#প্রণয়
#পর্বঃ৪১
#তানিশা সুলতানা
তোহা রেডি হতে হতেই সূচক আর তানহা চলে আসে। সূচক আগে থেকেই জানতো। তাই কোনো রিয়েক্ট করে না। তানহা তো অবাক। তোহার বিয়ে? তাও আবার ইমনের সাথে। ভাবা যায়?
ইরিন সুন্দর করে সাজিয়ে গুজিয়ে তৈরি করে দেয় তোহাকে।
বসার ঘরে থেকে তোহাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়। ইরিন তোহা তানহা আর ইভা যায়। ইরা যাবে না। ওকে কেউ জোরও করে নি।
সূচক আর ইমন এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। বাচ্চাটা এখন সূচকের কোলে। তোহাকে নিয়ে ইরিনের বরের পাশে বসিয়ে দেয় তানহা। আর তোহার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে ইভা আর তানহা।
অবশেষে তোহাকে আংটি পড়ানো হবে। তো ইরিনের বর আংটি পড়িয়ে দেবে। তার জন্য আংটি বের করে।
“তোমার হাতটা দাও।
একটু হেসে বলে পাপন।
তোহা ইতস্তত বোধ করে হাতটা আস্তে আস্তে এগিয়ে দেয়।
” এক মিনিট
আমি বিয়ে করবো
বউ আমার। আমি আংটি পড়াবো। জিজু কেনো পড়াবে। এটা আমি মানবো না। আমিই পড়াবো। এটা আমার পারমানেন্ট কোলবালিশ।
ইমন এগিয়ে এসে পাপনের হাত থেকে আংটি নিয়ো ঝড়ের গতিতে তোহার আঙুলে পড়িয়ে দেয়। সবাই থ মেরে তাকিয়ে আছে।
তোহার তার নিচু মাথা আরও নিচু করে ফেলে। এরকম বেহায়া বর যেনো কারোর না হয়।
“এখন কথা হলো। আমি আমার কোলবালিশের সাথে আলাদা কথা বলতে চাই৷ নিয়ে গেলাম?
বলেই তোহার হাত ধরে টেনে তোহার রুমের দিকে নিয়ে যায়। তানহা মিটমিট করে হাসছে। সূচক হা হয়ে গেছে। এ তো সূচকের থেকেও এক কাঠি এগিয়ে। বাকি সবাই স্তব্ধ। পরিবেশ ঠান্ডা করতে পাপন হালকা কাশি দেয়।
” এ যুগের ছেলেমেয়ে একটু ইউনিকই হয়। আমরা বরং বিয়ের ডেট ফিক্সড করে ফেলি।
সবাই আবার গল্পে মজে ওঠে।
তোহার রুমে এসে হাত ছাড়ে ইমন। তোহা দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় ইমনের দিকে।
“সমস্যা কি আপনার? পেয়েছেন টা কি?
তোহা রেগে বলে। ইমন গিয়ে দরজাটা আটকে এসে তোহার মুখোমুখি দাঁড়ায়।
” সমস্যা তো তোমার।
“আমার না আপনার। বিয়ের নাটক টা কেনো করছেন?
” নাটক না সত্যিই বিয়ে করছি। বাসরটাও সত্যি করবো। বাচ্চার বাপও সত্যিই হবো।
তোহা বিরক্ত হয়।
“এরকম ঠোঁট কাটা কথা অন্য কোথাও গিয়ে বলেন। বিরক্ত লাগে আমার।
” ওহহ আচ্ছা। আমার কথা বিরক্ত লাগে। আর ওই বিজয়কে খুব ভালো লাগে?
কালকে শুনলাম আজ তোর বাড়িতে সে প্রপোজাল নিয়ে আসবে। কি সাংঘাতিক। নাক টিপলে দুধ বের হয়। সেই মেয়ের জন্য সমন্ধ আসে।
ইমনের শান্ত গলা। তোহা ভ্রু কুচকে তাকায়। বিজয় স্যার বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে আসতো আজ?
এসব তো কিছুই জানে না তোহা। তার মানে এই জন্যই ইমন রাতেই চলে এসেছে। আর এতোটা উতলা?
দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেলে তোহা।
“বিয়ে তুমি আমাকেই করবে। এন্ড এটাই ফাইনাল।
” বিজয় স্যার সমন্ধটি আনবে তাতে আপনার কি? আপনার থেকে বিজয় স্যার অনেক ভালো।
ঠোঁট উল্টে বলে তোহা।
“ভালো বলেই তো কাটিয়ে দিচ্ছি। ওনার মতো অতো ভালো একটা মানুষের কপালে এরকম পাগল জুটবে এটা কি ঠিক হবে?
মুচকি হেসে বলে ইমন৷ তোহা দাঁত কটমট করে। এই হনুমান ডিরেক্টি পাগল বললো ওকে?
” পাগল তো আসছেন কেনো? নাচতে নাচতে?
“রতনে রতন চিনে জানো না? তুমিও পাগল আমিও পাগল। তাই কানেকশন হয়ে গেলো।
তোহা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে। এই পাগলের সাথে কথা বলাই বিথা।
ইমন খাটের ওপর গিয়ে বসে পড়ে। তোহা জানালার কাছে যায়। কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে না সব কিছু? তবে ইমনকে নিজে হাতে শাস্তি দেওয়ার একটা রাস্তা তোহা পেয়ে গেছে। তোহাকে জ্বালিয়েছে না?
এবার তোহা দেখিয়ে দেবে জ্বালানো কাকে বলে। বাঁকা হাসে তোহা।
” এই হাসছো কেনো তুমি? পালানোর মতলব আটছো না কি? একদম পালানো যাবে না বলে দিলাম আমি। সত্যিই কোলবালিশ ছিঁড়ে গেছে। কোলবালিশের অভাবে ঘিম হচ্ছে না আমার।
ইনোসেন্ট ফেস করে বলে ইমন। তোহা ইমনের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।
“তাই?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে তোহা।
” হুমম
ঠোঁট উল্টে বলে ইমন।
তোহা খাটের পাশ থেকে নিজের কোলবালিশটা নিয়ে ইমনের দিকে ছুঁড়ে মারে।
ইমন ক্যাচ ধরে ফেলে।
“আপনার কোলবালিশ। এবার বিদেয় হন।
কোমরে হাত দিয়ে বলে তোহা।
” এই কোলবালিশ না।
তোহা ইমনের হাত ধরে টেনে দরজা ওবদি আসে।
“বের হ তুই এখান থেকে। হনুমান
ঠেলে ধাক্কিয়ে রুম থেকে ইমনকে বের করে দিয়ে দরজা আটকে দেয় তোহা।
ইমন এক পলক দরজার দিকে তাকায় তো আরেকবার কোলবালিশের দিকে তাকায়।
অবশেষে ঠিক হয় এই মাসের সাতাইশ তারিখেই বিয়েটা হবে ইমন আর তোহার। হাতে বেশি সময় নেই। মাএ দশ দিন আছে।
সূচক দুপুরে খেয়েই বেরিয়ে গেছে। বিকেলে স্টুডেন্ট আছে। ইরা ইভা চলে গেছে। যদিও ইভার যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না। ইরা জোর করে নিয়ে গেছে। এরই মধ্যে একটা খবর আসে বৃষ্টি বিয়ে করে নিয়েছে ওদের এলাকার একটা ছেলেকে। ছেলেটা পুলিশে জব করে। কাউকে না জানিয়ে হুট করেই করেছে। ছেলেটা আগে থেকেই ভালোবাসতো বৃষ্টিকে। সাদিয়া বেগম খুব খুশি হয়। এতোদিন ভাইজির জন্য খুব চিন্তা হতো।
দুপুরে খাবার টেবিলে সূচক বাবার সামনে দুই লাখ টাকা রাখে। মামাদের দিয়ে দেওয়ার জন্য।
মামা বাড়ির টাকায় বাইক কেনা ছিলো বলে এতোদিন বাইক চালাতো না সূচক। আজকে টাকা শোধ করে তবেই বাইক ছুঁয়েছে।
তমাল ভীষণ খুশি ছেলের এই সাফল্যে। এতোটা কখনোই আশা করে নি উনি।
তমা বেগম বাড়িতে এসেই স্বামীর কানে তুলেছে সূচক তানহাকে বিয়ে করে নিয়েছে। একটুও অবাক হয় নি উনি। কারণ উনি মনে মনে এটাই ধারণা করেছিলো। ছেলে মেয়ের মন খুব ভালো ভাবেই পরতে পারেন উনি।
ইমন বাবা মায়ের সাথে চলে গেছে। তানহা আর তোহা রুমে এখন। সাদিয়া বেগম আর তমা বেগম রাতের রান্না চড়িয়েছে। তমাল আর তাহের দোকানে গেছে। তাজ খেলতে গেছে।
“তুই তলে তলে টেম্পু চালাচ্ছিস। আর আমাকে বললি না?
তানহা তোহার চুলের মুঠি ধরে বলে।
” অটো টেম্পু কিছুই চালাই নি আমি। জানতামই না এমনটা হবে।
তানহার থেকে নিজের চুল ছাড়িয়ে নিয়ে বলে তোহা।
“বিয়ের পর বাচ্চা হলেও তো বলবি আমি জানি না। জানা আছে আমার।
মুখ বাঁকিয়ে চেয়ার টেনে তোহার মুখোমুখি বসে বলে তানহা।
” আরে না রে। সত্যিই আচ করতে পারি নি।
“যাকক সে কথা। শোন না।
চল আমরা ফিউচার প্লানিং করি।
তানহা উৎসাহিত হয়ে বলে।
” আমিও তাই ভাবছিলাম। আমি আগেই বলে দিচ্ছি আমি আর্জেন্টিনা টিম বানাবো।
“আমি ব্রাজিল টিম বানাবো। সাথে আরও কয়েকটা বেশি লাগবে। এগারো জনে হবে না। পনেরো জন্য লাগবে। মানে হলো বারোটা ছেলে আর তিনটা মেয়ে হবে আমার। বুঝলি?
তোহারে জাস্ট একবার ফিল কর। ২০৫০ সালে কাতার বিশ্বকাপে মুখোমুখি তোর আর্জেন্টিনা টিম আর আমার ব্রাজিল টিম। হাড্ডা হাড্ডি লড়াই। টান টান উত্তেজনা।
জাস্ট ইমাজিন
তোহা গালে হাত দিয়ে ইমাজিন শুরু করে দেয়৷
” তবে তানহা যাই বলিস। তোর মেয়ের সাথেই কিন্তু আমার ছেলের বিয়ে দেবো আমি।
তোহা মুখ বাঁকায়।
“তুই যে ঝগড়ুটে তোর ছেলের সাথে জীবনেও আমার মেয়ের বিয়ে দেবো না। পরে দেখা যাবে তুই আমার মেয়ের সাথে ঝগড়া করছিস।
” কি বললি তুই? এতো বড় অপমান।
কথাই বলবো না তোর সাথে।
তানহা রেগে বলে
“না বললি
তুই কথা না বললে যেনো আমার ভাঙা ঘর পড়ে যাবে।
তানহা রাগ দেখিয়ে গটগট করে চলে যায়। এতোবড় অপমান?
জীবনেও কথা বলবে না তোহার সাথে।
পুরো বিকেল তোহা রুমে আর তানহা ছাঁদে কাটায়। কোনো মতেই কথা বলবে না তোহার সাথে।
সন্ধার দিকে সূচক বাড়িতে আসে৷ তানহার ডাক পড়ে। তানহা মুখ গোমড়া করে রুমে যায়।
সূচক শার্ট খুলছিলো তানহা গিয়ে আস্তে করে খাটে বসে পড়ে।
“কি হয়েছে? ছাগলের মতো মুখ করে আছিস কেনো?
সূচক তানহার পাশে বসে বলে।
” জানেন তোহা কি করছে? আমার মুখের ওপর বলে দিলো আমার ছেলের সাথে ওর মেয়ের বিয়ে দেবে না। আমি না কি ঝগড়ুটে।
তানহা গাল ফুলিয়ে বলে। সূচক মাথায় হাত দেয়।
“তোরা থাকতে পাবনার ছিট খালি থাকে কিভাবে?
তানহার মাথায় চাটি মেরে বলে সূচক। তানহা ফুলানো গাল আরও ফুলিয়ে ফেলে। মুখ ঘুরিয়ে নেয় সূচকের দিক থেকে।
চলবে#প্রণয়
#পর্বঃ৪২
#তানিশা সুলতানা
কি একটা অবস্থা। কারো কাছে দুঃখের কথা বলে শান্তি নেই। কেউ বোঝে না মনের দুঃখ। সবাই খালি পাগল ভাবে।
গাল ফুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় তানহা। সূচক কাবাড থেকে জামা কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে যায়। কি একটা কপাল?
কোথায় বাসায় ফেরার পর বউ জামাকাপড় এগিয়ে দেবে। পানি এনে দেবে। তা না বউ পড়ে আছে বাচ্চাকাচ্চার বিয়ে নিয়ে। সেই জন্যই অল্প বয়সের বাচ্চাদের সাথে প্রেম করতে নেই। এরা বোঝে কম চিল্লাই বেশি।
খাবার টেবিলে সবার ডাক পড়েছে। তমাল জরুরি কিছু কথা বলবে। তানহা তোহা পাশাপাশি বসেছে ঠিকই কিন্তু কেউ কারো সাথে কথা বলছে না। আর বলবেও না। তানহা মুখ ঘুরিয়ে আসে আছে।
এখানে সবাই উপস্থিত থাকলেও সূচক উপস্থিত না। সে তার কাজ করছে। সাদিয়া বেগম অবশ্য ডাকতে গেছে তাকে কিন্তু আশার নাম গন্ধ নেই। তমা বেগম সবার প্লেটেই সাবার বেরে দিচ্ছে।
“কি রে তমু? কি কইবি?
দাদিমা লাঠি ভর দিয়ে এসে তমালের পাশের চেয়ারটা টেনে বসে বলে।
” আপনার বড় নাতিকে বলতে চাই না। কিন্তু তার তো আশার নাম গন্ধই নেই।
বেয়াদব হয়েছে একটা।
ভাতে ডাল দিতে দিতে বলে তমাল।
“আহহা ভাই। হয়ত কাজ করছে।
তাহের বলে।
তখনই সূচক আসে। সাহেবি একটা ভাব ভাব নিয়ে হাতা গুটাতে গুটাতে। তানহার পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পড়ে। তানহা এক পলক তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে নেয়। ভাব দেখে বাঁচি না। মুখ বাঁকিয়ে মনে মনে বলে তানহা।
তমা বেগম ওর জন্য খাবার বারে।
” কি বলবে?
বাবার দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলে সূচক।
তমাল হালকা কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নেয়।
“তোমাদের বিয়ে হয়ে গেছে তার কোনো প্রমাণ নেই আমাদের কাছে।
তানহা ভাবে ভাবেই খাচ্ছিলো। তমালের কথা শুনে খাওয়া থামিয়ে দেয়। কিন্তু সূচকের কোনো থামা থামি নেই। সে এক মনে খেয়েই যাচ্ছে।
” বিয়ে তো হয়েছে
তাহের বলতে যায় হাত উঁচু করে থামিয়ে দেয় তমাল।
“আমি বলছি তোমরা আলাদা থাকবে। আলাদা মানে আলাদা
“আলাদাই তো থাকি সারাদিন।
সূচক মুখে খাবার পুরে সোজাসাপ্টা বলে দেয়। বিষম খায় তাহের। তমাল কটমট চোখে তাকায় ছেলের দিকে। নুন্যতম লজ্জা কি এই ছেলের নাই। সাদিয়া বেগম আচল দিয়ে মুখ ঢাকে। মমতা বেগম নাতির উওরে মুচকি হাসছে। তমা বেগম তাকিয়ে আছে সূচকের মুখের দিকে। তানহা মাথা নিচু করে আছে। তোহা ঠোঁট টিপে হাসছে।
” রাতেও আলাদা থাকবে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে তমাল।
“তাহলে তুমিও মায়ের থেকে আলাদা থাকো। একটা কাজ করি চলো তুমি আর আমি থাকি। তানহা আর মা থাকুক।
এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে বলে সূচক। তমাল চোখ বন্ধ করে কপালে হাত দেয়। সাদিয়া বেগম তরিঘরি করে এখান থেকে চলে যায়। তানহা পারছে না মাটি ফাঁক করে ঢুকে পড়তে।
” বেয়াদবির একটা সীমা থাকে।
তমাল দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
“তুমি মা কে বিয়ে করেছো এখন এক সাথে থাকছো। আমিও তানহাকে বিয়ে করেছি। ক সাথে থাকবো। এখানে যদি তুমি ধর্মঘট শুরু করে দাও। আমি প্রতিবাদ করতে যাই। তখনই আমি বেয়াদব হয়ে গেলাম। এ কেমন বিচার?
এটা মানা যাবে না।
সূচক ইনোসেন্ট ফেস করে বলে।
তমাল লজ্জা পেয়ে যায়। এরকম নিলজ্জ ছেলে তার?
” এক সাথেই থাকিস তোরা। চুপ চাপ খা এখন।
তাহের শুকনো ঢোক গিলে বলে। সূচক কাকার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
অতঃপর আর কেউ কোনো কথা বলে না। সাহস আছে না কি কারোর?
কথা বললেই দেখা যাবে এক বালতি লজ্জা চাপিয়ে দেবে। তানহা কোনো রকমে নিজের খাবার শেষ করে চলে যায়। তমালও তাই। শুধু সূচক আরাম করে খাচ্ছে। যেনো খাওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।
তানহা তোহার রুমে চলে আসে। এসে দেখে তোহার ফোন বাজছে। তানহা এগিয়ে গিয়ে ফোনটা তুলে দেখে ইমন কল দিছে। তানহার খুশি আর দেখে কে? এবার ইমনের কাছেই বিচার দেবে তোহার নামে।
“হ্যালো ভাইয়া জানো তোহা কি করছে?
কল রিসিভ করে কানে দিয়েই বলে তানহ।
” কি করছে?
ইমন বলে।
“আমার মুখের ওপর বলে দিছে আমার ছেলের সাথে ওর মেয়ের বিয়ে দেবে না।
” কিহহহ এটা বলছে ও? মেয়ে কি ওর একার না কি? আমারও মেয়ে। আমি কথা দিচ্ছি আমার মেয়ের সাথেই তোমার ছেলের বিয়ে হবে।
তানহা খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। আরাম করে বিছানায় গোল হয়ে বসে।
“এই জন্যই তোমাকে আমি এতো ভালোবাসি। তুমি ছাড়া কেউ বোঝেই না আমায়।
তোমার বন্ধু কি বলছে জানো ” আমরা থাকতে পাবনার ছিট খালি থাকে কিভাবে ”
“ঠিকই তো বলছে।
” কিহহহ বললা?
ইমন দাঁত দিয়ে জীভ কাটে।
“কিহহহ সূচকের এতো বড় সাহস। আবার এই কথা বললে তুমি বলবা ” রতনে রতন চিনে”
তানহা কপালে তিনটে ভাজ ফেলে ইমনের কথার মানেটা বোঝার চেষ্টা করে। কিন্তু মাথায় ঢোকে না।
“বাই এনি চান্স আমি কি রতন?
তানহা বলে।
” নাহ না
তুমি রতন হবে কেনো? তুমি তো রতনী।
“আমিও কি বোকা দেখেছো? আরে রতন তো ছেলেরা হয়।
” একদম।
তানহা আর ইমন কথা বলতেই আছে। তোহা বিরক্ত হয় এসব দেখে। চোখ মুখ কুঁচকে পড়ার টেবিলে বই নিয়ে বসে।
সূচক রুমে গিয়ে তানহাকে না পেয়ে তোহার রুমে এসে দেখে তানহা লুটোপুটি খেয়ে কথা বলছে।
“এই পাগল তুই এখানে কেনো?
সূচক বলে। তানহা চোখ মুখ কুঁচকে সূচকের দিকে তাকায়।
” ভাইয়া তোহার সাথে কথা বলে।
তোহার কাছে ফোনটা দিয়ে সূচকের সামনে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায়।
“কি বললেন আমায়?
তানহা জিজ্ঞেস করে।
” বললাম পাগল।
“হুমম রতনে রতন চিনে।
মুখ বাঁকিয়ে বলে হেলেদুলে চলে যায় তানহা। সূচক ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে। রতনে রতন চিনে মানে হলো? “তানহাএক পাগল আর তাকে বিয়ে করেছে আরেক পাগল”
সূচক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তানহার পেছন পেছন যায়।
তানহা রুমে ঢুকে চুপচাপ শুয়ে পড়ে। সূচক নিজের বই এনে খাটে বসে তানহার পাশে।
“বই নিয়ে আয়।
সূচক চোখে চশমা পড়তে পড়তে বলে।
” একটা জিনিস ভাবলাম বুঝলেন?
আপনি কষ্ট করে এতোগুলো বছর পড়ালেখা করেছেন। এখনও করছেন।
এখন আমিও কেনো পাড়ালেখা করবো? দুজনই কষ্ট কেনো করবো? আমি আর আপনি তো একই। আমাদের এক আত্মা এক মন। এক সব। তাহলে এক পড়লেই আরেকজনের পড়া হয়ে কেনো যাবে না? অবশ্যই যাবে।
আমার পড়ালেখা বন্ধ। পড়ালেখা করে কে কি করেছে?
বিয়ে করা ফরজ। আর আমার ফরজ কাজ শেষ এখন পড়াপড়ি৷ অনলি বাচ্চা কাচ্চা পালা পালি।
তানহা গলা ওবদি কম্বল টেনে নিয়ে বসে। সূচক হা করে তাকিয়ে আছে তানহার দিকে।
“চাপকে গাল লাল করে দেবো তোর। ফালতু বকা বাদ দে। আর তাড়াতাড়ি উঠে বই নিয়ে আয়।
ধমক দিয়ে বলে সূচক।
” মুখে মধু নাই আপনার? একদম খ্যাট খ্যাট করবেন না বলে দিলাম। কালকেই আমি এক বোতল মধু কিনে এনে আপনাকে গেলাবো। এরকম রসকষহীন মানুষের সাথে আমি সংসার করতে পারবো না বাবা।
শেষে যদি আমার বাচ্চাকাচ্চা এরকম খ্যাট খ্যাট হয়। তখন পুরা কপাল আরও পুরে যাবে আমার।
এক বোতল না দুই বোতল মধু খাওয়াবো আপনাকে আমি।
তানহা একদমে কথা গুলো শেষ করে।
চলবে