছে! জলে ভেজা নিষ্পলক দৃষ্টি তার অয়ন্তীর দীর্ণ বিদীর্ণ হয়ে থাকা বিস্তীর্ণ মুখমণ্ডল জুড়ে। কখন অয়ন্তীর জ্ঞান ফিরে আসবে সেই আশায় যেন চোখের পাতা ফেলতেও দু’বার ভাবতে হচ্ছে তার! এভাবে নিষ্প্রাণ অবস্থায় অয়ন্তীকে দেখতে পারছেনা সে। শরীরটা কাঁটা দিয়ে উঠছে। অয়ন্তীর এমন পাগলামিপূর্ণ ভালোবাসা তাকে দিন দিন দূর্বল করে তুলছে। অসহায় করে তুলছে! নতুন ভাবে বাঁচতে শিখাচ্ছে। অয়ন্তীর মায়া তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। নিঃস্ব জীবনটা তার সর্বস্ব ফিরে পাচ্ছে। এত সুখ যেন তার সইছেনা৷ খারাপ কিছুর আগাম বার্তা বয়ে আনছে! যদিও বা খারাপ কিছু খুব বেশি একটা দিন স্থায়ী হয়না।

এসব জল্পনা কল্পনার মাঝেই যে অয়ন্তী কখন চোখ খুলে তার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে সেদিকে খেয়ালই নেই রাফায়াতের! বেশ কিছুক্ষণ যাবত অয়ন্তী এভাবেই নিশ্চুপ থেকে রাফায়াতকে পর্যবেক্ষণ করল। একমাস আগের দেখা রাফায়াত আর এখনকার রাফায়াতের মধ্যে অনেক পার্থক্য! অতীতের হারিয়ে যাওয়া চেহারার জৌলসতা যেন পুনরায় ফিরে আসছে তার! চেহারায় এক কঠিন মায়া কাজ করছে। শান্তশিষ্ট, আবেগী, সেই গোছানো রাদিফ। যার চোখের মায়ায় নিশ্চিন্তে ডুবে যাওয়া যায়। যার জন্য অনায়াসে মৃ/ত্যু/কেও বরণ করা যায়। রাফায়াতের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েই তো তাকে হারানোর ভয়ে সুই/সা/ইড করতে গিয়েছিল সে। মনের কোথাও না কোথাও অয়ন্তীর জানা ছিল রাফায়াত ঠিক সময়ে এসে অবশ্যই অয়ন্তীকে বাঁচিয়ে নিবে!

রাফায়াতের দুঃশ্চিন্তা কাটাতে অয়ন্তী এবার জায়গা থেকে কিঞ্চিৎ নড়ল চড়ল। অমনি রাফায়াত তার বিভ্রম থেকে বের হয়ে এলো। হকচকানো দৃষ্টি ফেলল অয়ন্তীর ফ্যালফ্যাল দৃষ্টির পানে। ম্লান হাসল অয়ন্তী! রাফায়াতকে হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চাইল। অমনি তার ক্যানোলায় টান পড়ল! সঙ্গে সঙ্গেই মৃদু্ ব্যথায় আহ্ করে চিৎকার করে উঠল অয়ন্তী। অস্থির হয়ে উঠল রাফায়াত। অয়ন্তীর হাতটা আবারও আগের জায়গায় রেখে সে ক্যানোলার উপর দিয়েই অয়ন্তীর হাতে চুমু খেলো। আশঙ্কিত গলায় বলল,,

“ব্যথা লাগল বেশী?”

রাফায়াতকে আশ্বস্ত করার জন্য অয়ন্তী মিটিমিটি হেসে বলল,,

“না। ঠিক আছি।”

“শিওর?”

“হুম।”

“বয়স কত তোমার?”

“মানে?”

“যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দাও।”

“বাইশ বছর।”

“বাইশ বছরের একটা পরিপক্ক মেয়ে হয়ে তুমি কীভাবে যাও সু/ই/সাইড করতে?”

“তো কী করব হুম? যে ছেলেটা এখন আমার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এত লেসন দিচ্ছে সে কী জানেনা তাকে ছাড়া আমি বাঁচব না? তার জায়গায় অন্য কাউকে ভাবতে আমার জান বের হয়ে যায়। বুঝেনা সে?”

“লাভ নেই এসব বলে! আ/গু/ন নিভবে না কিছুতেই। আর একটুর জন্য ম/রে যাচ্ছিলাম আমি। বার বার মনে হচ্ছিল এই বুঝি আমার স্বপ্নের শহরটা ভেঙেচুরে খান খান হয়ে গেল।”

#চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here