#কলঙ্কিত_প্রেমের_উপন্যাস {২ ও ৩}
#Rawnaf_Anan_Tahiyat
‘ স্যার এটা কি করে সম্ভব? আমাদের মধ্যে তো তেমন কিছু হয়নি কখনও আর আপনার মনে হচ্ছে কোথাও একটা ভুল হয়েছে। আপনি আবার টেস্ট করুন শ্রেয়ার।’
‘ তুমি কি বলতে চাইছো তামিম? আমার এতো দিনের ডাক্তারির অভিজ্ঞতা সব ভুল, আমি ও তেমন টা ভেবে বারবার চেক করেছি কিন্তু রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে বারবার।’
তামিম এবার চুপ করে গেল পুরোপুরি।বসা থেকে উঠে ধীরে ধীরে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলো। পিছন থেকে ড. সারোয়ার হোসেন স্যার কিছু বলছেন কিন্তু তার কান সেটা আর শুনতে পেলো না। পার্কিং লটে এসে গাড়িটা নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলো।
____________________________________
সকাল আটটার দিকে রোজ ভিলার সামনে নাজিম সাহেবের গাড়ি থামলো। গাড়ি থেকে একটা মেয়ে নেমে এলো, এরপর নাজিম সাহেব। মেয়েটা নাজিম সাহেবের বোনের মেয়ে রাহিয়া রহমান রাওনাফ।ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করছে।যখনই শুনেছে মামা প্রিয়ার বিয়ে দিচ্ছেন তখনই চলে আসতো কিন্তু একটা এক্সাম থাকায় আসতে পারে নি।আর রাতে মামার কাছে এসব শোনার পর মামার সাথেই চলে এসেছে।রোজ ভিলার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল রাওনাফ, অদ্ভুত সুন্দর লাগছে বাসা টাকে।ধীর শান্ত পায়ে হেঁটে বাসায় ঢুকলো রাওনাফ। বাসায় ঢুকে আশপাশে কাউকে না দেখতে পেয়ে মালিয়া কে ডাকতে শুরু করলো ,,
‘ মালিয়া আপা,ও মালিয়া আপা। কোথায় গো তুমি?’
কিচেনে প্রিয়ার জন্য স্যুপ বানাচ্ছিল মালিয়া এমন সময় রাওনাফের ডাকে তড়িঘড়ি করে বসার রুমে এলো।
‘ রাওনাফ আফা আপনে আইছেন?আপনে আইছেন ভালোই হইছে গো আফা। জানেন পিয়া আফামনি এহনোও ঘরের দরজা খুলে নাইকা, আমার কথাও শুনে না।এহন আপনের কথা শুনবো আফায়।’
রাওনাফ প্রতি উত্তরে মুচকি হাসলো। নাজিম সাহেব ওর লাগেজ টা নিয়ে এসে মালিয়া কে দিয়ে বললেন প্রিয়ার রুমে নিয়ে যেতে।আজ থেকে রাওনাফ প্রিয়ার সাথেই থাকবে তাহলে মেয়েটা আর কষ্ট পাবে না।
বেশ কিছুক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কাধাক্কির পর প্রিয়া টলতে টলতে উঠে এসে দরজা খুলল। সারারাত ধরে কিছু না খাওয়ার কারণে শরীর টা একেবারে দুর্বল হয়ে গেছে তার তার উপর ভালো ঘুম হয়নি। দরজা খুলে একটা বিকট শব্দে চিৎকার করতে যাবে তখনই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখে চমকে উঠলো প্রিয়া। চোখে ভুল দেখছে নাকি সে?এই মানুষ টা এই সময়ে এই বাসায় এটা কি করে সম্ভব?
🍂
‘যেখানে পা রেখেছো সেখানেই দাঁড়াও তামিম,আর এক পা ও যেন বাসার ভেতরে না পরে তোমার।’
বাসায় ঢুকতেই বাঁধা পেল তামিম। সামনে তাকিয়ে দেখে বাবা মা ফুপি বাবার বন্ধুরা সহ বাসার আর সবাই বসে আছে ওদের বাসাতেই। বাবার চোখে মুখে যেন আগুন ঝরছে ।
‘ কেন? কি এমন করেছি আমি যে বাসায় ঢুকতে পারবো না।যদি প্রিয়াকে বিয়ের কথা বলো তাহলে বলবো আমি বে/চে থাকতে ওকে বিয়ে করব না।ওর মতো একটা পিচ্চি মেয়ে কে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় এটা আমি তোমাকে আগেও বলেছি আর এখনো ও বলছি । আমি শ্রে…..’
‘শাট আপ ইডিয়ট।আর একবার ও যেন তোমার মুখে ওই মেয়ের নাম টা না শুনি আমরা কেউই অন্তত এই বাসায়।প্রিয়া তো কোন ছাড়, তোমার সাথে তো এখন বাসার কাজের মেয়ে রোজিনার বিয়ে দিতে ও আমার বিবেকে বাঁধবে।’
তামিমের কথা শুনেই তেতে উঠলেন আইরিন সুলতানা বেগম। পাশেই ফ্রোরে বসে রোজিনা কি যেন কাজ করছিল, আইরিন বেগমের কথা শুনে একটু লজ্জা পেয়ে গেল। তাড়াতাড়ি করে গায়ের ওড়না টা ঠিক করে একটু লাজুক লাজুক মুখ করে তামিমের দিকে তাকালো।
‘ আহ থামো ভাবী।ওকে নিয়ে কিছু বলছো কেন?ও তো তুলসী পাতার মতো পবিত্র একটা মেয়ে,কত সুন্দর ম্যাচিউর দেখেছো? নাহলে কি আর বিয়ের আগেই সন্তানসম্ভবা হয়ে যেতে পারে বলো?’
এতোক্ষণ ঝিম ধরে বসে সবার কথা শুনছিলেন সোবহান চৌধুরী আর চুপ করে থাকতে পারলেন না। হুংকার দিয়ে উঠলেন তিনি। উনার ছেলে এমন চরিত্রের হবে সেটা উনি ভাবতেও পারেননি।
‘ তামিম তুমি আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যাও, আর কখনো এমুখো হবে না আশা করছি। তোমার মতো একটা নোংরা চরিত্রের ছেলে কে আমি আমার ছেলে হিসেবে পরিচয় দিতে পারবো না। সবার সামনে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে গেছে আমার, কাউকে মুখ দেখাতে পারবো না তোমার জন্য।’
‘ বাবা কি করেছি আমি? শুধু প্রিয়া কে বিয়ে করতে চাইই নি এটাই তো আর কিছু…..’
‘ কি করেছো তুমি হ্যা? বিয়ের আগেই একটা মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছো আর বলছো কি করেছো? লজ্জা করলো না তোমার একজন ডাক্তার হয়ে একাজ করতে?মানছি তুমি শ্রেয়া কে খুব ভালোবাসো, নাহয় ওকে লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলতে সেটাও মানা যেতো কিন্তু এটা কি করলে তুমি? নিজের সম্মানের কথা না ভাবো অন্তত আমার সম্মান টা ভাবতে তামিম?
রাগে সারা শরীর কাঁপতে কাঁপতে লাগলো সোবহান চৌধুরীর। তামিম বাবার কথা শুনে একেবারে চুপ করে গেল। সবাই তার উপর কেন এত রেগে আছে এবার সেটা পুরো পরিষ্কার হয়ে গেছে। সবাই ভাবছে শ্রেয়ার বাচ্চাটা হয়তোবা তামিমের ই তাই এতো কথা,আর এসবের আড়ালে প্রিয়ার ব্যাপারটা একেবারে ধামাচাপা পড়ে আছে এটা ভেবেই স্বস্তি বোধ করলো তামিম। একটু পাশ ঘুরে তাকাতেই দেখে রোজিনা ওর দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে টিপে হাসি হাসছে আর লজ্জা পাচ্ছে।ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে রইল তামিম, মায়ের কথাটা কি এই মেয়েটা সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছে নাকি যে এভাবে লজ্জা পাচ্ছে?
‘ বেরিয়ে যাও তামিম । তোমার মুখদর্শন করতে চাই না আমি।’
কথা না বাড়িয়ে তামিম চুপচাপ বাসা থেকে বেরিয়ে চলে এলো। এখন মুখ খোলা মানে বিপদ ডেকে আনা হবে নিজের।বাসা থেকে বের হয়ে এসে গাড়ি নিয়ে এলোমেলো ভাবে ড্রাইভ করতে শুরু করলো। এতোক্ষণ নিজেকে সামলে রেখেছিল খুব কষ্ট করে কিন্তু আর পারলো না।বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে এখন।শ্রেয়া এমনটা কি করে করতে পারলো তার সাথে?সে তো শ্রেয়া কে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে, ওকে ছাড়া আর কিছু ভাবতেও পারেনি তাহলে কেন? চোখ মুছে ড্রাইভ করতে লাগলো তামিম।
___________________________________
‘ আপাই তুমি?’
বলেই রাওনাফ কে জড়িয়ে ধরলো প্রিয়া। জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো হঠাৎ করেই।রাওনাফের সাথে মালিয়া দাঁড়িয়ে ছিল, ওকে ইশারা করে খাবার নিয়ে আসতে বললো প্রিয়ার জন্য ।রাওনাফের হাত ধরে ওকে টেনে রুমে নিয়ে এলো প্রিয়া। পৃথিবীতে বাবার পরে যদি ও কাউকে ভালোবেসে থাকে তাহলে সেটা রাওনাফ।বেডে বসিয়ে ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো প্রিয়া, বসে থাকতে পারলো না শরীরের দুর্বলতার জন্য।রাওনাফ আলতো করে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,,
‘ কি হয়েছে প্রিয়ু? তুই নাকি রাতে কিছু খাসনি মালিয়ার কাছে শুনলাম।আর এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে যাচ্ছিলি কেন তুই, বিয়ের বয়স হয়েছে কি তোর হ্যা?’
‘ বাবাই তো আমাকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল আপাই।জানো আমি না তোমাকে খুব মিস করেছি কাল থেকে। তুমি থাকলে শ্রেয়া আপাই আমার থেকে আমার বর কে নিয়ে নিতে পারতো না।আপাই, আমি কি দেখতে খুব কুৎসিত?’
প্রিয়ার হঠাৎ করে এমন প্রশ্ন শুনে হকচকিয়ে গেল রাওনাফ, কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না।প্রিয়া বাস্তবিক ই খুব কু’ৎ’সি’ত চেহারার মেয়ে। গায়ের রং ঘোর কৃষ্ণ বর্ণের, হঠাৎ করেই কেউ প্রিয়া কে দেখলে বলতে পারবে না যে এই মেয়েটা এতো ধনী বাবার একমাত্র আদরের মেয়ে। কিন্তু রাওনাফের কাছে প্রিয়ার চেহারা টা খুব মিষ্টি লাগে,বাজে দেখতে হলেও সে যখন হাসে তখন মনে হয় যেন ওর চোখে সমুদ্র খেলে চলেছে। অদ্ভুত এক মানবী প্রিয়া..………
চলবে……….………. ইনশাআল্লাহ
[সবাই রেসপন্স করবেন প্লিজ 🥺]
#কলঙ্কিত_প্রেমের_উপন্যাস {৩}
#Rawnaf_Anan_Tahiyat
হসপিটালে ব্যস্ত হয়ে পায়চারি করছে হুমায়ূন কবীর। স্বামীকে এভাবে পায়চারি করতে দেখে ভয়ে বারবার ঢোক গিলতে লাগলেন সুইটি কবীর, না জানি আজকে আদরের মেয়ের কপালে কি আছে? রাগের বশে কি না কি করে বসেন তিনি সেটা ভেবেই ভয়ে বারবার কেঁপে উঠছেন সুইটি কবীর।প্রায় আধ ঘন্টা পর আই সি ইউ থেকে ডাক্তার বেরিয়ে এলো।ডাক্তার কে দেখে হুমায়ূন কবীর তাড়াতাড়ি উনার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন,,,
‘ আমি কি আমার মেয়ের সাথে দেখা করতে পারি এখন?’
ডাক্তার উনাকে কিছু বলতে যাবেন তখন পিছন থেকে হাত নাড়িয়ে না করতে লাগলেন সুইটি কবীর, ইশারায় বললেন অনুমতি যেন না দেন। কিন্তু ডাক্তার সেটা বুঝতে পারলো না। হাসিমুখে হুমায়ূন কবীর কে আই সি ইউ এর ভিতর যাওয়ার অনুমতি দিলেন, এরপর নার্স কে চলে আসতে বলে নিজের কাজে চলে গেলেন। হুমায়ূন সাহেব আই সি ইউ তে ঢুকতে যাবেন তখনই সুইটি কবীর এসে উনার হাতটা ধরে ফেললেন, অনেক অনুনয় বিনয় করা সত্ত্বেও হুমায়ূন সাহেবের মন গলল না।স্ত্রী কে কড়া করে শাসিয়ে গেলেন উনি না বলা পর্যন্ত যেন ভিতরে না ঢুকে কেউ, এরপর তিনি হনহন করে ভিতরে ঢুকে গেলেন।
_________________________________________
‘ কি ব্যাপার কোথায় আপনে ডাক্তার সাব? তাড়াতাড়ি বাড়িতে আইয়েন,ভাত খাইবেন না আপনে?’
সকাল থেকে শিশু পার্কের বেঞ্চে শুয়ে ছিল তামিম। আশপাশের কোনো কিছু ভালো লাগছে না তার। শ্রেয়ার দেওয়া ধোঁকার কারণে প্রচুর কেঁদেছে এখানে এসে, এখন চোখ থেকে আর পানি ও পড়ে না। হসপিটাল থেকে ফোন আসছিল বারবার তাই রাগ করে ফোন সুইচ অফ করে রেখেছিল।যাকে জীবনে সবথেকে বেশি ভালোবাসলো সেই যদি তার সাথে এমন করে তাহলে আর কিইবা আছে? বেশ কিছুক্ষণ ধরে পার্কে শুয়ে থাকার পর বিকাল তিনটার দিকে ফোন অন করলো তামিম। সাথে সাথেই MCA এর মেসেজ চলে এলো, রোজিনার কল এসেছে সাতটা + রাওনাফ প্রায় পঞ্চাশ টার মতো কল দিয়েছিল দুপুর দুটো পর্যন্ত। হঠাৎ করেই এতো গুলো কল রাওনাফের,বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো তামিম। ওর যতদুর মনে পড়ে রাওনাফ তো ওর সাথে ভালো করে কথাও বলে না।ক্লাসে গেলে সাধারণত টিচার স্টুডেন্টদের সাথে যেভাবে কথা হয় রাওনাফ সেটুকুও করেনা তাহলে আজ হঠাৎ? চিন্তিত মনে রাওনাফ কে কল করতে যাবে ঠিক তখনই রোজিনার কল এলো।কল রিসিভ করার সাথে সাথেই রোজিনা বেশ লাজুক স্বরে উক্ত কথাগুলো বলে উঠলো।ওর কথাগুলো শুনে হেঁচকি উঠে গেছে তামিমের,,,
‘ কি হয়েছে বলতো তোর রোজিনা, তুই তো আগে আমাকে ভাইজান বলে ডাকতি তাহলে এখন হঠাৎ ডাক্তার সাব বলে ডাকছিস যে? আর আমি খাবো কি খাবো না সেটা তোকে এতো ভাবতে হবে না। তুই তোর কথা ভাব।’
‘ কি যে কন না ডাক্তার সাব, আমি লজ্জা পাই তো।আর কিছুদিন পর থেকে তো আমরেই আন্নের কথা ভাবতে অইবো তাই এহন থিকাই শুরু করছি।আর জামাইরে কি কেউ কহনো ভাইজান কইয়া ডাহে?এহন প্যাচাল বাদ দিয়া আন্নে বাড়িতে আইয়েন তাড়াতাড়ি। আম্মাজান আন্নের জন্যি চিন্তা কইরা শেষ হয়া গেছে।’
রোজিনার কথাগুলো শুনে বেশ জোড়ে জোড়ে হেঁচকি উঠতে শুরু করেছে তামিমের। মাথার তাঁর ছিঁড়ে গেছে মনে হচ্ছে রোজিনার নাহলে এরকম অসম্ভব কথা ভাবছে কি করে।আর কিছু বলার আগেই তাড়াতাড়ি করে কল কেটে দিল তামিম নাহলে ওর নিজের অবস্থাই খারাপ হয়ে যাবে এই পাগল মহিলার কথা শুনে।
🍂
তামিম কল কেটে দেওয়ার পর রোজিনা ফোন টা বুকে নিয়ে মুচকি হাসলো, ইশ্ কি লজ্জার ব্যাপার এটা। অবশেষে তামিম কে সে মুখ ফুটে সব বলতে পেরেছে,তাছাড়াও তামিমের মা আইরিন খালাম্মা ও তো রাজি এই ব্যাপারে নাহলে কি আর কালকে ওভাবে বলতেন তামিম কে। তামিম ও রাজি মনে হচ্ছে সেজন্যই হয়তো লজ্জা পেয়ে কল কেটে দিয়েছে।আগেও যখনি রোজিনা ওর সামনে গেছে তামিম ওর দিকে তাকিয়ে থাকতো, ওর কত খেয়াল ও রাখে। সেবার জ্বর হলো যখন,তামিমই তো ওকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করলো। হসপিটালে নিয়ে যাওয়া, নিজেই সব কিছু করেছে, ওষুধ ও নিজেই লিখে দিয়েছে।
‘অন্য একটা মাইয়া ডাক্তার আসছিল দেখতে কিন্তু ডাক্তার সাব তো তারে দেখতে দেয় নাই, আমারে পছন্দ না করলে কি আর এমনেই এইসব করছে ডাক্তার সাব?’।
নিজের মনে এইসব বলে দুহাতে মুখ ঢেকে ফেললো রোজিনা। একটু দূরে দাঁড়িয়ে বেশ অনেকক্ষণ ধরে রোজিনা কে লক্ষ্য করছিল সারাহ্।কার সাথে যেন কথা বললো আবার এখন আপন মনে কি ভেবে আবার লজ্জা ও পাচ্ছে। কারো সাথে আবার প্রণয়ে জড়িয়ে পড়লো নাকি রোজিনা আফায়? ওর দিকে এগিয়ে যেতে ধরলো তখনি ভিতর থেকে আইরিন বেগমের ডাক পড়লো।
_______________________________________
‘প্রিয়ু, এই প্রিয়ু। কোচিং এ যাবি না আজকে?’
চারটার দিকে প্রিয়া কে টেনে ঘুম থেকে উঠালো রাওনাফ। সেই কখন থেকে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে, উঠার কোনো নাম গন্ধ নেই। সকাল থেকে দুপুর অবধি ধৈর্য নিয়ে প্রিয়াকে মোটিভেট করেছে রাওনাফ, বিয়ের শকিং টা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে রাওনাফের মোটিভেশন এ। কোমলমতি বয়সী প্রিয়া,তাই খুব সহজেই কনভার্ট হয়ে গেছে ওর দিকে। দুপুরে খাবার পরে নিশ্চিন্ত হয়ে সেই যে ঘুমাতে লেগেছে একবার ও উঠেনি। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পরেও উঠলো না প্রিয়া, একবার চোখ খুলে বললো’ আজকে কোচিং বন্ধ’ এরপরই আবার ঘুমিয়ে গেল।ওর সাথে না পেরে বাসার পিছনের বাগানে এসে বসলো রাওনাফ। পুরো বাসায় দুটো মাত্র প্রাণি,প্রিয়া আর রাওনাফ। তন্মধ্যে প্রিয়া ঘুমাচ্ছে,বাকি আছে সে। মালিয়া বাজারে গেছে কেনাকাটা করতে, এখনও আসেনি। সময় কাটানো টাই এখন সবচেয়ে বড় সমস্যার,মগজ আঁতিপাঁতি করতে একটা উপায় এলো তার মাথায়। তামিম স্যার কে আবার কল করা যাক, তিনটা অবধি তো ফোন বন্ধ ছিল উনার,এখন খুললে খুলতেও পারে। প্রিয়ার সমস্যা টা নিয়ে তামিমের সাথে কথা বলতে চাইছিল রাওনাফ তাই কতবার যে কল দিলো কিন্তু বারবার ফোন সুইচ অফ বলছে। এখন আবার চেষ্টা করলো।
কল দেওয়ার পর কলটা ঢুকলো এবার, কেমন যেন একটা ভয় ভয় লাগছে তার। যেখানে স্যার এর সাথে কখনো ভালো করে কথাই বলে না সেখানে উনার সাথে কল এ কথা………….. একটু পরেই কলটা রিসিভ হলো। খানিকটা ভয় পাওয়া গলায় বলল,,
– হ্যালো,স্যার আসসালামুয়ালাইকুম। কেমন আছেন স্যার?
– ওয়ালাইকুমুস সালাম, আমি ভালো আছি আর কি। তুমি কেমন আছো?
– আমি ভালো।স্যার আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল, আপনি কি রোজ ভিলায় আসবেন একটু?
রোজ ভিলা? নাম টা শুনেই চমকে উঠলো তামিম। এটা তো প্রিয়াদের বাসা। তাহলে কি রাওনাফ প্রিয়াদের বাসায় আছে আর প্রিয়ার সাথে রাওনাফেরই বা কি সম্পর্ক? তামিম কে চুপ করে থাকতে দেখে রাওনাফ আবার জিজ্ঞেস করলো,,,
– কি হয়েছে স্যার? আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন না,হ্যালো?
তামিম কলটা কেটে দিল।রাওনাফ প্রিয়ার কি হয় সেটা আগে জানতে হবে নাহলে অনেক প্রবলেম ফেস করতে হবে তাকে।
হঠাৎ করে এভাবে কল কেটে দেওয়ায় রাওনাফের মনটা খারাপ হয়ে গেল,রোজ ভিলার কথা শুনে স্যার এমন করলেন কেন মাথায় এলো না। ঠিক তখনি প্রিয়া রাওনাফের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।এক মনে তামিমের কথা ভাবছিল রাওনাফ হঠাৎ করে কেউ কোলে মাথা রেখেছে এটায় ভয়ে চি’ৎ’কা’র করে উঠল।
‘আপাই, আমি প্রিয়া। চেঁ’চা’লে কেন?’
‘ ত তুই, তুই এখানে কি করছিস? তুই না ঘুমিয়ে ছিলি?’
‘ ছিলাম কিন্তু এখন নেই। তুমি যা অ’ত্যা’চা’র করলে তখন এরপর আর ঘুমানো যায় নাকি?’
খানিকটা রাগ নিয়ে কথাটা বললো প্রিয়া।রাওনাফ পিচ্চির অভিমান দেখে মুচকি হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
‘ কি করবো বল, এখানে তো কেউ নেই। এভাবে একা একা ভালো লাগে?’
‘ কিন্তু আমি তো সবসময় এরকম একাই থাকি।কই আমার তো খারাপ লাগে না।বাদ দাও,আপাই তুমি একটু আগে কার সাথে কথা বললে ফোনে?’
‘ ড. তামিমুল ইসলাম মাহিনের সাথে।’
প্রিয়া চকিত চাহনি নিয়ে রাওনাফের দিকে তাকালো।ড. তামিমুল ইসলাম মাহিন মানে…………………..
চলবে………………….. ইনশাআল্লাহ
[ একটু গঠন মূলক মন্তব্যের অনুরোধ রইল। রেসপন্স করবেন সবাই 🥺]