#পরীজান
#পর্ব ১২
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌
রাতের ঝড়ে যে এতো বড় তান্ডব চালাবে তা নূরনগরের কারো জানা ছিল না। সে যে একটা নিষ্পাপ প্রাণ কেড়ে নিল। কিন্ত পালক কিভাবে পানিতে পড়ে গেল তা কেউই বুঝতে পারল না। পানির কাছেই বা কেন গেল?ইতোমধ্যেই সারা গ্রামে পালকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়েছে। চোখের পানি ফেলছে অনেকেই। মেয়েটা অনেক ভাল ছিল এই কথাটা সবার মুখে শোনা গেল। ভিড় জমেছে জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গনে। নারী পুরুষ বাচ্চাদের আনাগোনা বাড়ছে। শহুরে ডাক্তারের লাশ দেখে যাচ্ছে এক এক করে।
সাদা কাপড়ে ঢাকা পালকের নিথর দেহ পড়ে আছে। তার থেকে খানিকটা দূরে রুমি কাদার মধ্যে বসে আছে ওর পাশে মিষ্টি একই ভাবে বসে আছে। মাঝরাতে যখন এই লৌহমর্ষক খবরটা পেলো তখন থেকেই কেঁদেছে। কিন্ত এখন কাঁদার শক্তি দুজনেই হারিয়েছে। তাই শুধু পালকের লাশের দিকে তাকিয়ে আছে। স্থির সে দৃষ্টি। কিছুটা দূরে গাছের শেকড়ের উপর নাঈম আর শেখর বসে আছে। আসিফ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কাল রাতে যখন সবাই বাগান বাড়িতে পৌঁছালো তখন ঝড় একটু কমেছে। পুরো বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পালককে ওরা পেল না। ওদের সাথে গ্রামের লোকেরাও খুজল। কিন্তু পেল না। কেউ একজন বাড়ির পেছনে গেল খুঁজতে। যেখানে কেউই যায় না। পানিতে উপুড় হয়ে ভাসছে পালক। হারিকেনের আলোয় লোকটা ভালো করে কিছু দেখল না তবে চিৎকার দিয়ে সবাইকে ডাকল।
কয়েকজন শায়েরের আদেশে সাথে সাথেই পানিতে নেমে পড়ল। সবাই মিলে ধরাধরি করে পালককে ডাঙায় তুলে আনে। নাঈম দ্রুত পালকের হাত ধরে। কিন্ত পরক্ষণেই ছেড়ে দিয়ে নিজের শরীরের ভর ছেড়ে দিল মাটিতে। চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। শেখর আসিফ বুঝেও ছুটে গিয়ে পালকের হাত ধরল এবং ওরাও নাঈমের পাশে বসে পড়ল। এটুকু সময়ের মধ্যে কি হয়ে গেল?
রাতেই পালককে জমিদার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। রুমি মিষ্টি এসে পালকের লাশ দেখেই কাঁদতে লাগল। ওভাবেই সকাল হয়ে গেল।
নাঈম পালকের দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে। এই পালকের সাথে কত মজা করেছে ওরা। একসাথে ক্লাস করেছে গল্প করেছে। একসাথে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছে। কত আনন্দ করে ছ’জন এই গ্রামে এসেছিল। এখন ফিরতে হবে পাঁচজন কে। ভাবতেই অবাক লাগছে। নাঈমের এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে পালক আর নেই। পানিতে ডুবে মারা গেছে। কি অদ্ভুত,যে পানি মানুষের জীবন বাঁচায় সেই পানিই মানুষের জীবন কেড়ে নেয়।
পালকের মৃত্যুটা শায়ের ও মানতে পারছে না। হঠাৎই এরকম ঘটনা ঘটে যাবে তা সে ভাবতেও পারেনি। তাছাড়া মেয়েটার সাথে কাল ওর বেশ কিছুক্ষণ কথাও হয়েছিল। তাকিয়ে ছিল শায়েরের দিকে। অথচ কিছু সময়ের ব্যবধানে মেয়েটা আর নেই। আর কথা বলবে না। যে চোখে শায়ের পালকের অনুভূতি পড়েছিল সে চোখ জোড়া আর খুলবে না।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে শায়ের গেল আফতাবের সাথে কথা বলতে। মালাকে নিয়ে আফতাব ভোরে ফিরেছে। পালকের খবর পেয়ে মালাও কেঁদেছে। মেয়েটা সত্যিই খুব ভাল ছিল। এভাবে মেয়েটা পৃথিবী ছাড়বে তা মালাও বোঝেনি।
অন্দরের বারান্দায় পরীকে বুকে জড়িয়ে বসে আছে মালা। জেসমিন কুসুম আর জুম্মান ও আছে। বেশ কয়েকজন মহিলা ও এসেছে। ওদের দেখে আবার চলে যাচ্ছে। পরী এখনও মালাকে ধরে আছে। অনেক দিন পর মায়ের বুকে মাথা রেখেছে সে। হঠাৎ পালকের কথা মনে পড়তেই মাথা তুলে তাকালো বলল,’আম্মা ডাক্তার আপা!!’
-‘চুপ থাক পরী। কথা কইস না যা হওয়ার তা হইছে। তুই শান্ত থাক।’
চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু বের হতে লাগল। সে বলল,’আম্মা ডাক্তার আপা কইছিল আমার লগে গল্প করবে। কিন্ত সে তো আর আইলো না আম্মা। আমার অনেক কষ্ট হইতাছে আম্মা।’
মালা মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে, ‘কান্দিস না পরী। আমার মাইয়া তো নরম না। এতো কান্দে তো না। তাইলে এতো কান্দিস ক্যান।’
মালা আবার পরীকে জড়িয়ে নিলো। পরী ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল। শক্ত করে জড়িয়ে ধরল মালাকে।
ঠিক তখনই মিষ্টি রুমি অন্দরে ঢুকল। পরী চট করে মাথা তুলে তাকায়। যন্ত্রমানবের মতো হেটে আসছে দুজনে। সিঁড়ি বেয়ে দুজন দোতলায় চলে গেল। কিছুক্ষণ পর নিজেদের ব্যাগ নিয়ে এলো ওরা। মালার সামনে গিয়ে রুমি ভাঙা গলায় বলল,’আমরা চলে যাচ্ছি ভালো থাকবেন। বুঝতে পারিনি যে, হাসিখুশি ভাবে এসেছিলাম আর যেতে হবে কাঁদতে কাঁদতে। পালক কে এভাবে হারিয়ে ফেলব জানলে কখনও এখানে আসতাম না।’
বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লো রুমি। চোখের জল মুছতে মুছতে অন্দর থেকে বের হয়ে গেল। ওরা চলে যাচ্ছে শুনে পরী উঠে দাঁড়াল বলে উঠল,’আমি একবার দেখব ডাক্তার আপারে। আম্মা আমি বাইরে যামু। আম্মা আমারে একবার যাইতে দেন।’
নাঈমরা নিজেদের ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছে। পালক কে নিয়ে এখনই শহরে রওনা হবে সবাই। পালকের বাবা মা শহরে থাকেন। ওখানেই দাহ করা হবে পালককে।কোন মুখে ওরা পালকের বাবা মায়ের সামনে দাঁড়াবে তাই ভেবে পাচ্ছে না ওরা।
ঘাটে বিশাল ছই ওয়ালা নৌকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সম্পান সহ আরো দুজন মাঝি। নৌকা করেই পালককে শহরে নিয়ে যাওয়া হবে। নাঈম শেখর আসিফ গেল পালককে নৌকায় তুলতে। নাঈম পালকের দেহে হাত দিতেই একটা নারী কন্ঠস্বর ভেসে আসে।
-‘একটু দাঁড়ান,আমি দেখমু আপারে।’
ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে পরী দৌড়ে এলো। নাঈম ছেড়ে দিলো পালক কে। হাটু মুড়ে সে পাশেই বসে রইল। পরী ছুটে গিয়ে নাঈমের পাশেই বসে। পালকের মুখের ওপর থেকে কাপড়টা নাঈম সরিয়ে দিলো। পালকের মুখটা দেখেই কেঁদে ফেলল পরী। সাদা হয়ে গেছে মুখটা। ঠোঁট দুটো কালচে বর্ণ ধারণ করেছে। কি জানি কতক্ষণ পানিতে ছিল?মলিন কোমল দেহটা শান্ত হয়ে আছে।
পরী আলতো করে পালকের গালে হাত রাখলো। শরীর বরফের ন্যায় ঠান্ডা।
-‘অনেক কষ্ট হইছে আপনার তাই না আপা?এখন আপনে শান্তিতে ঘুমান কেউ বিরক্ত করবো না। একটা কথা মনে রাইখেন এই পরী আপনার কথা কোনদিন ভুলবে না। সোনা আপার মতো আপনেও আমার আরেক আপা। ভালো থাইকেন।’
দুফোটা অশ্রু বিসর্জন দিয়ে উঠে দাঁড়াল পরী। পিছিয়ে এলো পালকের থেকে। নাঈম হাত বাড়িয়ে দিলো পালকের দিকে। তিনজন মিলে পালককে ধরে নৌকাতে তুলল। শায়ের যাচ্ছে ওদের সাথে। সবাই নৌকায় বসতেই সম্পান বৈঠা ফেলল। পরী দৌড়ে ঘাটে গেল। অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে রইল। নাঈম চোখ ঘুরিয়ে তাকালো পরীর দিকে। চোখদুটো ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। হয়ত এই গ্রামে আর আসা হবে না ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো নাঈম। বেশিক্ষণ দাঁড়াল না পরী। কুসুম এসে টেনে নিয়ে গেল পরীকে। এখানে থাকাটা ঠিক হবে না।
আজকে নৌকার সবাই চুপ। মনে হচ্ছে নৌকায় কেউই নেই। শুধু সবার শ্বাস প্রশ্বাস শোনা যাচ্ছে। ভারি সে নিঃশ্বাস। মিষ্টি পালকের মাথায় হাত রেখে বলল,’কখনো ভাবিনি তুই এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবি। আমরা তোকে খুব ভালোবাসি পালক।’
কেদে ওঠে মিষ্টি সাথে রুমিও। কিন্ত নাঈম শেখর আসিফ স্থির। ওদের ও ইচ্ছা করছে কাঁদতে। কিন্ত পুরুষদের যে কান্না মানায় না।অশ্রু শোভা পায় নারীর চোখে। পুরুষের চোখে থাকে কঠোরতা। তাই ওরা তিনজন পুরুষ চুপ করে বসে রইল। শায়ের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে মাঝেমাঝে পালকের দিকে তাকিয়ে গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত হচ্ছে আবার বাইরের দৃশ্য দেখছে।
অন্দরের বারান্দায় পা ছড়িয়ে বসে আছে পরী। পরনের ঘাগড়াটা হাটু অবধি উঠে আছে। ওড়নাটাও পাশে পড়ে আছে। অবুঝের ন্যায় বসে আছে পরী। অনুভূতিহীন চাহনিতে তাকিয়ে আছে পেয়ারা গাছটির দিকে। সেখানে একটা হলদে পাখি বসে আছে। পাখিটার নাম পরীর অজানা। একটা পাকা পেয়ারা খাচ্ছে পাখিটা। পরী দিকবেদিক ভুলে পাখিটা দেখায় মগ্ন হয়ে আছে। পরীর ইচ্ছে হচ্ছে পাখি হতে। না থাকবে পরিবার না থাকবে কষ্টের পাহাড়। এমন সময়ে লাঠি ভর দিয়ে আবেরজান আসলো। তিনি সবসময় নিজের কক্ষেই থাকা খুব একটা বের হন না। পালকের খবর শুনে তিনি বের হয়ে এসেছেন। এতক্ষণ মালার ঘরে ছিলেন। নিজের ঘরে যাচ্ছিলেন। পরীকে ওরকম অবস্থায় দেখেই লাঠির খোঁচা দিয়ে বললেন,’অই মাইয়া এমনে কাপড় উঠাইয়া বইছোস ক্যান?পাও ঢাক কইতাছি। তোর বাপে আইসা পড়বো। কি মাইয়া যে হইছে আল্লাহ ই জানে। ওই কথা হুনোস না।’
দাদির চেঁচামেচিতে পাখিটাই উড়ে গেল। যার দরুন বিরক্ত হলো পরী। কোন কথা না বলে ওড়না হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। দৌড়ে চলে গেল ছাদে। পাঁচিল ঘেষে দাঁড়াল সে। উদাস উদাস লাগছে পরীর। ও নিজেই চেয়েছিল শহুরে ডাক্তাররা চলে যাক আজ তাই হলো। কিন্ত ওদের চলে যাওয়াকে মানতে পারছে না পরী। পালকের কথা মনে পড়তেই কান্না আসছে ওর বারবার। জুম্মানের মুখে পরী একদিন শুনেছিল ভালো মানুষ নাকি বেশিদিন বাঁচে না। কথাটা জুম্মানকে ওর মাদ্রাসার হুজুর বলেছিল। পরী ভাবল পালক ভালো ছিল বলেই অকালে হারিয়ে গেল।
সারাদিনে কিছুই মুখে তুলল না পরী। মালা এসে জোরাজুরি করেও পরীকে খাওয়াতে পারল না।নিজ কক্ষের এক কোণে চুপটি করে বসে আছে পরী। জুম্মান তখন পরীর ঘরে ঢুকল হাতে একটা লাঠি নিয়ে। পরীর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,’আপা দেখো পানি অনেক কমে গেছে। আমি লাঠি দিয়া মাপছি।’
পরী ঘুরে তাকালো জুম্মানের দিকে। লাঠির মাঝখান বরাবর ধরে দেখালো জুম্মান। পরী মৃদু হেসে বলে,’ভাল বুদ্ধি তো তোর। এমনে পানি মাপা শিখাইলো কে তোরে?’
-‘নাঈম ডাক্তার বাবু।’
-‘ওহ্। আচ্ছা উনি কি ডাক্তারগো দিয়া আইছে।’
জুম্মান চোখ কুচকে বলে,’উনি কে আপা?’
-‘আরে ওই যে আব্বার লগে থাকে। পাঞ্জাবি পইড়া থাকে,চোখে সুরমা পড়ে।’
জুম্মান এবার খিলখিল করে হাসতে লাগল পরীর কথা শুনে। তা দেখে পরীর রাগ হলো বলল,’হাসোস ক্যান?আমি কি হাসার কথা কইছি?’
-‘সোজাসুজি কইলেই তো পারো শায়ের ভাই। তা না কইরা কি কইতাছো? আসে নাই শায়ের ভাই। মনে হয় রাত হবে।’
-‘আইলে গিয়া খবর আনবি কি হইলো?’
জুম্মান মাথা নেড়ে জানান দিলো সে কাজটি করবে।তার পর দৌড়ে গেল লাঠিটা পানির মধ্যে পুঁততে। নাঈম জুম্মান কে শিখিয়েছিল এইভাবে পানি মাপতে হয়। খুব সহজেই জুম্মান শিখে নিয়েছে। সে খুশিও হয়েছে নাঈমের প্রতি।
সন্ধ্যা নামতেই মাগরিবের নামাজ পড়ার জন্য ওযু করতে কলপাড়ে গেল মালা। কিন্ত সে অবাক হলো পরীকে আসতে দেখে। পরী এসে ওযু করতে লাগল।
-‘নামাজ পড়বি?’ মায়ের প্রশ্নের জবাবে পরী ছোট্ট করে ‘হুম’ বলে। মালা ভড়কায়। পরীকে অনেক বার সে নামাজ পড়তে বলেছিল। কিন্ত পরীর কোন হেলদোল নেই। মালা বলল,’নামাজ পড়লে সব ওয়াক্ত পড়তে হইবে কিন্ত। ‘
পরীর ততক্ষণে ওযু করা শেষ। ও উঠে দাঁড়িয়ে বলল,’আমি এখন থাইকা প্রতিদিন নামাজ পড়মু আম্মা। আমার সব প্রিয় মানুষ গুলোর লাইগা দোয়া করমু।’
মালা আর কথা বলল না। দাদির জন্য বালতি করে ওযুর পানি নিয়ে পরী চলে গেল। মালা চেয়ে রইল মেয়ের যাওয়ার পানে। মেয়েকে নিয়ে বড়ই দুশ্চিন্তা মালার। শুধু রাগ আর জেদ দেখাতেই পারে। বুদ্ধিসুদ্ধি একেবারেই নেই। এনিয়ে মালার যত চিন্তা।
রাত যখন একটু গভীর হয় তখন জুম্মান এসে খবর দিলো শায়ের এসেছে। কিন্ত সে শায়েরের সাথে কথা বলতে পারেনি। আফতাব আর আখিরের সাথে কথা বলছিল শায়ের তখন। জুম্মান আরো বলল,’ কাকা শায়ের ভাইরে গালাগালি করতাছে।’
পরী চট করে বলে উঠল,’ক্যান??’
-‘ভাই সব দেইখা রাখতে পারল না ক্যান ডাক্তার আপা মরলো কেমনে?আরও কত কথা। এই কাকায় অনেক শয়তান রে আপা। সুযোগ পাইলেই ভাইরে গালাগালি করে।’
আখিরের নামটা শুনতে ইচ্ছা করে না পরীর। নিজের কাকা বলে সম্মান ও দেয় না। এই লোকটার প্রতি ঘৃণা ছাড়া কিছুই আসে না পরীর। আজ এমনিতেও মন ভাল নেই ওর। তাই আর বেশি কিছু ভাবল না পরী। চুপচাপ শুয়ে পড়ল।
কিন্ত রাত যত গভীর হলো পরীর খিদে তত বাড়লো। সারাদিন কিছু খায়নি। রাতে জুম্মান খেতে ডাকলেও গেল না। কিন্ত এখন আর খিদে সহ্য করতে না পেরে হারিকেন নিয়ে ছুটে গেল রন্ধনশালায়। ভাত বেড়ে গপাগপ খেতে লাগল সে। তখনই দরজায় টোকা পড়ল। বৈঠক ঘর থেকে কেউ অন্দরের দরজার কড়া নাড়ছে। পরী এটো হাতে ঘোমটা টেনে গিয়ে দরজাটা হাল্কা করে খুলল।
রাগন্বিত কন্ঠে শায়ের বলল,’এতক্ষণ লাগে তোর দরজা খুলতে?আমার খাবার নিয়ে আয়।’
বলেই চলে গেল শায়ের। পরী থ মেরে দাঁড়িয়ে রইল। পরক্ষণে মনে করল হয়তো কুসুম কে মনে করেছে শায়ের। নয়তো পরীকে ধমক দেওয়ার সাহস আছে ওই সামান্য কর্মচারীর?পরী গিয়ে শায়েরের জন্য ভাত বাড়লো তার পর আস্তে করে বৈঠক ঘরে পা রাখল।
#পরীজান
#পর্ব ১৩
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌
চারিদিকে কেমন গুমোট ভাব। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে আশেপাশে। দূরের কোন স্থান থেকে নিশাচর পাখিটা ডেকে উঠছে বারবার। এমতাবস্থায় একটুও ভয় পাচ্ছে না পরী। অন্ধকার যেন পরীর সাহস আরো বাড়িয়ে দেয়। হারিকেনের আলো চারিদিক কিঞ্চিৎ আলোকিত করেছে। কাঠের ছোট জলচৌকির উপর শায়েরের খাবার রেখেছে পরী কিন্ত শায়ের নেই। সে হয়তো কলপাড়ে গেছে ভেবে পরী দাঁড়িয়ে আছে। জুম্মান কে দিয়ে যে কথা জানতে চেয়েছিল তা সে এখন নিজেই জিজ্ঞেস করবে বলে মন স্থির করল পরী। তাই সে শায়েরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর শায়ের এসে খেতে বসে পড়ল। সারাদিন না খাওয়া সে তার উপর আখিরের বলা কটু কথা গুলো সহ্য হয়নি ওর।মাথা গরম আছে। কারণে অকারণে আখির ওকে কথা শোনায়। কারণ টা শায়ের বেশ বুঝতে পারে। জমিদার আফতাব শায়ের কে বেশিই বিশ্বাস করে। শায়েরের পরামর্শ গুলোকে একটু বেশিই গুরুত্ব দেন তিনি। যা আখির একটুও পছন্দ করে না। তাই সবসময় সে ওত পেতে থাকে কিভাবে শায়ের কে আফতাবের সামনে খারাপ বানানো যায়। আর সে সুযোগ আজকে সে পেয়ে গেছে। পালককে উদ্দেশ্য করে অনেক কিছুই শায়ের কে বলছে আর শায়ের চুপ করে শুনে গেছে। তাই সে রাগ ঝেড়েছে সে কুসুম রুপি পরীর উপর। কিন্ত শায়ের এখনও টের পায়নি যে ওর সামনে পরী দাঁড়িয়ে আছে। পরীও নিজের উপস্থিতি জানান দেয়নি। কিন্ত খাওয়ার মধ্যেই শায়েরের চোখ পড়ল একজোড়া কোমল পায়ের দিকে। ফর্সা পা জোড়ায় ভারি নূপুর চকচক করছে হারিকেনের লাল আলোতে। যদিও ওর সামন দাঁড়নো রমণীর মুখটা ঢাকা তবুও শায়েরের মস্তিষ্ক ভয়ের আশঙ্কা পেলো। সে বুঝে গেল এই রমণীটি কুসুম নয়। খাওয়া ফেলে ছিটকে দূরে সরে এল শায়ের। আচমকা শায়ের কে দাঁড়াতে দেখে পরী কিছুটা কেঁপে ওঠে। সেও দুপা পিছিয়ে যায়। শায়ের থমথমে গলায় বলল, ‘আপনি কেন এসেছেন?আপনি কি জানেন না যে আপনার উপস্থিতি প্রতিটা পুরুষের জন্য বিপদজনক? চলে যান এখান থেকে। অন্দরে ফিরে যান তাড়াতাড়ি নাহলে আমার বিপদ।’
এক মুহূর্তের জন্য পরী থমকে গেল। সব পুরুষের জন্য ও বিপদজনক কথাটা তীরের মতো বিঁধলো পরীর মনে। সেখান থেকে বের হয় অদৃশ্যমান তাজা রক্তস্রোত। সে কম্পিত কন্ঠে বলে উঠল,’আমি তো পালক আপা,,,’
বাকিটুকু বলতে পারল না পরী তার আগেই শায়ের ওকে আটকে দিয়ে বলে,’আমি কিছু শুনতে চাই না। আপনি যার সামনে ইচ্ছা যান। কিন্ত আমার সামনে আসবেন না। এখন অন্দরে ফিরে যান।’
পরী আর দাঁড়াল না। দৌড়ে চলে আসে। আসার সময় পায়ে ব্যথা পায় সিঁড়ির সাথে ধাক্কা লেগে। সেটা কোন ব্যথা নয় পরীর। মনে যে ক্ষরণ হচ্ছে তাতে আরো বেশি কষ্ট হচ্ছে পরীর। নিজের কক্ষে গিয়ে ঠাস করে দরজা আটকে দিলো সে। ঘরের এক কোনায় গিয়ে মেঝেতে হাটু মুড়ে বসে বলতে লাগল, ‘আপা আমি কি সত্যি সব পুরুষ গো বিপদে ফালাই?তুমিও তাই বিশ্বাস করো?কই আমি ওইদিন না থাকলে তো আব্বা আর সবাই মিইলা কানাই কাকার হাত কাইটা ফালাইতো। আমিই তো বাঁচাইছি তারে। তারপর ও ওই লোকটা ক্যান ওই কথা কইলো? আমি কি সবার শনি নাকি?আমি কি কারো প্রিয়জন হমু না কোনদিন? আপা তুমি তো রাখালরে পাইছো। আমি কি ওমন কাউরে পামু না?’
নিজের মন মতো বকবক করতে করতে পরী মেঝেতেই ঘুমিয়ে পড়ল। যখন ওর ঘুম ভাঙে তখন উঠে বসে সে। বেলা কতটুকু হলো তা বোঝার জন্য পরী বাইরে এলো। দোতলায় দাঁড়িয়ে পরী দেখতে পেল মালা হারিকেন হাতে কলপাড়ের দিকে যাচ্ছে। পরী অবাক হয়ে গেল এসময় ওর ঘুম ভেঙেছে!! কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পরী নিজেও গেল ওযু করতে।
ফজরের নামাজ পড়ে পরী আর ঘুমালো না। অন্দরের উঠোন জুড়ে হাটাহাটি করতে লাগল। কুসুম ভোরেই ঘুম থেকে ওঠে। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। সে চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে পরীকে দেখে চমকে গেল। পরীর দিকে এগিয়ে এসে বলল, ‘পরী আপা আপনে এতো সক্কাল সক্কাল উঠছেন!! আমার তো বিশ্বাস হইতাছে না।’
-‘বকর বকর না কইরা সামনে থাইকা সর। তুই আইজ আমার সামনে আসবি না। আর যদি আসোস তাইলে ওই পানিতে তোরে চুবামু।’
রাতের রাগটা পরী কুসুমের উপর ছাড়লো। কুসুম বেচারি কিছুই বুঝলো না। এই সকালে সে তো কিছুই করেনি তাহলে এভাবে বলল কেন পরী?
-‘এই সকালে কারে চুবাবি পরী?’
নারী কন্ঠস্বর পেয়ে ঘাড় ঘুরালো পরী। চোখের সামনে রুপালিকে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ছুটে গেল। ঝাপটে ধরলো বোনকে কাছে পেয়ে। খুশিতে রুপালি ও আগলে নিলো আদরের ছোট বোনকে। কিছুক্ষণ দুবোন আলিঙ্গন করে তবে শান্ত হলো। পরী হাক ছাড়লো,’আম্মা!!ও আম্মাজান আপনে কই??দেখেন কেডা আইছে!!’
নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো মালা। রুপালিকে দেখে সেও চমকে গেল। রুপালি মালাকে সালাম দিয়ে বলল,’কেমন আছেন আম্মা?শরীর ভাল তো?’
-‘হুম ভাল। তা জামাই কই?’
-‘বৈঠক ঘরে। আম্মা সাথে নওশাদ ও এসেছে। আপনি ওদের নাস্তা দেন আমি ঘরে যাই। পরী আয় আমার সাথে।’
পরী খুশি মনে রুপালির পেছন পেছন দোতলায় নিজের ঘরে গেল। তালাবদ্ধ ছিল রুপালির ঘর। পরী গিয়ে চাবি নিয়ে আসে। নিজ হাতে সব পরিষ্কার করে। রুপালি ততক্ষণে কলপাড়ে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে আসে। রুপালি এসে পালঙ্কের উপর বসতেই পরীর খেয়াল করে রুপালির পেটটা একটু উঁচু। পরী গিয়ে রুপালির পাশে গিয়ে বসে ওর পেটের উপর হাত রাখলো। চোখের ইশারা করল বোনকে। ওর বোন ও মাথা নেড়ে সায় দিলো। পরী আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে,’আপা তুমি আহার সাথে সাথে এত খুশির খবর আনবা ভাবি নাই। তোমারে আমি আর যাইতে দিমু না। আমার কাছেই রাইখা দিমু।’
পরী খুশি হলো খুব। কারণ বিয়ের দুবছর ধরে যখন রুপালির বাচ্চা হচ্ছে না সবাই কথা শোনাতো রুপালিকে। বারবার জিজ্ঞেস করতো খুশির খবর কবে পাবো?এতে কষ্টের সীমা ছিল না রুপালির। বোনের কষ্ট পরীকে ও পোড়াতো খুব। কিন্ত এখন পরীর বেশ খুশি লাগছে।
রুপালি অবিশ্বাস্য চোখে তাকায় পরীর দিকে। কিছু আচ করেছে হয়ত। পরীও তাকিয়ে আছে তার প্রিয় বোনের দিকে। রুপালি পরীর কাধে হাত রেখে বলে,’এভাবে কথা বলছিস কেন তুই?’
-‘কেমনে কথা কই মানে?’
-‘আগে তো এই ভাষাতে কথা বলতি না এখন হঠাৎ করে হলো কি তোর?তুই না মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিস!! তাহলে এভাবে কথা বলছিস কেন? কি হয়েছে তোর?’
পরী সহজ স্বীকারোক্তি দিলো,’কিছু হয় নাই আপা। তুমি খালি খালি চিন্তা করতাছো।’
রুপালি কপট রাগ দেখিয়ে বলে,’আবার ওভাবে কথা বলিস। পরী তুই বুঝতে পারছিস না কেন আমরা বড় ঘরের মেয়ে। আমাদের শৌখিন হতে হবে। কাজকর্ম, ভাষা,চলাফেরা সবার থেকে আলাদা হতে হবে।’
সামান্য হেসে পরী বলে,’বড় ঘরে বিয়া হইছে তোমার। এই কথা কি শ্বশুরবাড়ির মানুষ শিখাইছে তোমারে?একটা কথা মনে রাইখো আপা,কবর কিন্ত ধনী গরীব আর ভাষা দেখে না। আর আমি আগের থাইকা বদলাইয়া গেছি।’
-‘বদলালে হবে না পরী। তুই আগের মতো হ।’
তীক্ষ্ণ চাহনিতে রুপালির দিকে তাকালো পরী। অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠল। ফিসফিস করে বলল,’তুমি কি চাও আগের পরীকে?’
রুপালি থমকে গেল পরীর চোখের দিকে তাকিয়ে। আমতা আমতা করে বলল,’শুধু ভাষা ঠিক কর তাতেই হবে। তোর মনে নেই বড় আপার কথা? বড় আপা বলেছিল সবসময় এই পরিবারের সম্মান রক্ষা করতে। আর গ্রাম্য ভাষা সেও পছন্দ করতেন না। আমাকে তোকে সবসময়ই তো শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে বলতো।’
পরীর দূর্বল যায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছে রুপালি। রুপালি খুব ভাল করেই জানে যে পরী একমাত্র সোনালীর কথা মান্য করে তাই সে পরীকে আটকে দিয়েছে। আসল কথা এখনো পরীকে জানায়নি রুপালি। পরীর জন্য একটা সম্বন্ধ এনেছে সে। নওশাদের জন্য। নওশাদ রুপালির মামা শ্বশুরের ছেলে। ফুপাতো ভাইয়ের বিয়েতে নওশাদ এসেছিল কিন্ত তের বছরের পরী তখন মায়ের আদেশে ঘরবন্দি। রুপালির শ্বশুরবাড়ির থেকে যেসব মেয়েরা এসেছিল তারা পরীর সৌন্দর্যের প্রশংসা করেছিল। সে কথা নওশাদের কানেও পৌঁছেছে। কিন্ত শত চেষ্টা করেও পরীর মুখ দেখা তার সাধ্য হয়নি। মাঝেমাঝে সে রুপালির সাথে জমিদার বাড়িতে আসতো। নানা বাহানায় পরীকে দেখার চেষ্টা করতো কিন্ত বরাবরের মতোই সে ব্যর্থ হতো। তাই এবার সে সরাসরি রুপালির স্বামী কবিরের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয় নওশাদ। পরীকে না দেখলেও সে রুপালিকে দেখেছে। নিশ্চয়ই পরী রুপালির মতোই সুন্দর।
আর তাছাড়া নওশাদ কে না করার কোন কারন ও নেই। উচ্চবিত্ত ঘরের উচ্চশিক্ষিত ছেলে। শহরে তার ব্যবসা। আগে সে চাকরি করতো। তাতে খুব কম বেতন বিধায় বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা করছে। নওশাদের পারিবারিক অবস্থা বেশ ভালো। কবিরদের মতোই বাড়িতে আটচালা বড় বড় তিনটা টিনের ঘর। গোয়ালে গরু আছে,পাকা করা কলপাড় কাজের মেয়ে আছে জমিজমার অভাব নেই। পরীর সুখ হবে সেখানে। তাই স্বামীর কথা ফেলতে পারেনি। তাছাড়া নওশাদ খুবই ভাল ছেলে। তা রুপালি ওর সাথে মিশে বুঝেছে। তাই রুপালির ও অমত নেই। এই বিষয়ে মালার সাথে কথা বলবে রুপালি। কবির কথা বলবে আফতাবের সাথে।
পরী চুপ করে আছে দেখে রুপালি হালকা ধাক্কা দিলো পরীকে।
-‘কি রে চুপ করে আছিস কেন?কথা বল?’
নড়ে উঠলো পরী। একে তো পালকের জন্য খারাপ লাগছে। তার উপর শায়ের রাতে তাকে অপমান করেছে। আর রুপালি এখন ওর মন খারাপ করে দিয়েছে। হাল্কা কেশে পরী বলল,’ঠিক আছে আমি এখন থেকে তোমার কথা শুনব। ভালোভাবে কথা বলব।’
কথাটা বলে পরী একদণ্ড বসলো না। দ্রুত পা ফেলে কক্ষের বাইরে চলে এলো। রুপালি ডাকলো অনেক বার পরী শুনলো না। কিন্ত বাইরে গিয়ে পরীর রাগটা আরো বেড়ে গেল। জুম্মান দাঁত বের করে হাসতে হাসতে এসে বলে,’আপা শায়ের ভাইয়ের কাছ থাইকা ডাক্তার,,,,’
পরবর্তী বাক্য মুখ থেকে বের করতে পারল না জুম্মান। পরী কষিয়ে চড় মেরে দিলো জুম্মানের গালে। গালে হাত দিতে ভ্যাবলার মতো ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইল সে। পরী ভারি গলায় বলে,’তোর কাছে শুনতে চেয়েছি আমি?এরপর কোন ফালতু লোকের কথা আমাকে বলতে আসবি না।’
কথাটা বলেই পরী চলে গেল। জুম্মান থাপ্পড়ের শোকের উপর আছে। কালকেই তো পরী জুম্মান কে বলল খবর আনতে আর এখন কি হলো?এক রাতে এতো পরিবর্তন!! ভাষার ও পরিবর্তন হয়েছে। জুম্মান ভাবলো হয়তো কোন দুষ্ট জ্বীন ভর করেছে।ভয় পেয়ে সে দৌড়ে গেল রুপালির কাছে।
পরী অন্দরের উঠোনে আসতেই দেখল কুসুম বৈঠক ঘর থেকে অন্দরে ঢুকছে। পরীর কুসুম কে দেখেও রাগ হলো। তেড়ে গেল কুসুমের দিকে তবে মালাকে আসতে দেখে পদচরণ থামিয়ে দিলো। পরীকে উপেক্ষা করে কুসুম মালাকে উদ্দেশ্য করে বলল,’বড় মা হুনছেন নি সুখান পাগলারে গফুর চাচা পানিতে চুবানি দিছে ইচ্ছা মতো।’
বলেই কুসুম খিলখিল করে হাসতে লাগল। পরী ধমক দিয়ে বলে,’এতে হাসার কি আছে? একটা পাগলকে চুবালো আর তুই হাসছিস?তোকে চুবানি দিলে বুঝবি কেমন লাগে?’
কুসুমের হাসি মিলিয়ে গেল। সকালেও পরী এই কথাটাই বলেছে।
-‘চুবাবে না তো কি করবে কন আপা। গফুর চাচার মাইয়া আমেনা আছে না ওরে তো সুখান পাগলা পানিতে টাইনা নিয়া মারতে বইছিল। হের লাইগা তো চাচায় ওরে চুবাইছে।’
মালা শুধু একটা বাক্য ব্যবহার করলো,’কুসুম কথা না কইয়া রান্না ঘরে আয়।’
কুসুম পরীর দিকে তাকালো। পরী রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। কুসুম দৌড়ে চলে গেল। অতঃপর পরীও নিজের ঘরে চলে গেল।
দুপুরে গোসল ছেড়ে সবেমাত্র বের হয়েছে পরী। এরমধ্যেই চেঁচামেচি শুনতে পেয়ে নিচে নামে। কুসুম জোরে জোরে ডাকছে মালাকে। পরী দোতলায় দাঁড়িয়ে থেকেই বলল,’আম্মা নামাজ পড়ে এতো চিল্লাস কেন?’
-‘আপা শহরের ডাক্তারবাবু আছে না?ওইযে নাঈম ডাক্তার,হেয় আইছে তার কিসব দরকারি জিনিস রাইখা গেছে। অখনই চইলা যাইতে চায় কি করমু?’
নাঈমের কথা শুনে চমকালো পরী। তবে কুসুমের সামনে তা প্রকাশ করলো না।
-‘এখন চলে যাবে কেন,তুই বল দুপুরে খেয়ে যেতে। না বললে শুনবি না। আমার কথা বলবি।’
কুসুম মাথা নেড়ে চলে গেল। মাথা মুছে পরী যোহরের নামাজ আদায় করে নিল। তারপর চুপচাপ নিজের ঘরে বসে রইল।
নওশাদ আর কবিরকে বৈঠক ঘরের একটা কক্ষে থাকতে দেওয়া হয়েছে। এবাড়ির জামাইয়ের ও অন্দরে ঢোকা নিষেধ। তাছাড়া বিশালাকার বৈঠক ঘরে অনেক গুলো ঘর আছে। যত মেহমান আসুক সমস্যা হয় না।
নিজের কক্ষের বারান্দায় চৌকি পেতে বসে আছে নওশাদ। কবির ঘুমাচ্ছে। ওদের বাড়ি দূরে বিধায় ভোর রাতে রওনা হয়েছে ওরা। তাই সকালেই এসে পৌঁছেছে। নাঈম কে দেখে নওশাদ চিনলো না। পরে দুজনে কথাবার্তা বলে পরিচিত হয়ে নিয়েছে।
কথা বলার সময় কুসুম এসে ওদের খেতে ডাকলো। হাত মুখ ধুয়ে সবাই খেতে বসলো। আফতাব,আখির আর শায়ের ও বসেছে।
মালা কুসুম আর জেসমিন খাবার বেড়ে দিচ্ছেন। খাওয়ার মাঝে কবিরই প্রথম কথা তুলল পরীর বিষয়ে। আফতাব কে উদ্দেশ্য করে বলল,’আব্বা আমার একটা কথা আছে।’
-‘কি কথা??’
-‘নওশাদ খুবই ভাল ছেলে। শহরে বড় ব্যবসা করে। তাই আমি একখান প্রস্তাব আনছি। যদি পরীর সাথে ওর বিয়ে দেন তো পরী ভালো থাকবে।’
উক্তিটি শেষ হতে না হতেই বিষম খেলো নাঈম। জোরে জোরে কাশতে লাগল সে। শায়ের ওর পাশেই বসেছিল তাই দ্রুত পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।
#চলবে,,
#চলবে,,,,