জোয়ার ভাটা পর্ব -২৭

#জোয়ার-ভাটা
#সুরাইয়া-সাত্তার-ঊর্মি
২৭
বিষন্নতা একাকীত্বের ভেতর ধড়ফড় করতে লাগলো মার্জান।
অনুভূতি গুলো আজ ওঁর এলো মেলো। নিকষ কালো মেঘের মতো ঘিড়ে আছে যেন মার্জানের জীবন। মার্জান রাতের আঁধারের খোলা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। টিপ টিপ করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে আবার। দম বন্ধ অনুভূতি। তাই জানালার পাশে এসে দাঁড়ালো। হঠাৎ করেই আসা দমকা হাওয়া উড়িয়ে দিলো ওঁর খোলা চুল। মার্জানের ধ্যান ভাঙ্গে ফোন কলে। মার্জান ভাবলেশহীন ভাবে ফোন তুলল,

” মমি আমিকে নিয়ে যাও, আমি থাকবো না এখানে…”

মৃণালে কান্নারত কন্ঠে মার্জানের বুক ধক করে উঠলো,
” কি হয়েছে বাচ্চা। আচ্ছা..আচ্ছা আগে কান্না থামাও খুলে বলো আমায়?”

মৃণাল হিচকি তুলে কাঁদে বলল,

” মমি পাপা আমায় বকেছে, সে আমায় চিনা না।”

মার্জানের ভ্রু সংকুচিত হয়ে গেলো,

“কি বলেছে তোমাকে?”

মৃণাল কিছুক্ষণ আগের সব ঘটনা খুলে বলতে শুরু করলো।

কিছুক্ষণ আগে।
তুলতুলকে কোলে তুলে ওঁর ঘরে নিয়ে গেলো গ্রীষ্ম। তুলতুলের রুমটি আজো সেই রকম আছে, যেমনটি ছিলো। তুলতুল নিজে রুম দেখ বিস্মিত হয়ে তাকালো,

” আমার রুম আজো এমন আছে?”

গ্রীষ্ম বাঁকা হাসলো,
” তুমি না থাকলেও তোমার সব কিছুই আমি ঠিক করে রেখেছি। অথচ আজ তুমি সবার সামনে আমায় রেপিস্ট বললে?”

গ্রীষ্মের হাসির পিছনে তুলতুল আষাঢ়ের প্রতি ছবি খুঁজে পেলো। সঙ্গে সঙ্গে বিছানা থেকে নেমে ওঁর হাত ধরে বলে উঠলো,

” নাহ্ নাহ্ আমি তোমাকে বলিনি। আমি আষাঢ়…। গ্রীষ্ম তোমার শরীর এত গরম কেনো? মনে হচ্ছে গায়ে জ্বর আসছে?”

গ্রীষ্ম ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো তুলতুলকে। শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো,

” আমি ঠিক আছি।”

তুলতুল চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠলো,
“তুমি একদম ঠিক নেই। তোমার এখনি মেডিসিন নেয়া উচিত।”
বলেই তুলতুল এদিক ওদিক ঔষধ খোঁজায় ব্যস্ত হয়ে গেলো। তা দেখে গ্রীষ্ম বলে উঠলো,

” তুমি কেন চাইছো আমি চলে যাই?”

তুলতুল ওঁর কথাটুকু বুঝলো না। ওঁর দিকে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে চাইতেই। গ্রীম্ম বেড়িয়ে গেলো তুলতুলের ঘর থেকে। এবং ঠিক তখনি মুখোমুখি হয় মৃণালের। মৃণাল রাগে, ক্ষোভ তাকিয়ে আছে কোমরে হাত দিয়ে। গ্রীম্ম ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,

” কি চাই।”

মৃণাল রাগান্বিত হয়ে বলে উঠলো,

“পাপা তুমি এইটা করতে পারো না… তুমি ওই আন্টিকে বের করে দাও। ওটা শুধু আমার মমির জায়গা। নয়তো আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।”

গ্রীষ্ম মৃণালকে দেখে কি যেন ভাবলো। পরক্ষণেই ধমকে উঠে বলল,

” আমি তোমার বাবা নই, আমি তোমার।আঙ্কেল হই। তোমার বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসে। কোথাও যেতে দিবে না। যাও এবার ঘরে যাও।”

মৃণাল গ্রীষ্মের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না। কান্না করে চলে গেলো ঘরে। এবং ফোন করলো মার্জানকে। সব শুনে মার্জান বলে উঠলো,

” বাচ্চা চিন্তা করো না। আমি তোমাকে খুব শীঘ্রই নিয়ে যাবো। এবং এদেশ থেকে চলে যাবো।”

মৃণাল খুশি হয়ে গেল।

আকাশের বুক চিড়ে আলোর ফলন হলো। ঘর দুয়ারে নিখিল জগৎকে সূর্যের সোনালী আলো স্পর্শ করে গেলো। মার্জান রোজকার মতো সড়ক ধরে হাটতে লাগল। শীত শীত দিনে গরম স্পর্শ কতটুকু মজার বলে বোঝানো দায়। কিন্তু মনের শীতল স্পর্শে উষ্ণ ছোঁয়া কবে লাগবে মার্জানের? মার্জান আর শীপ্রা এসে দাঁড়ালো একটু শপিং মলের সামনে। দেশের বাহিরে চলে যাবার আগে কিছু শপিং করা উচিত। তাই শীপ্রা আর ওঁ দুজনেই মিলে শপিং মলে ডুকে গেলো। শীপ্রা মার্জানকে প্রশ্ন করলো,

” সব ঠিক আছে তোদের মাঝে?”

মার্জান একটি ড্রেস দেখছিলো। শীপ্রার কথা বুঝতে না পেরে তাকালো ওঁর দিক। শীপ্রা তখন অন্য দিকে তাকিয়ে। ওঁর নজর ফোলো করে সামনে তাকাতেই মার্জান নিজেও থমকালো। তুলতুল গ্রীষ্মের বাহু ধরে হেটে হেটে শপিং করছে। মার্জানের বুকের ভিতর এমনটি দেখে তোলপাড় শুরু হলো। কিন্তু নিজেকে ঠিক রেখে শীপ্রাকে জবাব দিলো,

” আমাদের মাঝে কখনো কিছু ছিলোই না যে কিছু হবে।”

শীপ্রা মার্জানের ম্লান কন্ঠ শোনে, আহ্! করে শ্বাস ছাড়লো,

” বেডা মানুষ, খন খনে রং পাল্টায়। বাদ দে। ”

মার্জান বিদ্রুপের হাসি দিলো। কিন্তু পরক্ষণেই তুলতুল ওঁদের সামনে এসে বলে উঠলো,

“হ্যালো মার্জান। আমি দুঃখীত সেদিনের গ্রীষ্মের ব্যবহারে।”

মার্জান চমকালো না। হেসে বলল,

” আমি কিছু মনে করিনি। আমিতো এসবে ইউস টু হয়ে গেছি। কিছু মানুষের ছেড়ে যাওয়ার অভ্যাস সারা জীবনের। দেখো মাঝ পথে না আপনাকেও চমকে দেয়।”

কথাটুকু ঠাট্টার সুরে বললেও তুলতুল বুঝে গেলো। গ্রীষ্মের দিকে তাকাতেই গ্রীষ্ম অন্য দিকে তাকিয়ে যেন চিনেই না মার্জানকে। যেন কর্ণপাত পর্যন্ত পৌঁছায় নি ওঁদের কন্ঠ। তাই মার্জান সরে এলো। নিজের জন্য একটা ড্রেস চুস করতেই আরেকটি হাত ওঁর সেই ড্রেসে পড়লো। তা দেখে ভ্রু কুচকে গেলো মার্জানের,

” সমস্যা কি? মিঃ গ্রীষ্ম!”

“এই ড্রেসটি আমি নিবো তুলতুলের জন্য। তুমি অন্য কিছু দেখো।”

মার্জান ড্রেসটি কেড়ে নিয়ে বলে উঠলো,
” আমি আগে দেখেছি আমি নিবো।”

গ্রীষ্ম নাছড় বান্দা,
” তুমি অন্য কিছু ট্রাই করো। বিল না হয় আমি পে করে দিবো।”

মার্জানের রাগের সীমা খতম। নিজের আত্মরক্ষার জন্য সবমসয় কাছে রাখা ছোট ছুরি বের করে ড্রেসটি ইচ্ছে মতো কেঁটে কুটি কুটি করে গ্রীস্মের মুখে মেরে দিলো। রাগে ওঁর গা কাপছে, এত অপমান, গ্রীষ্ম কি ওঁকে ভিক্ষারী মনে করে? মার্জান যেতে বলে উঠলো,

” নিন এবার পে করে দিন।”

বলে ধপাধপ পায়ে বেড়িয়ে গেলো। উপস্থিত তুলতুল আর শীপ্রা হা হয়ে গেলো।

দিনের আলোয় ফক ফক করছে। জানালা দরজা ভেজ করে মৃণালের ঘরটি আলোকিত করে চলে যাচ্ছে। কোথা থেকে উঁড়ে এসে দু’টো পাখি চি চু চা শব্দ করে চলছে। মৃণাল কম্পিউটারে বসে কি যেন করছিলো। পাখিদের শব্দে বিরক্তি নিয়ে উঠে এসে ওঁর বিস্কুট ভেঙ্গ দিলো ওঁদের। এখানে আসার পর থেকে এই দুজনই ওঁর খেলার সাথী যেন। মৃণাল খাবার দিয়ার পর মুখে ওঁর ছোট আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে বলল,

” শু। একদম ডিস্টার্ব করবে না। আমি ইমপর্ট্যান্ট কাজ করছি। ”
বলেই আবারো কম্পিউটারের সামনে বসে পড়লো। ছোট ছোট আঙ্গুলে ট্যাপ ট্যাপ করে কিছু লিখে ফেললো। সব শেষে হাফ ছেঁড়ে বাঁচলো। ঠিক তখনি রহিম চাচা ঢুকলো ঘরে। কম্পিউটার স্ক্রীনে তাকাতেই চোখ দু’টো ছানাবড়া। মার্জানের জন্য মেইড ফর ইচ আদার একটি এপ্যাসে পার্টনার খুঁজছে মৃণাল। উনার কঁপালে হাত। কারণ মৃৃণাল শুধু ওঁর মা নয় নিজের জন্যও বাবা খুঁজছে। এমন কেউ যে ওঁর মাকে বিয়ে করবে, এবং মৃণাল ফ্রী….। ইনফেক্ট রিতীমত রেসপন্স চলে আসছে। রহিম চাচা বেড়িয়ে গেলো দ্রুত অনিতা মেডামকে খবরটা যে দিতে হবে। বংশেরবাতি যদি এভাবে চলে যায়? কেমন হবে???? অনিতার কানে যেতেই অনিতা দৌঁড়ে এলো। এতটুকুন বাচ্চা এমন কাজ করবে? ভেবেই পেলো না। অনিতা জিগ্যেস করলো,

” দাদু ভাই তোমার কি মন খারাপ?”

মৃণাল গোমরা মুখে বলল,

” আমি জানের কাছে যাবো।”

অনিতা মৃণালের মাথায় হাত রেখে বলল,

” ঠিক আছে আমি নিয়ে যাবো। কিন্তু তুমি নাকি তোমার জন্য বাবা খুঁজছো?”

মৃণাল হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো।

” কিন্তু তোমার বাবাতো আছেই।”

গ্রীষ্ম ছলছল চোখে বলল,
” উনি আমার বাবা নয়, উনি নিজেই বলেছেন।”

অনিতা অবাক হয়ে গেলো। তুলতুল এসেছে পর থেকে ছেলেটা এমন অদ্ভুত আচরণ কেন করছে? বুঝলো না।নাকি ওঁর মাঝে আবারো আষাঢ়ের পার্সোনালিটি ভর করেছে??? অনিত সময় বিলম্ব না করে ডাক্তারকে আসতে বলল অনিতা।

চলবে,

বাড়িতে ভাবি অসুস্থ থাকার কারণে যতটুকু সম্ভব লিখে দিলাম। আশা করি আপনাদের রেসপন্স পাবো প্রতিবারের মতো।🙂💔

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here