#আমি_সেই_তনু
#নবম_পর্ব
#জান্নাত_উল_ফেরদৌস
আকাশ: প্রীতি খুব চালাক,এভাবে সব শিকার করবে না আমাদের বুঝে কাজ করতে হবে ।
নির্ভীক: ঠিক বলেছেন স্যার! সেটা না হলে অনেক গুলো জীবন নষ্ট হবে।
আকাশ: আমাকে সবটা খুলে বলো নির্ভীক?
নির্ভীক: স্যার, আপনি দেশে আসার আগে আমার আর প্রীতির সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল,প্রেমের সম্পর্ক বললে ভুল হবে অনেক টা ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল…. লাস্ট কিছু দিন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম যে বিয়ে করবো তাই অবাধ ভাবে ই মেলামেশা করতাম!! কিন্তু আপনি আসার পর থেকে প্রীতি কেমন বদলে যায়,আমার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে… পরে প্রীতি একদিন আমার সাথে পুরোপুরি ভাবে ই ব্রেকআপ করে, ও আমাকে বলে যে আপনি নাকি ওকে ভালোবাসেন আর বিয়ে করবেন।
আমি যেহেতু আপনার অফিস এর একটা কর্মচারী তাই চাকরি টা হারানোর ভয়ে চুপ থাকি। কিন্তু আজ যখন আপনার মুখ থেকে শুনলাম আপনি প্রীতি কে ভালোবাসেন না আর ও প্রেগনেন্ট সেটাও আপনি জানেন না তখনই আমি বুঝেছি প্রীতি খুব নোংরা একটা খেলা খেলছে।
আচ্ছা দির প্রীতি প্রেগনেন্ট কত দিন ধরে?
আকাশ: মা বললো ৫সপ্তাহ।
নির্ভীক: হ্যাঁ 35দিন আগে ই আমি আর প্রীতি ঘনিষ্ট হয়েছিলাম অবাধ ভাবে তার মানে তখনই প্রীতি কনসিভ করেছে ।
আমি কিছু তে ই আমার বাচ্চার ভবিষ্যৎ এভাবে নষ্ট হতে দিতে পারি না স্যার!!
নির্ভীক এর কথা শুনে আকাশ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে!! প্রীতি এতটা জঘন্য! কোনো মেয়ে কি করে এত জঘন্য হতে পারে?
আকাশ: আমার সাথে এসো নির্ভীক।
নির্ভীক: কোথায় ?
আকাশ: আমার বাসায়।
আকাশ নির্ভীক গাড়িতে উঠে লতিফা কে কল দিলো…
Hello মা!
লতিফা: করে তুই কোথায় ?
আকাশ: আমার জরুরি মিটিং আছে,তুমি আর তনু মিলে বিয়ের যা যা লাগে মল থেকে কিনে নাও। আর প্রীতি কে বাসায় রেখে আসো এই অবস্থায় ওকে জার্নি করানো ঠিক হবে না।
লতিফা: কিন্তু আকাশ!
আকাশ: কোনো কিন্তু না, আমি চাই আমার বিয়ে টা ভালো মত হক।
লতিফা: ঠিক আছে তুই যা ভালো বুঝিস।
আকাশ ফোন টা রেখে রোহিত কে ফোন দিল।
Hello বাবা!
রোহিত: কোথায় তুই ? সন্ধায় বিয়ে আর তুই কোথায়?
আকাশ : আমি যা যা বলি তুমি তাই তাই করো। বলে আকাশ রোহিত কে সব বুঝিয়ে দেয়।
রোহিত: তুই যা ভালো বুঝিস।
ফোন রেখে রোহিত লতিফা আর তনু কে নিয়ে বের হয়।
তনুর হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে তবু মুখে হাসি রাখার চেষ্টা করছে।
আকাশ আর নির্ভীক ফার্মেসি থেকে এমন একটা ওষুধ নিলো যাতে কিছুক্ষনের জন্য বুকে জ্বালা করে ।তার পর বাসায় গেলো।
আকাশ বাসায় ঢুকে দেখে প্রীতি টিভি দেখছে, আকাশ কে দেখে প্রীতি ভয় পাচ্ছে তবু ও নাটক করে একটা হাসি দিল।
আকাশ: প্রীতি ডার্লিং এখন শরীর কেমন লাগছে?
প্রীতি: ভা ভা ভালো!!
আকাশ প্রীতির মুখে হাত দিল, হাত দিয়ে প্রীতির মুখটা খুব বাজে ভাবে স্পর্শ করলো… কই ডার্লিং তোমায় অসুস্থ লাগছে দাড়াও সরবত করে দেই… বলে আকাশ রান্না ঘরে চলে গেল…
প্রীতি আকাশের এমন ভালো ব্যাবহার হজম হচ্ছে না!!
আকাশ: আজ সন্ধায় ই তো আমাদের বিয়ে তাই আগে থেকে ই একটু রোমান্টিক হয়ে নিচ্ছি বুঝলে প্রীতি ডার্লিং।
প্রীতি: আকাশের কথায় মৃদু হাসলো।
আকাশ সরবত টা এনে নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছে… প্রীতি না চাইতে ও পুরোটা খেতে হলো।
প্রীতি: এটা কিসের সরবত আকাশ, এমন সাধ কেনো?
আকাশ: জানতে চাও কিসের সরবত?
প্রীতি: কিসের আকাশ!?
আকাশ: বিষ দিয়েছি তোমায় বিষ!!
প্রীতি: কী!! বলে ই গলায় হাত দিল, গলার মধ্যে হালকা ব্যাথা করছে….
আকাশ: তোমার হাতে ২টা অপশন, ১সত্যি বলবে। তাহলে আমি হসপিটালে নিয়ে যাবো এক্ষুনি। আর ২সত্যি না বললে এখানে ই শেষ!!
প্রীতি ভয়ে কান্না করছে! কী করছো এসব আমায় হাসপাতালে নিয়ে যাও প্লীজ!! প্রীতির গলা এবার যেনো জলে যাচ্ছে!!
নির্ভীক আড়াল থেকে প্রীতি কে ভিডিও করছে…
আকাশ: সত্যি টা বলবে ?
প্রীতি: কি সত্যি আমি যা বলেছি সবই সত্যি…
আকাশ এবার শার্ট এর হাতা খুলছে তার পর শার্ট এর বোতাম গুলো খুলছে…
প্রীতি: কি করছো এসব!!
আকাশ: মরে ই তো যাবে তার আগে তোমায় একটু ভোগ করি সুইটহার্ট!! বলে বাকা হাসি দিল …
প্রীতি: প্লিজ
আকাশ: ভয় পাচ্ছো কেন? আমাদের তো আগে ও এসব হয়েছে, যেমন টা তুমি মা কে আর তনু কে বলেছো…
প্রীতি: আমি বলছি প্লিজ…
আকাশ: good girl এবার বলো?
প্রীতি: আমার এই বাচ্চা টা নির্ভীক এর,,,,, ওর সাথে আমার 3বছরের সম্পর্ক ।
আকাশ: আমার সাথে এভাবে কখন কিভাবে ছবি তুলেছ আর কি করেছিলে? প্রীতির মুখ চেপে ধরে।
প্রীতির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে…
আকাশ: কি হলো বলো!?
প্রীতি: তুমি যেদিন আমাদের বাসায় ছিলে সেদিন তোমার খাবারে ঘুমের ওষুধ দিয়েছিলাম। তুমি ঘুমিয়ে গেলে আমি ছবি গুলো তুলেছি।
আকাশ শুনে প্রীতি কে একটা থাপ্পর দেয়, জীবনে মেয়েদের গায়ে হাত তোলে নি কিন্তু আজ আর পারলো না নিজেকে আটকে রাখতে।
নির্ভীক বেরিয়ে আসলো।
প্রীতি: নির্ভীক তুমি?
নির্ভীক: আমার ভাবতে ও ঘেন্যা লাগছে যে তোমার মত একটা নষ্টা মেয়ের পেটে আমার সন্তান বড় হচ্ছে!!
প্রীতি: নির্ভীক!!
নির্ভীক: গলা নিচে।
প্রীতি এবার কান্না করে বলে প্লীজ আমাকে হসপিটালে নিয়ে যাও….
আকাশ: অট্ট হাসি দিয়ে, বোকা মেয়ে মহ তে পড়ে ভুলে ই গেছো যে আকাশ কে পাওয়া অত সহজ না….
তোমাকে বিস দেই নি। ওটা এমনি ওষুধ ছিল।
প্রীতি রেগে জোরে ই আকাশ বলে উঠলো।
তখনই তনু লতিফা আর রোহিত আসলো,দেখলো প্রীতি কাদঁছে , আর খুব খারাপ অবস্থা।
তনু : কি হয়েছে আপু শরীর খারাপ লাগছে ?
আকাশ তনুর হাত ধরে প্রীতির কাছ থেকে সরিয়ে সবার সামনে প্রীতির কুকর্মের কথা বললো।
লতিফা তো পুরো ঝটকা খেলো কথা টা শুনে!! তার পর আকাশ ভিডিও টা দেখালো।
তনু যেনো নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না, কোনো মেয়ে কি করে এত বেহায়া আর নিচে নামতে পারে ।
আকাশ: im sorry নির্ভীক তোমার খারাপ লাগলেও বলছি বাচ্চাটা জন্মানোর পর এই মেয়ের থেকে দূরে চলে যেও নিয়ে।
নির্ভীক: সম্মতি জানিয়ে আকাশের কাধে হাত দিয়ে, আসি স্যার।
আকাশ: এসো ভাই, তোমার উপকার চিরো জীবন মনে রাখবো।
নির্ভীক মৃদু হেসে বিদায় জানালো।
আকাশ প্রীতি কে টেনে নিয়ে বাইরে বের করে দিয়ে দরজা আটকে দিলো।
প্রীতি ২ একবার দরজা চাপ্রলো, কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে সোজা বাসায় চলে গেলো। প্রীতির মা জিজ্ঞাসা করলো, কিরে চলে আসলি যে?
প্রীতি মোবাইল টা আছাড় দিয়ে ভেঙে বললো সেই কৈফিয়ত কি তকামে দিবো!?
বলে হন হন করে রুমে চলে গেল।
প্রীতির মা, বেআদব মেয়ে!! আদর দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলে ফেলেছি!! (মনে মনে)
আকাশ কারোর সাথে কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেলো, তনুর দিকেও একবারও তাকালো না।
লতিফা আকাশের ঘরে যেতে চাইলে… রোহিত আটকালো, ওকে একা থাকতে দাও।
লতিফা আর এগুলো না নিজের ঘরে চলে গেল। আর জাই হোক এমন নষ্টা মেয়েকে ঘরের বউ করবে না লতিফা ।
বিকেল গড়ালো, তনুর কিছুই ভালো লাগছে না, কিভাবে আকাশের রাগ ভাঙ্গাতে হবে তাও বুঝতে পারছে না!!
তনু বের হয়ে দেখে লতিফা কুরআন পড়ছে তার ঘরে…
তনু চুপ চাপ আকাশের ঘরে গেলো, গিয়ে দেখে আকাশ ঘুমিয়ে পড়েছে। তনুর দেখে বেশ হাসি পেলো, তনু আকাশের কাছে গিয়ে পায়ের জুতা মোজা খুলে পা গুলো সোজা করে দিলো তার পর চশমা টা খুলে রাখলো….
কী নিষ্পাপ লাগছে আজ আকাশ ভাইয়া কে! শিশু দের মত ঘুমাচ্ছে একদম। তনু এই প্রথম নিজে থেকে আকাশ কে স্পর্শ করলো…. তনু আকাশের কপালে হাত দিলো তার পর কিছুক্ষন মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।
নরম হাতের স্পর্শে আকাশের ঘুম ভেঙেছে ঠিকই কিন্তু চোখ খোলে নি , কারণ কিছুতে ই এই আদর হাতছাড়া করবে না আকাশ।
তনু আকাশের কপালে একটা চুমু খেল, আমাকে ক্ষমা করে দিন আকাশ ভাইয়া, আপনাকে আমি ভুলবুঝেছি , আমার খুব কষ্ট হয়েছে এসব সহ্য করতে… বলতে বলতে চোখ বেয়ে পানি পড়ছে তনুর।
তার পর আকাশের গায়ে চাদর জড়িয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিলো তনু তখনই হাত ধরে আকাশের পাশে বসিয়ে দিলো তনু কে….
তনু ভাবতে পারে নি আকাশ জেগে যাবে!!
আকাশ: আমি করো কাছে ঋণী থাকি না , আমি এই আদর আবার ফিরিয়ে দিতে চাই…. বলে মুচকি হাসলো আকাশ।
তনু লজ্জায় লাল হয়ে গেছে, আমি যে ভাইয়া কে চুমু খেয়েছি এটা কি ভাইয়া বুঝতে পেরে গেছে!! তনু লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।
আকাশ: তনুর দিকে তাকিয়ে আছে, কি নম্র আচরণ,কি লজ্জাবতী,কত সরল চাহনী এমন একটা মেয়েকে ই তো আকাশ নিজের করে পাবার সপ্ন দেখেছে।
আকাশ বিছানা থেকে উঠে, তনুর মুখ দুই হাত দিয়ে ধরে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসলো, তনু চোখ বন্ধ করে আছে…. তনুর ঠোঁটের খুব কাছে আকাশের ঠোঁট, তনুর মুখে গরম নিঃশ্বাসের অবোচরণ….
না তনু আর পারছে না মাটি ফাঁক হলে তনু সেখানে ই চলে যেত, যখনই আকাশ তনুর ঠোঁটে ঠোঁট ডুববে তখনই তনু বলে উঠলো…
ভাইয়া খালামনি ডাকছে আমি জাই?
আকাশ: তনুর অবস্থা বুঝতে পেরে কিছু খন চুপ থেকে মুচকি হেসে তনুকে ছেড়ে দিয়ে আচ্ছা যা ।
তনু যেনো দৌড়ে পালালো । আকাশ ছেলেমানুষী টা বেশ উপভোগ করলো।
রাতে তনু লতিফা কে রান্নায় সাহায্য করছে আর লতিফা বক বক করছে, কোথায় ছেলের বউ এনে আমি অবসর হবো তার খবর নেই আমার বুঝি ইচ্ছা করে না ছেলের বউ দেখার?
আকাশ খবরের কাগজ টা রেখে ওর মায়ের কাছে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বললো, মা ছাদে আমি একটা গোলাপ গাছ লাগিয়েছি সেখানে একটা কলি এসেছে, ফুটলে ই আমি বিয়ে করে নেব। আকাশের কথায় তনু রান্না ঘর থেকে মৃদু হাসলো। লতিফার বোধগম্য না হলেও রোহিত ঠিকই বুঝেছে।
রোহিত: ভালো করে যত্ন নিজ বাবা, যত্ন নিলে ই তো সুন্দর ফুল ফুটবে। বলে রহস্যের হাসি দিল
আকাশ মৃদু হেসে আবার কাগজ পড়ায় মন দিল।
তনু চা বানিয়ে রোহিত কে দিয়ে এক কাপ আকাশের কাছে নিয়ে গেলো….
আকাশ: চা টা নেওয়ার সময় আস্তে আস্তে বললো আমি চায়ের থেকে ও মিষ্টি কিছু খাব আর ইচ্ছা যখন হয়েছে তখন তো খেতে ই হবে….
চলবে?
(আজ যদি বলো পার্ট ছোটো হইছে তাইলে পিটি দিবো😐)