#পরীজান
#পর্ব ২৫
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌
হারিকেনের টিমটিম আলোতে পরীর চোখে প্রকাশিত পাচ্ছে ক্ষোভ। শায়ের চুপ করে আছে পরীর ধমকে। পরী উঠে দাঁড়াল শায়েরের সামনে। আশেপাশে তাকিয়ে শায়ের দেখলো কেউ আছে কি না? যদি কেউ দেখে ফেলে তাহলে পরীকে কিছু বলবে না কিন্ত শায়ের কে অনেক কিছুই শুনতে হবে তার। সে বলল,’কেউ দেখলে খারাপ ভাববে। তাছাড়া আপনার সামনে বিয়ে। একটু ভেবে কাজ করবেন।’
-‘আমাকে নিয়ে ভাবতে আপনাকে হবে না।’
-‘আপনাকে নিয়ে ভাবছি না আমি। নিজেকে নিয়ে ভাবছি। কেউ দেখে ফেললে আমারই বিপদ।’
-‘ওসব কথা থাক। বিন্দুকে কারা মেরেছে?’
-‘আমি সত্যিই জানি না। আমাকে জানার অধিকার আপনার বাবা দেয়নি।’
বিষ্মিত হলো পরী। বলে,’মানে?ভাল করে বলুন।’
-‘আমাকে এই ব্যাপার থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। দেখুন আমাকে ঠিক যতটা বলা হয় ঠিক ততটুকুই করি। আপনি কেন ভুলে যাচ্ছেন যে আমি আপনার বাবার গোলাম মাত্র। আমাকে তিনি যা বলেন আমি তাই করি। প্রশ্ন করার অধিকার আমার নেই। বিন্দুর মৃত্যুর কথা জানলেও কাউকে বলতে আমি পারবো না। আপনার বাবাই সবাইকে বলবেন।পুলিশ এখনও কাউকে ধরতে পারেনি।’
-‘আমার বিশ্বাস হয় না আপনার কথা। আপনি মিথ্যা বলছেন। বলুন না বিন্দুকে কারা মেরেছে?’
শেষ কথাটাতে অসহায়ত্ব ফুটে উঠল। পরীর চোখের পানি স্পষ্ট দেখতে পেল শায়ের। খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই শায়েরের। একটু ভেবে শায়ের হাত বাড়িয়ে দিলো পরীর দিকে বলল,’বিশ্বাস না হলে শাস্তি দিতে পারেন। হারিকেনটা ওখানে আছে।’
পরী একপলক হারিকেনের দিকে তাকিয়ে আবার শায়েরের দিকে তাকালো। এই মুহূর্তে সে কিছুই বিশ্বাস করতে চাইছে না। তবে শায়েরের কথা শুনে মনে হলো সে মিথ্যা বলছে না। তাহলে সত্যিটা কি?বিয়ের পর তো এখানে আসতে পারবে না পরী। তাহলে সত্য উদঘাটন করবে কীভাবে?ছোট্ট মস্তিষ্কে আর চাপ নিতে পারছে না পরী। তাই বিনা বাক্যে প্রস্থান করলো।
বিন্দুর চলে যাওয়ার আজ বাইশ দিন। পুলিশ এখনও কোন হদিস পায়নি। তাদের ধারণা আসামীরা
গা ঢাকা দিয়ে আছে। এখন ওদের ধরা অসম্ভব। তাই কেসটা এমনভাবে সাজাতে হবে যেন সবাই ভুলে গেছে বিন্দুর কথা। তবে ওত পাতাই থাকবে। এখন শুধু আসামীদের বের হওয়ার পালা। সন্দেহ তাদেরই করা হয়েছে যারা যাত্রাপালায় ছিল কিন্ত বিন্দুর মৃত্যুর পর তাদের কোন খবর নেই।
কুসুম এসে কথাগুলো পরীর কানে তুললো। পরী কিছু বলল না। কুসুমের খারাপ লাগছে পরীকে এভাবে দেখে। যে মেয়েটা সারা অন্দর ঘুরে বেড়াতো সেই মেয়েটা কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে। কুসুম হঠাৎ প্রশ্ন করে বসে,’আচ্ছা আপা আপনে যে খুন করলেন আপনের ডর করে নাই?’
কুসুম ভেবেছিল পরী রাগ করবে ওর কথায়। কিন্ত পরী তা করলো না। বলল,’মানুষ যখন কোন খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় তখন কোন ভয় থাকে না তার। আমার ও তাই হয়েছিল। তখন কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। তাই রাগের বশে খুন করে ফেললাম।
পরে অবশ্য আমি নিজেও ভয় পেয়েছিলাম। কিন্ত আপাকে বুঝতে দেইনি।’
-‘আপনের অনেক সাহস আপা। আমি তো মুরগি জবাই দেখতে ভয় পাই। আর আপনের মানুষ জবাই করলেন!!’
-‘জানোয়ার জবাই করতে ভয় কিসের??’
কুসুম দাঁত বের করে হাসলো। সবসময় সঠিক জবাব পায় সে পরীর থেকে। মালাকে আসতে দেখে কুসুম হাসি বন্ধ করে দাঁড়িয়ে গেলো। মালা পরীর মুখোমুখি বসলো। হাতে একটা কাপড়ের তৈরি ব্যাগ। ব্যাগ থেকে বেশ কিছু গয়না বের করে বলল,’দেখ তো পছন্দ হয়?’
পরী গয়না গুলোর দিকে তাকালো না। মালার দিকে তাকিয়ে রইল। কুসুম উঁকি দিয়ে বলে,’একদম খাঁটি সোনা আপা। একবার দেখেন?’
হেসে পরী বলে,’আমি খাঁটি সোনা’ই দেখতাছি কুসুম।’
মালা অবাক হয়ে তাকালো পরীর পানে। কাঁদছে পরী। মালার নিজের চোখেও অশ্রুরা ভিড় করলো। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,’কান্দোস ক্যান?’
-‘আপনাকে রেখে আমি যাবো না আম্মা।’
মালাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে পরী। কাঁদতে কাঁদতে বলে,’আমাকে তাড়িয়ে দেবেন না আম্মা। আমি আপনার কাছে থাকতে চাই।’
মালাও কাঁদছে। পরীকে যতটুকু শাসন করেছে তার দ্বিগুণ ভালোবেসেছে। পরীকে বুঝতে দেয়নি। পরীর সুরক্ষার জন্য কসম দিয়ে ঘরবন্দি করে রেখেছিলেন মালা। তিনি চাননি সোনালী আর রুপালির মতো কাউকে পছন্দ করে ঠকুক তার ছোট মেয়ে। কষ্ট পাক,তাছাড়া সকল খারাপ দৃষ্টি থেকে আগলে রেখেছে পরীকে। না জানি পরীর স্বামী তাকে কতটা সুরক্ষা দেবে? কিন্ত মালা তার পূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তার এখন কোন আফসোস নেই। উপরওয়ালার কাছে সে সম্মানের সহিত ছোট মেয়ের কথা বলতে পারবে। এটাই তার প্রশান্তি।
পরীকে শান্তনা দিয়ে মালা বললেন,’সব মাইয়া গো একদিন পরের ঘরে যাইতে হয় রে। দোয়া করি তুই যেন সুখি হোস। শহরে তুই ভালো থাকবি। ওইখানে ভালো স্কুল কলেজ আছে তুই পড়ালেখা করবি।’
পড়ার কথা শুনে মালাকে ছেড়ে দিল পরী। কান্নাও বন্ধ হয়ে গেল। পড়ার প্রতি মনই টানে না পরীর। যেদিন প্রথম পড়ার জন্য স্কুলে মার খেলো সেদিনই শাপলা বিলে এসে পরী ওর বইগুলো ছুঁড়ে ফেলে বিলের পানিতে। মাছ,ব্যাঙ আর সাপ দের খাওয়ার জন্যই দেয় বই গুলো। এজন্য মালার কম মার খায়নি পরী। কিন্ত পরী তবুও পড়াশোনায় মন দিতে পারেনি। মাধ্যমিক দেওয়ার পর সে পড়াই বাদ দিয়েছে। গ্রামে তো কোন কলেজ নেই এটাই মূল কারণ। এতে পরী ভিশন খুশি ছিল। যাক আর পড়তে হবে না। কিন্ত মালা এখন আবার কি বলল!! মাথা ঘুরছে পরীর।
মালা এটাই চেয়েছিলেন। পরী যাতে কান্না বন্ধ করে। সেজন্যই পড়ার প্রসঙ্গ তুলেছেন।
মালা মেয়ের হাত ধরে কাছে টেনে বলে,’শহর কেমন তা আমি জানি না। সাবধানে থাকবি একলা বাইর হবি না। জামাইরে নিয়া যাবি।’
জামাই শব্দটাতে যেন বিষম খেলো পরী। সে তো শেখরকে ঠিকমতো চেনেই না। কীভাবে মানিয়ে নেবে শেখরের সাথে পরী? চিন্তায় পড়েছে সে। মালা ততক্ষণে চলে গেছে কুসুমও গেছে। পরীর চেতনা ফিরতেই চোখের সামনে ছড়িয়ে রাখা গয়না গুলো দেখতে পেলো। তাতে হাত বুলিয়ে বলল,’এই গয়না কি সুখ দিতে পারে?টাকা পয়সা কি শান্তি দেয়? তাহলে এতো ঐশ্বর্য থাকতে আমি কেন এক টুকরো সুখ পাই না? অট্টলিকায় সুখ না থেকে যদি কুঁড়ে ঘরে সুখ থাকে তাহলে আমি ওই কুঁড়ে ঘরে যেতে চাই।’
পরীর ইচ্ছা গুলো রঙ ওঠা চার দেয়ালের মাঝেই সীমাবদ্ধ রইলো। তারাও যেন বুঝে গেছে পরী কি চায়!!জীবনে যে ভালোবাসাই সব। ধন সম্পদ দিয়ে কি হবে যদি ভালোবাসা না থাকে। পরী ভাবছে শুধু। তার জীবনে কোন মানুষটা সঠিক হতে পারে?
দিন পেরিয়ে রাত,রাত পেরিয়ে দিন। প্রকৃতির নিয়ম মেনে সময় এগিয়ে যাচ্ছে। ঘনিয়ে আসছে জমিদার কন্যার বিয়ের দিন। উৎসবে মেতেছে পুরো গ্রাম। দলে দলে মেয়েরা অন্দরে ঢুকছে নববধু কে দেখার জন্য। বিদায় দেওয়ার পূর্বে পরীকে সবাইকেই দেখে নিচ্ছে। বয়স্করা পরীকে দোয়া দিচ্ছে। আর পরী চুপচাপ তা মাথা পেতে নিচ্ছে। নতুন সাজে সাজানো হচ্ছে জমিদার বাড়িকে। সবকিছুর তদারকি করছে শায়ের। দম ফেলানোর সুযোগ নেই তার। গায়ে হলুদের সব জিনিস পত্র গুনে গুনে অন্দরে পাঠাচ্ছে সে। একটু পরেই গায়ে হলুদ শুরু হবে।
হলুদ কাপড় পরিয়ে পিড়িতে বসানো হয়েছে পরীকে। রুপালিও এসেছে,ছেলেকে শেফালির কাছে রেখে এসেছে। হলুদ বাটছে একজন মহিলা। পরী অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে। পিঠ ছড়ানো চুল গুলো,হাতে চুড়ি আর হলুদ রঙে পরী যেন ঝলমল করছে। এই পরীকে দেখে আজ যেন প্রকৃতি হিংসে করছে। তাইতো সূর্যকে আজ লুকিয়ে রেখেছে। রুপালি তাড়া দিয়ে বলে,’আপনারা তাড়াতাড়ি করুন। এই শীতের মধ্যে কতক্ষণ বসে থাকবে। এরপর গোসল করাতে হবে। কুসুম গরম পানি নিয়ে আয় না।’
সবাই খুব তাড়াতাড়ি সব করতে লাগল।
প্রথমে পরীকে মালা হলুদ ছোঁয়ালো। কপালে গাঢ় চুম্বন করে বলে,’সুখি হ।’
জেসমিন এই প্রথম পরীকে ছুঁয়ে দিলো। মন্দ লাগলো না পরীর। ওর মায়ের স্পর্শই যেন পেল। চোখ তুলে জেসমিনের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। জেসমিন ও কপালে চুমু এঁকে দিলো। পরীর সারা শরীরে হলুদ মেখে দিলো এক এক করে। আবেরজান তা দেখে বলে,’অতো হলদি মাখিস না। আমার নাতনি এমনেই সুন্দর। অহন গোসল দে।’
আরেকজন রসিকতা করে বলে,’নাত জামাইর যে চান কপাল। আমাগো পরীর মতো মাইয়া পাইছে।’
-‘হ,এই চান দেখলে তো আর ছাড়তে চাইবো না।’
হাসাহাসির রোল পড়ে গেল সবার মধ্যে। পরী আগের মতোই বসে আছে। কুসুম গরম পানি আনলো। গোসল করানো হলো পরীকে। গরম পানিতে গোসল করেও শীত লাগছে পরীর। ঠকঠক করে কাঁপছে। ঠোঁট দুটো নীল হয়ে আসছে। সারা শরীরে হলুদ মাখানোর ফলে হলদেটে হয়ে আছে ফর্সা দেহখানা। রুপালি আবার তাড়া দিতেই পরীকে ঘরে নিয়ে গেল। হলুদ শাড়ি পাল্টে লাল শাড়ি পরানো হলো। আর কিছুক্ষণ পরেই বর আসবে।
এরই মধ্যে মালা এলেন হাতে পায়েশের বাটি নিয়ে। নিয়ম অনুসারে পরীকে তিনবার খাইয়ে দিলো মালা। তারপর বাকিটুকু ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের খেতে দিলেন। গায়ে হলুদের আগেই পরীকে ভাত খাইয়ে দিয়েছিল স্বয়ং জেসমিন। আজ পরী কাউকে না করেনি। জেসমিনের খুব ভাল লাগলো পরীর আচরণে। নিয়ম মতো পরী গায়ে হলুদের পর আর কিছুই খেতে পারবে না। শুধু ওই পায়েশ বাদে।
নিয়ম শেষে লাল বেনারশিতে সাজানো হলে পরীকে। বোনকে নিজ হাতে সাজালো রুপালি। সবশেষে লম্বা ঘোমটা টেনে দিয়ে বলল,’মাশাল্লাহ তোকে রাজকন্যার চেয়েও সুন্দর লাগছে পরী। বরের নজর ব্যতীত আর কারো নজর যেন না লাগে!!’
হাসলো রুপালি। পরী কপালে ভাঁজ ফেলে তাকালো রুপালির দিকে। এটা কেমন দোয়া?? বরের নজর পড়বে শুধু। পরীও হাসলো রুপালির দোয়া বুঝতে পেরে।
আছরের আযান পড়ে গেছে। এখন বরযাত্রী এসে পৌঁছায়নি। শহর থেকে আসছে বিধায় আরো দেরি হচ্ছে। ঘুম এসে গেছে পরীর। ওর পাশে বসে থাকা মেয়ে গুলোও ঝিমাচ্ছে। এই মুহূর্তে বিয়ে টাকে অসহ্য লাগছে পরীর। এতক্ষণ বসে থাকতে ভালো কার লাগে!!
সময় পার হতে হতে মাগরিবের আযান দিয়ে দিয়েছে। এখন পরীর বিরক্ত লাগছে। ইচ্ছে করছে শাড়ি গয়না টেনে খুলে ফেলতে। রাগ প্রকাশ করতেও পারছে না। তখনই কয়েকজন মহিলা এসে পরীকে নিয়ে গেল বৈঠকে। পুরুষ নেই বৈঠকে। আফতাব, কাজি আর বর ই পুরুষ। মেঝেতে খেজুর পাতার তৈরি বড় পাটিতে বসানো হলো। সামনে টানানো হলো পাতলা চাদর। উসখুস করছে পরী। শুধু কবুল বললেই আজ সে এক পুরুষদের অর্ধাঙ্গিনী হয়ে যাবে। তার উপর সমস্ত অধিকার পাবে পরী।
কাজী সাহেব উচ্চস্বরে বলতে লাগল,’নূরনগর গ্রামের জমিদার আফতাব উদ্দিনের কনিষ্ঠ কন্যা পরীকে বিশ হাজার এক টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিবাহ করতে আপনি কি রাজি? রাজি থাকে বলুন কবুল!’
পরী মাথা নিচু করে শুনছে। এই মুহূর্তে ওর অন্যরকম অনুভুতি হচ্ছে। পরী ভাবছে এরকম অনুভুতি কি সব মেয়েরই হয়? অপর পাশ থেকে বেশ দেরি করেই উত্তর এলো। শেখর কি মেয়েদের মতো লজ্জা পাচ্ছে নাকি? অসহ্য লাগলো ব্যাপারটা।
এরপর কাজি পরীকে উদ্দেশ্য করে বলে,’নবীনগর গ্রামের শাখাওয়াত সাহেবের একমাত্র পুত্র সেহরান শায়ের আপনাকে বিশ হাজার এক টাকা দেনমোহর ধার্য করিয়া বিবাহ করিতে ইচ্ছুক। আপনি কি রাজি? তাহলে বলুন কবুল!!’
#পরীজান
#পর্ব ২৬
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌
বৈঠকে উপস্থিত সবাই স্বাভাবিক থাকলেও বধূ বেশে বসে থাকা তনয়ার মনে জাগলো কৌতুহল। বিষ্মিত চোখে তাকালো পর্দার অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তির পানে। কিন্ত মুখটা দেখে বোঝা যাচ্ছে না। পরী তবুও দেখার চেষ্টা করছে ঘোমটার ফাঁকে। কিন্ত সে ব্যর্থ। পরী কি ভুল শুনলো??যদি সঠিক শুনে থাকে তাহলে বাকি সবাই এতো স্বাভাবিক কেন? কিছু কি হয়েছে? মাথা ঘুরে উঠেলো পরীর। চেয়েও শান্ত থাকতে পারছে না।
ওদিকে কবুল বলার জন্য বারবার তাড়া দিচ্ছেন কাজি সাহেব। পরী রয়েছে অন্য ধ্যানে। ঘোর কাটছে না কিছুতেই। অনেকক্ষণ ধরে সবাই বলছে কবুল বলতে কারো কথা পরীর কান অবধি পৌঁছায়নি। শেষে আফতাব দিলো ধমক। সব মেয়েরা থেমে গেল। পরী চমকে উঠে বাবার দিকে তাকালো। আফতাব গম্ভীর সুরে বলে,’এতো দেরি করছো কেন পরী? তাড়াতাড়ি কবুল বলো।’
পরপর কয়েক ঢোক গিলে পরী তিন কবুল পড়ে ফেলে। কিন্ত শরীরের ভর আর ধরে রাখতে পারে না পরী। ঢলে পড়ে কুসুমের গায়ে। পরীর ঘোমটা আরো টেনে দিয়ে কুসুম ঝাঁপটে ধরে পরীকে। কুসুম জোরেই
বলে উঠল,’পরী আপা আপনের কি হইছে?’
সামনের পর্দাটা সরিয়ে ফেলা হলো। আফতাব মহিলাদের সব সামলাতে বলে কাজিকে নিয়ে চলে গেল। পরীকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সবাই। এই মুহূর্তে ঘরে নিয়ে যাওয়া দরকার পরীকে। বৈঠকে আর মহিলাদের থাকা সম্ভব নয়। মেয়ের খবর শুনে মালা দৌড়ে এলো। কয়েকবার ডাকলো পরীকে কিন্ত পরী সাড়া দিলো না। শায়ের এখনও আগের মতোই বসে আছে। দৃষ্টি তার নত অবস্থায়। মালা শায়ের কে আদেশ দিলেন পরীকে নিজের ঘরে দিয়ে আসতে। আদেশ পেয়ে শায়ের উঠে দাঁড়াল। হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নিলো তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে। তারপর অন্দরের পা ফেললো। অনেক গুলো বছর পর এই প্রথম আফতাব ব্যতীত কোন পুরুষ অন্দরে পা ফেলেছে। কুসুম আগে আগে গিয়ে পরীর ঘর দেখিয়ে দিলো।
সিঁড়ি বেয়ে দোতলার একেবারে কোণার ঘরটা পরীর। পালঙ্কের উপর পরীকে শুইয়ে দিয়ে শায়ের কক্ষ ত্যাগ করলো। কুসুম আর মালা রইলো সেখানে।
নূরনগর গ্রামের প্রতিটা মানুষ আজ পরীকে নিয়ে কথা বলতেছে। চার গ্রামের জমিদার আফতাব। ধন সম্পদ কম নেই তার। যেন এক রাজা। আর মেয়েগুলো দেখতে রাজকন্যার থেকে কম নয়। সোনালী আর রুপালির থেকেও বেশি সুন্দর পরী। এমন সোনাবরণ মেয়ের বিয়ে হলো শেষে এক সামান্য কর্মচারীর সাথে!! এটা কেউই মানতে পারছে না। কোথায় রাজকন্যা আর কথায় প্রজা! আফতাবের এমন সিদ্ধান্ত মানতে পারছে না গ্রামবাসীরা। শায়ের ছেলে হিসেবে খারাপ না। সবাই ভালো জানে তাকে। কিন্ত তাই বলে জমিদার কন্যা বিবাহ করার যোগ্যতা ওর নেই। বড় মেয়ে তো নিজের কপাল নিজেই পুড়িয়েছে আর ছোট মেয়ের কপাল আফতাবই পোড়ালো। গোবরে পদ্মফুল মানায় না।
বাইরে সবাই নানা ধরনের কথা বললেও জমিদার বাড়ির আঙ্গিনায় আসতেই সবার মুখ বন্ধ হয়ে যায়।
থমথমে পরিবেশ। কারো মুখে কথা নেই। শেখর না আসায় এমনিতেই আফতাব বেশ চটে আছে। এখন কেউ ভালো কথাও আফতাবের সামনে বলতে পারছে না। সব কথাই তেঁতো লাগছে তার কাছে। এমনকি নিজের ভাই আখির কেও অসহ্য লাগছে।
জ্ঞান ফিরেছে পরীর। চোখ মেলে আশেপাশে তাকিয়ে পরী বুঝতে পারল সে নিজের ঘরে আছে। তাহলে কি পরী এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো? পরী চট করে উঠে বসলো। ঘরে কুসুম ছাড়া আর কেউই নেই। তাই কুসুম কে জিজ্ঞেস করল,’আমি এখানে কীভাবে এলাম কুসুম? আমি তো বৈঠকে ছিলাম। আর তখন,,,,’
পরী একটু থামলো তারপর বলল,’বিয়ে কি হয়ে গেছে?’
-‘কন কি আপা আপনের মনে নাই?আপনে তো কবুল কইয়া হুশ হারাইলেন।’
-‘আর বিয়েটা কার সাথে হয়েছে?’
-‘আপনে দেহি সব ভুইলা গেছেন। শায়ের ভাইয়ের লগে আপনের বিয়া হইছে।’
-‘তাহলে শহরের ওই ছেলেটা কোথায়?’
কুসুম থামলো বড় করেনিঃশ্বাসফেলে বলল,’জানি না আপা। আমরা সবাই তো বরের অপেক্ষা করতাছিলাম। দেরি দেইখা শায়ের ভাই তো লোক পাঠাইছিল। হেই লোক গুলান শহরে যাইয়া ফিইরা আইছে তাও বরযাত্রী আহে নাই। শহরে বাবুর বাড়িতে যাইয়া কেউরে পায় নাই। এখন কি হইবো? হের লাইগা বড় কর্তা শায়ের ভাইয়ের লগে আপনার বিয়া দিলো।’
-‘ওরা গেলো কোথায়? হঠাৎ করে তো কোন মানুষ উধাও হয়ে যায় না।’
-‘কি জানি? গত কাইল তো শায়ের ভাইয় সহ আরো মানুষ যাইয়া দেহা কইরা আইছে। এহন কই আছে কে জানে? তয় একখান কথা কই। শহরে পোলাডারে আমার ভালো লাগে নাই। হের লগে বিয়া হয় নাই শোকর করেন। হেগোরে নিয়া ভাববেন না। কোথায় যাইবো? বড় কর্তা একবার ধরতে পারলে মাইরা ফেলবো। জমিদারের লগে রসিকতা!!’
পরী আর কথা বাড়ালো না। হাঁটু মুড়ে ওখানেই বসে রইল। কিছুক্ষণ বাদেই মালা আর জেসমিন আসলো। মালা কুসুম কে বলল পরীর কাপড় গুছিয়ে দিতে। পরী বলে উঠল,’কাপড় গোছাবে মানে? আমি কোথায় যাবো?’
-‘শ্বশুড় বাড়ি।’
পালঙ্ক থেকে নেমে পরী বলল,’কিন্ত আম্মা উনি তো আমাদের এখানেই থাকে। আমরা এখানেই থাকি?’
মালা জবাব না দিয়ে কুসুমের সাথে পরীর কাপড় গোছাতে লাগলেন। জেসমিন এগিয়ে এসে পরীর হাত ধরে বললেন,’এখন শায়ের এই বাড়ির জামাই পরী। তার আর এখানে থাকা চলবো না। লোকে কি বলবে তখন?? তাই তোমারে নিয়া যাইবো এখনই। অনেক দূরের পথ পরী। তোমার গয়না সব খোলো আর শাড়ি বদলাও।’
পরী কিছু বলতে চাইলো কিন্ত জেসমিন বলতে দিলো না। নূরনগর থেকে সাত গ্রাম পার হয়ে নবীনগর। অনেক দূরের পথ পাড়ি দিতে হবে পরীকে। পথে যদি চোর ডাকাতের পাল্লায় পড়ে তো গয়না গুলো লুটে নেবে। তাই জেসমিন গয়না গুলো একটা ব্যাগে ভরে মালার কাছে দিলো। মালা সেগুলো পরীর জামা কাপড়ের মধ্যে লুকিয়ে দিলো। মায়ের কথামতো পরী বেনারশি খুলে সুতি শাড়ি পরলো। মালা পরীর মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে নেকাব বেঁধে দিলো। তারপর গায়ে চাদর জড়িয়ে দিয়ে বলে,’চাদর খুলবি না। বাইরে ঠান্ডা অনেক।’
-‘আম্মা আমাকে বিদায় করার এতো তাড়া আপনার?’
মালার বুক কেঁপে উঠল। মেয়ে তার দিকে আঙুল তুলছে!! পরী কি জানে না যে ওকে বিদায় দিতে কতখানি কষ্ট হচ্ছে মালার? জানলে এই প্রশ্ন করতো না। মালা জবাব দিলো না। পরীর হাত ধরে নিচে নেমে এলেন। পরী নিচে এসেই জুম্মান কে খুঁজতে লাগলো। আজ সারাদিন সে দেখেনি ছোট ভাইটাকে। সবার মাঝে জিজ্ঞেস করতেও পারেনি। এখন যাওয়ার সময় তো জিজ্ঞেস করতেই পারে। পরী মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই জুম্মান এসে হাজির। ভাইকে কাছে টেনে পরী বলে,’কোথায় থাকিস তুই?
আজ আমার সাথে দেখা করলি না কেন??’
-‘তোমারে দেখলে আমার কান্না পায় আপা। আমারে ছাইড়া চইলা যাবা।’
বলতে বলতে কেঁদে ওঠে জুম্মান। পরী বলে,’কাঁদিস না জুম্মান। আমি আবার আসবো। তুই আমাকে আনতে যাবি কিন্ত?’
জুম্মান মাথা নাড়ে। পরী বিদায়ের সময় যেন কাঁদা ভুলে গেছে। বাড়ির বাকি সবার একই অবস্থা। বিয়ে টা উলটপালট হওয়াতে কারো বিস্ময় এখনও কাটেনি। কিসের কান্নাকাটি?? পরী চোখের জল ফেলল রুপালির কোলের নবজাতক শিশুটিকে কোলে নিয়ে। অল্প দিন ধরে সে দুনিয়ার আলো দেখেছে। পরী চেয়েছিল নিজে লালন পালন করবে কিন্ত তা আর হলো না।
সবার থেকেই বিদায় নিলো পরী। মায়ের হাত ধরে বাইরের পা দিলো। যেই ঘর ওর নিজের ছিলো আজ সেই ঘর থেকেই বঞ্চিত হলো সে। আজকের পর থেকে নিজের বাড়িতে মেহমান হিসেবে আসতে হবে পরীকে। কথাটা ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে আসে পরীর।
গরুর গাড়ি দাঁড় করানো। সেখানে যেতেই হুশ ফিরল পরীর। শক্ত করে মালাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠল। মালার চোখের পানিও বাধ সাধলো না। মেয়েকে কিছুক্ষণ আলিঙ্গন করে গাড়িতে তুলে দিলো।
গাড়ি চলতে শুরু করল। কেউই যাচ্ছে না পরীর সাথে। শুধু শায়ের আর পরী। গাড়ির ভেতরে হারিকেন জ্বলছে। রাত বাড়ছে বিধায় কোন মানুষের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। শিয়াল,কুকুর,ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। সাথে গরুর পায়ের শব্দ।
শায়ের গম্ভীর হয়ে বসে আছে। পরীর থেকে বেশ দূরত্ব বজায় রেখে বসেছে। একবারও তাকায়নি পরীর দিকে। দেখে মনে হচ্ছে কিছু ভাবছে সে। পরী এতক্ষণ ধরে শায়ের কে দেখে চলছে। এই মুহূর্তে ওর স্বামীর মাথায় কি চলছে তা জানা দরকার। কীভাবে কথা শুরু করবে ভেবে পাচ্ছে না পরী। কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বলেই ফেললো,’আপনি কিছু ভাবছেন?’
এতক্ষণ পর পরীর দিকে তাকালো শায়ের। অন্যমনস্ক ছিল বিধায় পরীর কথা তার কানে গেলো না। সে বলল,’কিছু বললেন?’
-‘বললাম আপনি কেন বিয়েতে রাজি হলেন? আমাকে দেখলেই তো দশ হাত দূরে যেতে বলতেন। এখন কেন বিয়ে করলেন?’
-‘আপনার বাবা বলেছে তাই।’
-‘আব্বা বললো আর আপনি রাজি হয়ে গেলেন?’
-‘আমি তো আপনাকে বলেছি যে আপনার বাবা আমাকে যতটুকু করতে বলেন আমি ঠিক ততটুকুই করি। আপনাকে বিয়ে করতে বলেছে তাই করেছি নাহলে করতাম না।’
শেষ কথায় অপমানিত বোধ করল পরী। কুসুমের মুখে শুনেছে কতো ছেলেরা নাকি পরীর জন্য পাগল অথচ এই ছেলেটাকে দেখো? পরী রাগ করে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। সে আর কোন কথা বলল না।
দুহাতের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে পরী। এতো রাত অবধি জেগে থাকা সম্ভব নাকি? আরো কতদূর কে জানে? শায়ের জেগে আছে। পরীর দিকে তাকিয়ে রইল এবার। এখনও মুখটা দেখা হলো না। নেকাবের আড়ালের সৌন্দর্য নিয়ে ভাবছে শায়ের। কেমন দেখতে মেয়েটি? লোকজনের মুখে বলা চেহারার থেকে বাস্তব চেহারা কি বেশি মাধুর্যময়? একটু অপেক্ষা করলেই দেখতে পাবে শায়ের। মধ্যরাতে গাড়ি থামলো নবীনগর। বাকি পথটুকু হেঁটে পাড়ি দিতে হবে। তবে সমস্যা হলো পরী। সে এখনও ঘুমাচ্ছে। এবার কীভাবে ডাকবে শায়ের? সেই চিন্তায় ঘামছে শায়ের। অস্বস্তিকর লাগছে ওর। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সে উপায় খুঁজতে লাগল। কিন্ত কপাল খারাপ যে কোন উপায়ন্তর না দেখে শায়ের নিজেই ডাকলো পরীকে,’শুনছেন!!এইবার উঠতে হবে।’
চোখ মেলে তাকালো পরী। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,’কি হয়েছে??’
-‘আমরা পৌঁছে গেছি। নামতে হবে।’
পরী নামলো গাড়ি থেকে। শায়ের ব্যাগ হাতে নিয়ে হাটা ধরলো। পরীর ঘুমভাব কমেনি। ঢুলছে আর হাটছে। শায়ের তা খেয়াল করে বলে,’এভাবে হাটলে পড়ে যাবেন তো। হাত ধরে হাটবেন?’
থমকে দাঁড়িয়ে পরী বলে,’আমি পারবো। আপনার হাত ধরতে যাব কেন??’
-‘বাকি জীবন তো আমার হাত ধরেই কাটাতে হবে।’
-‘তাহলে আজকে নাহয় বাদই দিলাম। বাকি জীবন আপনার হাত ধরবো।’
শায়ের আর কথা বলল না। পরীও হাত ধরল না। কিছুক্ষণ হেঁটে ওরা একটা বাড়িতে পৌঁছালো। অন্ধকারে ঠিক বুঝলো না পরী কিছু। বাড়িটা কেমন দেখতে তাও আন্দাজ করতে পারলো না। তবে উঠোনে দাঁড়িয়ে এটা বুঝলো যে এখানে বেশ কয়েক টা ঘর আছে। শায়েরের পিছু পিছু পরী একটা ছোট ঘরের সামনে গেলো। দরজায় কয়েকবার টোকা দিলো শায়ের। ভেতর থেকে আওয়াজ এলো,’কেডা রে?? এতো রাইতে দরজা গুতায় কেডা?’
শায়ের জবাব দিলো,’ফুপু আমি সেহরান।’
একটু পরে একজন পঞ্চাশের বেশি বয়স্ক মহিলা হারিকেন হাতে দরজা খুলল। শায়ের কে দেখে সে খুশি হয়ে বলে,’এতো রাইতে কই থাইকা আইলি?’
-‘ফুপু,,’ বলতে বলতে শায়ের ঘাড় ঘুরিয়ে পরীর দিকে তাকালো। মহিলাটি হারিকেন উঁচিয়ে পরীকে দেখে বলে,’এই ছুরিডা কেডা?’
পরী অবাক হলো মহিলার কথা শুনে। কিন্ত পর মুহূর্তেই থমকে গেল। কারণ শায়ের জবাব দিয়েছে,’আমার বউ।’
#পরীজান
#পর্ব ২৭
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌
‘বউ’ দুই অক্ষরের শব্দটি সম্পূর্ণ নতুন পরী আর শায়েরের কাছে। পরী আজ কারো বউ। তাকে কেউ বউ বলে পরিচয় দিচ্ছে। শীতল স্রোত বইছে যেন শরীরে। পরী শায়েরের থেকে একটু দূরে দাঁড়ানো। মহিলাটিকে দেখে মনে হচ্ছে অবাক হচ্ছে। মধ্যরাতে কেউ যদি এসে বলে আমি বিয়ে করেছি। তাহলে তো অবাক হওয়ার কথা। মহিলাটি দরজা ছেড়ে বের হয়ে এসে পরীর সামনে দাঁড়াল। হারিকেন মুখের ওপর ধরে দেখার চেষ্টা করলো। তারপর বলল,’বউ!!
হ্যারে সেহরান তুই মজা করস নাকি?’
-‘এতো রাতে কেউ মজা করে? আমার ঘরের চাবি দাও?’
-‘এতো রাইতে বউ পাইলি কই? কার বউ লইয়া আইছোস?’
-‘মাঝরাতে ঘুম ভাঙছে তো তাই উল্টাপাল্টা বকছো। চাবি দাও আমি আমার বউ নিয়া ঘরে যাই।’
শায়েরের মুখে বারবার বউ শুনতে লজ্জাবোধ করছে পরী। তবে এখন তার কিছু বলা বা করার নেই। তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে সে। ফুপু আবার বলে উঠল, ‘আরে থাম। বউ কি এমনেই ঘরে যাইবো নাকি? নিয়ম আছে না?’
-‘রাত দুপুরে আবার কিসের নিয়ম ফুপু? এখন সবাই ঘুমাচ্ছে। কাল সকালে যা করার করো।’
ফুপু শুনলো না। দৌড়ে উঠোনে চলে গেল। হাঁক ছেড়ে ডাকতে লাগল সবাইকে। পরী ভড়কে গেল মহিলার কান্ডে। সে চিৎকার করতে করতে বলল, ‘ওরে কেডা কোথায় আছোস রে হগ্গোলে বাইর হ। সেহরান বউ লইয়া আইছে। ওরে হেরোনা,আকবর, আবুল,বাবু রে,,,’
কানে হাত চেপে ধরে পরী। এই মহিলার গলার আওয়াজে কান দুটোই না নষ্ট হয়ে যায়। এ কোথায় এসে পড়লো ও? বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় পরী। ওদিকে ফুপু ডেকেই চলছে। ঝনাৎ ঝনাৎ করে দরজা খোলার আওয়াজ শোনা গেল। তিনজন দম্পতি বের হয়ে এলো আলো হাতে নিয়ে। হাই তুলতে তুলতে হেরোনা নামের মহিলাটি এসে বলে, ‘আরে খুসিনা আপা। এতো রাইতে চিল্লাও ক্যান?? ডাকাত পড়ছে নাকি?’
-‘হুদা কামে কি চিল্লাই? দ্যাখ সেহরান বউ লইয়া আইছে।’
হেরোনা চমকে ওঠে খুসিনার কথায়। শায়ের বিয়ে করেছে!! তবে তিনি এতে বেশ খুশি হলেন। ভাসুরের ছেলেকে এমনিতেই তিনি অপছন্দ করেন। বাবা মা মারা যাওয়ার পর সবাই শায়েরকে এড়িয়ে চলে। হেরোনা তো দেখতেই পারে না। তার উপর হেরোনার বড় মেয়ে চম্পা শায়ের বলতে পাগল। শায়ের এই বাড়িতে আসতোই না। বছরে দু’তিনবার আসে। তাও খুসিনা ফুপুর কাছে। হেরোনা চিন্তায় ছিলো কিভাবে শায়েরের থেকে মেয়েকে সরাবে। এখন দেখছে মেঘ না চাইতে জল। সে উঁকি দিতে দিতে এগিয়ে গেল পরীর দিকে। মুখ ভেংচে বলে,’কই দেখি দেখি? এতিম পোলারে মাইয়া দিলো কেডা?’
শায়ের চুপ করে রইল। এটা নতুন কিছু না। সহ্য হয়ে গেছে এসব। ছোট থেকেই শুনে আসছে সে। খুসিনা ধমক দিয়ে বলে,’চুপ থাক। আগে ওগোরে ঘরে নেওয়ার ব্যবস্থা কর। থালায় কইরা কাঁদামাটি লইয়া আয়। বউ ঘরে তুলতে হবে তো।’
হেরোনা মুখ ঘুরিয়ে মেজ জা রিনাকে বলে,’তুই যা। আমি চৌকি নিয়া আহি।’
পরী সব কথাই শুনছে। এদের ব্যবহার ওর ভালো লাগছে না। এভাবে কষ্ট দিয়ে কথা বলার কি আছে?রাগ হচ্ছে হেরোনার উপর। রিনা একটা থালাতে করে ভেজা কাদা নিয়ে এসে উঠোনে রাখে। হেরোনা দুটো চৌকি এনে রাখলো তার সামনে। খুসিনা শায়ের কে উদ্দেশ্য করে বলে,’এই ছ্যামড়া বউ লইয়া এইহানে খাড়া আয়।’
শায়ের বুঝতে পারলো এরা তাকে ছাড়বে না। তাই সে পরীর কাছে গিয়ে বলে,’চলুন,নাহলে এরা শান্ত হবে না।’
-‘কি বউর লগে গুজুর গুজুর করস? হাত ধইরা আন।’
শায়ের হাত ধরল পরীর। তারপর এসে দুজন দুই চৌকির উপর দাঁড়ালো। খুসিনা একটা বাটিতে করে খানিকটা খেজুরের গুড় এনে বলল,’ও নতুন বউ মুখ খোল দেহি? মিডা খাও,তাইলে মিডা মিডা কথা কইবা।’
পরী নেকাব খুলল না। সামনে তিনজন অচেনা পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। পরী শায়েরের দিকে তাকাতেই সে বলল,’আমি ছাড়া আমার বউয়ের মুখ কোন পুরুষের দেখা নিষিদ্ধ ফুপু।’
-‘অ্যাহ,মনে হয় আসমানের পরী ধইরা আনছে। যে অন্য কেউ দেখলে লইয়া যাইবো।’
কথাটা বলেই খিলখিল করে হাসতেই লাগল হেরোনা। সাথে রিনাও যুক্ত হলো। শায়ের মুচকি হেসে বলল, ‘আসমানের পরী কি না জানি না। তবে সে এখন আমার ঘরের পরী বুঝলেন?’
হাসি বন্ধ করলেন ওনারা। খুসিনা বললেন,’তোরা ঘরে যা আমি বউ নিয়া পরে যামু।’
হেরোনা চলে গেলেও রয়ে গেল রিনা। আকবর,আবুল, বাবু নিজ ঘরে চলে গেল। খুসিনা গুড় খাওয়ালো না। পরীকে বলে,’ও বউ এই কাদায় পা দেও দেখি।’
পরী তাই করলো কাদাতে পা ডুবিয়ে দিলো। রিনা পা ধুয়ে দিলো। তারপর শায়ের কে ওর ঘরের চাবি দিলো খুসিনা। পরীকে সাথে নিয়ে পাশের ঘরে গেল শায়ের। চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে ওরা। খুসিনা এসে হারিকেন দিয়ে গেল। আলোতে পরী স্পষ্ট দেখতে পেলো ঘরের ভেতরটা। ঘরের এক পাশে একটা পালঙ্ক। তবে বেশি বড় নয়,দুটো জলচৌকি আর একটা ছোট আলমারি। ঘরের বেশির ভাগ জায়গা খালি। ঘরটা যে সম্পূর্ণ টিনের তাও বুজলো পরী। শায়ের একপাশে ব্যাগ রেখে বাইরে চলে গেলো।
পরী আবার পুরো ঘরে চোখ বুলায়। বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। হবেই বা না কেন? খুসিনা কয়েক দিন পর পর ঘর পরিষ্কার করে। অপরিষ্কার জায়গা শায়ের একদম পছন্দ করে না।
নেকাব টা এবার পরী খুলল। মাথার ওড়না খুলতেই পিঠ ছড়িয়ে গেল ঘন চুলগুলো। পরনের শাড়িটা ঠিক করতে করতে খেয়াল করলো সে বেলি ফুলের ঘ্রাণ পাচ্ছে। তীব্র সে ঘ্রাণ অনুসরণ করে পরী জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়ালো। জানালার পাশে একটা বেলি ফুল গাছ লাগানো তাতে অনেক ফুল ধরেছে। জানালার গ্রীল ধরে পরী সুবাস নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
কম্বল আর বালিশ নিয়ে ঘরে ঢুকলো শায়ের। পরীর দিকে প্রথমে চোখ গেলো তার। পিঠ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পরী। শায়ের কথা না বলে পালঙ্কের উপর বালিশ আর কম্বল রাখলো।
-‘আল্লাহ!!!ওইহানে কি করো নতুন বউ?’
পরী চমকে পেছন ফিরে তাকালো খুসিনার দিকে। শায়ের নিজেও তার ফুপুর দিকে তাকালো। কিন্ত খুসিনার মুখ থেকে টু শব্দটিও আর বের হলো না। সে একধ্যানে পরীর দিকে তাকিয়ে আছে। ফুপুর ভাবান্তর না দেখে তার দৃষ্টি অনুসরণ করে সেও তাকালো পরীর দিকে। জোরে বলতে না পারলেও বিড়বিড় করে সে বলে উঠল,মাশাল্লাহ।’
খুসিনা ভাবলো সে বোধহয় স্বপ্ন দেখতেছে। তার শায়েরের জন্য এত সুন্দর মেয়ে আল্লাহ রেখেছেন এটা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। পরীর দিকে দৃষ্টি রেখে তিনি এগিয়ে গেলেন। থুতনিতে হাত রেখে বললেন,’আমার সেহরান এতো সুন্দর বউ আনছে!! চান্দের লাহান চেহারা। ও সেহরান তোর ভাগ্য যে ভালা তা এতো দিন বুঝি নাই রে। স্বামী নিয়া সুখি হও মা। আমার সেহরান বড় ভালা গো নতুন বউ।’
পরী শায়েরের দিকে তাকালো। সে এখনও চোখের পলক ফেলতে পারেনি। মনে হচ্ছে চোখের পলক ফেলতে গেলে পরী উধাও হয়ে যাবে। শায়ের কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখেন আড়ষ্ঠ হলো পরী। মাথা নিচু করে ফেললো তখনি। খুসিনা বলল, ‘হলদির ঘ্রাণ এহনো গায়ে আছে তো। এই রাইত বিরাইতে জানালার ধারে কি করো? তেনারা আশেপাশে আছে গো। রাইতের বেলা বুঝি বাইরে যাও!!’
খুসিনা বিদায় নিয়ে ঘরে চলে গেল। শায়ের জানালা বন্ধ করে দিলো। এখন ও কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। উসখুস লাখছে। নতুন বিয়ে করলে কি সবাই এরকম অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে? আগে তো পরীর সাথে কথা বলতে এরকম হতো না। আজ বউ বলে কি এরকম হচ্ছে??কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থেকে চোখ মেলল সে। পরী পালঙ্কের ধার ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। শায়ের বলল,’আপনার বাবার মতো ঐশ্বর্য নেই আমার। জানি না আপনাকে ঠিক কতটা ভাল রাখতে পারবো!!তবে আপনাকে ভালো রাখার সব রকমের চেষ্টা আমি করব। এখন ঘুমিয়ে পড়ুন।’
পালঙ্কের উপর উঠে বসে পরী। কম্বল টা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ল সে। কিন্ত শায়ের জলচৌকিতে বসে রইল। পরী ভাবলো বাকি রাত টুকু কি শায়ের ওভাবে কাটাবে নাকি? শীত অনেক,কষ্ট হবে তো। কিন্ত একথা মুখ ফুটে পরী বলতে পারে না। আজ লজ্জায় মুখের কথা আটকে আসছে বারবার।
সকালে বেশ দেরি করেই ঘুম ভাঙে পরীর। আড়মোড়া ভেঙে উঠতেই পাশে তাকালো। শায়ের নেই। জলচৌকি ফাঁকা। কখন ঘুম থেকে উঠলো সে? পালঙ্ক থেকে নেমে বাইরে আসতে যেয়েও থেমে গেল পরী। না জানি বাইরে কতজন পুরুষ আছে? পরীর আর যাওয়া হলো না। তাই চুপ করে বসে রইল। কিছুক্ষণ পর একদল মহিলা এলো ঘরের মধ্যে। পরীর চট করে দাঁড়াল ওনাদের দেখে। মহিলা গুলো পরীকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে। একজন বললেন,’আমাগো সেহরানের কপাল গো!! মেলা সুন্দর বউ পাইছে। সেহরান রে ধইরা আন তো দেহি পাশে খাঁড়াইলে কেমন দেহায়?’
-‘হেয় তো কামে ব্যস্ত গো। বউ লুকাইতে বেড়া দিতাছে। কলপাড় বেড়া দিছে আর অখন নিজের ঘরের পাশে বেড়া দিতাছে। সুন্দরী বউ বইলা কথা।’
দুজন মহিলা হাসতে হাসতে বের হয়ে গেল। একটু পর তারা শায়ের কে টেনে হিঁচড়ে ঘরে নিয়ে এলো। ধাক্কা দিয়ে পরীর দিকে পাঠিয়ে দিলো। শায়ের কোন রকমে পরীর গায়ে পড়া থেকে বেঁচে গেলো। নিজেকে সামলিয়ে সে পরীর পাশে দাঁড়িয়ে বলল,’তোমরা এখন যাও তো!! অনেক হয়েছে এবার যাও।’
হাসির তোড় যেন বাড়লো সবার। একজন বললেন, ‘বুঝছি তো বউ লইয়া এহন একলা থাকতে চাও। তা ভালা কইরা কইলেই পারো।’
একজন ধাক্কা দিলো পরীকে। পরী গিয়ে পড়লো শায়েরের উপর। পরবর্তী ধাক্কা দেওয়ার আগেই শায়ের একহাতে পরীকে জড়িয়ে ধরে ঘুরিয়ে এনে বলে,’তোমরা যাবে?এতো রসিকতা আমার বউ পছন্দ করে না। যাও তো?’
হাসি তামাশা করতে করতে সবাই চলে গেল। শায়ের এখনও পরীকে আগের মতোই ধরে রেখেছে। খেয়াল হতেই শায়ের সরে দাঁড়িয়ে বলল,’ক্ষমা করবেন আপনাকে বাঁচাতে আপনাকে ছুঁতে হয়েছে। আর কখনোই তা হবে না। আসলে ওনারা মজা করছিলেন। কিছু মনে করবেন না।’
পরী ঠায় দাঁড়িয়ে রইল সেখানেই। শায়ের পরীকে নিয়ে কলপাড়ের দিকে গেলো। পরী দিনের আলোতে চারিদিক চোখ বুলাতে লাগলো। শায়ের তার ছোট্ট ঘরের চারপাশে টিনের বেড়া দিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যেই। এতকাজ সে করলো কখন? নিশ্চয়ই অনেক ভোরে উঠেছে ঘুম থেকে। তখনই ওর মনে পড়ল কাল তো শেষ প্রহরে ঘুমিয়েছে সে। তাহলে শায়ের নিশ্চয়ই জেগে ছিলো। এসব ভাবতে ভাবতে কলপাড়ে গিয়ে মুখ হাত ধুয়ে নিলো। বাইরে আসতেই সে দেখলো শায়ের গামছা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। পরী আসতেই শায়ের গামছা এগিয়ে দিলো। পরীও নিয়ে মুখমন্ডল মুছে নিলো। তখনই দুটো মেয়ের আগমন ঘটে সেখানে।
চম্পা দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করে,’সেহরান ভাই আপনে নাকি বিয়া করছেন?’
-‘হুম করেছি।’
চম্পা আর কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তার চোখ গেল পরীর উপর। পরীও চম্পার চোখে চোখ রাখে। মেয়েটাকে বেশ শৌখিন মনে হলো পরীর। চুলগুলো বেণুণি করা,চোখে গাঢ় কাজল দেওয়া আর ঠোঁটে লিপস্টিক। বোঝাই যাচ্ছে মেয়েটি সাজগোজ করা পছন্দ করে। কিন্ত হঠাৎই মেয়েটার চোখের দুটো ছলছল করে উঠল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছনের মেয়েটি এগিয়ে এসে বলে,’সেহরান ভাই, কত্ত সুন্দর নতুন ভাবি!! আসমানের চান্দের মতন। তা কেমন আছো ভাই? মেলা দিন পরে আইলা।’
-‘ভালো তুই কেমন আছিস?’
-‘খুব ভালা আছি আমি।’
চম্পা দৌড়ে চলে গেছে। তা দেখে চামেলি হেসে বলল,’আপায় কষ্ট পাইছে ভাই। তোমার লাইগা কতো রুমাল সেলাই করছে আর তুমি বিয়া কইরা আনলা?’
চামেলি হাসতে লাগল। পরী অবাক হয়ে গেল। মেয়েটা কষ্টের কথা বলছে আবার হাসছে! আজব!
শায়ের চামেলি ঘরে যেতে বলে নিজেও পরীকে নিয়ে ঘরে এলো। পরীর সামনে কি সব বলছিল। পরী এখন কি ভাববে? বড্ড সহজ সরল চামেলি। সব কথাতেই হাসবে। সুখ দুঃখ সব কিছুতেই ওর হাসি থামে না।
সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে রাত হয়ে গেল। পরী এতক্ষণ ঘরের বাইরের ছোট্ট উঠোনে বসে ছিল। এমনি এমনি নয়। খুসিনা ফুপু একগাদা মহিলাদের সঙ্গে পরীকে সাক্ষাৎ করাচ্ছে। বিরক্ত হলেও চুপ থাকতে হচ্ছে পরীর। ইচ্ছা করছে ছুটে ঘরে চলে যেতে কিন্ত পারছে না। সন্ধ্যা হয়ে আসছে বিধায় খুসিনা পরীকে ঘরে যেতে বলল। ঘরে আসতেই পরী দেখলো শায়ের ঘুমাচ্ছে। কাল রাতে একটুও ঘুমাতে পারেনি সে তাই সেই দুপুরে খেয়ে ঘুমিয়েছে এখনও ওঠার নামগন্ধ নেই। পরী কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। একটাই ঘর তাই অন্য কোথাও যেতে পারছে না। তাই জলচৌকির উপর বসে রইল।
রাতের খাবার খুসিনা ফুপু ওদের ঘরে এনে খাওয়ালো। তারপর তিনি চলে গেলেন। খাওয়ার পর পরীর শীত যেন তরতর করে বাড়লো। টিনের ঘরের ফাঁক দিয়ে নিশি এসে ঢুকছে। পরী তাড়াতাড়ি কম্বল গায়ে জড়াতেই চোখ পড়ল শায়েরের দিকে। সে কালকের মতোই বসে আছে। পরী ভাবলো আজকেও এভাবে বসে থাকবে নাকি? এই শীতে এভাবে বসে থাকাটা ঠিক বলে মনে হলো না পরীর। তাই সে বলে,’আজকেও কি এভাবে বসে থাকবেন নাকি?’
শায়ের বোধহয় অন্যকিছু ভাবছিল। তাই সে অপ্রস্তুত হয়ে বলে,’হু,,,।’
-‘বলছি ঘুমাবেন না? সারারাত ওভাবে বসে থাকার চিন্তা করছেন নাকি?’
শায়ের বেখেয়ালি ভাবে বলে,’ঘুমাবো!!কোথায়? ‘
-‘আপনার মাথায় কি সমস্যা আছে নাকি? আপনি না সাহসী পুরুষ। তাহলে বউয়ের পাশে ঘুমাতে ভয় পাচ্ছেন কেন?’
-‘আমি ভয় পাবো কেন? ঘুমাতে কি কেউ ভয় পায়?’
-‘দেখতেই তো পাচ্ছি ভয়ে কাঁপছেন।’
-‘ভয়ে না শীতে কাঁপছি।’
বলতে বলতে শায়ের ওপর পাশ দিয়ে পালঙ্কে উঠে বসে। পরী মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়ল।
রাত গভীর। ঘুমে মগ্ন পরী। শীতের মধ্যে কম্বলের উষ্ণতা বেশ লাগে পরীর। কিন্ত হঠাৎই ওর ঘুম যেন হাল্কা হয়ে এলো। পরী অনুভব করছে কেউ ওর গায়ে হাত বিচরণ করছে। কিন্ত ও ঘুরতে পারছে না। শরীর এতো ভারী হয়ে গেছে যে সে নড়তেই পারছে না। হাতটা যেন পরীর শাড়ির আঁচল টেনে ধরছে। আঁচলটা জোরে টান দিতেই পরী যেন শক্তি ফিরে পেলো। উঠে বসলো শয্যা ছেড়ে। এই শীতের মধ্য দিয়েও পরী ঘামতে লাগল।
#চলবে,,,,
#চলবে,,,