কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস পর্ব -০৭

#কলঙ্কিত_প্রেমের_উপন্যাস {৭}
#Rawnaf_Anan_Tahiyat

‘ কিতা অইছে আম্মাজান এমনে চেচাইয়া উঠলেন ক্যান?ভু/ত দেখছেন নি আমার পিছনে?’

আইরিন বেগম একটা চিৎকার দিয়ে একবারে চুপ করে গেছেন,মুখ হা করে তাকিয়ে রইলেন রোজিনার দিকে। সারাহ্ কিছুক্ষণ মা’কে দেখলো আর কিছুক্ষণ রোজিনা কে দেখলো। এরপর উঠে গিয়ে মায়ের কাছে বসে হালকা কাশি দিয়ে বললো,,

‘ মুখ টা বন্ধ করে নাও মা, নাহলে মশা মাছি ঢুকতে পারে।’

আইরিন বেগম মুখ বন্ধ করে আশপাশের সবাইকে দেখলেন, সবাই হাসাহাসি শুরু করেছে তখন। রোজিনা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে, আইরিন বেগম কে ওর দিকে তাকাতে দেখে ওড়না টা আরেকটু লম্বা করে টেনে নিল মুখের উপর, তারপর দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আইরিন বেগম রোজিনার কাজকর্মে মাথায় হাত দিলেন,একি কাণ্ড হয়ে গেল। এই মেয়ে নাকি হবে তার ছেলের বউ আর এটা সে নিজে মুখে বললো? এক্ষুনি তামিমের সাথে কথা বলতে হবে, আবার তামিম লুকিয়ে লুকিয়ে এর সাথে কোনোকিছু করছে না তো?

______________________________________

লাল একটা গাউন পরে এংগেজমেন্টের অনুষ্ঠানে এলো প্রিয়া।বেশ বড় করেই আয়োজন করা হয়েছে, ওদের বেলায় যেরকম করা হয়েছিল ঠিক সেরকমই এখনও করা হয়েছে। নাজিম সাহেব সোবহান সাহেবের সাথে কথা বলছিলেন তখন প্রিয়া উনার কাছ থেকে সরে এই দিকটায় এলো। আশপাশে তাকিয়ে কাউকে খুঁজছে কিন্তু দেখতে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত রোজিনার কাছে গেল। রোজিনা তখন ফোন নিয়ে সেলফি তোলার চেষ্টা করছিল। সবুজ শাড়ি পড়েছে, আর তার সাথে খুব সুন্দর করে সেজেগুজে এসেছে।যতোই হোক সে আর কিছুদিন পর তামিমের বউ হতে চলেছে, এখন থেকে সাজগোজ না করলে হয় নাকি? তাছাড়া ও তামিমের চোখে আজকে ওকে পড়তে হবে তো। অনুষ্ঠানে আসা আর মেয়েগুলো কে স্মার্টফোন দিয়ে সেলফি তুলতে দেখে ওর মনে হিংসা হলো। এইসব মেয়েরা ফোন নিয়ে এমন রংঢং করলে ও করবে না কেন?ও ও একটা ফোন জোগাড় করে ওদের মতো স্টাইল করছে কিন্তু হুদাই,ক্যামেরা বের করতে পারে নি। ফোন টা সামনে নিয়ে ওরকম করতে দেখে প্রিয়া নিজের হাসি আর আটকাতে পারলো না, পিছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রোজিনা কে লক্ষ্য করছিল। ওকে এমন করতে দেখে জোরে জোরেই হেসে উঠলো।
হঠাৎ করে হাসির শব্দ শুনে রোজিনা ঘুরে তাকিয়ে দেখে প্রিয়া দাঁড়িয়ে আছে আর তার দিকে তাকিয়েই হাসছে।

‘ ওহহহ প্রিয়া আফা আপনে আইছেন। আমি মনে করলাম ওই মাইয়া গুলা আমারে দেইখা হাসে নাকি?’

‘ হাসি পাচ্ছে তোমার কান্ড দেখে রোজিনা আপা। তুমি খালি ফোন নিয়ে এইরকম ঠোঁটে কি করছো?’

বলেই আবার হেসে উঠলো প্রিয়া। রোজিনা খানিকটা মাথা চুলকে কাচুমাচু হয়ে গেল, ওর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখন তামিম এসে দাড়ালো। তামিম কে দেখে রোজিনা তো শেষ। শাড়ির আঁচল টা টেনে বড় করে একটা ঘোমটা দিয়ে বললো,,

‘ যখন তখন এমনে আইসা তাকাইয়া থাকবেন না তো ডাক্তার সাব, আমি কি লাজ পাই না নাকি?’

রোজিনার কথা শুনে তামিম,প্রিয়া দুজনের ই কাশি শুরু হলো।প্রিয়া পুরো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে ওর কথা শুনে। ‘এই লোকটার চরিত্র আরো অধঃপতনের দিকে এগিয়ে গেছে দেখছি, আগে আমার কাজিনের সাথে আর এখন কিনা বাড়ির কাজের মেয়ে? ছিঃ ‘

প্রিয়া কটমট করে তাকালো তামিমের দিকে। তামিম রোজিনার দিকে তাকিয়ে আছে। রোজিনা লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, আর তামিমের পাশে রাওনাফ এসে দাঁড়িয়েছে তখন।প্রিয়া ওখান থেকে সরে এসে একটু দূরে দাড়ালো। সে আশপাশে তাকিয়ে রাওনাফ কেই খুঁজছিল এতোক্ষণ ধরে, কিন্তু এখন খুঁজে পেয়েও কিছু বললো না ওকে।

‘ রোজিনা, বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে তোর।কি শুরু করেছিস তুই? আমি তোর দিকে তাকিয়ে থাকতে যাবো কেন হ্যা, দুনিয়ায় কি মেয়ের অভাব পড়েছে আমার জন্য? তুই তোর মত থাক না, শুধু শুধু আমার পিছনে লেগেছিস কেন?’

‘ ডাক্তার সাব, এইসব কি কইতাছেন আপনে?আপনে আমারে ভালো পান না? তাইলে এই যে আমার এত্ত খেয়াল রাখেন, ওইটা ক্যান?’

‘ তুই আমাদের বাসায় থাকিস তাই তোর প্রতি আমাদের সবার একটা দায়িত্ব আছে রোজিনা,এর বেশি কিছু নয়।আর সেদিন মা রাগের মাথায় কি বলেছে সেটা তুই ধরে বসে থাকলে আমাদের তো কিছু করার নেই।আর আরেকটা কথা তুই কান খুলে শুনে রাখ, আমার তোর সাথে বিয়ে হচ্ছে না আর এটা হওয়ার নয় কখনও।’

তামিম হনহন করে স্টেজের দিকে চলে গেল, মেজাজ পুরো খা/রা/প করে দিয়েছে রোজিনা। আগে তো ভেবেছিল ওসব মজা করে ও বলছে কিন্তু এখন তো ও সবকিছু সিরিয়াস নিচ্ছে।আর একটু আগে যেটা হলো সেটা………………….…….

_________________________________

কয়েক দিন পর……………….

নাজিম সাহেব আজকে অন্য দিনের তুলনায় খুব তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এলেন। বারোটার দিকে হঠাৎ করেই প্রিয়া কল করে তাড়াতাড়ি আসতে বলেছে,প্রিয়ার আবার কিছু হলো না তো এই শঙ্কায় পুরো রাস্তা এক রকম অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে এসেছেন তিনি। বাসার সামনে গাড়ি থামতেই গাড়ি থেকে নেমে পড়িমড়ি করে বাসায় এলেন নাজিম সাহেব।

‘ মামণি,কি হয়েছে তোমার? হঠাৎ এতো তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বললে যে?’

বলতে বলতে বাসায় ঢুকলেন নাজিম সাহেব। প্রথমেই চোখ চলে গেল সামনের দিকে। সোফায় তামিম,সারাহ্ আর তার হবু বর বসে আছে আর তাদের সাথে প্রিয়া ও। নাজিম সাহেব কে দেখে প্রিয়া হাসিমুখে বললো,,

‘ বাবা উনারা এসেছেন একটু আগেই।একা একা আমি কি কথা বলবো ওদের সাথে তাই তোমাকে বাসায় আসতে বলেছি। তুমি কথা বলো, আমি যাই এখন।’

প্রিয়া বসা থেকে উঠে নিজের রুমে চলে গেল। নাজিম সাহেবের তামিমের উপর রাগ থাকলেও প্রিয়াকে ওদের সাথে স্বাভাবিক দেখে রাগ কিছু টা হলেও কমলো।

_______________________________

‘ এই নাও তোমার ডিমান্ড অনুযায়ী টাকা। এবার কাজটা ঠিকঠাক করে করতে হবে তাই পুরো টাকা তোমাকে আমি অগ্রিম দিয়ে দিলাম। মনে রেখো ওর বডি পার্টস এমন ভাবে টু/ক/রো করবে যাতে স্বয়ং মিসির আলি এলেও যেন এটা কার ডে/থ বডি সেটা শনাক্ত করতে না পারে। বুঝতে পেরেছো?’

ঘাড় নেড়ে সায় দিল জাহাঙ্গীর।পেশায় সে একজন পেশাদার খু/নি। মানুষের থেকে টাকা নিয়ে প্রথমে কি/ড/ন্যা/প করে এরপর সবচেয়ে নি/কৃ/ষ্ট ভাবে মানুষ খু/ন করে।এর আগে যতবার সুপারি পেয়েছে ততবার ও কোনো কিছু না ভেবেই কাজ করে দিয়েছে কিন্তু এবার তাকে বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে তারপর সুপারি নিতে হলো। এবারের কে/স টা বেশ অদ্ভুত লেগেছে জাহাঙ্গীরের, কেননা এবারের কে/সে একটা অল্প বয়সী বাচ্চা মেয়ে কে মা/র/তে হবে তা-ও এতটা নি/র্ম/ম ভাবে। জাহাঙ্গীর কে চুপ করে থাকতে দেখে আবার জিজ্ঞেস করল আগন্তুক,,

‘ কি হলো? কাজটা তুমি করতে পারবে তো নাকি আমাকে অন্য কোনো লোক দেখতে হবে?’

আগন্তুকের তাচ্ছিল্য মেশানো কন্ঠস্বর যেন জাহাঙ্গীরের শরীরের মধ্যে আ/গু/ন ধরিয়ে দিলো।হাত মুঠো করে ধরে উঠে দাঁড়ালো সে,,,

‘ আপনি কোন চিন্তা করবেন না স্যার। জাহাঙ্গীরের কাছে একবার যে কোনো কাজ নিয়ে আসে সে খালি হাতে ফিরে মায় না।এই কাজটা খুব সহজেই হয়ে যাবে এবং ধরে নিন হয়ে গেছে। কালকের মধ্যে কাজ শেষ করে দিবো আমি। আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েন বাসায় গিয়ে।’

‘ না। একদম না। কালকে আমি তোমাকে কাজটা করতে বলিনি কিন্তু। তুমি অর্ডার টা নিয়ে রাখো। কবে,কখন, কোথায় কী করতে হবে সেটা আমি তোমাকে সময় এলেই জানিয়ে দিবো।আসছি আমি এখন,আর হ্যা সাবধান কিন্তু, ঠিক আছে?’

জাহাঙ্গীর মাথা নাড়ল। আগন্তুক একটু ক্রুর হাসি হেসে পুরোনো বাসার পিছন থেকে বেরিয়ে এলো।

চলবে…………… ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here